মৃত মানুষের ডাক

পলাশ দত্ত এর ছবি
লিখেছেন পলাশ দত্ত (তারিখ: শনি, ২০/০৯/২০০৮ - ৫:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল রাত থেকে মাথাটায় খুব ঝামালো হচ্ছে। আমার ঘরের বইয়ের আলমারির দিকে তাকানোর শাস্তি পাচ্ছি এখন।

আমরা কি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-চিন্তার বাহক হয়ে উঠতেছি? আমার নিজের ঘরে নিজের কেনা যেসব বই দেখতে পাই তার ৯০ শতাংশই ভারতীয়! বিশ্বাস হয় না নিজেকে। বিশ্বাস হয় না নিজের চোখকে। কেনো এতো ভারতীয় বই আমার ঘরে?!

শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে কয়েকটি বইয়ের দোকান আছে। সেই বইয়ের দোকানগুলোতে যেসব বই কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো ভালো করে খেয়াল করে দেখেছেন কখনো? দোকানগুলো সব পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বইয়ে ভরপুর। এর কারণ কী? আমরা কি বাংলাদেশি লেখকদের লেখা পড়ি না? পড়তে চাই না? চাই তো। বাংলাদেশি লেখকরা কি ভালো লেখেন না? বেশ কেউ-কেউ ভালো লেখেন তো? তবুও কেনো?

এইখানে আমি বিভ্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে-বিচিত্র ধরনের বইপত্র বেরোয়- গল্প উপন্যাস বাদ দিয়ে বলছি- সেরকম বাংলাদেশে হয় না। কেনো হয় না? পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি যে-ধরনের অভাবনীয় বই বের করে আমাদের বাংলা একাডেমী তার ধারেকাছে যাওয়ার মতো পাপও করে না। কেনো?

আমি কি তাহলে শুধু পশ্চিমবঙ্গের ভালো ভালো বই-ই পড়ে যাবো???


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

প্রশ্ন আমারো। মন খারাপ

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমি আসলে বিভ্রান্ত খানিকটা। কেননা কেন পশ্চিমবঙ্গের বইয়ে আমার আলমারি ভরা তার একটা কারণ বোধহয় আমার জানা আছে।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সেটা নিয়ে তাহলে একটা পোস্ট দিয়ে দেন।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্বপ্নাহত এর ছবি

চিন্তিত

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন পশ্চিমবঙ্গের বইয়ে আমার আলমারি ভরা তার একটা কারণ বোধহয় আমার জানা আছে।.......................... ভাই এইটা নিয়ে একটা পোষ্ট দেন ।
নিবিড়

মুজিব মেহদী [অতিথি] এর ছবি

কিছু কিছু বইয়ের হিসেব কষলে আমি আমার সেলফের দিকে তাকালেও খুব বেশি ব্যতিক্রম দেখি না। এটা না হবারও কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এখনো সব ধরনের বইয়ের যোগান দিতে পারে না। যে বইটি একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আছে ব্যতিক্রমহীনভাবে দেখবেন তুলনায় পশ্চিমবঙ্গেরটাই ভালো। টেক্সটের মানের ব্যাপারে যদি তুলনাটা না-ও টানি (ধরুন যদি এড়িয়ে যাই), মুদ্রণ প্রমাদ ও মুদ্রণ সৌকর্যে ওরা এগিয়ে থাকবেই। আমার এই তুলনাটা বিশেষত মননশীল ও অনুবাদ গ্রন্থের ব্যাপারে। আমাদের অনুবাদ গ্রন্থের মান বিষয়ে ধারণাটা আর্টসবিডিনিউজ২৪.কম এ ছাপা রেজাউল করিম সুমনের দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে তে চোখ বুলালেই খানিকটা পরিষ্কার হতে পারে।

অবশ্য সৃজনশীল সাহিত্যের ক্ষেত্রে পাঠকশ্রেণির কিছু উপেক্ষাও এক্ষেত্রে দায়ী। এমনও দেখেছি ওখানকার তৃতীয় শ্রেণির কবির বইয়ের এখানে বাজার আছে, বিপরীতে এখানকার দ্বিতীয় শ্রেণিরও বাজার নেই। ক্রেতারা দেশী বই কিনতে বিশেষ আগ্রহী নন বলে দোকানিরাও সেসব বই সংরক্ষণ ও প্রদর্শনে কম আগ্রহ দেখান। তবে বিভিন্ন দোকানে ইউপিএল, মাওলা, আগামী প্রভৃতি প্রথম সারির প্রকাশনীর বই কম বেশি মেলে বৈকি।

আজিজ মার্কেটের প্রসঙ্গই যদি সামনে আনা যায় তাহলে একটা বিপ্লবী ঘটনারও উদাহরণ দেয়া যায়। আপনারা জানেন, শ্রাবণ প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী রবীন আহসান এখানে পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের মনোপলি ব্যবসা দেখে পণ করে যে তাঁর দোকানে কোনো পশ্চিমবঙ্গের বইই বিক্রি হবে না এবং তিনি যতদূর সম্ভব বাংলাদেশের বই প্রমোট করবেন। যৌবনের উদ্দামতায় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শে টনটনে হওয়ায় এখনো তিনি তাঁর পণ রক্ষা করে চলেছেন, কিন্তু পরিণতি এই যে, এমনও দিন যায় ১০০ টাকাও বিক্রি হয় না। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁকে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতনের টাকাটা অন্যভাবে ম্যানেজ করতে হয়। ভাগ্যিস এই করিৎকর্মা লোকটার নিয়মিত আয়ের আরো উপায় আছে, নইলে এই পণ অনেক আগে ভেসে যেত হাওয়ায়।

সব শেষে এ কথা তো বলতেই হবে যে, আমাদের উচিত দেশী বইও কেনা ও পড়া। নইলে এ অবস্থার পরিবর্তন চাওয়াটাও বাড়াবাড়ি হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুয়েকটা ফ্যাক্টরের কথা মনে হয় বলতে পারবো। এক, বাংলাদেশের বইয়ের দাম অপেক্ষাকৃত বেশী। দুই, বইমেলা শেষ হলে বাংলাদেশের বিশেষ কোন বই খুঁজে বের করতে "গুগলের" সাহায্য নিয়েও পাওয়া যাবে না। তিন, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু বইয়ের পাইরেটেড ভার্সান এখানে সস্তায় বিক্রি করা যায় যা দেশী বইয়ের ক্ষেত্রে করা কঠিন। চার, বাংলাদেশে গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর বই বের করার ক্ষেত্রে সীমাহীন অনীহা। যদিও এক আধটা বের করেন সেক্ষেত্রে কম সংখ্যায় অত্যধিক দামে বের করার প্রবণতা দেখা যায়। আর বইটা কে লিখবেন, কিভাবে লিখবেন তা নিয়ে যে রাজনীতি-স্বজনপ্রীতি চলে তার সাতকাহন সবার জানা। ছাগলকে দিয়ে হাল চাষ করানোর মত লেখা বইগুলো কোন দুঃখে আমার গাঁটের কড়ি খরচ করে কিনবো?

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের বই কেনাটা এখন একটু কমবে আশাকরি... গায়ের দামের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছে দাম।
তবে ষষ্ঠদার কথা সত্য যে একুশের বইমেলা ছাড়া বই খুজেঁ পাওয়া কঠিন। আবার বইমেলায় বই কেনাটাও দিনদিন ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে। দেশী বইয়ের একটা নিজস্ব বাজার তৈরি করা দরকার। বাংলা বাজারের একটা বিকল্প বাজার নতুন ঢাকায় করাটা জরুরী।
আজীজ মার্কেটকে দোষ দিবোনা। এটা তো পয়দাই হইছিলো বিদেশী বই যেগুলো দেশে সচরাচর পাওয়া যায়না সেগুলোর আখড়া হিসেবে (সংক্ষেপে বললাম, বুঝাইতে পারলাম কি না জানি না, ভুল না বুঝলেই হয়)। আর এখন তো এইটা ঈদের মার্কেট।

প্রচার একটা বড় ব্যাপার।
বই বাইর হয় না ক্যান সেইটার সহজ উত্তর হইলো বাজার নাই। লোকে ভারতীয় বই-ই বেশি কিনে। তো প্রকাশ-ব্যবসায়ীদের দোষ দেওয়ার আগে তাই বাজার সম্প্রসারণের কথাটা জরুরী।
যা বই প্রকাশিত সেগুলোরই একটা সুষ্ঠু বাজার হউক... যেখানে গুগল ছাড়াই বই খুজেঁ পাওয়া যাবে। তাহলে বিক্রি বাড়বে মনে হয়। আর তাতে প্রকাশের সংখ্যাও বাড়বে। কমবে দামও।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি বোধ হয় এক্ষেত্রে আলাদা
আমি বই কেনার সময় বাংলাদেশের বইই খুঁজি প্রথমে
একেবারে না পেলে তারপর পশ্চিমবঙ্গের বই ধরি

আমার কালেকশনগুলোতে ক্লাসিক্যাল সাহিত্য ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বই নেই বললেই চলে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমিও কিন্তু পারতপক্ষে বিদেশী বই কিনি না... যতক্ষন পারি চেস্টা করি দেশী কিনি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমিও বাংলাদেশী বইয়ের অভাব অনুভব করি। অনুবাদের ব্যাপারে মুজিব মেহদী যা বললেন তা-ই সত্য মনে হয়। একই অনুবাদ, পশ্চিমবঙ্গেরটা বাংলাদেশীটার চেয়ে ভাল হয়। তারপরও বাংলাদেশে এখন ভাল অনুবাদ হচ্ছে।
গবেষণামূলক বই বাংলাদেশে খুবই কম। বিজ্ঞানের উপর লেখাও খুব বেশী না। পশ্চিমবঙ্গ সার্বিকভাবেই অনেক এগিয়ে আছে। আশাকরি বাংলাদেশের এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

ষষ্ঠ পান্ডবের মন্তব্য (আংশিক)
বইটা কে লিখবেন, কিভাবে লিখবেন তা নিয়ে যে রাজনীতি-স্বজনপ্রীতি চলে তার সাতকাহন সবার জানা।

তারচেয়ে মনে হয় বড় কথা ভালোর কোনো দেশ-কাল-পাত্রভেদ থাকা ঠিক নয়। আমাদের আত্মীয় খারাপ মাল সাপ্লাই দিলেও তা-ই নিতে হবে এমন তো হওয়া উচিত নয়। খারাপ খারাপই আর ভালো ভালোই।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।