বেরসিকদের জন্য

মুস্তাফিজ এর ছবি
লিখেছেন মুস্তাফিজ (তারিখ: রবি, ১১/০১/২০০৯ - ১০:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের বেচারার মন খারাপ, কত স্ফূর্তির কত আনন্দের দিন আজ, অথচ তার মন খারাপ। জীবনে প্রথম শশুড়বাড়ী এলো, চারদিকে কত আয়োজন, কত কোলাহোল কিন্তু কিছুতেই মন বসছেনা। ভয়ে চিমসে মিইয়ে আছে, কি যেন হয়, কি জানি ঘটে, নিয়তির লিখন আজ কি খন্ডাতে পারবে? একবার মনে হয় পালিয়ে যায়, কোন এক জরুরী কাজের কথা বলে রাতটা অন্ততঃ বাইরে কাটানো গেলেও বাঁচা যেত। কিন্তু বউকে একথা জানাতেও ভয়। তুলকালাম কান্ড শুরূ হয়ে যাবে সাথে সাথেই। বিয়ের পর দুবছর কোনভাবে ঠেকিয়ে রাখলেও এবারে আসাটা ঠেকানো ছিলো অসম্ভব। বাড়ীর বড় জামাই বলে কথা, শ্যালিকার বিয়েতেও যদি না আসে শশুড়ের সন্মান তখন কোথায় থাকে?
এর জন্য প্রস্তুতির কমতি ছিলোনা কোথাও, সব অবশ্য বউই করেছে, পীর ফকিরের দোয়া আর সপ্তধাতুর তাবিজে গলাটা বেচারার ভারী ভারী লাগছে, কালো দাগ পড়ে গেছে চারদিক, সে জানে এসবে কিচ্ছু হবেনা, যা হবার, যা হয়ে এসেছে এতদিন তা কি আজ না হয়ে পারে? তবুও সংশয় জনিত আশা নিয়ে বউ মাঝে মাঝে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে।
কি করো?
না কিছুনা।
সামনে এইডা কি ডাব!! তুমি ডাব খাইসো?
না আমি খাইনাই, কে জানি খাইয়া খোসা ফালাইয়া গেসে।
খবরদার খাইবানা।
না খামুনা, তয় পানি পিয়াস লাগছে, একটু শরবত খাই, দিবা?
আয় হায় রে কয় কী রে, তুমার যাতে সমস্যা না অয় হে জন্যে কত কিছু করতাছি আমি আর তুমি কিনা কও শরবত খাইবা? খবরদার ঐ নাম মুখে আনবা না। আইজ যদি কিছহু অয় আল্লার কসম তুমারে আমি খাইয়া ফালামু, একদম শেষ কইরা দিমু, খবরদার কইলাম, আমার ইজ্জ্বত লইয়া টানাটানি করবানা কইলাম। যাও পেশাব কইরা আসো।
মাত্র আইলাম।
আবার যাও। একটু পর পর যাইবা। একগ্লাস পানি খাইলে দশবার পেশাব করবা। সাবধান।
আইচ্ছা।
বেচারার মন খারাপ, জানে আজ তার খবর আছে, সারা বাড়ী ভর্তি শশুড়বাড়ীর আত্মীয় স্বজন, এর মধ্যে যদি এমন কান্ড ঘটে।
দেখতে দেখতে রাত নেমে এলো, শীতের বেলা অনেক ছোট হয়। আজ মনে হয় তাকে শাস্তি দেবার জন্য আরো বেশী ছোট হয়ে গেছে। শোবার আয়োজন করছে সবাই। শ্যালিকারা এসে নুতন জামাইয়ের মত আদর করে ঘরে তুলে দিয়ে গেছে তাকে আর তার বউকে। বাতি নেবানোর আগে আরেকবার সতর্ক করে দিলো বউ, বললো সাবধান।
সে বললো আমি কি ইচ্ছা কইরা কিছু করি। সব তো শয়তানের কাম, কত সুন্দর সুন্দর বাড়ী ঘর দেহায়, বাথরুম দেহায়, আমি কি করুম।
খবরদার, আমি কি করুম মানে? শয়তানের কথায় কান দিবানা কইলাম।
আইচ্ছা।
আইচ্ছা মানে? শয়তানের কাছেই যাবানা,আইলে খেদায়া দিবা।
দিমু।
দিমুনা, দিতে অইব।
হ অইব।
আমার কপালডাই খারাপ, তুমার এই অবস্তা জানলে কুত্তাও ত তুমার সাতে বিয়া বইতনা। জিবনে কিযে অন্যায় করছিলাম--
এই বলে ভুস ভুস করে কাঁদতে লাগলো বউ, বেচারা লেপ মুড়ী দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে থাকলো।
এমন সময় জানালায় টূকটুক শব্দ, সে জিজ্ঞেস করলো ক্যাডা? ফিস্‌ফিস্‌ করে উত্তর এলো দুলাবাই আমি।
তুমি এত রাতে কি চাও?
দুলাবাই, আফা কি গুমাইছে?
হ।
লন্‌ বাইরে থেইক্যা ঘুইরা আসি, সারাদিন ত আফার ঠেলায় কুনদিক যাইতে পারেন নাই, এহন চলেন।
বাইরে কই যামু?
এইহানে একটা নদী আছে, অনেক সুন্দর, পাড় দিয়া আটবেন, অনেক মজা অইব।
না আমি যাইতামনা।
ক্যা দুলাবাই?
না তুমার বইনে না করছে, কইছে রাইতে কেউ ডাকলে যাইবানা, তুমারে বুলাইয়া লইয়া যাইয়া হেই কাম করাইবো।
খিক্‌ খিক্‌।
আসো ক্যা?
আমি জানি আম্‌নে রাইতে কি করেন, খিক্‌ খিক্‌।
তার মানে তুমি আমার হালা না, তুমি শয়তান?
হ আমি, এহন লন যাই, নাইলে জানলা বাইংগা দইরা লয়া যামু।
নে ছে দেহি তর কত জোর।
খাড়ান, বলেই সে জানলা ভাংতে লাগল দেখে বেচারা বিছানা থেকে নেমে দিল এক দৌড়। পেছন পেছন সেই শয়তানটাও দৌড়াতে থাকলো। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেল নদীর পাড়ে, সেখান থেকে আবার গ্রামের ভেতর, গ্রাম থেকে হাটে, হাট থেকে বাড়ীতে। প্রায় ছোঁয় ছোঁয় অবস্থা, বেচারা আর পারেনা, কিন্তু বুঝতে পারছে থামলেই বিপদ, ধরে ফেলবে। আর ধরে ফেললেই---
এমন সময় শুনতে পেলো
আমাগো জামাইনা? কই যাও বাবাজী দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া?
হূজুর, শয়তান, আমার পিছনে শয়তান, আমারে ধরবার আইছে।
আস্‌তাগফেরুল্লা, এইডা কি কউ? দেহসে পাও উল্ডা কিনা।
হ হুজুর, দেখছি, পাও উল্ডা, কিছু একডা করেন, আমারে তো ধইরা ফালাইলো।
তুমি এক কাম কর, মজ্জিদের সামনের গাছো উইডা পরো, আমি অজু কইরা লই, এরপর ফজরের আজ্বান দিলেই শয়তান পলাইব।
আইচ্ছা হুজুর উতঠাছি, আমনে তারতারি করেন।
এই বলে বেচারা গাছে উঠতে লাগলো, পেছনে পেছনে শয়তানও। উঠতে উঠতে একদম উপরে চলে গেলো সে। শয়তান প্রায় ধরে ধরে অবস্থা।
হুজুর, এহন কি করমু, আর ত উডার জাগা নাই, দইরাফালাইলো ত।
এক কাম কর, শয়তানের মাতাত হাইগ্যা দেও।
বেচারা তাই করলো। কিন্ত ওটা যেয়ে পড়লো ডালের উপর। হুজুর মাতাত পরেনাই, দাইলে পড়ছে, কি করমু?
এক কাম কর, দাইল ধইরা নাড়া দেও, মাতাত ছিটব, আমার অজু পেরায় শ্যাষ।
বেচারা তাই করতে থাকলো।
এমন সময় তার বউয়ের নাকে কিসের দূর্গন্ধ লাগাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চেয়ে দেখে ঘুমের মাঝে পেশাব করার অসুখে ভোগা তার স্বামী আজ দুই কর্ম একসাথে করে সাথে সাথে লেপ-তোষক, কাঁথা-বালিশ সমস্ত কিছু দিয়ে সেসব মোছার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।


মন্তব্য

রুমি [অতিথি] এর ছবি

ভাই,
আপনি পারেন ও বটে ... ...
পরথম থিকা শ্যাষ পরযন্ত খালি হাসছি আর হাসছি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছবি কই?
আপনার লেখা ছবি ছাড়া পড়া একেবারেই অন্যায়

আর কিছু না হোক
অন্তত ডালের উপরে বসে শয়তানের মাথায় হাগু করার একটা ছবি তো দিতে পারতেন

নিবিড় এর ছবি

লীলেন্দার সাথে একমত । দেঁতো হাসি
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছবির দাবি থেকে এখন যে একটু সরে আসতে হচ্ছে ভাইজান
সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরকেও ছবির দাবি না তোলার অনুরোধ করতে হচ্ছে
কারণ বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে এটা মুস্তাফিজ ভাইয়ের নিজের জীবনীভিত্তিক গল্প

মুস্তাফিজ এর ছবি

লিলেন দা, গাছের ডালে ঝোলা আপনার একটা ছবি কিন্তু আছে আমার কাছে

...........................
Every Picture Tells a Story

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

জীবনী হইলেই বা সমস্যা কি?
জব্বর এই লেখার মতো জব্বর কিছু ছবিও পাবলিক দেইখা নিতো। চোখ টিপি
খুবই খুবই মজা পাইলাম।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুস্তাফিজ এর ছবি

হ ঠিক কইসেন

...........................
Every Picture Tells a Story

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

ছবি ছাড়া মুস্তাফিজ ভাইয়ের লেখা ঠিক জমে না।

লেখাটা চমতকার হইছে।
ছবিযুক্ত লেখা চাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাবছিলাম ছবি ছাড়া আপনার পোস্ট অসম্পূর্ণ, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না ছবি না দেওয়ায়। খাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এরকম গল্প আমি কোনদিনই শুনিনি। ভালো আইডিয়া তো।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হো হো হো হো হো হো

শামীম এর ছবি

উঃ ... জট্টিল .... উঃ উঃ হো হো হো

ইদানিং মূলত বৃদ্ধদের জন্য বড় সাইজের ন্যাপি পাওয়া যায়। এছাড়া ছিপি সিস্টেম করা যেতে পারে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আদিত্য [অতিথি] এর ছবি

এইডা তো গেলো ১ পর্ব,
আপনার এই লেখার ১০০ পর্ব serial পড়তে চাই। খাইছে

কীর্তিনাশা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

বুনো জারুল এর ছবি

বস্,

আপনার স্টকে আরো ভালো কিছু বস্তু আছে আমি জানি...

দু-একটা আরো ছাড়েন না..!!!

=========================================

**Everyone thinks of changing the world, but no one thinks of changing himself.**

*****************************************************
Everyone thinks of changing the world,
but no one thinks of changing thyself.
*****************************************************

মুস্তাফিজ এর ছবি

আপনার কমেন্ট দেইখ্যা একটা ঘটনা মনে পড়লো
এক লোক সন্ধ্যায় বাড়ী ফেরার সময় ছোট মেয়ের জন্য কিছু না কিছু কিনে আনে, একদিন একটু দেরী হওয়াতে বাড়ী ফিরেই বাচ্চা কে কিছু না বলেই নামাজে দাঁড়িয়ে গেল
সে আকামত দিচ্ছে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার.........
এমন সময় মেয়ে বুঝলো আজ তার জন্য কিছু নাই, সে জুড়ে দিলো কান্না, মেয়ের কান্না শুনে মা বলে, তুমি যদি কিছু এনে থাকো তাহলে মেয়েকে দিয়ে তারপর নামাজে দাড়াও। লোকটা আকামত রত অবস্থায় ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, সে না থেমে বলতে লাগ্লো
...হাইয়া আলাস সালাহ্‌ হাইয়া আলাস সালাহ্‌
চকির নিচে আছে ছালা, তার ভিতরে তিনটা কলা
একটা রাইখা দুইটা খাইয়া ফালা
আল্লাহু আকবার

...........................
Every Picture Tells a Story

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লীলেন'দা-র কথার সত্যতা কতখানি, সেইটা চিন্তা করতেসি চিন্তিত

লেখা জবরদস্ত হইসে হো হো হো

মুস্তাফিজ এর ছবি

লীলেন'দা-র কথা সত্য হইলে খুশী হইতাম, শ্যালিকা পাইতাম, আমার তো নাই।

...........................
Every Picture Tells a Story

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

বেশ ভালো হইছে। মজা ক'রে লিখছেন মুস্তাফিজ ভাই।
হাসি

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

গুন্ডা এর ছবি

মজা পাইলাম হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।