ঊনদাল, ভোলাগঞ্জ, একজন মোনায়েম ভাই আর ছবিয়ালদের আতিথেয়তা

মুস্তাফিজ এর ছবি
লিখেছেন মুস্তাফিজ (তারিখ: বুধ, ২৪/১২/২০০৮ - ৪:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto১৪ই ডিসেম্বরে আমার বউ গেলো সিলেটে, পরদিন সিলেট এয়ারপোর্টে প্রধান উপদেষ্টা যাবেন কিছু একটা উদ্ভোধন করবেন সেই কাজে। সিলেটের ছবিয়াল প্রণবেশ দাস, অর্ন্তজালে যার সাথে পরিচয় দুপুরে তাঁর সাথে চ্যাটিং করছিলাম তখন বউ ফোন করে জানালো সিলেট পৌঁছেছে মাত্র, প্রণবেশ কে একথা জানাতেই উত্‌ফুল্ল হয়ে বললো আপনিও চলে আসেন, পুরো একদিন আড্ডা মারা যাবে, আর আপনার সাথে আমাদের দেখা হবার পর্বটাও হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নিলাম সাথে সাথেই, যাবো।

বাসায় ফিরে আমার ছেলে মাতিসকে একথা জানাতেই গরম কাপড় বের করা শুরু করে দিলো, ওর উৎসাহ দেখে রাতে বউকে জানালাম আসছি, শর্ত দিলো ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে আসার জন্য। আবারো প্রণবেশ কে ফোন করে রাস্তার খোঁজ নিলাম। আমি শেষবার সিলেট গিয়েছি ‘৯০তে, গণ আন্দোলনের শেষ দিকে কিছুদিন সেখানে ছিলাম, এরপর গত আঠারো বছরে যাওয়া হয়নি আর, পরিবর্তন নিশ্চয়ই হয়েছে কিছুটা।

১৫ তারিখ সকাল সাড়েসাতে ঢাকা ছেড়েছি, ঐ অঞ্চলের বাসিন্দারা গর্ব করতে পারেন ঢাকা-সিলেট রাস্তা নিয়ে, সম্ভবত বাংলাদেশের সবচাইতে সুন্দর রাস্তা, ঠিক সোয়া এগারোয় সিলেট পৌঁছে ফোন দিলাম, বউ যে হোটেলে সেটা চিনিনা, রাস্তা ঘাটও কেমন অচেনা লাগছে, প্রণবেশের সাথে ফোনে ফোনে কথা বলে হোটেলে পৌঁছাতে আরো ঘন্টা খানিক লেগে গেলো।

auto

এরই মাঝে বউ ফিরে এলো এয়ারপোর্ট থেকে, সাথে ওর অফিসের কিছু ছেলেমেয়ে, ওদের নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম, এক এক করে ছবিয়ালরা আসা শুরু করলেন, সবশেষে এলেন মোনায়েম ভাই, বয়স আমার কাছাকাছি, লম্বায় ১৬০সেমির মত, প্রানবন্ত মাঝবয়সী ভদ্রলোককে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেলো আমার। শুরু হয়ে গেলো ক্যামেরা আর ছবি নিয়ে আমাদের গল্প, ভুলেই গিয়েছিলাম ছবিয়াল ছাড়া আমাদের সাথে আরো মানুষ আছেন। ওরাও দেখলাম মোনায়েম ভায়ের ভক্ত। আমাদের গল্পের মাঝেই ঠিক হলো খাওয়া দাওয়ার পর আমরা ছবিয়ালরা যাবো ভোলাগঞ্জ, সিলেট থেকে উত্তরে ৩৫/৪০কিমি দূরে মেঘালয়ের কাছাকাছি ভোলাগঞ্জ যেতে সময় লাগবে ঘন্টাখানিক। মেঘালয় থেকে নেমে আসা নদীর নীচ থেকে পাথর তোলা হয় এখানে পরে সারাদেশে ট্রাকে নেয়া হয়, পাথর নেবার কারনেই কিনা জানিনা পুরো রাস্তাই এবড়ো খেবড়ো। গোয়াইনঘাট, সালুটিকর, কোম্পানিগঞ্জ, মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে থাকা জায়গা গুলো এ রাস্তাতেই পড়বে। যদিও সন্ধ্যা নেমে যাবে তারপরও যাবো এবং ফিরে এসে মোনায়েম ভায়ের রেষ্ট্রুরেন্টে আড্ডা।

auto auto
ভোলাগঞ্জে ছিলাম মিনিট ত্রিশেক, তেমন ছবি তুলিনি, আসলে সাথের ছবিয়ালদের সাথে গল্প করে সময় কাটাতেই পছন্দ আমার, প্রণবেশ দাস আইটির কাজ করে, সখের ছবিয়াল কিন্তু ওর ছবি সম্পকৃত জ্ঞান শ্রদ্ধা করার মত। আফজালের স্টুডিও আছে দুটো, অসাধারণ কিছু কাজ দেখেছি সেখানে ঝোলানো। আখলাস, সল্পভাষী, নিচু গলায় কথা বলেন, উনারও স্টুডিও আছে, গত পরশু শুনলাম সেদিনই চিঠি পেয়েছেন জাপানের “আশাহী শিম্বুন’ থেকে উনার তোলা ছবির স্বর্নপদক জেতার খবরের। ফকরুল ভাই, কলেজের শিক্ষক, কিন্ত ক্যামেরা হাতেই মানায় উনাকে, গর্ব করার মত কিছু কাজ আছে উনার। এই আলোকিত ছবিয়ালদের মাঝে নিতান্তই শিশু আমি।

auto auto
সন্ধ্যার পর সপরিবারে গেলাম মোনায়েম ভায়ের রেষ্ট্রুরেন্টে। ঊনদাল, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এর অর্থ সম্ভবত রান্নাঘর কিংবা ঊনুন জাতীয় কিছু। জমজমাট দোতলা রেষ্ট্রুরেন্টে পৌঁছালে মন ভালো হয়ে যাবে যে কারো, চমৎকার ডিজাইন আর আলোছায়ার খেলায় ছিমছাম পরিবেশ। কয়েকজন মিলে শুরু করা এ রেষ্ট্রুরেন্টের মালিকদের ভেতর দুজন ছবিয়াল বলেই হয়তো দেয়ালে অসম্ভব সুন্দর কিছু ছবি ঝোলানো। আর খাবার? অনেকদিন পর একটা ভালো ভারতীয় ম্যানু পেলাম যার সবকিছুই ছিল মুখরোচক। অনেক মজা করে অনেক্ষণ সময় নিয়ে খেলাম আমরা। আমরা আসছি বলে মোনায়েম ভাই আরো কিছু ছবিয়ালদের ডেকেছিলেন, জিয়া, ফরিদ ভাই, বাপ্পী ত্রীবেদী’র সাথে দেখা হলো সেখানেই। ওদের আন্তরিকতা কোনদিন ভোলার নয়। রাত সাড়ে এগারোয় সেখান থেকে মোনায়েম ভায়ের বাসায় গেলাম, উনার তিন মেয়ের বড়টা বছর সাতেকের, জেগেছিলো আমাদের জন্য। ভাবী চা বানিয়ে এনে বসলেন আমাদের সাথে। এ আড্ডা শেষ হবার নয়। রাত দেড়টায় কোনরকমে উঠে হোটেলে ফিরেছি।

auto


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সূর্যাস্তের ছবিগুলো অসাধারণ। বাচ্চা মেয়ের ছবিটাও। দ্বিতীয় ছবিটা (ক্লাউনের মত সাজ) কার? মজা লাগল দেখে।

অনেক মজা করেছিলেন সিলেটে, বোঝাই যাচ্ছে। শুনে (পড়ে) ভাল লাগল। ঊনদাল- নামটা দারুন তো!

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ, ঐটা আমাদের মোনায়েম ভাই।
সেদিন ফিরতে দেরী হওয়াতেই আড্ডাটা মিস্‌ করেছিলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মোনায়েম ভাই কতটা মজার মানুষ।
সমস্যা নেই মুস্তাফিজ ভাই, একটা আড্ডা মিস হল তো কী, আবার আড্ডা হবে, তখন অবশ্যই আসবেন কিন্তু।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আশা করি দেখা হবে

...........................
Every Picture Tells a Story

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এই না হলে মুস্তাফিজ ভাইয়ের ব্লগ !
ছবিগুলো মাশাল্লাহ...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুস্তাফিজ এর ছবি

ভালো লাগল জেনে খুশী হলাম

...........................
Every Picture Tells a Story

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মোনায়েম ভাইয়ের ছবিটা দেখেই চিনতে পারলাম
মোটর সাইকেলের মধ্যে ট্রাকের দুই দুইটা হর্ন লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো পাবলিক এইটা

তবে চান্স পেলে তার ক্যামেরা টেমেরা ভেঙে দিযে তার ছবিটবি পুড়িয়ে ফেলার সুযোগ কিন্তু আমি ছাড়ব না (আরো অনেক ফটোগ্রাফারের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য)

এই লোক আমারে রাস্তা থেকে ধরে ধরে নিয়ে ফটো তুলল বহুবার কিন্তু একটা ফটোও দেয় না
(ফটোগ্রাফারদের প্রধান একটা দোষ এইটা)

তারপরে একবার এটা ফটো দিলো তো ছবির নিচে হাতে লিখে দিয়ে দিলো তার দোকানের বিজ্ঞাপন...

মুস্তাফিজ এর ছবি

হো হো হো
মুনায়েম ভাই এখন স্টারলেট চালান, সাদা।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মোনায়েম ভায়ের রেস্তোঁরায় কিছু খাই বা না-খাই, যাবো অবশ্যই। যে বর্ণনা দিলেন, তাতে না গিয়ে থাকা যাবে না। গিয়ে হাউকাউ শুরু করে দিবো। 'মোনায়েম ভাই, বাড়িত আছুইন? মুস্তাফিজ ভাই পাঠাইছে...।' দেঁতো হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুস্তাফিজ এর ছবি

- মোনায়েম ভায়ের রেস্তোঁরায় কিছু খাই বা না-খাই, যাবো অবশ্যই। যে বর্ণনা দিলেন, তাতে না গিয়ে থাকা যাবে না। গিয়ে হাউকাউ শুরু করে দিবো। 'মোনায়েম ভাই, বাড়িত আছুইন? মুস্তাফিজ ভাই পাঠাইছে...।'

এ কথা বললে তো না খেয়ে আসতে পারবেননা। মোনায়েম ভায়ের উত্তরটা আমিই দিই
"কাইতান না তো আইতলান হেরে?" মানে খাবেন না তো এসেছেন কেন?

...........................
Every Picture Tells a Story

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার ছবি মুস্তাফিজ ভাই।
ছবি দেখে দেখে বেড়ানোর জায়গা ঠিক করছি।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমাদের দেশটাই আসলে অসম্ভব সুন্দর। আমরাই ঠিকমত দেখিনা ।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একটা নাটক দেখেছিলাম অনেক আগে, "দখিনে দুয়ার খোলা" নামে। অসাধারণ ছিলো। কবিতার সেই লাইনের মতো, ঘর হৈতে আসলেই দুই কদম বাইরে ফেলে দেখিনা। ডাইরেক্ট উড়ানে চড়ে বসি, চোখ ভুলানো, মন মাতানো দৃশ্য দেখবো বলে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার ছবি দেখে মনে হচ্ছে আমি কেন যে মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে ফাইজলামি করতে নামলাম। করলাম তো করলাম, তা আবার হাটে ছেড়ে দিতে গেলাম কেন ?
লজ্জা পাইছি মুস্তাফিজ ভাই !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুস্তাফিজ এর ছবি

প্রথম প্রথম আমিও লজ্জা পেতাম। আসল কথা শান্তি, এখন ছবি তুলে শান্তি পাই, লজ্জা আর কাছে আসেনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

পুতুল এর ছবি

ছোট মেয়েটার ছবিটা !
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মুস্তাফিজ এর ছবি

মেয়েটাকে দেখেছিলাম ভোলাগঞ্জে, নদী থেকে পাথর তুলতে, যারা পাথর তুলে ওরা শরীরে পলিথিন জড়িয়ে নেয়, মাথায় দেয় টুপী যাতে শরীরে পানি না লাগে, এই মেয়েটির কিছুই ছিলনা। সন্ধ্যায় যখন পাড়ে এসে দাড়ালো, শরীর ভেজা, কাঁপছিল শীতে। ছবিটা তখন তোলা।

...........................
Every Picture Tells a Story

মুস্তাফিজ এর ছবি

সান্‌সেটের এ ছবিগুলো ভোলাগঞ্জের। সন্ধ্যায় পৌঁছেছিলাম বলে অন্যকিছু তোলার তেমন সুযোগ ছিলোনা। আমরা ছিলাম নদীর পানির কাছাকাছি, পাড়টা ছিল উঁচু, আমাদের থেকে ৪০গজের মত দূরে পশ্চিমে। সূর্য্যটাকে তাই নীচুতে পেয়েছি।

...........................
Every Picture Tells a Story

নজমুল আলবাব এর ছবি

এইভাবে চুপে চুপে আসলেন?

দুক্কু পাইলাম।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মুস্তাফিজ এর ছবি

আপনি কি সিলেটে? জা-ন-তা-ম-না

...........................
Every Picture Tells a Story

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।