মৃত্যুপ্রান্তরে পাখিবিলাস !

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: শনি, ০২/০৮/২০০৮ - ৯:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উত্তাল সত্তরের দশক। গোটা পশ্চিমবঙ্গ পুড়ছে। পুড়ছে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ। এ পাশে পুড়ছে পূর্ববঙ্গ। উত্তাল একাত্তর। গোলাপি রঙগুলোও ক্রমে ক্রমে গাঢ় লাল। এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকা জ্বলছে। মহানগর কলকাতায় মুড়িমুড়কির মতো লাশ পড়ছে। কেওড়াতলায় ইঁটের টুকরো আর পোড়া কাঠের টুকরো দিয়ে শত শত লেখা নাম। প্রতিদিন সংখ্যাটা বাড়ছে। বাঙলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমার প্রকৃতিপ্রেমিক। প্রাতঃভ্রমণ করছেন। গড়ের মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। একটা পুলিশ ভ্যান এসে থামে। উত্তমবাবু ঝট করে গাছের আড়ালে চলে যান। দেখেন, গাড়ি থেকে একজন হালকা-পাতলা মানুষ নামলেন। ফুটপাথ ধরে কিছুদূর হেঁটে গেলেন। উত্তমের দিকেই। রাজনীতির খোঁজখবর না রাখলেও সরোজদত্তকে কি চিনলেন উত্তম? হঠাৎ পেছন থেকে গুলি। লুটিয়ে পড়লেন সরোজ দত্ত। চারু মজুমদারের সবচেয়ে কাছের মানুষটি। তাত্ত্বিক মার্কসবাদী নেতার পরিচয় বাদেই সরোজ দত্ত ছিলেন সে সময়ের ক্ষুরধার লেখক, সমালোচক, অনুবাদক। ‘শশাংক’ ছদ্মনামে বাঙলা সংবাদপত্র জগতের ধ্রুবতারা। উত্তম প্রাতঃভ্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন। পুলিশের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেননি। পরদিন কাগজের শিরোনাম- ‘এনকাউন্টার’।
সপ্তদশ শতাব্দী। বাংলা-বিহার উত্তাল হয়ে উঠেছিল। সন্ন্যাস বিদ্রোহের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলা-বিহারে। ১৭৬৮, ত্রিপুরার কৃষক বিদ্রোহী নেতা শমসের গাজীর ‘একতার শাসন’ কায়েম হযেছে ত্রিপুরা, কুমিল্লা এবং সিলেটের কিছু অংশে। রাজা দীননাথকে টোপ দিয়ে মুর্শীদাবাদের নবাব মীর কাশিম শমসের গাজীকে ধরে আনলেন মুর্শীদাবাদে। শেষ রাতে কামানের মুখে বেঁধে গোলার সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া হলো বাংলার একমাত্র কৃষক বিদ্রোহী নেতাকে, যার জন্ম হয়েছিল বাঁদির ঘরে। অভাবের তাড়নায় যাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে কামানের গোলার সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়ার পর নবাবের জুটলো ইংরেজদের খেতাব। চাউর করা হলো অন্তর্ঘাতে মৃত্যু হয়েছে শমসেরের।
১৯৭২। মুক্তিযোদ্ধা বিপ্লবী সিরাজ শিকদারকে ধরে ঠাণ্ডা মাথায় পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই কাক ভোরে। সাভার-আরিচা রোডে। পরদিন কাগজে এসেছিল ‘ধৃত সিরাজ শিকদার পালাতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন’।
১৯৭৫। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বস্তুবাদী কর্নেল তাহেরকে সিপাহিদের হাত থেকে বাঁচানোর নাম করে জেনারেল জিয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। নাম দেওয়া হয়েছিল- ‘কোর্ট মার্শালে সাজাপ্রাপ্ত’।
১৯৭৫ শেখ মুজিবুর রহমান কে হত্যা করার পর কেন তার নিরীহ কিশোর ছেলে রাসেল, গৃহবধূ বেগম মুজিব এবং পরিবারের সঙ্গে সদ্য সম্পর্কিত পুত্রবধূদের হত্যা করা হলো’র জবাবে বলা হয়েছিল- ‘তাদের সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল। তারা কমান্ড ফলো করেনি তাই...।’
প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ক্যু- দেতার পর হত্যা করে জেনারেল মঞ্জুর কী বলেছিলেন জানা যায়নি। তার বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু হওয়ায় তাকে পালাতে হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে ধরা হলো। তাকেও ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হলো। পরদিন কাগজে বেরুলো- ‘পুলিশের হাত থেকে পালাতে গিয়ে এবং গোলাগুলির মধ্যে পড়ে তিনি নিহত হয়েছেন’। শোনা যায় সেই সার্চ পার্টির ওপর এরশাদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব বা ইঙ্গিত ছিল।
২০০৪, ১৭ ডিসেম্বর। পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা মোফাখ্খারুল ইসলামকে হত্যা করা হলো। বলা হলো ... (রোজ বলা হয়, লেখা হয়। পুনরাবৃত্তির প্রবৃত্তি হচ্ছে না) ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত। কাগজের খবরে যদ্দুর জানা গেলো তার নামে কোনো জেলার পুলিশের খাতায় কোনো মামলা ছিল না। তার কোনো ছবিও পুলিশের হাতে ছিল না। সরাসরি কোনো হত্যাকাণ্ডে তাকে অভিযুক্ত করা যায়নি। ৬৩ বছরের বৃদ্ধ মানুষটিকে ‘সন্ত্রাসী’ও বলা যায়নি। ধরে নেওয়া হলো তারই ইশরায় তার নির্দিষ্ট দলটি দেশের ‘সম্মানিত’ নাগরিক হত্যা করেছে। সন্ত্রাস করেছে। অথবা কিছুই না করুক। তাকে খুন করতে হবে, তাই করা। এখন শুধু কাগজে খবর বেরুলো না। দ্য ফোর ইলেক্ট্রনিক কোলাবরেটর মিডিয়ায়ও ফলাও করে প্রচার হলো।

২০০৭ । পাবনায় কামরুল মাষ্টারকে একই কায়দায় হত্যা করে ‘ক্রসফায়ার’ নামে চালিয়ে দেওয়া হলো। তিনি স্কুল শিক্ষক হয়ে গণমানুষের মুক্তির রাজনীতি করে বোধ হয় কবিরা গুনাহ্‌ করে ফেলেছিলেন । ২০০৮ এর জুন মোফাখ্‌খার চৌধুরীর অনুসারি দাদা তপন কে হত্যা করা হলো। কাহিনীর বর্ণনা একই.. পালাতে গিয়ে ক্রসফায়ার ! এই অধ্যায়ের সর্বশেষ শিকার ডা.টুটুল। অন্যদের বেলায় যা হয়নি টুটুলের বেলা তা হয়েছিল। টুটুলের মা তার ছেলেকে ‘ক্রসফায়ারে’ না মেরে বিচারের আওতায় নিতে অনুরোধ করেছিলেন। আবেদন ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়েছে। টুটুলকে হত্যা পর তার পরের চার দিনে আরো তিন জন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

১৯৭২। মাত্র ৯৬ পাউন্ড ওজনের লিকলিকে হার্টের রোগী চারু মজুমদারকে ধরা হলো। সঙ্গে সঙ্গে খুন করা হলো না। কংগ্রেস আর অ্যাকুমুলেটর জ্যোতি-বামদের ইঙ্গিতে ডিএসপি বসাক চারু মজুমদারের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বন্ধ করে দিলো। সেই সঙ্গে চললো মানসিক নিপীড়ন। বিনা ওষুধে ধক ধক করে তিন দিন ছটফট করে মারা গেলেন চারু মজুমদার। পরদিন কাগজে বেরুলো- ‘নকশাল আন্দোলনের পুরোধা চারু মজুমদার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পুলিশ হেফাজতে দেহত্যাগ করেছেন !’

ইতিহাসের এইসব মানুষদের ঠাণ্ডামাথায় হত্যা করা হয়েছে। সেই ১৭৬৮ থেকে তিন শতাব্দী পেরিয়ে আজ ২০০৮ সাল। মৃত্যুর রকমফের হয়েছে। পদ্ধতি বদলেছে। উপকরণ বদলেছে। উদ্দেশ্য বদলায়নি। ধরন বদলায়নি। মৃত্যু পরবর্তী ব্যাখ্যা বদলায়নি। ‘অন-র্কলহ- হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ- এনকাউন্টার- পালাতে গিয়ে’ এবং সর্বশেষ ‘ক্রসফায়ার’ অথবা ‘লাইন অফ ফায়ার’,অথবা বন্দুক যুদ্ধে’। ইতিহাসের যে চরিত্রগুলোর কথা বলা হলো, এদের কেউই মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না। মৃত্যু অবধারিত জেনেই জগতটাকে আমূল বদলে দিতে এসেছিলেন। একার জীবন তো বদলেছিলেন প্রথমেই। মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না বলেই কী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন? মৃত্যু কী মোলায়েম আলিঙ্গনসম মহার্ঘ? নিশ্চয়ই নয়। মৃত্যু অনিবার্যভাবে জগতের সবচেয়ে অপ্রিয় বিষয়। মৃত্যু মানেই যতি চিহ্ন। ছোট্ট একটা হার্মিংবার্ড, চড়ুই, পিঁপড়ে, ঘাসফড়িং এমনকি অনুসাদৃশ্য সিঁদুরে পোকাও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। বেঁচে থাকে শেষ পর্যন্ত। এরা যদি বাঁচে, দেওয়ালে বিজলিবাতির নিচে যে টিকটিকিটি পোকা শিকার করে সেও যেমন বাঁচতে চায়, তেমনি পোকারাও টিকটিকির আক্রমণ থেকে উড়ে বাঁচতে গিয়ে তপ্ত বাতির ওপর পড়ে মরে যায়। অথচ মৃত্যু অনিবার্য জেনে যারা জগতটা বদলাতে এসেছিল তারা যেন বাঁচার অধিকার রাখে না। পোকামাকড় শিকার করা টিকটিকিরই যেন একমাত্র বাঁচার অধিকার! তাই তার শিকার মানেই জীবন বাঁচাতে- সমাজ বাঁচাতে- ‘সন্ত্রাস’ রুখতে- শেষ বিচারে এস্টাবলিস্টমেন্টের সিফিলিসক্লিষ্ট গণতন্ত্র বাঁচাতে।

আমরা। এই আমরা, যারা আবাল পাবলিক। এস্টাবলিস্টমেন্টের দালাল, ব্যুরোক্র্যাসির চামচা, অফিসিয়াল টাউট, ধর্মীয় ফ্যানাটিক, সামাজিক হিপোক্র্যাট, এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য প্রভূর দাসানুদাস তারা কী ইতিহাসের মানুষদের মূল্যায়ন করার ক্ষমতা রাখি? অধিকার রাখি? নিশ্চয়ই রাখি না। তাহলে কোন অধিকার বলে ইতিহাস বলাতে হাত দিই? রাষ্ট্রিক অধিকার? সে তো ছোট ছোট দুচারটে সংশোধনীতে ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। আজ আমাদের অগ্রগামীরা তো বটেই, আমাদের রাষ্ট্রীয় শাসক-শোষকরা, এমনকি ধর্মীয় মৌলবাদীরা অব্দি মার্কসকে মহান দার্শনিক বলি। লেনিনকে মহামতি লেনিন বলি। পুঁজিবাদের পাঁড় সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীও মার্কসের ক্যাপিটাল থেকে কোট করেন। চে গুয়েভারা এখন গোটা পুঁজিবাদী পশ্চিমে তরুণ-তরুণীদের এক নম্বর ফ্যাশন। ফিদেল ক্যাস্ট্রো এখনো সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনের যোগ্য জবাব, মহান নেতা। অথচ ইতিহাসের শুরুতে কার্ল মার্কসকে বলা হতো ‘কমিউনিস্টের ভূত’। লেনিনকে বলা হতো ‘টেকো শয়তান’। মাও সেতুংকে ‘লাল ডাকাত’। ক্যাস্ট্রোকে- ‘ক্যারিবিয়ান ডেভিল’। চে গুয়েভারাকে ‘ভাড়াটে শয়তান’ এবং চারু মজুমদারকে বলা হতো- ‘হেঁপো রোগী’।

আজ আমরা, ধেড়ে শয়তানরা ইতিহাসের মানুষদের বিকৃত করছি। শেখ মুজিবকে বলছি ‘একদলীয় একনায়ক’, সিরাজ শিকদারকে ‘পেয়ারা বাগানের ডাকাত’, কর্নেল তাহেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, মোফাখ্খার চৌধুরী,তপন,কামরুল ,ডা.টুটুলকে ‘চরমপণ্থী সন্ত্রাসী’ বলে নিজেদের শক্তিমত্তা আর পদলেহি সত্তাকে জাহির করছি। তবে ইতিহাসের নিয়মটা হলো, সামান্য বেতনভুক কর্মচারী আর আজ্ঞাবহরা ইতিহাস বলাতে পারে না। ইতিহাস তার আপন মহিমায় ভাস্বর হবে। হবেই।

কোনো রকম বিরতি ছাড়াই ‘র‌্যাব’, ‘চিতা’, ‘কোবরা’,‘সোয়াত’ আর সাধারণ পুলিশের হত্যাযজ্ঞ চলছেই। ক্রমশ বাড়ছে। শিকারদের সামাজিক শ্রেণী বিন্যাস আরো স্পষ্ট হয়েছে। আমরা এখন জেনে গেছি কাদের ইঙ্গিতে এটা হচ্ছে, কাদের কল্যাণে এটা হচ্ছে, এবং প্রধানত কারা এই হত্যাযজ্ঞের নির্মম শিকার। বাংলা ভাইয়ের মতো শত শত ভাই দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতার কেন্দ্র প্রসারিত করেছিল,এখনো নানা নামে উগ্র মৌলবাদীরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। শিবিরের আত্মস্বীকৃত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আন্ডার গ্রাউন্ডের গর্ত থেকে টেনে বের করা যাচ্ছে মোফাখ্খারদের, ডা.টুটুল, তপনদের। আমরা আরো জেনে গেছি মানুষ (ফালপাড়া পাবলিক) এখন আরো বেশি বেশি সমর্থন করছে ‘র‌্যাব’কে। মানে ‘সন্ত্রাসী’ নিধনকে। হত্যাকাণ্ডকে। কেউ কেউ মিষ্টি বিলিও নাকি করছেন !

নষ্ট পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারের অস্ত্র যখন চলে গেছে তখন হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়বেই। দেশজুড়ে এখন হত্যাকাণ্ডের মৌসুম। মানুষ হাসিমুখে, অবনত মুখে হত্যাকাণ্ড মেনে নিয়েছে(!)। হত্যাযজ্ঞে ঘি ঢালছে। আবাল পাবলিক ৪২ টাকা কেজি আটা গুলে গুলগুল্লা বানাচ্ছে আর ৫৫ টাকার কেরাসিন লম্ফো জ্বেলে সেই গুলগুল্লার আকারে দেখছে।

দেশজুড়ে এখন হত্যার মৌসুম। বিনা বিচারে (আমাদের বিবেকে, রুচিতে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নেই, কেননা আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নেই। হত্যা সমর্থনকারীরা ব্যাখ্যা দেয়- হত্যা না করলে ওরা সন্ত্রাসী(!) কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আবার সন্ত্রাস করবে। কোর্ট ওদের ছেড়ে দেয়।

এখন মানুষ মারার মৌসুম। শীতকাল যেমন পিঠে খাওয়ার মৌসুম, তেমনি শীতের অতিথি পাখি দেখার মৌসুম। আমাদের কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, লেখক, সাহিত্যিকদের এখন দূরবীন দিয়ে শীতের পাখি দেখার মৌসুম, বর্ষা বরণকরার মৌসুম। তারা এখন সাতসকালে উঠে জাহাঙ্গীরনগর লেক অথবা সিরামিক লেকে পাখিদের আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আবাহন করছেন। হয়তো পাখিরা কথা বলতে পারলে এরা দুচার লাইন কবিতা শুনিয়ে দিতেন, অথবা ইহজাগতিকা বিষয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা শুনিয়ে দিতেন। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এইসব পাখি প্রেমিকরা পাখিদের অধিকারের জন্য অনশন বা মানববন্ধন করে বসতে পারেন,রমনা পার্ক বাঁচানোর জন্য হরতাল ডাকতে পারেন। অবলা পাখি বলে কথা! ঢাকার ফুস ফুস বলে কথা !

আমি কিন্তু কুড়িগ্রামে সোহাগীবালাসহ আরো ২০ জন মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার পর সর্বজনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আল মাহমুদ, হুমায়ূন আহম্মদ,জাফর ইকবাল, আব্দুল্লা আবু সাঈদ বা এই মাপের ‘জাতির বিবেক’ দের টুঁ শব্দ করতে শুনিনি। দুলাইন লিখতে দেখিনি। চাল-ডাল নিয়ে মনন্বরের প্রান্তে ছুটে যেতে দেখিনি। বৃক্ষপ্রেম, পাখিপ্রেম, পশুপ্রেম মহৎকর্ম। মনুষ্যত্বের বড়ো পরিচয়। কিন্তু মানবপ্রেম মহত্তম। মানুষ বেঁচে আছে বলেই প্রকৃতি সুন্দর। প্রকৃতিকে কোনো পশু সুন্দর বলার ক্ষমতা রাখে না। মানুষ বেঁচে আছে বলেই পাখি নিয়ে ভাবার প্রাণী জোটে,পার্ক নিয়ে চিন্তার মাথা জোটে। যে মানুষ মানুষের কষ্টে ব্যথিত হয় না। মানুষের মৃত্যুতে মূঢ় হয় না সে মানুষের পাখিপ্রেম,লেক প্রেম,পার্কপ্রেম,বৃক্ষপ্রেম,বুড়িগঙ্গাপ্রেম কর্পোরেট ভণ্ডামি। মাল্টিন্যাশনাল শয়তানি। মিডিয়ার ফোকাসে থাকার ছ্যাবলা আহম্মকি। এই দেশ এখন এই ধরনের মানুষদের পেছনে চলে বলেই এখানে ‘ক্রসফায়ার’ জায়েজ। বিনা বিচারে নরহত্যা মনুষ্যত্বের চামড়ায় কোনো আঁচড় কাটে না। মানুষ এখন গন্ডারের চামড়া গায়ে 'ভীতসন্ত্রস' আজ্ঞাবহতায় বাঁচার চেষ্টা করছে।


মন্তব্য

ফজলে রাববি এর ছবি

রাত ২টায়' পরেিছ ---খুব ভাল লাগল-----
সকালে ভুলে যাব-----

মনজুরাউল এর ছবি

বেশ। তাই হোক।
রাত ২টায় নয়,১২টা ০৫ মিনিটে।
ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার একটা বিষয় মনে হয়
আপনার তথ্য এবং পাঠ দুটোই অনেক বেশি রিচ
বক্তব্যের উদ্দেশ্যও পরিষ্কার
কিন্তু অতি আবেগের কারণে লেখাগুলো কেমন সংকুচিত হয়ে গিয়ে কিছু ব্যক্তি কিংবা কিছু পরিস্থির দিকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়

এই ধরনের বিশ্লেষণে আবেগ একটা বড়ো সমস্যা
অনেক কিছুই ঢেকে দেয়্

০২

সরকার এবং সরকারপক্ষের হত্যা সম্পর্কে আপনার বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত
তবে শেষের দিকে যে গুটিকয়্ মানুষ কিংবা অবস্থার ঘাড়ে পুরো বিষয়টা চাপিয়ে দিয়েছেন সেটা বোধহয় ঠিক না
আর জাতির বিবেক তো আপনি নিজেও
আর কেউ না বলুক
আপনি তো বললেন...
হয়তো আরো কেউ বলবেন
এইভাবেই বলার সংখ্যাগুলোও বাড়তে থাকবে...

মনজুরাউল এর ছবি

তাত্পর্যপূর্ণ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

কিন্তু অতি আবেগের কারণে লেখাগুলো কেমন সংকুচিত হয়ে গিয়ে কিছু ব্যক্তি কিংবা কিছু পরিস্থির দিকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়

হয়তো তা-ই। ঠিক। গুটিকয় মানুষ আসলে সময়,কাল,ঘটনার নিয়ামক হিসেবে এস যায়। ইচ্ছে করে আনতে চাইনা।

ধরুন, ষাঁটনলে লন্চডুবিতে চারশ' মানুষ মারা গেল, ঠিক ওই দিনেই আমাদের জাতির বিবেক বলে পরিচিতরা গুলশান লেক বাঁচানোর জন্য মানব বন্ধন করলেন !

সমালোচনা শিরধার্য।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

সন্ত্রস্ত বেড়াল এর ছবি

ক্ষুরধার তথ্যপূর্ণ লেখা

" সামান্য বেতনভুক কর্মচারী আর আজ্ঞাবহরা ইতিহাস বলাতে পারে না। ইতিহাস তার আপন মহিমায় ভাস্বর হবে। হবেই।" ----
সত্যি কথা---- এ ইতিহাস আমজনতার বুকের ভেতর কুকড়ে কুকড়ে কাদে --- তাকে অনুনাদের গর্জনে পরিণত করাই আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার লেখা পড়লে নিজের লেখা নিয়ে লজ্জা হয়। ধণ্যবাদ - চমৎকার - বিপ্লব কোনটাকেই যথেষ্ঠ বলে মনে হচ্ছে না। এর বেশী যা কিছু আছে তাই দিচ্ছি। আমার গর্ব যে আমি আপনার মানের লেখকের সাথে এক কাতারে লিখতে পারছি।
==================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভীষণ তৈলাক্ত!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মনজুরাউল এর ছবি

তৈল বংশদন্ডে হইলে ক্ষতি নাই । অন্যত্র হইলে বিপদ !

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

কীর্তিনাশা এর ছবি

প্রচন্ড জ্বালাময়ী লেখা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রশংস মূল্যায়ন আর তেল বোধহয় এক না। তারপরও যদি তেল বলেন তাহলে তার মধ্যে অভিনন্দনের জলটা দেখতে দয়া করে ভূলবেন না।

কী করা যাবে, তেলে-জলে মেশামেশি কি আর ঠেকে থাকে?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বক্তব্যর সাথে পুরোপুরিই একমত... তবে আমারও লীলেনদার মতো মনে হয় শেষে এসে জল ঢেলে দিলেন... লেখা পড়তে পড়তে নিজেকেও মনে হচ্ছিলো মানুষ হিসেবে আমারও দায় আছে... শেষবেলায় এসে মনে হলো ঠিকই তো... উনারা ভীষণ অন্যায় করেছেন...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
১৯৭২। মুক্তিযোদ্ধা বিপ্লবী সিরাজ শিকদারকে ধরে ঠাণ্ডা মাথায় পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই কাক ভোরে। সাভার-আরিচা রোডে। পরদিন কাগজে এসেছিল ‘ধৃত সিরাজ শিকদার পালাতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন’।
-পরদিন বঙ্গবন্ধু সংসদে এসে প্রশ্ন তুলেছিলেন- তোমাদের সিরাজ শিকদার কোথায়?

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বেশ তথ্যপূর্ণ লেখা। এ ধরনের লেখা আরো চাই।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

একটা ছোটো সমালোচনা আছে, আপনি বলেই করছি : শেখ মুজিব আর সিরাজ শিকদারকে এক কাতারে ফেললেন মনে হয়?

আর লেখার গড়ন নিয়ে বললে, প্রথম অর্ধেকে যে সংহত ভাব ছিল, পরের দিকে ভক্তি ও বিরাগ এসে তাকে ঢেকে দিয়েছে। সীমার মধ্যে যার যতটা সম্ভব তাকে ততটা দায় নিতে হবে। হ্যাঁ সিরাজ স্যারেরা যতটা করছেন, তাঁদের এর থেকে আরো বেশি করা দরকার ছিল। এ নিয়ে একমত। কিন্তু সবাই সীমা ডিঙাবে এমনটাও তো আশা করা যায় না। যার যার বস্তুগত অবস্থা ও চেতনার চোরাটানের মধ্যেও কেউ যদি বেরিয়ে আসার প্রবণতা দেখায়, তাকে তো আলিঙ্গন করাই শ্রেয়।

শ্রেণীগত ভাবে মধ্যবিত্ত;র এটুকু সমালোচনা প্রাপ্য। পাশাপাশি এটাও বিবেচ্য যে, আমরাও শ্রেণীর সীমাবদ্ধতার খুব বেশি বাইরে নই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।