বাংলা বানানরীতি নিয়ে দুকথা

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৪/২০০৮ - ১১:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এনসিটিবি আজ পর্যন্ত তাদের প্রকাশিত বই সম্পাদনার কাজে তাদেরই প্রকাশিত বানানরীতির বইখানা হাতে ধরিয়ে দেয় । বানানরীতি নিয়ে বাংলা একাডেমির একটি পুস্তিকা আছে, বেশ ভালো একটি বানান অভিধান তো আছেই । কিন্তু যেটা প্রয়োজন তা হলো, সর্বত্র এগুলোর ব্যবহার সহজ ও স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত করা।
বাংলা একাডেমি তার বানানরীতিতে স্পষ্ট বলছে_ "

ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে। যেমন: অহংকার, ভয়ংকর। বিকল্পে ঙ লেখা যাবে। ক্ষ এর পূর্বে ঙ হবে।যেমন: আকাঙ্ক্ষা।"
কিন্তু বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের যে বৈশিষ্ট্য তার সাথে কথাটা মিললো না। বাংলা বর্গীয় বর্ণে র একটা চমত্ কার ছক আছে। সে ছক অনুযায়ী ক বর্গের শেষে নাসিক্য বর্ণ 'ঙ' , চ বর্গের শেষে ঞ , ট বর্গের শেষে ণ- ইত্যাদি। এখানেই কিন্তু সূত্র দেয়া আছে যে, ক বর্গের সাথে যুক্তবর্ণে ঙ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সংস্কৃতে যাই থাকুক না কেন বাংলা একাডেমি বিধানটি সহজ করে দিতে পারতো বলে আমি মনে করি। পদের অন্তস্থিত 'ম' এর গায়েবি উপস্থিতি নিয়ে অনেকেই আতঙ্কে ( অন্তে 'ম' নেই তাই আতংক হবে না - বুঝুন ঠেলা) ভুগবে।

একই ভাবে বাংলা একাডেমি র বানানরীতি পুস্তিকার (২০০০) পৃষ্ঠা-১৪ তে বলা আছে অ-তত্সম শব্দের যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। যেমন : 'ঘন্টা' নাকি 'ঘণ্টা' কোন্ টি সঠিক তা তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। কি সাংঘাতিক ! তা হলে আমরা যাই কোথায় ? খুব পরিচিত কিছু সংস্কৃত শব্দ বাদ দিয়ে 'ণ'-ত্ব বিধি মানার এত বাধ্যবাধকতা থাকবে কেন আমি বুঝি না। সে হিসেবে ঘন্টা শব্দটি অনায়াসে 'ন' দিয়ে লেখা যায় । 'ণ' -ত্ব 'ষ- ত্ব এর জায়গা আমরা যত ছোট করে নিয়ে আসবো বাংলা বানানের দুরবস্থা তত কমবে বলেই আমি মনে করি।


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

বড্ড কঠিন বিষয়, মাঝে মাঝে খাবি ভাই!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বাংলা বানানের এখনও শিশুকাল চলছে । বিদ্যাসাগরের পরে আর এগুতে পারছি না যেন ।

যার যা ইচ্ছা লিখে ফেলে ।
আমিও এভাবেই লিখে ফেলি ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

একই ভাবে বাংলা একাডেমি র বানানরীতি পুস্তিকার (২০০০) পৃষ্ঠা-১৪ তে বলা আছে অ-তত্সম শব্দের যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। যেমন : 'ঘন্টা' নাকি 'ঘণ্টা' কোন্ টি সঠিক তা তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। কি সাংঘাতিক !

হুমম। ...সাংঘাতিক বিষয় আরও আছে। বাএ'র মতে, বিদেশি সব শব্দের বানান রস্বই (ি) হবে। অথচ তারা নিজেরাই দীর্ঘই (ী) দিয়ে 'একাডেমী' লিখে আসছে।

তবে গত কয়েক দশকে বাংলা বানান রীতির সবচেয়ে ক্ষতি করে চলেছে বোধহয় সংবাদ পত্র। ...এর মধ্যে ইংরেজি শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার, বিচিত্র বানানরীতির প্রয়োগ করে দৈনিক যাযাদি যথেষ্ট বিতর্ক তুলেছে।

আমি নিজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করার সুবাদে বিগত বছরগুলোতে একেক সংবাদপত্রের একেক বানানরীতি লিখতে লিখতে এখন 'সঠিক বানান রীতি' নিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাংলা একাডেমি মাত্র কিছুদিন আগে কিন্তু তাদের নাম একাডেমি হিসেবে পরিবর্তন করেছে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে

আর

তবে গত কয়েক দশকে বাংলা বানান রীতির সবচেয়ে ক্ষতি করে চলেছে বোধহয় সংবাদ পত্র।

১০০% ঠিক
তার মধ্যে ২০% জেনে আর ৮০% না জেনে

হিমু এর ছবি

সাধারণ যে ভুলগুলো আমরা সচরাচর করে থাকি, সেগুলো নিয়ে কেউ যদি আলোকপাত করতেন, সবাই উপকৃত হতাম।

কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

  • কী বনাম কি। আমি কি বলবো? আমি কী বলবো? প্রথম প্রশ্নে আমার জিজ্ঞাসা বলা অথবা না বলা নিয়ে। দ্বিতীয় প্রশ্নে জানতে চাইছি বক্তব্য নিয়ে।

  • দূ বনাম দু। কেবল দূরত্ববাচক "দূর" এ দীর্ঘ ঊ-কার বসবে। উপসর্গ দু সবসময়েই হ্রস্ব ঊ-কার। যেমন দুর্জন, দুর্দিন, দুঃসময়, দুরাচার, দুর্নীতি।

  • চন্দ্রবিন্দু শব্দের যে কোন একটি জায়গায় বসিয়ে দিলেই হয় না, নির্দিষ্ট বর্ণের মুন্ডুতে বসাতে হয়। যেমন সোঁদরবনের কেঁদো বাঘ। সোদরঁবনের কেদোঁ বাঘ কখনোই নয়।

  • দীর্ঘ ঈ-কার বনাম হ্রস্ব ই-কার। এ নিয়ে গুরুতর আলোচনা আশু প্রয়োজন। কখন টেনে লম্বা করতে হবে আর কখন চেপে খাটো করে দিতে হবে, এই লঘুগুরু জ্ঞান বড় জরুরি।

  • দাড়ি আর দাঁড়ি। সেইসাথে না দাড়িয়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা। সুকুমার রায়ের "দাঁড়ের কবিতা" এ প্রসঙ্গে প্রাতস্মরণীয় (প্রাতঃস্মরণীয় এখন আর লেখা হয় না বলে জানতাম)।

  • স্মরণ আর সরণ, কিন্তু স্বরণ বলে বোধহয় এখনও কিছু বাংলায় ব্যবহার করা হয়নি (কার্টুনে নেপথ্য কণ্ঠদানের ক্রিয়াকে স্বরণ বলা যেতে পারে)। এ কারণেই আমরা বলি রবীন্দ্র সরণী (সরণী মানে পথ), আবার রবীন্দ্র স্মরণসভা করা হয়।

  • ড় বনাম র।

  • প্রভৃতি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আরিফ জেবতিক এর ছবি

খালি দরকার দরকার করেন কেন ? নিজেই আলোচনাটা শুরু করেন না কেন স্যার ?

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

হিমু এর ছবি

মোজো পাচ্ছি না কেন যেন। তাছাড়া আমার জানাতেও ত্রুটি থাকতে পারে। একেবারে দলিলদস্তাবেজ বগলে করে কেউ বসলে ভালো হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

দরকারী আলোচনা।

কিন্তু দরকারি হলেই চলতো। তবে এখন্ও চোখে সয় না। কর্মচারিটা সয়ে গেছে।
একাডেমির নিয়ম-কানুন দিয়ে শেখানো কঠিন।
ভালো ভূমিকা রাখতে পারে মিডিয়া আর টেক্সট্ বুক বোর্ড।

তারা যেভাবে লিখবে সেভাবেই ছাত্ররা শিখবে।

সবগুলো পত্রিকা মিলে একটা বানানরীতি মেনে নেয়া উচিত। সাহিত্যিকদের জন্য তো স্বাধীনতা রয়েছে। সংবাদে বানানের বিশৃঙ্খলা না করলে পাঠক রক্ষা পায়।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

একটা সময় ছিলো যখন সঠিক বানান শেখার প্রধান উপায় হিসেবে বলা হতো বইপত্র ও সংবাদপত্র-সাময়িকী পড়ার সময় বানানগুলি লক্ষ্য করা। অন্তত আমি সেভাবেই শিখেছি (যতোটা শিখেছি আর কি!), ব্যাকরণের নিয়মকানুন তেমন জানি না আজও।

কিন্তু এখন বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত বই ও পত্রিকাকে আর নির্ভরযোগ্য ভাবার জো নেই। বরং তাতে বিভ্রান্তি বাড়ার সম্ভাবনা পঞ্চাশ ভাগ, আর জানা বানান ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা একশো ভাগ। বড়ো বড়ো নামী লেখকদের বইয়ে ভুল বানান ও বাক্যের ছড়াছড়ি। সব ক্ষেত্রে কিন্তু প্রুফ রীডারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, একই লেখকের এক একাধিক বইয়ে একই ভুল বারবার হতে থাকলে তা প্রুফ রীডারের দায় বলে মানা কঠিন। সংবাদপত্র বিষয়ে বিপ্লব রহমান বলেই ফেলেছেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব দরকারী আলোচনা, কিন্তু পড়তে নিলেই ক্লাসের কথা মনে আসে। ব্যাকরণের ভয়ে জ্বর চলে আসত। তবুও মানি, পড়া উচিত, শেখা উচিত।
আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারেন......বাংলার পূর্নাংগ অভিধানের কোন সফট্‌ওয়ার বাজারে এসেছে কি না? অনলাইন নয়।

কালবেলা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।