। হিজড়া, প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক দুর্ভাগা শিকার !

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৭/২০০৯ - ১১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্মৃতি হাতড়ালে এখনো যে বিষয়টা অস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে, শৈশবের অবুঝ চোখে সেইকালে বুঝে উঠতে পারতাম না, কারো বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলে শাড়ি পরা সত্ত্বেও বিচিত্র সাজ-পোশাক নিয়ে কোত্থেকে যেসব মহিলা এসে নাচগান বা ঠাট্টা-মশকরা করে তারপর বখশিস নিয়ে খুশি হয়ে চলে যেতো, এদের আচার আচরণ ও বহিরঙ্গে দেখতে এরা এমন অদ্ভুত হতো কেন ! শৈশবের অনভিজ্ঞ চিন্তা-শৈলীতে পুরুষ ও নারীর পার্থক্যের জটিলতা বিশ্লেষণ...স্মৃতি হাতড়ালে এখনো যে বিষয়টা অস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে, শৈশবের অবুঝ চোখে সেইকালে বুঝে উঠতে পারতাম না, কারো বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলে শাড়ি পরা সত্ত্বেও বিচিত্র সাজ-পোশাক নিয়ে কোত্থেকে যেসব মহিলা এসে নাচগান বা ঠাট্টা-মশকরা করে তারপর বখশিস নিয়ে খুশি হয়ে চলে যেতো, এদের আচার আচরণ ও বহিরঙ্গে দেখতে এরা এমন অদ্ভুত হতো কেন ! শৈশবের অনভিজ্ঞ চিন্তা-শৈলীতে পুরুষ ও নারীর পার্থক্যের জটিলতা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা না জন্মালেও স্বাভাবিকতার বাইরে দেখা এই অসঙ্গতিগুলো ঠিকই ধরা পড়েছে, যা প্রশ্ন হয়ে বুকের গভীরে জমে ছিলো হয়তো। পরবর্তী জীবনে তা-ই কৌতুহল হয়ে এক অজানা জগতের মর্মস্পর্শী পীড়াদায়ক বাস্তবতাকে জানতে বুঝতে আগ্রহী করে তুলেছে। আর তা এমনই এক অভিজ্ঞতা, যাকে প্রকৃতির নির্মম ঠাট্টা বা রসিকতা না বলে উপায় থাকে না !

অনিঃশেষ ট্র্যাজেডি
দেহ ও মানসগঠনে পূর্ণতা পেলে প্রাণীমাত্রেই যে মৌলিক প্রণোদনায় সাড়া দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সেটা যৌন প্রবৃত্তি। অনুকুল পরিবেশে এই প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা যেকোন স্বাভাবিক প্রাণীর পক্ষেই অত্যন্ত সাধারণ একটা ঘটনা। মানব সমাজের প্রমিত বা ভদ্র উচ্চারণে এটাকেই প্রেম বা প্রণয়ভাব বলে আখ্যায়িত করি আমরা। পুরুষ (male) ও স্ত্রী (female), লিঙ্গভিত্তিক দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়া প্রাণীজগতে এই মৌলিক প্রণোদনার সমন্বিত সুফল ভোগ করেই বয়ে যায় প্রাণীজাত বংশধারা। অথচ প্রকৃতির কী আজব খেয়াল ! কখনো কখনো এই খেয়াল এতোটাই রূঢ় ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠে যে, এর কোনো সান্ত্বনা থাকে না। মানবসমাজে প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের সেরকম এক অনিঃশেষ ও দুর্ভাগা শিকারের নাম ‘হিজড়া’(hijra)। সেই আদি-প্রণোদনায় এরা তাড়িত হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের জন্মগত লিঙ্গ-বৈকল্যধারী অক্ষম ক্লীব (neuter) বা নপুংশক দেহ যা তৃপ্ত করতে সম্পূর্ণ অনুপযোগী ! এরা ট্রান্সজেন্ডার (trans-gender), না-পুরুষ না-স্ত্রী। অর্থাৎ এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থা যা দৈহিক বা জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোন শ্রেণীতেই পড়ে না।

আমার অফিস পাড়ায় সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে দেখি সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি পরিহিত তরুণীর মতো এদের কয়েকজন এসে প্রতিটা দোকান থেকে অনেকটা প্রাপ্য দাবির মতোই ঠাট্টা-মশকরা করতে করতে দু’টাকা-চার টাকা-পাঁচ টাকা করে স্বেচ্ছা-সামর্থ অনুযায়ী তোলা নিয়ে যায়। এই তোলাটুকু দিতে কোন দোকানির কোনো আপত্তিও কখনো চোখে পড়েনি। বরং সহযোগিতার মায়াবি সমর্থনই চোখে পড়েছে বেশি। পুরনো কৌতুহলে আমিও তাদের সেই রহস্যময় গোপন জগতের সুলুক-সন্ধানের চেষ্টা করি। তাদের নীল কষ্টগুলো সত্যিই নাড়া দিয়ে যায় কোন এক কষ্টনীল অনুভবে।

মুছে যায় পুরনো পরিচয়
জন্মের পর পরই যে ত্রুটি চোখে পড়ে না কারো, ধীরে ধীরে বড় হতে হতে ক্রমশই স্পষ্ট হতে থাকা সেই অভিশপ্ত ত্রুটিই একদিন জন্ম দেয় এক অনিবার্য ট্র্যাজেডির। সমাজ সংসার আত্মীয় পরিজন পরিবার সবার চোখের সামনে মুছে যেতে থাকে একটি পরিচয়। আপনজনদের পাল্টে যাওয়া আচরণ, অবহেলা, অবজ্ঞাসহ যে নতুন পরিচয়ের দুঃসহ বোঝা এসে জুড়তে থাকে দেহে, তাতে আলগা হতে থাকে পরিচিত পুরনো বন্ধন সব, রক্তের বন্ধন মিথ্যে হতে থাকে আর ক্রমেই মরিয়া হয়ে একদিন সত্যি সত্যি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবার থেকে সে। অভিশপ্ত নিয়তি এদের ফেরার পথটাও বন্ধ করে দেয় চিরতরে। কারণ অভ্যস্ত সমাজের বাইরে তার একটাই পরিচয় হয়ে যায় তখন- হিজড়া !

কই যায় সে ? সেখানেই যায়, যেখানে তাদের নিজস্ব জগতটা নিজেদের মতো করেই চলতে থাকে, বেদনার নীল কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নীল হতে থাকে নিজেরাই। হিজড়া পল্লী। কেননা পরিবারের মধ্যে থেকে বড় হতে হতে তার যে পরিবর্তনগুলো ঘটতে থাকে, তা অন্য কারো চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই ধরা পড়ে যায় ভ্রাম্যমান অন্য হিজড়াদের চোখে। তাদের দুর্ভাগ্যের আগামী সাথী হিসেবে আরেকটা দুর্ভাগা প্রাণীকে তারা ভুলে না। এরা উৎফুল্ল হয় আরেকজন সঙ্গি বাড়ছে বলে। একসময় এরাই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় তাদের নিজেদের পল্লীতে। পল্লী মানে সেই বস্তি যেখানে সংঘবদ্ধ হয়ে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করে হিজড়ারা। যেখানে তাদের নিজস্ব সমাজ, নিজস্ব নিয়ম, নিজস্ব শাসন পদ্ধতি, সবই ভিন্ন প্রকৃতির।

অন্য জীবন
যে সমাজ তারা ছেড়ে আসে সেই পুরনো সমাজ এদের কোন দায়-দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয়, তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে প্রস্তুত নয় কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক নয় বলে তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে যায় মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে সাহায্য ভিক্ষা করা। এভাবে অন্যের কৃপা-নির্ভর বেঁচে থাকার এক অভিশপ্ত সংগ্রামে সামিল হয়ে পড়ে এরা। স্বাভাবিক শ্রমজীবীদের মতো উপার্জনের কাজে এদেরকে জড়িত হতে দেখা যায় না। নিজস্ব পদ্ধতিতে হাটে বাজারে তোলা উঠানোর পাশাপাশি বিনামূল্যে ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌতুককর মনোরঞ্জনকারী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে নাচগানে অংশ নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিকৃত যৌনপেশাসহ নানান অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ে।

হিজড়াদের সমাজে প্রতিটা গোষ্ঠীতে একজন সর্দার থাকে। তারই আদেশ-নির্দেশে সেই গোষ্ঠী পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে হিজড়াদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ বলে জানা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে হিজড়াদের প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে কিছুটা ধুয়াশা থেকেই যায়। কারণ নিজেদেরকে আড়ালে রাখা অর্থাৎ বহিরঙ্গে অপ্রকাশিত হিজড়াদের পরিসংখ্যান এখানে থাকার সম্ভাবনা কম। বাইরে থেকে যে চেহারাটা প্রকট দেখা যায় সেই লিঙ্গে আত্মপ্রকাশ করে এই বিরূপ সমাজে অনেকেই নিজেদেরকে সযত্নে ঢেকে রাখেন বলে বাইরের মানুষ তা জানতে পারে না। যে ক্ষেত্রে এই বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট অর্থাৎ ঢেকে রাখার মতো নয় এবং বাইরে থেকে বুঝা যায়, কেবল সেক্ষেত্রেই মানুষ নিজেকে হিজড়া হিসেবে প্রকাশিত করে এবং পরিবার থেকে বের হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকাতে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় পনের হাজার। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত হিজড়ারা পাঁচ থেকে পঞ্চাশজন হিজড়া সর্দারের নিয়ন্ত্রণে গোষ্ঠীবদ্ধ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের তথ্য। সর্দারদের নিজস্ব এলাকা ভাগ করা আছে। কেউ অন্য কারো এলাকায় যায় না বা তোলা ওঠায় না, এমনকি নাচগানও করে না। একেকজন হিজড়া সর্দারের অধীনে অন্তত অর্ধশতাধিক হিজড়া রয়েছে। হিজড়া সর্দারের অনুমতি ছাড়া সাধারণ হিজড়াদের স্বাধীনভাবে কিছু করার উপায় নেই। এমনকি সর্দারের আদেশ ছাড়া কোন দোকানে কিংবা কারো কাছে হাত পেতে টাকাও চাইতে পারে না এরা। সর্দারই ৫/৬ জনের একেকটি গ্রুপ করে টাকা তোলার এলাকা ভাগ করে দেয়। প্রত্যেক সর্দারের অধীনে এরকম ৮ থেকে ১০ টি গ্রুপ থাকে। প্রতিদিন সকালে সর্দারের সঙ্গে দেখা করে দিক নির্দেশনা শুনে প্রতিটি গ্রুপ টাকা তোলার জন্য বের হয়ে পড়ে। বিকেল পর্যন্ত যা টাকা তোলা হয়, প্রতিটি গ্রুপ সেই টাকা সর্দারের সামনে এনে রেখে দেয়। সর্দার তার ভাগ নেয়ার পর গ্রুপের সদস্যরা বাকি টাকা ভাগ করে নেয়।

প্রতি সপ্তাহে বা নির্দিষ্ট সময় পর পর হিজড়াদের সালিশী বৈঠক বসে। ১৫ থেকে ২০ সদস্যের সালিশী বৈঠকে সর্দারের নির্দেশ অমান্যকারী হিজড়াকে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বেত দিয়ে পেটানোসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য টাকা তোলার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কখনো কখনো জরিমানাও ধার্য্য করা হয় ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দণ্ডিত হিজড়াকে তার নির্ধারিত এলাকা থেকে তুলে এই টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই শাস্তি হিজড়ারা মাথা পেতে মেনে নেয় এবং কেউ এর প্রতিবাদ করে না।

হিজড়া কেন হিজড়া ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হিজড়াদের কামনা বাসনা আছে ঠিকই, ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রটা নেই কেবল। এদের শারীরিক গঠন ছেলেদের মতো হলেও মন-মানসিকতায় আচার আচরণে সম্পূর্ণ নারীর মতো (she-male)। তাই তাদের সাজ-পোশাক হয়ে যায় নারীদের সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি। অনেকে গহনাও ব্যবহার করে। কৃত্রিম স্তন ও চাকচিক্যময় পোশাক ব্যবহার করতে পছন্দ করে এরা।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, হিজড়াদের নাকি বৈশিষ্ট্যগতভাবে দুইটি ধরন রয়েছে, নারী ও পুরুষ। নারী হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকলেও স্ত্রীজননাঙ্গ না থাকায় তার শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। পুরুষ হিজড়াদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে হিজড়ারা নারী বা পুরুষ যাই হোক, নিজেদেরকে নারী হিসেবেই এরা বিবেচনা করে থাকে। সারা বিশ্বে প্রকৃতি প্রদত্ত হিজড়াদের ধরন একইরকম। শারীরিকভাবে পুরুষ, কিন্তু মানসিকভাবে নারীস্বভাবের হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘অকুয়া’। অন্য হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘জেনানা’। এছাড়া সামাজিক প্রথার শিকার হয়ে আরব্য উপন্যাসের সেই রাজ-হেরেমের প্রহরী হিসেবে পুরুষত্বহীন খোজা বানানো মনুষ্যসৃষ্ট সেইসব হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘চিন্নি’।

হিজড়া থেকে কখনো হিজড়ার জন্ম হয় না। প্রকৃতিই সে উপায় রাখে নি। কুসংস্কারবাদীদের চোখে একে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ কিংবা পিতামাতার দোষ বা প্রকৃতির খেয়াল যাই বলা হোক না কেন, আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অন্যরকম। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মাতৃগর্ভে একটি শিশুর পূর্ণতা প্রাপ্তির ২৮০ দিনের মধ্যে দুটো ফিমেল বা স্ত্রী ক্রোমোজোম এক্স-এক্স প্যাটার্ন ডিম্বানু বর্ধিত হয়ে জন্ম হয় একটি নারী শিশুর এবং একটি ফিমেল ক্রোমোজোম এক্স ও একটি মেল বা পুরুষ ক্রোমোজোম ওয়াই মিলে এক্স-ওয়াই প্যাটার্ন জন্ম দেয় পুরুষ শিশুর। ভ্রূণের পূর্ণতা প্রাপ্তির একটি স্তরে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে পুরুষ শিশুর মধ্যে অণ্ডকোষ এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে ডিম্বকোষ জন্ম নেয়। অণ্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ থেকে নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজন। পরবর্তী স্তরগুলোতে পুরুষ শিশুর যৌনাঙ্গ এন্ড্রোজেন এবং স্ত্রী শিশুর যৌনাঙ্গ এস্ট্রোজনের প্রভাবে তৈরি হয়। ভ্রূণের বিকাশকালে এই সমতা নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। প্রথমত ভ্রূণ নিষিক্তকরণ এবং বিভাজনের ফলে কিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সূচনা হতে পারে। যেমন এক্স-ওয়াই-ওয়াই অথবা এক্স-এক্স-ওয়াই। এক্স-ওয়াই-ওয়াই প্যাটার্নের শিশু দেখতে নারী-শিশুর মতো। কিন্তু একটি এক্সের অভাবে এই প্যাটার্নের স্ত্রী-শিশুর সব অঙ্গ পূর্ণতা পায় না। একে স্ত্রী-হিজড়াও বলে। আবার এক্স-এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে যদিও শিশু দেখতে পুরুষের মতো, কিন্তু একটি বাড়তি মেয়েলি ক্রোমোজম এক্সের জন্য তার পৌরুষ প্রকাশে বিঘ্নিত হয়। একে পুরুষ হিজড়াও বলে।

প্রকৃতির খেয়ালে হোক আর অভিশাপেই হোক, এই হিজড়াত্ব ঘোচাবার উপায় এখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নাগালে। চিকিৎসকদের মতে শিশু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আনা হলে অপারেশনের মাধ্যমে সে স্বাভাবিক মানুষের মতো পরিবারের মধ্যে থেকেই জীবন-যাপন করতে পারে। হয়তো সে সন্তান ধারণ করতে পারবে না, কিন্তু পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে না হয়তো। দেখা গেছে যে অসচ্ছল নিম্নশ্রেণীর পরিবার থেকেই বাইরে বেরিয়ে যাবার প্রবণতা বেশি। তখন তাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এরা না পারে নারী হতে, না পারে পুরুষ হতে। ফলে অন্যান্য অনেক অসঙ্গতির মতো হোমোসেক্স বা সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়ে যায়।

হিজড়া কি মানুষ নয় ?
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা হলো- দাসত্ব থেকে মুক্তির অধিকার, ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, কাজের অধিকার, মানসম্মত জীবন-যাপনের অধিকার, আইনের আশ্রয় ও নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার এবং বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার। এইসব অধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধের জন্য আরো বহু চুক্তি ও সনদও রয়েছে। কিন্তু এসব অধিকারের ছিটেফোটা প্রভাবও হিজড়াদের জীবনে কখনো পড়তে দেখা যায় না। মানবাধিকার বঞ্চিত এই হিজড়ারা তাহলে কি মানুষ নয় ?

মানুষের জন্মদোষ কখনোই নিজের হয না। আর হিজড়ারা নিজেরা বংশবৃদ্ধিও করতে পারে না। এ অপরাধ তাদের নয়। স্বাভাবিক পরিবারের মধ্যেই অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্ম। তবু প্রকৃতির প্রহেলিকায় কেবল অস্বাভাবিক লিঙ্গ বৈকল্যের কারণেই একটা অভিশপ্ত জীবনের অপরাধ সম্পূর্ণ বিনাদোষে তাদের ঘাড়ে চেপে যায়। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে একটা মেয়ে যদি ছেলে হয়ে যায়, কিংবা একটা ছেলে ঘটনাক্রমে মেয়ে হয়ে গেলেও এরকম পরিণতি কখনোই নামে না তাদের জীবনে, যা একজন হিজড়ার জীবনে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়। খুব অমানবিকভাবে যৌনতার অধিকার, পরিবারে সম্মানের সঙ্গে বসবাসের অধিকার, চাকরির অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার ইত্যাদি মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় এরা। কিন্তু এসব অধিকার রক্ষা ও বলবৎ করার দায়িত্ব ছিলো রাষ্ট্রের। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযাযী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে- ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আওতাধীন কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার’ প্রতিষ্ঠা করা। আদৌ কি কখনো হয়েছে তা ? অথচ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হিজড়ারা প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তার অভাবে পৈতৃক সম্পত্তির বা উত্তরাধিকারীর দাবি প্রতিষ্ঠা থেকেও বঞ্চিত থেকে যায়। এমন বঞ্চনার ইতিহাস আর কোন জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের হয়েছে কিনা জানা নেই।

প্রকৃতির নির্দয় রসিকতার কারণে হিজড়াদের গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন পদ্ধতির অনিবার্য যৌনতাকেও ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে সহজে মেনে নেওয়া হয় না। এমনকি ব্রিটিশ আমলেও এদেশে হিজড়াদের বিতাড়িত করা হয়েছে বলে জানা যায়। যৌনতার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় আইনে হিজড়াদের যৌনতাকে ‘সডোমি’ অর্থাৎ অস্বাভাবিক ও অনৈতিক হিসেবে চিহ্ণিত করে পেনাল কোড (১৮৬০) এর ৩৭৭ ধারায় এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মানবাধিকার রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ কখনো হাতে নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায় নি।

তাই বিবেকবান নাগরিক হিসেবে এ প্রশ্নটাই আজ জোরালোভাবে উঠে আসে, হিজড়ারা কি তাহলে রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিক নয় ? রাষ্ট্রের সংবিধান কি হিজড়াদের জন্য কোন অধিকারই সংরক্ষণ করে না ?

তবে খুব সম্প্রতি গত ০২ জুলাই ২০০৯ ভারতে দিল্লী হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ যুগান্তকারী এক রায়ের মাধ্যমে ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক’ ফৌজদারী অপরাধের তালিকাভুক্ত হবে না বলে ঘোষণা করেছে। ভারতের নাজ ফাউন্ডেশনের দায়ের করা এই জনস্বার্থমূলক মামলাটির রায়ে আদালত সমকামীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অপপ্রয়োগকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, গণতন্ত্রের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক বলে অভিমত দিয়েছে। আদালতের মতে এই প্রয়োগ ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত কয়েকটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, যেগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সমতা (অনুচ্ছেদ ১৪), বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা (অনুচ্ছেদ ১৫), জীবনধারণ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১)। রায়টির অব্যবহিত পরেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রায়টিকে স্থগিত করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের কাছে আবেদন করা হয় যা মঞ্জুর হয়নি (তথ্যসূত্রঃ। এই রায় ভারতের হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য এক বিরাট আইনি সহায়তার পাশাপাশি আমাদেরর দেশের জন্যেও একটা উল্লেখযোগ্য নমুনা হিসেবে উদাহরণ হবে। কেননা সেই ব্রিটিশ ভারতীয় এই আইনটিই আমাদের জন্যেও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হয়ে এখনো কার্যকর রয়েছে।

তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি নয় কেন ?
যুগ যুগ ধরে ফালতু হিসেবে অবজ্ঞা অবহেলা ঘৃণা টিটকারী টিপ্পনি খেয়েও বেঁচে থাকা ছোট্ট একটা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী এই হিজড়াদের জন্য রাষ্ট্রের কোন বাজেট বা কোন পুনর্বাসন কার্যক্রম আদৌ হাতে নেয়া হয় কিনা জানা নেই আমাদের। আমরা শুধু এটুকুই জানি, পরিবার ও সমাজের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হিজড়ারা বেঁচে থাকার তাগিদেই দলবদ্ধভাবে বসবাস করে বা করতে বাধ্য হয়। মানুষ হিসেবে তাদেরও যে অধিকার রয়েছে, তা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে হিজড়াদের উন্নয়নে হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠন খুব ছোট্ট পরিসরে হলেও মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, সুস্থ জীবন, বাঁধন হিজড়া সংঘ, লাইট হাউস, দিনের আলো ইত্যাদি সংগঠনের নাম কম-বেশি শোনা যায়। এদের কার্যক্রম ততোটা জোড়ালো না হলেও এইডস প্রতিরোধসহ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমে এরা যুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। সেখানে রাষ্ট্রের কোন অনুদান নেই। তাই রাষ্ট্রের কাছে হিজড়াদের প্রধান দাবি আজ, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি। কেননা এই লিঙ্গস্বীকৃতি না পেলে কোন মানবাধিকার অর্জনের সুযোগই তারা পাবে না বলে অনেকে মনে করেন।

তবে আশার কথা যে, এবারের ভোটার তালিকায় এই প্রথম হিজড়াদেরকে অন্তর্ভূক্ত করার প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ বিবেকবান মানুষের সমর্থনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থারও প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমরাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবু প্রায় এক লাখ হিজড়াকে এবারের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা এখনো রয়ে গেছে বলে জানা যায়। কেননা তাদেরকে তাদের নিজের পরিচয় হিজড়া হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি বা করা যায়নি। হয়েছে ছেলে বা মেয়ের লিঙ্গ পরিচয়ে, যেখানে যা সুবিধাজনক মনে হয়েছে সেভাবেই। ফলে এতেও হিজড়া হিসেবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের আদতে কোন স্বীকৃতিই মেলেনি। ফলে হিজড়াদের প্রাপ্য অধিকার ও মানুষ হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ আইনের দরকার হয়ে পড়েছে আজ, যেখানে যৌক্তিক কারণেই তাদের হোমোসেক্স বা সমকামিতার অধিকার প্রতিষ্ঠাও জরুরি বৈ কি। আর এজন্যেই আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে হিজড়াদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মানবিক দাবিটাও।

প্রিয় পাঠক, আপনার স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার ফাঁকে হঠাৎ করেই কোন হিজড়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে হয়তোবা স্বতঃকৌতুহলি হয়ে ওঠবেন আপনি। এই কৌতুহলের মধ্যে অজান্তেও কোন কৌতুক মেশাবার আগেই একটিবার অন্তত ভেবে দেখবেন কি, এই না-পুরুষ না-স্ত্রী সত্তাটি আপনার আমার মতোই সবক’টি নির্দোষ দৈহিক উপাদান নিয়েই কোন না কোন পারিবারিক আবহে জন্মেছিলো একদিন। মানবিক বোধেও কোন কমতি ছিলো না। কিন্তু প্রকৃতি তাকে দিয়েছে ভয়াবহ বঞ্চনা, যা আপনার আমার যে কারো ক্ষেত্রেই হতে পারতো ! অসহায় পরিবার ত্যাগ করেছে তাকে, অবিবেচক সমাজ করেছে প্রতারণা। নিয়তি করেছে অভিশপ্ত, আর রাষ্ট্র তাকে দেয়নি কোন সম্মান পাবার অধিকার। কোন অপরাধ না করেও ভাগ্য-বিড়ম্বিত সে কি আপনার আমার একটু সহানুভূতি থেকেও বঞ্চিত হবে ?
|তথ্য-কৃতজ্ঞতা|


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

প্রকৃতির কৌতুক বড়ই নির্মম!

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলেই তা-ই !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ঋদ্ধ [অতিথি] এর ছবি

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থেকে অনেক কিছুই জানলাম।

আচ্ছা, প্রকৃতির এই খেয়ালে যার এরূপ জন্ম হলো, কেন তার প্রতি এতো ঘৃণা? এই তিরস্কার পরিবার থেকেই তো শুরু হয়। তবে কি আমরা আজও মানুষ হতে পারিনি?

রণদীপম বসু এর ছবি

তবে কি আমরা আজও মানুষ হতে পারিনি?

আপনার সন্দেহ বোধ করি অমূলক নয় !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার লেখাটি খুবই সুলিখিত এবং দরকারি। কোনো প্রশংসাই এর জন্য যথেষ্ট নয়। তবু একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করেন। এই রকম লেখা ক'জন পড়বেন সত্যি সন্দেহ হয়, আমাদের জীবনের বাইরের গল্প নিয়ে আমাদের আর জানার কৌতূহল নেই আজকাল (আগেও কি কিছু অন্য রকম ছিলো?)। রঙচঙ দিয়ে মিশিয়ে লিখলে তবু লোকে পড়ে, তাই ভাবি আপনাকে অনুরোধ করি, যদি সহজপাচ্য করে কিছু লেখেন এই জাতীয় বিষয়ে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ঠিকই বলেছেন রাজর্ষি দা। আমাদের জীবনের বাইরের এই জীবনের গল্প হয়তো আমাদের অনেককেই আকৃষ্ট করবে না। যে ম্যাসেজটা রিপোর্ট আকারে সবার নজরে আনার চেষ্টা করছি, তা হয়তো সবাই পড়বেও না। আসলে এভাবেই প্রকৃত জীবনটা আমাদের অপাঠ্য থেকেই যায়।

কিন্তু কী করবো ! ওই যে- 'সহজ কথা যায় না বলা সহজে...'!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

চলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ কিংকং।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্নিগ্ধা এর ছবি

খুব, খুব ভালো লেখা রণদীপম!!

গত দশ পনেরো বছরে সমকামি এবং হিজড়াদের অধিকার নিয়ে সারা পৃথিবীব্যাপি যে আন্দোলন হয়েছে/হচ্ছে তার ফলে এখন ফেমিনিস্ট লিটারেচারে 'উইমেন' এর বদলে 'জেন্ডার' টার্মটাকে প্রধাণত ব্যবহার করা হয় - যেন শুধুমাত্র জননাঙ্গ দিয়ে নির্ধারিত 'নারী' এবং 'পুরুষ'এর সংজ্ঞা বা সীমারেখার বাইরে যারা পড়েন, তাদের অধিকারও সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

আবারও বলি - খুব ভালো পোস্ট হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতির দাবিটা আসলেই খুব যৌক্তিক আপা। এটা প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিৎ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটা একটা রণদা ক্লাসিক হইছে... ব্যাপক দূর্দান্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই। বেশ কিছুদিন থেকে মাথার মধ্যে ঘুরছিলো বিষয়টা। ভালো লাগছে অন্তত নিজের অনুভূতিটা কিঞ্চিৎ হলেও প্রকাশ করতে পারলাম বলে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা, রণদা। অনেক কিছু জানলাম। এই বিষয়টিতে অনেক সময় দিয়ে অনেক তথ্য যোগাড় করে পোস্ট দেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ যুধিষ্ঠির দা। একেবারে ভিন্ন একটা সংস্কৃতির জীবন-ধারার মধ্যে বেড়ে ওঠা এই বিষয়টাতে প্রচুর গবেষণার উপাত্ত রয়ে গেছে। কোন গবেষক যদি তাঁর সহনশীল শ্রম মেধা ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে যান, তাহলে আমরা আরো বহু বিচিত্র সব তথ্য ও রহস্যের খোঁজ হয়তো পেয়ে যেতে পারি। হিজড়াদের জীবন আসলে খুবই মানবেতর একট জীবন। শুধু সমাজ আর রাষ্ট্রের অবহেলায়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নদী এর ছবি

চমৎকার লেখা।
তবে ছবিটা না দিলেও চলত। (অনুমতি থাকলে ঠিক আছে)

নদী

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ নদী। আপনার মানবিক বোধ থেকে উৎসারিত মন্তব্যকে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
ছবিতে কোন সমস্যা হবে না মনে করেই দিয়েছি আসলে। হয়তো এতে উপকার হবার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। প্রত্যেক সপ্তায় তাদেরকে দেখি আমি। প্রতিটা দোকান থেকে তোলা তুলতে আসে। এরা প্রকাশিত হিজড়া, সবাই জানে। এবং এই পরিচয়েই সবার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে আসে। ছবিটা যখন তুলছি তখন দেখতে এই রমণী হিজড়া (অন্য হিজড়াদের চেহারায় এতোটা রমণীয় সৌন্দর্য্য দেখিনি, যদিও কণ্ঠে পুরুষালী টোন স্পষ্ট) দোকান থেকে নিয়মিত তোলা তুলছেন এবং আমার সাথে বাক্য বিনিময়ও হচ্ছে।
যদি তিনি হিজড়া হয়েও নিজকে অপ্রকাশিত রাখতে পছন্দ করতেন বা হিজড়া পরিচয় দিতে অপছন্দ করতেন, তাহলে এ ছবি দেয়ার প্রশ্নই আসতো না।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো রেফারেন্স। চমৎকার লেখা।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ পিপি দা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মামুন হক এর ছবি

ভালো লেখা রণদা। মানুষ হিসাবে সমঅধিকার সকলেরই প্রাপ্য। সরকার এবং সাধারণ মানুষ সবারই হিজড়েদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসা উচিৎ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই। আপনার মন্তব্যে সহমত।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সাধু এর ছবি

আজকে আপনার এই লেখার কোন তুলনাই হয় না । এই ব্লগে আমি আগে এরকম মানবিক লেখা দেখিনি। আন্তরিক ধন্যবাদ ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ সাধু দা। আপনার প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়েছি অবশ্যই। যদিও আপনার প্রশংসার পরিমাণটা আমার ওজন থেকেও বেশি হয়ে গেছে মনে হয়, তারপরও প্রশংসা পেলে নাকি পাথরও গলে যায়, আমি কোন ছাড় ! হা হা হা !
তবে এই ব্লগে প্রচুর মানবিক আবেগ ও আবেদন সমৃদ্ধ লেখা অনেকেই লিখেছেন এবং এখনো লিখছেন। আপনি যদি যথেষ্ট সময় নিয়ে এই ব্লগবাড়ির অন্দরে বিভিন্ন কোঠা-কন্দরে ঢুঁ মারেন, আশা করি আপনার মন-ভরানো সেইসব লেখার খোঁজ পেয়ে যাবেন অচিরেই।

আপনার মানবিক বোধকে সম্মান জানাচ্ছি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হিজড়া কি মানুষ নয় ?

আমাদের সমাজে মানুষের ন্যুনতম মর্যাদাটুকু কি তারা পায়! (দীর্ঘশ্বাস)

হিল্লোল নামের একটা এনজিও হিজড়াদের নিয়ে কাজ করতো। এখন আছে কিনা জানি না।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল। বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে এই সংগঠনগুলোর নাম নিয়েছি। তাই এ মুহূর্তে বলতে পারছি না 'হিল্লোল' নামের এনজিওটি সম্পর্কে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীল ভ্রমর [অতিথি] এর ছবি

রনদাকে অনেক ধন্যবাদ এমন লিখার জন্য।

কয়েকটা জিনিস মনে হয়েছে -

১। যে শিশুকে জন্মের সময়ই প্লাস্টিক সার্জারি করে ছেলে বা মেয়ের দলে ফেলা যায় তাকে তখনই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।

২। তাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা ও কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। হিজড়া দলগুলোর সর্দাররা নিশ্চই নিজেদের monopoly ব্যাবসা বন্ধ হতে দিবেনা। তাই তাদেরকে সচেতন করতে হবে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে।

৩। সরকারের আশায় বসে থাকা ঠিক না। উন্নত দেশগুলা থেকে আসা সাহায্য শুধুমাত্র তাদের AIDS থেকে রক্ষা করার জন্য আসবে। নিজ উদ্যগে তাদের কাজ দিতে হবে এবং রক্ষা করতে হবে অন্যদের বৈরিতা থেকে।

আমরা কি প্রতিবন্ধীদের সাথে ব্যবহার সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন গুলোতে হিজড়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনা? সম্ভবত হিজড়া community-র অসহযোগিতাও এই ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ নীল ভ্রমর। আপনার পয়েন্টগুলো আসলেই চিন্তাকর্ষক।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেকোন মানবিক বিপর্যয়কারী কোন ঘটনার অন্তরালে তা উত্তরণে প্রথমে একটা সিস্টেম গড়ে ওঠে এবং তা থেকেই পরবর্তীতে আকর্ষণীয় মুনাফাসমৃদ্ধ একটা ব্যবসাও দাঁড়িয়ে যায়। এটাই আবার শেষপর্যন্ত অবস্থা-উত্তরণের ক্ষেত্রে একটা বড়-সড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।

যারা হিজড়াদের অবস্থার উন্নয়নে আগামীতে উদ্যোগ নেবেন বা উদ্যোগে আছেন তাদের বোধে এই বিষয়টা থাকা উচিৎ মনে করি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কি আশ্চর্য !
শুধুমাত্র প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল বলে এই মানুষগুলোকে মানুষের মর্যাদা দিতেও আমাদেরকে কতোটা পথ পাড়ি দিতে হয় !!
এদের সম্পর্কে ডিটেইলস জানার ইচ্ছে ছিল বহুদিন থেকে।
অনেক ধন্যবাদ, রণ'দা। এইরকম একটা লেখার জন্য।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল আপা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবজান্তা এর ছবি

সাপ্তাহিক ২০০০-এই সম্ভবত হিজড়াদের নিয়ে পড়েছিলাম ( সেটাই কি আপনার লেখার তথ্যসূত্র ?)। লেখাটা সম্পর্কে শুধু আমি একটা কথাই বলি, মানবিক। অসাধারণ রকমের মানবিক হয়েছে লেখাটা। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা, আমাদের চেয়ে ভিন্নতর কোন মানুষের নূন্যতম বিচ্যুতিতেই তাঁকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি। এভাবেই বোধহয় এই পথ ক্রমশ আরো সরু হবে।

হিজড়াদের আমি আসলে এক অর্থে ভয় পাই। এই ভয়ের উৎস আসলে সেই ছোটবেলার অজ্ঞানতায় নিহিত। ভয়ের যে উৎস ভিতরে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিলো, তার থেকেই আজ অবধি পুরোপুরি বের হতে পারি নি, বহু চেষ্টা করেও। তবে আমি মনে প্রাণে স্বীকার করি এরা মানুষ, আমার মতোই। আমি যে অধিকার পাই, সবগুলি এদেরও পাওয়া উচিত। এখনও রাস্তা ঘাটে বিশেষত আজিজে সন্ধ্যার দিকে হিজড়ারা যখন চাঁদা তুলতে আসে, তখনো খুব অস্বস্তি লাগে, কিন্তু এ কথা জানি যে এ কয়টা টাকাই ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

বাংলাদেশে ওদের নিয়ে সরকার কতোটা সচেতন জানি না কিন্তু পাশের দেশ ভারতেও কিন্তু হিজড়ারা এম পি হতে পেরেছে। হয়তো সেখানে হিজড়াদের অবস্থা রাতারাতি উন্নতি হয় নি, কিন্তু এই অর্জনও খুব ছোট খাটো কিছু না। বাংলাদেশেও আমরা ওদের পাশে এসে দাঁড়াবো, ওদের আর ঘর ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না - এমনটাই আশা করি।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ সবজান্তা। ২০০০-এর লেখাটা আমার অন্যতম তথ্যসূত্র অবশ্যই, সাথে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ অনুসন্ধান।
আর লেখাটার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো সবার মধ্যে একটা মানবিক আবেদন ছড়িয়ে দেয়া। একজন মানুষের মধ্যেও যদি এক্ষেত্রে নতুন করে ইতিবাচক সাড়া জেগে উঠে, তাহলেও বলবো আমার উদ্দেশ্য বিফলে যায় নি। তবে যেকোন অবস্থাগত পরিবর্তনের জন্য এই সংখ্যা যত বেশি হবে ততই বেশি প্রভাবদায়ী ফলাফল বয়ে আনবে। আমাদের সবার মধ্যে চিরায়ত মানবিক বোধ জেগে উঠুক, সেই স্বপ্ন নিয়েই তো বেঁচে থাকি !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দিগন্ত এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর লেখা। মন ও হৃদয় ছুঁয়ে গেল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ দিগন্ত দা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দিগন্ত এর ছবি

আপনি আমাকে দাদা বলেন যে !!!!!!!!!!! নাম ধরেই বলুন না ... ডিসেম্বরে ঢাকা এলে দেখা হবে হাসি ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! ঢাকাতে আপনাকে আগাম স্বাগত জানিয়ে রাখলাম। সম্বোধনটা কোন বিষয়ই না। দেখা হলে তখন না হয় সম্বোধন আড্ডা বসিয়ে তা ঠিক করে নেয়া যাবে।
আর এইমাত্র পোস্টে কিঞ্চিৎ এডিট করলাম, মানে দিল্লী হাইকোর্টের গত ২জুলাই ২০০৯-এর 'সমকামিতা অপরাধ নয়' শীর্ষক রায়টির তথ্যটা মুক্তাঙ্গন-নির্মাণ ব্লগের তথ্যলিঙ্কসহ 'হিজড়া কি মানুষ নয়?' অনুচ্ছেদের নিচে জুড়ে দিলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

রণদা, অসম্ভব প্রয়োজনীয়, সুন্দর এই লেখাটার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ গৌতম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানভীর এর ছবি

রণদা, অসাধারণ মানবিক লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

স্রেফ কৌতুহল থেকে একটা প্রশ্ন ছিল। 'হিজড়া' শব্দের উৎপত্তি কীভাবে? শব্দটি কি অনেকটা তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হতো? আমার কাছে কেন জানি সেটাই মনে হয়। হুমায়ুন আহমেদের 'ব্হন্নলা' নামে একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। ভাল লেগেছিল, হিজড়া শব্দটা ব্যবহার না করেও এদের একজনের গল্প সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল। আজকাল অন্ধ, পঙ্গু এসব শব্দ ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করা হয়। পরিবর্তে দ্ ষ্টি বা শারিরীক প্রতিবন্ধী ভালো শোনায়। এদেরকেও কি তেমনি আমরা 'শারিরীক প্রতিবন্ধী' বলতে পারি? অবশ্য লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল- আমরা মানুষ হিসেবে কেউ পুরুষ বা নারী। কিন্তু এদের মাঝেই শুধু এ দু'টো সত্তার সম্মিলন রয়েছে। সে হিসেবে এরাই হয়তো পরিপূর্ণ মানুষ। কে জানে আজ যদি এরা প্ থিবীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো, তবে আমরাই হয়তো সেক্ষেত্রে শারিরীক প্রতিবন্ধী বিবেচিত হতাম।
আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

কিন্তু এদের মাঝেই শুধু এ দু'টো সত্তার সম্মিলন রয়েছে। সে হিসেবে এরাই হয়তো পরিপূর্ণ মানুষ।

কথাটা বেশ থট প্রোভোকিং!

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ তানভীর ভাই।
এ মুহূর্তে আপনাকে হিজড়া শব্দের উৎপত্তি-সূত্র জানাতে পারছি না। ধারণা করি এটা উত্তর-ভারতীয় শব্দ। ভারতেও সম্ভবত অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে এই হিজড়া শব্দটাই প্রচলিত ( ভুল হলে যে কেউ সংশোধন করে দিলে কৃতজ্ঞ হবো)। তবে অবজ্ঞা বা তুচ্ছার্থে হলেও সর্বক্ষেত্রেই দেখি এই হিজড়া শব্দটাকেই ব্যবহার করা হয়।

বৃহন্নলা একটা মিথিক চরিত্র। মহাভারতে বর্ণিত পাণ্ডবদের বারো বছরের অজ্ঞাতবাসকালীন তৃতীয় পাণ্ডব অর্থাৎ অর্জুণ এই বৃহন্নলা নাম ধারণ করে ক্লীব চরিত্রে আত্মগোপন করেছিলেন। ওখানে ক্লীব বলতে না-পুরুষ না-নারী'র এই হিজড়া পুরুষকেই বুঝানো হয়েছে। যদিও ওখানে দেখানো হয়েছে পুরুষত্বহীন পুরুষ অর্থাৎ নপুংষক হিসেবে। বাংলা ব্যাকরণেও লিঙ্গ প্রভেদে আমরা এই ক্লীব লিঙ্গ পেয়েছিলাম, যা পুং বা স্ত্রী কোনোটাতেই পড়ে না।

আর আপনার মন্তব্যের শেষ অংশের বক্তব্যটা সেই কথাটারই প্রতিধ্বণি- ইতিহাস বা ক্ষমতা চিরকাল বিজয়ীর পক্ষেই কথা বলে।

ও হাঁ, হিজড়ারা কিন্তু নিজেদেরকে প্রতিবন্ধী হিসেবে মানতে রাজী নন। এজন্যই এরা তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি চান।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভীষণ জরুরি পোস্ট, রণ'দা। দুর্দান্ত লেখা। সুচিন্তিত ও সুলিখিত। চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ প্রহরী। আপনি কি স্বদেশে দৃশ্যমান হয়েছেন ? নাকি এখনো সীমানার বাইরে অদৃশ্য অবস্থায়...?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

রণ'দা, আমি স্বদেশে দৃশ্যমান দেঁতো হাসি

অফটপিক: 'আপনি' তো অনেক হলো, এবার একটু 'তুমি' ট্রাই করে দেখবেন কি? হাসি

দময়ন্তী এর ছবি

খুব প্রয়োজনীয় লেখা৷
শবনম মৌসি'র কথা মনে পড়ল৷
---------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ দময়ন্তী। শবনম মৌসি'র বিষয়টা আরেকটু খুলে বলবেন কি ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মূলত পাঠক এর ছবি

শবনম "মৌসি" বানো সেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বিশদ জানতে এখানে দেখুন, বা এখানে। এঁকে নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে, "শবনম মৌসি" নামেই। পঙ্কজ শুক্লার রিভিউ এখানে।

এই মূল বিষয়টি নিয়ে পূজা ভাট একটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন, তমন্না নামে। পরিচালক মহেশ ভাট।

রণদীপম বসু এর ছবি

লিঙ্কগুলোর দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ রাজর্ষি দা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মূলত পাঠক এর ছবি

আরে মশাই এমন দাদাদাদা করলে লজ্জা পাই যে, নাম ধরেই ডাকেন না। একেবারে কচি খোকাটি না হলেও বয়োবৃদ্ধও নই, তাছাড়া নাম ধরে কনিষ্ঠেরা ডাকলেও মনে করি না।

রণদীপম বসু এর ছবি

সম্বোধন কোন সমস্যাই নয়। তারপরও এই চক্ষু-কর্ণের বিবাদ-ভঞ্জনে প্রয়োজন রবাহুতের মতো আচমকা সামনে এসে বলে ফেলা- ওই মিয়া, পাইছেনটা কী ! হা হা হা !

চলে আসেন না একদিন বাদাইম্যাদের আড্ডায় ! দেখবেন, বাদাইম্যা কত পদের হয় ও কি কি ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জাহিদ হোসেন এর ছবি

একটি খুবই ভালো এবং দরকারী লেখা। আপনাকে সাধুবাদ দিচ্ছি তার জন্যে। আমরা বা আমাদের সৃষ্ট এই সমাজ সংখ্যাগরিষ্টদের সমাজ। তাই কোন কিছু নতুন (গ্যালেলিওর থিওরী) , বা সমকামীতার মতোন নতুন জীবনযাত্রাকে মেনে নিতে সময় লাগে। যা দরকার তা হোল শিক্ষা আর টলারেন্স।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারতের শিখণ্ডির সাথে পরিচিত হবার আগে আক্ষরিক অর্থেই একেবারে অজ্ঞানে ছিলাম এই জনগোষ্ঠির বিষয়ে....

তারপর বারোয়ারি চক্করের ফাঁকে প্রায় এক বছর এদের সঙ্গে কাজও করা হয়েছিল

এবং তখনই জেনেছিলাম এদেরকে না মানুষ বিবেচনার অনেকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য

ক) আদমশুমারিতে এদের বেশিরভাগকেই দেখানো হয় পুরুষ হিসেবে
(বাংলাদেশে নারীর তুলনায় পুরুষের অনুপাত বেশি হবার একটা প্রধান কারণ এটা)

খ) বিদেশ ভ্রমণে এদের পড়তে হয় সবচে বেশি অসুবিধায়। ভিসা ফর্মগুলোতে এদের জন্য কোনো ঘর নেই
হয় পুরুষ কিংবা নারীর ঘরে এদের টিক দিতে হয় আবার ইমিগ্রেশনে গিয়ে পড়তে হয় পরিচয় লুকানোর অপরাধের মুখোমুখি

গ) বাংলাদেশে এদের জন্য পাসপোর্ট করতে হলেও পরিচয় দিতে হয় পুরুষ অথবা নারী

আর স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় অনেকেই পাসপোর্ট পায়ও না

০২

অন্য আরেকটা বিষয়ও সত্য
হিজড়া সর্দাররা অনেক সময়ই স্বাভাবিক শিশু চুরি করে এনে হিজড়া বানায় নিজেদের ব্যবসার জন্য....

০৩

ধন্যবাদ রণদা বিষয়টা নিয়ে আসার জন্য

রণদীপম বসু এর ছবি

মহাভারতের যুগের মহাবীর ভীষ্ম অনেক বেশি মানবিক ছিলেন বলেই অর্জুনের রথচালক ক্লীব শিখণ্ডিকে দেখে ধনুর্বাণ ছোঁড়া বন্ধ রেখে নিজেই শরশয্যা নিয়েছিলেন অর্জূণের বাণে।

আর বর্তমান যুগে অমানবিক আমরা ? তাঁদেরকে শরবাণে জর্জরিত করে সমাজ থেকেই বের করে দিচ্ছি। হাহ্ সভ্যতার অবদান !

ধন্যবাদ লীলেন ভাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সোমশুভ্র এর ছবি

অত্যন্ত মানবিক লেখা। হৃদয়কে স্পর্শ করল। অভিনন্দন জানাই এমন একটি সুচিন্তিত লেখা উপহার দেবার জন্য।

রণদীপম বসু এর ছবি

অনেকদিন পর হঠাৎ করে পোস্টে ঢুকলাম। তাই বিলম্বজনিত ধন্যবাদ প্রাপ্তিতে মনক্ষুণ্ন হবেন না আশা করি। ভালো থাকবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রণদীপমদা,

ভালো একটা প্রসঙ্গে লিখেছেন। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সাথে ঝর্না রায়ের লেখাটা ও পড়লাম। তাঁকে ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

রণদীপম বসু এর ছবি

শুভাশীষ দা, সাবমেরিন কেবলে নাকি মেরামত কাজ চলছে, তাই বাংলাদেশে বিকল্প ব্যবস্থায় চালু রাখা ইন্টারনেটের গতিতে নতুন পোস্ট দেয়া তো দূরের কথা, মন্তব্যের জবাবে একটা ধন্যবাদ জানাতেই দম বেরিয়ে যাবার অবস্থা।
দম বেরিয়ে গেলে আর থাকলোটা কী ! তাই এ পোস্ট পড়ার জন্য প্রাপ্য ধন্যবাদটা আরেকদিন দেই ? হা হা হা ! ভালো থাকবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জামিল পারভেজ এর ছবি

ভালো লাগছে। তারাও মানুষ । ।আর মানুষ মানুষের জন্য তাই নয় কি?

রণদীপম বসু এর ছবি

হাঁ, এরকমই কথা ছিলো। কিন্তু কথা থাকলেও আমরা সবাই হয়তো তা মানি না....
ব্লগ ভ্রমণ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রশিদা আফরোজ এর ছবি

ভালো লাগলো।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
বহুদিন পর পাকচক্রে এই পোস্টে ঢুকে আপনার প্রাপ্য ধন্যবাদটা পরিশোধ করতে পারলাম বলে ভালো লাগছে, হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অনেক বিস্তারিত লেখা।

হ্যাটস অফ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানভীর হোসেন এর ছবি

তাদের সম্পর্কে আমার অনেক দিনের আগ্রহ। আপনার লেখা টা পড়ে অনেক ভাল লাগলো। দুই বছর পর কেউ আপনার লেখাটি পড়লো দেখে হয়তো অবাকই হলেন।

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলে কিছু উপলব্ধি থাকে চিরন্তন মানবিক। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রণদীপম বসু এর ছবি

এই লেখাটা তৈরি করেছিলাম ২০০৯ সালে। এতোদিন পরে এসেও আজ জেনে খুব ভালো লাগছে যে, বর্তমান সরকার এই অবহেলিত গোষ্ঠি হিজড়াদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে যুগান্তকারী একটি আইন পাশ করেছেন। সরকারের এই বিষয়টাকে দারুণভাবে অভিনন্দিত করছি !
নিউজলিংকটি এখানে : http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article698158.bdnews

বিডিনিউজের পুরো বক্তব্যটা হলো

হিজড়াদের ‘লিঙ্গ পরিচয়কে’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বাংলাদেশ সরকার।

এর ফলে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে তাদের লিঙ্গপরিচয় ‘হিজড়া’ হিসাবে উল্লেখ করা হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ঘোঁচাতেও কার্যকর হবে এই স্বীকৃতি।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত ‘নীতিমালা’ অনুমোদন করা হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছেন।”

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়। ফলে সরকারি সুবিধাও তাদের কাছে পৌঁছায় না। এ কারণেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় তোলে বলে সচিব জানান।

“এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসাবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’।”

নথিপত্রে ইংরেজিতেও ‘হিজড়া’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারো লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসাবে।

বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের ‘নিচু’ দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গাতেই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন।

হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সরকার আগেই তাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।