দুনিয়ার সত্য, তামিলের মিথ্যা

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: রবি, ২৪/০৫/২০০৯ - ১:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এর আগে এক লেখায় আমার ইংল্যান্ডে যাওয়া-আসার কিচ্ছা শুনিয়েছিলাম আপনাদের। ঐ ট্রিপেই আরেকটি ঘটনার সূত্রপাত হয় যা নিয়ে আজকের এই লেখাটি। সেই সফরে একদিন সকালে বাইরে আমি একা একা বিড়ি টানছি এমন সময় অফিসের বসের খুব কাছের এক স্টাফ সিলভা এসে আমার সাথে যোগ দিল। আমি জানতাম সে শ্রীলংকান কিন্তু খুব একটা আশয়-বিষয় জানা ছিল না। কথা প্রসঙ্গে সিলভা জানালো যে সে তামিল। তামিল বলতে আমি তখন কেবল এলটিটিই, প্রভাকরণ আর মুত্তিয়া মুরালীধরণের নামই জানতাম। সে মুরালীধরণ নিয়ে বেশ উৎসাহ আর গর্ব নিয়ে কথা বলল কিন্তু রাজনৈতিক প্রসঙ্গগুলো সাবধানে এড়িয়ে গেল। সিগারেট খাওয়া শেষ হলে ভেতরে যেতে যেতে সে আমায় বলে যে ধূমপান তার একেবারেই ভালো লাগেনা, আমার সাথে সে একটা ব্যাপার নিয়ে নিরিবিলি আলাপ করতে চায় তাই এই বাহানা। আমি ব্যাপারটার গোপনীয়তা আন্দাজ করতে পেরে তাকে সন্ধ্যায় আমার হোটেলে আসতে বললাম।

সে রাতে সিলভা আমাকে ওয়েম্বলীর আশে পাশে একটা শ্রীলংকার রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। চমৎকার সব খাবার-দাবার। কোড়ানো নারকেল দিয়ে কি একটা সালাদ মত বানায় খেতে দুর্দান্ত লাগে। নানা পদের ঝাল-ঝোল আর ভাজা-ভুজির সাথে আমাদের দেশের চিতই পিঠার মতো দেখতে কিন্ত আরেকটু পাতলা আর উপরে ডিম দেয়া একটা বস্তু খাওয়ালো , অসাধারণ তার স্বাদ। খেতে খেতে আমি সিলভার জীবন কাহিনি শুনলাম, তের বছর বয়সে আর দুই বড় ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গৃহযুদ্ধ কবলিত তামিল এলাকা ছেড়ে তারা শরণার্থী হিসেবে জার্মানী চলে আসে। সে থেকে আজ পর্যন্ত তারা কেউ নিজের বাড়ীতে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের বাবা-মায়ের সাথে আর কোনদিন দেখাও হয়নি। সিলভার বড় ভাই দু'জনেই সক্রিয়ভাবে এলটিটিই দলের সাথে যুক্ত ছিল, তাদের সবার পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেছে দেশ ছাড়ার পরেই এবং দেশে ফিরলেই গ্রেফতার , জেল-জরিমানা-নির্যাতন এড়ানোর কোন রাস্তা নেই। জার্মানীতে পাঁচ-ছয় বছর থাকার পরে সে আর তার আরেক ভাই ইংল্যান্ডে চলে আসে। আমি আগ্রহ করে শুনছিলাম। হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে সে আমাকে বলল যে পরের চাকরি করতে তার আর ভালো লাগেনা, সে নিজেই এখন কিছু একটা করে স্বনির্ভর হতে চায় , আর এ ব্যাপারে আমার সাহায্য দরকার। আমি স্বাধীনচেতা সাহসী মানুষদের বিরাট ভক্ত, আমি তাকে যথা সাধ্য সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার ব্যবসার পরিকল্পনা জানতে চাইলাম। সে আমাকে জানালো যে ইউ কে তে তার পরিচিত প্রায় এক দেড়শ' তামিল ডিস্ট্রিবিউটর আছে যারা তাকে বেচা-কেনা করতে সর্বাত্মক সহায়তা করবে । ম্যানুফ্যাকচারিং বা সোর্সিং এর ব্যাপারে তার কোন ধারণা নেই আর এখানেই আমাকে দরকার। আমি আবারো তাকে আশ্বস্ত করলাম যে যদি শুরু করার মত ক্যাপিটাল থাকে তাহলে ভালো মতো প্ল্যান করে আগাতে পারলে ব্যবসায় স্বনির্ভর হওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় কিছু না।

আমি ট্রিপ শেষ করে তাইওয়ান চলে আসার পরের পাঁচ-ছয় মাসে সিলভার কাছে থেকে কোন সারা-শব্দ পেলাম না। ভাবলাম হয়ত সে ব্যবসার ধান্ধা বাদ দিয়ে আরও অনেকের মতোই চাকরির নিরাপদ ছাউনীতে থেকে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন অনেকেই খুব উৎসাহ নিয়ে ব্যবসার আলাপ-আলোচনা শুরু করে কিন্তু পরে চাকা ঘোরানোর পরিশ্রম আর ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাস-মাইনের চাকরির কাছে আত্মসমর্পণ করে, আমি তাকেও সে গোত্রেরই ভেবেছিলাম। প্রায় ছয় মাস পরে সে একদিন ফোন করে জানালো যে মূলধন যোগাড় না হওয়ায় এতদিন যোগাযোগ করেনি, এখন যতটুকু ম্যানেজ হয়েছে তা নিয়েই সে নেমে যেতে প্রস্তুত। সে শুরু করল, আর আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে জ্যামিতিক প্রবৃদ্ধির গতিতে ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকল। অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলতে দ্বিধা নেই, কঠোর পরিশ্রমী, সৎআর উদার মনের এই তামিল ছেলেটি কয়েক বছরেই তার ব্যবসা প্রায় বিশগুন বাড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। যেহেতু আমার সাথে বুদ্ধি-পরামর্শ করেই তার ব্যবসা শুরু, তাই আমার পাঁচ পয়সার অবদানকে সে কোনদিনই ভোলেনি এবং আজও ব্যবসা হোক বা ব্যক্তিগত কিছু , আমার সাথে আলাপ না করে যে বলতে গেলে কিছুই করেনা। আমরা সমবয়সী হওয়ায় ব্যবসায়ীক সম্পর্কের বাইরেও আমাদের মধ্যে চমৎকার একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । রাজনীতি নিয়েও আমরা প্রচুর বক বক করি এবং সারা পৃথিবীর সব স্বাধীনতাকামী মানুষদের প্রতি আমার নিঃশর্ত সমর্থন দেখে সে তামিলদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েও আমার সাথে খোলামেলা আলাপ করে।

প্রতি বছরেই আমাদের অন্তত একবার দেখা হয়। সাধারনত বছরের শুরুর দিকে আমি লন্ডনে যাই, দু'জন মিলে আগের বছরের ব্যবসার পর্যালোচনা আর নতুন বছরের পরিকল্পনা করি। এ বছরের গোড়ার দিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত ছিলাম। নিজে কিছু করতে পারিনা, অসহায়ের মত দুর্ভাগা মানুষের রক্তপাত দেখি আর মন মরা হয়ে থাকি দিন-রাত। এরই মধ্যে সিলভা প্রায় প্রতি দিনই ফোনে তাড়া দেয় লন্ডনে যেতে। আমি তাকে আবার মনের অবস্থা জানিয়ে না যাওয়ার ইচ্ছা জানাই। সে নাছোড়বান্দা, আমাদের হাতে কাজও জমে আছে অনেক। একদিন কথায় কথায় সে আমাকে বলে তাইওয়ানে থেকে আফসোস করে কি হবে? লন্ডনে প্রতিদিনই যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, এখানে এসে এগুলো দেখলে হয়ত তোমার কাছে একটু ভালো লাগবে। আমি ওর তাগাদায় টিকতে না পেরে জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে লন্ডন চলে যাই।

সিলভার ফুটফুটে পিচ্চি একটা মেয়ে আছে। তার নাম রেখেছে কোন এক তামিল মুক্তিযোদ্ধার নামে। সে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়, বাড়ীতে প্রভাকরণের বড় ছবি দেয়ালে টাঙানো, পুজার বেদীর পাশেও তার ছবি। ভেলুপিল্লাই ওদের কাছে দেবতার চাইতেও বেশি কাছের, বেশি ভালোবাসা আর সম্মানের। তার বউ নানা পদের রান্না করে, খাওয়া-দাওয়ায় আমার মন নেই, আমি মনোযোগ দিয়ে আল জাজিরায় যুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি দেখি, দুই একটা ইসরায়েলি সৈন্য মারা গেলে নিজের মধ্যে আনন্দের হুল্লোড় টের পাই- কেন যেন এ নিয়ে কোন অনুতাপ হয়না। এর মধ্যে হঠাৎ করে সিলভা এসে টিভির চ্যানেল বদলে তামিল ভাষার একটা খবর দেখতে শুরু করে, সম্ভবত ঐ সময়েই শ্রীলংকান আর্মি তামিল টাইগারদের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ আরম্ভ করে। আমি খুবই বিরক্ত হই, কিন্তু মুখে কিছু বলিনা, এক ফাঁকে ল্যাপটপ খুলে তাতে সি এন এন আর আল জাজিরায় প্যালস্টাইন যুদ্ধের আপডেট দেখি। সিলভার যুদ্ধ আমাকে টানেনা, আমি নিজের যুদ্ধেই দিশেহারা, দু’জনের যুদ্ধ আসলে একই-মানুষের যুদ্ধ, স্বাধীনতার লড়াই, কিন্তু তার পরেও কত আলাদা ।

রাতের খাওয়া শেষে আমি হোটেলে চলে আসি। অন্যান্য দিন সিলভা আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়েই চলে যায়, আজ কী মনে করে যেন আমার রুমে আসল। আমার তখন স্কাইপে বউয়ের সাথে ভয়েস চ্যাট করার কথা, কিন্তু সিলভা পাঁচ মিনিটের কথা বলে ল্যাপটপটা নিয়ে তাতে মগ্ন হয়ে যায়। আধা ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরেও তাকে মনিটর থেকে চোখ সরাতে না দেখে সংকোচ ভুলে জানতে চাই ও কী দেখছে, ঠাট্টা করে যোগ করি ভালো পর্ণোসাইট হলে আমাকে যেন বলে। আমাকে জানায় যে ঘরে বউ এগুলো দেখতে দেয়না, দেখলে ওর ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায় তাই । আমি নিশ্চিত হলাম যে বদমাশটা আসলেই পর্ণোসাইট ঘাঁটছে,নয়ত বাড়ীতে বউ দেখতে দেবেনা কেন। কথা না বাড়িয়ে ওর পাশে গিয়ে স্ক্রীনের দিকে ঝুঁকে তাকাই। যা দেখি তাতে আমার পিলে চমকে যায়। সারি সারি মানুষের লাশ। সত্তুর বছরের বৃদ্ধা যেমন আছে, আছে তিন বছরের শিশুর লাশের ছবিও। সব বীভৎস, ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষের দেহ। আমি খুব সংবেদনশীল মানুষ বিধায় সব ধরনের গ্রাফিক বর্ণনা বা ছবিগুলো এড়িয়ে চলি, নয়তো এগুলো মগজের ভেতরে দীর্ঘস্থায়ী যায়গা করে নেয় আর যখন তখন মনের পর্দায় ভেসে উঠে আমাকে অস্থির করে তোলে। সিলভার সেই ধরনের কোন সীমাবদ্ধতা নেই, সে একের পর এক তামিল ওয়েবসাইট ঘেঁটে চলে আর আমাকে তার ধারা বিবরনী শোনায়। তার কন্ঠে কখনও কষ্ট, কখনো হতাশা বা রাগ, আনন্দিত বা আশাবাদী স্বরও ভেসে আসে মাঝে মাঝে। ওর কাছেই শুনি শ্রীলংকান সেনাবাহিনী কিভাবে বিদ্রোহ দমনের নামে মানবাধিকার লংঘন করে চলেছে, নির্বিচারে গণহত্যার পাশাপাশি আলোচনার কথা বলে তামিল দূতদেরও কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খুন করেছে। আরো শুনি অত্যাচারিত মানুষের বিজয় কত নিকটবর্তী তার আশাবাদ আর প্রভাকরণের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, কৃতজ্ঞতার কথা। বাকী বিশ্বের কাছে প্রভাকরণ বিতর্কিত মানুষ হলেও স্বাধীনতাকামী তামিলদের কাছে তার অবস্থান অবিসংবাদিত নেতার, মনে হলোনা ফায়ারিং স্কোয়াডে দাড় করালেও সিলভার মুখ থেকে এর অন্যথা বেরুবে । একটা ছোট্ট ঘরে পূর্ণবয়স্ক দুইজন মানুষ পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই লড়াই নিয়ে বিষন্ন মনে নিজেদের মধ্যে আলাপ চালিয়ে যায়, অনেক কথা হয়, কিন্তু তার মধ্যে সান্ত্বনার কোন বাক্য থাকেনা, এ জাতীয় বর্বর পরিস্থিতির কোন সান্ত্বনা হয়না।

বলা বাহুল্য ঐ সফরে আমাদের ব্যবসায়িক কাজ বলতে গেলে তেমন কিছুই আগায়নি। আমি সপ্তাহখানেক পরে ফিরে আসি। এর মধ্যে অর্থনৈতিক মন্দা চরম আকার ধারন করে। এই কারণে আমাদের মধ্যে ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ে কথা-বার্তা অনেক কমে যায়। তারপর নানা কাজে আমিও অনেক ব্যস্ত হয়ে যাই। মাস কয়েক সিলভার সাথে তেমন মন খুলে কথা বলা হয়না। এই মাসের ১৮ তারিখে খবরে প্রভাকরণের মৃত্যুর ব্যাপারটি দেখে আমার সাথে সাথে ওর কথা আবার মনে হয়। বার বার ফোনের কাছে হাত নিয়েও নাম্বার ঘোরাতে সাহস হয়না, এ ধরনের ক্ষতির কোন সান্ত্বনা হয়না। আমি জানি আমার বন্ধু হয়তো আগামী কয়েকটা দিন উদভ্রান্তের মতো কাটাবে, অফিস করবেনা, নির্জন পার্কে বসে, বা একাকী পথে গাড়ী চালাতে চালাতে তার চোখ অশ্রু সজল হয়ে উঠবে, হয়তো গাড়ী থামিয়ে সে কুত্তী পৃথিবী আর অধিবাসী নৃশংস মানব জাতিকে অভিশাপ দেবে, তার পর সময়ের কাটা ঘোরার সাথে সাথে হয়তো তার কষ্টের তীব্রতাও কমে আসবে, আবার হয়তো সে নতুন উদ্যমে তার মানুষদের মুক্তির সংগ্রামে পা মেলাবে।

গত সপ্তাহে হঠাৎ করে অফিসের কাজে আমি সাংহাই যাই। ওখান থেকে একদিন বিকেলে আমার অফিসে ফোন করে শুনি যে সিলভা কয়েকবার ফোন করে আমাকে খুঁজেছে, আমি ওকে আমার হোটেলের ফোন নাম্বার জানাতে বলি। একটু পরেই ফোন বেজে ওঠে। সিলভা। আমি মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার আগেই ফোন চলে আসায় জুৎসই কোন সান্ত্বনা বাক্য তৈরী করতে পারিনি। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সিলভার গলায় উচ্ছ্বাস শুনে হতচকিয়ে যাই। সে হড়বড়িয়ে তার বড় অ্যামাউন্টের একটা ব্যাঙ্ক লোন ইস্যু হওয়ার সুসংবাদ আর আগামী মাসে তাইওয়ান আসার খবর জানায়। আমি বুঝতে ব্যর্থ হই এত বড় একটা ব্যাপার ও কিভাব এড়িয়ে যাচ্ছে, নাকি ফোন আজকাল ট্যাপ করা হয় বলে রাজনৈতিক কোন আলাপে যাচ্ছেনা? ওর খুশি খুশী গলার প্লাস্টিক মার্কা ব্যবসার কথা শুনতে শুনতে আমি ধৈর্য হারিয়ে প্রভাকরণের মৃত্যুর বিষয়টা তুলে দুঃখ প্রকাশ করি।
“আরে ধুর! এগুলো সব ফালতু কথা। প্রভাকরণের কিচ্ছু হয়নি, উনি সুস্থ এবং নিরাপদে আছেন, শ্রীলংকান বা ইন্ডিয়ান বেনিয়াদের সাধ্য নেই তাঁর টিকিটাও স্পর্শ করে”।
“ আর ইউ শিওর? হোয়াট দ্য হেল আর ইউ টকিং অ্যাবাউট?”- আমি রীতিমত ধমকে উঠি।
“আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত প্রভাকরণ ভালো আছেন। কিছুদিন যাক নিজেই দেখতে পাবে”।
কোনভাবেই বেচারার বিশ্বাস টলানো গেলোনা। সারা পৃথিবীর মানুষ, মিডিয়াযন্ত্র একদিকে আর এক তামিল যুবকের আশাবাদী হদয়ের হিসাব অন্যদিকে। কিন্তু সে জানালো একটা বিষয়টা নিয়ে সে চিন্তিত - শ্রীলংকান সরকার নাকি জাতীয় পতাকার মধ্য থেকে তামিলদের প্রতিক হলুদ রংটি সরিয়ে নিতে যাচ্ছে, এটা করা হলে আত্মঘাতী বোমা হামলা আর রক্তপাত আরো অনেক বেড়ে যাবে।

আমার এই লেখাটি রাজনৈতিক কোন লেখা না। মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের পাশে গোলাপের সৌন্দর্য যেমন বেমানান , তামিলদের রক্তাক্ত সংগ্রামের পাশে আমার এই বালখিল্য লেখাটিও হয়তো তাই। ভুল ভালে ভরা প্রভাকরণ হয়তো জীবিত আছেন বা নেই, সময়ই তা বলে দেবে। অস্ত্রের হয়তো মরণ নেই, কিন্তু বিপ্লবেরও কোন মৃত্যু নেই। মানুষের নিজের মত বাঁচার অধিকারের সং গ্রামেও কোন অসম্মান নেই। জয়-পরাজয় যুদ্ধের সব নিয়ামক মিলেই নির্ধারন করে দেবে , তার মধ্য দিয়ে বিল্পবীর হয়তো অঙ্গহানী ঘটতে পারে, কিন্তু বিপ্লবের অঙ্গহানি ঘটবেনা, ঘটা সম্ভব না।
বিপ্লবের জয় হোক! মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জয় হোক!!


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুমম।

অনিকেত এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল।

আমার নিজের বন্ধুদের মাঝে তামিলদের সংখ্যাই বেশি। আমি এখন যে বাসায় থাকি---সেখানে আমার সাথে যে থাকে সেও তামিল। নানান সময়ে নানান সূত্রে তাদের রাজনীতি, তাদের ভাষা, শ্রীলঙ্কার সরকারের নিষ্ঠুরতা, তাদের নিজের দেশ ভারতের নির্লিপ্ততা---এসব কিছু নিয়েই আলাপ হয়েছে।

তাদের সাথে আলোচনায় যে জিনিসটা উঠে এসেছে সেটা হল বেশির ভাগই এল্টিটিই-র ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে।

আমার ডিপার্টমেন্টে একটা শ্রীলঙ্কার ছেলে আছে---নাগিথা একনায়েকা। তার সাথেও আলাপ হয়েছে। এবং ঠিক যেমনটি আপনি আশা করবেন---তামিলদের নানান অত্যাচারের বিবরন তার কাছে শোনা যায়।

আমার বলতে গেলে প্রায় দুই পক্ষেরই কথা শোনা হয়েছে বিশদ ভাবে।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আমার সাধারন পর্যবেক্ষণ হলোঃ

১। স্বাধীনতার সংগ্রামে পক্ষ-বিপক্ষের হিসেব করতে যাওয়া ভুল। তামিলদের কাছে LTTE এর সংগ্রাম যে পরিমান আদর্শিক, শ্রীলঙ্কানদের কাছে এইটা তেমনই অন্যায্য।একদলের কাছে যেটা স্বাধীনতার সংগ্রাম---অন্যদলের কাছে সেইটাই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন।

২। যে কোন সংগ্রাম যত বেশিদিন টিকে থাকে--সেটা তত বেশি দূর্নীতিগ্রস্ত করে মানুষদের। LTTE এক সময় একটা দারুন স্বদেশ-প্রেমের ধ্বজা তুলে সংগ্রাম শুরু করে থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ এই গৃহযুদ্ধ শেষের দিকে উভয়পক্ষের কাছে একটা 'বাঞ্ছিত' গোলযোগের (favored undulations) রূপ নেয়। এই গৃহযুদ্ধ রাজনীতিবিদদের প্রিয় অজুহাত হয়ে থেকেছে অনেকদিন। কেবল শ্রীলঙ্কা নয়, ভারত নিজে এই যুদ্ধে নানান রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছে বলে ধারনা করা হয়। রাজীব গান্ধী যতটা সুদর্শন ছিলেন--ততটাই নির্বোধও ছিলেন। তার নিহত হবার ঘটনার রাজনৈতিক ফসল বিরোধী পক্ষের এবং পক্ষের লোকেরা ভালভাবেই ব্যবহার করেছেন। প্রভাকরণের দল যত সময় গেছে, তত দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। একটা সময় এই যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জীবিকার উৎস। গত বছর গার্ডিয়ানের একটা রিপোর্টে পড়েছিলাম, যে LTTE এর সদস্যরা বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতেন। এবং বলাই বাহুল্য প্রক্রিয়াগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নসাপেক্ষ। নরওয়ে খুব সম্ভবতঃ সব চাইতে বেশি এই সংগ্রামে জড়িত ছিল। সেখানের বিশাল তামিল প্রবাসীরা মুক্ত হস্তে LTTE দের সাহায্য করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাকি সেসব অর্থের সদব্যবহার হয়নি।

৩। একটা যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের ভাল-মন্দ নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু যারা যুদ্ধে আছে---তাদের কাছে অধিকাংশ সময় মাত্র দুইটা পথ থাকে--হয় জেতো, নয় হারো। এর মাঝামাঝি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথটি কেন জানি কারো কাছেই খুব একটা আদরনীয় মনে হয় না।

৪। স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মানচিত্রে স্থান করে নেয়া একটি দেশের মানুষ হিসেবে আমার নিজের সমর্থন সকল সময় মুক্তিকামী মানুষের দিকে। আমি মনে করি আমরা, বাংলাদেশীরা, যথেষ্ট ভাগ্যবান---এই জন্যে যে মাত্র নয়মাসেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। অবশ্য তার জন্যে আমাদের চড়া দামও দিতে হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বিশাল প্রাণক্ষয় এর নজির পৃথিবীর ইতিহাসে খুব একটা বেশি নেই। আমি নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি এইজন্যে যে নয়মাসে শেষ হওয়া এই যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কোনভাবেই তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে নি---যেইটা খুব সম্ভবত LTTE এর মুক্তিসেনাদের ক্ষেত্রে বলা যাবে না।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ অনিকেত ভাইয়া।
আমি রাজনীতি ভালো বুঝিনা, বোঝার আগ্রহ বা ইচ্ছাও খুব একটা নাই। এটুকু বুঝি বা মানি যে সব জাতির মানুষেরদেরই তাদের নিজেদের মত করে বাঁচার অধিকার রয়েছে। আধুনিক রাস্ট্রযন্ত্রের কাঠামোটার প্রতি আমার সম্মানবোধ খুব কম। তামিলদের স্বাধীনতা সংগ্রাম কে কী ভাবে দেখেন সেটা নিয়ে ভাবিনা, কিন্তু আমি যেটা বুঝি সেটা খুব সরল, ঐ লোকগুলোর আন্দোলন তাদের মানবাধিকারের সীমারেখার মধ্যেই পরে। রাস্ট্র বা তাদের শান্তিকামী(!), নিরুপদ্রব জীবনে অভ্যস্ত স্বার্থপর নাগরিকেরা অখন্ডতার ধুয়া তুলে চিরদিনই স্বাধীনতাকামী আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদের তকমা দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে এসেছে, এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে অনেক সন্দেহ, সমালোচনা ইত্যাদি থাকতে পারে, কিন্তু তাতে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতি আদর্শিক সমর্থন দিতে আমার বাধেনা।

সাইফ এর ছবি

হাই ভোল্টেজ বেপার সেপার

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রভাকরন বা এলটিটিই'র যারা সমালোচনা করেন-তারা কি ভুলে যান যে তিনদশক ধরে এরা একটা যুদ্ধের মধ্যে আছে, অজু করে কেউ যুদ্ধে টিকে থাকেনা। প্রভাকরন বা এলটিটিই'র সমালোচনার যতোটুকু তার সবটুকু চলমান যুদ্ধেরই অংশ। যুদ্ধ বিষয়টাই অমানবিক, কিন্তু বাধ্য হয়ে যারা যুদ্ধে জড়ায় তাদের কাছ থেকে যখন কেউ একটু কম রক্তপাত একটু কম নৃশংসতা আশা করেন তখন সেটা বালখিল্য ঠেকে।

তামিলদের যে অংশ প্রভাকরন ও এলটিটিই'র সমালোচক- বিবেচনা করা দরকার তারা আসলে তামিল সমাজের কোন অংশ।সুবিধাবাদী একটা পক্ষ সবসময়ই থাকে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যদি নয়মাসে শেষ না হয়ে নয়বছরে গড়াতো, মুক্তিযোদ্ধাদের নৃশংসতার স্বাক্ষ্য দিতে ও আমাদের স্বজাতির অভাব হতোনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অনিকেত এর ছবি

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যদি নয়মাসে শেষ না হয়ে নয়বছরে গড়াতো, মুক্তিযোদ্ধাদের নৃশংসতার স্বাক্ষ্য দিতে ও আমাদের স্বজাতির অভাব হতোনা।

একমত। আর নয়মাসেই কত 'সাক্ষী'-র জন্ম হয়েছে, দেখুন।সাকা-ফকা'র বাচ্চারা অম্লান বদনে মুক্তিযোদ্ধাদের মুন্ডুপাত করে, ভুঁইফোড় শর্মিলা জানান আমাদের মা-বোনেরা কেউ ধর্ষনের শিকার হননি। যেটা বলতে বাকী রেখেছেন, সেটা হল--ধর্ষনের ঘটনা যদি ঘটেই থাকে সেটা মনে হয় মুক্তিযোদ্ধারাই ঘটিয়েছেন।

হা হতোস্মি!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দারুণ লেখা।
গণহত্যার কত খবর যে চাপা পড়ে দেশে দেশে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
খোদ আমাদের দেশেই পাহাড়ের মানুষদের ওপর যা চলেছে, তা অনেকেই আমরা জানি না, বা ভালোমতো জানি না।
আর মামুনের লেখায় ধারালো পরিবর্তন এসেছে। অনেক সংযত এবং মাপসই ভাষা। বিষয়বস্তু তো বটেই। এই ছেলে কদিন পর পর বলে, লেখালেখিটা শিখতে চাই, তুই একটু বল তো কী কী করতে হয়?
আমি তার বিনয় দেখে মুগ্ধ হই। এটাই স্বাভাবিক। ফলবান বৃক্ষমাত্র নুয়ে পড়ে।
ব্যাটা, আবার যদি লেখালেখির প্রসঙ্গ তুলবি তো এই বাংলাদেশ থেকেই হাত বাড়িয়ে সেই তাইওয়ানে বসে থাকা তোর কুতকুতে চোখ দুটো ঘুটে দেব! আমার থেকে অনেক ভালো লিখিস তুই!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মামুন হক এর ছবি

এ রকম নরমে গরমে না হলে কি আর বন্ধু!
কিন্তু আমার চোখ কুতকুতে? এত্ত বড় কলিজা তোর? আয়নার ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বাস্তব প্রমান তোর নিজের চেহারার দিকে একবার তাকিয়ে যদি মন্তব্যটা করতি! হাসি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সিরিয়াস একটা লেখার মাঝেও মৃদুল ভাইকে নিয়ে করা আপনার মন্তব্যে হাইসা গড়াগড়ি খাইতেছি।

আলাভোলা এর ছবি

বিপ্লবের জয় হোক! মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জয় হোক!!

চলুক

সিরাত এর ছবি

ভাল লাগলো পড়ে মামুন ভাই। মন্তব্যে আলোচনাও ভাল লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

মামুন ভাই
লেখাটি পড়লাম। আমিও একটি লেখা সচলায়তনে জমা দিয়েছিলাম কিন্ত ছাপা হয়নি। যাইহোক আমাকেও বিষয়টি ভাবিয়েছে আপনার মত । বহুদিন আগে আমি অরুন্ধতী রায়ের একটি লেখা পড়েছিলাম যেখানে তামিলদের বিরুদ্ধে শ্রীলংকা সেনাবাহিনীর যুদ্ধকে একটি জাতিসত্তা ধ্বংসের সঙ্গে তুলনা করেন। কত জাতিসত্তা ধ্বংস হচ্ছে এভাবে প্রতিনিয়ত ।

শাহিদুর রহমান শাহিদ

মামুন হক এর ছবি

দয়া করে কি লেখাটি আমাকে মেইল (mamun.twn@gmail.com) করে দেবেন? আপনার আপত্তি না থাকলে পড়ে দেখতাম হাসি

সাইফ এর ছবি

চরম গরম অবস্থা দেখি, মামুন ভাইতো যেভাবে কোপাইতেছেন, বেশী দিন লাগবে না বই বের করতে। আলোচনাটা লেখাটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল। মনে পড়ে গেল সব মুক্তিকামীদের পাশাপাশি আমাদের আদিবাসীদের কথা! মামুন ভাই-এর বিশাল ভক্ত আমি!

মামুন হক এর ছবি

ভক্তির কথায় শরম পাইলাম । আদিবাসীদের সংগ্রাম নিয়ে নিয়মিত লিখুন না ভাই, আরো ভালোভাবে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারতাম তাহলে ।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

দারুন লেখা মামুন ।
আমাদের সবার সমর্থন পৌছে দেবেন সিলভাকে কিংবা তাঁর মাধ্যমে। জানাবেন, পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রতি আরো কিছু মুক্তিপিয়াসী মানুষের সমর্থন সবসময়ই থাকে। যোদ্ধারা সেটা জানে, নিপীড়করা জানে না !

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

মামুন হক এর ছবি

জানিয়ে দিয়েছি সুমন ভাই, গতকাল এই লেখাটি লিখতে লিখতেই সিলভা আবার ফোন করেছিল। ওকে জানিয়েছি বাংলাদেশে তামিলদের সমর্থনে গণসমাবেশের কথা...বেচারা শুনে একই সঙ্গে অবাক আর ভীষন খুশি হয়েছে। ইউটিউবে এর কোন ভিডিও পাওয়া যাবে কিনা তা জানতে চেয়েছে, কিন্ত সে বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। খুজে পেলে বেচারাকে মেইল করে দেব ভাবছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

মানুষের চিরন্তন মুক্তি আকাংখার জয় হোক ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রথমতঃ তামিলদের রাজনৈতিক সংগ্রাম কত বছর ছিল জানিনা, কিন্তু সহিংস আন্দোলন ২৬ বছর। দীর্ঘ সময়। সহিংস সংগ্রাম এত দীর্ঘ সময় জনপ্রিয় থাকে না।

দ্বিতীয়তঃ বিশ্বসভায় প্রভাকরনের রাজনৈতিক ইমেজ ছিল না। সফল বিপ্লবের জন্য রাজনৈতিক ইমেজ থাকা আবশ্যক। প্রভাকরনের জন্য আমার অনুভুতি কি হওয়া উচিত বুঝতে পারছি না। খুব বেশী জানি না তাঁর সম্বন্ধে। তবে প্রতিটি সংগ্রামীর মৃত্যুই বেদনাদায়ক।

সবশেষে বাংলাদেশ নয়মাসে স্বাধীন হয়েছে যারা বলছেন, তাদের বলি এত সস্তায় ব্যাপারটা হয়নি। আসলে বাংলাদেশ ১৯ বছরে স্বাধীন হয়েছে। আমাদের লড়াই শুরু হয়েছিল ৫২ তে। ১৮ বছর রাজনৈতিক লড়াইয়ের পর নয়মাস যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছি। ১৮ বছরের সংগ্রাম না হলে নয় মাসে একটা থানাও স্বাধীন করা যেতো না।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

জুম্ম [অতিথি] এর ছবি

মামুনভাই, চমতকার লেখা। আপনার এই লেখা পড়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের কথা খুব মনে পড়ছে, অনেক কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠছে, যার শিকার আমি নিজে এবং আমার পরিবার। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আবেগী হয়ে উঠি, চোখে পানি চলে আসে। ধন্যবাদ আপনার এই সুন্দর লেখাটির জন্যে।

মৃদুলদার উদ্ধৃতি
"খোদ আমাদের দেশেই পাহাড়ের মানুষদের ওপর যা চলেছে, তা অনেকেই আমরা জানি না, বা ভালোমতো জানি না"।
সহমত মৃদুলদা।

মামুন হক এর ছবি

ভাই দয়া করে ঐ দিনগুলো লিখেন যদি খুব বেশি কষ্ট না হয় । আমাদের জানা দরকার।

উজানগাঁ এর ছবি

এই প্রথম আপনার লেখা পড়া হলো বোধকরি। ভালোলাগলো। সাবলীল প্রানবন্ত লেখা। এইধরণের লেখা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। প্রভাকরণ-প্রসঙ্গ এমুহূর্তে সবচেয়ে বহুলপঠিত বিষয় বোধকরি। অনেকধরণের লেখা পড়া হয়েছে এতোদিনে এ বিষয়ে। আপনার লেখাটা সবার চেয়ে ভিন্ন। একেবারে জীবনের কাছাকাছি।

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য। জীবনে থেকে নেয়া লেখাগুলোই আজকাল আমাদের কাছে কেমন যেন অচেনা লাগে, এক জীবনে আমরা আসলে অনেকগুলো জীবন যাপন করি, কোনটা আসল আর কোনটা নকল বুঝতেই অনেক সময় চলে যায়।

পুতুল এর ছবি

মুক্তিকামী মানুষের জয় হোক!!!
লেখককে ৫ তারা!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমি কী কমেন্ট দিই? আপনার সঙ্গে আলোচনার সময় শুইনা ওইটা আমার জীবনের অভিজ্ঞাতার একটা অংশ হয়ে গেছে। সিলভা এখন আমার জীবনের গল্পের একটা অংশ।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মামুন হক এর ছবি

পলাশ ভাই আপনার সঙ্গে চ্যাটেই কিন্তু এটা নিয়ে প্রথম কারো সাথে খোলা মেলা আলাপ করি। এই লেখার শিরোনামটিও আপনারই দেয়া কবি সাহেব। আপনি উৎসাহ আর প্ররোচনা না দিলে এই লেখাটি হয়তো কোনদিনই আলোর মুখ দেখত না।
কৃতজ্ঞতা জানবেন হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

সেদিন টিভিতে বিল মার এর শোতে তামিল র‌্যাপার এম আই এ'র ইন্টারভিউ দেখালো। মেয়েটার কথাগুলা শুনে এতো খারাপ লাগলো ......

লেখাটা খুব ভালো হইসে।

মামুন হক এর ছবি

খারাপ লাগা ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে বলো?
কি ব্যাপার বানান ভুল ধরলা না? পয়েন্ট কামানোর বিশাল সুযোগ, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ডিসপ্লে করা আছে হাসি

হাবিব এর ছবি

আবার মামুন ভাই,মামুন ভাই,্টাইপের লেখা পড়লাম।আগের দিনের রানি লেখাটা কেমন যেন জুতের লাগে নাই।

তবে প্রভাকরন রে তো আর চিনি না...আমার এখানে কত গুলা শীরলঙ্কার বন্ধু আছে,হেরা জানি কেমন এই নাম টা শুনলেই যেন গায়ে সুয়া পোকা উঠসে-এই রক্ ম ভাব করে।এর ভিতর এক টা তামিল মুসল্মান বন্ধু,তার ও এ্ক ইধরনের চিন্তা ভাবনা...তবে এই লেখাটা কেমন মন ছুয়ে গেল।সিল্ ভা ভাল থাকুক...

প্রাচ্চের ভিন দেশি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মামুন ভাই, অনেক ভাবলাম কী বলা যায় এরকম একটা লেখা সম্পর্কে। শেষ পর্যন্ত কিছুই মনে করতে পারলাম না।

খালি বলি, আপনার লেখার ভক্ত তো অনেক আগেই হইসিলাম, এইবার গুরু মানলাম আপনারে।

মামুন হক এর ছবি

আমিও এক মামুন ভাইয়ের বিরাট ভক্ত, সে হইল গিয়া শাহরিয়ার মামুন, যে কিনা আমার মত কাচা প্লেয়ারকে খেলার সুযোগ করে দিতে নিজে খেলা থেকে সাময়িক সেচ্ছা অবসর নিয়ে ড্রেসিং রুম থেকে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে হাসি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানবেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- যদিও মানতে কষ্ট হয় তারপরেও অনিকেত'দার দেয়া ব্যাখ্যাটা মনে ধরলো। দীর্ঘমেয়াদী বিপ্লবে সবাই এল চে বা এল ক্যাস্ট্রো হতে পারেন না। প্রভাকরণ একজন প্রভাকরণই। তিনি যা-ই সুবিধা অর্জন করে থাকুন বিপ্লব থেকে তবুও মুক্তিকামী তামিলরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করবে চিরকাল। প্রতিটা তামিলের বিশ্বাসেই তিনি বেঁচে থাকবেন, আজীবন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

বিপ্লবের জয় হোক! মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জয় হোক!!
চলুক
অনেক ভালো লিখেছেন মামুন ভাই।
পড়ে কীরকম লাগলো- বুঝাতে পারবো না, সাধ্য নাই।
_________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

রানা মেহের এর ছবি

খুব মনছোঁয়া লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মামুন হক এর ছবি

খুব কষ্ট নিয়ে লেখা রানা...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।