২০০১ কিংবা ২০০৮/ অডিসির স্বপ্নদ্রষ্টার প্রস্থান

রাগিব এর ছবি
লিখেছেন রাগিব (তারিখ: বুধ, ১৯/০৩/২০০৮ - ৫:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"The truth, as always, will be far stranger."

auto

আর্থার সি ক্লার্কের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে সেই স্কুলে থাকার সময়ে। সেবা প্রকাশনীর কল্যাণে ঝরঝরে অনুবাদে "সন্ধানী" বইটা পড়েছিলাম, লাগামহীন কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম মুহুর্তেই। অনেক পরে আসল বইটা, আর্থার সি ক্লার্কের "২০০১ - এ স্পেস অডিসি" পড়ি, দেখি স্ট্যানলি কুব্রিকের হাতে তৈরী সিনেমাটিও। কিন্তু সন্ধানী আমাকে হঠাৎ করে বানিয়ে দেয় সাইন্স ফিকশনের চরম ভক্ত। ক্লাস নাইনে থাকার সময়ে পাড়ার এক ভাইয়ের কাছে ২০১0 - অডিসি ২ পেয়ে যাই, গোগ্রাসে গিলি পরের গল্পকথা। লালদিঘির পাশের ব্রিটিশ কাউন্সিলে আমার বড়বোনের কার্ড দেখিয়ে সিরিজের বাকি বইগুলোও একে একে পড়া হয়ে যায়।

আর্থার সি ক্লার্কের জন্ম ইংল্যান্ডের সমারসেটে, ১৯১৭ সালে। অভাবের তাড়নায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেননি শুরুতে, শিক্ষাবিভাগে অডিটরের চাকুরি নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রয়াল এয়ারফোর্সে রেডার বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন। যুদ্ধ শেষে লন্ডনের খ্যাতনামা কিংস কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যা ও গণিতে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি পান।

লেখালেখির শুরু করেন ১৯৪৬ থেকে। ১৯৪৮ সালে লিখেন দি সেন্টিনেল নামের গল্পটি, যা পরে রূপ নেয় ২০০১ - এ স্পেস অডিসি উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে।

এই গল্পটিতেই ক্লার্কের লেখনীর মূল ধারাটির আভাস পাওয়া যায়। পৃথিবীর মানব সভ্যতার সাথে অনেক শক্তিমান ও সুপ্রাচীন অপার্থিব সভ্যতার মোলাকাত ও তার পরিণাম নিয়ে ক্লার্ক লিখেছেন অধিকাংশ উপন্যাস। ক্লার্কের সেই ভবিষ্যত অবশ্য অন্ধকার বা ভীতিকর না, বরং মানবিকতায়, আশাবাদে পরিপূর্ণ সেই অনাগত দিনগুলো।

১৯৫৬ সাল থেকে ক্লার্ক শ্রীলংকাতে বসবাস শুরু করেন। স্কুবা ডাইভিং শখ ছিলো ... সমূদ্রের অমোঘ আহবানে তাই রয়ে যান আজীবন শ্রীলংকার কলম্বোতে।

সাইন্স ফিকশন ছাড়াও ক্লার্কের কল্পনাশক্তির কাছে আমরা, মানে এই ডিজিটাল দুনিয়া প্রচন্ডভাবে ঋণী। বিশ্বাস না হতে পারে, কিন্তু এই ক্লার্কই প্রথম ১৯৪৫ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহারের ধারনা দেন। ব্রিটিশ ইন্টারপ্ল্যানেটারি সোসাইটির একটি জার্নালে, এবং পরে ওয়ারলেস ওয়ার্ল্ড নামের সাময়িকিতে ক্লার্ক দেখান, মাত্র তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়েই সারা বিশ্বের সর্বত্র টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব।

ক্লার্কের ভবিষ্যত-দর্শন এখানেই থেমে থাকেনি। হালের জনপ্রিয় ধারণা, স্পেস এলিভেটর, এটাও জনমানুষের কাছে এসেছে ক্লার্কের উপন্যাস ফাউন্টেইন্স অফ স্পেস-এ। যদিও ধারণাটি নিয়ে আগে কিছু বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আলোচনা করেছেন, জনপ্রিয় সাহিত্যে এর প্রথম উপস্থাপনা ঘটে এই উপন্যাসে।

কৈশোরে আমার কাছে মহাবিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়া সেই আর্থার সি ক্লার্ক আজ মারা গেছেন, শ্রীলংকার কলম্বোতে, ৯১ বছর বয়সে। ক্লার্কের এই মহাপ্রয়াণে নিবেদন করছি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।

শেষ করছি ক্লার্কের কিছু বাণী দিয়ে।

[*]Perhaps it is better to be un-sane and happy, than sane and un-happy. But it is the best of all to be sane and happy. Whether our descendants can achieve that goal will be the greatest challenge of the future. Indeed, it may well decide whether we have any future.

[*]The Information Age offers much to mankind, and I would like to think that we will rise to the challenges it presents. But it is vital to remember that information — in the sense of raw data — is not knowledge, that knowledge is not wisdom, and that wisdom is not foresight. But information is the first essential step to all of these.

[*]The greatest tragedy in mankind's entire history may be the hijacking of morality by religion.

[*]It is not easy to see how the more extreme forms of nationalism can long survive when men have seen the Earth in its true perspective as a single small globe against the stars.

ক্লার্কের সূত্র

[*] Clarke's First Law: When a distinguished but elderly scientist states that something is possible, he is almost certainly right. When he states that something is impossible, he is very probably wrong.

[*] Clarke's Second Law: The only way of discovering the limits of the possible is to venture a little way past them into the impossible.

[*] Clarke's Third Law: Any sufficiently advanced technology is indistinguishable from magic

----

[*]SETI is probably the most important quest of our time, and it amazes me that governments and corporations are not supporting it sufficiently.

------

[*] ছবি - উইকিমিডিয়া কমন্স

[*] তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়াতে জীবনীবিবিসি নিউজ


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই প্রয়াত ক্লার্কের স্মৃতির প্রতি। তাঁর একটি বই-ই আমি পড়েছি, সংস ফ্রম দ্য ডিসট্যান্ট আর্থ, খুব ভালো লেগেছিলো পড়ে, কল্পবিজ্ঞানের গৎবাঁধা গল্পের বাইরে অন্য এক ভঙ্গিতে লেখা সে গল্প।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

শ্রদ্ধা।
আমাকে অজানা এক জগতের সন্ধান দিয়েছিলেন আর্থার সি ক্লার্ক।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

দিগন্ত এর ছবি

"Any sufficiently advanced technology is indistinguishable from magic"

এটা আমার প্রিয় কোটেশনগুলোর মধ্যে একটা। আরেকটা আর্থার সি ক্লার্ক পেতে আমাদের হয়ত কয়েক যুগ আবার অপেক্ষা করতে হবে। শ্রদ্ধা রইল ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিক্ষানবিস এর ছবি

সচলায়তনে এসেই প্রথম জানলাম যে আর্থার সি ক্লার্ক মারা গেছেন। সাইন্স ফিকশন খুব বেশী পড়িনি জীবনে। যা পড়েছি তার সবই আসিমভ আর ক্লার্কের। "দূর পৃথিবীর ডাক" নামে আর্থার সি ক্লার্কের একটি সাইন্স ফিকশন উপন্যাস মহাকাশ বার্তায় নিয়মিত বের হতো। পরে অবশ্য বই আকারে বেরিয়েছে। এটাই প্রথমে পড়েছিলাম।

আর স্পেস অডিসির কথা তো বলে বোঝানো সম্ভব না। উপন্যাস থেকে মুভিতে কিছুটা ব্যত্যয় থাকলেও দুটি শিল্পই নিজ নিজ ক্ষেত্রে একেবারে সফল। ক্লার্ক টাইটানিকের থিম নিয়ে "ঘোস্ট ফ্রম দ্য গ্র্যান্ড ব্যাংকস" নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। সেটা পড়তে পেরেও নিজেকে ধন্য মনে করেছি।

আর্থার সি ক্লার্ক সম্বন্ধে আরও জানলাম বাংলা উইকিপিডিয়াতে সত্যজিৎ রায় নিবন্ধটি সম্পাদনা করতে গিয়ে। দ্য এলিয়েন মুভির পরিকল্পনা করতে গিয়ে কতোটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো রায় আর ক্লার্কের মধ্যে। এবার সময় এসেছে আর্থার সি ক্লার্কের পূর্ণ জীবনী উইকিতি লিখে ফেলার। আজ থেকেই শুরু করবো ভাবছি।

ক্লার্কের সৃষ্টি নিশ্চয়ই চিরকাল বেচে থাকবে। তার কল্পবিজ্ঞান আর তার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা। সেই কামনাই করছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওদিনও ভাবছিলাম কেমন আছে বুড়ো, আজ সকালে বন্ধু অনু দিল দুঃসংবাদটা । মনটা খারাপ হয়ে গেল । গভীর শ্রদ্ধা রইল তাঁর স্মৃতির প্রতি । উনার কিছু ছোট গল্পের অনুবাদ পড়েছিলাম । মাথা ঘুরে গিয়েছিল সত্যজিত রায়ের অনুবাদ করা " ঈশ্বরের নয় লক্ষ কোটি নাম " টা পড়ে, ২০০১ : স্পেস অডেসী মুভিটা দেখেছিলাম কুব্রিকের করা, বইটা পড়তে হবে । যদ্দুর জানি 'স্পেস এলিভেটর' কিন্তু এখন আর ধারণা পর্যায়ে নেই, বাস্তবায়িত হবার পথে ক্লার্কের এই স্বপ্ন ।

- খেকশিয়াল

শিক্ষানবিস এর ছবি

যদ্দুর জানি 'স্পেস এলিভেটর' কিন্তু এখন আর ধারণা পর্যায়ে নেই, বাস্তবায়িত হবার পথে ক্লার্কের এই স্বপ্ন ।

হুম। অচিরেই লিফটে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে যাবে মানুষ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

পৃথিবী থেকে সব boss গুলা এভাবে চলে যেতে থাকলে... আমাদের কী হবে?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বড় হয়া নিজেই বস হইতে পারেন যাতে সেই চেষ্টা করতে থাকেন। একটা কিছু অন্তত হবে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

ক্লার্কের ওডিসি ২০০১ আমার জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠতম সায়েন্স ফিকশন তো বটেই, শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যেও অন্যতম।

বিজ্ঞান এর বাইরেও অনুভূতির এক কল্পনাকে ব্যবহার করে চমৎকার সায়েন্স ফিকশন লেখা যায়, তা ওডিসির শেষ অধ্যায়টা না পড়লে আমার বোঝা হত না।

এমন লেখকের মৃত্যুতে আমি সত্যিই প্রচন্ড দুঃখিত !
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

দিগন্ত এর ছবি

“"Absolutely no religious rites of any kind, relating to any religious faith, should be associated with my funeral," he wrote.”
ফিউনারেল নিয়ে এটাই তার বক্তব্য ছিল, জানি না কি রকম ফিউনারেল দেওয়া হবে তাঁকে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

আর্থার সি ক্লার্কের ভবিষ্যত-বাণীগুলোর একটা তালিকা করেছে বিবিসি। এটা পড়েও অনেক কিছু জানলাম।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

বিদায় স্যার ক্লার্ক! আনন্দে থাকুন। আমরাও আসছি।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।