১০১টা ছবির গল্প - ১২, ক্যাথিড্রাল গ্রোভ

মুস্তাফিজ এর ছবি
লিখেছেন মুস্তাফিজ (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৮/২০১৬ - ৯:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

I urge you to travel, as far and as much as possible. Work ridiculous shifts to save your money. Go without the latest iPhone. Throw yourself out of your comfort zone. Find out how other people live and realize that the world is a much bigger place than the town you live in. And when you come home, home may still be the same, and yes, you may go back to the same old job, but something in your mind will have shifted.
And trust me that change everything.

আমরা এখন ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ডে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিমে সবচাইতে বড় দ্বীপ এই ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ডের পশ্চিম পাড়ে দাঁড়িয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় ঢেউ আর ঢেউ, তারপরও ঢেউ, যেতে যেতে মিশে গেছে আকাশের প্রান্তে। সেই প্রান্তের ওপারে রাশিয়ার দ্বীপ শাখালিন।

উত্তর থেকে দক্ষিণে সাড়ে চারশো আর পূবে পশ্চিমে দেড়শো কিলোমিটারের এত বড় একটা দ্বীপ দুশো বছর আগেও বাইরের দুনিয়ায় অচেনাই ছিল। পুরোটা দ্বীপ জুড়ে ছিল গাছ, বিশাল বিশাল গাছ, হাজার হাজার বয়সী রেড সিডার, বিভিন্ন জাতের ফার আর ওক গাছে ভরা এই জঙ্গলে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াত হরিণ, কালো ভালুক আর নেকড়ে জাতীয় বন্য প্রাণী। মানুষও ছিলো, ওরা থাকত সমুদ্রের পার ঘেঁষে। মাছ ধরা ছিল এদের মূল পেশা, পশু শিকার করত কালেভদ্রে। দুশো বছরের সংস্পর্শেই এই আদি বাসিন্দাদের {কোয়াকিইউটু (Kwakwa̱ka̱’wakw) নূচানেলথ (Nuu-chah-nulth) আর স্যালিশ (Coast Salish peoples )} সংখ্যা কমতে কমতে এখন কড়ায় গোনা যায়। তার চাইতেও কম শোনা যায় এদের ভাষা। ওদের সন্তানেরা এখন আর সেসব ভাষায় কথা বলে না, স্বপ্ন দেখে না এমন কি পড়তেও পারে না।

আমার আজকের ছবির গল্প কিন্তু ওদের নিয়ে নয়। এই আদি বাসিন্দাদের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে দ্বীপের অন্যান্যদের কী অবস্থা হতে পারে একবার চিন্তা করুন! এত বড় দ্বীপে এখন ভালুক আছে প্রায় হাজার সাতেক মাত্র। আচ্ছা থাক, রয়েল বেঙ্গলের দেশের মানুষের কাছে কালো ভালুকের গল্প করে লাভ নেই। এর চাইতে গাছের গল্প করি।

কয়েক বছর আগে আমাদের পাড়ার লাইব্রেরিতে একটা শত বছরের পুরোনো ‘লগিং বুক’ উল্টেপাল্টে দেখেছিলাম। দুশো বারো ফুট লম্বা আর পেটের কাছে আড়াআড়ি সাত ফুট একটা গাছ কাটার পর ছোট গাছ কেন কাটা হয়েছে এজন্যে কোম্পানী মজুরি দিতে গড়িমসি করেছিল। এভাবেই বড় বড় সব গাছ ফেলে দেবার পর তাদের ভাষায় এই ছোট গাছগুলোও রেহাই পায় নি। তার মাঝেও স্বার্থ যখন ফুরিয়ে যাচ্ছিল তখন আমাদের সভ্য মানুষেরা গাছ রক্ষায় কিছু আইন বানিয়ে ফেলে। সেই আইনের বদৌলতে পিসার হেলানো টাওয়ার থেকেও লম্বা আর আটশো বছরের থেকেও বেশি বয়সী কিছু গাছ টিকে যায়।

ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ডের পূবে নানাইমো ফেরিঘাটে নেমে পশ্চিমে কানাডার সবচাইতে সুন্দর সৈকত টফিনোর দিকে যেতে মাঝপথে ১৩৬ হেক্টরের সংরক্ষিত বনের নাম ম্যাকমিলান (পার্ক/বনের জন্য ম্যকমিলান এই জমি দান করেছিলেন) পার্ক। এই ম্যাকমিলান পার্কের ক্যাথিড্রাল গ্রোভে আছে তেমনই কিছু গাছ। টফিনো যাবার সময় এই ক্যাথিড্রাল গ্রোভে কিছু ছবি তুলেছিলাম। আমাদের আজকের ছবি সেগুলোই।

ক্যাথিড্রাল গ্রোভে ঢোকার মুখ
610A3613 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

ঢুকতেই স্বাগত জানাবে আকাশছোয়া গাছ
610A3615 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

শ্যাওলা পরা মাটি, গাছ
610A3618 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

গাজী কালু চম্পাবতী
610A3623 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

পাহাড়ি নদী পেরুনোর জন্য গাছের গুড়ি ফেলা
610A3627 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

নদীর উপর গাছের গুড়ি, তার উপর বসে পাথর গোনা
610A3636 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

ট্রেইল
610A3641 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

এই গাছটির উচ্চতা আড়াইশো ফুট
610A3648 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

আটশ বছরের পুরানা গাছ, তার নীচে পড়ে আছে তিনশ বছরের পুরানা আরেকটা
610A3649 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr

গাছ মরে গেছে কিন্তু শিকড় বেচে আছে কয়েকসগ বছর ধরে
610A3651 by Rahman Mohammad Mustafizur, on Flickr
আরো ছবি দেখতে
https://flic.kr/s/aHskFbLWrE


মন্তব্য

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

খুব ভালো লাগল লেখা আর ছবি

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ রাজিব

...........................
Every Picture Tells a Story

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সাত হাজার ভাল্লুক তো অনেক! শেষ থেকে দুই আর চার নাম্বার ছবিটা কি টফিনোর? চেনা চেনা লাগতেছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মুস্তাফিজ এর ছবি

কালো ভালুকের আদি আবাস হিসাবে সাত হাজার বেশী না। তবে আশংকাজনক হলো আদি বাসিন্দাদের অবস্থা, কোয়াকিইউটুরা আছে হাজার পাঁচেক,নূচানেলথ হাজার আটেক আর স্যালিশরা কানাডা আর আমেরিকা মিলিয়ে হাজার পঞ্চাশেক।

...........................
Every Picture Tells a Story

সোহেল ইমাম এর ছবি

সুন্দর ছবি গুলো দেখে ভালো লাগলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ

...........................
Every Picture Tells a Story

জুলু জাউলা এর ছবি

আমিও ঘুরে আসলাম এই শনিবার। দেখে আসলাম, কিন্তু এত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা আমার কম্ম না!! লেখা টা (সিরিজ এর সবগুলোই) চমৎকার।। আর ওস্তাদ মানুষের তোলা ছবি তো সেইরকম হবেই!!

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ জাউলা!

...........................
Every Picture Tells a Story

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ঐটুকু মাত্র জায়গায় সাত হাজার কাল্লু ভাল্লু? আমরা যখন খুব ছোট, তখন কিছু যাযাবর ধরনের লোক এক-দু টা কাল ভালুক নিয়ে এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতো আর ভালুকের খেলা দেখাতো। পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি তখনো কাল ভালুকের দেখা মিলতো।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এখানে ভালুক প্রটেক্টেড, আই মীন একটা পর্যায় পর্যন্ত। আর এদের কোনো ন্যাচারাল প্রেডিটর নাই বলে বংশ ভালোই বাড়ছে, যদিয়ো বছরে প্রায় সাত থেকে আটশো ভালুক শিকার করা হয় এখানে। এখানে দশহাজার বছর আগের ভালুকের কঙ্কাল এখনও দেখা যায়।
ভ্যাঙ্কুউভার আইল্যান্ডের কালো ভালুক এদের মেইনল্যান্ড কাজিনদের চাইতে সাইজে বড় আর রঙ কুচকুচা কালো।
আমাদের দেশে ভালুকের খেলা ছোটবেলায় আমিও দেখেছি মনে পড়ছে। ঐগুলা ছিলো সাইজে ছোট। সত্তর দশকেও পার্বত্য অঞ্চলে ভালুকের আনাগোণার কথা শুনেছি, আশির দশকে মূলত ত্রিপুরা আর বার্মার পাহাড় থেকে কিছু কিছু ভালুক নেমে আসার খবর পত্রিকায় দেখা যেত।

...........................
Every Picture Tells a Story

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
মুস্তাফিজ এর ছবি

চলে আসেন

...........................
Every Picture Tells a Story

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ছবি দেখে যেতে ইচ্ছা করতেসে মুস্তাফিজ ভাই!
লেখা আর ছবি দুইটাই সুন্দর! আর মাতিসকে দেখে আজব লাগে, এইটুকুনি ছেলেটা কতো বিশাল লম্বা হয়ে গেছে। হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ দিশা। তোমাদের মালয়েশিয়া ভ্রমণবৃত্তান্ত জানতে চাই

...........................
Every Picture Tells a Story

সুজন চৌধুরী এর ছবি

বাহ ! দারুণ তো, যেতে হবে। এত কম পোস্টান ক্যান বস্ !

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ সুজন'দা।
কম পোস্টাই কারণ কামলা দিয়ে সময় পাইনা। আর বেশ কিছু আধাআধি লেখা ছিলো এখানে, অনার্য মডু সব খেয়ে ফেলেছে।

...........................
Every Picture Tells a Story

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দেরীতে হলেও পড়লাম। এই গাছগুলোও কি এত পুরানো? এদের বৃদ্ধির হার কেমন? এখন এরকম গাছ আর হয়? দেখতে হবে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এদিকে (বিসি) এমন পুরানো গাছ বেশ দেখা যায়। গাছের গুড়িতে কাটার পর যে গোল গোল দাগ দেখা যায় তার প্রতিটা দাগে বয়স চার বছর করে ধরা হয়, লীন ভ্যালীতে তেমন একটা ডগলাস ফারের গুড়ির গোল দাগ শ'খানিকের উপর গুনে আর ধৈর্য রাখতে পারিনি।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

দেরীতে পড়লাম। ভাল লাগলো। খুব ইচ্ছে হচ্ছে বুনো ট্রেইল ধরে হাঁটতে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহমিদুল হান্নান রূপক।

...........................
Every Picture Tells a Story

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।