আমার বিজয় দিবস

সাফি এর ছবি
লিখেছেন সাফি (তারিখ: শুক্র, ১৮/১২/২০০৯ - ১:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল অবশেষে। ভেবেছিলাম পরীক্ষার পরে অনেক কিছু করব, কিন্তু ঘুমের কাছে কাবু হয়ে আপাতত সবকিছুই স্থগিত। খুব অদ্ভূত লাগে, যখন কিনা আমার পড়ার কথা, সেই সময়টায় দুনিয়ার সবকিছু নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকেনা, প্রতি আধা ঘন্টায় সচলে ঢু মারা, মাঝে মাঝে আমু/সামু। অথচ পরীক্ষা শেষের পরে দুদিন হতে চলল নির্বিকার আমি। আজকে তাই শুরুই করলাম নীড়পাতার ৫ম পৃষ্ঠা থেকে, খুব ভাল লাগছিল ধারাবাহিকভাবে লেখাগুলো পড়ে যেতে হঠাৎ মনে হল নিজেই কিছু লিখি, আর যাই হোক বিজয় দিবসের অভিজ্ঞতাটা সবার সাথে শেয়ার করাই যায়।

গতকাল ছিল বিজয় দিবস। সন্ধ্যে হতে না হতেই দরজায় কারো টোকা পড়ল। আমি এ আশাতেই ছিলাম, খুব খুশী হয়ে দরজা খুলে দেখি বাড়ির উল্টোপ্রান্তের ফ্ল্যাটবাসী অশীতিপর বৃদ্ধা হাজির। ভদ্রমহিলার প্রায়ই টেলিফোন নষ্ট হয়, আর অন্য ভাড়াটিয়ারা কম্প্লেন করতে করতে বিরক্ত হয়ে আর তাঁকে সাহায্য করেনা (অনেকেরই ধারণা বুড়ি নিস্ংগতা কাটাতে ফোন নষ্টের নাটক করে), একবার দুবার আমিও তাঁর হয়ে টেলিফোন কম্পানিতে বিচার দিয়েছি - সত্যি বলতে কি টেলিফোন নষ্টের ফ্রিকোয়েন্সি আসলেই সন্দেহজনক। সে যাই হোক, বুড়ি আমাকে দেখেই বিশাল ফোকলা হাসি দিয়ে বলল হ্যাপি হলিডেজ, সাথে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো। দেখি বুড়ি বিস্কুট নিয়ে এসেছে। বললাম এসো , চা-চু খাও কিন্তু বুড়ি মহা ব্যস্ত সব প্রতিবেশীদের সে এখন বিস্কুট বিলাবে তাই চা খাওয়ার সময় নেই। যাবার সময় বুড়ি কে বল্লাম ক্রিসমাস কি এখানেই করবে? -"আর কোথায় করবো? আমার তো কেউ নেই কোন ফ্যামিলি নেই, তোমরাই আমার ফ্যামিলি বলেই হাসতে হাসতে বুড়ি বিদায় নিল।" মায়াই লাগলো বেচারার জন্য। কিন্তু যে কারণে কোন না কোন প্রতিবেশীর জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম দরজায় এই বুঝি টোকা দিল বলে, সারা সন্ধ্যা তাদের আর কারও দেখা মিললনা।

কিন্তু আজকে সন্ধ্যায় হঠাৎ পাশের বাড়ির শ্রীলংকান বুড়ো এসে হাজির। দরজা খুলতেই প্রথম প্রশ্ন "সত্যি সত্যি ওরা তিন মিলিয়ন মানুষকে মাত্র নয় মাসে খুন করেছিলো?" আনন্দের চোটে আমি বিশাল দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বল্লাম "উইকিপিডিয়ার কসম, আসো চা খেয়ে যাও" বুড়ো গল্প বা শীতের সন্ধ্যায় চায়ের লোভে ভিতরে চলে এল। হঠাৎ করেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ জেগেছে- আমিও তাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো বলতে লাগলাম। পুরো ঘটনাই এতখানি নি:শংস যে এই গল্প কাউকে প্রথমবার বলে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হয়। আমি আবার উইকিপিডিয়ার কসম খেয়ে বুড়োকে উইকির "liberation war of Bangladesh" ভুক্তির লিংক লিখে দিলাম- ব্যাটা বিশ্বাস না হলে নিজে পড়ে দেখ। রাগিব ভাই বার বার উইকির গুরুত্বর কথা বলেন, এসবক্ষেত্রে নিজেই উপলব্ধি করি, একটা গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হিসেবে উইকির গুরুত্ব কতখানি।

বুড়োর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ জন্মানোর প্রতি আমার কিঞ্চিত ভূমিকা আছে। ছোটবেলা থেকেই প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসে সকালে উঠেই ছাদে যেয়ে পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে আসতাম। এবার প্রথম দেশের বাইরে বিজয় দিবস করছি, কদিন থেকেই চিন্তা করছিলাম কিছু করা যায় কিনা। হঠাৎ একটা বুদ্ধি এল। দেশ থেকে আসার সময় সাথে করে বেশ বড়সড় একটা পতাকা নিয়ে এসেছিলাম, তাই বিজয় দিবসের সকাল আসতেই বাসার বাইরের দিকে জানালায় টাঙ্গিয়ে দিলাম। আর একটা কাগজে আগেই প্রিন্ট নিয়ে রেখেছিলাম সেটা পাশে সেঁটে দিলাম -

"On 16th december 1971, Bangladesh earned their independence after 9 months war against Pakistan. In these 9 months Pakistani Army killed more than 90 million people and raped 200,000 women, making it among the top 5 genocides in 20th century. Surrendering pakistani army was the biggest in terms of number since world war II. Long live Bangladesh"


সবশেষে ব্যানার নিয়ে একটা কথা বলে যাই। আমার দেখা জীবনের সেরা ব্যানারটা পেলাম মুস্তাফিজ ভাইয়ের সৌজন্যে বিজয় দিবস উপলক্ষে। আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা নেই। কিন্তু এত সুন্দর সুন্দর ব্যানার দেখতে দেখতে মনে হয়, প্রতিটা ব্যানারই আলাদা লেখা হবার দাবী রাখে। তাতে মূল ছবিগুলো বা শিল্পীর ব্যানার আঁকার সময়কার চিন্তা ভাবনা তুলে ধরা যেতে পারে।

সবাইকে বিজয় দিবসে শুভেচ্ছা


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

যে যেখানেই থাকুক না কেন, প্রতিটি বাঙালীর বুকের ভেতর থাকে একটুকরো বাংলাদেশ...তাই না ?শুভেচ্ছা আপনাকেও! --------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তিথীডোর এর ছবি

এহেম ...
নিম্নে নজু ভাই কি যেন কহেন!
--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কইলাম যে আপনের মন্তব্যটা পছন্দ হইছে। সেটা কপি কইরা আমার মন্তব্য হিসাবে পেস্ট করে দিতে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তিথীডোরের মন্তব্য কপি পেস্ট
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রায়হান আবীর এর ছবি

বুড়োর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ জন্মানোর প্রতি আমার কিঞ্চিত ভূমিকা আছে। ছোটবেলা থেকেই প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসে সকালে উঠেই ছাদে যেয়ে পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে আসতাম। এবার প্রথম দেশের বাইরে বিজয় দিবস করছি, কদিন থেকেই চিন্তা করছিলাম কিছু করা যায় কিনা। হঠাৎ একটা বুদ্ধি এল। দেশ থেকে আসার সময় সাথে করে বেশ বড়সড় একটা পতাকা নিয়ে এসেছিলাম, তাই বিজয় দিবসের সকাল আসতেই বাসার বাইরের দিকে জানালায় টাঙ্গিয়ে দিলাম। আর একটা কাগজে আগেই প্রিন্ট নিয়ে রেখেছিলাম সেটা পাশে সেঁটে দিলাম -

চলুক চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ইংরেজিতে লেখা অংশটুকুতে একটা ভুল আছে মনেহয়। ৯০ মিলিয়ন লেখা হয়েছে।

লেখাটা পড়ে মন ভাল হয়ে গেল। বাংলাদেশের যারাই দেশের বাইরে যায়, যেন আপনার মতো একটুকরো বাংলাদেশ হয়ে যায়...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দারুন লেখা বস! পড়েই মন ভালো হয়ে গেল, সবাই যেন তোমার মত করে বিজয় দিবস পালন করতে পারে।

তোমারে লাল সালাম বস, এদিকে নিজে নিরামীষ বিজয় দিবস কাটিয়েছি কিনা!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অভ্রনীল এর ছবি

হেহেহে... আমি আবার আমিষ সহযোগে কাটাইলাম, মানে আক্ষরিক অর্থেই আমিষ! মুরগি আর খাসি ছিল মেনুতে!!
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।