তিনটি উভলিঙ্গ রচনা

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শনি, ১৯/০৪/২০০৮ - ১০:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই রচনাটি কোনোই গণিতসূত্রের উপর আপতিত নয়

ইতঃপূর্বে সাড়া প্রদান করেও গ-এর মনোসূত্রের সুতীব্র টান উপেক্ষা করে খ-এর মৌনাবেগে উসকে ওঠা অভিমানকে প্রশ্রয় দিতে ক এসে যখন দাঁড়াল রোদ-চশমায় মোড়িত অপরাহ্নের গোটাটা জুড়ে, তখন ঘ-এর দেহস্থ পরিচ্ছদগুলো বহুবর্ণা পাখি হয়ে আকাশে উড্ডীন-- ঘ কেননা দেহ-নন্দনেই আঁকতে চায় গ-এর প্রেমাচ্ছন্ন মনের পটে অনশ্বর এক শিল্পিত আঁচড়

খ চায় না ক গ-এর দিকে হাঁটুক-- ক চায় বটে, কিন্তু সে বেচারী যথার্থেই স্বাধীনতা থেকে দূরে অবস্থান করে, সংঘাতটা কাজেই তার সামাজিক-লৈঙ্গিক মতবাদের নিচে সমাহিত

গ ঘ-এ চড়েও ক-এ মুগ্ধ-- কখ-এর সম্পর্ক তাই স্বতোকম্পমান, যেহেতু ক দোলনরত উত্তর-পূর্বের ঈশান কোণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের নৈর্ঋত কোণে

আর যত আগামীকাল, ক কি আড়ালকেই জ্ঞান করবে না ঈশ্বর এবং খ-এর শিকলে শৃঙ্খলিত হয়েও কি সে গ-এর প্রান্তরে এসে ঠুকবে না দ্বার, যতই ঘ-এর সুঢৌল মেদ অহোরাত্র পাহারাপ্রণীত থাক গ-এর যৌবরাজ্যে-- আর স্বরচিত সংশয়গাছের আগায় চড়ে চুপিচুপি প্রতিবেদনভাষ্য রচনা করা ছাড়া খ-এর তখন কী এমন করণীয় থাকা সম্ভব

বাতাসের কাজবাজ চিরকালই এই

মাগী, ফাজলামি রাখ-- দিবি যদি দে, ছেনালিপনার আর জা'গা পাস না, এমনে ত দেহি রাইত নাই দিন নাই শালার পৌষ মাসেও শন শন, বাপ-মেয়ে ঘরে বসা ত জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে বাতিটা নিভিয়ে দিলি দপ্, পিচ্চি পোলা থালায় করে মুড়ি খাচ্ছে ত উড়িয়ে নিয়ে গেলি ঝর্, লাজুক মেয়ে পথ হাঁটছে ত লোকজনের সামনে ওড়না ধরে দিলি টান ফাৎ, বৃদ্ধা আয়া উঠান ঝাট্ দিচ্ছে ত পেছন থেকে কাপড় উঠিয়ে দিলি ছ্যাৎ-- কোন্ দুষ্টামিটা তুই না করলি বল, একবার পারলে সুলেমান বাদশার কাছে নালিশেও রাজি, তা তুই করলিটা কী, না-হয় একজন জীবন যন্ত্রণায় কাতর, তা বলে দম বন্ধ হয়ে সে মরতে লাগবে তুই দেখবি না, এমনটা ত হয় না, তাছাড়া, দেখবি ত চুতিয়া দোষটা কার

তেইশ বছরের যুবকের বাপের সাধ্যি কী ছিল তোর সাহায্য ছাড়া তেইশ দিন বাঁচে, ছেনালিপনা করবিই যদি আঁতুড় ঘরে করতিস, আগুনে সংসারে তার পা-ই পড়ত না

সবই ঠিকঠাক ছিল, গণ্ডগোলটা বাঁধাল শালার বাপে, ধর্মকর্মে উন্মত্ত হয়ে কে জানে কোন্ ফাঁকে সবটা কাণ্ডজ্ঞান ভর্তা করে খেয়ে বসে আছে, এখন শূন্য টাকশাল নিয়েও অযথা প্রজাপীড়ন, হারামি, মানুষ ত একটু রয়েসয়ে একটা কাজ করে, তা-না, যেন সে একটা যন্ত্র

তেইশ বছর হিমালয় থেকে শীতলতা এনে জীবনে পরিপুষ্টি দিয়েছিস, সঙ্গে এনেছিস পুষ্পগন্ধ, আর আজ চোখের সামনে একজনের ফুসফুস নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, তুই আরামসে কলতলার নারকেল গাছের পাতা দোলাচ্ছিস-- শালী

বলি ও মাগী, যে বানচোত গণ্ডগোলটা বাঁধাল, হে কি তর দ্বিতীয় তরফের লাঙ অয়

মিথ্যাবাদীদের জন্য অপাঠ্য রচনা

পূর্বাহ্নে গৃহীত পরিকল্পনানুযায়ী আমাকে চারটি বিচ্ছিন্ন টুকরোয় বিভাজিত করা হলো, যার প্রতিটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ, তারপর আমার আত্মাকে বলা হলো-- এর যেকোনোটিতে ঢুকে পড়, প্রত্যাশা পূর্ণ হবে...

আদিষ্ট হয়েই আমার আত্মা প্রথমে শিরের কাছে গেল, যা
মস্তিষ্ক ধারণ করে ও জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখে-- ফিরে আসতে হলো, কারণ জ্ঞান অল্পজ্ঞানীকে অসহিষ্ণু করে তোলে ও তার কামাগ্রহকে নিরুৎসাহিত করে

আত্মা বক্ষের কাছে গেল, যা মন ধারণ করে ও ভালোবাসার দেয়া-নেয়া করে-- পিছিয়ে আসতে হলো, কারণ অশরীরী প্রেম সর্বত্র প্রশ্রয় পেলেও তা রীতিমতো যাতনা-উৎপাদী

এবার উদরের কাছে যেতে হলো, যা ভোগ গ্রহণ করে ও তার সারাৎসার বণ্টন করে-- বিরূপ হতে হলো, কারণ স্থুল ভোগাকাঙ্ক্ষাই মানুষে-মানুষে হানাহানির সূচক

সবশেষে কামেন্দ্রিয়ের কাছে যাওয়া, যা অনুভূতি ধারণ করে এবং খায় কিন্তু হজম করতে পারে না-- ফিরতে উদ্যত হয়েও অব্যাখ্যাত এক অন্তর্গত টানে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা, সম্ভবত মানুষের শরীরী প্রেমাকাঙ্ক্ষা অফুরন্ত বলে, এ বিষয়ক সদ্জবাবে সকলের কণ্ঠেই দশাসই অতৃপ্তি ঝঙ্কৃত হয়

শ্রেণিকরণ এমন এক সংকীর্ণতা যা সৃষ্টির মহিমাকে ম্লান করে দেয়


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

তেইশ বছর হিমালয় থেকে শীতলতা এনে জীবনে পরিপুষ্টি দিয়েছিস, সঙ্গে এনেছিস পুষ্পগন্ধ, আর আজ চোখের সামনে একজনের ফুসফুস নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, তুই আরামসে কলতলার নারকেল গাছের পাতা দোলাচ্ছিস-- শালী

দারুন! সদ্য শান দেয়া ছুরির মতো ধার!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুজিব মেহদী এর ছবি

খাইছে, কেটে না যায় আবার।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

দিলি দপ্
গেলি ঝর্
দিলি টান ফাৎ
দিলি ছ্যাৎ

-অসাধারন।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মুজিব মেহদী এর ছবি

এতটা?
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী কঠিন!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

মুজিব মেহদী এর ছবি

এই সেরেছে!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

সুতীব্র টান নিয়েই পড়ে ফেলা হলো ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।