যদি আশ্বিনে বন্যা হয়??

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ১৮/০৮/২০০৭ - ৭:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাম্প্রতিক দেশব্যাপী জলাবদ্ধতা নিয়ে রাজনীতি কিংবা গলাবাজি বিষয়ে কিছুই বলার নেই, যদিও এটাকে বন্যা বলা হচ্ছে তবে আমি কেনো যেনো এটাকে বন্যা হিসাবে মানতে পারছি না-
অপরিকল্পিত নগরায়ন আর ভুমি আর জলা দখলের প্রেক্ষিতে মানুষের দুর্ভোগ হিসেবেই দেখছি এটাকে- তবে এখানেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আছে- এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে রাজনীতিও আছে- ত্রানবিতরণ নিয়ে রাজনীতি, প্রভাববলয় দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এবং সরকারের বিপুল ভ্রান্তি যে তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছুই করছে-
সরকারের সাথে জনগণের বৈমাত্রেয় সম্পর্ক কবে ঘুচবে এ বিষয়ে ভবিষ্যতবানী করা মুশকিল- সম্ভবত উত্তরটা হবে- কখনই না- সরকার নিজেদের ভাবমুর্তি( অস্পষ্ট একটা ধারণা যা বাংলাদেশের প্রশাসনের ভেতরে কাজ করে সব সময়) রক্ষার চেষ্টা করছে- তারা নিজেদের জনদরদী এবং আইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর- এবং তারা সব সময়ই ধারণা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লুকিয়ে রাখলে হয়তো এটা প্রতিষ্ঠিত হবে যে তারা আসলেই দক্ষ( অবশ্য কথাটা সত্য, বাংলাদেশের সরকার সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা নির্ণয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে) যেকোনো হিসেবেই ক্ষতিগ্রস্তের বেসরকারী হিসেব আর সরকারী হিসেবে হাজার আর লক্ষের ব্যবধান।

আপাতত পানি নামছে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে- পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে, ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারের রেকর্ড ভাঙছে প্রতিদিন, লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিও এই সুযোগে তার টাইটানিক থেকে উপার্জিত টাকায় বাংলাদেশে অনেকগুলো আর এফ এল নলকুপ বসিয়ে দিতে পারতো- বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট এত বেশী এবং নিরাপদ পানীয় জল পাওয়া এতটা কঠিন বাংলাদেশে যে আমরা সচারাচর সরবরাহকৃত পানিও ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করি- এবং ওয়াসা কতৃপক্ষ বলেন আসলে তাদের সরবরাহকৃত পানিতে প্রাণীজ আমিষ আর বর্জ্য আসলে যারা অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি করছে তাদের দোষেই প্রবেশ করছে-

তবে এত কিছুর পরও আমি বলবো সাম্প্রতিক সময়ে যেটুকু বৃষ্টিপাত হয়েছে তা কোনোভাবেই স্থায়ী একটা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারতো না যদি আমাদের নদীগুলোর গভীরতা ঠিক থাকতো, যদি আমাদের নদীগুলোর বুকে চড়া না পড়তো, যদি না বিভুতিভুষণের ইছামতিতে ধানচাষ না হতো প্রতিবছর-

আমার বসবাস দিনাজপুরে- সেখানে নদী ছিলো সবগুলোর নাম বলতে পারবো না, টাঙ্গন, আত্রাই, পুনর্ভবা, আরও বেশ কিছু নদী ছিলো চারপাশে, তবে গত ১৫ বছরে অন্তত নদীর গভীরতা কমেছে ৬ ফুট, আগে যেখানে আমরা স্লানে নামলে গলা অবধি ডুবে যেতো, এখন যেসব নদীতে হাঁটুজলও নেই, বরং গোড়ালী ডুবে না- আর এই ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগর্ভ আসলে সামান্য বৃষ্টির জলও হজম করতে পারে না, তারা উপচে পড়ে- আর বিপদসীমা অতিক্রম করে ফেলে- নদী বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে তবে গত ১৫ বছর ধরে যেভাবে শহরকে বন্যামুক্ত রাখতে নদীর চারপাশে বাঁধ নির্মিত হয়েছে তাতে একটাই সুবিধ হয়েছে- সেই বাঁধের উপরে জলাবদ্ধতার শিকার মানুষেরা ঠাঁই নিতে পারে- আর সেইসব মানুষদের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো নির্বোধ সাংবাদিক হাসি মুখে বলতে পারে- সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে এখটা জরিপ হয়েছিলো , সেখানে জানা গিয়েছইলো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি মানুষ বাংলাদেশীরা, কথাটা সত্য- এইযে মানুষগুলোকে দেখছেন, তারা গত ১ সপ্তাহ ধরে সরকারী বাঁধের রাস্তায় অস্থায়ী চালা নির্মান করে বসবাস করছে- তারা জানে না কবে তারা বাসায় ফিরবে, এই যে মা, তার ৬টা শিশু সন্তান নিয়ে বিরম্বিত জীবনযাপন করছে, সেও আনন্দিত, আমরা আসলেই সুখী মানুষের দেশে বসবাস করি।

তবে আমার ভয়গনকর আশংকা হলো- এই শ্রাবণে তেমন বৃষ্টি পড়ে নি- সামনে ভাদ্র- এর পরে আশ্বিণ, কোনো কোনো সময় আশ্বিনে জোর বৃষ্টিপাত হয়- শ্রাবণে কেবল ধান লাগানো হয়েছে- যদি আশ্বিনে এমন জলাবদ্ধতা হয় তবে চাষীদের লাগানো ধান একেবারে পচে মাঠেই মরে যাবে- আপাতত এই ছোটো জলাবদ্ধতা কাটাতেই যে হিমশিম অবস্থা- আসন্ন আশ্বিনের বানে আসলেই কি আমরা সামলে উঠতে পারবো?


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

গ্যালো শীতে টাঙ্গনে নেমেছিলাম। হেঁটে পার হওয়া যায়। নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙালির ইতিহাস: আদি পর্বে পড়েছিলাম চীনা পর্যটকের মুখে দুর্ধর্ষ করতোয়া, টাঙ্গন নদীর বর্ণণা। হায় রে নদী।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অপ বাক এর ছবি

ঠিক হাহাকার করাটা উচিত হবে না- যদিও নদীর বালি দিয়ে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরি হচ্ছে তবে এত ট্রাক ট্রাক বালি তুলেও গভীরতা বাড়ছে না নদীর।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কিছু নদী বোধহয় এমনিতেই মরে যায়।প্রকৃতির নিয়ম।
তবে অপবাকের পয়েন্টটি গুরুত্বপূর্ণ।
নদী খনন করেই বন্যা সমস্যার সমাধান করতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো নদী খনন করলে ফান্ড বেশি মেলে না,বরং নদী শাষনের ফানড অনেক বেশি।বাধ দেয়াটাই তাই কর্তাদের পকেটের জন্য মঙ্গল।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

সৌরভ এর ছবি

দুবছর আগে ঢাকা শহরে পানিতে আটকে গেছিলাম। মনে পড়ে, সময়টা ছিলো সেপ্টেম্বরের শেষ।
এখনো সেপ্টেম্বর তো এলোইনা। তিন-চারদিন মুষলধারে বৃষ্টিই যথেষ্ট সব ভাসিয়ে নেয়ার জন্যে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।