তালাশ - প্রথম পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বুধ, ২৩/১২/২০২০ - ২:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্তুগীজ অধিকৃত গোয়া, ১৬২৪। ভোর।

ঢকঢক করে পাশে রাখা বাদামের শরবৎ অল্প যতটুকু বাকি ছিল খেয়ে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুখ মুছলেন জামশিদ খাঁ হামাদানি। আগের রাতে জাহাজ ভিড়ার পরে বন্দর এলাকা বেশ খালি ছিল, সারাদিন বৃষ্টির পরে কাদায় থিকথিক করছিল এলাকা। সহযাত্রী তারিক খুদাবন্দ গোয়াতে নিয়মিত আসেন, তার সাথেই এই সরাইতে আগমন হামাদানির। বেশ পরিচ্ছন্ন সরাই, নমাজের জায়গা একপাশে। ঘুমানোর বালিশের উপরে জানালা, ঝিরিঝিরি বাতাস দিচ্ছিল সারারাত।

হেঁটে বাইরে এসে বাগানে দাঁড়াতেই হামাদানি দেখলেন খুদাবন্দ দাঁড়িয়ে খোরমা খাচ্ছেন। হেসে বললেন, কী ঘুম হল?

হাঁ চমৎকার ঘুম হয়েছে। বহুদিন পর দুলুনি ছাড়া ঘুমালাম হা হা হা।

ঠিক কথা, খুদাবন্দ মাথা নেড়ে বললেন, রুস্তমের সরাই বড় ভালো বটে। ভালো ঘুম হয়। বন্দরেরও কাছে, খুব সুবিধা।

হাঁ। আপনার ঘোড়ার কী খবর?

ঘোড়ার কথায় খুদাবন্দের কপালে ভাঁজ পড়ল। তিনি আরব ঘোড়ার সওদাগর, জাহাজে এনেছেন আশিটির মত ঘোড়া। ইচ্ছা বিজাপুরে নিয়ে বিক্রি করবেন, ভালো দাম না পেলে আহমদনগরেও যেতে পারেন। এদের এখন যুদ্ধ চলছে, ঘোড়ার দাম অতি উচ্চ। তার উপর উড়ো খবর আসছে আহমদনগর দূর্গে নাকি নিজাম শাহীরা নাই, তিমুরিদ বাদশা দখল করে ফেলেছে। সেটাও খারাপ না, তারাও দাম দেবে ভালো। পথ একটু বিপদজনক হতে পারে অবশ্য।

তবে সমস্যা সেইটা না, তারিক খুদাবন্দের কপালে ভাঁজ পড়ার কারণ অন্যখানে। ঘোড়া আনার পর প্রত্যেকবার পর্তুগীজেরা নিয়ে দেখে, আর পছন্দ হলে ইচ্ছেমত দাম দিয়ে রেখে দেয়। ইব্রাহীম আদিল শা'র লোক গতবার পই পই করে বলে দিয়েছে কালো ঘোড়া আনতে, তিনি মাস্কটের কাছে পেয়েছেন গোটা দশ। তারমধ্যে আবার দুইটা আবার পথে গেছে মরে, সে দুটোর লেজ কেটে রাখা আছে অবশ্য। আটটার মধ্যে পর্তুগীজের দল কয়টা রাখে কে জানে। বিশেষ করে ফতে জং ঘোড়াটা না রাখলেই হয়।

নিঃশ্বাস ফেলে খুদাবন্দ বললেন, ঘোড়ার খবর ঠিক বলতে পারলাম না। দুই তিনদিন লাগে এদের কাছ থেকে ঘোড়া খালাসে। তার উপর আজকে এদের একটা পরব আছে পেদ্রো বলছিল।

পেদ্রো কে?

এখানেই আশপাশে ফুটফরমাশ খাটে এক স্থানীয় বালক। আম বেচে দেখবেন সরাইয়ের সামনে মাঝেমধ্যে।

দেশী ছেলের নাম পেদ্রো?

হ্যাঁ। মা বাবা বেচে দিয়েছে হয়তো। পর্তুগীজ ছেলে না। আধা ফিরিঙ্গিও না। ভালো পর্তুগীজ জানে। ফার্সিও পারে। এলেমদার ছেলে।

আচ্ছা বেশ বেশ। এলেমদারই বটে।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে দুইজনে এটাসেটা বলতে বলতে আবার সরাইতে গিয়ে খেতে বসলেন। রুটি ছিঁড়ে ঝোলে ডুবিয়ে কাবাব দিয়ে খেতে খেতে খেতে খুদাবন্দ বললেন, তা কী আঞ্জাম করলেন আজ? পরবে যাবেন নাকি?

নাহ। বিজাপুরের দিকে যাব আজই।

সে তো আমিও যাচ্ছি কাল পরশু। একত্রেই কাফেলা করে যাই চলুন। কিছু জায়গায় যুদ্ধের গিয়াঞ্জাম চলছে, এড়িয়ে চলা উত্তম। একা যাবেন কি, থেকে যান আজ।

চিন্তিত গলায় হামাদানি বললেন, হাঁ সেটা করা যায়। পথ আমি তেমন চিনিও না। ঠিক আছে।

তারপর মুখের কাবাব চিবানো শেষ করে শব্দ করে ঢেকুর তুলে হামাদানি বললেন, আজকে পর্তুগীজ পরবটা কিসের? সেখানে যাওয়া যায়।

সরাই মালিক রুস্তমের সাথে খুদাবন্দ চোখাচোখি করলেন একটু। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ ঐ ইয়ে। পরব না ঠিক। বিচার। বিচার বসবে ফিরিঙ্গির গীর্জার পাশে। দোষ স্বীকার করলে ঝুলিয়ে কি পুড়িয়ে মারবে। দেখার তেমন কিছু নাই।

হামাদানি পড়াশুনা করা লোক। ফিরিঙ্গিস্তানে শিরক করলে এরা পুড়িয়ে মারে সেইটা তার জানা আছে। ভারতেও সেইটা তারা চালু রেখেছে সেইটা জানা ছিলনা তার অবশ্য। মাথা ঝাঁকিয়ে তিনি বললেন আচ্ছা। নিয়মিত এইরকম বিচার বসে নাকি?

সরাই মালিক রুস্তম একটা ছোট পেয়ালায় কিসমিস আর বাদাম এগিয়ে দিয়ে বললেন, নাহ। বছর দুই বছরে একবার হয় মনে করেন, গিয়া দেইখে আসতে পারেন। বিচার হয়ে গেসে আগেই, যারা দুষ করসে তাদের শাস্তি। সব দেশী লোক, কেরেস্তান হয়ে পরে আবার কাফের হয়ে গেসে তাই শাস্তি। চল্লিশজনের মত মারব শুনলাম।

খুদাবন্দ একটা বাদাম মুখে চালান করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হামাদানি ভাই। আচ্ছা চলেন দেখে আসি বিচার।

… … … … … …

পুরাতন আদিল শাহী প্রাসাদ প্রাঙ্গণ, গোয়া। সকাল।

প্রাসাদ প্রাঙ্গণ থেকে একটু দূরে ঘোড়া বেঁধে সামনে হেঁটে আসলেন তারিক খুদাবন্দ ও জামশিদ হামাদানি। চতুর্দিকে লোকজন গিজগিজ করছে আর ফিসফিস করে কথা বলছে। থেমে থেমে কান্নার শব্দ আসছে কোথাও থেকে। পেদ্রো বলে ছেলেটা চোখের উপর হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করে বলল, উইযে দূরে আগুন, ওগিলি শলা ভরা পুতলা। যারা যারা মইরা গেসে বিচারের আগে তাদের শলা এরম পুড়ায়। আগুন কম। মানুষ পুড়াইলে পচুর আগুন!

স্থির চোখে হামাদানি জায়গাটা জরিপ করলেন। প্রাসাদের সামনে ফিরাঙ্গির দল লাল জামা পরে বসে আছে, তারাই ক্যাথোলিক যাজক সম্ভবতঃ। ফিরিঙ্গিস্তানের রাজা এদের পাঠিয়েছেন সুদূর ভারতে বিচার করতে। মাঠে সারি সারি খাম্বা, তার নিচে খড়ের গাদা। কি একটা বলতে বলতে দুইজনকে কাঠের খাম্বায় ওঠানো হল, আর তাদের সামনে দাঁড়ানো যাজক কিছু একটা প্রশ্ন করল। তারপর একজনকে ফাঁস দেয়া হল আর অন্যজনের পায়ে কি যেন মাখাতে থাকল সিপাই।

পাশে দাঁড়ানো পেদ্রো আস্তে করে বলল, পাদ্রীসায়েব জিগাইসে মরার আগে তারা সত্যধর্ম মেনে নিতে চায় কিনা, এবং জিসাস ক্রাইস্টকে তারা মুক্তিদাতা মানে কিনা। একজনে কইসে মানে, অরে ফাঁস দিয়া দিসে। পরে পুড়াইব কিন্তু জ্যাতা পুড়াইল না। পাশের জনে মানে নাই।

কে মানে নাই?

যার পায়ে তেল মারতেসে। শুয়ারের মাংসের তেল, এরা কয় বেকন। অর পায়ের তলায় আগুন দিব এখন, পাও পুড়ব আগে। জ্যাতা পুড়াইব, খ্রিষ্টধর্ম মানে নাই দেইখা।

তারিক খুদাবন্দ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, হামাদানি ভাই, থাক চলেন চলে যাই। এ পুড়ানি দেখে কী হবে।

মাথা নেড়ে সকলে আবার ঘোড়ার দিকে হাঁটা ধরলেন। দূর থেকে হতভাগ্য জীবন্তদগ্ধ মানুষটির চিৎকার ভেসে আসতে থাকল তাদের দিকে। ঘোড়ায় চড়ে আস্তে আস্তে যেতে যেতে পাশে হন্টনরত বালক পেদ্রোকে হামাদানি জিজ্ঞেস করলেন, এদের দোষটা কি ছিল? ফিরিঙ্গির ধর্ম মানেনি তাই?

পেদ্রো বলল, হ। আমি একজনকে চিনি, তার পোলা কালুরে নোনতা ভাত খাওয়াইছিল পাদ্রীসায়েব। সেই থিকা কালু হইছে সমাজে অচ্ছ্যুৎ, আর তার বাপেও খ্রিষ্টধর্ম নিসে। কিন্তু তারপর তার জমির পিছে পিয়াদারা পাইছে তুলসি আর পান, তখন বুঝছে এরা তলে তলে সেই কালা দেবীর পূজা করে। তাই ধইরা নিয়া পুড়াইল।

তুলসি আর পান কি?

গাছ মনে করেন একরকম। ছুটো। পূজায় লাগে। গোয়ায় নিষেদ আসে।

আচ্ছা, গম্ভীর হয়ে হামাদানি বললেন, মুসলমানদের এরকম করে পুড়ায় নাকি?

গলা খাঁকারি দিয়ে তারিক খুদাবন্দ বললেন, না না। কার্তাজওলা জাহাজে যারা আসে তাদের এসব কিছু করেনা। তারা এখানে সম্মানের সাথে থাকে। আপনার ভয় নেই।

ভয়ের কথায় প্রতাপশালী ইরানের শাহ এর খাস বাহিনীর যোদ্ধা জামশিদ খাঁ হামাদানি সকলের অলক্ষ্যে কুর্তার তলে ছুরিতে হাত বুলিয়ে একটু হেসে বললেন, সে বলছি না। মুসাফিরের কথা ভিন্ন। এলাকার মুসলমানদের কথা বলছিলাম।

দাখিনি নাই তেমন এদিকে। নদীর ঐপারে আদিল শাহী এলাকায় সব থাকে এখন। হিন্দুদের উপরেই ফিরিঙ্গির চাপড় বেশী।

আচ্ছা আচ্ছা।

সকাল গড়িয়ে ততক্ষণে দুপুর গড়াতে চলেছে। হাল্কা গলায় খুদাবন্দ প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, তা বিজাপুরে কি কাজে যাচ্ছেন? ব্যবসা?

উদাস কণ্ঠে হামাদানি বললেন, নাহ। ব্যবসাপাতি নেই আমার। কাযভিনে ইস্পাতের ছোরা বানানোর কারখানা চালাতাম, একই কাজ করে করে বিরক্তি ধরে গেল। আমার পাশের শহরের এক কবি সে তিমুরিদ আর দাখিনি দরবারে কবিতা বাঁধত, সে ফিরে গিয়ে এতোবার করে বলল ভারতের দরবারের প্রশংসা যে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে এলাম। দেখি এখানে কাজ নেওয়া যায় কিনা।

বিজাপুরের কবি? বাহ বেশ। কী নাম সে কবির? আমি বিজাপুর নওরাসপুরের দরবারে নিয়মিত যাই। কত কবি আর আঁকিয়ে সেখানে। চমৎকার।

হামাদানি দ্রুত ভেবে বললেন, হাঁ সে বটে। কবির নাম তসলিম কারমানশাহী। সে বিজাপুরে কি একটা ছদ্মনামে কাব্য লিখত। ইব্রাহীম আদিল শা’র খুব প্রশংসা তার মুখে।

কারমানশাহী? বেশ বেশ। হ্যাঁ ঠিক চিনলাম না, অন্য নামে চিনি হয়তো। ঠিক আছে।

কথা ঘুরিয়ে হামাদানি বললেন, যুদ্ধ চলছে বলছিলেন না? জাহাজেও একজন গণ্ডগোলের কথা বলছিল। বিজাপুর দরবারের হালচাল কী?

বিজাপুর ঠিক আছে, তারা তিমুরিদের সাথে মিলে নিজাম শাহীর সাথে যুদ্ধের আঞ্জাম করেছে। নিজাম শাহীর হাবশি ফৌজ সর্দার মালিক অম্বরের সাথে লড়াই, আহমদনগর না যাওয়াই ভালো এখন। বিজাপুরে সমস্যা নাই।

এই কথা সেই কথায় সকলে চলে আসলেন সরাইখানায় ফের। রুস্তম হেঁকে বলল, এইযে আগা হামাদানি আর আগা খুদাবন্দ! হোসেনি কাবাব করসি আইসেন, সাথে জাফরানি পুলাউ। খায়া হুড়ুম কইরা ঢেকুর না তুললে রুস্তমের নামই পাল্টায় রাখব যান!

হা হা করে হেসে দিলেন জামশিদ হামাদানি এবং তারিক খুদাবন্দ। তারপর খুদাবন্দ বললেন, না ভাই হামাদানি, রুস্তম বাবুর্চির হোসেনি কাবাব আসলেও বড় মারাত্মক। মনে হবে ইস্ফাহানের শাহী বাবুর্চির খানা খাচ্ছেন। আমি একটু গোসল করে আসব, দেরি হতে পারে। খেয়ে ফেলুন, পরে কথা হবে।

এই বলে খুদাবন্দ তার কামরায় প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলেন আর জানালার কবাটও ভিড়িয়ে দিলেন। একপাশে বালিশের নিচে একতাড়া খালি কাগজ, পাশে দোয়াত। একটু ভেবে খুদাবন্দ লেখা আরম্ভ করলেন কাগজে, “মহান করুণাময় খুদাতা’লার নামে আরম্ভ করছি। আশা করছি খুদার রহমত আগা মশহুদের জীবন আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে…”

গভীর মনোযোগ দিয়ে খুদাবন্দ খসখস করে চিঠি লিখে চললেন।

… … … … … …

সপ্তাহখানেক পরের কথা। বিজাপুর প্রাসাদ।

তাহির সিরাজী সকালবেলা উঠতে পছন্দ করেন, কিন্তু গতকাল রাতে নাচওয়ালি মরিয়মের সাথে খেলাধুলা করে আরামে ঘুমাতে ঘুমাতে গভীর রাত হয়ে গিয়েছিল, তাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছেন আজ। পাশে মরিয়ম শুয়ে আছে আধা উদলা হয়ে। সন্তর্পণে পাশ থেকে উঠে গিয়ে পাশে রাখা পেয়ালার পানি খেলেন একটু। একটু পরেই তাকে বের হতে হবে, আজ বিকালে চৌগান খেলা হবে। ঘোড়া তৈয়ার করে রাখবে তার চাকর আবদুল।

রূপেয়াহ দেবে না গো? খিলখিল কণ্ঠের এই প্রশ্নে সিরাজী হেসে ঘাড় ফিরালেন। মরিয়ম উঠে বসেছে, চোখে দুষ্টুমি। সিরাজী বললেন, হা কপাল। সুন্দরী, রাতটা কাটলো কি কাটলোনা রূপেয়ার কথা তুললে হায়। তোমার জন্য যে দুই পাতা কবিতা লিখে ফেললাম সে কি কিছুই নয়?

ও মা গো! পদ্য লিখেছ আমার জন্য? কই বল শুনি শুনি। শুনে জীবন ধন্য করি!

মরিয়মের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে সিরাজী বললেন, শোন তবে। হাজার রাত কাটুক অন্ধকার কারাগারে, যদি তার বিনিময়ে পাই তোমার সে অধর - মরিয়ম!

এই বলে মরিয়মকে চুমু দিতে যাবেন সিরাজী, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। ঠক ঠক। বিরক্ত হয়ে সিরাজী বললেন, কে রে!

হুজুর, ঐপাশ থেকে উত্তর এলো, আমি জিলানি হুজুর। জিলানি। চিঠি আছে।

উঠে গিয়ে দরজা খুললেন সিরাজী। জিলানি তার কাছে কেন, কোন খারাপ খবর?

জিজ্ঞেস করতে জিলানি বলল, আগা খুদাবন্দ চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন আপনার হাতে যেন ত্বরা করে দেই। এইযে নেন। পথে ডাকাত পড়েছিল তাই আসতে একটু সময় লাগল হুজুর।

চিন্তিত মুখে জিলানিকে বখশিস দিয়ে চিঠি খুলে পড়া শুরু করলেন সিরাজী। “মহান করুণাময় খুদাতা’লার নামে আরম্ভ করছি। আশা করছি খুদার রহমত আগা মশহুদের জীবন আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে…”

মুখটা তিতা হয়ে গেল সিরাজীর, কতবার খুদাবন্দকে তিনি বলেছেন মশহুদ নাম ব্যবহার না করতে। কেবলই ভুলে যায়। সিরাজীকে দাঁত কিড়মিড় করতে দেখে পাশ থেকে মরিয়ম বলল, কার চিটিঠি গো। বড় পেরেশান হয়ে গেলেন যে!

মরিয়ম আমি আসছি একটু। তুমি পরে দেখা কর আমার সাথে।

পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মরিয়মকে পাশ কাটিয়ে সিরাজী বাইরের বড় কামরায় তাকিয়া হেলান দিয়ে বসে পড়া আরম্ভ করলেন বাকি চিঠিঃ

“...হামাদানের এক আগা এসে বিজাপুরের দরবারের দিকে রওনা দিয়েছে। জামশিদ খান হামাদানি, বললেন কাযভিনে ইস্পাতের ছুরির ব্যবসা। আমার সাথে এক জাহাজেই এসেছেন, সাথে মালপত্র বা চাকরনফর কেউ নাই। বললেন তার বন্ধু বিজাপুরে কবি, তসলিম কারমানশাহী। ছদ্মনামে নাকি কবিতা লিখতেন, এখন ইরান ফেরত গিয়েছেন। তার কথায় বিজাপুর যাচ্ছেন কাজের খোঁজে।

আপনি জানেন যে কারমানশাহের কোন আফাকি বিজাপুর আহমদনগর দরবারে নিকট অতীতে ছিলেন না। বছর দুয়েক আগে তিরমিযের কবি ইসমাইল ইরানে ফিরত গিয়েছেন, এছাড়া আর কারো কথা আমার স্মরণ আসছেনা। তদুপরি, কোন রকম ভেট ছাড়া খালি হাতে কেউ শাহের কাছে কাজ খুঁজতে আসবেন ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হল।

...আশা করি এই চিঠি আপনাকে অযথা পেরেশানির মধ্যে ফেলে দেয়নি, যা কিনা আমার জন্য হবে মর্মান্তিক ও পীড়াদায়ক! হামাদান থেকে সন্দেহজনক একজন এসেছে সেই খবর আপনার কাছে দিলাম, আশা করি আমার আশঙ্কা ভুল। হয়তো আগা হামাদানি একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং আপনার চিন্তার কিছুই নেই। সাবধানে থাকুন ও কিছুদিন সম্ভব হলে অতিথি দরবারে এড়িয়ে চলুন।

খুদা আপনার নসীব বাড়িয়ে দিন এবং দ্বীন শক্ত করে দিন! খুদা মালিক। খুদা মহান।

আমিন।

তারিক খুদাবন্দ।”

ধকধক ধকধক করতে থাকল শরীফ মশহুদ তথা তাহির সিরাজীর হৃদপিণ্ড। শুয়োরের বাচ্চা আব্বাস তার খোঁজ পেয়ে গেছে, এত দূর থেকেও। খুদাবন্দ সম্ভবতঃ সঠিক, ভাবলেন সিরাজী। হামাদানের লোক মানে তার তালাশেই এসেছে।

চোখ বন্ধ করে সিরাজী ভাবতে থাকলেন।

(পরের পর্বে সমাপ্য)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সিরাজির দেয়ালে একটা বালুঘড়ি লটকে দিলুম। আর একটা হালাল চিত্রকর্ম।

সত্যপীর এর ছবি

প্রচ্ছদে সিরাজীর বডিবল্ডার ফিগার আর মরিয়মের উদলা দেহ জুড়ে দিলুম। অশ্লীশ ছবির অভিযোগে মডুমামা পোস্ট ব্যান না কর্লেই হয় এখন।

কিন্তু তার্চেয়েও বড় কথা, সিরাজী মরিয়ম মিলায় মিলায় গোলাপি জামা আর নীল পাৎলুন পরে কেনু হোয়াই?

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

হয়তো বিজাপুরে একজনই খলিফা। তার কাছে কুল্লে দুই থাক থান কাপড়।

ডোরাকাটা জাঙ্গিয়াটা সিরাজি ছোটকালে ইরান বা তুরান থেকে খরিদ করে নিয়াসছে।

সত্যপীর এর ছবি

হয়তো বিজাপুরে একজনই খলিফা।

একথা বললে চলপে? বিজাপুর ছিল খলিফায় ভরপুর নগরী। খলিফা ম্যাগনেট সিটি যাকে বলে। পচুর পয়সাওলা এলাকা। শোনা যায় কোন মোগল রাজপুত্রকে এইখানে পোস্টিং দেওয়ার পরে তিনি চিঠি লিখে বাদশাকে কইছিলেন বাজান। হাতখর্চাটা বাড়ায় দেউ কেননা এই শহরে সবকিছু খুবই দামী দামী।

কথাটা বিজাপুর না গোলকুণ্ডা নিয়ে কইছিলেন এই মুহুর্তে স্মরণ আসতেছেনা কিন্তু হরেদরে ব্যাপার একই। পয়সাওলা বিজাপুর ওয়াজ ফুল অফ খলিফাজ অ্যান্ড বিজনেছপিপল। কাপড়ের থানের অভাব কি!

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

মরিয়মের উদ্বেগটা দেখানো দরকার মনে হলো। বেচারি রূপেয়ার চিন্তায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে নাই।

সত্যপীর এর ছবি

জর্জিয়ান নাচওয়ালি বিবি মরিয়ম অঞ্জন দত্তের গানের মত অনেক স্রোতে বয়ে গিয়ে অনেক ঠকেছেন। আগুণ থেকে ঠেকে শিখে অনেক পুড়েছেন। অনেক কষ্টে অনেক কিছুই দিতে শিখেছেন ইত্যাদি। অতএব রূপেয়া নিয়ে তার বাহানা ও নানাবানা যাকে বলে জাষ্টিফাইড। তাহির সিরাজীর পদ্য দিয়ে কি পেট চলে কন।

ছবি প্রসঙ্গে, দেওয়ালের ফাইন ডিটেইল চমৎকার হইছে। সত্যি কথা বলতে আরো কয়টা ফাইন ডিটেইলের তারিফ করতাম কিন্তু লজ্জা লাইগল লইজ্জা লাগে

একদিন বই লিখা পাব্লিশ করলে আপনার এই ছবিগুলান চায়া নিমু।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

বই লেখেন জলদি। বটি দিয়ে পেন্সিল ছুলতেছি।

সত্যপীর এর ছবি

কান্দাহার কেন্দ্রিক এলাকায় ষোড়শ বা সপ্তদশ শতাব্দীর ভূরাজনীতি নিয়ে বড় কলেবরে লেখার প্ল্যান। সাফাভিদের পূর্ব আর মোগলের সর্বপশ্চিম দুর্বল কেন্দ্র এই এলাকায় পচুর ঘটনার ঘনঘটা। সুমায় থাকলে পাঁচ সাত পর্বের গপ নামানো ইজি। বই ছাপার মতন লম্বা টানা লেখা শেষ করতে পারলে লিচ্চয় বই করার ধান্দা করব। পাব্লিশার চিনিনা কেউরে অবশ্য, ছাপা বই কিনে দরকারে টেবিলের নড়বড়ে পায়ার নিচে দিয়ে সাইজ করতে পারবেন সে আশা ছেড়ে দেন। বিজলিবই করা যায় কিনা দেখব।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

এক খাবলা দুই খাবলা করে লিখে যান। মোগল-ছফাবি সবাইরে জাইঙ্গা পরায় দিবো সমস্যা নাই।

সত্যপীর এর ছবি

সবই উপরওলার ইচ্ছা। আপনি আমি উছিলা মাত্র।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

চারপাশে পর্তুগিজ ফিরিঙ্গীদের নিয়েই পড়ছি লিসবনে বসে, আগামী পর্বের অপেক্ষায়!

সত্যপীর এর ছবি

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হেডকুয়ার্টার নিয়া ছবিপুস্ট ছাড়েন ইতিহাস সহ। চাই দেতে হবে।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. 'খাঁ হামাদানি' ও 'খুদাবন্দ' কি ফ্যামেলি নেম হতে পারে?
২. এমন ডোরাকাটা ও ছাঁটের জাইঙ্গা বা হলুদ হাপ্পেন কি প্রচলিত ছিল? তখনো ইলাস্টিক আবিষ্কৃত হয়নি, নিট রিব আবিষ্কৃত হয়নি। লম্বা পায়ের ঢোলা, ডুরিওয়ালা অন্তর্বাস পরার কথা।
৩. এই দেশে পর্তুগীজ শাসন কায়েম হতে না পারার একশটা কারণের মধ্যে 'ইনক্যুইজিশন' একেবারে সামনের সারিতে থাকবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী এমনকি অন্য খ্রীষ্টানরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। ২৬০ বছর ধরে এই আগুন জ্বলেছে। মুসলিম কাউকে পুড়িয়ে মেরেছে বলে জানতে পারিনি। অবশ্য গল্পে ব্যাপার ভিন্ন হতেই পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

২. কইতে পারিনা। তবে ইলাস্টিক না থাকলেও ছুটো হাপ্পেন টাইপ জামা নিচ্চয় ছিল। যেমন জাহাঙ্গীরি পেন্টিং দেখেন, সবুজ ছুটো জামা, হাঁটু পজ্জন্ত। দুষ্ট সিরাজী আরো ছুটো ঢিলা জামা পরসে ধরেন, মরিয়মের সাথে খেলাধূলার সুবিধা।

১. হামাদানের অধিবাসী তাই হামাদানি, যেমন সিরাজি বা কাযভিনি ইত্যাদি। খান বাপের দেওয়া নাম। এই আর কি। খুদাবন্দের ব্যাপার বলতে পারলাম না অবশ্য, এক বইতে এক ঘোড়া সওদাগরের নাম দেখসিলাম খুদাবন্দ তাই ঢুকায় দিলাম।

৩. পর্তুগীজ ইনক্যুইজিশন নিয়ে সবে অ্যাপিটাইজার দিলাম। যাকে বলে বিরিয়ানির আগে টেবিলে সালাদের মতন। পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ কিম্বা বড় কলেবরে গল্প আসিবে নতুন বছরে। ভরসা দিলাম! বিশেষতঃ ইনক্যুইজশনের অর্থনৈতিক আর সামাজিক দিকটা, পুড়িয়ে মারার পরে কিভাবে চার্চ জমি পয়সা দখল করত বা ছোট পুত্রসন্তান কেড়ে নিয়ে যেত পরিবার থেকে ঐগুলি বিস্তারিত সামনে নিয়ে আসা জরুরি বোধ করি।

মুসলিম কাউকে পুড়িয়ে মেরেছে বলে জানতে পারিনি। অবশ্য গল্পে ব্যাপার ভিন্ন হতেই পারে।

গল্পেও মুসলিম কাউকে না মারার কথা বলা আছে। মূলত ধর্মান্তরিত হিন্দু এবং ইহুদি সম্প্রদায়কে পুড়িয়ে মারা হত সন্দেহের বশে।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

আরেকটা কথা পাণ্ডবদা। বহুদিন আগে আপনি আমাকে মোগল আমলের পাশাপাশি দাখিনি সুলতানাত নিয়ে লিখতে বলেছিলেন। তখন এবিষয়ে পড়াশুনা কম ছিল তাই লিখিনাই। এই লেখা দিয়ে শুরু করলাম। গল্পের পরের পর্বে মালিক অম্বর আসতেছেন। জম্পেশ ব্যাপার্স্যাপার।

এই গপ ছাড়াও আগামী কিছু লেখা বিবিধ দাখিনি সুলতানাতকে কেন্দ্র করে লিখব আশা রাখি, দোয়া খায়ের কাম্য।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. খাঁ/খান সাধারণত নামের অংশ নয়। এটা গণহারে নামের শেষে ব্যবহৃত হতো, যেমন এদেশে এককালে মুসলিমদেরকে গণহারে ‘মিঁঞা’ বলা হতো। ‘হামাদানী খান’ পরিচিতি হিসাবে ঠিক আছে, সম্বোধন হিসাবে একটু কেমন কেমন লাগে। ‘খুদাবন্দ’ কথাটা ‘ইয়োর এক্সেলেন্সি’ বা ‘ইয়োর হাইনেস’ টাইপ একটা সম্বোধন। এটা কিছুতে নামের অংশ হতে পারে না।

২. আমি জাহাঙ্গীরের এই ঢিলেঢালা, ডুরিওয়ালা অন্তর্বাসের কথাই বলছি। এর দৈর্ঘ্য অল্প ছোটবড় হতে পারে, ঢিলা বেশকম হতে পারে। তবে এখনকার জাইঙ্গা ছাঁটের না। ইলাস্টিক, নিট রিব তো চিন্তার বাইরে।

৩. ব্রিটিশরা এদেশে শ’দেড়েক বছর ধরে বাণিজ্য করেছে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী গড়েছে। জমি কিনেছে, জায়গীর-দেওয়ানী কিনেছে। ধর্মান্তরিতকরণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। ছোটখাটো কাইজ্যা ছাড়া বড় গিয়াঞ্জামে যায় নাই। স্থানীয়দের মধ্যে ব্রিটিশদের বেতনভূক আর বাণিজ্য সুবিধাভূক শ্রেণী তৈরি করেছে। এরপরে এরা যখন যুদ্ধে নেমেছে তখন স্থানীয়দের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে। বস্তুত স্থানীয়দের কাছে ব্রিটিশ আর স্থানীয় শাসকদের লড়াই দুটো রাজ্যের লড়াইয়ের মতো লেগেছে। পর্তুগীজ গাবড়গুলো সেই রাস্তা ধরেনি। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ধর্মীয়ভাবে গেছে। পর্তুগীজ পাদ্রীরা পর্তুগীজ ওয়ারলর্ডদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে যেটা ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে হয়নি। জোরজার করে জমি দখল না করে ব্রিটিশদের মতো ‘Doctrine of Lapse’-এর রাস্তা ধরলে রাতারাতি এক একটা রাজ্যের মালিক হতে পারতো। যাকগে, সবার আগে এসে, কোস্টাল এরিয়াতে সুবিধাজনক জায়গায় থেকে, আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা পেয়েও হার্মাদগুলি স্বভাবদোষে ভারত কব্জা করতে পারেনি। নয়তো আজকে তারা পশ্চিম ইউরোপের ফকির না হয়ে ইউরোপের জমিদার হতে পারত।

৪. দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস নিয়ে উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের অনীহা ও অবহেলা দৃষ্টিকটু রকমের। দক্ষিণী মুসলিম শাসকদের বিশেষত শিয়া শাসকদের ব্যাপারে আরও গবেষণা ও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। শিয়ারা উপমহাদেশে রাজ্য সম্প্রসারণ করতে পারলে ও তাদের শাসনামল দীর্ঘায়িত হলে গোটা মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস পালটে যেত। সেক্ষেত্রে আজকে ইরাক সীমান্ত থেকে আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত আট/নয়শ’ মিলিয়ন শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের বিপক্ষে বহুধাবিভক্ত আরব সুন্নীরা কতটুকু সুবিধা করতে পারত সেটা ভেবে দেখার বিষয়।

মনের আনন্দে গল্প লিখে যান। দক্ষিণী যেই আসুক অসুবিধা নেই, কেবল গল্পের পরতে পরতে রোমাঞ্চ-উত্তেজনা-শিহরন থাকলেই চলবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

১. শাহ আব্বাসের বাপের নাম ছিল মোহাম্মদ খুদাবন্দ। সাফাভিদ আমলে খান, বেগ এগুলি টাইটেল হিসাবে অবশ্যই বহুল ব্যবহৃত ছিল (খুদাবন্দও একটা টাইটেল হতে পারে), কিন্তু শেষনাম হিসাবে কখনো ব্যবহার হতনা এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছেনা। শাহ আব্বাসের এক সেনাপতির নাম ছিল ফরহাদ খান কারামানলু।

"হামাদানী খান" সম্বোধন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কি? হওয়ার কথা আগা হামাদানী, বা আগা খান/খাঁ। জামশিদ হামাদান এলাকার লোক তাই শেষে আসবে হামাদানী, খানের আগে হবার কথা না। যে কারণে ইস্ফাহানী বা কাযভিনি বা সিরাজীর পরে শেষ নাম আসেনা। এই আর কি।

৪.

শিয়ারা উপমহাদেশে রাজ্য সম্প্রসারণ করতে পারলে ও তাদের শাসনামল দীর্ঘায়িত হলে গোটা মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস পালটে যেত।

হতে পারে, কিন্তু তাতে ভারতবর্ষের ইতিহাস তেমন পাল্টে যেত না ধারণা করি। যে লাউ সেই কদু। কুতুব শাহীর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট আলী কুতুব শা'র পুলা জামশিদ গদির লোভে বাপের কল্লা নামান আর ভাইরে করে দেন অন্ধ। জামশিদ মারা যাবার পরে তার আরেক পলাতক ভাই এসে জামশিদের ৭ বছরের পুলারে হত্যা করেন। আহমদনগরের মুর্তজা নিজাম শা ভাইসাহেবের কল্লা নামায় গদিতে আসেন তার পুলা হুসেন। এইসব দিনরাত্রি। সুন্নি মোগলের জায়গায় শিয়া সুলতানাত আসলে আমগোর কি আসে যায় কন।

এ হইল প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হল, বহুধাবিভক্ত আরব সুন্নির পালটি হিসাবে শিয়াদেরও নানা মত নানা পথ ছিল। সাফাভিদেরা মূলতঃ দ্বাদশবাদী দেখলাম, বিস্তৃত শিয়া বিশ্বে অন্যান্যবাদীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠত, যেমন ইসমাইলি ইত্যাদি। তদুপরি ইরানের লোকেরা ব্যাপক উন্নাসিক, তারা লোকাল শিয়াদের নিজেদের থেকে নিচু মনে করত। বিশেষতঃ আদিল শাহী নিজাম শাহীর ফাউন্ডার যেখানে স্থানীয় হিন্দু বা দাস বংশের লোক, কুতুব শাহীর ফাউন্ডারের মত খাস উঁচু জাতের শিয়া না। বিস্তৃত আট/নয়শ’ মিলিয়ন শিয়া সকলে ভাই ভাই সুন্নির কল্লা চাই এই বিষয়ে কিঞ্চিৎ দ্বিমত, সেইখানেও বহুধাবিভক্তি থাকার কথা।

একটা পোস্ট দিবেন নাকি?

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিয়াদের মধ্যে ৯, ১২ ইত্যাদি বহু বিভাজন আছে সত্য, ইরানীদের নিজেদের সেরা মনে করা বা অন্যদের তাচ্ছিল্য করার ঐতিহ্য আছে সেটাও সত্য; তবে শিয়া এবং সুন্নীরা সংখ্যায় কাছাকাছি হলে মুসলিম বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যের হিসাব নিকাশটা ভিন্ন হতো। এর সাথে কাস্পিয়ান আর তুর্কীস্তানের শিয়ারা যোগ হলে ঘটনা আসলেই অন্য রকম হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে পূর্ব দিকে আরেকটা গানপাউডার ডায়নাস্টির উত্থানের বদলে সাফাভিদদের আরও পূর্বে আসার একটা সুযোগ হতো। যাকগে, যা হয়নি তা নিয়ে নানা অনুমিতি করে কী লাভ! এসব নিয়ে পোস্ট দেয়া রিসোর্সের অপচয়। এরচেয়ে আপনার গল্প পড়া যাক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

অল্টার্নেট হিস্ট্রি জনরাঁ ভালো জিনিস তো বস। আই লাইকছ। ঠিকমত লিখলে রিসোর্সের অপচয় হবেনা। ধরেন দারাশিকো গদিতে আসলে ভারতের গতিপথ কোনদিকে যাইত, কিম্বা রাজপুতেরা একত্র হয়ে আকবররে ঠেকায় দিলে তিনি কোনচিপা দিয়ে পরের দান দিতেন, অথবা দক্ষিণের সুলতানাত অফিশিয়ালি শিয়া হইলে ব্যালেন্স কোনদিকে খাড়াইত। চমৎকার সব থট এক্সপেরিমেন্ট হয় কিন্তু। আপনার সাথে এই বিষয়ে একমত যে লিমিটেড রিসোর্স এইখানে খাটানো অপচয়, কিন্তু পর্যাপ্ত সুমায় সুযোগ থাকলে এই পথে আগানো যাকে বলে রোমাঞ্চকর!

গল্প আসতেছে সমস্যা নাই। দ্রুত নামায় দিচ্ছি পরের পর্ব।

..................................................................
#Banshibir.

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হিমু, মরিয়ম এর উদ্বেগ আর সৌন্দর্য দুইটাই ফুটিয়ে দিয়েছো ।।লেখা খুব ঝকঝকে!

হিমু এর ছবি

বস, আপনিও নতুন বছরে নতুন উদ্যমে লেখা শুরু করেন। আড়ালে পেন্সিল হাতে ওঁৎ পেতে আছি।

সত্যপীর এর ছবি

গরীবের ঘরে হাত্তির পাড়া! স্বাগতম বস!

আপনার বহু আগের একটা পোস্টে বন্ধুর সাথে সানগ্লাস শেয়ারে কিনার একটা কাহিনী ছিল। সেই লেখা প্রকাশের সময় আমি নিজে লেখা আরম্ভ করিনাই, কেবল পড়তাম। আপনার বয়ানে সানগ্লাস সহকারে রিক্সা জার্নির গল্প পড়ে হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।

..................................................................
#Banshibir.

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

রিক্সা জার্নির গল্প পড়ে হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।

ব্যাথা লেগে ছিল?! চোখ টিপি

সত্যপীর এর ছবি

হাসি এখনো থামে নাই।

..................................................................
#Banshibir.

অবনীল এর ছবি

চলুক

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা এর ছবি

বেশ কিছুদিন বাদে ফিরে এসে পীরসাহেবের লেখা পেয়ে খুব ভালো লাগল। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সত্যপীর এর ছবি

বেশ কিছুদিন ডুব মারলে চলবে? নিয়মিত আসা চাই।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।