শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাংলা ব্লগোস্ফিয়ার আমাদের যে ক্ষতিটা করেছে...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০১৩ - ১২:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৬ বাংলা ব্লগ যখন সবে চালু হতে শুরু করেছে তখন ব্লগস্পট ছাড়া বড় কোনো ব্লগিং প্লাটফরম ছিলো না। ওয়ার্ডপ্রেসও জমজমাট হতে শুরু করেছে। সোশ্যাল ওয়েবসাইট হিসেবে অর্কুট আর মাইস্পেস পড়তির দিকে। ফেইসবুক বড় হওয়া শুরু করেছ। বাংলা ব্লগ চালু হবার আগে অল্প কিছু ব্লগার ব্লগস্পটে ব্লগিং করতেন ইংরেজীতে।

সামহোয়ারইন যখন চালু হলো তখন এটি দুটো চাহিদা পূরণ করে। এক, কিবোর্ড ইনস্টল করা ছাড়াই বাংলা ইন্টারনেটে লেখালেখি। দুই, বাঙ্গালীদের মধ্যে সোশাল নেটওয়ার্কিং। বুম। খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে বাংলা ব্লগিং। এরপরে আসে সচলায়তন এবং অন্যান্য ব্লগিং ওয়েবসাইট।

সেসময় আমরা উত্তেজিত ছিলাম এই ভেবে যে, শেষমেষ বাংলা ভাষাকে ইন্টারনেটে ধরে রাখার একটা উপায় পাওয়া গেছে। শেষমেষ ডিজিটাল ডিভাইড দূরীকরণের একটা উপায় বের হয়েছে। এটা এখনও সত্যি। উপরন্তু শাহবাগে আন্দোলন শুরু প্রায় পুরো কৃতিত্ব এই বাংলা ব্লগারদের দেয়া যায়। কিন্তু এরপরই অন্য একটি সমস্যা আমাদের সামনে হাজির হয়।

২০১৩র শাহবাগ আন্দোলনের যখন শুরু হলো ঠিক তখনি দেখতে পেলাম পয়সার উল্টো পীঠ। আমরা যতই চিৎকার করি গলা ফাটিয়ে, আমাদের যতজনই মারা যাক, আমরা ব্লগ লিখে যতই ফাটিয়ে ফেলি আমাদের কণ্ঠস্বর কারো কানে যাচ্ছে না। "তাহরীর স্কয়ার" এর মতো গুরুত্ববহ এই আন্দোলন, অথচ পুরো পৃথিবী নিস্পৃহ আমাদের ব্যাপারে।

এর প্রথম কারণ হলো, আমাদের সমস্ত চিৎকার বাংলায়। আমাদের কোনো ইংরেজী ব্লগার নেই, কিংবা থাকলে খুবই অপ্রতুল এবং যথেষ্ট বেগবান নয়।

আমি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার রীতিমত গবেষণা করে লেখাতে ছয় বছরে মন্তব্য এসেছে ৭৬টা। প্রথম ছয়মাসে হাতে গোনা কয়েকটা। অথচ আমার লেখাটা তখন এ বিষয়ে একমাত্র লেখা ছিলো, যেটা কিনা আমার লেখাকে মূল লেখা ধরে উইকিতে অর্ন্তভুক্ত করে দেয় একজন। তাই আমি সেসময়ে সিরিয়াসলি ইংরেজী ব্লগিংয়ে চলে যাবো ভেবেও ফিরে আসতে বাধ্য হই।

ইংরেজীতে বিশ্বজুড়ে এতো কন্টেন্ট তৈরী হয় প্রতিদিন যে, একজন নতুন ইংরেজী ব্লগার পাত্তাই পায় না। এটা খুবই ডিসকারেজিং। অন্য দিকে বাংলা ব্লগ এখনও শিশুই বলা যায়। এখানে ব্লগিং করে এখনও সহজেই পরিচিতি পাওয়া সম্ভব। তাই যারা ইংরেজী ব্লগিংয়ে আগ্রহী তারাও দেখা যায় আগ্রহ হারিয়ে বাংলা ব্লগিংয়ে লেগে যায়।

দ্বিতীয় কারণ হলো সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান এবং ইন্টারনেটে একটা ভার্চুয়াল দেশের মতো পার্থক্যের তৈরী হওয়া। অর্কুট যখন জমজমাট তখন দেখা গ‌্যালো শুধু তুরস্ক আর ইন্ডিয়ার মধ্যে এটা জমজমাট। ফেইসবুককে চরম কষ্ট করতে হয়েছে ইন্ডিয়ার এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে তাদের নেটওয়ার্কে আনতে। আবার একই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকলেও একেক দেশের লোক তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে নিজেদের দেশের লোকদেরই রাখে। নেটওয়ার্কের গ্রাফ আঁকলে দেখা যাবে একেকটা দেশে বা ভাষার একেকটা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। এ যেনো দ্যা অ্যানেসস্টরেস টেইলে বর্ণনা করা সিকলিড মাছের গল্প, যারা একই ভিক্টোরিয়া হৃদে বসবাস করেও হৃদের একেক অংশে একেকটা দ্বীপের মত পৃথক সমাজ, পৃথক প্রজাতির সৃষ্টি করেছে।

এরপর মোবাইল ফোনের উপর ভিত্তি করে টুইটারের জনপ্রিয়তা যখন উঠতির দিকে স্মার্টফোনের তখন সেটাকে অস্বাভাবিক রকমের উঁচু মাত্রায় নিয়ে গেলো। অথচ এসএমএস করার খরচই হোক কিংবা ইংরেজীতে লেখার অনিচ্ছাই হোক টুইটার বাংলাদেশীদের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় হলো না। সারাবিশ্ব যখন টুইটারে করে তাদের খবর বিশ্বের অন্যান্য যায়গায় ছড়িয়ে দিতে শুরু করলো তখন বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় খবরের মাধ্যমগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে দাঁড়াল এই টুইটার। অথচ বাঙ্গালী সেখানে নীরব।

এই তিনটি কারনে আমরা এখন সারা পৃথিবীর চোখে অন্য কোনো দূর দ্বীপে বসবাস করছি। আমরা গলা ফাটিয়ে শাহবাগের জীবন দিয়ে দিচ্ছি। অথচ পুরো বিশ্বের চোখে আমরা অদৃশ্য। আমাদের সহযোদ্ধা রাজীব শহীদ হয়ে যাচ্ছে অথচ বিশ্বের কারো যেনো গায় লাগছে না। এ যেনো গ্লাসে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করা করে গ্লাসের এপাশের কারোর দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার এ ব্যাপারে সজাগ হয়ে টুইটার এবং ইংরেজী ব্লগে আলোচনা শুরু করলেও সেটা এখনো অপ্রতুল। তাই আপনি যদি শাহবাগ আন্দোলনের সাথে একাত্ম বোধ করেন তাহলে দিনে অন্ততঃ কয়েকটি করে হলেও টুইট শুরু করুন। সঙ্গে ব্যবহার করুন #shahbag। এ বিষয়ে ইশতিয়াক রউফের এই লেখাটা আপনার খুব কাজে আসবে। তাছাড়া সচলায়তনের ইংরেজী সেকশন, গ্লোবাল ভয়েসেস ব্লগ, সহ অন্যান্য ইংরেজী ব্লগে লিখতে থাকুন।

আমরা বাংলা ব্লগিং করে যে আন্দোলনের সূচনা করেছি ঠিক সেই আন্দোলনকেই ফিনিষ লাইনে পৌছে নিতে আপনার অংশগ্রহন এখন খুব জরুরী। তাই দেরী না করে কাজে লেগে পড়ুন। বাংলা ব্লগিংয়ের তোপ দাগা জারি থাকুক, কিন্তু সেই সাথে যেন চলতে থাকে টুইটারের স্টেনগান আর ইংরেজী ব্লগিংয়ের তোপও।


মন্তব্য

সুমাদ্রী এর ছবি

যারা ইংরেজী ভিন্ন বিদেশি ভাষা যেমন ফ্রেন্চ, জার্মান,স্প্যানিশ,ইতালিয়ান,রাশিয়ান,সুইডিশ,আরবী,চাইনিজ ভাষাগুলো জানেন তারা এইসব ভাষার নামকরা সংবাদ সংস্থাগুলোয় টুইট করতে পারেন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

উড়ুউড়ু এর ছবি

আমি আপনার ব্লগিং এর পয়েন্টটির সাথে একমত কিন্তু বিশ্ব যে চুপচাপ তার জন্য ইংরেজী ব্লগিং মূল ভুমিকা নয়। আমাদের দেশে তাজরিনে আগুন লাগে ওরা (বিশ্ব মিডিয়া) টের পায় সবার আগে, আমাদের বন্যা হয়, আইলা বা সিডর তখন বিশ্ব মিডিয়া কই খবর পায়? আমাদের রুগ্ন, জীর্নতা ওদের খুব পছন্দ। শাহবাগের যে আগুন, যে একতা, জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উচু করার ঘোষনা প্রতিদিন শাহবাগ দিচ্ছে তাকে হাইলাইট করা ওদের কাজ নয়। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে যে 'কিছু একটা' হচ্ছে এইটা জানতে বিশ্ব বাসির অনেক দিন লেগেছিল।

সৌরভ কবীর এর ছবি

চলুক

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বডি কাউন্ট ম্যাটারস। এজন্য মৃত‌্যুর সংবাদ তাড়াতাড়ি ছড়ায়। তাছাড়া তাজরিনের সাথে আমেরিকার ওয়ালমার্ট জড়িত ছিলো, যেটা এমনিতেই কন্ট্রোভার্সিয়াল একটি প্রতিষ্ঠান। আমার ধারণা, এই দুই কারণে এটা বেশী ছড়িয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্ব আমাদের কাছে কতো এটা সঠিকভাবে বিশ্বের অন্য কারো কানে পৌছায়নি। সেজন্যই এই পার্থক্য।

দিগন্ত এর ছবি

মার্কিণ মিডিয়াতে বেশী করে ওয়ালমার্ট সংক্রান্ত খবর হিসাবেই বেশী আলোচিত হয়েছিল প্রথমে। আমেরিকাতে ওয়ালমার্টের সমালোচনা করার প্রবণতা (সঙ্গত কারণেই) মিডিয়ার মধ্যে আছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ঠিক এই বিষয়টা উপলব্ধিতে এনেই আমি সম্প্রতি সচলায়তনে একটা ইংরেজি ব্লগ লিখেছি। বিষয়গুলও আন্ত্ররজাতিক পরিসরেও পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। সচলে নীড়পাতার নীতিমালার কারনে এবং অতি স্বল্পসংখ্যক ইংরেজি ব্লগের কারনে হয়তো দ্বিতীয় ব্লগটি প্রকাশ হতে অনেক সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে আপনি কয়েকটি জনপ্রিয় কম্যুনিটি ব্লগের ঠিকানা আমাদেরকে দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন যেখানে লিখলে বেশি সংখ্যক পাঠককে রিচ করা সম্ভব।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

শাব্দিক এর ছবি

এত বড় একটা আন্দলন, কিন্তু বিশ্বের নিউজ সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে যথেষ্ট নির্লিপ্ত নয় কি? এটা কিছুটা উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হয় না?
ব্লগ ছাড়াও ফ্লিকার এবং ফেইসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে ছবিগুলি ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন, অব্যশই উপযুক্ত ক্যাপশন সহকারে। অভ্রের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে কিছুটা কমানো ভাল।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

দিগন্ত এর ছবি

বাংলায় সবাই ব্লগিং করার ফলে শাহবাগের মত আন্দোলন সহজে তৈরী হয়েছে। আবার সবাই কেবল বাংলাতেই ব্লগিং করছে বলে বাইরের পৃথিবী থেকে বাঙালী ব্লগারেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এই পুরো বিষয়টাই আমার মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। বাংলাদেশ যেহেতু এক দেশ-এক ভাষার নীতিতে চলে, তাই দেশের নিউজ-মিডিয়া সহ সব প্রকাশনাই বাংলা-ফোকাসড। আপনার লেখায় যেমন এসেছে তেমন এর লাভ-ক্ষতি দুইই আছে। কিন্তু এটা থেকে বেরোবার তাৎক্ষণিক কোনো উপায় নেই। সবাই এখন থেকে ইংরেজীতেও ব্লগ লিখলে প্রচুর ইংরেজী কন্টেন্ট তৈরী হবে বটে কিন্তু তার প্রচার সুনিশ্চিত করা খুবই দুরূহ কাজ। সুতরাং এখন থেকে অবস্থা বুঝে ইংরেজীকে কিছুটা প্রোমোট করলে হয়ত বছর পাঁচেক পরে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

এর পরেও সমস্যা আছে। ইংরেজীতে লেখার বিষয়বস্তু গ্লোবাল না হলে প্রচার হওয়া শক্ত। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা আরও শক্ত। তবে প্রচেষ্টা না করলে ভবিষ্যতেও হবে না এটা সঠিক।

উল্টোদিকে সারা বিশ্বের মিডিয়ারও উচিত ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কি লেখা হচ্ছে বা কি নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা নিয়ে কিছুটা লেখালিখি করা। তারাও প্রচেষ্টায় আছে আশাকরি। দুইদিক থেকে হাত বাড়িয়ে দিলে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যেই উন্নত রিপোর্টিং পাবো বলে আশাকরি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

|জনারণ্যে নিঃসংগ পথিক | এর ছবি

টুইটারে একে কে ৫ টা আইডি শ্যাষ হয়ে গেলো, @mahadib এর জন্য দুঃখ বেশী লাগতেসে।
ছাগুর পাল বড় উত্যক্ত করতেছে, রাজীব এর নৃশংস খুনের পর একটু স্তিমিত হয়েছিলো, আজ থেকে আবার শুরু।
এখন #shahbag দিয়ে যারা করছেন টুইট, খুব বেশী মিডিয়া ট্যাগিং পাচ্ছি না। zuberino
কেও পাচ্ছি না।

ইশতিয়াক রউফ ভাই ডেভিড বার্গম্যানকে পুরা মাইনকা চিপায় ফেলসিলেন, একটা পোস্ট দেন ভাই- টুইট পড়ে পড়ে পুরা বোঝা যায় না।

ভাই ব্রাদার রা, একটা উইন্ডো খুলে রেখে আসেন না , টুইটাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

দেখি একটা পোস্ট দিবো অচিরেই। আলস্য ঝাড়তে হবে আর কি।

দিগন্ত এর ছবি

অফ টপিক - ২০০৭ এর পরে আর আপনার ব্লগে পোস্ট নেই কেন?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওই সময়টা সামহোয়ারইন ব্লগে ছাগুদের অত‌্যাচারে সরে যাবো ভেবে ইংরেজি ব্লগিং এক্সপ্লোর করছিলাম। সচলায়তন শুরুর পর আর সময় দেয়া হয়নি ইংরেজি ব্লগে।

দিগন্ত এর ছবি

কিন্তু যে টপিক-গুলো নিয়ে ওখানে লিখেছিলেন সেগুলো নিয়ে বাংলায় লেখা নেই। লেখা শক্তও। আপনি এখন আবার ওখানে উদ্যোগী হয়ে ব্লগিং করতে পারেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

পোস্টের বক্তব্যের সাথে জোরালো সহমত। ইংরেজি ব্লগিংটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই আন্দোলন আসায় আমিও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। গ্লাসগো সিটি কাউন্সিলে হিউম্যান চেইন করার জন্যে অনুমতি চেয়ে যে আবেদন করেছিলাম, সেখানে রেফারেন্স দিতে গিয়ে দেখি প্রায় তেমন কিছুই নাই! আসলে আমাদের সব চিৎকার বাংলায়। এমন কি লক্ষ্য করে থাকবেন, বাহিরে যে প্রোটেস্ট গুলো হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশের পোস্টারই বাংলায় লেখা। এ কারণে মূলতঃ আমাদের চিৎকার বাহিরের পৃথিবীতে পৌছাচ্ছে না। ইংরেজির প্রতি আমার তেমন কোন টান নেই, কিন্তু এই ভাষাটার প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই আমাদের প্রচার ইংরেজিতেও সমান ভাবে করতে হবে।

অমি_বন্যা এর ছবি

সহমত ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খুবই সত্যি।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

মুর্শেদ, আপনার সাথে ভীষন ভাবে একমত । ব্যাক্তিগতভাবে বাংলা হরফে লিখতে পারার আনন্দটা অপার্থিব । আমার এক বন্ধু (শাহ্‌ আসাদুজ্জামান) প্রথমে শাব্দিক ও পরে অভ্র এর সন্ধান দিয়েছিলেন । তার কাছেই প্রথম বাংলা ব্লগের খোঁজ পাই । ভীষনরকম আন্দোলিত অনুভূতি ছিল সেটা ।

কিন্তু বিশ্বের কাছে আমাদের ন্যায় সংগত চিৎকারটা পৌঁছাতে হলে ইংরেজীতেই ব্লগ লিখতে হবে । এছাড়া কোন উপায় নেই ।

আমি এ পর্যন্ত্য ইংরেজীতে এই লেখাটি ছাড়া অন্য কিছু পাই নি । ইশতিয়াক রউফ এর মত কিছু ব্লগার টুইটারে আপ্রাণ কী-প্যাড চালাচ্ছেন । কিন্তু অন্যদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে ।

আরেকটা ব্যাপার আমার কাছে খুব জরূরী মনে হয়- আমাদের দেশের ইতিহাস ইংরেজীতে আন্তর্জালে ছড়িয়ে দেয়া । এতে দু’টো কাজ হবে, সারা বিশ্ব সত্য ইতিহাস জানবে । দ্বিতীয়তঃ প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম জানবে কত রক্ত দিয়ে কেনা এই স্বাধীনতা ।

অফ টপিকঃ আমার ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণে দেখেছি সচলায়তনের ইংরেজী পেজটিও খুব অবহেলিত । এটিও কিন্তু খুব কাজে আসতে পারে এই মুহুর্তে । এখন যে লেখাগুলো আসছে সচলায়তনের ইংরেজী পেজটিতে, সেগুলোও শেয়ার করা যেতে পারে ভীনদেশীদের সাথে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সচলায়তনের ইংরেজী পেজটিও খুব অবহেলিত

একমত। এটি ঠিক করার চেষ্টা করছি আমি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আজকে খানিকটা ঠিক করা হয়েছে। ফন্ট বদলে, এবং কিছু অনুবাদ (তারিখ, সদস্যের নাম, পাশের কিছু প্যানেল নাম বদল, ভাষা অনুযায়ী ফিল্টার) করা হয়েছে। আরো ঠিকঠাক করার ইচ্ছে রাখি।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

মুর্শেদ, অনেক ধন্যবাদ । সচলায়তনের মডারেশনের প্রতি মুগ্ধতা জানানোর এই সুযোগটি আরেকবার পেয়ে তা জানাচ্ছি ।

আমি যে কারনে সচলায়তনের ইংরেজী পেজটিকে আরো ফোকাসড ও সক্রিয় দেখতে চাই তা’হলঃ

১. দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের যে কোন ইস্যুতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের (যারা বাংলায় লিখতে পড়তে পারেন না) একটি প্লাটফর্ম হিসেবে সচলায়তন খুব ভাল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস ।

২. যারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বেড়ে উঠছে, দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হিসেবে তাদেরকে শেকড়ের কথা বলার কাজটিও সচলায়তন নিতে পারে । আমার স্বল্পকালীন দেখার মধ্যে প্রচুর মেধাবী ও সম্ভাবনাময় লেখকের দেখা পেয়েছি এখানে, যাদের নাম আমি উল্লেখ করব না । কিন্তু এঁরাই যদি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ হাতে নেন, তাহলে দেশ থেকে দূরে থাকার যে অহর্নিশি কষ্ট তা বোধহয় কিছুটা লাঘব হবে । দ্বিতীয় প্রজন্মের বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা বাংলায় খুব দক্ষ হবে না, এটাই বাস্তবতা । কেউ যেন ভাববেন না, আমি বাচ্চাদের বাংলা শেখানোর বিরুদ্ধে বলছি । আমরা যতই ব্যক্তি উদ্যোগে ঘরে ঘরে বাচ্চাদেরকে বাংলা শেখাই না কেন, একটা বয়সের পরে জোর করে আর সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না পারিপার্শিকতা ও বাস্তবতার কারনেই । কিন্তু এইসব শিশু-কিশোররা কি জানবে না লাল-সবুজ পতাকার কথা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কথা, সালাম-রফিক-জব্বারের কথা, রুমী-আজাদ-বদি-চুল্লুর কথা ?

বাংলাদেশের ইতিহাস সহজ সরল ভাষায় শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে প্রমান্য দলিল-দস্তাবেজ সহকারে যদি লেখার কাজটি নেয়া হয়, তাহলে অনেক বড় একটি কাজ হবে বলেই আমার বিশ্বাস । প্রসঙ্গক্রমে “বাংলা নামে দেশ” বইটির কথা মনে পড়ছে । এই বইটিতে ছবিগুলো ছিল ভীষন শক্তিশালী । শহীদ জননীর “একাত্তরের দিনগুলি” বইটির ইংরেজী অনুবাদ আমি নিজেই দেখেছি । সেই বইটিও যদি ক্রমান্বয়ে সচলায়তন প্রকাশ করে, তাও একটি কাজ হবে বলি মনে করি । মোট কথা, সচলায়তন আমাদের ইতিহাসের বলা ও না-বলা অনেক গল্পই তুলে আনতে পারে, যা আসলেই অনেক বড় কাজ হবে ।

৩. এছাড়াও যে কোন তাৎক্ষণিক ইস্যুতে বহির্বিশ্বকে জানানোর কাজটিতো আছেই ।

আরো একবার সচলায়তনের মডারেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, লেখার মান ধরে রাখার জন্য । আমি নিশ্চিত অনেক সময় ও শ্রম আছে এর পেছনে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

খুঁজতে খুঁজতে “বাংলা নামে দেশ” বইটির লিঙ্ক পেয়ে গেলাম ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অয়ন এর ছবি

টুইটারের সাথে সাথে রেডিট-এ পোস্ট করা দরকার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো রেডিটে ভালো নজর রাখে।
নিচের দুটো সাবরেডিটে টুইটারের মতোই লিংক সাবমিট করতে পারেন।
http://www.reddit.com/r/bangladesh
http://www.reddit.com/r/worldnews

অনিকেত এর ছবি

আমি reddit এ তাহমিমা আনামের গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক দিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম worldevents এ। এখন পর্যন্ত ২৮টা আপভোট আর পাঁচটা কমেন্ট পড়েছে। আপনারা যারাই পারেন গিয়ে লিঙ্কে আপভোট দেন, অথবা নতুন পোষ্ট করুন। reddit এর বিশাল ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করি।
আমার দেয়া পোষ্টের লিঙ্কঃ http://www.reddit.com/r/worldevents/comments/18o536/as_rest_of_world_casts_their_attention/

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

থায়েব্বাই আপনি তাহলে রেডিট-এর দায়িত্ব নিলেন। নিজের সাথে কিছু লোক যোগাড় করে নেন।

ক্লোন৯৯ এর ছবি

চলুক

রাব্বানী এর ছবি

ক্ষতি না বলে বাংলা ব্লগের সীমাবদ্ধতা বললে মনে হয় সঠিক হত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একমত।

সচল জাহিদ এর ছবি

একমত মুর্শেদের সাথে। ঠিক এই কারনেই সচলায়তনের আমি, ফাহিম, ইশতিয়াক ও শান্তুনু (স্বপ্নহারা) এবং সচলায়তনের বাইরে আরো দুই জন ( অনু ভাই, রুমানা ) মিলে শাহবাগ ইস্যুতে এই লেখাটি লেখার পর এর ইংরেজী ভার্শন পূণঃপ্রকাশ করি বিডিনিউজে, যেটা জোহরা ফেরদৌসী উপরে মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন। শুধু শাহবাগ ইস্যু নয়, অন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ ইস্যুতেও ইংরেজী ব্লগিং এর গুরুত্ত্ব রয়েছে। সচলায়তনের ইংরেজী সেকশন কিভবে আরো ফোকাসড করা যায় সেটা নিয়েও ভাবা উচিৎ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রানা মেহের এর ছবি

খুব সময়োপযোগী লেখা মুর্শেদ।
আরেকটা ব্যাপারে আমরা প্রায়ই ভুল করি। আমাদের শ্রম মেধা বাঁশের কেল্লা টাইপ জায়গায় খরচ করি।
কোন জায়গায় কথা বলতে হবে এটা বোঝা খুব জরুরী

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

নীরা

রোবোট এর ছবি

আমি চতুর্মাত্রিক ব্লগের ব্লগার। সেখানেও বলেছি শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে কাউকে একটা ইংলিশ ব্লগ লিখতে। ফেইসবুকেও মনে হয় ইংলিশ নোট লেখা যায় পাবলিক করে। ইউটিউবে ছোট ছোট ভিডিও আপলোড করাটাও একটা অপশন হতে পারে।

নীপবন এর ছবি

চলুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজী ব্লগের প্রয়োজনটা বাংলার তুলনায় ১০% এর বেশী মনে করি না। ভাগ্যিস বাংলায় ব্লগ লেখার সূচনা হয়েছিল, নইলে আজকে শাহবাগে এত লাখো মানুষের জাগরণটাকে পেতাম না। ইংরেজীতে আমরা যত চিৎকারই করি না কেন, যত বেশী মানুষই ব্লগিং করি না কেন তা যেসব জায়গায় পৌঁছাবে সেখান থেকে এত বিশাল একটা গনজাগরণের শক্তি আসতো না। আমাদের দরকার ছিল আমাদের চিৎকারটা বাংলাদেশের মানুষের কানে পৌঁছানো। এবং সেটা পৌছানো গেছে বাংলা ব্লগের কল্যাণে। বাংলাদেশে ইংরেজী ব্লগের দাপট থাকলে সেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়া বা জনমতের কাছে পৌঁছাতো ঠিক, কিন্তু সেটা আমাদের দাবী আদায়ে কতটুকু কার্যকর হতো তাতে সন্দেহ আছে। ইংরেজী ব্লগের দরকার তাদের বেশী যাদের বাইরের পরাশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের আপাততঃ সে সম্ভাবনা নেই মনে হচ্ছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ ব্লগগুলোর ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করা যেতে পারে। নতুন কিছু লেখা কঠিন, কিন্তু অনুবাদ করা বেশি শ্রমসাধ্য হবার কথা না

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দারুন আইডিয়া!!! আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটা করতে আগ্রহী যদি কেউ চান তবে ইংরেজী ল্যাঙ্গুয়েজের মান নিশ্চিত করতে পারবো না।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মাহবুব, http://en.sachalayatan.com/lyonsbane/48009 এই ব্লগটিতে আপনার-আমার মন্তব্য ঠিক আছে, ছবিও ঠিক আছে কিন্তু নামগুলোর জায়গায় সব M. Sarwar হয়ে গিয়েছে!

সেরেছে রে, সবগুলোরই অথর দেখছি M. Sarwar!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কালকে ঠিক করতে গিয়ে ভুল করেছি একটা। সন্ধ্যায় ঠিক করে দিবো।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিক করেছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।