ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বাংলাভাষা-পীড়ন : অজ্ঞতা নাকি অসচেতনতা ?

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: শনি, ০১/০৮/২০১৫ - ৮:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন চিত্র, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, খবরসহ সকল অনুষ্ঠানে বাংলা ব্যবহারের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত। এক শ্রেণির উপস্থাপক অযথাই বাংলা-ইংরেজি চটকিয়ে এমন এক অদ্ভূতুড়ে ভাষার জন্ম দেন যা রীতিমত কানের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাভাষা থেকে ‘র’ উঠে যাবার অবস্থা হয়েছে ‘ড়’ এর তোড়জোরে। বিশেষ করুণ হাল হয়েছে ‘ফ’ এবং ‘ছ’ এর। আর শব্দের ও বাক্যের মধ্যে বিরতি, টান বা স্বরের ওঠানামা অর্থতত্ত্বের সকল বিধিব্যবস্থা উল্টে ফেলেছে। ইংরেজিতে এই জ্ঞানকে বলে এ্যানোটেশন, কনোটেশন। এর অজ্ঞতার ফলে বাক্যের কী দশা হয় তার একটি উদাহরণ -
‘আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি। সম্পন্ন হয়েছে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত সকল প্রস্তুতি ।’ এই বাক্যের মধ্যে দাড়ি ছাড়াও কোথায় কোথায় বিরতি দিতে হবে তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু আমাদের গণমাধ্যমের উপস্থাপক বা পাঠক যদি এভাবে পড়েন তাহলে ভাষার কী হাল হয় তারা সেটাও তারা বুঝতে অক্ষম-- আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর। হতে যাচ্ছে ভা-রত--বাংলাদেশ। স্থল-সীমান্ত চুক্তি, সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। গৃহীত সকল প্রস্তুতি। এর সাথে ‘টেইল ড্রপ’ (মানে শব্দ বা বাক্যের শেষাংশের আওয়াজ বা প্রজেকশান কমে যাওয়া) তো একটা মহামারীতে পরিণত হয়েছে। আরও একটা বিষয় লক্ষণীয়, প্রায় সব উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক একই ধরন-ধারনে কথা বলেন, স্বকীয়তা বা নতুনত্ব নেই বললেই চলে। অবশ্য সবক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই, বেশ চমৎকার পরিবেশকও আছেন। তবে তাদের সংখ্যা হাতে-গোণা।

রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখলে মনে হয়, আমাদের খাবারের তালিকা থেকে পিঁয়াজ, রশুন, আদা, লঙ্কা, ঝোল ইত্যাদি শব্দ তো উঠেই গেছে, আমরা খাচ্ছি আনিয়ন, গার্লিক, জিনজার, পিপার, গ্রেভি ইত্যাদি । ‘এই ডিশের প্রিপারেশনটিতে লাগবে বয়েলড এগ, অল পারপাস ফ্লাওয়ার, সল্ট, ব্লাক পেপার’ ইত্যাদি ধরনের বর্ণনা খুব সাধারণ। তাছাড়া নতুন উৎপাত যোগ হয়েছে ক্রিকেট টকশো বা খেলার সংবাদে দেদার ইংরেজি শব্দ ব্যবহার। খেলার মাঠের বাংলা ধারাভাষ্যের দারুণসব গরম গরম শব্দ আজকাল আর শোনাই যায় না, সোজা ব্যাট-ঘুর্ণিবল-সীমানাছাড়া- দূরপাল্লার শট- বোঝাপড়া- এরকম আরো বহু চালু বাংলা প্রতিশব্দ খেলার ভাষ্য থেকে হারিয়ে গেছে কেবল হাইব্রিড উপস্থাপনার দোষে । সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গানের অনুষ্ঠানের উপস্খাপকদের। তারা মুখের ভিতর বাংলা-ইংরেজির মুড়ি-ঝাঁকানির মাধ্যমে এমন সব বাক্যবমি করেন যা দুর্গন্ধ ছড়ায়।

দুঃখের বিষয় হল, এগুলোর বাংলা ভাষ্য শুনতে হলে আপনাকে কলকাতার চ্যানেল ঘাঁটতে হবে, ঝরঝরে অনাড়ম্বর বাংলায় তারা যেসব অনুষ্ঠান করছে সেগুলোতে ইচ্ছে করলেই তারা ইংরেজি ও হিন্দির হুলুস্থুল বাধিয়ে দিতে পারেন, ওই ভাষাগুলো তারা আমাদের উপস্থাপকদের চেয়ে কম জানেন না। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে সুন্দর বাংলা শব্দ বাদ দিয়ে ভুলভাল অথবা আধাখেচড়া ইংরেজি চালানোর মধ্যে কী বাহাদুরি আছে আমরা বুঝতে অক্ষম।

এসব ব্যাপারে অনুষ্ঠানের প্রযোজক-উপস্থাপক নিজে একটু সতর্ক হয়ে এবং অতিথিকে অনুপ্রাণিত করে দেখতে পারেন- ফল খারাপ হবে না।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

চলুক

ভালো পর্যবেক্ষণ

মাহবুবুল হক এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

স্পর্শ এর ছবি

খুব ভালো লিখছেন ভাই। হীনমন্যতা। আসল কারণ হীনমন্যতা। নিজের ভাষার মধ্যে যতবেশি 'রাজভাষা' ঢুকানো যায় ততই জাতে ওঠা যায়।

এমনকি 'ছ' এর বদলে 'স' ব্যবহার হচ্ছে আজকাল। পাকনা পুলাপাইন 'আছে' কে লেখে 'আসে'। এই সবই রাজভাষার 'এস' এর প্রভাব।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মাহবুবুল হক এর ছবি

কোনটা রাজভাষা হবে সেটা নির্ভর করে, ক্ষমতার উপর। আগে ছিল অস্ত্রের- এখন বুদ্ধি আর টাকার।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক আমাদের উপস্থাপকরা চলেন সময়ের সাথে-যার গালভরা ইংরেজি ব্যবহারিক শব্দ-‘ট্রেন্ড’! টেলিভিশনের খুবই জনপ্রিয় এক উপস্থাপক কথায় অ-কথায় এত বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন আর চিল্লানি দেন যে বলার মতো নয় অথচ তাঁর জনপ্রিয়তা প্রায় আকাশচুম্বী!

দেবদ্যুতি

মাহবুবুল হক এর ছবি

কে সে ?

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আছেন তিনি একজনা চোখ টিপি

দেবদ্যুতি

মাহমুদুল হাকিম তানভীর এর ছবি

যুক্তপূর্ণ লেখা!

মাহবুবুল হক এর ছবি

হাসি

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বিশেষ করে এফ এম ড়েডিও (উচ্চারণটা তো এভাবেই করে, তাই না?) ডিজেরা ভাষার বারোটা বাজাতে আর কিছু বাকি রাখেনি। সাথে কিছু আধুনিক নাটক-সিনেমা। তবে উপস্থাপনায় ভাষার এরকম অপব্যবহার খুবই শ্রুতিকটু লাগে।

কিন্তু আপনার "কলকাতার চ্যানেল ঘাঁটতে হবে, ঝরঝরে অনাড়ম্বর বাংলায়" তারা উপস্থাপনা করে যাচ্ছে, এটার এখনো প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য আমার হয়নি (যদিও কলকাতার চ্যানেল নিজে দেখিনি কখনো, কিন্তু বাবা-মায়ের দেখার সুবাদে নিজের ঘর থেকে আওয়াজ পেয়েছি নিয়মিত)।

আর খেলার মাঠে "বাংলা ধারাভাষ্যের দারুণসব গরম গরম শব্দ" কি উঠেই গেছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলা ধারাভাষ্যকাররা যেরকম ধারাভাষ্য দেন তা পছন্দ করি না। খেলার গতির সাথে তা তাল তো মিলাতেই পারে না, বরং বিরক্তির উদ্রেক করে। কিন্তু তার মানে এই না যে গতিময়তার জন্য "বাংলিশ" শব্দ আমদানী করতে হবে।

____________________________

মাহবুবুল হক এর ছবি

আপনার বয়স কত জানি না। আমরা যখন আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার রেডিও কমেন্ট্রি শুনতাম তখনকার কথা বলেছি। তাদের কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন। সত্যিকার অর্থে ধারাভাষ্য কতটা প্রাণবন্ত হতে পারে তা রেডিওর ধারাভাষ্য না শুনলে বোঝা যায় না। আমরা টিভিতে খেলা দিয়ে রেডিওর ধারাভাষ্য চালু করে দিতাম। এখন তো আবার এফএম-এও ক্রিকেট ধারাভাষ্য দেয়, শুনলে পিত্তি জ্বলে যায়।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

কেনিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেয়ে বিশ্বকাপে ওঠার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? প্রায় পুরো টুর্ণামেন্টটায় বাংলাদেশের খেলা বাংলাদেশ বেতার প্রচার করেছিল। তৎকালীন বাংলা ধারাভাষ্যকারদের চরম ব্যর্থ ধারাভাষ‌্যের ফলে দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে একজন ইংরেজী ধারাভাষ‌্যকারকে ভাষা পরিবর্তন করে বাংলায় ধারাবর্ণনা দিতে হয়েছিল বলে মনে পড়ছে আমার। ভাষায় সমস্যা নেই ভাই, সমস্যা ধারাভাষ্যকারদের । "সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে লাল বল গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে" চমৎকার কাব্যিক একটা বর্ণনা। কিন্তু বলনশৈলির অভাবে সেটাই কানের উপরে চরম অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায়। নিচে হিমু ভাই বেশ অল্প কথায় কিন্তু এর মূল একটা কারণ বলে দিয়েছেন।

____________________________

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, প্রাণের অদম্য ঠ্যালায় কোন কোন ধারাভাষ্যকার মাঠের মধ্যে "ইমরান খান তার পরনের পুলোভার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন" বলতে গিয়ে "ইমরান খান তার পরনের ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন..." বলে ফেলতেন! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

এইসব আজগুবি আর পরাবাস্তব ধারাভাষ্য নিয়ে তখনকার পত্রপত্রিকাতেই কম হাসাহাসি হতো না। ইন ফ্যাক্ট, এই পুলোভারকে ট্রাউজার বানিয়ে ইমরানকে হাজার হাজার দর্শকের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ন্যাংটো বানিয়ে ছাড়ার ঘটনা রীতিমত কিংবদন্তীর রূপ নিয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটির 'বিখ্যাত' ধারাভাষ্য আমি স্বকর্ণে শুনেছি কিনা আজ আর মনে পড়ছে না, কিন্তু খেলার পর ইমরানের প্যান্ট খুলে ফেলাসহ ধারাভাষ্যের আরও অনেক অমূল্য রত্ন টক অফ দি কান্ট্রি হয়ে গিয়েছিল। যদ্দুর মনে পড়ে এগুলি কোন স্লিপ-অফ-দি-টাং বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। প্রথম দিকে ফুটবল থেকে তুলে আনা হরফুন্মৌলা ধারাহাস্যকাররা তাঁদের ক্রিকেটজ্ঞানের ঘাটতি ঢাকতে গিয়ে অনেক সময় মাইক্রোফোনের সামনে সাহিত্য ফলানোর নামে হাসির এটম বোমা ফাটাতে শুরু করে দিতেন। কেউ কেউ তো একেবারে যাত্রাপালার বাচনভঙ্গীতে!
ধারাহাস্যের সে এক সোনালি যুগ গেছে বটে! (দীর্ঘশ্বাসের ইমো হবে)

তবে এই ২০১৫-তে এসে ইংরেজিতে আতাহার আলী খান আর শামিম চৌধুরী গং-রাও খুব ভালো কিছু করছেন না। মহা বিরক্তিকর রকম একপেশে কমেন্ট্রি, নতুন কিছু বলার বা কমেন্ট্রিতে ভাষিক বা বর্ণনাগত বৈচিত্র্য আনার অক্ষমতা ঢাকতে তোতা পাখির মতো মুখস্থ করা কিছু ভয়াবহ ক্লিশে বাক্যবন্ধ অনবরত পুনরাবৃত্তি আর চর্বিত-চর্বন করে যাওয়া, সাকিবের প্রসঙ্গ আসলেই অবধারিত ভাবে একশ বার করে "Top allrounder in the world" কথাটা তসবীহ্‌ জপার মতো জপ করতে থাকা - সব মিলিয়ে বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

****************************************

আনোয়ার এর ছবি

আল্লাহর ইচ্ছাতেই এরকম হচ্ছে। আল্লাহ বাংলা ভাষা পছন্দ করেন না, আমরা তা বাস্তবায়ন করছি মাত্র। আপনারা হাজার চেষ্টা করেও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না। আপনারা শুধু ইংরেজি দেখলেন। উপাসনা হয়েছে নামাজ, জল হয়েছে পানি, মা হয়েছে আম্মা, পিসি হয়েছে ফুপু। পারবেন এসব পাল্টে দিতে?

মাহবুবুল হক এর ছবি

বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি-ইংরেজি মিলে খুব বেশি শব্দ নেই। ভাষায় বিদেশি শব্দের ব্যবহার থাকতেই পারে। তবে তা সেই ভাষাকে আত্মস্থ করে ফেলতে হবে- যেমন নামাজ, ‍লুঙ্গি, চেয়ার ইত্যাদি। এমন অনেক চমৎকার শব্দ আমরা গ্রহণ করে আমাদের ভাষাকে ঋদ্ধ করতে পারি। কিন্তু নিজের শব্দ আর উচ্চারণকে বিকৃত করা গর্হিত কাজ। নিজের ভাষাকে ভেঙ্গেচুরে নষ্ট করাও আত্মহত্যার সামিল।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

শিশিরকণা এর ছবি

কয়েকদিন পর শুনব যে অনেক বানান আসলে অন্নেক। অন্নেক এর প্রতিশব্দ হচ্ছে এত্তগুলা!

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুবুল হক এর ছবি

গুরু গুরু

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

সো এর ছবি

হো হো হো

হিমু এর ছবি

শুনেছিলাম বাংলাদেশে এফ এম রেডিও চালু করার পর কলকাতা থেকেই প্রশিক্ষক এনে ছেলেমেয়েদের গড়েপিটে আরজে বানানো হয়েছে। যেহেতু আরজেরা "অস্বাভাবিক বাংলা" ব্যবহার করেন, সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে এই রোগের পেছনে কলকাতার প্রশিক্ষকদেরও কিছু ভূমিকা আছে।

পার্কে বাদামওলা যেমন য়্যায় বাদেএএএএএম বলে হাঁক ছেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, আরজেরাও একই ভাবে শ্রোতাকে টানেন এবং নিজের "ব্র্যাণ্ড" তৈরি করেন। আরজেদের পারিশ্রমিক বাড়ানো হলে এই কাজে সুরসিক ও শিক্ষিত মানুষ যোগ দিতে আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানগুলোতে আগ্রহোদ্দীপক কিছু যোগ করা হলে হয়তো সে বিষয়ে "স্বাভাবিক" আলাপই শ্রোতার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

ঋতব্রত এর ছবি

আপনার উত্তরটি পড়ে আতংকিত হলাম। কলকাতায় FM রেডিওতে যে বাংলা শুনতে হয় তা বলে না দিলে বাংলা বলে সনাক্ত করা অসম্ভব। শেষবার আমার মনে হয়েছিল যে হিন্দি/ ইংরাজি তে প্রলাপ চলছে। বাংলাদেশ যদি এদের দ্বারা শিক্ষা পায়, তবে তা ভয়াভয়।

এ যন্ত্রণা ভারতে সর্বত্র বলে আমার বিশ্বাস। পাঞ্জাবে দীর্ঘকাল থেকে একই অবস্থা দেখেছি। তবে দক্ষিণ ভারতে এটা একটু কম। দীর্ঘকাল ভাষা নিয়ে আন্দোলন এবং (তাদের) মাতৃভাষার প্রতি গর্ব ও ভালবাসা এর কারন বলে আমার ধারনা।

মজার কথা হল FM রেডিওতে হিন্দি প্রোগ্রাম গুলিতে মূলত ইংরাজিতেই বলা হয়; একমাত্র songs of golden old days টাইপের কিছু প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে।

মিডিয়াম ওয়েভের প্রোগ্রাম কিন্তু একেবারে আলাদা। এর শ্রোতা সারা পশ্চিমবঙ্গ; এবং তাই তারা উচ্চারণ অ ভাষা সম্বন্ধে অনেক সচেতন। তা সত্বেও ৭০-৮০ র দশকে পরিমল গোস্বামী ও পরে ৯০ জ্যোতিভূষণ চাকী (বানানটি ঠিক করে টাইপ করতে পারলাম না) প্রধানত রেডিও ও বাংলা সংবাদমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

লেখক মাহবুবুল হক ক্রিকেটের ধারাবিবরণীর প্রসঙ্গ এনেছেন। ক্রিকেটের ধারাবিবরণীর জন্য অজয় কর ও কমল ভট্টাাচার্য আকাশবাণী কলকাতাকে বিখ্যাত করেছেন। এরা দুজনেই ভাল ক্রিকেটার ছিলেন (দুজনেই রঞ্জিতে বাংলার হয়ে খেলেছেন)। এদের সাথে কখনো কখনো পঙ্কজ রায় ও বিশেষজ্ঞ হিসাবে যোগ দিতেন। এরকম না হলেও, এখনো কিছুটা মান রেডিও ধরে রেখেছে।

আপনার লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। বেতার (বা টিভি তে) সম্প্রচারের জন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা উচিৎ? যদি বলেন মান্য বাংলা, তবে তা বলতে আমরা কি বুঝি? পশ্চিমবঙ্গে এর অর্থ কলকাতার ভাষা, যা মূলত রাঢ়ী ভাষা। আমরা কি অন্য উপভাষা গুলিকে একান্ত অবজ্ঞা করব? সচলায়তনের সদস্যদের কাছে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখি।

ঋতব্রত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।