| চাণক্যজন কহেন…০২ | ভর্তৃহরিপর্ব-০১ |

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৩/২০১২ - ৭:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভর্তৃহরি
.
সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য রক্ষিত না হওয়ায় সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম কবিশ্রেষ্ঠ ভর্তৃহরির জীবন-চরিতের জন্যে জনশ্রুতি-নির্ভর হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। বিভিন্ন জনশ্রুতি-প্রসূত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতককে ভর্তৃহরির অধিষ্ঠানকাল হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিংবদন্তী অনুযায়ী- ভর্তৃহরি ছিলেন মালব দেশের অধিবাসী এবং জাতিতে ক্ষত্রিয়। রাজপরিবারে জন্মগ্রহণকারী ভর্তৃহরির পিতার নাম ছিলো গন্ধর্ব সেন। গন্ধর্ব সেনের দুই স্ত্রী। প্রথমা স্ত্রীর পুত্র ভর্তৃহরি এবং দ্বিতীয়া স্ত্রীর পুত্র বিক্রমাদিত্য- যার নামে ‘সম্বৎ’ সন বা ‘বিক্রমাব্দ’ প্রচলিত। উল্লেখ্য, বিক্রম সম্বৎ গণনা শুরু হয় ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে।

বিক্রমাদিত্যের মা ছিলেন মালব দেশের তৎকালীন রাজধানী ধারা নগরের রাজকন্যা। ধারারাজের কোন পুত্র সন্তান না-থাকায় উভয় দৌহিত্র অর্থাৎ ভর্তৃহরি ও বিক্রমাদিত্যকে তিনি তুল্যস্নেহে পরিপালন করেন এবং যথাসময়ে সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী করে তোলেন।
.
স্বাভাবিক স্নেহবশতই ধারাপতি একসময় আপন দৌহিত্র বিক্রমাদিত্যকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করার অভিলাষ করেন এবং বিক্রমাদিত্যকে তাঁর সংকল্পের কথা জানান। জ্যেষ্ঠ বর্তমানে তিনি সিংহাসনে বসতে অনিহা প্রকাশ করায় তাঁর যুক্তি ও ঔদার্যে মুগ্ধ হয়ে ধারাপতি ভর্তৃহরিকেই সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন এবং তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন অনুজ বিক্রমাদিত্য। এর কিছুকাল পরে তাঁরা মালবের রাজধানী ধারানগর থেকে উজ্জৈন-এ স্থানান্তর করেন।
.
বিক্রমাদিত্যের সুযোগ্য মন্ত্রণায় রাজ্য নির্বিঘ্নেই চলছিলো এবং প্রজারা সুখেই দিনাতিপাত করছিলো। বিক্রমাদিত্যের সঠিক ও সফল পরিচালনার জন্য ভর্তৃহরিকে প্রায় কোন কিছুর প্রতিই দৃষ্টি দিতে হতো না বলে এই সুযোগে ভর্তৃহরি মদ ও নারীতে আসক্ত হয়ে অন্তঃপুরে নারীসঙ্গ ও নারীসম্ভোগেই দিন কাটাতে লাগলেন। বিক্রমাদিত্য এ বিষয়ে তাঁকে বহুবার সাবধান করে রাজকার্যের প্রতি মনোসংযোগ করতে পরামর্শ দিলেনও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিক্রমাদিত্যের প্রতি বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠতে লাগলেন। এমনিভাবে ভর্তৃহরি অনন্ত বিলাসের মধ্য দিয়ে ক্রমশ অধঃপাতের দিকে এগিয়ে গেলেন। অবস্থা সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছলে কোনও এক নারীঘটিত গুপ্ত ষড়যন্ত্রের ফলে পরস্পরের সৌভ্রাতৃত্ব শত্রুতায় পর্যবসিত হয় এবং স্ত্রী (বা প্রেমিকা)-র পরামর্শে ভর্তৃহরি বিক্রমাদিত্যকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত ও নির্বাসিত করেন।
.
বিক্রমাদিত্যকে পদচ্যুত ও নির্বাসিত করে ভর্তৃহরি নির্বাধায় সুরা ও নারীভোগে নিমজ্জিত হন। এদিকে বিক্রমাদিত্যকে অপসারণ করায় এবং তাঁর অপশাসনে প্রজারা তাঁর প্রতি বিক্ষুব্ধ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রজাদের স্বেচ্ছাচারিতায় সমগ্র মালবদেশ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলায় ছেয়ে যায়।
.
অন্য এক তথ্যে ‘অর্বাচিনকোষ’ মতে ভর্তৃহরির পিতা ছিলেন একজন গন্ধর্ব। তাঁর নাম বীরসেন। বীরসেনের স্ত্রী অর্থাৎ ভর্তৃহরির মা সুশীলা ছিলেন জম্বুদ্বীপরাজের একমাত্র কন্যা। ভর্তৃহরিরা ছিলেন চার ভাই-বোন, যথাক্রমে- ভর্তৃহরি, বিক্রমাদিত্য, সুভতবীর্য এবং ময়নাবতী। ধারণা করা হয় এই ময়নাবতীই ছিলেন বিক্রমপুরের ইতিহাস প্রসিদ্ধ রাজা গোপিচন্দের জননী। ভর্তৃহরির মাতামহ জম্বুদ্বীপরাজের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ভর্তৃহরিকে তিনি তাঁর রাজ্য দান করেন। ভর্তৃহরি তাঁর রাজধানী জম্বুদ্বীপ হতে উজ্জৈন-এ স্থানান্তরিত করে বিক্রমাদিত্যকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন এবং সুভতবীর্যকে তাঁর প্রধান সেনাপতি করেন।
.
পণ্ডিত শশগিরি শাস্ত্রী প্রবর্তিত অন্য এক প্রচলিত মতানুযায়ী চন্দ্রগুপ্ত নামে জনৈক ব্রাহ্মণের চারবর্ণের চারজন স্ত্রী ছিলেন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে- ব্রাহ্মণ জাতীয়া ব্রাহ্মণী, ক্ষত্রিয়া ভানুমতী, বৈশ্যা ভাগ্যবতী এবং শূদ্রা সিন্ধুমতী। এই চার স্ত্রীর গর্ভে চন্দ্রগুপ্তের চারজন পুত্র জন্মে, যথাক্রমে- বররুচি, বিক্রমার্ক, ভট্টি ও ভর্তৃহরি। বিক্রমার্ক রাজা হন এবং ভট্টি (মতান্তরে ভট্টি ও ভর্তৃহরি) তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
.
উপরোক্ত এই তিন ধরনের পরস্পর-সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যময় তথ্যপুঞ্জি থেকে এখন পর্যন্ত কোন্ তথ্যটি সঠিক তা নির্ধারণ করা দুরুহ হলেও সাদৃশ্যটুকু থেকে আমরা অন্তত এটুকু ধারণা করতে পারি যে- ভর্তৃহরি হয়তো মাতামহের রাজ্য পেয়ে একজন রাজা বা রাজপুরুষ ছিলেন, ফলে রাজ্য বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বিক্রমার্ক বা বিক্রমাদিত্য তাঁর ভাই ছিলেন।
.
ভর্তৃহরির দাম্পত্যজীবন নিরঙ্কুশ সুখের ছিলো না। দাম্পত্য জীবনে তিনি যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিনী স্ত্রীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন তা তাঁর নামে প্রচলিত চমৎকার একটি কিংবদন্তী থেকে জানা যায়-
একদিন জনৈক ব্রাহ্মণ পুত্রলাভের আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে প্রসন্ন চিত্তে রাজা ভর্তৃহরিকে একটি দৈব ফল দান করেন- যে ফল ভক্ষণে আয়ু বৃদ্ধি পাবে। রাজা এই অসাধারণ ফলটি নিজে না খেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী অনঙ্গসেনাকে দিলেন। অনঙ্গসেনার আবার এক গোপন প্রেমিক ছিলো- ফলটি তিনি তাকে দিলেন। সেই প্রেমিক আবার এক পতিতার প্রণয়াসক্ত ছিলো- তাই ফলটি সে ওই পতিতাকে দিলো। সেই পতিতা আবার মনে মনে রাজা ভর্তৃহরিকে ভালোবাসতো। ‘এই ফল ভক্ষণে রাজা দীর্ঘায়ু হলে রাজ্যের লাভ’- এরকম চিন্তা করে সে তাই ফলটি রাজাকেই দিয়ে দিলো। স্ত্রীকে দেয়া ফলটি পুনরায় পতিতার হাত থেকে ফিরে পেয়ে ভর্তৃহরি যারপর নেই বিস্মিত হলেন। স্ত্রী অনঙ্গসেনাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এতে ভর্তৃহরি হৃদয়ে মর্মান্তিক বেদনা বোধ করলেন। প্রাণাধিক প্রিয়তমা স্ত্রীর এরূপ বিশ্বাসঘাতকতায় মর্মাহত ভর্তৃহরি ভাবলেন-

যাং চিন্তয়ামি সততং মরি সা বিরক্তা
সাপ্যন্যমিচ্ছতি জনং স জনোন্যসক্তঃ।
অস্মৎকৃতে চ পরিশুষ্যতি কাচিন্যা
ধিক্ তাং চ তং চ মদনং চ ইমাং চ মাং চ।। ০২।। (ভর্তৃহরি নীতিশতক)
অর্থাৎ : আমি যার ভজনা করি সে আমার প্রতি বিরক্ত, অন্য পুরুষ তার মনের মানুষ। সেই পুরুষ আবার অন্য (বারবণিতা) নারীর প্রতি অনুরক্ত। আমাকে পেয়েও আনন্দ পায় সেই অন্য নারী। ধিক্ সেই নারীকে, ধিক সেই পুরুষকে, ধিক সেই বারবণিতাকে, ধিক কামদেবকে যার প্রভাবে এসব সংঘটিত হচ্ছে, এবং ধিক আমাকেও।

.
ভর্তৃহরি স্ত্রীকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। অনঙ্গসেনাও এই কলঙ্কিত জীবনের ভার বইতে না পেরে আত্মহত্যা করে নিষ্কৃতি লাভ করেন। স্ত্রীর এই আত্মহত্যার ঘটনায় ভর্তৃহরির হৃদয় পুনরায় আহত হয়। ভর্তৃহরির এই দুঃসময়ে সত্যিকারের পতিভক্তি ও প্রগাঢ় বিশ্বাসের আধার হয়ে এগিয়ে আসেন তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী কোমলহৃদয়া পিঙ্গলা। পিঙ্গলার অসাধারণ সেবাযত্নে ভর্তৃহরি ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং আবার যেন নতুন জীবনে পদার্পণ করে পরম সুখে কাটতে থাকে তাঁর দাম্পত্য জীবন।
.
কিন্তু বিধি বাম ! এ সময়ে ঘটে তাঁর দ্বিতীয় মর্মান্তিক ঘটনা, যার কারণে তিনি সংসার-বিবাগী হয়ে যান এবং রচনা করেন ‘বৈরাগ্যশতক’। জনশ্রুতি অনুযায়ী ঘটনাটি হলো-
ভর্তৃহরি একদিন শিকার সন্ধানে বনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি সাংঘাতিক এক দৃশ্য দেখতে পান। দেখেন- জনৈক ব্যাধ (শিকারী) বাণ দ্বারা একটি হরিণকে বধ করে সে নিজেও সেখানেই সর্পাঘাতে মৃত্যুবরণ করে। তিনি আশ্চর্য বিস্ময়ে দেখলেন- কিছুক্ষণ পর হরিণীটি এসে মৃত হরিণটির নিস্তব্ধ অসার দেহের উপর পতিত হয়ে প্রাণত্যাগ করে। শুধু তা-ই নয়, আরও কিছুক্ষণ পরে দেখা গেলো- ওই শিকারীর স্ত্রী এসে চিতাগ্নিতে স্বামীসহ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
.
এই দৃশ্য ভর্তৃহরির হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে এবং তিনি বিষণ্ন হয়ে পড়েন। মৃগয়া পরিত্যাগ করে তিনি রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং রাণী পিঙ্গলাকে অরণ্যের সেই বিস্ময়কর ঘটনা সবিস্তারে শোনান। রাণী পিঙ্গলা সমস্ত ঘটনা শুনে বলেন- পতির বিরহে সতী নারী আত্মাহুতি দেবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, বরং প্রকৃত সতী যে- এরূপ আত্মাহুতিতে তার আগুনেরও প্রয়োজন হয় না।
পিঙ্গলার এ কথায় রাজা আরও বিস্মিত হন। তাঁর মনে একটু সন্দেহেরও সৃষ্টি হয়। তাই তিনি সঙ্কল্প করেন- পিঙ্গলার পতিভক্তির পরীক্ষা নেবেন।
.
পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজা কয়েকদিন পরে পুনরায় মৃগয়ায় বের হলেন। মৃগয়ায় গিয়ে নিজের পোশাক-পরিচ্ছদে রক্ত মাখিয়ে স্বীয় অনুচর দ্বারা রাজধানীতে রাণী পিঙ্গলার কাছে পাঠিয়ে দেন। অনুচর রাণীকে রাজার রক্তাপ্লুত পোশাক অর্পণ করে নিবেদন করে যে- বাঘের হাতে রাজার মৃত্যু হয়েছে, এই তাঁর রক্তাক্ত পরিচ্ছদ। সরলপ্রাণা পিঙ্গলা আকস্মিক এ মর্মান্তিক সংবাদে প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর শান্তভাবে রাজার রক্তমাখা পরিচ্ছদ হাতে নিয়ে সেগুলি মাটিতে রেখে অন্তিম প্রণতি জানান এবং ভূমিতে শায়িত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
.
রাজধানীতে ফিরে এসে ভর্তৃহরি এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। আপন দোষে তিনি পিঙ্গলাকে হারিয়েছেন- এ কারণেই তাঁর ব্যথা আরও বেশি করে অনুভূত হতে লাগলো। তিনি বারবার নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। পরপর দু’বার প্রিয়তমা স্ত্রীদের দ্বারা এভাবে মর্মাহত হয়ে সংসারের প্রতি ভর্তৃহরির মোহ কেটে যায়। শেষপর্যন্ত সংসার ছেড়ে বৈরাগ্য গ্রহণ করে তিনি অরণ্যে গমন করেন।
.
ভর্তৃহরি বিতর্ক
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে ‘ভট্টি’ ও ‘ভর্তৃ-হরি’ নামে তিনজন ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় এবং এ তিনজনই কবি। ভট্টির রচনা ‘ভট্টকাব্য’ বা ‘রাবণবধ’ একটি মহাকাব্য। প্রথম ভর্তৃহরির রচনা ‘শতকত্রয়’- শৃঙ্গারশতক, নীতিশতক ও বৈরাগ্যশতক। আর দ্বিতীয় ভর্তৃহরির রচনা হলো পতঞ্জলির মহাভাষ্যের উপর ব্যাকরণদর্শন জাতীয় গ্রন্থ ‘বাক্যপদীয়’। এ তিনজনই একই ব্যক্তি না কি পৃথক তিনজন কবি ছিলেন- এ নিয়ে পণ্ডিত-গবেষকদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক রয়েছে।
.
কেউ বলেন এঁরা তিনজন পৃথক ব্যক্তি ((-M.R.Kale), কেউ বলেন এঁরা তিনজন একই ব্যক্তি (-A.A.Mackonell ও ড. রামেশ্বর শ’)। আবার কারো মতে ভট্টি এবং শতকরচয়িতা ভর্তৃহরি এক এবং বাক্যপাদীয়কার ভর্তৃহরি ভিন্ন ব্যক্তি (-ড. বিধানচন্দ্র ভট্টাচার্য)। এ মতের বিরোধিতা করে আবার কেউ কেউ বলেন- ভট্টি এবং শতককার ভর্তৃহরি এক নন (-S.N.Dasgupta, S.K.De, Krishna Chitanya, জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী এবং জাহ্নবীচরণ ভৌমিক)। শতককার ভর্তৃহরি এবং বাক্যপদীয়কার ভর্তৃহরি একই ব্যক্তি বলেও মতামত প্রকাশ করেন কেউ কেউ (-জাহ্নবীচরণ ভৌমিক, সুবুদ্ধিচরণ গোস্বামী এবং Krishna Chitanya)। আবার দুই ভর্তৃহরি এক- এই মতকেও স্বীকার করেন নি কেউ কেউ- (Prof,K.B.Pathak Ges K.T.Telang)। এভাবে বর্তমান সময় পর্যন্ত আরও অনেক গবেষকই এ বিষয়ে তাঁদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
.
চৈনিক পরিব্রাজক ইৎ-সিং (I-tsing) ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভ্রমণে আসেন। জানা যায়, তিনি তাঁর বিবরণীতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গেছেন যে, তাঁর আগমনের ৪০ বৎসর পূর্বে (৬৫১ খ্রিঃ) বৈয়াকরণ ভর্তৃহরি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি (ভর্তৃহরি) ছিলেন একজন বৌদ্ধ এবং ‘বাক্যপদীয়’ নামক গ্রন্থটি তাঁরই রচিত। এই পরিব্রাজকের বিবরণীতে জনৈক ভর্তৃহরি সম্পর্কে এক চমৎকার ঘটনা যায়। তিনি (ভর্তৃহরি) নাকি সংসার ছেড়েও সংসারের মায়া একেবারে পরিত্যাগ করতে পারেন নি। সন্ন্যাসজীবনে তিনি এক সময় বৌদ্ধ সঙ্ঘে আশ্রয় নেন। কিন্তু যখনই সংসারের সুখ-দুঃখের কথা মনে পড়তো তখনই ছুটে যেতেন সংসার জীবনে। এজন্য একটি গাড়িও না-কি সর্বদা প্রস্তুত থাকতো যাতে ইচ্ছে মতো তিনি সংসারে ফিরে যেতে পারেন। এমনিভাবে ভর্তৃহরি না-কি সাতবার বৌদ্ধ সঙ্ঘে যোগ দিয়েছেন এবং সাতবার সঙ্ঘের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এই ভর্তৃহরি শতককার ভর্তৃহরি না হয়ে বাক্যপদীয়কার ভর্তৃহরি হওয়াই যুক্তিসঙ্গত, কারণ শতককার ভর্তৃহরি বৌদ্ধ ছিলেন না, ছিলেন শৈব।
.
ভট্টি বা শতককার ভর্তৃহরি কেউ-ই বৌদ্ধ ছিলেন না। তাঁদের রচনায় এমন কথা বা প্রামাণ্য তথ্য নেই যার দ্বারা এটা অনুমিত হতে পারে যে, তাঁদের রচয়িতা বৌদ্ধ কবি। ভট্টির মহাকাব্যের (ভট্টিকাব্য বা রাবণবধ) ঘটনা রামায়ণাশ্রয়ী এবং তার নায়ক স্বয়ং রাম- হিন্দু ধর্মের একজন আদর্শ পুরুষ। রাম হিন্দুদের কাছে বিষ্ণুর অবতার বলেই খ্যাত। তাছাড়া ভট্টির কাব্য-রচনার পেছনে প্রচলিত কিংবদন্তী থেকেও বুঝা যায় যে তিনি একজন বেদজ্ঞ হিন্দু ছিলেন। অন্যদিকে বৌদ্ধরা বেদবিরোধী নাস্তিক।
.
আর শতককার ভর্তৃহরি যে হিন্দু ছিলেন এর বড় প্রমাণ তাঁর শতকত্রয়। নীতিশতকের শুরুতেই তিনি ব্রহ্মকে নমস্কার জানিয়েছেন ‘নম শান্তায় তেজসে’ বলে-

দিক্কালাদ্যনবচ্ছিন্নানন্তচিন্মাত্রমূর্তয়ে।
স্বানুভূত্যেকমানায় নমঃ শান্তায় তেজসে।। ০১।। (ভর্তৃহরির নীতিশতক)
অর্থাৎ : দিক-কালাদি দ্বারা যাঁর পরিমাপ করা যায় না, যিনি অনন্ত; জ্ঞাময় যাঁর আকৃতি (শরীর) (এবং) আপন উপলব্ধি-ই যাঁর একমাত্র প্রমাণ (অর্থাৎ আপন উপলব্ধি-ই যাঁকে জানার একমাত্র উপায়) (সেই) শমগুণবিশিষ্ট জ্যোতির্ময় (ব্রহ্ম)-কে নমস্কার।

.
নীতিশতকের এই নান্দীশ্লোক ছাড়াও আরও অনেক শ্লোকেই তিনি ব্রহ্মসহ অন্যান্য হিন্দু দেব-দেবতা এবং অবতার সম্পর্কে বলেছেন। নীতিশতকে ভর্তৃহরি মানুষের আরাধ্য দেবতা হয় শিব অথবা কেশব (বিষ্ণু) বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন-

একো দেবঃ কেশবো বা শিবো বা
একং মিত্রং ভূপতির্বা যতির্বা।
একো বাসঃ পত্তনে বা বনে বা
একা ভার্যা সুন্দরী বা দরী বা।। বিবিধ-১১।। (ভর্তৃহরির নীতিশতক)
অর্থাৎ : (এ সংসারে মানুষের) দেবতা একজনই (হওয়া উচিত)- হয় বিষ্ণু, না হয় শিব; সুহৃদ একজনই- রাজা অথবা যোগী; বাসস্থান একটাই- নগর অথবা বন, (এবং) স্ত্রী একজনই- সুন্দরী যুবতী অথবা গিরিগুহা।

.
এভাবে শতককার ভর্তৃহরি তাঁর অন্য রচনা শৃঙ্গারশতকের শুরুতে স্মরণ করেছেন হিন্দু ধর্মের প্রধান তিন দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে ‘শম্ভুস্বয়ম্ভূহরয়ঃ’, এবং নান্দী ব্যতীত আরও অনেক জায়গায় তিনি ‘ব্রহ্মা’ সহ হিন্দু দেব-দেবীর কথা বলেছেন। আর বৈরাগ্যশতকে তিনি প্রথমেই আত্মনিবেদন করেছেন সমস্ত ‘অজ্ঞান-অন্ধকারের… জ্ঞানালোকস্বরূপ ভগবান শিব’-এর পায়ে ‘…মোহতিমি… জ্ঞানপ্রদীপো হরঃ’। এছাড়াও বৈরাগ্যশতকের বিভিন্ন জায়গায় শ্লোকে শিবের অর্চনা ও তৎপদে আত্মনিবেদনের কথা বলেছেন।
.
আবার গবেষকদের মতে শতকত্রয় এবং ভট্টিকাব্যের অভ্যন্তরীণ প্রমাণ থেকেও এটা প্রতীয়মান হয় না যে, এগুলি একই ব্যক্তির রচনা। ভট্টিকাব্যের রচয়িতা একজন বৈয়াকরণ হওয়ায় ব্যাকরণের দিক থেকে দেখলে দেখা যায় ভট্টিকাব্য একটি সার্থক রচনা, সাহিত্যের দিক থেকেও একই কথা প্রযোজ্য। এছাড়া কবি নিজেই তাঁর কাব্যপাঠের ব্যাপারে চমৎকার হুশিয়ারী জ্ঞাপন করেছেন এ বলে যে- ব্যাকরণে উৎসাহী পাঠকের কাছে এই কাব্য উজ্জ্বল দীপতুল্য কিন্তু ব্যাকরণ-জ্ঞানহীন ব্যক্তির পক্ষে এটি অন্ধের হাতে দর্পণের মতো- ‘দীপতুল্যঃ প্রবন্ধোয়ং শব্দলক্ষণচক্ষুষাম্’। কিংবা-

ব্যাখ্যাগম্যমিদং কাব্যমুৎসবঃ সুধিয়ামলম্ ।
হতা দুর্মেধসশ্চাস্মিন্ বিদ্বৎপ্রিয়তয়া ময়া।।
অর্থাৎ : আমার এই কাব্য ব্যাখ্যা দ্বারা বোধ্য; ইহা সুধীগণের উৎসব স্বরূপ; দুর্মেধা ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

.
ভট্টিকাব্য রচয়িতার এই হুঁশিয়ারি হয়তো যথার্থই। কিন্তু শতকত্রয় সম্পর্কে এ কথা বলা যায় না। ভট্টিকাব্যের তুলনায় শতকত্রয় নিতান্তই কাঁচা হাতের লেখা বলে মনে হয়। শতকত্রয়ের ভাষা সহজ-সরল ও সহজবোধ্য, সকলেরই এতে প্রবেশাধিকার রয়েছে। শতকত্রয়ে ব্যাকরণিক নৈপুণ্য উল্লেখযোগ্য নয়। এসব কারণেই সহজে স্বীকার করার উপায় নেই যে, শতকত্রয় এবং ভট্টিকাব্য একই ব্যক্তির রচনা।
.
আবার কিংবদন্তীপ্রসূত জীবনচরিত এবং শতকত্রয়ের অভ্যন্তরীণ প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, ভর্তৃহরি ছিলেন একজন ক্ষত্রিয়, পক্ষান্তরে ভট্টি ছিলেন ব্রাহ্মণ। ভর্তৃহরি ছিলেন রাজা বা রাজপুরুষ, কিন্তু ভট্টি ছিলেন বলভীরাজের পোষ্য কবি। বলভীর রাজা শ্রীধরসেনের কিংবা তাঁর পুত্র নরেন্দ্রের সভাকবি ছিলেন ভট্টি (খ্রিঃ ৪৯৫-৬৪১-এর মধ্যে যে-কোন এক সময়ে), এবং সেখানে থেকেই তিনি ভট্টিকাব্য রচনা করেছিলেন। কিন্তু ভর্তৃহরি নিজেই উজ্জৈন বা উজ্জয়িনীর রাজা থেকে থাকলে এবং পরবর্তীকালে সংসারবিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে থাকলে তিনি অন্য রাজার সভাকবি হতে যাবেন এমনটা কোনক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
.
শতকত্রয় বিশেষত বৈরাগ্যশতক থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, সংসারের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে ভর্তৃহরি সন্ন্যাসী হয়েছিলেন এবং বাকি জীবন অরণ্যে-আশ্রমেই অতিবাহিত করেছিলেন। নীতিশতকের একটি শ্লোকে বলা হচ্ছে-

কুসুমস্তবকস্যেব দ্বয়ী বৃত্তির্মনস্বিনঃ।
মূর্ধ্নি বা সর্বলোকস্য বিশীর্যেত বনেথবা।। ৩৩।। (ভর্তৃহরির নীতিশতক)
অর্থাৎ : ফুলের ন্যায় মহৎ ব্যক্তিদেরও দুটি মাত্র গতি হয়- হয় সর্বলোকের মস্তকে অবস্থান অথবা অরণ্যে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যাওয়া।

.
মর্মার্থ দাঁড়ালো- সংসারে যারা সুখ না পায় তাদের জন্য অরণ্যই একমাত্র আশ্রয়স্থল। তাই বোধ করি সমগ্র বৈরাগ্যশতক জুড়ে এই আকুতি দেখা যায়- অরণ্যে গঙ্গাতীরে কিংবা হিমালয়ের কোন গুহাগহ্বরে বসে ‘শিব শিব’ মন্ত্র জপ করতে করতে শিবত্ব অর্জন করার। তাছাড়া বৈরাগ্যশতকের একটি শ্লোকে তাঁর স্পষ্ট উক্তি দেখতে পাই-

‘আমরা ভিক্ষাণ্ন ভোজন করি, দিক বস্ত্র পরিধান করি (দিগম্বর থাকি), ভূতলে শয়ন করি, সুতরাং রাজাদের কাছে আমাদের কী প্রয়োজন ?’- ।। ৫৬।। (ভর্তৃহরির বৈরাগ্যশতক)

অর্থাৎ যে-রাজ্য ত্যাগ করে তিনি দিগম্বর বা সন্ন্যাসী হয়েছেন পুনরায় সে-রাজ্যে তাঁর প্রয়োজন কী ?
.
তাই অন্য কোন চূড়ান্ত প্রমাণ না-পাওয়াতক ভট্টিকাব্যের ভট্টি আর শতককার ভর্তৃহরি যে এক নয়, তেমনি বাক্যপদীয়কার ভর্তৃহরি আর শতককার ভর্তৃহরিও এক নয়, এ ব্যাপারে আপাত সিদ্ধান্ত নেয়া অনুচিৎ হবে না বলেই মনে হয়। তাঁদের প্রত্যেককেই স্বতন্ত্র একেকজন কবি হিসেবেই আমরা ধরে নিতে পারি।

(চলবে…)

[ ভূমিকাপর্ব ] [ * ] [ ভর্তৃহরিপর্ব-০২ ]


মন্তব্য

মামুন এর ছবি

ভর্তৃহরির স্ত্রী অনঙ্গসেনা ও পিঙ্গলার কাহিনী দুটো অসাধারণ লেগেছে।
আপনার যুক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে, শতককার ভর্তৃহরি, বৈয়াকরণ ভর্তৃহরি ও মহাকাব্য রচয়িতা ভট্রি প্রত্যেকেই আলাদা। তাহলে কোন যুক্তিতে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে এক করে ফেললেন, তা বোধগম্য নয়।
বৈরাগ্যশতকের থেকে আরও নীতিবাক্য শুনতে চাই। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।

কাজি মামুন

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই। বিশেষজ্ঞরা যে এক করে ফেলেছিলেন তার কারণ হলো সবগুলো তথ্য সম্ভবত তাঁরা তখন একসাথে না-পেয়ে একেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একেকজন বিশ্লেষণ করেছিলেন। পরবর্তীকালের গবেষকরা আগের বিশেষজ্ঞদের সবগুলো মতামত আয়ত্তে পাওয়ার সৌভাগ্যে অধিকতর স্বচ্ছভাবে বিষয়টিকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন হয়তো। তবে সবগুলো বিষয়ই যেহেতু কিংবদন্তী নির্ভর, তাই চূড়ান্ত মতামতটা কেউ আসলে নিশ্চয় করে দিতে চান না বা পারেন না হয়তো।
আগামী দিনে নতুন কোন আবিষ্কৃত তথ্য যে পূর্বকৃত সব ধারণা ওলটপালট করে দেবে না, তা কে বলতে পারে !!

আর মামুন ভাই, নিচে দেখেন আপনার একই মন্তব্য একাধিকবার চলে এসেছে। অবশ্য আপনার হয়তো এখন আর কিছু করার নেই, মডু ভাইজানরা যদি এদিকে একটু মনোযোগ দেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মামুন এর ছবি

ভর্তৃহরির স্ত্রী অনঙ্গসেনা ও পিঙ্গলার কাহিনী দুটো অসাধারণ লেগেছে।
আপনার যুক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে, শতককার ভর্তৃহরি, বৈয়াকরণ ভর্তৃহরি ও মহাকাব্য রচয়িতা ভট্রি প্রত্যেকেই আলাদা। তাহলে কোন যুক্তিতে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে এক করে ফেললেন, তা বোধগম্য নয়।
বৈরাগ্যশতকের থেকে আরও নীতিবাক্য শুনতে চাই। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।

কাজি মামুন

মামুন এর ছবি

ভর্তৃহরির স্ত্রী অনঙ্গসেনা ও পিঙ্গলার কাহিনী দুটো অসাধারণ লেগেছে।
আপনার যুক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে, শতককার ভর্তৃহরি, বৈয়াকরণ ভর্তৃহরি ও মহাকাব্য রচয়িতা ভট্রি প্রত্যেকেই আলাদা। তাহলে কোন যুক্তিতে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে এক করে ফেললেন, তা বোধগম্য নয়।
বৈরাগ্যশতকের থেকে আরও নীতিবাক্য শুনতে চাই। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।

কাজি মামুন

কাজি মামুন এর ছবি

ভর্তৃহরির স্ত্রী অনঙ্গসেনা ও পিঙ্গলার কাহিনী অসাধারণ লেগেছে।
আপনার লেখা থেকে স্পষ্ট যে শতককার ভর্তৃহরি, বৈয়াকরণ ভর্তৃহরি আর মহাকাব্য রচয়িতা ভট্রি আলাদা ব্যক্তি। তারপরও ঐতিহাসিকরা কোন যুক্তিতে তাদেরকে এক করে ফেললেন, তা বোধগম্য নয়।
বৈরাগ্য শতকের আরও শ্লোক জানতে চাই। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।

সত্যপীর এর ছবি

অতি অসাধারন সিরিজ।

বিভিন্ন হাত ঘুরে দৈব ফলের ব্যুমেরাং হবার গল্পটি চমৎকার।

ব্রাহ্মণের চার বর্ণের চার বউ রাখার ব্যাপারটি কি শাস্ত্রসম্মত?

..................................................................
#Banshibir.

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।
প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে স্ত্রী রাখার কোন লিমিট বেঁধে দেয়া নেই। সেটা ভিন্ন আরেক জগতের এক বিস্তৃত আলোচনার ক্ষেত্র। অন্য কোথাও এ নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছে। তার ফলাফল নিচের মন্তব্যাংশ-

(বৈদিক হিন্দু বা সনাতন ধর্মের শাস্ত্রীয় সংবিধান হিসেবে পূজিত মনুসংহিতা নামক শাস্ত্রগ্রন্থটিকে ব্যবচ্ছেদ করে নারী এবং অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ নিয়ে মুক্তমনায় মোট আঠারোটি বেশ বড় বড় পর্বে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে 'মনুশাস্ত্রে নারী ও ব্রাহ্মণ্যবাদ' শিরোনামে একটা গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি ইতোমধ্যেই প্রকাশককে হস্তান্তর করা হয়েছে। )

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সত্যপীর এর ছবি

কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জন্যে দুঃখিত। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

..................................................................
#Banshibir.

রণদীপম বসু এর ছবি

আরে নাহ্ ! আপনি আমার কথাকে অন্যভাবে নেবেন না আশা করি।
আসলে এক কথাতেই এর উত্তর দিয়েছি প্রথমে। বাকি কথাটা বলা যদি একান্ত আগ্রহী হোন তো বিস্তারিত খোঁজ দেয়ার চেষ্টা। আশা করি বোঝাতে পেরেছি ?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সত্যপীর এর ছবি

ভেবেছিলাম একটু বিরক্ত হয়েছেন বোধহয় ইয়ে, মানে...
ইয়ে, অভয় যখন দিলেন তখন বলি, বিস্তারিত খোঁজ দিলে ভারি উপকৃত হই। এ ব্যাপারে আমার কোন পড়াশুনা নেই।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

রণদীপম বসু এর ছবি

দুটো বিষয়ের দুটো সিঁড়িপথের মুখ ধরিয়ে দিলাম- ১) এখানে শাস্ত্রবিহিত নারী বিষয়ক আলোচনার একে একে দশটি পর্ব। ২) এখানে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিষয়ক আটটি পর্বের শুরু।

আপনার আগ্রহে সম্মান জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ। আজ রাতে পড়া শুরু করবো দেখি।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ ! চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ। কতক্ষণ দারুণ রাখা যায় সেটাই ব্যাপার !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দময়ন্তী এর ছবি

আমি আবার নাম দেখে ভাবলাম 'অর্থশাস্ত্র' নিয়ে আলোচনা বোধহয়|
যাই হোক বেশ ইন্টারেস্টিং|

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

রণদীপম বসু এর ছবি

অর্থহীন মানুষ আমি অর্থ নিয়ে কী আলোচনা করবো ! তার চেয়ে নীতি নিয়ে কিছুক্ষণ কচলিয়ে তিতা বের করা যায় কিনা দেখি ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমার আবার এ সকল বিষয়ে বড়ই আগ্রহ। আগের পর্বটাও পড়েছিলাম। মন্তব্য করা হয়নি।

ধন্যবাদ, আমার বেশ কিছু আগ্রহ মিটবে, আশা করছি।

বিষয়ান্তরে জানতে চাই: আপনি চার্বাক দর্শন নিয়ে কাজ করছিলেন, এমনটাই জেনেছিলাম।

রণদীপম বসু এর ছবি

যথার্থই শুনেছেন। চার্বাক নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যথাসাধ্য অধ্যয়ন চলছে এখনো। বড়সড় একটা কাজ করার প্রস্তুতি বলতে পারেন। দেখা যাক্ !

আর সেটা করতে গিয়েই ফাঁকে দিয়ে বর্তমান বিষয়টা ঢুকে গেছে। জটিল কাজের ফাঁকে বর্তমান কাজটা একটা রিক্রিয়েশনও বলতে পারেন। আসলটা না হারালেই হয় ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

খেকশিয়াল এর ছবি

ফাটাফাটি একটা সিরিজ ধরার জন্য রণদারে অনেক ধন্যবাদ। পড়তাছি।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

রণদীপম বসু এর ছবি

শুধু এটাই না, আরেকটা সিরিজ ধরা হচ্ছে- ফাঁকিবাজদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই ধরা হবে কইলাম ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

****************************************

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাকেও চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দেবাশীষ চৌধুরী এর ছবি

‘আমরা ভিক্ষাণ্ন ভোজন করি, দিক বস্ত্র পরিধান করি (দিগম্বর থাকি), ভূতলে শয়ন করি, সুতরাং রাজাদের কাছে আমাদের কী প্রয়োজন ?’- ।। ৫৬।। (ভর্তৃহরির বৈরাগ্যশতক)

এটার অর্থ হচ্ছে- আমরা যেহেতু ভিক্ষান্ন ভোজন করি, নাগা থাকি, মাটিতে শুই অতএব আমদের রাজার কাছ থেকে কিছুই চাওয়ার নেই। সে আমাদের কাছে প্রয়োজন হীন।

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যাট আরো স্পষ্ট হয়েছে নির্দ্বিধায়। আমি আসলে অনুদিত অংশে অনুসৃত গ্রন্থের মূল অনুবাদকের ভাষান্তরটাই তুলে দিয়েছি, নিজে কিছু যোগ করিনি। ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

বুনান এর ছবি

খুব সুন্দর লেগেছে লেখাটি। ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।