উদারমানসচরিত

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৭/২০০৯ - ১:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার নাম পরেশ। অধমের নাম পরেশ বলিলেই সঙ্গত হইত, তবে অকারণ বিনয় প্রদর্শন আমার স্বভাব নহে। আমি, নরেশ, হরেশ ও বীরেশ চার জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নামেই প্রকাশ, সকলেই 'দেশি' ভদ্রসন্তান। কর্মোপলক্ষ্যে প্রবাসে আসিয়া আলাপ। বিদেশে যেইহেতু দেশিই দেশির বন্ধু হয় (এবং বৈদেশিকগণ আমাদিগকে পাত্তা দেয় না বলিয়া আমরাও উহাদের পাত্তা দেই না) তাই আমরা একে অপরকে আপন করিয়া লইয়াছি। সন্ধ্যায় গৃহে ফিরিয়া আমরা প্রায়শই আড্ডা প্রহার করি। ইহা আমাদিগের গর্ব্বের বিষয়, যখন দিল্লির দীনেশ রাষ্ট্রভাষায় জিজ্ঞাসা করে তুম লোগ অফিসকে বাদ ঘর যাকে ফির সে ক্যায়া ইতনা গপতে হো তখন আমরা ইহাদের মূর্খতায় অট্টহাস্য করি। প্রাচীন গ্রীকজাতির পর বাঙ্গালীই বুঝিল আড্ডার সম্যক তাৎপর্য্য, এই খোট্টা কী বুঝিবে তাহার মাহাত্ম্য। মদ্রদেশীয়রা তো শুনিয়াছি আপিস হইতে ফেরে প্রোগ্রামের মুদ্রিত কাপি হস্তে লইয়া, সাম্বর সহযোগে ইডলি ভক্ষণ করিয়া উহা পাঠ করিতে করিতে নিদ্রা যায়। এই সকল অর্ব্বাচীন কী বুঝিবে কনস্ট্রাক্টিভ ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসকাশনের তাৎপর্য্য!

অদ্য সাযা়হ্ণে আসর বসিয়াছে নরেশের বাটিকায়। আমাদিগের বাস একে অপরের নিকটেই, শুনা যায় ক্যাবচালকেরা ইহাকে দেশি ঘেটো বলে, তবে আমরা তাহা গাত্রে মাখি না। অশিক্ষিতেরা কী বলিল তাহাতে বিচলিত হইলে চলে না। কাছাকাছি থাকিলে একত্রে গ্রসারি করিতে ওয়ালমার্টে যাইবার কালে গ্যাস ক্রয়বাবদ সাশ্রয় হয়। তদুপরি দেশি পণ্যভাণ্ডার হইতে দস্যুতাজাত ডিভিডি আনিয়া হিন্দি বহি দেখা যায় একত্রে। যাহা হউক, আড্ডা শুরু হইতে হরেশ আসিল, এক বয়স্ক ভদ্রব্যক্তি আসিয়াছেন তাহার সহিত, তিনিও বাঙ্গালী। হরেশের প্রতিবেশী রমাদিদি আমাদিগের পরিচিত, সেই রমাদিদির পিতা এই প্রবীন, সদ্য দেশ হইতে আসিয়াছেন। রমাদিদি আমাদিগকে অতিশয় স্নেহ করেন, আমরাও তাঁর পঞ্চব্যঞ্জনের প্রশংসা করিয়া তাহার প্রতিদান করি, অতএব তাঁহার পিতাঠাকুরের সান্নিধ্য এক দিন সহ্য করিতে হইলে আপত্তি করা অশোভন হয়। তদুপরি এই ব্যক্তি বিদেশে নবাগত, উহাকে জ্ঞান দিতে পারিব ভাবিয়া আনন্দ অনুভব হইল।

আমাদিগের জ্ঞানের সুবিশাল পরিধির সহিত তাল মিলাইয়া বিবিধ বিষয় লইয়া বাক্যালাপ হইতেছিল, তখন অকস্মাৎ বীরেশের আগমন। সে দেখিলাম খুবই বিরক্ত, তাহার আপিসের এক মেক্সিকোদেশীয় সহকর্মীর উপর। আসিয়াই প্রবল বেগে তাহার মুণ্ডপাত শুরু করিল সে, কারণ তাহার কারণেই প্রত্যহ উহার গৃহে প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব হয়। গজগজ করিতে করিতে বলিল, "এই মাকুগুলোকে নিযে়ই মুশকিল, গ্যাস স্টেশনে কাজ কর কি বারিটো বেচ, তা না অফিসে অবধি চাকরি করা চাই।" আমি ও নরেশ অবশ্য মুখ টিপিয়া হাসিলাম কারণ আমরা জানি বীরেশ দেশে থাকাকালীন কর্ম্মক্ষেত্রে তাহার প্রভুকে কী জাতীয় তৈল মর্দন করিত, যাহার ফলস্বরূপ তাহার প্রবাসগমন সম্ভব হইয়াছে। কিন্তু ইহা লোকশ্রুতি এবং আমরা বন্ধুবৎসল ভদ্রসন্তান, আমরা তাহার সম্মুখে এদৃশ আলোচনা করিতে পারি না বলিয়া নীরবে হাস্য করি। রমাদিদির পিতৃদেব দেখিলাম সাধারণ জ্ঞানে একান্তই অপটু, তিনি মাকু শব্দের তাৎপর্য অনুধাবন করিতে পারিলেন না। আমরা সানন্দে মেসোমশায়কে তাঁহার অজ্ঞানতার অন্ধকার হইতে ঊদ্ধার করিলাম। তিনি আরও জানিতে চাহিলেন, "ব্রেজিল, আর্জেন্তিনা, পুযো়র্তো রিকো, ইকুয়াডোর, এই সব দেশের জন্যও কি তোমাদের নিজস্ব শব্দ আছে এই জাতীয়?"

তিনি মজা পাইতে শুরু করিয়াছেন, প্রৌঢে়র জীর্ণ অস্থি শুষ্কতাপ্রাপ্ত হয় নাই জানিয়া আমরা পুলকিত হইলাম। হরেশ বলিল, "ওদের আলাদা নামের দরকারটা কী, সব তো একই কাটিংয়ের থোবডা়, দেখে আবার বোঝা যায় না কি কোনটা মাকু কোনটা পোর্টোরিকোর?"

মেসোমশায় বুঝিলেন কি না ঈশ্বর জানেন, তবে তিনি আরও জিজ্ঞাসিলেন, "তাহলে তোমরা অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকানদের কী বলো? এন-ওয়ার্ড তো বাতিল হয়ে গেছে, ভারি মুশকিল তো তাহলে!"

নরেশ উত্তেজিত হইযা় বলিল, "আমরা সেই ভুল করি না, বেআইনি কাজে আমরা নেই। আগে তো কাল্লু বলতাম, সেইটা নাকি ওরা আজকাল ধরে ফেলে। একেকটার যা দৈত্যের মতো চেহারা, ধোলাই দিলে তো বাঁচবো না। তাই আমরা নতুন নাম বানিয়ে নিয়েছি, জামুন। এইটা ওরা এখনো ধরতে পারে নি।" নরেশের হাস্য দেখিয়া আমরাও না হাসিয়া পারিলাম না। নিজের নাম করিয়া না বলিলেও আমরা জানি, উহাকে একবার হেনস্থা হইতে হইয়াছিল ইহাদের হস্তে, তদ্যবধি সে সমগ্র কৃষ্ণাঙ্গ জাতির উপরেই ক্ষুব্ধ। আমরা অবশ্য উহাকে উপহাস করি নাই, যতই হউক বন্ধু মানুষ। ইত্যবসরে রমাদিদি কুক্কুটমাংসের শূলপক্ক ও উখ্য লইযা় আসিলেন, আমরা ঝাঁপাইয়া পড়িলাম। দেশে থাকিতে আমাদিগের মাতাঠাকুরাণিরা আমাদিগকে পাকশালায় প্রবেশ করিতে দিতেন না, এই কলা তাই অধরাই রহিয়া গিয়াছে। তদুপরি রন্ধন নারীর কর্ম, আমার পূর্ববঙ্গজ পিতামহ রন্ধনপটু পুরুষদিগকে "মাইগ্যালোচন" বলিয়া অভিহিত করিতেন। রমাদিদি না থাকিলে আমাদিগকে আরও ঘনঘন ওকবৃক্ষসরণীস্থ খাদ্যবিপণীগুলিতে যাইতে হইত। যাইতে বাধা নাই, উহা আমাদিগের বাসস্থান হইতে অদূরেই। তবে তাহা হইলে যে পরিমাণ ডলার সঞ্চয় করিতে সমর্থ হইতেছি তাহা অসম্ভব হইয়া পড়িত, অতএব আমরা রমাদিদিকে কদাপি বাধাপ্রদান করি না।

কুক্কুটমাংস চর্ব্বন করিতে করিতে আবেশে নরেশের চক্ষু মুদিত হইয়া আসিয়াছিল, তথাপি ভদ্রতার দাবি উপেক্ষা করিতে না পারিয়া বাক্যালাপ চালাইবার উদ্দেশেই সে বলিল, "তা মেসেমশাই তো মনে হয় প্রথমবার এলেন, কেমন লাগছে অ্যামেরিকা?"

ভদ্রলোক বলিলেন, "ভালোই লাগছে, অনেক কিছু বদলেছে, আবার দেখছি অনেক কিছুই এক্কেবারে বদলায় নি। আর না, প্রথমবার নয় আমার, আগেও এসেছি।"

আমি কদাপি শুনি নাই রমাদিদির পিতামাতা তাঁহার কাছে আসিয়াছেন বলিয়া, তাই বিস্মিত হইয়া জানিতে চাহিলাম বৃত্তান্ত। তিনি বলিলেন যৌবনে তিনি অধ্যাপনা করিতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালযে় আসিয়াছিলেন ও তিন বর্ষকাল বসবাসও করিয়াছিলেন। তবে তাহা প্রাচীন যুগের আখ্যান, তিনি স্বীকার করিতে বাধ্য হইলেন আমরা যেরূপ জানি এই দেশের কর্মকাণ্ড, তাঁর জ্ঞান সেই তুলনায় নিতান্তই অকিঞ্চিতকর।

অতঃপর তিনি আমরা তাঁহার কন্যার যেইরূপ যত্নাদি করি তাহার প্রশংসা করিলেন। হরেশ বলিল, "রমাদি আমাদের নিজের দিদির মতোই, আমরা তো দেখবই। একটা অবলা মেয়ে বিদেশে পড়ে আছে, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না?" একদা আরেক বাঙ্গালী ভগিনি পাকিস্তানীয় এক মুসলমানকে বিবাহ করিলে আমরা তাহাকে সদলবলে পরিত্যাগ করিযা়ছিলাম বলিয়া দুর্জনে কুৎসা করিলেও আমরা জানি, রমাদিদির দায়িত্ব একান্ত আমাদিগেরই। একাকী রমণী ম্লেচ্ছদেশে নিজের রক্ষা করিবে কী করিয়া? সেই কারণেই আমরা ভ্রমণে যাইতে হইলে তাঁহার সঙ্গ লইয়া থাকি, দূরভ্রমণে আমাদিগের প্রাচীন শকটগুলি নির্ভরযোগ্য নহে, অকারণ মাইলের হিসাবও বাড়িয়া যায়, বিক্রয়কালে তাহাতে প্রভূত ক্ষতির সম্ভাবনা, তদুপরি রমাদিদির বৃহৎ এসইউভিতে সকলের স্থানসঙ্কুলান হইয়া যায়, ফলে এর অন্যথা হইতে দেওয়া যায় না। কনিষ্ঠ ভ্রাতাদিগের সাহচর্যে রমাদিদি আনন্দিত হইয়া থাকেন তাহা আমরা মনে জানি। একজন হিন্দুস্থানি খোট্টা যুবক একদা রমাদিদির বিষয়ে আগ্রহী হইয়াছিল, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাহা ফলপ্রসূ হইতে পারে নাই, মনে ব্যথা পাইবেন জানিয়া আমরা সেই বৃত্তান্ত দিদিকে জানাই নাই। স্বীয় ভ্রাতাও করিবে এদৃশ কর্ম্ম? আমাদের বক্ষ গর্ব্বে স্ফীত হয়।

মেসোমশায় এক্ষণে রমাদিদির নিকট হইতে জানিতে চাহিলেন সমীরের বিষয়ে। নাম শুনিয়া বুঝা কঠিন যে এই যুবকটি মুসলমান, তবে আমরা জানিতাম তাহার সহিত রমাদিদির পূর্ব্ব হইতেই পারিবারিক পরিচয় ছিল। সমীরের মাতা আসিলে তিনি দিদিকে আমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। মুসলমানেরা রন্ধনপটু, এই একটিমাত্র কর্ম্মই তাহারা ভালো করিয়া শিখিয়াছে। আমরা আধুনিকমনা, গুণের কদর করিতে জানি, জাতপাতের সংকীর্ণতার ঊর্দ্ধে, অতএব উহাদের গৃহে আহার করা লইয়া কোনো দ্বিধা ছিল না। কিন্তু সমীর আমাদিগকে না আমন্ত্রণ করায় আমাদিগের মুক্তমনের পরিচয় হইতে তাহারা বঞ্চিত হয়। তাহাদেরই ক্ষতি, আমাদিগের কী আসিয়া যায়! সমীরকে আমরা আগে যে ডাকিতাম না তাহা ধর্ম্মের কারণে তো নহে, সে বঙ্গভাষাভাষী নহে বলিয়া আমাদিগের সহিত থাকিলে সে আশা করে আমরা হিন্দি অথবা ইংরাজিতে কথা বলিব। মূর্খ জানে না বাঙ্গালী তাহার ভাষা লইয়া যে রূপ গর্ব্বিত তাহাতে সেই দুষ্কর্ম আমাদিগের দ্বারা হইবে না। হিন্দি কদর্য একটি ভাষা, মাধুর্য্যের লেশমাত্র নাই অতএব উহা আমরা স্বচ্ছন্দে বলিবার জন্য প্রচেষ্টাও করি নাই। ইংরাজি আমাদিগের স্বাভাবিক ভাষা, বাঙ্গলা না বলিতে পারিলে উহাতেই আমরা বাক্যালাপ করি। কিন্তু হিন্দিনিন্দা শুনিয়া সে আমাদিগের ইঙ্গ উচ্চারণবিধি লইয়া কটাক্ষ করে, এবং কী রূপ স্পর্ধা, বিদ্রুপ করে যে অন্য ভাষায় ঐ দুর্ব্বলতাই আমাদিগের মাতৃভাষার প্রতি আসক্তির মূল কারণ! আমরা পঞ্জাবদেশীয় হইলে আমাদিগের হস্তে তাহার উত্তমমধ্যম অবধারিত ছিল, সুভব্য বাঙ্গালী বলিযা়ই আমরা তাহাকে প্রহার করি নাই, শুধু দূর করিয়া দিয়াছি। শুনিয়াছি সে বর্ত্তমানে শ্বেতাঙ্গদিগের সহিত উঠাবসা করে। তাহারা এই অর্ব্বাচীনকে প্রশ্রয় দেয় কী রূপে জানা নাই। তবে এই সকল ইতিহাস বৃদ্ধ জানিতেন না বলিয়াই মনে হইল, রমাদিদি সংক্ষেপে জানাইয়া তাঁহার কৌতূহল নিরশন করিলেন। তিনি বুদ্ধিমতী, প্রসঙ্গান্তর করিলেন অচিরাৎ।

হরেশ ইত্যবসরে টিভি চালাইয়াছিল। তাহার উদ্দেশ্য ছিল জিটিভি চালাইয়া জনপ্রিয় ধারাবাহিকের অগ্রগতি জানিয়া লওয়া, যাহাতে গভীর রাত্রে তাহার দেশস্থিত ভাবীবধূর সহিত দৈনিক বাক্যালাপে আলোচনার সুবিধা হয়। তবে চ্যানেল বদলাইতে বদলাইতে সমাচার চ্যানেল আসিয়া পডি়ল, ফক্স চ্যানেলে অষ্টম প্রস্তাব লইযা় কথা হইতেছিল। রমাদিদি আগ্রহী হইলেন, তবে সিএনএন আনিতে অনুরোধ করিলেন। তিনি আমেরিকার রাজনীতিতে আগ্রহী, রিপাবলিক গোষ্ঠির প্রতি তাঁহার অশেষ বিরক্তি, তিনি ফক্স দেখিবেন না আশ্চর্য্য নহে। সিএনএন-এও একই বিষয় দেখাইতেছিল। মার্কিন দেশের সকল কিছুই ভালো নহে, ইহা তাহার আরেকটি নিদর্শন। দুইটি পুরুষ একত্রে আপিস করিবে, সন্ধ্যাকালে মদ্যপান করিবে, শরীরে কুলাইলে সপ্তাহান্তে চর্মগোলক লইয়া পেটাপেটি করিবে, তাহা বলিয়া কি তাহাদিগের বিবাহও করিতে হইবে? ইহা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অতিস্বাধীনতার কুফল, বিকৃত কামনার এই প্রকাশ দেখিয়া বিবমিষা জাগে। মেসোমশাই দেখিলাম ওষ্ঠে মৃদুহাস্য লইয়া অনুষ্ঠান দেখিতেছেন, বুঝিলাম এই ইতরগোষ্ঠির প্রতি রমাদিদির অকারণ সহানুভূতি বংশগত নহে, আমেরিকা আসিবার কুফল। শাস্ত্রে যে বলিয়াছে পথি নারী বিবর্জিতা, তাহা অকারণে নহে। বৃদ্ধটিকে আমার ভালো লাগিয়াছিল, মনে হইতেছিল তিনি আমাদিগের ন্যায় সনাতন সংস্কৃতির মূল্য জানেন। ফলে তিনি যখন জানিতে চাহিলেন আমাদিগের এই বিষয়ে কী মতামত, তখন সানন্দে বলিলাম, "আমি পশ্চিমাদের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি সব কিছুর পায়ে কুড়াল মারতে রাজি নই।"

তিনি কৌতূহলী হইলেন, "কী রকম?"

আমি বলিলাম, "বিয়ে একটা পবিত্র জিনিস, এরা নিজেদের নোংরামো এখানেও ছড়াতে চায়। নিজের বেডরুমে যা করছিস কর না, মর গিয়ে এইডস হয়ে, বিয়ে নিয়ে টানাটানি করার দরকার কী তোদের?"

তিনি বোধ হয় বিস্মিত হইলেন কিঞ্চিৎ, "এইডস ওদেরই হয় বুঝি?"

অট্টহাস্য করিয়া বীরেশ কহিল, "শুনেছেন না কি, হোমো ছাড়া আর কারুর এইডস হতে?"

আমতা আমতা করিয়া বলিলেন তিনি, "হ্যাঁ শুনলাম যেন আফ্রিকায় খুব ছড়িয়েছে এই রোগ, তারা তো এই রকম নয়?"

এমন কথা নস্যাৎ করিতে বীরেশের এক মুহূর্ত্তও লাগিল না, "আরে ওই কেলে বাঁদরের জাতের কথা রাখুন, ওগুলো এইডস না হলেই কি বাঁচবে, না খেয়ে তো হরবখত মরছে এমনিতেই!"

নরেশও উত্তেজিত, "আর তোরা বিয়ে করে করবিটা কী? বাচ্চা পয়দা করতে তো আর পারবি না?"

রমাদিদিও দেখিলাম আলোচনায় নীরব থাকিতে চান না, "তাহলে যাদের বাচ্চা হয় না তাদের বিয়ে করার দরকার নেই?" বুঝিলাম বাঁজা নারীদিগের কথা ভাবিয়া তাঁহার কোমলহৃদয় কাঁদিয়াছে, তাই রাগ করিলাম না। অবশ্য নারীদিগের সহিত আমি তর্ক করি না, উহারা অল্পে আবেগাভিভূত হইয়া পড়ে, ঈশ্বর যাহাদের মারিয়া রাখিয়াছেন তাহাদের উপর রুষ্ট হওয়া শিক্ষিত পুরুষের পক্ষে শোভন নহে। তবে তাঁহাকে থামাইলেই উচিত কর্ম্ম হইত তাহা বুঝিলাম যখন তিনি আরও বলিলেন, "দুটো মানুষ একে অন্যকে ভালোবাসে, তারা বিয়ে করলে কার কী?"

আমি ভুলের পুনরাবৃত্তি হইতে দিলাম না, "ভালোবাসার দোহাই একটা সস্তা অজুহাত, আর সেক্স ছাড়াও মানুষ বাঁচতে পারে।"

নারীবুদ্ধি ভয়ঙ্করী, অতএব এমন সুযুক্তিতে তিনি মানিলেন না। বলিলেন, "তাই বুঝি? তা তোমার দাদা যখন সাদা মেয়ে ভালোবেসে বাপমায়ের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করলো, তখন এ কথা তাকে বললে না কেন? তাকে সেলিবেসি প্র্যাকটিস করতে বলতে পারলে না?"

আমার পরিবার লইয়া কথা বলার দুঃসাহস এই রমণীর কী রূপে হইল ভাবিয়া উত্তেজনায় আমার নাসারন্ধ্র স্ফীত হইয়া গিয়াছিল, হস্তের কুক্কুটমাংসখণ্ডটি রাখিয়া আরও বুঝাইতে যাইতেছিলাম, মেসোমশায় বাধা দিলেন। বাকিরা মজা দেখিতেছিল, আমোদে এইরূপ বাধা তাহাদের মনঃপূত হইল কি না বলিতে পারি না।

ইহার পরে আর আড্ডা জমিল না। পিতা সৌজন্য বিনিময় করিযা় বিদায় লহিলেন, কন্যা গোঁ ধরিয়া সঙ্গে চলিল। হরেশ উহাদের সহিত দ্বার অবধি গেল। আমি ক্রোধে ফুঁসিতেছিলাম। আড্ডায় মতের আদানপ্রদান হইবে, ইহার অর্থ এমৎ নহে যে মূর্খ রমণীর বুদ্ধিহীনতাকে প্রশ্রয় দিতে হইবে অথবা এই সব ইতরতার সমর্থন করিতে হইবে। নরেশ অবশ্য স্থিতধী, সে বলিল, "এতোটা না চটালেই পারতিস। খেপে গেলে তো আমাদেরই লোকসান।" যাহাই হউক, জ্যা-নিক্ষিপ্ত তীর ফিরিয়া আসে না, যাহা হইবার হইয়া গিয়াছে। ইহাকে শঙ্কিত হইবার কারণ আছে বলিয়া বোধ হইল না। বিচক্ষণ পিতা গৃহে ফিরিয়া কন্যাকে বুঝাইবেন অবশ্যই, তিনি এই সব মূর্খতা সমর্থন করিবেন না বলাই বাহুল্য। ঠিক তখনই হরেশ সকলকে ইশারায় ডাকিল দ্বারপ্রান্ত হইতে। উহাদের বিদায় জানাইয়া দ্বার রুদ্ধ করিতে গিয়া সে পিতাপুত্রীর আলোচনা শুনিতে পায়, তাহার অংশ লইতে আমাদেরও আহ্বান করে। আমরাও দেখিলাম তাঁহারা দুইজন দরোজার বাহিরেই কথা বলিতেছেন, কান পাতিয়া শুনিলাম সব কথা।

না শুনিলেই মঙ্গল হইত।

"এরা তোর কাছের বন্ধুবান্ধব? এই অশিক্ষিত ছেলেগুলো?"

"কী করবো, বেশির ভাগই এরকম। মা বলেছিলো বিদেশে দেশের লোকের সাথে ভাব রাখতে, বিপদে আপদে দরকার হয়, ফেলতে পারি নি সে কথা। তাই সহ্য করি এদের।"

"আর করতে হবে না। মায়ের হয়ে আমি বলছি, দেশিবিদেশি বিচার না করে এদের দূর করে দে। এরা উপকার কদ্দুর করতো সে জানা আছে, আর করলেও সে জন্য এতো কষ্ট করতে হবে না। সত্যিকারের শিক্ষিত কি একজনও নেই যার সাথে দুদণ্ড কথা বলতে পারিস?"

"আছে, সে অন্য গ্রুপ। এদের তাদের সাথে বনে না, বুঝতেই পারছো।"

"তোর সাথেও বনবে না, বিশেষত তুই নাইজিরিয়ান ছেলে বিয়ে করবি জানতে পারলে। এ সব আপদ দূর করে দে।"

যে কৃষ্ণাঙ্গ সহকর্ম্মীকে দিদির গৃহে পূর্ব্বে দেখিয়াছি আমাদিগের বদন তাহার অপেক্ষায় অধিক ঘনকৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল। শেষ কুক্কুট চর্ব্বন করিতে করিতে হতশ্বাস আমরা হিসাব করিতে বসিলাম দিদির শকট না থাকায় আগামী ছুটির পরিকল্পিত ভ্রমণে ব্যয় কত বাড়িল।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অসামান্য!

আপনার গত পোস্ট পড়ে মনে হয়েছিলো বলি, আসুন মিলেঝিলে একটা 'দুই বাংলার স্টিরিওটাইপ সমগ্র' জাতীয় কিছু লিখে ফেলি। বাংলা না, পুরা ভারতবর্ষ ধরেই টান দিলেন আপনি। ভাগ্যিস আমার কথাটুকু বলে আপনার চিন্তার ক্ষেত্র সীমিত করে বসিনি!

মূলত পাঠক এর ছবি

ইশতি ভাই, অনেক ধন্যবাদ এমন প্রশংসার জন্য।

স্টিরিওটাইপ নিয়ে আমার তেমন সমস্যা নেই, ইনসেন্সিটিভিটি নিয়ে যেমন। আর স্টিরিওটাইপ নিয়ে লেখার দিন তো ফুরোয় নি, চিন্তা কী? হাসি

তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বাংলাদেশিদের তেমন চিনি না, সচলের বাইরে খুব অল্প কয়েক জনকেই জানি। তাদের নিয়ে যা জ্ঞান তাতে অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে সেই জাতীয় লেখা।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমরা যে যার চেনাদের নিয়েই লিখতে পারি। তাতে অথেনটিক হবে বেশি। কারও বেশি ক্ষেপে যাওয়ারও কারণ থাকবে না আর। স্টিরিওটাইপ বা ইনসেন্সিটিভিটির মতো সমস্যাগুলোকে সরাসরি অ্যাড্রেস করা উচিত। নয়তো এগুলোর প্রকোপ বাড়তেই থাকবে। ইস্যু ধরে ধরে লজ্জা না দিলে আমাদের মন খুলবে না। দেখা যাক, মাথায় থাকলো ভবিষ্যতে কখনও চেষ্টা করে দেখার জন্য।

মূলত পাঠক এর ছবি

আগে ভাবতাম কূপমণ্ডুকেরা এমন হয়, আজকাল দেখছি নানা দেশ দেখা প্রবাসী তথাকথিত মুক্তমনারাও মনের মুক্তি দিতে রাজি নন। তখন সন্দেহ হয়, কোনো লজ্জাতেই কাজ হবে কি?

তবে চেষ্টা ছাড়ছি না এতো সহজে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

অবশ্য নারীদিগের সহিত আমি তর্ক করিও না, উহারা অল্পে আবেগাভিভূত হইযা় পডে়, ঈশ্বর যাহাদের মারিযা় রাখিযা়ছেন তাহাদের উপর রুষ্ট হওযা় শিক্ষিত পুরুষের পক্ষে শোভন নহে।

আমার বরাবরই সন্দেহ হতো আপনার মাথায় বুদ্ধি আছে দেঁতো হাসি

আর, কাহিনী পড়িতে পড়িতে বেভুল হইয়া গিয়াছিলাম, সাঙ্গ হইবামাত্র খেয়াল করিলাম - গন্ডদেশে বেদনা অনুভব করিতেছি। কিঞ্চিৎ ধাতস্থ হইবার পর বুঝিলাম, ক্রমাগত 'খিক খিক' হাস্যধ্বনি আমারই মুখগহ্বর নিঃসৃত! লাগাতার এক্সারসাইজ করিয়া কপোলযুগল ক্লান্ত!

আর, গালব্যথা শুধু হেসেই না, ভার্চুয়াল একটা চপেটাঘাতের কারণেও ......

সেটার হয়তো দরকার ছিলো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

যাক তাও এ বাবদ কিছু ব্যায়াম হলো, মন্দ কী? হাসি

তবে চপেটাঘাতের প্রয়োজন আপনার নেই, যতটুকু জানি তাতে বলছি, আপনি হলেন মাইনরিটির মাতঙ্গিনী, সংখ্যালঘুর লক্ষ্মীবাঈ। পেলেন তো বিশ লক্ষ তারা, এক বছরে একআধখানা লিখে? হাসি

আগে লিখতে ভুলেছিলাম, এইখানে উল্লেখ করি কৃতজ্ঞতা, এ লেখার আপনার দেওয়া শিরোনাম বাবদ।

ফকির লালন এর ছবি

পাঠ করিয়া যার পর নাই আমোদিত হইলাম। লেখকের রসবোধ বড়ই প্রবল, অন্যকেও আক্রান্ত না করিয়া ছাড়েনা। খাসা।

মূলত পাঠক এর ছবি

আম্মো আহ্লাদিত হইলাম আপনার আমোদের খবর পাইয়া। হাসি

হিমু এর ছবি

গল্প চমৎকার, কিন্তু নোকতাগুলি ভুল বগিতে বসায় পীড়া দিয়েছে রীতিমতো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

মূলত পাঠক এর ছবি

এই সমস্যা পুরোনো, কিন্তু আশ্চর্য হলো সব উইন্ডোস মেশিনেও যে এমনটা হয় তা নয়।

এতো কষ্ট করেও পড়েছেন এবং ভালো লেগেছে জেনে অনেক ধন্যবাদ দিই।

হিমু এর ছবি

এমনটা তো আপনার আগের লেখাগুলিতে দেখিনি। লক্ষ্য করলাম, অন্তস্থ্য য় এর পর কোন আ-কার দিলেই বর্ণের চাকা অ্যাক্সল থেকে খুলে সামনে গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মন্তব্যে আবার এই ঝামেলা হচ্ছে না। তার মানে আপনি অন্য কোন টেক্সট প্রসেসিং সফটওয়্যারে লিখে এনে পেস্ট করেন। নাকি?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

মূলত পাঠক এর ছবি

ঠিকই ধরেছেন। টেক্সটএডিট নামে নোটপ্যাড মার্কা (তবে রিচ টেক্সট) একটা জিনিস আছে ম্যাকে। বেশি লম্বা লেখা হলে লিখতে লিখতে সচল থেকে তুলে তাতে সেইভ করি, শেষে সেখান থেকে পুরোটা তুলে এনে পোস্টাই। সেইটাই কালপ্রিট তাইলে। মন্তব্য সরাসরি এখানে লিখি বলে ঠিক থাকে।

ওয়ার্ডে সেইভ করলে বোধ হয় ভালো হবে, কমেন্টে পরীক্ষা করে দেখলাম। পরের বার তাই করবো।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

হিমু যেটা বলছেন, সেটার কথাই আমি আপনাকে পোস্টটা দেখার পর জানিয়েছিলাম। ভালোমতো এক্সপ্লেইন করি নি অবশ্য ......

মূলত পাঠক এর ছবি

এখন বুঝলাম। তবে তখন খুব আলসেমি লাগছিলো, এতোটা লিখে, বুঝলেও কী আর করতাম। হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জটিল হয়েছে!! নুকতা হওয়া লেখাগুলি অ-নুকতাতে বদলে নিতে পারেন। পড়তে আরাম হতো।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ। এডিট মোডে গিয়ে সব ধরে ধরে ঠিক করলাম। আশা করি এই বার অসুবিধা হবে না পড়তে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সচলায়তনে নুকতা কনভার্টার বিল্ট ইন আছে। টেকস্ট বক্সে লেখা সিলেক্ট করে "বদলাও" ক্লীক করুন। তারপর "nukta" কনভার্টার উল্লেখ করলেই কেল্লা ফতে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মজার বিষয় হল পোস্টটা কয়েকবার ট্রাই দিয়েও নোকতার কারণে এগুতে পারিনি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি ফন্ট 'লিখন' থেকে বদলে 'একুশে লোহিত' করে পড়তে পেরেছি।

মূলত পাঠক এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক, সব ঠিক করলাম, এবার চেষ্টা করে দেখুন পারলে। দুঃখিত অসুবিধার জন্য।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আরো মজার বিষয় হলো ক্রোমে নিলে সবই পড়া যাচ্ছে দেঁতো হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সচলায়তনে নুকতা কনভার্টার বিল্ট ইন আছে। টেকস্ট বক্সে লেখা সিলেক্ট করে "বদলাও" ক্লীক করুন। তারপর "nukta" কনভার্টার উল্লেখ করলেই কেল্লা ফতে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মূলত পাঠক এর ছবি

হায় হায় জানতাম না তো, সব যে ম্যানুয়ালি ঠিক করলাম। যাক, নেক্সট টাইম। হাসি

দময়ন্তী এর ছবি

দুরন্ত! সলিড হয়েছে৷

আমি সেই প্রথমবার হার্টফোর্ডে গিয়ে কিছু কিম্ভুত অভিজ্ঞতার পর আর বাঙালীদের সাথে মেশার কোন চেষ্টাই করিনা৷ তবে প্রবাসে এসে একটাই ফল হয়েছে৷ আগে ভাবতাম আমাদের আশেপাশেই ইনসেন্সিটিভ লোকজন গিজগিজ করছে, বাইরে গিয়ে দেখলাম যে ন্যা: তাবড় তাবড় ডিগ্রিওয়ালা, উচ্চপদস্থ, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা লোকজনও একই টাইপের চিড়িয়া৷ আজকাল সচেতনভাবেই বাঙালী য়্যাসোসিয়েশান জাতীয় জিনিষ এড়িয়ে চলি৷

আমিও অন্য একটা এডিটারে লিখে এখানে পেস্ট করি৷ আমার অক্ষরগুলো তো এমন বেগড়বাঁই করে না৷ আমার এডিটারটা ম্যাকে টেস্টেড কিনা জেনে নিয়ে আপনাকে পাঠিয়ে দেবো৷

-------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ দময়ন্তী।

আমি এই সব গোষ্ঠীর ঝামেলাতেই যাই নি, আমার বন্ধুগোষ্ঠী সাত জাতের মেশানো, যে দেশিরা সেই ডাইভার্সিটির পরীক্ষা পাশ করে তারা থেকে যায়।

এডিটরের ব্যাপারে ঠিক করলাম এবার থেকে ওয়ার্ডই ব্যবহার করবো। এতো জনের এতো অসুবিধার জন্য খুব খারাপ লাগছে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

আমি টাস্কি খাইলাম দাদা!...এত্ত জটিলস্য জটিল কূটিলস্য কূটিল লেখা বহুদিন পড়ি নাই।

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মূলত পাঠক এর ছবি

ঠিক বুঝলাম না তো ভাল্লাগ্লো না খারাপ, জটিল কুটিল শুনে আমিও টাস্কি খেলাম যে!

স্বপ্নহারা এর ছবি

মারাত্মক ভাল লেগেছে!...আগের মন্তব্য লেখা শেষ করার আগেই বন্ধুবান্ধব চলে আসায় মনের কথা খুলে বলতে পারিনি!!...খাইছে
আরও চাই এমন...আমি আপনার বিশাল ভক্তে পরিণত হলাম!
আমার নিজের মত, বাঙ্গালি মুক্তমনা পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য! আর কেউ কেউ এত চমৎকার মুখোশ পরে থাকে বোঝা দুষ্কর!

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন প্রশংসা, যারে কয় গদগদ সেই রকম হয়া গেলাম। তাই বলে ভক্তটক্ত বলে লজ্জা দেবেন না কি? হাসি

মুক্তমনা একটা অ্যাবসোলিউট স্টেট নয়, বরং একটা কন্টিনিউয়াস লড়াই। জ্ঞানের কথা বলছি না, পৃথিবী এখন এমন ভাবে হাতছানি দেয় যে শক্ত করে ধরে না থাকলে সে হাওয়ায় নীতিবোধ উড়িয়ে নিয়ে যায় অচিরেই। আগে তবু লোকে মুখোশের পরোয়া করতো, এখন তো খোলাখুলি মৌলবাদী কিংবা অসভ্য ধরণের রক্ষণশীল হতেও কারোর আটকায় না। এই লেখাটার ট্রিগার মানুষের এমনই কিছু নির্লজ্জ আচরণ, নইলে এতো লম্বা লেখা এক শটে আমার মতো অলস লোকের পক্ষে লেখা প্রায় অসম্ভব।

পথিক [অতিথি] এর ছবি

অনেকের মন্তব্য পড়ে মনে হলো এ এক কমন ব্যাপার। কিন্তু আমার অভিগ্যতা কেনো জানি ভিন্ন।

মূলত পাঠক এর ছবি

তেমনটি হলে তো কথাই ছিলো না, তবে মানুষ এই রকমই বেশি। নিজের মতো সব না হলেই ঘৃণা করতে আমরা একটুও দেরি করি না।

আপনি ভাগ্যবান যদি অন্যরকম দেখে থাকেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অবশেষে পড়িলাম। ভাল হয়েছে আপনার লেখা। কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম.. বুঝতে পারছিলাম না রমা কখন আপনাদের সাথে যোগ দিল।

মূলত পাঠক এর ছবি

ঐ তো, শূল্য আর উখ্য হাতে যোগ দিলো।

ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার! এত পরিচিত জিনিসগুলো এত রসালোভাবে লিখেছেন!

এটাকে তো ছোটগল্পই বলা যেত, যেত না?

আমি কিন্তু আপনার নোকতা-টোকতা সব ভালোমতই পড়তে পেরেছি আমার পিসিতে। আপনি ঠিকঠাক করার আগেও।

মূলত পাঠক এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।

ছোটো গল্প বলা যেতো, তবে বলার ইচ্ছে হয় নি যে তার কারণ এটা ফিকশন হয়েও ফিকশন নয়, এর চরিত্রেরা সবাই বাস্তব, টুকরো টুকরো ছড়িয়ে আছে আমাদের চেনা পরিচিতদের মধ্যেই। তাই একে ফিকশনের এলাকায় ঠেলে দিতে মন চাইলো না। সেই সব বাস্তবের লোকেরাও কেউ কেউ হয়তো পড়বে এই লেখা, তাদের কী করে বলি যে ওহে বাপধনেরা, তোমরা সব কাল্পনিক! তাদের জন্য তো এটা আয়নাই এক রকম।

ভুতুম এর ছবি

দুর্দান্ত লেখনী, একটানে পড়ে গেলাম। চমৎকার!

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, ভুতুম হাসি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনার লেখা বরাবরের মতোই দুর্দান্ত! এবারের ভাষাটি একেবারে মারকাটারী! বিশেষতঃ "আড্ডা প্রহার করি" জাতীয় এক্সপ্রেশন উপভোগ করেছি খুব। লেখাটির বিষয়বস্তুটিও খুবই বিতর্কিত এবং পুরনো। অনেক "উদারমনা" লোককেও আমি অবস্থান বদলাতে দেখেছি যখন ইস্যুটি তার নিজেকে এফেক্ট করছে। অনেকেই আছেন প্রেমভালবাসা পছন্দ করেন, কিন্তু নিজের ছেলেমেয়ের ব্যাপারে নয়। ভিন্নধর্মের ছেলে/মেয়ের মধ্যে বিয়েটাও তেমনি একটা জিনিস। এখানে একটি মজার জিনিসও আমি খেয়াল করেছি। সিনেমাতে যখন ভিন্নধর্মের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেখানো হয় তখন সব সময়ে ছেলেটিকে দেখানো হয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মানুলম্বী। কেন? আমার ভাই যদি অন্য ধর্মের (বা বর্ণের) মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সেটা মানলেও আমার বোন যদি অন্য ধর্মের (বা বর্ণের) ছেলেকে বিয়ে করতে চায়, তাহলেই সমস্যা। কেন? আমরা এখনো মেয়েদেরকে আমাদের সম্পৎি মনে করি, সে জন্যেই কি?
লেখা চলুক!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন প্রশংসার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

সম্পত্তির অ্যাঙ্গেলটা ছাড়াও সামাজিক রীতি একটা এখানে কাজ করে বোধ হয়। বিয়ের পর মেয়েরা যেহেতু ছেলেটির পরিবারভুক্ত হয়ে যায় তাই সেখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠেরই জয় হয়। কাজেই মেজরিটির ইগো তাতেও সন্তুষ্ট হলো। সবই সেই একই খেলা।

মামুন হক এর ছবি

মজার লেখা দাদা। মানুষ হয়ে জন্মানোর হ্যাপা অনেক। আবারও মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার ঝরঝরে সাধু লেখা দেখে আমারও সাধুতে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। বানানের ভয়ে নামছিনা।

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ।

মামুন হক এর ছবি

আর মূলোদা তুমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে কুপমন্ডুক , আরও কী কী যেন বাজে গালি দিলেও আমি কিন্তু এক বিন্দুও ক্ষেপিনি। কারণ আমি বুঝতে পারছি মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসাই তোমাকে এতটা উদার করেছে, আর আমিও মানুষকে ভালোবেসেই তাদের প্রতি কঠোর হচ্ছি, মানুষকে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা দিতে আমার বাধে, কারণ মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই তার উপযুক্ত না। আমাদের রাস্তা বা ফিলোজফি সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য কিন্তু একই--পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ্য, বসবাসের উপযোগী একটা সমাজ গড়ে দেয়া। তাই তুমি নামে বেনামে, সামনে-পেছনে আমাকে গালি দিতে থাকো, তাতে তোমার প্রতি সম্মানবোধ বা ভালোবাসা আমার একটুও কমবেনা। ভালো থেকো সব্যসাচী বন্ধু আমার- সব সময়।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার কয়েকটা ছোটো ভুল হচ্ছে। গালাগালের কথা যা বললেন তার একমাত্র লক্ষ্য আপনি নন, ঐ কর্মকান্ডের সকলের জন্যই আমার এই দৃষ্টিভঙ্গী, এ বিষয়ে কোনো পক্ষপাত দেখাই না। এবং নামে-বেনামে বা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই নেই, যদি গল্পাকারে দিয়ে থাকি সেটা পাঠযোগ্যতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।

আমেরিকায় থাকার সূত্রে প্রোপোজিশন এইট নিয়ে অনেক কথা শুনতে পাই সারাক্ষণই। তার উপর বাইবেল বেল্টে থাকার কারণে এমন অনেক লোকের সাথে আলাপও হয় যারা মনে করে যে তারা মানুষকে ভালোবেসেই মানুষের প্রতি কঠোর হয়। এটাকে অজ্ঞানতা মনে করতে পারলে সুবিধা হতো নিঃসন্দেহে, কারণ এরা সকলেই যে দূরগ্রহের মানুষ তা তো নয়। মুশকিল হলো ভারতের কোনো প্রবীন আমেরিকান কালো মানুষের দুঃখ না বুঝলে এই অজুহাত তবু চলে যে তিনি স্বচক্ষে কালো মানুষ বিশেষ দেখেন নি, এবং তাদের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতটাও ভালো করে জানেন না। কিন্তু যারা নানা দেশ ঘুরে, অনেক মানুষকে চিনেও এই সব মন্তব্য করেন তারা মানুষকে ভালোবেসে এ কাজ করেন এমন কথা বিশ্বাস করাটা অসম্ভব মনে হয়।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সমাজ গড়ার মতো মহান উদ্দেশ্য আমার নেই। আমার সাধ্য সীমিত, লক্ষ্যও সেই মাপেরই। আমার চাহিদা সামান্য, আমার চার পাশে যে সব হরেশ নরেশ পরেশরা আছে তারা যেন সামাজিক স্তরে অন্তত সেনসিটিভিটি দেখাতে পারে এটুকু হলেই আমি খুশি হই। তাদের মনোজগতে পরিবর্তন এলে আরও ভালো, তবে ততো আশা আমার নেই। এরা অনেকেই না জেনে অনেক কড়া মন্তব্য করে, তাদের বোঝালে বোঝে, এটা দেখেছি। কিন্তু যারা ধর্ম কি মানবতার স্বার্থেই মানুষকে গালাগাল করে, তাদের উন্নতির আশা আমি আদৌ রাখি না। হলে তো ভালোই, তবে আমার ক্ষমতার বাইরে।

মানুষ মানুষকে ঘৃণা অনেক সময় ভুল কারণে করে। আমি এমন প্রবীনদের কাউকে কাউকে চিনি যাঁরা দেশভাগের দাঙ্গায় ঘরবাড়ি কি পরিজন হারিয়েছেন। তাঁরা মুসলমানদের সবাইকে অপছন্দ করলে আমার কষ্ট হয় ওঁদের ভুলটা ধরিয়ে দিতে, তাঁদের যন্ত্রণার আন্দাজ করা আমার সাধ্য নয়। তবু চেষ্টা করে দেখেছি, এবং কী আশ্চর্য, কাজও অল্পস্বল্প হয়েছে। এঁরাও কেউ কেউ বুঝেছেন দাঙ্গাবাজের জাতধর্ম বলে কিছু হয় না। কিন্তু এর বিপরীত মেরুতে যারা রয়েছে তাদের মনোভাবটা আমার মাথায় ঢোকে না। আপনি সরাসরি কথায় উত্তর দিয়েছেন, চলুন আমিও তাই করি, এবং আপনি যে প্রসঙ্গে আপত্তি জানিয়েছেন তা নিয়েই কথা হোক। ভারতে যে সব গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীরা বলে, এই সব মুসলমানদের/খ্রিস্টানদের দূর করে দাও কিম্বা কনভার্ট করে দাও, আপনি তাদের থেকে আলাদা কিসে? নাঃ, ভুল হলো, আলাদা তো বটেই। এরা বদলাতে চাইছেন ধর্ম, তার গুরুত্ব অপরিসীম হলেও ধর্মান্তর তবু সম্ভব। আপনি বদলাতে চাইছেন মানুষের বেসিক চরিত্র, তার জেনেটিক কোড। বর্ণবিদ্বেষীরা অন্তত কালো মানুষদের মেলানিন ধরে টান দেন নি। আমার পরিচিত বাইবেলবাদীরা মনে করেন এরা পথভ্রষ্ট, কিন্তু আধুনিকমনস্ক মানবপ্রেমীরা আরেক কদম এগিয়ে গিয়েছেন। দু জন মানুষ ভালোবাসার খাতিরে এক হতে চাইলে সেটা সস্তা অজুহাত মনে হয়, আর সেক্স ছাড়াও তারা কেন বাঁচতে পারবে না এই প্রশ্নটাও ভীষণ স্বাভাবিক মনে হয় এই সমাজসংস্কারকদের। এতোটা চাহিদা হিটলারেরও ছিলো না ইহুদিদের কাছ থেকে। যাঁরা অসবর্ণ বিয়ে সমর্থন করেন না তাদের হয়ে লড়াই করবেন তো? ওঁরাও কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শুদ্ধ সমাজের স্বপ্ন দেখেই এমনটা করেন।

জানি এই বার শুনবো এই সব মানসিক বিকৃতি/সাময়িক অবস্থা/রোগ/ব্যাভিচার। বিজ্ঞানের কথায় আর যাবো না, বিজ্ঞানের কথা যদি মানুষ শুনতো তাহলে অভিজিত আর স্নিগ্ধা অনেক অনেক আগে যা লিখেছিলেন তার পরে এতো আলোচনার দরকারই থাকতো না। সম্প্রতি ৩৭৭ ধারার প্রসঙ্গে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, সেখান থেকেই উদ্ধৃত করছি, আমার নিজের কথা নয়, এই অংশটা সেখানেও অনুবাদ করেই জুড়েছিলাম।

যাঁরা "ওরিয়েন্টেশন" না বলে একে "চয়েস" বলেন বা "সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স", তাঁদের জন্য ঐ ব্লগটি থেকে একটি চিঠির অংশ তুলে দিলাম, পত্রলেখক অভি শাকিল সেখানে এই গণ্ডমূর্খ রক্ষণশীলদের চমৎকার বিদ্রুপ করে লিখছেন: আজ যদি সমকামিতাকে আইনতঃ আর অপরাধ বলে না মানা হয় তাহলে তো মহা সর্বনাশ, দেশসুদ্ধ সব্বাই তাহলে গে হয়ে যাবে না? হবেই তো, কারণ তাহলে সারা জীবন লোকের ব্যঙ্গবিদ্রুপের শিকার হওয়ার সৌভাগ্য হবে। কোন মানুষটা না চায় যে তার আত্মীয়পরিজন তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিক আর বন্ধুরা করে দিক পর? ভালোবাসবে কাকে আর জীবন কার সাথে কাটাবে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য মন্দির-মসজিদ-গীর্জা থেকে বিতাড়িত হবার এমন দুর্দান্ত সুযোগ ক'জন ছাড়তে পারবে? How can you not choose such a life?

আপনার উদ্দেশ্য মহৎ এ কথা যদি সত্যি হয় তাহলে আমার একটা অনুরোধ রইলো। কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে তাদের দু-একজনের সাথে কথা বলুন, বন্ধুত্ব করে দেখুন বিষয়টা আসলে কী। তখন হয়তো এই জিনিসটা বুঝতে পারবেন যে এটা ঠিক হিপি মুভমেন্টের মতো হুজুগ নয়। তারপর ধর্মগ্রন্থ নয়, বিজ্ঞানের কথাটা জেনে নিন। তাহলে এইটা বুঝবেন যে মনোবিদের চেম্বারে কিম্বা হরমোনাল ইঞ্জেকশানে এর পরিবর্তনের সমাধান নেই। এ সব করতে সময় লাগবে ঠিকই, কিন্তু তাতে অসুবিধা কী, ফেসবুক তো পালাচ্ছে না কোথাও, সেখানে না হয় ক'দিন পরেই লিখলেন আপনার মতটা।

আপনিও ভালো থাকুন।

মামুন হক এর ছবি

আপনি বদলাতে চাইছেন মানুষের বেসিক চরিত্র, তার জেনেটিক কোড।

--তুমি এই কথাটা কোথায় পেলে দাদা? আমি কী কোথাও ঘুনাক্ষরেও এই জাতীয় কিছু বলেছি?
আমি ফেসবুকে গে ম্যারাজের বিপক্ষে ভোট দিয়েছি, তাতেই তুমি এত কিছু বুঝে নিলে?
তুমি কী এই পোস্টটা দেয়ার আগে আমার সাথে এক বারের জন্যও আলাপ করে বুঝে নেয়ার চেষ্টা করেছিলে আমার দৃষ্টিভঙ্গী? আমাকে স্টিরিওটাইপড বা কুপমন্ডুক বলার মতো উপসংহারে পৌছানোর আগে আমার সাথে দু'দন্ড কথা বলে নেয়ার ধৈর্য দেখালে বোধ হয় আরেকটু শোভন হতো।
ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সমাজ গড়ার মতো মহান উদ্দেশ্য আমার নেই।

--তাহলে বিয়ের মতো সমাজ এবং পারিবারিক গাঁথুনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে এই বালখিল্য খেলাধূলা কেন? পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু রেখে যেতে না পারলে অন্তত খারাপ কিছুকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত না- এটা কী বিজ্ঞান তোমাদের শিখায় না?
কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে তাদের দু-একজনের সাথে কথা বলুন, বন্ধুত্ব করে দেখুন বিষয়টা আসলে কী।

- তুমি তো দেখছি দাদা আমার বিষয়ে সব জেনে বসে আছো? ঠিক কতো জন গে বন্ধুর সাথে ওঠাবসা করলে আধুনিক হওয়া যায় বলো দেখি? কী করে বুঝলে আমি কারো সাথে কথা বলিনি বা তাদের অনুভূতি,অবস্থান বোঝার চেষ্টা করিনি? আমার অন্তত গোটা দশেক বন্ধু-পরিচিত জন আছে যারা সমকামী, নিয়মিত তাদের সাথে দেখা হয়, আড্ডাও হয়। আমার বাড়ীতে পার্টি হলে তারাও আমন্ত্রিত হন, ধর্ম বা যৌনতার ভিত্তিতে আমি মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করিনা। আমি হোমফোবিক না, মনে হচ্ছে তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। তোমার জন্য আসলে খারাপই লাগছে, রিসিভার নষ্ট, সদিচ্ছা থাকলেও সমাজ, সংস্কৃতির উপরে সমকামী বিয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ধরতে পারছ না। লাভ ইজ ব্লাইন্ড...আসলেই।
যখন তালেবানরা আড়াই হাজার বছরের পুরোনো বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করল, সারা পৃথিবী তার প্রতিবাদ করেছে। আর এই অতি আধুনিক কালে সমকামী বিয়ের নামে আমাদের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য, পরিবার, সংস্কৃতির গোড়ায় আঘাত হানা হচ্ছে...তার প্রতিবাদ করতে গেলেই আমি ধর্মান্ধ হয়ে গেলাম? মৌলবাদিতা কী শুধু ধর্মের ব্যানারেই হয়?

তোমার কথা মতো আজ সমকামী বিয়ে বৈধ করে দিলে, কাল যে ইনসেস্ট বিয়ে বৈধ করার দাবী উঠবেনা তার কী কোন গ্যারান্টী দিতে পার? মা যদি তার ছেলের সাথে , ভাই বোনের সাথে বা বাবা মেয়ের সাথে ঘর সংসার করতে চায় সজ্ঞানে তখন তোমাদের মানবতা বোধ কী বলবে তাদের? বা পেডিফাইলরা তাদের অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নামলে তখন কী বলবে?

তুমি যদি বিষয়টার গভীরতা বুঝতে না পার তাহলে সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বী হলেই কী তাকে বিজ্ঞানের বড়ি গিলিয়ে গুলাবী বর্ণে রাঙিয়ে দিতে হবে?
হাসালে দাদা।

এত সরলীকরন ভালো না।

মূলত পাঠক এর ছবি

আমার বোঝার ভুল হয়ে থাকলে খুব ভালো হয়, কারণ যতটুকু জেনেছি তাতে আপনাকে সংকীর্ণমনা ভাবতে আমার নিজেরও ভালো লাগছে না। দুঃখপ্রকাশ করা তো সামান্য ব্যাপার, সেক্ষেত্রে নাকখত দিতেও আপত্তি নেই। ফেসবুকের ব্যাপারটা আপনার প্রোফাইলে দেখেছি বলেই আরো বেশি খারাপ লেগেছিলো, নইলে চরম গোঁড়া লোক তো দুবেলাই দেখি, তাদের কথায় এতো আহত বোধ করি না, বা তাদের বোঝানোর জন্য এতো কথা বলার ইচ্ছেও হয় না।

তবে আপনার মতামতটা জানার সত্যি খুব আগ্রহ হচ্ছে। লিখুন না এই নিয়ে, বিশদে একটা পোস্ট। এখানে যারা বিয়ে বা অন্তত ডোমেস্টিক পার্টনারশিপের পক্ষে বলে থাকে তারা নৈতিকতার বাইরেও কিছু সমস্যা মেটানোর জন্য এ কথা বলে থাকে (দরকার মনে হলে আমি কিছু পয়েন্ট যা আমার জানা তার কথা বলতে পারি), সে দিকটাও কাভার করবেন। এ কথা তুললাম লেখার আগেই, যাতে পরে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা / বিতর্কের সূত্রপাত না হয়। খোলা মনেই বলছি, আমি আলোচনার পক্ষেই।

রেসিস্টদের গালি দিতে আমার কোনো সমস্যা নেই, তবে আপনি যেহেতু তেমন নন, আপনাকে আঘাত দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে সন্দেহ দূরীভূত হয় নি এখনো, এই প্যারাটা পড়ে:

তোমার কথা মতো আজ সমকামী বিয়ে বৈধ করে দিলে, কাল যে ইনসেস্ট বিয়ে বৈধ করার দাবী উঠবেনা তার কী কোন গ্যারান্টী দিতে পার? মা যদি তার ছেলের সাথে , ভাই বোনের সাথে বা বাবা মেয়ের সাথে ঘর সংসার করতে চায় সজ্ঞানে তখন তোমাদের মানবতা বোধ কী বলবে তাদের? বা পেডিফাইলরা তাদের অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নামলে তখন কী বলবে?

এই সবগুলো যে এক জাতের জিনিস নয় সেটা কি বোঝাতে হবে? ইনসেস্টের নৈতিক দিকে না গেলেও খারাপ দিক থাকে, জেনেটিক হিসাবে। তার সাথে প্রোপোজিশন এইটের দাবি এক হলো? আর পেডোফাইলের কথা এনে তো আবার গোড়াতেই এনে দিলেন সবটা। এর চেয়ে খোলাখুলি একে বিকৃতি বললেই হতো!

মামুন হক এর ছবি

এগুলা যে এক জাতের জিনিষ নয় সেটা তো তুমি আমি সবাই জানি। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকড় খুঁজে নিতে খলের ছলের অভাব হয়না।

এই ব্যাপারটা নিয়ে তুমি আমি মিলেই লিখতে পারতাম। তুমি দাদা আপন মানুষ হয়েও দুম করে আমার ফেসবুক কমেন্ট পাব্লিকলি পোস্ট করে দিলে। কিন্তু তোমার কাছে এত কিছু শিখেছি বা তোমার লেখা এতটা আনন্দ দিয়েছে যে তোমার সাত খুন মাফ করে দিতেও আমার বাঁধবেনা, এটা কোন ব্যাপারই না।

আমি সমকামীদের কখনই তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বোধ-বিশ্বাস, চাল চলন নিয়ে কটাক্ষ করিনা, কারো সাথে কোন দিন খারাপ আচরণ করেছি সেটা আমার চরম শত্রুও বলবেনা। মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতেই হবে, মত-বিশ্বাস-জীবনাচরনে ভিন্নতা থাকলেও। হোমোফোবিয়া অমানবিক, কিন্তু জীবন বিধানের সমালোচনা নয়। সমকামীতার প্রাতিষ্ঠানিক স্বিকৃতির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-আলোচনা চলতেই পারে, চলাটা উচিত বলেও মনে করি ।

আমার কথায় কোন আঘাত পেয়ে থাকলে আমিও ক্ষমা প্রার্থী।

বিশদ লেখা দেবার ইচ্ছা আছে, আলাপ করব তোমার সাথে ।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

তোরা লাগাইলি কী রে মামা!
তোদের একইসাথে তর্কবিতর্ক আর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান-অভিমান প্রদর্শনের বহর দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো গে-পরিবারের ভেতরে মান-অভিমান পালা দেখছি! হো হো হো
দুজনেই প্রিয় মানুষ আমার, প্লিজ, জি-টকের অন্দরমহলে নিজেরা কথা বলে সব মিটিয়ে নে!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দেরীতে পড়লাম... ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, নজরুল ইসলাম।

সবজান্তা এর ছবি

হোমোসেক্সুয়ালিটি সমন্ধে আমার যৎকিঞ্চিত পড়াশোনা যা আছে ( তার মধ্যে অভিজিত দা'র চমৎকার একটা লেখা), তাতে আমার মনে হয় না, মামুন ভাই যেভাবে ভাবছেন সেভাবে ভাবার অবকাশ আছে।

প্রথমত কোন কিছুর স্ট্যান্ডার্ড সেট অভ রুলস কিংবা নর্ম জিনিসটা আসলে কী, তা নিয়েই আমার একটু সন্দেহ আছে। রিপ্রোডাকশনের মাধ্যমে আমরা বংশগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো এ কথা যেমনি সত্য, তেমনি কিছু মানুষ তাঁদের জেনেটিক কোডিং এর কারণেই সম লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে এটাও সত্যি, এটাও কিন্তু এক ধরনের স্বীকৃত বায়োলজিকাল নর্ম। শুধু মানুষই কেন, সৃষ্টির শুরু থেকেই যে প্রাণিজগতের মধ্যে সমকামিতা বিদ্যমান ছিলো বিজ্ঞানীরা তা'ও প্রমাণ করেছেন। কাজেই এ কনসেপ্ট যে পাশ্চাত্য থেকে চাপিয়ে দেওয়া নতুন কোন ধারণা, তেমন নয়। সমকামিতা আমাদের দেশে বহুকাল ধরেই আছে, বরং সাম্প্রতিককালের এই গ্লোবালাইজেশনের স্রোতে পড়ে সমকামীরা অনেকটা ভোকাল হয়েছেন। আমি মনে করি সমকামিতাকে স্বীকৃতি দেওয়াটাই চূড়ান্ত রকমে মানবিক এবং যথার্থ সিদ্ধান্ত।

আরেকটা কথা, সমকামী বিবাহকে উন্মুক্ত করে দিলে ক্ষতি কিংবা আশংকাটা ঠিক কোথায়, তাও আমি বুঝতে পারি নি। যে সমকামী সে তাই থাকবে, যে বিষমকামী সে তাই থাকবে। একটা জিনিস আমাদের খেয়াল রাখা দরকার যে আমাদের অস্তিত্ব কিংবা বিবর্তন যাই বলি না কেন, তা কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালেই হয়ে যাচ্ছে। জোর করে কারো ওরিয়েন্টেশন চেঞ্জ করে বংশগতি রক্ষা করা যাবে বলে আমার মনে হয় না, কিংবা সমকামী বিবাহ উন্মুক্ত করে দিলেই যে লোকজন দলে দলে "গে" হবে ব্যাপারটা তাও না। যে বিষমকামী তাঁর জন্য সমকামী হওয়াটা যেমন লুক্রেটিভ কিছু না, তেমনি যে সমকামী তাঁকে জোর করে বিষমকামী জীবন যাপনে বাধ্য করাটাও চূড়ান্ত রকমের অমানবিক।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, সমকামী কিংবা বিষমকামী যাই বলি না, এটা স্রেফ একটা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন। সমকামীরা কোন ফ্যান্টাসিবাজ লোক না, কিংবা অপরাধী না। একজন বিষমকামীর যেমন বিয়ের অধিকার আছে, তেমনি একজন সমকামীরও থাকা উচিত। কারণ শেষ বিচারে, দুইজনই মানুষ, আর দুইজনেরই সম অধিকার প্রাপ্য।

সবাই ভালো থাকবেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে আশ্বাস পেলাম, কম বয়সেও সেনসিটিভ হওয়া যায় এটা দেখে। মামুন হক ঠিক এই লাইনে বলেন নি কথা, তাঁর মন্তব্যে সেই রকমই লাগলো। তবে তাঁর লেখার অপেক্ষায় আছি, আশা করছি তিনি খুলে বলবেন এবং সব কনফিউশন দূর হবে। অবশ্য নতুন তর্কও শুরু হবে দেখতেই পাচ্ছি, তবে স্বাস্থ্যকর আলোচনা ও তর্কবিতর্ক ভালো জিনিস, তাতে সচলদের অরুচি নেই।

সবুজ বাঘ এর ছবি

পুটকি মারামারিরে সাফুট করা যুদি উচ্চ শিক্কার বাহন হয়, তাইলে তো গুয়ামারা, দাদা পাঁটা!
গুয়া মারামারির সংস্কৃতি ভালোবাসা প্রফেসর আর তার মাইয়ার ঘরের বাইরে যাইয়া কতা বলার সংস্কৃতি ভালা লাগলো না। তয় ফাইন লাগছে, টিপিক্যাল হেন্দু বাঙালি পুলাগো অন্যের পোদে আঙ্গুল রাইখা ঝালমুড়ি খাউয়ার চ্যারেক্টার।

তবে বলতেই হবে গফটা ভালা হইছে। সুমাজের ভালামন্দ বিছার তাই অবান্তর।

সবজান্তা এর ছবি

শাপলু ভাই...

একটা জিনিস মনে হয় বুঝতে ভুল হইতেসে। উচ্চ শিক্ষার সাথে কিন্তু "গুয়া মারামারি সাফুট"- এর সম্পর্ক নাই। কে কার লগে শুইবো বা কী করবো, সেইটা তার ভিতরে জন্মের সময় থিকাই লেইখা রাখা আসে। এইখানে পড়াশোনার ব্যাপার নাই। মানুষরে এইটুকু স্বাধীনতা দেওয়ার কথা যদি আপনি স্বীকার না করেন, তাইলে ক্যামনে কী ?


অলমিতি বিস্তারেণ

সবুজ বাঘ এর ছবি

আইচ্চা যা, সব মাইন্যা নিলাম। কিন্তু [...] ব্যাফারডা কীভাবে মাইনা নিবার কস?

স্নিগ্ধা এর ছবি

কিন্তু [...] ব্যাফারডা কীভাবে মাইনা নিবার কস?

এটা কি 'সবুজ বাঘীয় হিউমার'? নাকি সমকামিদের সেক্সুয়াল প্র্যাকটিসকে আপনি এভাবে দেখেন?

সবজান্তা এর ছবি

ভাই কথাটা ভালো লাগলো না। কথাটা তুইলা নেওয়া যায় কিনা একটু ভাইবা দেইখেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

বেগুনী-মডু এর ছবি

অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই মন্তব্যটির আপত্তিকর অংশ সরিয়ে দেওয়া হল। ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য না করার অনুরোধ রইলো।

মূলত পাঠক এর ছবি

সবুজ বাঘের ১৮। নম্বর মন্তব্যের উত্তরে বলি:
গল্পটা ভালো লেগেছে সেটা আমার পক্ষে আনন্দের বিষয়। এটা অবশ্য নেহাত গল্প হিসেবে লিখি নি, সেজন্যই এই ভালোত্ব যদি "ভালামন্দ বিছার"কে "অবান্তর" করে দেয় তো এ জাতীয় লেখা খারাপ করেই লেখা উচিত ছিলো। এছাড়াও সখেদে জানাই, এ লেখার মূল বক্তব্যটাই ধরতে পারেন নি। দাঙ্গাবাজদের মতোই, সুবিধাবাদীরও জাতধর্ম হয় না। পরিবার ও দেশীয় সংস্কৃতির প্রভাব কিছুটা থাকে ঠিকই, কিন্তু সেটাই সব হলে এক পরিবারের সব্বাই এক রকমের ভালো হতো। কাজেই "টিপিক্যাল হেন্দু বাঙালি পুলাগো অন্যের পোদে আঙ্গুল রাইখা ঝালমুড়ি খাউয়ার চ্যারেক্টার"টা মুসলমান বা খ্রিস্টানদেরও থাকবে, মাইনরিটি হলে তারা সমঝে চলবে ঠিক যেই রকম হিন্দুরাও চলে যেখানে তারা সংখ্যালঘু।

প্রাকৃতভাষায় কথোপকথন করলে সেটা লোকসাহিত্যের মতো অনেক সরাসরি কথা বলতে পারে, এইটা একটা লাভ। এবং তাতে যথাস্থানে আঘাত দেওয়াটা সহজ হয়। কিন্তু আঘাত যদি স্রেফ আঘাত করার জন্যই হয় তাহলে কি সেটা সমর্থন করা যায়? এতে করে কিছু লোক হাসাহাসির খোরাক পায়, কিন্তু অনেকে আহতও হতে পারেন। স্ট্যান্ড-আপ কমেডিতে সেটা হয়তো চলতে পারে, কিন্তু এই জাতীয় আলোচনাতে সেটা অপ্রাসঙ্গিক ও বেমানান হয় না কি?

মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হলে কি লোকসাহিত্যের জাত যায়?

মূলত পাঠক এর ছবি

ডাইভার্সিটিকে মানতে পারা না-পারা নিয়ে দেখলাম দাড়িবুড়ো লিখে গেছেন এই দু লাইন, ওঁর হস্তাক্ষরেই তুলে দিলাম।

সবুজ বাঘ এর ছবি

ক্ষেইপা কাই হইয়া গেছত রে দাদা। ক্ষেইপা কাই হইয়া গেছত। তরে আঘাত করার সিন আমার নাই। আর টিপিক্যাল হেন্দু পুলাগোরে আমি যেমুন ভালো পাই (আসলে পাই না), তেমনি টিফিক্যাল মোছলমান, বইদ্দ এহুদি খিস্টান পুলাগো একই রকম ভালা পাই। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক কিম্বা সনাতন ধর্মপালক যেকুনো মানুষই আমার কাছে ভুদাই ছাড়া আর কিছু না। আমার ভাবনায় ভুল থাকতেই পারে। কিন্তু আমি এমনেই ভাবি। গুয়ামারামারির সংস্কৃতি আমার ভালো লাগে না।

তবে কেউ যুদি গুয়ামারামারি কইরা (সমকামিতা অর্থে) আনন্দ লভে, আমার কিছু কওয়ার নাই। আমি তারে বাধা দিতেউ দৌড়ামু না। মানুষের যৌনজীবন খুবই রহস্যময়, ব্যক্তি নিজে ছাড়া অন্য কেউই তা জানে না। ফলে কে কীসে আনন্দ পায় বা পাবে, সেইডা তার ব্যাফার। বাধাদান সেখানে কাম্য না। তবে কেউ যুদি তার বিরোধিতা করে, তারো বিরোধিতার অধিকার থাকেই। যেহেতু পৃথিবীর কেউই সঠিক কিম্বা বেঠিক না।

আমি মন্তব্যে কিছুডা মজা মারছি, কতাডা মিছা না। কিন্তু ধরো চাই, তুমিউ কিন্তু আমার আপেত্তর ব্যাফারডা ধরা হারো নাই। তুমার প্রবেসার সাপ যহন তার মেয়েরে এই কথা কয়,

"এরা তোর কাছের বন্ধুবান্ধব? এই অশিক্ষিত ছেলেগুলো?"

"কী করবো, বেশির ভাগই এরকম। মা বলেছিলো বিদেশে দেশের লোকের সাথে ভাব রাখতে, বিপদে আপদে দরকার হয়, ফেলতে পারি নি সে কথা। তাই সহ্য করি এদের।"

তহন দুইজনরেই আমার সমানভাবে বাজে লুক মুনে হইছে। এক, প্রবেসার সাব নিজের মতের শ্রেষ্ঠত্ব দেখে এবং অন্যদের মনে করে ভুল। সেটুকুও ঠিক ছিল, যখন সে প্রতিপক্ষরে অশিক্ষিত ভাবে, তখন মেজাজ খারাপ না হয়ে পারে না।

আর প্রবেসারের মেয়ে আরেক কাঠি বাড়া, জেনেশুনে ভুল লোকদের সাথে হেসে হেসে মেশে। আহা! কী ভয়ঙ্কর আত্মপ্রতারণা।

দাদা, ভাষা তো সবারই আছে নাকি? তুমাগো মানভাষার আঘাত তো হাজার বছর ধরেই খাইয়া আইতাছি। আমার ভাষার আঘাত যদি এট্টু খাইয়াউ থাকো, যাউ পরের বার পুষিয়া দিমুনি।

আবারো কইতাছি, ফাইন গল্ফ লেকছ তুমি। পইড়া খুপ আনন্দ কাড়ছি। এইরম লেহা আরো ছাড়ো। পচুর গিয়ানজাম ছাড়া পিথিমিতে কুনো আনন্দ নাই। আহো আমরা পচুর গিয়ানজাম করি এবং বিজ্ঞানরে মাইরা পিথিবি থিক্যা খেদিয়া দেই।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার সাথে মোটামুটি একটা সহমতে যখন আসা গেছে তখন আর বেশি লিখছি না। এমনিতেই এই লেখায় এতো তর্কবিতর্ক হয়েছে যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।

সবাই ভালো থাকুন।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বাহ... ভালো লাগলো ব্যাখ্যা এবং সমাপ্তি। এত সুন্দর গল্প এবং আলাপচারিতার এমনই শেষ আশা করছিলাম।

সিরাত এর ছবি

পড়লাম। সব মন্তব্য পরে পড়বো। লেখায় পাঁচ।

সিরাত এর ছবি

সেইরকম সব মন্তব্য আর আলোচনা। আর রাজর্ষিদারও স্ট্যামিনা আছে। হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

আগে পড়া হয়নি, আজ কৌস্তুভের রেফারেন্স দেখে এসে পড়লাম...

চলুক

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

আমিও কৌস্তুভের লিঙ্কের পিছু পিছু চইলা আসলাম। লেখা নিয়ে কিছু বলার নাই। কৌস্তুভ বলেছেন ক্লাসিক। সত্যিই। ফ্যান্টাসটিক হৈছে পুরাটাই। সমকামিদের অধিকার নিয়া অনেক লেখা পড়ছি। কিন্তু এইরকম দুর্ধর্ষ স্যাটায়ার আর পাই নাই। বহুত জাঝা।

কৌস্তুভ এর ছবি

সত্যিই, আমার অনলাইনে পড়া অন্যতম সেরা একটা গল্প।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্তুভকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই লিঙ্কটা নিজের লেখায় দেওয়ার জন্য... তুমুল লেখা, আর মন্তব্যে লেখকের অসীম ধৈর্য মাথা ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট।

আচ্ছা, এই সচলায়তনে subscribe করার বোতাম তো কোথাও খুঁজে পেলুম না ভায়া...

সুনন্দ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।