আরক্তিম আপেল, সোমত্ত নারী, জ্বলন্ত চাঁদ

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৪/০৫/২০১২ - ১২:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"তিনি একজন কবি যিনি দার্শনিক তত্ত্বের চেয়ে বরং মৃত্যুর কাছাকাছি, বুদ্ধির চেয়ে বরং দুঃখের যন্ত্রণার কাছাকাছি, কালির চাইতে বরং রক্তের কাছাকাছি" — পাবলো নেরুদা সম্পর্কে এমনটিই বলেছিলেন ফেদেরিকো গার্থিয়া লোর্কা। ১৯৭১ সালে নোবেল বিজয়ী নেরুদাকে "আচ্ছন্ন করে তাঁর জন্মভূমি-- অত্যাচারিত দিগ্বিজয়ীদের দ্বারা যে ভূমি ধর্ষিত হয়েছে বারংবার। নিজেকে তিনি নির্বাসিত করেছেন, অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু কখনো থামেন নি। অত্যাচারিতের সহযাত্রী তো সারা পৃথিবী জুড়েই। তাদেরই তিনি খুঁজেছেন এবং শেষে ধর্ষিত মানবমর্যাদার কবি হয়ে দাঁড়িয়েছেন"। তাই তো তাঁর কবিতার পাঠে আমাদের রক্তে যুগপৎ খেলে যায় প্রেম ও বিপ্লব।
নেরুদাকে প্রথম দেখি কলেজের পাঠাগারের একেবারে দোরগোড়ায় রাখা স্বচ্ছ কাঁচের পাল্লা লাগানো সেই আলমারিটিতে। 'নতুন আগমন'-এর রাজটীকা ললাটে এঁটে গর্বিত দাঁড়িয়ে থাকা আলমারিটির বুকের পাঁজরে শোভা পেত রুপোলী ইলিশের মতো ঝকঝকে প্রচ্ছদ মোড়ানো সদ্য প্রকাশিত ও সুনির্বাচিত বইয়ের ঝাঁক। আলোর প্রতিসরণের অব্যর্থ নিয়ম মেনে সবুজ প্রিজমের বর্ণিল আত্মার মতো বিকিরিত হতো তার বুকভরা মণি-রত্নের অহংকার। তালাবন্ধ ছিল সেটি, তাই যক্ষের ধনের আপন সহোদরের মতই তাঁর ছিল কার্পণ্যের কুপমণ্ডুকতা। সেই স্পর্ধার বদ্ধদ্বার আমি খুলতে পেরেছিলাম। আর আলোয় আলোয় যেন ভেসে এসেছিল আমার আনন্দলোক। বাসর রাতের রোমাঞ্চিত প্রেমিকের মতোই কম্পিত হাতে আমি অবগুণ্ঠন খুলেছিলাম একটি আত্মজৈবনিকের।
অকাল প্রয়াত সাংবাদিক মোজাম্মেল হকের অসমাপ্ত অনুবাদ কর্মে, কিম্বা ভবানীপ্রসাদ দত্ত অনূদিত তাঁর 'অনুস্মৃতি'-তে, অথবা 'প্রাকৃতজন'-এ আনন্দময়ী মজুমদারের লেখা তিন অথবা চারটি কিস্তিতে, নেরুদার স্মৃতিকথার এইসব খণ্ড খণ্ড পাঠ আমাকে প্রতিকুল জীবনের আপোষহীন সংগ্রামী পাঠ। বুঝতে শিখিয়েছিল নিরন্তর অনিশ্চয়তা ও শ্বাপদ-সঙ্কুল প্রতিবেশের মাঝে দমবন্ধ বসবাস করেও কবিতার রক্তমাখা ফুলেল সৌরভকে কিভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় বৈপ্লবিক অন্বেষণে নিবেদিত জীবনের পরতে পরতে। 'স্বীকার করি, বেঁচে আছি'- আহা, কি এক আর্ত উচ্চারণ! তবুও বিপর্যস্ত গোলাপ বাগানে, রক্তাক্ত বেলাভূমিতে, প্রেতের নখের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন সৈকতে এ এক কান্তা মুক্তকেশীর আগমনী গান।
কোন এক বাদামী বিকেলে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে প্রথম ওঁর কবিতা পড়বার সুযোগ হলো। রংপুরের লাইব্রেরী পাড়ায় ইষ্ট বেঙ্গল লাইব্রেরীর সত্ত্বাধিকারীর পাশে বসে। "পাবলো নেরুদার কবিতাগুচ্ছ" ও "পাবলো নেরুদার আরো কবিতা" এই ছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুদিত গ্রন্থ দু'টির নাম।
ইংরেজিতে নেরুদাকে পড়লাম আরো অনেক পড়ে। ওঁর একটি এন্থোলজী হাতে এসেছিল ২০০০ সালে, সম্ভবত: এপ্রিল কিম্বা মে মাসে। শিহরিত করবার মতো ছিল বইটির নাম "ফুল ওম্যান, ফ্রেশলি অ্যাপল, হট মুন : সিলেক্টেড পোয়েমস অব পাবলো নেরুদা"। ধীরে ধীরে ওঁর কবিতাকে ছুঁই। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি আরক্তিম আপেল, সোমত্ত নারী আর জ্বলন্ত চাঁদকে। দেখি কেমন বিমুগ্ধ আত্মমগ্নতায় শব্দের পর শব্দ সাজাচ্ছেন তিনি। জীবন্ত, স্পন্দিত, আরক্তিম সব শব্দ। ছলকে যাচ্ছে নরম নদীর নারীর মতো, ডানা ঝাপ্টিয়ে উড়ে যাচ্ছে দুরন্ত টিয়ের ডানায় লেগে থাকা থোকা থোকা সবুজ দিনের মতো, ভিজে যাচ্ছে সোমত্ত নারীর ঊরুসন্ধির সিঁথি বেয়ে নেমে আসা গ্লেসিয়ারের বরফ গলা জলধারার মতো।
ফেব্রুয়ারি ২০০৫ এ হায়াত মামুদের সম্পানদায় বেরুলো 'শ্রেষ্ঠ পাবলো নেরুদা'। প্রচ্ছদে ধরা নেরুদার প্রস্তরীভূত আবক্ষ মূর্তি। সংকলিত কবিতায়, প্রবন্ধ ও বক্তৃতায়, আত্মজৈবনিক রচনায়, সাক্ষাতকারে, নেরুদাকে নিয়ে বিদগ্ধ-মনন প্রবন্ধে, কিম্বা পরিশিষ্টতে সেটে দেয়া আরো চার বিবিধ লেখাতে নেরুদার একটি সামগ্রিক পরিচয় ফোটাতে চাইলেন তিনি। নেরুদাকে 'অতিপ্রজ' না বলে অভিসিক্ত করতে চাইলেন 'ইচ্ছাপ্রজ' অভিধায়।
ইতিমধ্যে বাংলা ভাষাতেও নেরুদা বহু প্রকাশিত হয়েছেন। আমাদের হাতের কাছে লভ্য হয়েছে তাঁর ইংরেজি অনুবাদ — আন্তঃজালে কিংবা ছাপার অক্ষরে। সময়ের স্রোতে সাম্পান ভাসাতে ভাসাতে আমরা এগিয়ে গেছি আধুনিক প্রপঞ্চের খরস্রোতা নদীটির ঘূর্ণাবর্ত দিয়ে। নিকটবর্তী হয়েছি অধুনান্তিক কালের। তবুও আমাদের অতীত থেকে আলো নিতে হয় ভবিষ্যতের পথ চলবার জন্যে।
তাঁর কবিতায় অনুভব করেছি, এক অনন্য জটিল স্যুরিয়ালিজমের প্রবাহ । অবিরল জলভ্রমনে আমাদের এই বোধ স্থির হয়েছে যে তিনি এক মহান কবি, ক্রমাগত নির্মোকের পর নির্মোক সরিয়ে শব্দের অপরূপ রূপ উন্মোচনে তিনি লাতিন আমেরিকার বর্ণিল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতির মতোই সাবলীল ও সিদ্ধহস্ত। কখনো তাঁর শব্দের মিলিত ঝংকার সুউচ্চ আন্দেজের মতোই শক্তিধর আবার কখনো তারা চিলের (চিলির) জলে ধোয়া সৈকতের মতোই সৌকর্যে আধুনিক ও মুগ্ধকর।
জীবন ও সময় পাবলো নেরুদাকে অনেক অবিস্মরণীয় বিস্ময়কর মুহূর্তের মুখোমুখি করেছে। তাই তাঁর মতো প্রতিভাধর মানুষের এমন বড় মাপের কবি না হয়ে কি কোন উপায় ছিল? পাঠক, কোন মূল্যেই একটি কবিতা তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের প্রতিনিধিত্ব করে না, এ আমাদের জানা কথা। তবুও আসুন, আমরা নেড়ে চেড়ে দেখি আরক্তিম আপেল, সোমত্ত নারী আর জ্বলন্ত চাঁদকে। অথবা আমরাও জ্বলতে থাকি এক মোহন আগুনে।

Carnal apple, Woman filled, burning moon,
dark smell of seaweed, crush of mud and light,
What secret knowledge is clasped between your pillars?
What primal night does Man touch with his senses?
Ay, Love is a journey through waters and stars,
through suffocating air, sharp tempests of grain:
Love is a war of lightning,
and two bodies ruined by a single sweetness.
Kiss by kiss I cover your tiny infinity,
your margins, your rivers, your diminutive villages,
and a genital fire, transformed by delight,
slips through the narrow channels of blood
to precipitate a nocturnal carnation,
to be, and be nothing but light in the dark.

আরক্তিম আপেল, সোমত্ত নারী, জ্বলন্ত চাঁদ,
সামুদ্রিক শৈবালের প্রগাঢ় গন্ধ, পিষ্ট কাদা ও চূর্ণ আলো,
কি গোপন প্রজ্ঞান লেপ্টে আছে তোমার সুকোমল দুই থামের মাঝে ?
কোন আদিম রাত্রির স্পর্শ পায় পুরুষ-চেতন ?
আহা, প্রেম সে এক মোহন ভ্রমণ জল আর তারার ভেতর,
দমবন্ধ বাতাসের ভেতর, শস্যকণার তীক্ষ্ণ ঝটিতি ঝড়ের ভেতর :
ভালবাসা হলো আলো জ্বালাবার যুদ্ধ,
আর এক মাধুরীতে মিশে গিয়ে দুটি দেহের ধ্বংস হয়ে যাবার খেলা।
চুমোয় চুমোয় আমি ছুঁয়ে যাই তোমার ছোট্ট অতল,
তোমার দেহপ্রান্ত, তোমার নদী, তোমার ছোট্ট গ্রাম,
আর আনন্দে রূপান্তরিত একটি যোনির আগুন,
সুগন্ধি এক নিশি উৎসবে অধঃক্ষিপ্ত হবার নেশায়
রক্তের সুচিক্কণ স্রোতধারায় পিছলে পিছলে যায়
আর অন্ধকারে শুধুই আলো হতে চায়।


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
অক্টোবর ১৯৭৩ এ 'পাবলো নেরুদার কবিতা' নামে একটি ক্ষীণাঙ্গিনী বই প্রকাশিত হয়েছিল প্রকাশ ভবন ঢাকা থেকে। সেখানে মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে পাবলো নেরুদার পনেরটি কবিতা জায়গা পেয়েছিল। বইটি ক্ষীণাঙ্গিনী হলেও দারুণ ছিল অনুবাদগুলো। পুরনো বই ঘাঁটতে গিয়ে সেটি আমি খুঁজে পেয়েছি। সেই কবিতাগুলো থেকে প্রেরণা ও সাহস নিয়েই নেরুদার অনুবাদে হাত দেয়ার ধৃষ্টতা। তাই অক্ষমতা ক্ষমার্হ ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার অনুবাদ !!

চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। অনুপ্রেরণা ও সাহস পেলাম। নেরুদার একটি নাটকের অনুবাদ করেছেন মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। সেখানে স্যুরিয়ালিজমের কি অসাধারণ চমক!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

Reza_Rifat এর ছবি

অসাধারন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ _ ভাই। নেরুদাকে আরো পড়ুন, আপনার ভালো লাগবে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

লইজ্জা লাগে কবিরা সব সময়ই একটু ইয়ে... লইজ্জা লাগে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লজ্জা পাবেন না ভাই, এই নিন আরো একটু ইয়ে...।

নারী সুদর্শনা

শুয়ে আছি আমি আজ শুদ্ধ শান্ত মেয়েটির পাশে
শয়ান যেন বা শ্বেত সমুদ্রের সৈকতে কোথায়,
ধীর অতি ধীরগতি প্রজ্বলন্ত নক্ষত্রের কোষে
সমাসীন যেন।

ও মেয়ের দৃষ্টি বেয়ে ঝরে যায় দীঘল সবুজ
রশ্মি-রেখা ঝরে বুঝি অবিশ্রান্ত লীন জলধারা,
সতেজ শক্তির স্বচ্ছ গুড় অন্তর্গূঢ় বৃত্তাকারে
ঝরে ঘুরে ঘুরে।

বিকশিত স্তন দুটি দূর-দৃশ্য দুই অগ্নিশিখা
জ্বলে দাউদাউ— দুটি সমুন্নত ভূমি দু-দেশের
দুই-বেণী নদী হয়ে অতঃপর নামে পদতলে
নগ্ন, স্বচ্ছতোয়া।

সোনার আবহ ক্রমে পরিপক্ব করেছে অস্ফুটে
মেয়েটির শরীরের সাবলীল আহ্নিক দ্রাঘিমা
রহস্যের অগ্নিদূতি ভরে দিয়ে, করে ধীরে ধীরে
ফলভারানত।
(পাবলো নেরুদা, 'মর্ত্যের বসত', "নারী সুদর্শনা")

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অমি_বন্যা এর ছবি

শব্দচয়ন অসাধারণ। আর অনুবাদটিও যা করেছেন হাততালি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ বন্যা,
প্রেরণা পেলাম। আমি জানি যে আমি ইংরেজি অনুবাদটির কাছাকাছিও যেতে পারি নি। শুনেছি হিস্পানি ভাষায় নেরুদা নাকি রক্তচক্ষু তারার মতো জ্বলজ্বলে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক হাততালি

নেরুদা, প্রিয় কবি আমার---

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

জানি, তাই তো তুমি সচলায়তনে ওঁকে নিয়ে এমন সুন্দর লেখা লিখেছ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

চলুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৌরভ কবীর  এর ছবি

শব্দচয়নে গুরু গুরু

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লইজ্জা লাগে

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

বন্দনা এর ছবি

অসাধারন হয়েছে অনুবাদটা রোমেলদা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আরে আরে, বহুদিন পর আমার বোনটির দেখা পেলাম। তা কেমন আছ, ভাই?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

বন্দনা এর ছবি

বেঁচে আছি রোমেলদা, আপনি অনেকদিন পরে লিখলেন, নাকি আমিই মিস করে গেছি কি জানি।

জুঁই মনি দাশ এর ছবি

অনুভূতির নিবিড় প্রতিমা নাকি কবিতা......আমি বুঝতে পারি না, অনুভব করার চেষ্টা করি......সেখানেও ধোঁয়া ধোঁয়া শূণ্যতা.......

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এমন অনুভূতিই তো কবিতার মহত্বকে প্রমাণ করে। একজন মহান কবি হলেন তিনিই, যিনি কি লিখেছেন তা হয়তো বলতে পারবেন না, তবে তিনি যে সবটুকুর সারাৎসার লিখেছেন সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কাব্যিক গদ্য পড়তে পড়তে ভাবছিলাম মন্তব্য করবো, "এ'সব কাব্যিক গদ্যে চিঁড়ে ভিজবে না"। গদ্য শেষ করতে না করতে দেখি চিঁড়ে তো চিঁড়ে গোটা মন ভেজানোর আয়োজন করা আছে। চমৎকার! নেরুদার আরো আরো অনুবাদ চাই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এমন প্রশংসা আমাকে যেমন এক আকাশ নক্ষত্র হাতের মুঠোয় পাইয়ে দেয়, তেমনি মুখোমুখি করে পাহাড় প্রমাণ চ্যালেঞ্জের। একটি তৃণ কতটুকু সবুজ বিলাতে পারে তা তো সে জানে। তার কি সাধ্য থাকে সবুজে সবুজে অশ্বত্থের মতো দিগন্ত ছাপিয়ে দেবার?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আউটসাইডার এর ছবি

চলুক (গুড়)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ক্যামুর 'দি আউটসাইডার' আমার খুব প্রিয় উপন্যাসগুলির একটি। আপনার নিকটি আমাকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিল। প্রাণভরে আপনার ভালবাসা গ্রহণ করলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

cresida এর ছবি

দারুন লাগলো। অ্যালান গীনসবার্গ আমার অনেক প্রিয়। কোন একসময় আপনার কাছ থেকে ওনার উপর একটা লেখা আশা করি।

ভালো থাকবেন।

ক্রেসিডা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গীনসবার্গের সম্প্রতির ভূমিকা আমাকেও উদ্দীপ্ত করে। তিনি বড় মাপের মানুষ। তবে তাঁকে নিয়ে লেখবার জন্যে যথেষ্ট পাঠ আমার এখনও হয়ে উঠে নি। আশাকরি ভবিষ্যতে লিখবো। যতদূর জানি, এস এম মাহবুব মুর্শেদ তাঁকে নিয়ে ব্লগে লিখেছেন

আপনার কবিতা পড়ে মনে হয় অনেক ইমারত তৈরি করবার সাধারণ্যের চাইতে তাজমহল তৈরির অসাধারণ্যেই আপনার প্রতীতি। আশাকরি, এই বিশ্বাসে স্থিতধী হবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

cresida এর ছবি

তাজমহল তৈরীরর অসাধারন্যে কি কম লেখা শেয়ারের কারন? ওয়েল, আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। আমি কিছু নিজস্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ট্রাই করি। সেরকম আরো কিছু লেখা আছে হয়তো হাতে; সমস্যা আমি মডারেশনের গন্ডি পার হতে পারছি না। অথবা, আমি খুব কুইক পোষ্ট করেছি (যদিও নীড়পাতার ৯টি লেখার পর ই);

আর একটা ব্যাপার, কবিতার মধ্যে থেকে কাব্যিক ভাবটাকে ওমিট করে লেখাকে বা কবিতাকে আমাদের রোজকার কথপকথনের মতো সাবলিল করার একটা চেষ্টা তো থাকেই।

মুর্শেদ ভাই এর লেখাটা পড়ে নেব। রেফারেন্সের জন্য ধন্যবাদ।

ক্রেসিডা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আর একটা ব্যাপার, কবিতার মধ্যে থেকে কাব্যিক ভাবটাকে ওমিট করে লেখাকে বা কবিতাকে আমাদের রোজকার কথপকথনের মতো সাবলিল করার একটা চেষ্টা তো থাকেই।

কবিতার ভেতর আলাপচারিতার অনুপ্রবেশে বিদগ্ধজনের আপত্তি থাকার কোন কারণ দেখি না। তবে, কবিতা থেকে 'কাব্যিক ভাব'-ই যদি নিষ্ক্রান্ত হলো তবে তা 'শুষ্কমঃ কাষ্ঠং'-ই হোক আর 'নীরস তঃ তরু'-ই হোক 'কবিতা' যে থাকে না এ বিশ্বাসে অনেকেই স্থিত হবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ক্রেসিডা এর ছবি

আমি এটা বিশ্বশ করি না। হয়তো আপনি আমার কথাটা বুঝতে পারেননি, বা আমি সেভাবে অল্পতে বোঝাতে পারিনি। ।একটা সময় ছিল, চাঁদ ও তার সুষমা নিয়ে লাইনের পর লাইন বা ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক শব্দ এর মালায় সাজিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি- মেটাফোর তো থাকবে, এন্ড এম‌্যুগিটি এর ব্যবহার করে শুধু কবিতাকে আরএকটু মেদহীন করা, ছিপছিপে করা; অপার্থিব কিছুর সাথে তুলনা না করে আমাদের আশেপাশের চেনা জানা উপকরনে তুলে আনা। আমি রোজ যেভাবে কথা বলি আমার মায়ের সাথে, বাবার সাথে বা আপনাদের সাথে - সেভাবে তুলে ধরা।

সংক্ষেপে - এই আর কি!

ক্রেসিডা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

একটা সময় ছিল, চাঁদ ও তার সুষমা নিয়ে লাইনের পর লাইন বা ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক শব্দ এর মালায় সাজিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি- মেটাফোর তো থাকবে, এন্ড এম‌্যুগিটি এর ব্যবহার করে শুধু কবিতাকে আরএকটু মেদহীন করা, ছিপছিপে করা; অপার্থিব কিছুর সাথে তুলনা না করে আমাদের আশেপাশের চেনা জানা উপকরনে তুলে আনা।

এই বার বোধকরি আপনার কী-বোর্ড সঠিক শব্দে বাঙময় হলো। কিন্তু এ তো কোন নতুন কথা নয়। এই ধরুন, বিশ শতকের গোড়ার দিকের ইমেজিসম আন্দোলনের কথা। কবিতাকে ভিক্টোরীয় এবং এডওয়ার্ডীয় যুগের সেন্টিমেন্টালিজম, বাগবাহুল্য ও অতিসৌকর্য থেকে মুক্ত করার প্রথম প্রয়াস আসে ইমেজিস্টদের কাছ থেকে। এই সময়ে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় শ্রেষ্ঠ কবি ভাবা হতো যথাক্রমে টেনিসন এবং লঙফেলোকে। সাধারণ পাঠক এঁদের কবিতার নীতিকথা ও গীতলতাকে আদরণীয় ভাবতো। ইমেজিস্টরা এসে জোর দিলেন ক্লাসিক্যাল সংহতি, স্বল্পবাকতা এবং অপরিচিত এমনকি ভিনদেশি ছন্দপ্রকরণ ও শৈলীর ওপর। ইমেজিস্টদের প্রতিপাদ্য ছিল যে কবিতা গড়ে উঠবে এক বা একাধিক স্বচ্ছ ও কঠিন ইমেজ বা চিত্রকল্পকে ঘিরে। কবিতায় ব্যবহৃত হবে দৈনন্দিন ভাষা, ফ্রি ভার্স; বিষয়বস্তু নির্বাচনে কবির থাকবে অবারিত স্বাধীনতা। আর হ্যাঁ, লক্ষ্য করুন, এসব কিন্তু সেই ১৯১৪ থেকে ১৯৩০ সালের কথা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কল্যাণ এর ছবি

হাততালি

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সোমত্ত নারীর ঊরুসন্ধির সিঁথি

বয়সের দোষ,হ্যাঁ সে আমারই।
অসাধারন! সবকিছুই।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

quoবয়সের দোষগুণ নিয়ে এই নিন ক'চরণ দ্বিধান্বিত জিজ্ঞাসা,

কাজের গুহায় আমি ইদানীং
শুনি মাঝে মাঝে টেলিফোনে যার গলা
মধ্যবয়সে, ম্লান যৌবনে
তাঁকে প্রিয়তমা কখনো যাবে কি বলা?
(শামসুর রাহমান, "বিপর্যস্ত গোলাপ বাগান")

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

আপনার লেখা পেলাম তাহলে! পরবর্তী অনুবাদ প্রত্যাশা কিংবা আপনার নিজস্ব একটি কবিতা...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

উল্টে যাওয়া আরশোলার মতো ছটফট করি লিখতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে। কারুবাসনা আমার চেতনাকে দগ্ধ করে অবিরাম, কিন্তু ক্ষত্রিয়বৃত্তির নিগড় থেকে মুক্ত করে নিতে পারে না। এমন মানুষের কাছ থেকে কি প্রতনু প্রত্যাশা অভিপ্রেত?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

যুমার এর ছবি

উল্টে যাওয়া আরশোলার মতো ছটফট করি লিখতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে
সে যন্ত্রণার স্ফূরণ এমনই হোক
আরো অনুবাদ চাইছি,শীঘ্রই----

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ যুমার। আপনাদের মতো পাঠকের ভালবাসাই তো প্রতি পলে নিজেকে ছাপিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।