মন্থন, ১৯৭৬

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২২/১১/২০১৩ - ৩:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Manthan

ভারতের গুজরাট রাজ্যের খেরা জেলার কোন এক গ্রামের স্টেশনে কেবল পা রাখলেন পশু চিকিৎসক ডক্টর মনোহর রাও। একটি হাড় জিরজিরে ঘোড়া গাড়িতে তাঁকে তাঁর বাংলোয় নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা হয়েছে। স্টেশন থেকে বাংলো যাবার এই একমাত্র ব্যাবস্থা। হঠাৎ এমন দুর্বল ঘোড়া দেখে ডক্টর রাও মনে কষ্ট পান। পশু চিকিৎসক পশু অত্যাচার মানবেন কেন? সঙ্গীদের অবাক করে দিয়ে তিনি হেঁটেই বাংলো যাবার জন্য মনস্থির করেন।

পেশায় ডক্টর রাও একজন পশু চিকিৎসক হলেও তিনি এই এলাকায় এসেছেন একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে। গুজরাটের এইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু মানুষের একমাত্র পেশা হচ্ছে দুধ বিক্রি। আর এই দুধের ক্রেতা হচ্ছে এতদঞ্চলের উঁচু জাতের শোষক শ্রেণী আর এই শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আছেন জনাব মিশ্র সাহেব। যুগ যুগ ধরে এইসব মিশ্র সাহেবদের শোষণের ক্ষেত্র হচ্ছে গ্রামের অসহায় নিম্ন জাতের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। মিশ্র সাহেব তাঁদেরকে উচ্চসুদের ঋণ দেন মহিষ কেনার জন্য। আবার সেই মহিষের দুধ তিনি অতি স্বল্প মূল্যে কিনে নেন তাঁদের কাছ থেকে। আর এমনতর শোষণের এই ধারা উত্তরাধিকার সূত্রে চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

ডক্টর রাও এবং তাঁর সংগঠন শোষকদের খপ্পর থেকে এই অসহায় দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন এই জেলায়, এই গ্রামে। তিনি একজন দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন আধুনিক এবং আদর্শবাদী মানুষ। এইসব পেশাজীবী মানুষদের নিয়ে তিনি একটি সমিতি নির্মাণ করতে চান। সমবায় সমিতি। দুধের পরিমান নয় বরং দুধের মান অনুযায়ী দুধের দাম নির্ধারণ করতে চান তিনি সমবায় সমিতি নির্মাণের মধ্য দিয়ে। আধুনিক পদ্ধতিতে দুধের মান নিরূপণ করে তিনি দেখেছেন, এই এলাকার মহিষ থেকে যে দুধ হয়, তাঁর ফ্যাটের পরিমান খুব ভাল। কিন্তু শুধু দুধের উচ্চমুল্য নয়, তিনি কিংবা তাঁর সংগঠন চান এই দুগ্ধ সমিতির মালিক হন এই দুগ্ধ সম্প্রদায়। আর হয়ত এভাবেই তারা নিজেদের জীবন নিজেদের মতন করে সাজাতে সক্ষম হবেন, দূর হবে তাঁদের আজন্ম পিড়ীত দারিদ্র আর একইসাথে তারা মুক্ত হবেন মিশ্র সাহেবদের কবল থেকে।

প্রথমে তাঁর এবং তাঁর সহযোগীদের কাজ হয় গ্রামে ব্যাপক আকারে গণসংযোগ। তবে খুব সহজ হয়না তাঁদের এই কাজ। তাঁরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত শহুরে তরুণ। তাদের পোশাক ভিন্ন, কথা বলার ঢং আলাদা। গ্রামবাসীরা ডক্টর রাও এবং তাঁর সহযোগীদের কথা শুনতে পছন্দ করলেও তাঁদের আস্থার জায়গায় নিতে চান না। এমন অবিশ্বাসীদের তালিকায় প্রথমে আছেন বাউন্ডুলে স্বভাবের এক তরুণ ভোলা। ভোলা বাউন্ডুলে হলে কি হবে, সে তাঁর সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় ষোলো আনা সচেতন। সে এইসব শহুরে মানুষদের কথাকে মিষ্টি মিষ্টি গালগল্প বলে মনে করে। কিন্তু ডক্টর রাও জানেন, সমিতি করতে হলে ভোলাকে দলে না ভেড়ালে তাঁদের কাজ হবেনা। তাঁর মাঝে রাও দেখেন এক সহজাত নেতৃত্বের গুন আর অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা। তাছাড়া হরিজন সম্প্রদায়কে কাছে না টানলে তাঁদের উদ্দেশ্যই তো সফল হবেনা।

ভোলা ছাড়াও আছে বিন্দু নামক এক স্বামী খেদানো এক বাচ্চার মা। বেশ মেজাজি মহিলা সে। স্বামী তাঁর ছয় মাস পর পর কোথা থেকে উদয় হয় আবার কোথায় হারিয়ে যায় ঠিক নেই। বিন্দু প্রথম প্রথম রাও সাহেবের কথা বিশ্বাস না করলেও মিশ্র সাহেবের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পরে একটু একটু করে তাঁর দলে ভিড়তে থাকে।

ভোলা আর বিন্দু ছাড়াও রয়েছেন এই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান। তিনি উঁচু জাতের প্রতিনিধি, এই এলাকার নির্বাচিত গোত্র প্রধান। তবে গোত্রের সুবিধা অসুবিধা দেখার চাইতে পাওয়ার পলিটিক্সের প্রতি ঝোঁক বেশী তাঁর। ডক্টর রাওয়ের দিকে শুরুতে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এই ভরসায়, যে কোনমতে তিনি যদি একবার এই সমিতির প্রধান হতে পারেন তাহলে এই গোত্রের প্রতি আরও বেশী করে কর্তৃত্ব করার সুযোগ পাবেন। ডক্টর রাও অবশ্য বুঝতে পারেন তাঁর এই রাজনীতি। এইজন্যই তিনি ভোলাকে এই সমিতিতে চান আরও বেশী করে।

ডক্টর রাও একা নন, তাঁর একটি টিম রয়েছে তাঁর সংগঠনের কাজ সফল করার জন্য। এই টিমে আছে জনাব দেশমুখ, তাঁর ডান হাত। আর আছেন চন্দ্রভারকার। চন্দ্রভারকার তরুণ সমাজ সেবী, কিন্তু প্রেমে পড়ে যায় এই এলাকার এক নিম্নবর্ণের নারীর সাথে। মেয়েটির সাথে চন্দ্রভারকারের শারীরিক সম্পর্ক জানাজানি হয়ে গেলে ডক্টর রায়দের পুরো কাজে ব্যাপক বিপদ নেমে আসে। উপায়ন্তর না দেখে রাও চন্দ্রভারকারকে তাৎক্ষনিকভাবে ভাগিয়ে দেন এলাকা থেকে। ডক্টর রাওয়ের এই কাজে খুশী হয়ে ভোলা ভিড়ে যায় সমিতি নির্মাণের সাথে।

সময়ের সাথে সাথে মিশ্র সাহেবের দুধের ব্যাবসা লাটে উঠতে থাকে, আর সমিতির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এদিকে পশু চিকিৎসক হলেও বাধ্য হয়ে ডক্টর রায়কে কিছু রুগীও দেখতে হয় বলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি এই গ্রামে। এদিকে ডক্টর রাও আর বিন্দুর মাঝে এক অব্যাক্ত অনুরাগের জন্ম নেয়। এরই মাঝে হঠাৎ বিন্দুর স্বামীর আচমকা আগমন ঘটে। শহর ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন রাও সাহেবের পত্নীও। এদিকে সমিতি প্রধানের নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে। নির্বাচনে দাঁড়ান পঞ্চায়েত প্রধান আর হরিজন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভোলার বন্ধু। আর এই নির্বাচনে জিতে যান ভোলারা।

কি হয় তারপর? মিশ্র সাহেবরা কি ছেড়ে দেবেন তাঁদের শোষণের ক্ষেত্র এত সহজে? পঞ্চায়েত প্রধান কি মেনে নেবেন তাঁর এই পরাজয়? না, এসবের কিছুই হয়না। উভয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের নির্মম শিকার হন বিন্দু, ভোলা, ডক্টর রাও এবং তাঁদের সমবায় সমিতি নির্মাণের আকাংখা। বাক্স পেঁটরা এবং স্ত্রী সহ ডক্টর রাও রওনা দেন স্টেশনের দিকে। খবর শুনে দিশেহারা হয়ে ভোলা ছুটে আসে স্টেশনের দিকে। শেষরক্ষা হয়না। কালো ধোঁয়া উড়তে উড়তে ট্রেন স্টেশন ছাড়া হয়। চলে যান ডক্টর রাও।

তবে ডক্টর রাও চলে গেলেও তিনি তাঁর আদর্শের বীজ ঠিকই বুনে যান ভোলা, বিন্দুদের অন্তরে। ভোলারা তাঁর রচিত সমবায় সমিতিকে পুনঃ প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন তাঁদের গ্রামে।

আর এইরকম আখ্যান নিয়েই নির্মিত হয়েছে ভারতের এক কালজয়ী চলচ্চিত্র মন্থন। এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন শ্যাম বেনেগাল। আর চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র হিসেবে যে ডক্টর রাওকে আমরা দেখি, তিনি আর কেউ নন, "মিল্কম্যান অফ ইন্ডিয়া" স্বয়ং ডক্টর ভের্গেজ কুরিয়েন, এই চলচ্চিত্রের যৌথ কাহিনীকারের একজন।

গত শতকের সত্তরের দশকে ভারত সরকার 'অপারেশন ফ্লাড' নামক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এটি ছিল তখন বিশ্বের সবচাইতে বড় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয় ডক্টর ভের্গেজ কুরিয়েন কে। ভারত সরকার ১৯৪৬ সালে দুগ্ধ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও এই কর্মক্ষেত্রে কুরিয়েনের পদার্পণের আগে তেমন সাফল্য রচিত হয়নি। কুরিয়েন গুজরাটের আমুল নামক সমবায় সমিতির পরিচালনার দায়িত্ব হাতে পাবার পর এক অসাধারণ কাজ করে ফেলেন। তার নেতৃত্বে বিশ্বে সর্বপ্রথম মহিষের দুধ থেকে দুধ পাউডার প্রস্তুত করা হয়। এর আগে পুরো জগতে কেবল গরুর দুধ দিয়েই দুধ পাউডার তৈয়ার হত। আর এই যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলে ভারতের দুগ্ধ শিল্পে বিপুল পরিবর্তন আসে। তাঁর এই সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তাকে ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্তি দেন। তাঁর প্রথম কাজ হয় আমুলের আদলে এরকম সমবায় সমিতি পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেয়া। কুরিয়েনের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং উদ্যমী প্রেরণায় যেন জেগে ওঠে এই প্রকল্প। ঋণের দায়ে জর্জরিত এই শতাব্দী প্রাচীন ব্যাবসা যখন অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং শক্ত মনোবলের এই মানুষটি দুগ্ধ শিল্পে নতুন দিগন্তের সুচনা করেন। তিনি এইসব সমিতির মাঝে যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি আনলেন আধুনিক পেশাদারিত্ব। তাঁর দক্ষ পরিচালনায় আমুল এর দেখেদেখি গোটা ভারতে এমন সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠা করা গেলো। আর এভাবেই ভারত দুগ্ধ আমদানিকারক দেশ থেকে দুগ্ধ রপ্তানিকারক দেশে পরিনত হল। মন্থন চলচ্চিত্রটি ঠিক এমনই একটি প্রেক্ষাপট থেকে নির্মিত হয়েছে।

কুরিয়েন সাহেব এবং তাঁর সমমনা মানুষগুলি চেয়েছিলেন দুধ যারা উৎপাদন করে তাঁদের নিয়ন্ত্রণেই ব্যাবসাটি পরিচালিত হোক আর এর মালিকানা এবং কর্তৃত্ব তারা ভোগ করুক। সমবায় সমিতির এই মূল আদর্শের জায়গাটি ঠিক রেখে তারা এই ব্যাবসার যোগান এবং বণ্টনে আনতে চেয়েছিলেন আধুনিক পেশাদারিত্ব। সাধারন প্রযুক্তি এবং উন্নততর বণ্টন ব্যাবস্থা- এই দুটিকে সঙ্গী করে তারা সমবায় সমিতিকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা হলেন সমিতির মালিক; ব্যাবস্থাপক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী। তবে দুগ্ধ উৎপাদনের পর তা থেকে ভোগ্যপণ্য নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত সব কাজের দায়িত্ব নিলেন পেশাজীবীরা আর লাভের অংশ গেলো দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের ঘরে। কুরিয়েনের দক্ষ নেতৃত্বে, দূরদর্শী চিন্তায় যুগান্তকারী সাফল্য এল সমবায় সমিতির ধারণায়। আর এরই ধারাবাহিকতায় তিনি পরিচিতি পান বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমবায় সমিতি চিন্তাবিদ এবং প্রয়োগকারী হিসেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার রচিত সমবায় সমিতির মডেল কার্যকরী হতে শুরু করে। আর তিনিও ভারতে পরিচিত হয়ে উঠলেন 'মিল্কম্যান অফ ইন্ডিয়া' হিসেবে।

শ্যাম বেনেগাল সত্তরের দশকে ভারতীয় নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকারীদের ভেতর অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করেছেন। নিম্নবর্গীয় মানুষ, গ্রাম্য রাজনীতি, বর্ণ প্রথা এবং তাঁর নির্মম শিকার গ্রামের দরিদ্র জনসাধারন এইসব নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর দুটি চলচ্চিত্র অংকুর এবং নিশান্ত ইতিমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের মনে। মূলত বিজ্ঞাপন জগত থেকেই চলচ্চিত্র নিমানে অগ্রণী হয়েছিলেন এইতরুণ। এর আগে আমুল পন্যের বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন এবং অপারেশন ফ্লাড নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। কুরিয়েন সাহেবের জীবন এবং কর্ম তাঁর অজানা নয়। কিন্ত শুধু নিছক একটি আত্মজীবনী তিনি পর্দায় উপস্থাপন করতে চান নি। তিনি চেয়েছেন তৎকালীন গুজরাটের দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের সমাজ এবং জীবনের একটি বাস্তব প্রতিচ্ছবি আর তাঁদের সংগ্রামকে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরতে। সেই সাথে সমবায় সমিতির ভাবনাকে সিনেমার কেন্দ্র নয়, পার্শ্বচরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত করতে। তাই তিনি শরনাপন্ন হন খোদ কুরিয়েন সাহেবের কাছেই। যৌথভাবে তাঁরা মন্থন চলচ্চিত্রের গল্পটি লিখে ফেলেন।

গল্প লেখা তো হয়ে গেল, কিন্তু এই চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নি করবে কে? কুরিয়েন সাহেব বেনেগাল কে জানিয়ে দিলেন এই চলচ্চিত্রে অর্থের যোগান দেবেন সেইসব দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা যারা এই চলচ্চিত্রের প্রধান পাত্র-পাত্রী। কুরিয়েন তাঁর এই প্রস্তাব সমিতির কাছে পেশ করতেই ৫ লক্ষ দুগ্ধ উৎপাদনকারী রাজী হয়ে গেলেন। তাঁরা সবাই দুই রুপী করে জমা দিলেন। এভাবেই ১০ লক্ষ রুপীর সংস্থান হয়ে গেলো অল্প সময়ে আর শুরু হল চলচ্চিত্রের শুটিং। একে একে শ্যাম বেনেগাল আনলেন ভারতের শ্রেষ্ঠ কলা কুশলীদের। সংলাপ রচনা করলেন কাইফি আজমি, চিত্রনাট্য লিখলেন বিজয় টেন্ডুলকার, সিনেমাটোগ্রাফি করলেন গোবিন্দ নিহালনি, সঙ্গীতে বানরাজ ভাটিয়া। আর অভিনয় কারা করেছিলেন একটু দেখা যাক।

গিরিশ করনাড- ডক্টর রাও
স্মিতা পাতিল- বিন্দু
নাসিরুদ্দিন শাহ্‌- ভোলা
মোহন আগাসে- দেশমুখ
অনন্ত নাগ- চন্দ্রভারকার
কুলভূষণ খরবান্দা- পঞ্চায়েত প্রধান
অমরিশ পুরি- মিশ্র সাহেব

বানিজ্যিক ছবির ছায়া বহির্ভূত শিল্পীদের অভিনয় সমৃদ্ধ এই মন্থন চলচ্চিত্রটি। আজ এই কলা-কুশলীদের প্রত্যেকেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা অভিনয় শিল্পী হিসেবে কম বেশী স্বীকৃত। শুধু চলচ্চিত্র নয়, মঞ্চে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন এদের অনেকেই। কিন্তু তাঁরা যখন এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তখন দর্শকদের কাছে তাঁরা তেমন পরিচিত ছিলেন না। তবে কি অভিনয়টাই না করেছেন এরা সবাই! বিশেষ করে নাসিরুদ্দিন শাহ্‌ এবং স্মিতা পাতিলের অভিনয় দেখে এই চলচ্চিত্র থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে যায়! স্বামী পরিত্যাক্তা মেজাজি নারীর চরিত্রে স্মিতা প্রায় অবিশ্বাস্য অভিনয় করেছেন। তাঁর নানান এক্সপ্রেশন দ্যুতি ছড়িয়েছে পুরো চলচ্চিত্রে। আর বাউন্ডুলে ভোলা চরিত্রে নাসিরুদ্দিন শাহ্‌ যেন বাকি সবাইকে ম্লান করে দিয়েছেন।

মন্থন চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। মুক্তির পরপরই ব্যাপক সাফল্য পায় ছবিটি। গুজরাটের গ্রামের দুগ্ধ উৎপাদকারীরা দলে দলে পেক্ষাগৃহে দেখতে আসেন 'তাঁদের' এই সিনেমা। সিনেমাটি পরে ভারতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরষ্কার জয় করে। যে ছবি নির্মাণ করে ৫ লক্ষ দুগ্ধ উৎপাদনকারী তাঁর গায়ে এক ফোঁটা জল মেশাননি শ্যাম বেনেগাল এবং কুরিয়েন। তাঁরা গোটা ভারতবর্ষের গ্রামে গ্রামে এই চলচ্চিত্র দেখার ব্যাবস্থা করেছেন। একটি খাঁটি সিনেমা হিসেবে শুধু স্বীকৃতিই পায়নি মন্থন, চলচ্চিত্র মুক্তির ৩৭ বছর পরেও এই সিনেমার গায়ে যেন সময়ের দাগ পরেনি। আজও ভোলা, বিন্দু কিংবা ডক্টর রাওকে দেখে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। আর বারবার কানে বাজতে থাকে প্রীতি সাগর গীত এই সিনেমার একটি মাত্র অসামান্য ফোক গান, মেরো গাম কাথা পারে...............

এই চলচ্চিত্র গ্রামাঞ্চলের শোষণ বঞ্চনার একটি বিশ্বস্ত দলিল হয়ে রয়েছে আজ অব্ধি। ইচ্ছাপূরণের গল্প এটি নয়। সাফল্য গাঁথাও দেখানো হয়নি এই চলচ্চিত্রে। এটি মানুষের সংগ্রামের চিত্র, স্বপ্নের চিত্র আর সর্বোপরি মানুষের ঐক্যের চিত্র। ডক্টর রাওয়ের মতন আদর্শবাদী মানুষ এই চলচ্চিত্রে ব্যার্থ মনোরথ হয়ে ফিরে গেছেন কিন্তু তাঁরা স্বপ্নের যে বীজ বপন করেছেন সেই গ্রামে ,তাঁর সুফল ভোগ করছে সেই গ্রামের মানুষ। তাঁরা নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন পরিবর্তনের ভার। আর এটাই তো ডক্টর রাও ওরফে ডক্টর ভের্গেজ কুরিয়েন চেয়েছিলেন!

মন্থন চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে ডক্টর রাও চরিত্রে রূপ দানকারী গিরিশ করনাড

images


মন্তব্য

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালনী, এঁদের পর ভারতীয় চলচিত্র অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে এক গভীর শূন্যতা। এখন ভাল মানের সর্বভারতীয় ছবির এক আকাল শুরু হয়েছে।

মনি শামিম এর ছবি

খুব যে আকাল পড়েছে এমনটা বোধ হয় বলা যাচ্ছে না আব্দুল্লাহ ভাই। এইতো সেদিন থিমাংশু ধুলিয়ার 'পান সিং তোমার' চলচ্চিত্রটি হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। তবে এটা ঠিক যে, সেই চাঁদের হাট অনেক আগেই ক্লোজ হয়ে গেছে। হাজার মাথা খুঁড়লেও সেই সময় আর ফিরে আসবেনা। তবে ভালো সিনেমা নির্মিত হবে। একেবারেই যে হচ্ছেনা, তাতো নয়।

এক লহমা এর ছবি

'পান সিং তোমার' অত্যন্ত ভাল লেগেছে। মাঝের একটা তুলনামূলক খরার সময় পার হয়ে এসে হালের অনেক হিন্দী চলচ্চিত্র-ই আমার ভাল লেগেছে। হালফিলের ভাল লাগা কিছু চলচ্চিত্র, যেমন যেমন মনে পড়ছে - কহানী, ইংলিশ ভিংলিশ, জিন্দেগী না মিলেগা দোবারা, ইশকজাদে, বরফি, জব উই মেট, বাবুল, চিল্লার পার্টি, স্বদেশ, ডার্টি পিকচার, মির্চ, ... নাঃ থামি। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মনি শামিম এর ছবি

সব শিল্পের মতন হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে সিঙ্গেল স্ক্রিন অর্থাৎ ব্যাক্তিগত সিনেমা হলগুলির জায়গায় এসেছে মাল্টিপ্লেক্স। অল্প সময়ে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ব্যাবস্থা। এছাড়া বণ্টন ব্যাবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। ব্যাক্তিগত পুঁজির জায়গায় এসেছে কর্পোরেট পুঁজি। ভাল মন্দ দুই ব্যাবস্থাতেই রয়েছে। এক লহমা যে চলচ্চিত্রগুলির কথা উল্লেখ করলেন তার মাঝে দুটি চলচ্চিত্র আমার তেমন ভাল লাগেনি। ডার্টি পিকচার এবং বাবুল। চিলার পার্টি এবং মিরচ দেখা হয়নি। বাকি গুলি আমার কাছে উঁচুমানের সিনেমা বলেই মনে হয়েছে। আমি হয়ত এই তালিকা আরও দীর্ঘ করতে পারি যেমন ফাঁস গেয়ারে ওবামা, তেরে বিন লাদেন, ভেজা ফ্রাই, এ ওয়েডনাসডে, উড়ান, মুম্বাই মেরি জান, ফিরাক, পারজানিয়া ইত্যাদি। এই তালিকা কিন্তু বাড়বেই। আমার তো এমনও মনে হয় যে হিন্দি সিনেমায় সে অর্থে আকাল আসেনি। আমাদেরই হয়ত অনেক চলচ্চিত্র দেখা হয়ে ওঠেনি বলে এমনটি মনে হচ্ছে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম হলে তাকে তো আকাল বলাই সঙ্গত।

এক লহমা এর ছবি

সে ত ঠিক-ই। তবে শিল্পের উৎকর্ষ বিচার অনেকটা ব্যক্তিনির্ভর। হিন্দী চলচ্চিত্র গুণ বিচারে আমার নিজের কাছে অনেক লম্বা সময় ধরেই আকালাক্রান্ত। বরং হালের হিন্দী চলচ্চিত্রে আমি বেশী স্বাচ্ছন্দ্য ও মুগ্ধতা অনুভব করি। তা বলে আমি অবশ্যই এ অনুভবকে আমার নিজস্ব অনুভবের ঊর্ধে তুলতে আগ্রহী নই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মনি শামিম এর ছবি

চলুক

মনি শামিম এর ছবি

কিন্তু আব্দুল্লাহ ভাই, প্রয়োজনের মাপকাঠিই বা কি? কতটুকু আমাদের প্রয়োজন কতটুকু নয় সেটি নির্ধারণ করবে কে? প্রয়োজনের তুলনায় কতগুলি ভাল সিনেমা হলিউডে নির্মিত হয়? হয় ইউরোপে? আমার তো মনে হয় মূলধারার গতানুগতিক বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের বাইরে গত কয়েক বছরে অনেক ব্যাতিক্রমি ভালো চলচ্চিত্রের দেখা মিলছে। নতুন নতুন পরিচালকরা আসছেন, বদলে যাচ্ছে চলচ্চিত্র বিপনন এবং বণ্টন ব্যাবস্থা। এখন তো অপর্ণা সেন এর 'দি জাপানিজ ওয়াইফ' কিংবা হালের 'পিপলি লাইভ' পাওয়া যাচ্ছে বানিজ্যিক পরিবেশক। আমি উপরে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছি, যেটি অনেক বাড়ানো যেতে পারত। হিন্দি চলচ্চিত্রে নিউ ওয়েভ নিয়ে এসেছিলেন যারা, শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালনি, সাঁই পারাঞ্জপে ইত্যাদি, এদের মাঝে অনেকে কিন্তু এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চলেছেন। এইতো হালেই দেখলাম বেনেগালের 'ওয়েল ডান আব্বা' সিনেমাটি। আবার নতুন প্রতিভাবান অনেকে কিন্তু এসেও গেছেন। বালকি দম্পতি, বিক্রমাদিত্য মাতওয়ানে, ওম প্রকাশ মেহেরা, নিশিকান্ত কামাথ, নিরাজ পাণ্ডে, শিমিত আমিন, অনুরাগ কাশ্যপ, কিরন রাও এরাও কিন্তু ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণে অগ্রণী হয়েছেন। কাজেই আমি তো একে আকাল বলবনা। বরং বলব বেশ সম্ভাবনাময়!

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

প্রয়োজনের মাপকাঠি কি, কে সেটা নির্ধারন করবে, এভাবে প্রশ্ন করলে বিষয়টি বিতর্কমূলক হয়ে যাবে, একেকজন একেক রকম মূল্যায়ন করবে। নানা বিতর্কমূলক মতামতের পরও বলা যাবে উল্লেখিত চলচ্চিত্রকারেরা এবং আরও বেশ কয়েকজন এই উপমহাদেশে একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের এখানে সেই ধারার প্রতিভূ হলো "তিতাস একটি নদীর নাম", সূর্য্য দীঘল বাড়ী, পালঙ্ক, সূর্য্যকন্যা, ঘুড্ডি, সূর্য্যগ্রহন, পদ্মা নদীর মাঝি, এরকম কয়েকটি ছবি। এক দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখলে এক ধরনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এ ছবিগুলো নির্মিত হয়েছিল, অন্য দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখলে হয়তো এ সবের আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না।
হলিউডে কি এখন ভাল ছবি প্রয়োজনের তুলনায় কম নির্মিত হচ্ছে? হতে পারে, কারন সারা পৃথিবীতেই এখন আদর্শবাদী ধ্যান ধারনার চাইতে অর্থকরী ভাবনার প্রাবল্য বেশী। আর তবে যতদূর জানি, বিশ্বমানের ভাল ছবি নির্মানে হলিউড কখনোই এককভাবে নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে ছিল না।

শ্যাম বেনেগালের সর্বশেষ যে ছবিটি দেখেছি, তার নাম জুবাইদা। এটি দেখে আমার মনে হয়েছে তিনি পূর্বতন নির্মোহ অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সবার জন্য একটি ছবি বানাতে চেয়েছেন, ফলতঃ এটা কারও ছবি হয়ে ওঠেনি। নতুন যাদের নাম আপনি উল্লেখ করেছেন, তাদের কোন ছবি এখন পর্যন্ত দেখা হয়ে ওঠে নি। যদি সত্যি সত্যি তাঁরা একটি জোয়ার আনতে পারেন, সে তো খুবই আশার কথা।

মনি শামিম এর ছবি

আব্দুল্লাহ ভাই, শেয়াম বেনেগাল তো আরও ছবি করেছেন। হালে এসেছে ওয়েলকাম টু সাজ্জানপুর আর ওয়েলডান আব্বা। দুটোই গ্রাম এবং মফস্বলের পটভূমিকায় নির্মিত। ভারতে গ্রাম মফস্বল বদলে যাচ্ছে। এই বদলে যাওয়া চিত্রটি কমেডির আদলে পর্দায় উপস্থাপন করার প্রয়াস নিয়েছেন তিনি।

আর নতুন ধরণের অনেক চলচ্চিত্র আসছে। কাহিনীতে অনেক বৈচিত্রের দেখা মিলছে। একটা পরিবর্তনের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। তবে সেখানেও ভাল মন্দ আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু দ্বিমত করি। 'জুবাইদা' নিছক একটা ছবি নয়, ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস পাঠের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর কাহিনী, অভিনয়, সঙ্গীত, চিত্রায়ণ, সম্পাদনা অসাধারণ। শ্যাম বেনেগালের পূর্বতন চলচ্চিত্রগুলোকে যদি নির্মোহ অবস্থান থেকে নির্মিত বলে মনে করেন, তাহলে 'জুবাইদা'তেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে কোন চরিত্র বা বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ বা পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে এক কালোত্তীর্ণ অবস্থান থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কাহিনী আর চরিত্রগুলো স্বাভাবিক গতিতে বয়ে গেছে, পরিণতি পেয়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ দিপু ভাই। ভাল থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!
চলুক

মাসুদ সজীব

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সজীব।

এক লহমা এর ছবি

বরাবরের মতই ভালো লেখা। মন্থন দেখে খুব ভাল লেগেছিল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ এক লহমা। আপনার দেখা শোনার ভাণ্ডার তো অনেক অনেক বেশী। একটু একটু করে খুলুন না আপনার জাদুর বাক্স? আমাদের জন্য?

নিলয় নন্দী এর ছবি

ছবিটা দেখেছিলাম '৯০ কি '৯২ এর দিকে।
তখন অবশ্য এর ইতিহাস জানতাম না।
শ্যাম বেনেগাল আসলেই বস মানুষ গুরু গুরু

আপনার লেখাটা দারুণ লাগল চলুক চলুক

মনি শামিম এর ছবি

শ্যাম বেনেগাল আসলেই বস। কিন্তু সত্তর এবং আশির দশকে তাঁর চলচ্চিতগুলির যে ধার দেখি তার ছিটেফোঁটাই দেখি ইদানিং। তিনি এখন ড্রামার চাইতে কমেডির দিকে ঝুঁকেছেন, সেটি ঠিক আছে। তবে বেনেগাল মনে হয় ড্রামাই ভাল করতেন।

ধন্যবাদ নীলয়। ভাল থাকুন।

নিলয় নন্দী এর ছবি

সে কী?? বেনেগাল ছবি করছেন এখনও?
দাঁড়ান, একটু উইকিতে উঁকি দিয়ে আসি তাহলে !

মনি শামিম এর ছবি

নিলয়, বেনেগাল তো চলচ্চিত্র নির্মাণে কখনই যতি টানেননি। বিরামহীন ভাবে এখনো নির্মাণ করে চলেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরেও কিন্তু তাঁর ৩০ টি তথ্যচিত্র আছে। সত্যজিতের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রটি তো এক কথায় অসাধারণ।

সুমাদ্রী এর ছবি

দারুণ একটা রিভিউ মনি'দা। গানটাও সুন্দর। ইউটিউবেই ফিল্মটার লিঙ্ক আছে দেখছি। দেখে ফেলব। ধন্যবাদ ছবিটাকে পরিচিত করিয়ে দেয়ার জন্য।

মনি শামিম এর ছবি

সুমাদ্রি, তুমি কিন্তু মন্থন দেখার পাশাপাশি উনার 'অংকুর' আর 'নিশান্ত' টাও দেখে ফেল। এটি কিন্তু একটি ট্রিলজির শেষ অংশ বলা যায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ডাউনলোডের চুলায় বসাইলাম, হয়ে গেলেই দেখে ফেলবো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মনি শামিম এর ছবি

নজরুল ভাই, সুমাদ্রিকে যেটা বলেছি, তা আপ্নাকেও বলি। অংকুর, নিশান্ত এবং মন্থন কিন্তু একটি ট্রিলজির অংশ। নামালে সবগুলিই নামিএন। যদিও প্রত্যেকটির কাহিনী ভিন্ন। তবে সূত্র সেই গ্রামাঞ্চল, গ্রাম শহরের ভেদাভেদ, জাত-পাত প্রথা, শোষণ ইত্যাদি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটির পিছনের কাহিনীটি জেনে খুব ভালো লাগলো। নাম শুনেছি, দেখা হয় নি। এবার মনে হয় দেখে নিতে হবে।
ভালো থাকুন।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ নিয়াজ ভাই। নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। এবার দেখে নিন। অংকুর নিশান্ত, মন্থন, আরোহণ, সুরাজ কা সাতওঁয়া ঘোড়া, ওয়েলকাম টু সাজ্জানপুর, ওয়েলডান আব্বা- এগুলো সবই গ্রামের প্রেক্ষাপতে নির্মিত উঁচু মানের চলচ্চিত্র। তবে পথম পাঁচটির জুড়ি মেলা ভার।

বনি এর ছবি

লেখা দারুণ। চলুক

মনি শামিম এর ছবি

হাসি

অমি_বন্য এর ছবি

রিভিউ ভালো হয়েছে। ছবিটি দেখে ফেলবো আশা রাখি।

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ট্রিলজির তিনটি ছবিই একসাথে ডাউনলোড করেছিলাম। নিশান্ত দেখে মনটা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে বাকিদুটি আর দেখা হয়ে উঠেনি। অসহায় স্কুলমাস্টার গিরীশ কারনাডের অভিনয় দেখে চোখে পানি এসে গিয়েছিল।
আপনার লেখা পড়ে ট্রিলজিটা শেষ করার আগ্রহ আবার জেগে উঠল।

......জিপসি

মনি শামিম এর ছবি

জিপসি, আপনি আরোহণ এবং সুরাজ কা সাতওঁয়া ঘোড়া-ও দেখে ফেলুন। ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

এক লহমা ও মনি শামিম এর সাথে যোগ করছি.........
অনুরাগ কাশ্যাপ- ব্ল্যাক ফ্রাইডে, গুলাল, গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর,আই এম।
রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরা- রাং দে বাসান্তি, ভাগ মিলখা ভাগ।
সিমিত আমিন- চাক দে ইন্ডিয়া।
প্রকাশ ঝা- চক্রয়ুদ ,অপহরন।
সুধির মিশ্রা- চামেলী, হাযারো খোয়াসি এয়সি।
সামার খান- সাউরিয়া।
নাগেশ কুকুনর- ইকবাল, ডোর।
সান্তোশ সিভান- তাহান।

অভিমন্যু .
..........................................
সেই চক্রবুহ্যে আজো বন্দি হয়ে আছি

মনি শামিম এর ছবি

ওরে বাবা, আপনি তো অনেক বড় তালিকা দিয়ে ফেললেন। ধন্যবাদ। সাউরিয়া কি সামার খানের? আপনার তালিকার মধ্য থেকে আমার অবশ্য গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর আর চক্রব্যুহ ভাল লাগেনি তেমন। বাকি সবগুলির সাথে একমত। চমৎকার সব চলচ্চিত্র।

আর আপনি কি মন্থন দেখেছেন? বললেন না তো!

ratan এর ছবি

২৬ নভেম্বর ১৯২১: কেরলের কোঝিকোড়ে জন্মগ্রহণ করেন ‘ভারতের দুধওয়ালা’ ভার্গিজ কুরিয়েন। তাঁকে ‘শ্বেত বিপ্লবের জনক’ বলা হয়। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে দেশ জুড়ে শুরু হয় ‘অপারেশন ফ্লাড’। তিনি ‘আমুল’ সংস্থা তৈরি করে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যে আমূল পরিবর্তন আনেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যতদূর জানি সামার খানই, না দেখার সৌভাগ্য হয়নি এখনো।

অভিমন্যু .
..........................................
সেই চক্রবুহ্যে আজো বন্দি হয়ে আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।