| দুই-মেগাপিক্সেল…| যা দেবী সর্বভুতেষু |

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৯/২০০৯ - ১১:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিকেল তখন সাড়ে পাঁচটা হবে। প্রান্তিককে নিয়ে বেরিয়েছি মহাসপ্তমীর পূজোমন্ডপ দেখাতে। পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম। যে কোন কারণে একটা অমার্জনীয় ভুল করে বসে আছি। পুজো উপলক্ষে ওর জন্যে নতুন কাপড় কেনা হয়নি। তা মোচন করাটাও জরুরি। আজ তাও সারতে হবে। রিক্সায় বাপ-বেটা পাশাপাশি বসে তার বিরতিহীন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। অতন্দ্র প্রহরী। ‘ দাদা, জুবায়ের ভাইর অনুষ্ঠানে যাবেন না ?’
হাঁ, যাবো তো !

সচলায়তনের রক্তের সাথে মিশে থাকা প্রয়াত জুবায়ের ভাইয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ওখানে তো যাবোই, সবাইকে তা বলেছিও। অচেনা জায়গা হিসেবে লোকেশানটা ভালোভাবে বুঝে নিতে তাই প্রহরীকে বললাম- আচ্ছা কাল কখন কিভাবে রওয়ানা দিতে হবে বলেন তো।
ওদিকে প্রহরীর বিস্ময়- কাল মানে ! অনুষ্ঠান তো আজ !
আরে বলে কী ! দ্বিতীয় অমার্জনীয় ভুল ! গত দুদিনের ঈদ-ভাঙা অফিস করেছি কোন নোট বা ড্রাফ্টবিহীন আয়েশী আমেজে। অর্ধেক লোক ছুটিতে আর বাকী অর্ধেক এসেছেন আড্ডার মেজাজে। কোথাও তারিখ বসানোর বালাই ছিলো না। এ জন্যেই কি মাথার ঘড়িতে ২৫ তারিখটা যে কোন কারণে শনিবার হিসেবে গেঁথে আছে ! অথচ ওই তারিখটা আজ শুক্রবার।

দশ-এগারো বছরের বাচ্চারা বোধ করি অভিমানী হয় খুব। আমার অসহায়তা টের পেয়েই কিনা প্রান্তিকের চোখের ভাষা পাল্টে গেলো। যা ফুটে উঠলো তার পাঠোদ্ধার করলে হয়তো এই দাঁড়ায়- ‘ঠিক আছে বাপি, আজ না হয় বাসায় ফিরে চলো। আমাকে নামিয়ে দিয়ে তুমি অনুষ্ঠানে চলে যাও।’ বুকটা কেমোন মোচড় দিয়ে ওঠলো। ফোনে প্রহরীকে সাথে সাথে অনুরোধ করলাম, আমার হয়ে যেনো সে আনিস ভাইয়ের কাছে ক্ষমাটুকু চেয়ে নেয়।

.
auto

মিরপুর পোস্ট অফিসের বিপরীত দিকে মিরপুর কলেজ ও সিটি কর্পোরেশানের মিরপুর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের মধ্যে দিয়ে ঢুকে যাওয়া রাস্তাটা ধরে প্রায় দেড়-দুশ গজ এগুলেই ফজিলাতুননেছা ডিগ্রী কলেজের পাশেই সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। এবারই এখানে প্রথম পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার বিশাল একটা এলাকা নিয়ে এতোবড়ো মিরপুরে এ যাবৎ কোন সার্বজনীন পূজো-মন্দির নেই, বিশ্বাসযোগ্য না হলেও তা-ই সত্যি। এই এলাকা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পুজো দেখতে ঢাকার অন্য প্রান্তে যাওয়া আর নিজেদের পুজোর বলি ঘোষণা করা যে সমার্থকই বলা যায়, তা ভুক্তভোগীমাত্রেই জানেন। ফলে গতবছর ঢাকায় থেকেও বাচ্চাকে পুজো দেখানোই হয় নি। এই নগর আর তার সিস্টেম আমাদের পিঞ্জরাবদ্ধ শিশুদেরকে তাদের অধিকার থেকে বহুভাবেই বঞ্চিত করেছে। আমাদের আগামী দিনের কাণ্ডারি এই শিশুদের কাছে আমরা কতোভাবে যে অপরাধী হয়ে ওঠছি, এর কোন ইয়ত্তা নেই।

.
auto

যাক এবারই সরকার থেকে মন্দিরের জন্য কিছু সরকারি খাশ জমি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পেয়ে খুব উৎসাহের সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই পূজার আয়োজন। দূর্গাপ্রতিমা দেখিয়ে প্রান্তিককে নিয়ে ছুটলাম নতুন কাপড়-জুতোর সন্ধানে ব্যবসায়ী নামের সেই গোষ্ঠিটার আয়ত্তের মধ্যে, যাদেরকে আজকাল প্রকৃত কসাই বললেও খুব কম বলা হয়। কেন যেন মনে হয়, ব্যবসায়ী হলে, বিশেষ করে শিশুদ্রব্য বিক্রেতাদের বোধ করি কোন সন্তান থাকে না। নইলে শিশুদেরকে প্রলুব্ধ করে তার অভিভাবকদেরকে নির্মম ফাঁদে ফেলার এতো জঘন্য রুচি এই দেশে এই জনগোষ্ঠির মধ্যে কিভাবে সম্ভব !

.
auto

বাসায় ফিরে থিতু হয়ে উঠতে পারি নি, টিভির ব্রেকিং-নিউজটা শুনেই চমকে উঠলাম। এই পোস্টের ড্রাফ্ট যখন তৈরি করছি অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ রাত দশটায় ‘দেশ’ টিভির ব্রেকিং নিউজে চলমান লেখাটায় দেখা যাচ্ছে- ‘রাজধানীর বনানিতে গুলশান পূজামণ্ডপ মাঠ থেকে মাস্কিং টেপ প্যাঁচানো বিস্ফোরক সদৃশ কালো বস্তু উদ্ধার।’ অথচ ঘণ্টা খানেক আগে তাদেরই নিউজটা পড়ে আরো বেশি আৎকে উঠেছিলাম- ‘গুলশান পূজামণ্ডপের দেয়াল ঘেষে অবিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার।’

কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার ! কোনটা সত্য কে জানে। তবে উদ্ধারকৃত বস্তুটি কী, তা নিশ্চিত করে এখন পর্যন্ত কেউ বলছে না। বিষয়টা কি আতঙ্কজনক নয় ? হয়তো আগামীকাল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পুজো দেখার ইচ্ছেটাই খুন হয়ে গেলো। সেই কোন বৈদিক যুগের দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গা, কথিত বহু অসুর নাশ করেও এ যুগে এসে নিজেই এখন অসুরের কব্জায় !


মন্তব্য

বর্ষা এর ছবি

অনেকদিন পর ঢাকার দূর্গাপ্রতিমা দেখে ভালো লাগলো। ইয়ে যদি সময় হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বেত পাথরের প্রতিমার ছবি যদি আপলোড করতেন!!!

********************************************************
এক মৎস্যকন্যার কথিকা

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি একটা বিপ্লব ঘটায়ে দিবেন মনে হইতেছে। চলুক...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ছোটবেলার স্মৃতি মনে করায়া দিলেন। হিন্দুপাড়ায় থাকতাম। তাই পুজোর সময়টা দারুণ কাটতো।

কতো বছর যে পুজো দেখা হয় না...

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রহরী, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, মোবাইল ম্যাসেজটা পেয়েছি।

পূজা দেখে আসতে পারেন তো। আপনার বাসা থেকে বেশি দূরে হবে না মনে হয়। কাছেই। তবে হাঁ, ছোটবেলা আর আসবে না। যা গেছে, সত্যিই গেছে...।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হাসি

হুমম, ব্যাপার সেটাই। ইদানীং সবকিছুই কেমন যেন যান্ত্রিক লাগে। ছোটোবেলার সেই মজাটা আর পাই না.. মন খারাপ

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

-- নতুন কাপড়-জুতোর সন্ধানে ব্যবসায়ী নামের সেই গোষ্ঠিটার আয়ত্তের মধ্যে, যাদেরকে আজকাল প্রকৃত কসাই বললেও খুব কম বলা হয়। কেন যেন মনে হয়, ব্যবসায়ী হলে, বিশেষ করে শিশুদ্রব্য বিক্রেতাদের বোধ করি কোন সন্তান থাকে না। নইলে শিশুদেরকে প্রলুব্ধ করে তার অভিভাবকদেরকে নির্মম ফাঁদে ফেলার এতো জঘন্য রুচি এই দেশে এই জনগোষ্ঠির মধ্যে কিভাবে সম্ভব !

দাদা এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে সোচ্চার হওয়া যায় তার একটা উপায় বের করেন।

জুবায়ের ভাইর অনুষ্ঠানে আপনাকে মিস করেছি। সচল এর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য (অতিথি লেখক) ছিলাম আমি। অনেক সচল এর সাথে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগলো। আশাকরি আপনার সাথেও আর একদিন হবে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পূজার সময় মন্ডাখাজা আর মাটির তৈরী খেলনা কেনা হতো। কত মধুর ছিল সেই দিনগুলি!

তানভীর এর ছবি

শারদীয় শুভেচ্ছা।

দূর্গাপ্রতিমা দেখিয়ে প্রান্তিককে নিয়ে ছুটলাম নতুন কাপড়-জুতোর সন্ধানে ব্যবসায়ী নামের সেই গোষ্ঠিটার আয়ত্তের মধ্যে, যাদেরকে আজকাল প্রকৃত কসাই বললেও খুব কম বলা হয়। কেন যেন মনে হয়, ব্যবসায়ী হলে, বিশেষ করে শিশুদ্রব্য বিক্রেতাদের বোধ করি কোন সন্তান থাকে না। নইলে শিশুদেরকে প্রলুব্ধ করে তার অভিভাবকদেরকে নির্মম ফাঁদে ফেলার এতো জঘন্য রুচি এই দেশে এই জনগোষ্ঠির মধ্যে কিভাবে সম্ভব !

দুনিয়াজোড়া উৎসবের সময় জিনিসের দাম কমে আসে, নানা রকম 'সেইল' হয়; আর আমাদের দেশে কেন দাম বাড়ে এটাই আমি ঠিকমতো বুঝতে পারি না। এই ব্যবসায়ীরা সব কসাইয়েরও অধম- সবচেয়ে নিকৃষ্ট যদি কিছু থেকে থাকে তা-ই। মাঝে মাঝে দেশে নাই এটা ভেবেও শান্তি লাগে যে এগুলো আর দেখতে হয় না।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বনানীর কারবারটা বুঝতে পারছি না। এখন বলছে বোমা নয়, আগে কিন্তু রেব জোর দিয়ে বলেছে গ্রেনেড।

ঐ সময় জুবায়ের ভাইয়ের বাসা থেকে বনানীর মাঠে পূজো দেখতে আর ছবি তুলতে যাওয়ার জন্য অরূপকে ফুসলাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার মেয়ের আপত্তিতে যাওয়া হয়নি।

এতো এতো নিরাপত্তার বেড়াজালে এসব আসে কোথা থেকে কে জানে !

মূলত পাঠক এর ছবি

দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা, রণদীপম ও সবাইকে।

অন্য খবরটা তো ভয়ানক!

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

পড়লাম। দেখলাম।
ভালো লাগলো দাদা।
ভালো থাকেন। হাসি

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক

আরো চাই খাইছে

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মিঠুন কুমার সমাদ্দার এর ছবি

লেখা পড়ে ভাল লাগলো, অনেক কিছু জানতে পারলাম। আগে জানতাম যে পুরোনো ঢাকায় ই শুধু পুজো হয়....অন্য জায়গায় ও হয় জেনে ভাল লাগল........

কিছু মানব ফাঁদের কথা লিখেছেন...চমৎকার
কিছু শুরু করুন ওদের বিরুদ্ধে
জেনে রাখবেন "কবির জন্যে এই অরণ্যে আমরা সবাই..আমরা সবাই আমরা সবাই........................."

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ মিঠুন।
শুধু কবির জন্য কেন ! আমরা সবার জন্য সবাই হতে চাই...
ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।