জাতীয় সংসদ, আমাদের চোখ ক্যামেরার চোখ...

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শনি, ২৭/১২/২০০৮ - ৭:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এর কাউন্ট ডাউন খুব দ্রুত শূন্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সব পর্যায়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন প্রায়। যদিও কোথাও কোথাও কিছু অনিয়ম অপরাধের খবর কানে আসছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করবো আমরা। সব নির্বাচনেই মানুষের মধ্যে অদ্ভুত কিছু আবেগের খেলা দেখা যায়। এবারেও আছে। তবে সব বিচারেই এবারের নির্বাচনে একটা বিশাল ভিন্নতা রয়েছে বলে মনে হয় অন্য যে কোন নির্বাচনের সাথে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় জোট মহাজোট দল প্রার্থী কর্মী সমর্থক ভোটার ও সাধারণ জনগণের বোধের জগতে নিশ্চয়ই এই ভিন্নতাগুলো রেখাপাত করেছে। অনেক প্রার্থী দল ও সমর্থকের নৈতিক ও আদর্শগত অবস্থান এবার অনেক বেশি পরিষ্কার ও স্পষ্ট হয়ে গেছে সবার কাছে। এক কান কাটা ও দু’কান কাটার পার্থক্যটাও চক্ষুষ্মাণ নাগরিকদের কাছে খোলাশা হয়ে যাওয়ার কথা। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জনগণের রায়ের অপেক্ষায় থাকা প্রধান প্রধান যে ইস্যুগুলো এবার মোটা দাগে লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠেছে তা হলো-
০১) সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া বনাম বর্জন করা
০২) দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মামদোবাজদের কাছে ফের নতিস্বীকার বনাম তাদেরকে প্রতিরোধের প্রত্যয় ঘোষণা করা
০৩) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার দায়বদ্ধতা বনাম স্বেচ্ছাচারিতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনীর অনুমোদন করা
০৪) সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকারবোধকে উচ্চকিত করে পরিবর্তন আহ্বান বনাম পুরাতন গড্ডালিকায় ভেসে যাওয়ার অভ্যস্ততায় থেকে যাওয়া
০৫) এবং অর্থহীন বাকপটুতাসবর্স্ব বাগাড়ম্বরের অথর্বতা স্বীকার করে নেয়া বনাম নতুন আলোয় উদ্ভাসনের ভিশনারী প্রতিনিধি খুঁজে নেয়া।
auto
এর বাইরে আরো অনেক অনেক পয়েণ্ট আসতে পারে এবং এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বিতর্কে অনেকেই পাতার পর পাতা ভরিয়েও ফেলতে পারেন। এ মুহূর্তে সে পথে না গিয়ে আমাদের মেধা মনন আর উপলব্ধির নিজস্ব ঘরে বিষয়গুলোকে শেষ মুহূর্তের ভাবনা হিসেবে নাড়াচাড়া করে দেখার জন্য তুলে নিয়ে আমরা বরং আসুন একটু সংসদ ভবন এলাকা থেকে ঘুরে আসি। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, কেন ঘুরে আসবো ? আমাদের কি আর কাজ কাম নেই ? উত্তরে এটুকুই বলবো, অবশ্যই আছে। তবে এই ঘুরে আসাটা এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ যে, জনপ্রতিনিধি বানিয়ে আমরা কাকে কোথায় কীভাবে কেন পাঠাচ্ছি তা অনুভব করতে আমাদের রাষ্ট্রীয় সমস্ত কর্মকাণ্ডের উৎসটাকে আবারো একটু ফিরে দেখা জরুরি নয় কি ?
auto
কথায় বলে, শীতের দিনে সকাল ও বিকেল আছে, দুপুর নেই। তবুও দুপুর ভেবে খ্রীস্টিয় বড়দিনের যে সময়টাতে বেরিয়ে বিজয়সরণীর মোড় ঘুরে হাঁটছিলাম, তখন শেষ বিকেল। হালকা রোদ ও কুয়াশাচ্ছন্নতায় সংসদ ভবনের পেছনভাগটাকে ধোয়াশার মতো লাগছে। রাস্তার একপাশে জিয়া উদ্যান, অন্যপাশে সংসদ ভবন এলাকা। এমপি হোস্টেলের লাল দালানগুলো পেরিয়ে এগিয়ে যেতেই ঢলে পড়া সূর্যের আঁচ সরাসরি চোখে। পকেট থেকে বের করে ২ মেঃপিঃ মোবাইল ক্যামেরার চোখ সেদিকে তুলতেই চোখ ঝাঁজিয়ে গেলো। স্মৃতি ধরে রাখতে না পারার হতাশা ফের পকেটে পুরে জিয়া উদ্যানে ঢুকে পড়লাম।
auto
ব্যক্তিগত অনুভবে তখন এক দোলাচলের খেলা। রাস্তার এপার আর ওপার, কী পরস্পরবিরোধী আয়োজন ! একদিকে সংসদ ভবন আমাদের আশা-ভরসার তীর্থভূমি ম্লান আলোয় নিথর, অন্যদিকে ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজনৈতিক জীবনে যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জেনারেল জিয়ার মাজার সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল ! চারদিকে ভ্রমনপিপাসুদের কোলাহল।
auto
দু-একটা ক্লিক শেষে ফিরে আসতে আসতে সংসদ ভবনটার দিকে ফের ক্যামেরার চোখ তুলে ধরলাম। আর সূর্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক ব্যাখ্যাহীন দুঃখবোধ ভরে নিয়ে ফিরে চললাম।
auto
এমপি হোস্টেল পেরোতে পেরোতে ভাবছি, এই চমৎকার স্থাপত্যগুলোর ভোগবিলাসের জন্য কি আবারো কিছু মদ্যপ নারীলুলোপ ভণ্ড প্রতারককে নির্বাচিত করে পাঠাবো আমরা ? ভেতরে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। অথচ এই সাধারণেরা যাকে নির্বাচিত করবে সেই হবে এর যাচ্ছেতাই ভোগদখলের দাবীদার। কী চমৎকার ব্যবস্থা !
auto
রাতে বাসায় ফিরে মোবাইল থেকে ছবিগুলো কম্প্যুটারে আপলোড করেই চোখ কপালে উঠে গেলো ! এ কী ! আমাদের চোখ আর ক্যামেরার চোখে দেখা এক নয় তবে ! এই বিষন্ন আধিতে দাঁড়িয়েই দেখুন না, কী এক উদ্ভাসিত আলোয় ঝলমল করছে সংসদ ভবন (উপরে প্রথম ছবিতে কিক করুন) ! এটা কি নতুন কোন আগামীর উদ্ভাসন, না কি পুরোটাই ফাঁকি !!!


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

দাদা, দারুন

...........................
Every Picture Tells a Story

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
আপনি দারুণ বলা মানে তো আমার পোয়া বারো !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নির্জর প্রজ্ঞা এর ছবি

ছোটবেলা থেকেই খেয়াল করেছি যা ঘিরে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ সেটাতে আমি নিজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তবে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সবার মত আমার নিজের ভেতরো কাজ করছে ভালো-মন্দ বোধ নিয়ে অনিশ্চিয়তা। মনের ভেতর বেঁধে গেলো এক টুকরো আশা ঠিক যেমনটি বললেন " নতুন কোন আগামীর উদ্ভাসন"। অনেক তো দেখলাম ফাঁকির খেলা, এবার ফাঁক গলে আসতে শুরু করুক না একটু বিশুদ্ধ আলো।

দাদা, আপনার সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।

****************
ব্যক্ত হোক তোমা-মাঝে অনন্তের অক্লান্ত বিস্ময়
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

ব্যক্ত হোক তোমা-মাঝে অনন্তের অক্লান্ত বিস্ময়
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

রণদীপম বসু এর ছবি

আলেয়ার ভীড়ে যতবার হারাবো ততবারই তো আলোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করে যেতে হবে আমাদেরকে। কেননা আশাই জীবন। দুঃসহ দুরাশার কাল আর কতো !
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রানা মেহের এর ছবি

ছবিগুলো খুব ভালো লাগছে
লেখাটাও দারুন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

স্বপ্নের শহর, স্মৃতির শহর...।

রায়হান আবীর এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজনৈতিক জীবনে যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জেনারেল জিয়ার মাজার সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল !

আসলেই। লেখা ও ছবির জন্য জাঝা
=============================

রণদীপম বসু এর ছবি

auto

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রানা এর ছবি

দাদা...দারুন। এত সুন্দর একটি লেখার লেখককে কিভাবে সন্মান জানাবো বুঝতে পারছি না.....

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ রানা। আপনার ভালো লাগাটাই তো আমার পুরস্কার !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।