সচল পেন্সিলে আঁকা-০২ ...(তিনি আমার বাবা)

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শুক্র, ০৮/০৮/২০০৮ - ১২:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিনি আমার বাবা

বিষয়টা কেবল যে অস্বাভাবিক তা-ই নয়, অস্বাভাবিক রকমের অস্বাভাবিক ! কেবল একটা লুঙ্গি পরে উদোম গায়ের পুষ্ট শরীরটাকে একটা চেয়ারের পাটাতনে ঠেকিয়ে এ যাবৎ দেখে আসা অবিচল পাথর স্বভাবের যে মধ্যবয়সী লোকটি হাউমাউ চিৎকারে কাঁদছে আর কপাল চাপড়াচ্ছে, তিনি আমার বাবা ! জীবনে এই একবারই তাঁকে কাঁদতে দেখেছি আমি, তা-ও এরকম অদ্ভুতভাবে ! আর কখনোই নয়। আর আমার গর্ভধারিণী মা তখন শুয়ে আছেন দরজার সামনে মাটিতে পেতে দেয়া শীতল পাটিটাতে, নিথর। আশেপাশের জড়ো হওয়া ভীড়ে কেউ কেউ ফোঁপাচ্ছে, কেউবা থির হয়ে আছে। শৈশব পেরোনো বিস্ফারিত চোখ এতোসব অসংলগ্নতার অর্থ কি আর ধরতে পারে ! ফেলফেল করে মানুষগুলোর অস্বাভাবিকতা দেখছি, বুঝতে পারছি না কিছুই। মৃত্যু বিষয়ক ধারণা আর উপলব্ধিগুলো তখনো বুকে দানা বাঁধতে শুরু করে নি হয়তো।

মায়ের শিয়রের পাশে আমার জীবিত থাকা একমাত্র বড় ভাইটি চোখ দিয়ে দরদর পানি ঢালছে আর মাঝে মাঝে উথলে ওঠা দমকে কী যেন বলে যাচ্ছে, অস্পষ্ট। পাশ থেকে কে যেন আফসোস ঝাড়ছে- আহারে, দিদি মরার আগে শেষবারের মতো দিলীপ দিলীপ করে ডেকে ওঠেছিলো ! কথা শেষ হবার আগেই দিলীপ অর্থাৎ আমার সে বড় ভাই আবার হাউমাউ করে ‘মাগো’ বলে মার বুকে আছড়ে পড়লো। মৃত্যুমুহূর্তে মা’র কাছে থাকতে পারে নি। বালাটের শরণার্থী ক্যাম্পে কোথাও ডাক্তার ঔষধ বা স্যালাইন না পেয়ে উন্মাদের মতো খুঁজতে খুঁজতে কোথায় কোথায় যে গেলো ! শেষ পর্যন্ত ডাক্তার নামের এক ব্যক্তিকে স্যালাইনসহ নিয়ে আসলো ঠিকই, কিন্তু তার আগেই মা চলে গেছেন সবকিছুর উর্ধ্বে। দুপুরে আক্রান্ত হয়ে বিকেলেই শেষ ! জানিনা এই ঘটনাই আমার ভাইটির বুকে ভবিষ্যতে একদিন সংসার ছেড়ে বিবাগি হয়ে যাবার বীজ বুনে দিয়েছিলো কি না। সকালে আক্রান্ত দুপুরে শেষ হয়ে যাওয়া আমার অন্য ভাইটির মৃতদেহ তখনো সৎকার হয়নি। মৃত্যুর আগে ঘোর লাগা চোখে নাকি মা যখন ‘বিলু কই রে’ বলে গোঙাচ্ছিলেন, অদ্ভুত শক্ত মনের বাবা ‘বিলু ভালো আছে’ বলে মাকে সান্ত্বনা জানালেন ঠিকই। কিন্তু ক’দিন আগে যিনি একইভাবে তাঁর আরো দুটো সন্তান হারিয়েছেন, সেই গর্ভধারিণী মায়ের মন কি কিছুই আঁচ করে নি ?

শরণার্থী ক্যাম্পের নোংরা পরিবেশে শনের ছাউনী আর বাঁশের তরজা ঘেরা অসংখ্য সারি সারি দায়সারা গোছের ছোট্ট জোড়াঘরের মধ্যে আশ্রিত হাজার হাজার পরিবারের মতো আমরাও ব্যতিক্রম নই। একদিকে যুদ্ধের দামামায় দেশের ভেতরে ধ্বংস মৃত্যু প্রতিরোধ, আর অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু পরিবার ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে লঙ্গরখানা আর রেশনের ভিক্ষালব্ধ খাদ্যনির্ভর এক আশ্রিত জীবনে উন্মুল। এটাই দুঃসহ বাস্তবতা। এখানে ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু কি থাকে ? চারদিকে পচা গলা মানব-পশুর বিষ্ঠার দুর্গন্ধময় বাতাস আর পঙ্গপালের মতো মনুষ্য-চেহারার হাজারে হাজারে দুপেয়ে প্রাণীর যথেচ্ছ বিচরণ। কিসের সম্ভ্রান্ত আর কিসের ছোটলোক ; সব একাকার। একেই বলে শরণার্থী শিবির। মৃত্যু এখানে গলাগলি করে হাঁটা অতিপরিচিত স্বজন যেনো। এটাই একাত্তর ! যেনো মৃত্যুর উৎসব ! এক অন্যরকম বাস্তবতা।

জোর করে চৌত্রিশ বছর আগের ফ্লাশব্যাক থামিয়ে দিলাম। কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না, এই কি আমার সেই বাবা ! সরকারি হাসপাতালের ছোট্ট মলিন কেবিনের ধবধবে বেডে গুটিশুটি মারা চুরাশি বছরের ছোট্টখাট্ট শরীরটা দেখলে কে বলবে রাজপুত্তুরে চেহারার দশাসই শরীরধারী এক ঝলমলে অতীতের ক্ষয়ে যাওয়া করুণ ইতিহাস শুয়ে আছে এখানে ! আহা সময় ! তবু, নদী মরলেও নাকি সিকস্তি থেকে যায়।

প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ভাঙা শরীরে তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় ও চূড়ান্তবারের অপারেশনের আগে আত্মীয় পরিজন যখন অসহনীয় টেনশনে কীভাবে রুগীকে ‘ওটি’-তে পাঠাবেন ভেবে ভেবে নিজেরাই একেকজন রুগী হয়ে যাচ্ছেন, ওটি-তে যাওয়ার আগ মুহূর্তে দেখা গেলো নির্জন কেবিনের অপেক্ষমান রুগীটি নেই ! কোথাও নেই ! একেবারে লাপাত্তা ! কই গেলো কই গেলো রব তোলে হুড়াহুড়ি করে সবাই ছুটলো ডাক্তার আর ওটি’র দিকে।

সা সা বাতাস কেটে গাড়িটা জীবনের মতোই গন্তব্যের দিকে ছুটছে তীব্র। ধাবমান অপেক্ষা আর অস্থিরতা যুগপৎ তাড়িয়ে নিচ্ছে আমাকে পেছনে হটে যাওয়া অপসৃয়মান ধুসর প্রকৃতির মতোই। আসলে প্রকৃতির নিজস্ব কোন রঙ নেই। মানুষের অন্তর্গত আপেক্ষিক দৃষ্টিই প্রকৃতিকে রঙিন বা রঙহীন করে তোলে। কতক্ষণে পৌঁছবো গন্তব্যে ? চেপে ধরা হাতের মোবাইলটা উৎকণ্ঠায় বেজে ওঠলো আবার।

যে জটিল নৈরাশ্যময় অবস্থায় মানুষ অপারেশন টেবিলে ব্যবচ্ছিন্ন হওয়ার আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তাবাচক কাতরতায় কনফেশন আক্রান্ত হয়ে ওঠে, সে রকম অবস্থায়ও কাউকে কিছু না বলে বা বলার সুযোগ না দিয়ে সবার অগোচরে ক্যাথেটারটা হাতে ঝুলিয়ে গটগট করে একবারও পেছন না ফিরে যিনি নির্বিকার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে যান, তিনিই কি আমার বাবা ! বাইরের উৎকণ্ঠিত স্বজনদেরকে কিছুই কি বলার ছিলো না তাঁর ! এ কি তাঁর প্রচণ্ড মনোবল, না কি দুর্লঙ্ঘ্য অভিমান ?

সন্তান ছুটছে তার শেকড়ের দিকে। ওই কি বাসস্ট্যান্ড দেখা যাচ্ছে ? গন্তব্য......হাসপাতাল.. ,আর বহুদিন পরে ফেরা সাক্ষী শহরের প্রিয় প্রিয় চেহারাগুলো কোথায় ! সদ্য গর্ভযন্ত্রণায় ভেতরে মোচড়ে ওঠে প্রাচীন সেই অক্ষরমালা...

/ মল্লিকপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে রিক্সায়
হাছন নগর হয়ে সদর হাসপাতাল
খুব একটা দূরে তো নয়-
বৃদ্ধ ক্লান্ত পিতা শুয়ে আছেন রোগ শয্যায়
চার নম্বর কেবিনের বেডে অবসন্ন একা।
হয়তো পরিজন বেষ্ঠিত
তবু জীবনের খাতায় নিঃসঙ্গ একাই ;
অনিবার্য বার্ধক্য মানুষকে এমন একা করে দেয় !

কৈশোরের পুরনো রাস্তা
রিক্সায় সওয়ারী আমি ছুটে চলি দিগবিদিক
পুরানো বাসস্ট্যান্ড ফেলে ট্রাফিক পয়েণ্ট ঘুরে
সোজা পথ চলে গেছে পাবলিক লাইব্রেরী হয়ে।
ভীষণ ব্যস্ত শহর, তবু
মনে হয় শীতের সুরমার নিস্তরঙ্গ বুকের মতোই কী যেনো হারিয়ে গেছে
সুউচ্চ দালান আর মার্কেটের ভীড়ে।

হারিয়েছে এ শহর মায়াময় শৈশব আর
দুরন্ত কৈশোর তার-
শহিদ মিনার আগের মতোই শুধু
স্মৃতিময় কদম আর কৃষ্ণচূড়া নেই-
পাশে পুরনো বালুর মাঠ এখন
ঝলমলে বিশাল পৌর বিপণী বিতান।
অতীতের চেনা চেনা মুখ বড়োই অচেনা ঠেকে আজ,
তুখোড় যে যুবকেরা একদিন হৈ হৈ মাতাতো শহর
এদিক ওদিক দেখি
কেমোন ন্যুব্জ আর ঘোলাটে দৃষ্টিতে খোঁজে
পুরনো স্বাক্ষর যতো
হয়তো বা যা কিছুই অন্যের দখলে সবি ;
আহা, দিন বদলের কষ্ট খণ্ডাতে পারে না কেউ !

বদলে গেছে কত কিছুই, রাস্তা-ঘাট-পুকুর-মাঠ
ছোট্ট শহরে এতো পরস্পর পরিচিত মুখ
সুখে দুখে হয়ে যেতো সবাই সবার
সে সবই বদলে গেছে
বদলে গেছে সময়েরা প্রজন্মের প্রজন্মের পর
বদলে গেছে প্রিয়তম শহর আমার।

রুগ্ন পিতা শুয়ে আছেন হাসপাতালের বেডে,
উকিল পাড়া বাঁয়ে রেখে তাড়াহুড়ো গন্তব্য আমার
চমকে ওঠি তীব্রতায়- আকস্মিক ব্রেকের শব্দ !
হৈ হৈ করে ছুটে আসে পুরনো বন্ধু জমির
স্কুলের সহপাঠি এক কালের তুখোড় প্লেয়ার
স্বভাবটা তেমনি আছে এতোকাল পর।
হুড়হাড় কথার ফাঁকে চেয়ে থাকি অপলক
দুদিনের না কামানো দাড়ি ধবধবে সাদা আর
বয়েসটা ঝুলে আছে চামড়ার ভাঁজে,
ওটা কি আমারই বিম্ব তবে ! হায়
আর যারা সহপাঠি কে কোথায় আজ ?
বিপণ্ন প্রশ্নগুলো নিরুত্তর কথা হয়ে
জীবন্ত আয়নায় খোঁজে আপন আপন মুখ।

হাসপাতালে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ পিতা
অবসন্ন একা
আপাতত ওটাই গন্তব্য আমার
এবং একদিন আমাদের সবার... #
(২৯/০৯/২০০৫)
[গন্তব্য/ অদৃশ্য বাতিঘর/ রণদীপম বসু]


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমাদের সকল আড্ডাই শেষ হবে ডাক্তারের ঠিকানা লিখে
ওষুধের সময় হলে উঠে যাব আমরা সবাই

স্বপ্নের বাণিজ্য ছেড়ে বিনিময় হবে পথ্যের নাম;
বাতের ওষুধ হার্ট ডায়াবেটিস আর বার্ধক্যের আদর্শ নিয়ম

ডেকে আনতে যাব না কাউকে কেউ; টেলিফোনে বলে দেবো নড়াচড়া করো না বিশেষ
বেঁচে থাকো কোনোমতে- দেখে রাখো জীবন ও শরীর
আর শিল্পের হিস্যা তামাদি রেখে জানতে চাইব-
আগের মতো কী কী পারো আর পারো না এখন

আরো কিছুদিন পরে ক্লিনিকেই বসাব আমরা স্বপ্নের হাট
২০০১.০৯.০৫
বয়স/মাংসপুতুল

রণদীপম বসু এর ছবি

আরো কিছুদিন পরে ক্লিনিকেই বসাব আমরা স্বপ্নের হাট

দারুণ একটা কবিতা দিলেন বাহে।
অনেক ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
আপাতত ওটাই গন্তব্য আমার
এবং একদিন আমাদের সবার...

বর্ণনা খুবই প্রাঞ্জল আর মর্মস্পর্শী!
______________________
আমি হাসপাতালের বেডে মরতে চাই না! কিছুতেই না! আমি মরতে চাই আপনজন বেষ্টিত হয়ে আমার ঘরে। কিংবা এমন মৃত্যু কামনা করি যে, আমার মৃতদেহ যেন আমার স্বজনদের চোখে না পড়ে।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রণদীপম বসু এর ছবি

হয়তো হৃদয়ের শেকড় গাঁথা বলে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্নিগ্ধা এর ছবি

রণদীপম বসু - আমাদের সবারই (অন্তত বেশীরভাগের) জীবনের কোন না কোন অংশে খুব কঠিন কিছু সময় পাড়ি দিতে হয়, কিন্তু আপনি আর আপনার মতো করে আরও যারা '৭১ পার হয়ে এসেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা এতই কষ্টকর যে সেটা নিয়ে এমনকি কোন সান্ত্বনার কথা বলাও ধৃষ্টতার মত শোনায়।

ভালো থাকবেন।

আর - চলে যাওয়া মানেই চলে যাওয়া নয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

সত্যি, জীবনের কঠিন সত্যকে আমরা কেউ এড়াতে পারি না।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মনজুরাউল এর ছবি

হাসপাতালে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ পিতা
অবসন্ন একা
আপাতত ওটাই গন্তব্য আমার
এবং একদিন আমাদের সবার... #

আপনার তো এখনো গন্তব্য আছে , তাও তো হারিয়েছি আমি.....
মনে পড়ে....যদি থাকত ওই বৃক্ষটি ! ছায়ার মত , যদি থাকত ওই ছায়াটি !ধরা যাবেনা যানি তবুও চেষ্টা করে যেতাম অনন্তকাল.......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার কষ্ট মনে হয় আমি অনুভব করতে পারছি।

সব সময়ের জন্য শুভ কামনা থাকলো। ভালো থাকুন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানবীরা এর ছবি

কিছু কিছু কষ্টের কোন সান্ত্বনা হয় না, শুধু অনুভব হয়, তাই থাকলো আপনার জন্য।
এই ধরনের কোন ঘটনার সময় আস্তিক হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, মনে হয় সোনার কাঠি রুপোর কাঠি বুলিয়ে কেউ যদি সব ঠিক করে দিতে পারতো।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রণদীপম বসু এর ছবি

তথাকথিত স্রষ্টাপুরুষে আমার বিশ্বাস নেই বললেই চলে।
তবে আমাদের সব শুভ ইচ্ছাকে স্রষ্টার আসনে বসাতে আমার আপত্তি নেই।

আপনার জন্যেও শুভ কামনা রইলো। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হিমু এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে খুবই মন খারাপ হলো ভাই।

আমার বাবা মারা গেছেন আমার কিশোর বয়সে। তাঁকে নিয়ে মাঝে মাঝে খুব লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারি না। একবার সচলে লিখেছিলাম, কিন্তু লিখে নিজের কাছেই ভালো লাগেনি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রণদীপম বসু এর ছবি

পৃথিবীর সব মানুষই হয়তো কোন না কোন কষ্ট বুকে লালন করে। আপনার কষ্টও আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করছি। অনিবার্য সত্যকে না মেনে উপায় নেই।

আপনার কলমের শক্তিমত্তায় আমার দারুণ আস্থা রয়েছে। আমার মনে হয় আপনার আরো লিখা উচিৎ এ বিষয়ে।
জীবনানন্দ দাশের 'কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে' কথাটার অর্থে মনে হয় উল্টো করেই সত্য কথাটা লিখেছেন তিনি। তাই না ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ভাইয়া আপনার এই লেখায় কমেন্ট করার মত ভাষা আর সাহস আমার নেই। মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার এই কমেণ্টই হৃদয়স্পর্শী হয়ে বেজেছে আমার বুকে !
ধন্যবাদ মুমু।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রাফি এর ছবি

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

রণদীপম বসু এর ছবি

আমাদের উপলব্ধিগুলো জলের মতোই। ঘুরে ঘুরে একা কথা কয় !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কিছু কিছু কষ্টকে চাইলেও ছুঁতে পারা যায় না।
ভীষন মন খারাপ হয়ে গেল আপনার লেখাটা পড়ে।
ভালো থাকুন আপনি আপনার কাছে থাকা সবাইকে নিয়ে...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রণদীপম বসু এর ছবি

ওটাকে মন খারাপ বলে না। নিজের ভেতর নিজেকে উপলব্ধি করা। আপনারও তা-ই হয়েছে।
এই উপলব্ধি আমাদের সবারই দরকার আসলে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নিরিবিলি এর ছবি

কতগুলো স্মৃতি এমন থাকে মনে করলে চোখ ছল ছল করে। আপনার লিখাটাও সেরকম কোন স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।

রণদীপম বসু এর ছবি

এই স্মৃতিকাতরতাই আসলে আমাদেরকে নিজস্ব আয়নাটা ধরিয়ে দেয়।

ছল ছল চোখ জানান দেয়, ভেতরে ফল্গু আছে। ওটা না থাকলে যে আমাদের নিজস্ব সত্তাটাই শুকিয়ে যাবে ! যত্ন করে লালন করুন ওই মহার্ঘ বস্তুটাকে। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দৌবারিক এর ছবি

বসুদা,
আপনাকে সচলায়তনে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আপনার লেখা পড়ে আমার রণদীপম বসু হতে ইচ্ছে করে। মুক্তমনায় ও আমার বন্ধু এবং তিনি আমার বাবা পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তবে তিনি আমার বাবা-কে নিয়ে একটুস সমালোচনা করব। মুসলম্যানদের ধর্মীয় পুরাণে আছে আল্যা ২টা থাকলে এঁরা নাকি পরস্পর কইজ্জা করে ধ্বংস হয়ে যেত। তেমনি বাবাকে নিয়ে সুন্দর গল্প আর সুন্দর কবিতার মিলন ঘটাতে গিয়ে আপনার কি মনে হয় নি এরাও পরস্পর সাম্রাজ্যবাদী লড়াইয়ে মেতে উঠবে? অভিমানী বাবার কাছে সন্তানের সাথে যেখানে পাঠকও ছুটে যায়, সেখানে কবিতার দীর্ঘতায় পাঠকের অধীর অপেক্ষার বোধকে অমানবিকভাবে বাধাগ্রস্ত করা কেন?

বসুদা, আপনি কি বই বের করেছেন? যদি না করে থাকেন তবে পাপ... পাপ করেছেন। যমুনার জলে ঝাপ দেওয়ার আগে বই বের করে ফেলুন। প্লিজ! আমার মনে হচ্ছে আপনি যমুনায় মন দিবেন। সাঁতার জানি না—এ ভয়ে আমিও ডুব দিতে পারি না!

রণদীপম বসু এর ছবি

দৌবারিক, আপনাকে ধন্যবাদ।
কুঁড়ের যে কারণে কলা খাওয়া হয় না, একই কারণে আমারও যমুনায় ঝাপ দেয়া হচ্ছে না যমুনা কাছে আসছে না বলে।
তবে তিনটা থার্ডক্লাস বই আছে আমার একান্তই নাবাল বুদ্ধির কারণে-
১. অদৃশ্য বাতিঘর (কবিতা)
২. খোকার জানালা (কিশোর কবিতা)
৩. তিন দশে তেরো (শিশুতোষ ছড়া)

আর আছে অকর্মা পাণ্ডুলিপি কতগুলো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দৌবারিক এর ছবি

আমার শিশুতোষ অজ্ঞতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তিনটি বই-ই সংগ্রহে রাখব, কারণ বাস্তবতাকে মেনে নিতে না পারা আমার ভেতরের যে-শিশু আমাকে নিয়ণ্ত্রণ করে, বাঁচিয়ে রেখে যন্ত্রণা দেয় তারই জন্য এ-বইগুলো দরকার। পাণ্ডুলিপিগুলোও ড্রয়ার-বন্দি করে রাখবেন না। আমি বুঝি না রসায়নে আপনি এত প্রাণস্পর্শী রসের সংকেত পেলেন কীভাবে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।