| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০২ |

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: সোম, ০৮/০২/২০১০ - ৯:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বইমেলা মানেই হচ্ছে হরেক রকমের অগুনতি বইয়ের মেলা। তবে এটা কোন শেষ কথা নয়। আসলে নানা রঙের দর্শনার্থী মানুষেরই মেলা এটা। এবং চূড়ান্ত বিচারে লেখক-পাঠক-ক্রেতার মেলা। একজন দর্শনার্থীকে পাঠক থেকে ক্রেতার ভূমিকায় টেনে আনার কৌশলই হচ্ছে বইমেলার মূল দর্শন। আর এই দর্শনটাকে সফল করে তোলার লক্ষ্যেই যা কিছু আয়োজন। শেষ বিচারে মেলার সার্থকতাও ওখানেই। তাই একজন ব্যক্তি হিসেবে আমরা যখনই মেলায় ঢুকবো, আসলে একজন দর্শনার্থী হিসেবেই ঢুকবো। মেলার সমস্ত নান্দনিকতা সাজানো হয় একজন দর্শনার্থীকে সফলভাবে আকৃষ্ট করার সর্বোচ্চ আগ্রহ নিয়েই। মেলার শৃঙ্খলা, প্রকাশনার স্টল সাজানো কিংবা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা একজন দর্শনার্থীর রুচি ও সাচ্ছন্দ্যের বিষয়টাকে মাথায় রেখেই সম্পন্ন করা হয়। সার্বিক আবহের সাথে সচ্ছন্দভাবে মিশে গিয়ে একজন দর্শনার্থী যখন মেলার সাথে একাত্ম হয়ে যাবেন, তখনই তিনি দর্শনার্থী থেকে পাঠকে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবেন। তিনি স্টলে স্টলে ঢুঁ মেরে এটা ওটা ওল্টেপাল্টে নাড়াচাড়ার মধ্যে দিয়ে খুব অজান্তেই পাঠক হিসেবে অভিনীত হতে থাকবেন। আর চূড়ান্ত অঙ্কে এসে পাঠকরুচির সার্থক প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে একটি সফল প্রকাশনা তাঁকে একজন অনিবার্য ক্রেতা হিসেবে উপস্থাপন করবে। অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে একজন ক্রেতার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে একটি একক চক্র পূর্ণ হবে। এরকম অজস্র চলমান চক্রের সমন্বিত বিশাল সব ঢেউয়ের ধারাবাহিক বহমানতাই এই একুশে মেলার প্রাণ।

প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা না হয় এই চক্রের প্রাথমিক অবস্থানে এখন একজন দর্শনার্থী হিসেবেই অভিনীত হই।

মেলার চত্বর:
যদি তুলনা টানি, তাহলে বলতেই হবে, গতবারের তুলনায় এবারের মেলাটাকে আরেকটু সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। অন্যবারের চেয়ে কিছুটা খোলামেলা ও গুছানো ভাব চোখ এড়ায় না। আর এই খোলামেলা ভাবটাকে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় রূপদান করতেই বোধ হয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ এবার মেলার একেকটা অবস্থানকে একেকজন ব্যক্তিত্বের নামে চিহ্ণিত করার সাময়িক প্রয়াস নিয়েছেন। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানগুলোকে আমরা একেকটি ছোট ছোট চত্বর বা কর্ণার হিসেবেও বিবেচনায় নিতে পারি।

[বড় করে দেখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ছবিতে ক্লিক করুন।]

ছবি ০১- রবীন্দ্র চত্বর:
বর্ধমান হাউসের ঐতিহ্যবাহী সাদা দালানটার দক্ষিণপাশের চত্বরটাতে যেখানে বাংলা একাডেমীর মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে, সেই জায়গাটাকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামেই সাময়িকভাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।
auto

ছবি ০২- নজরুল চত্বর:
বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত স্থান নজরুল মঞ্চের ঠিক সামনের চত্বরটা চিহ্ণিত হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে।
auto

ছবি ০৩- ধীরেন্দ্রনাথ চত্বর:
ভাষা আন্দোলনের উত্থাল সময়টাতে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে যিনি বাংলাকে মাতৃভাষার দাবীতে প্রথম সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন, সেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে নজরুল মঞ্চের পেছনের চত্বরটাকে চিহ্ণিত করা হয়েছে।
auto

ছবি ০৪- জব্বার চত্বর:
বাংলা একাডেমী পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র সংলগ্ন সামনের রাস্তাটা চিহ্ণিত হয়েছে ভাষাশহীদ জব্বারের নামে।
auto

ছবি ০৫- বরকত চত্বর:
জব্বার চত্বরের লাগোয়া দক্ষিণ পাশেই রয়েছে বরকত চত্বর।
auto

ছবি ০৬- সালাম চত্বর:
বাংলা একাডেমীতে স্থাপিত ভাস্কর্য-স্থাপনা ‘মোদের গরব’-এর লাগোয়া উত্তর পার্শ্বস্থ অংশটা হচ্ছে সালাম চত্বর।
auto

ছবি ০৭- রফিক চত্বর:
ভাস্কর্য-স্থাপনা ‘মোদের গরব’-এর দক্ষিণ পার্শ্বস্থ জায়গাটা হলো রফিক চত্বর।
auto

ছবি ০৮- ড. মু: শহীদুল্লাহ চত্বর:
সালাম চত্বরের লাগোয়া উত্তর অংশটাই হলো বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র নামে।
auto

ছবি ০৯- সাহিত্যবিশারদ চত্বর:
শহীদুল্লা চত্বরের পাশ দিয়ে একুশে ভবনের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের নামে চিহ্ণিত হয়েছে।
auto

ছবি ১০- শফিউর চত্বর:
সাহিত্যবিশারদ চত্বরের লাগোয়া উত্তরে নির্মানাধীন একুশে ভবন সংলগ্ন জায়গাটা চিহ্ণিত করা হয়েছে ভাষাশহীদ শফিউরের নামে।
auto

ছবি ১১- সোমেন চত্বর:
বর্ধমান হাউসের পশ্চিম পার্শ্বস্থ চত্বরটাকে দেশ বিভাগকালীন দাঙ্গায় ঢাকায় মিছিলরত অবস্থায় নিহত শহীদ লেখক সোমেন চন্দের নামে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এই চত্বরেই লিটল ম্যাগাজিন স্টলগুলোর নতুন সারিবদ্ধ অবস্থান। এবং পাশে অন্যবারের লিটলম্যাগ চত্বরটাকেই এবার লেখক কুঞ্জের জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।
auto

ছবি ১২- বেগম রোকেয়া চত্বর:
সোমেন চত্বরের উত্তর পাশের চত্বরটাকে মহীয়সি নারী বেগম রোকেয়ার নামে চিহ্ণিত করা হয়েছে।
auto

ছবি ১৩- সুফিয়া কামাল চত্বর:
বেগম রোকেয়া চত্বরের লাগোয়া উত্তরে নির্মানাধীন একুশে ভবনের দেয়াল সংলগ্ন অংশটাই কবি সুফিয়া কামাল চত্বর।
auto

প্রতিটা চত্বরকে ঘিরে এবারের বইমেলার স্টলগুলোকে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে স্টলগুলোতে তেমন বড়সড় কোন বৈচিত্র্য না এলেও কিছুটা তো এসেছে অবশ্যই। তবে মেলার আবহে এসেছে চমৎকার এক মাত্রিক বিন্যাস। দৃষ্টিনন্দন এই শিল্প-সৌকর্য মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মনেও চমৎকার প্রভাব ফেলবে বলেই মনে হয়।
...
বিঃদ্রঃ- পুরনো কথা, ছবি ও লেখা জটলা বেঁধে চক্ষুপীড়ার কারণ হলে নিরাপদে এখানে দেখুন

(চলবে…)

পর্ব: [০১][*] [০৩]


মন্তব্য

শাফক্বাত এর ছবি

হুম্মম, এখনো মেলায় যেতে পারলাম না তাই বসে বসে মেলা-সংক্রান্ত লেখা পড়ি। সত্যি মনে হচ্ছে এবার মেলার আয়োজন অনেক সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফসল; অনেক গোছানো হয়েছে। ধন্যবাদ আমার মত ঘরে আটকে পড়া মেলা-ডিপ্রাইভড দের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

তাসনীম এর ছবি

এই খোলামেলা ভাবটাকে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় রূপদান করতেই বোধ হয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ এবার মেলার একেকটা অবস্থানকে একেকজন ব্যক্তিত্বের নামে চিহ্ণিত করার সাময়িক প্রয়াস নিয়েছেন।

শুভ উদ্যোগ।

উপভোগ করেছি মেলার ছবি এবং লেখা। প্রতীক্ষায় আছি আরো ছবি আর লেখার...

বইমেলার সব কয়টি লেখাই আগ্রহ নিয়ে পড়ি, ইংরেজি একটা কথা আছে...vicarious thrill...সেটা পাই।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার । জানতাম না এসব ।
কাল গেলে খেয়াল করব তো!

বোহেমিয়ান

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বইমেলা ক্যাটালগ হলো যেন। রাতে গিয়েছি বলে অনেক কিছু চোখে পড়েনি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

এই বইমেলায় অন্তত ২৫ দিন গিয়েছি। আহা, সেই আনন্দঘন বইমেলা আর নাই! মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কারো কারো ২৮/২৯ দিন মেলায় যাবার রেকর্ড আছে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আনন্দঘন কন আর উত্তেজনাঘন কন - আমি এরশাদ আমলের সেই বিখ্যাত শেষ বইমেলাটার মত আর কোনোটাতেই এত মজা পাই নাই। আমার কাছে ঐটাই বেস্ট! হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কাছে ঠিক তার পরেরটা, মানে ১৯৯১ সালেরটা। সেবার বইমেলায় লোকজনের মুখ, আচরণ, সাজগোজ দেখে মনে হয়েছে দেশে আসলেই গণতন্ত্র এসেছে। তার পর কী হলো সেকথা জানে শ্যামলাল!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।