নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড-১

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০৫/২০০৮ - ৫:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে আপনি যে ধরনের প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেন আপনাকে কোন না কোন ভাবে বিদেশীদের সাথে কাজ করতে হবে। খুব স্বল্প কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া একথাটি সবার জন্য সত্য। বাংলাদেশে প্রায় সবকিছু আমদানী করতে হয় বলে চিত্রটা এইপ্রকার।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার কর্মজীবনের প্রথম চার বৎসর রফতানীমূখী প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তী প্রায় আট বৎসর আমদানী নির্ভর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি (এখনো করছি)। অর্থাৎ আমার কর্মজীবনে আমি কখনো ক্রেতা আবার কখনো বিক্রেতা হিসাবে বিদেশীদের সাথে কাজ করেছি (এবং করছি)। মাঝে মাঝে এই ভুমিকাটা যুগপৎও হয়।

যাই হোক, এই বারো বৎসরে আমি আমার দেশী সহকর্মীদের (Senior, Peer, Junior) বিদেশীদের সাথে কাজ করার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে কতগুলো উল্ল্যেখযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। সেগুলোই আজ বলব।

এক, বিদেশী সহকর্মীর ভাষা যদি ইংরেজী না হয় তবে আমরা চেষ্টা করি তার ভাষাতে একটা-দুইটা শব্দ বা বাক্য বলতে। ভুল উচ্চারনের বা ভুল অর্থের সেসব কথা শুনে বিদেশী সহকর্মীরা বেশ আমোদ পান, আর আমরা বেশ গর্ব অনুভব করি। যদিও আমাদের বিদেশী সহকর্মীরা খুব কমই এধরনের চেষ্টা করেন। বিদেশী সহকর্মী যদি হিন্দী বা উর্দুভাষী হন তাহলেতো কথাই নেই। আমাদের মুখ দিয়ে ভুল হিন্দী-উর্দুর খই ফুটতে থাকে। হিন্দী-উর্দু জানাটা বোধহয় আজকাল আবশ্যিক যোগ্যতার পর্যায়ে চলে গেছে। নয়তো চাকুরীপ্রাথীদের মধ্যে প্রায় সবাই “হিন্দী-উর্দু জানেন” একথা লেখেন কেন? যদিও বাংলাদেশের কোন স্কুলে হিন্দী-উর্দু শেখানো হয় বলে আমার জানা নেই। এধরনের হিন্দী-উর্দু জানা লোকদের জিজ্ঞেস করে দেখেছি, কথা শুনে তারা হিন্দী আর উর্দুর পার্থক্য ধরতে পারেননা। অথবা একটি বাংলা বাক্যকে হিন্দীতে এবং উর্দুতে পর পর অনুবাদ করতে পারেননা।

দুই, খাওয়া, পোষাক, আচরনে আমরা আমাদের বিদেশী সহকর্মীদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি। চামচ-কাঁটাচামচ-ছুরি বা চপস্টিক যুৎমত চালাতে না জানলেও সেগুলো দিয়েই খাবার চেষ্টা করি। হাত দিয়ে খাওয়াটাকে গর্হিত অপরাধ বলে মনে করি, যদিও হাত দিয়ে খাওয়াটাই আমাদের জন্য সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক। আমাদের বিদেশী সহকর্মীরা কখনোই হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেন না, বরং এটি নিয়ে উপহাস করেন, আমরা তখন জাতিগত লজ্জায় মরে যাই। বিদেশীদের মত মশলাবিহীন খাবার, অর্ধসিদ্ধ খাবার, নিষিদ্ধ মাংস, আমরা খাইনা এমন সব বস্তু, পানির মত করে মদ খেতে না পারাটাকে আমরা অযোগ্যতা বলেই মনে করি। যদিও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের নিরামিষাসীরা দেশে বা বিদেশে কখনো তাদের সাপেক্ষে নিষিদ্ধ বস্তু খান না। এতে তাদের লজ্জাও করেনা, আর ব্যবসা আমাদের থেকে কমও পান না। আমরা আমাদের জাতীয় পোষাক পরে বাইরে বের হবার অথবা বিদেশ যাবার কথা ভাবতেই পারিনা। অথচ, বিশ্বের অধিকাংশ লোক তার জাতীয় পোশাক পরেই দুনিয়া ঘুরে বেড়ান বা সব কাজ করেন, তা তাঁর পদ যাই হোকনা কেন।

তিন, বিদেশী সহকর্মীরা আমাদেরকে বয়স বা পদ নির্বিষেশে নাম ধরে সম্বোধন করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামের শুরুতে মিস্টার বলার ভদ্রতাটুকুও দেখান না। এবং বয়স বা পদ নির্বিষেশে আমাদের সাথে হম্বিতম্বি করেন। বাংলায় অনুবাদ করতে পারলে সেগুলো মনে হয় “তুই-তোকারি” করে গালাগালিই হত। আমরা কিন্তু মিস্টার, ম্যাডাম, স্যার এসব ছাড়া কথা বলার কথা ভাবতেই পারিনা। যৌক্তিক ক্ষেত্রেও হম্বিতম্বি দূরে থাক স্যার-স্যার বলে গলা শুকিয়ে লক্ষবার স্যরি বলতে থাকি। স্যার বা স্যরি বলাতে আমার আপত্তি নেই, তবে তা যুক্তিসঙ্গত ক্ষেত্রেই বলা উচিত।

চার, বিদেশীদের সাথে যেকোন ধরনের বার্গেইনিং এবং নেগোসিয়েশনে (শব্দদুটোর যুৎসই বাংলা করতে পারলামনা বলে ক্ষমাপ্রার্থী) আমাদের ভুমিকা সবসময় নতজানু। বিদেশীদের সাথে বার্গেইনিং করাটাকে আমরা রীতিমত বেয়াদবী বলে মনে করি। বিদেশীদের সাথে নেগোসিয়েশনে আমরাই সবসময় ঠকি। আমরা আমাদের প্রাপ্য কমপেনসেশনও বিদেশীদের কাছ থেকে আদায় করতে পারি না। এসব নিয়ে আমাদের লজ্জাও নেই, গ্লানিও নেই। আমরা কিনতেও ঠকি, বেচতেও ঠকি। আবার বিদেশীদের কাছে যথেষ্ঠ ঠকতে পারলামনা বলে তাদের সামনে লজ্জায় অধোবদন হয়ে থাকি।

পাঁচ, আমাদের সবচেয়ে বেশী লজ্জা আমাদের গায়ের রঙ আর ধর্ম নিয়ে। আফ্রিকানরা কিন্তু তাদের রঙ নিয়ে লজ্জিত হয়না। বরং এ নিয়ে অবমাননা করতে গেলে তেড়ে আসে। ধর্মের মতো ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে লজ্জা পাবার কারন না থাকলেও আমরা হরহামেশা লজ্জিত হতে থাকি। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মাচরন করেও, “আমি গুড মুসলিম/হিন্দু না, আমি নামায পড়িনা/পূজা করিনা” এসব কথা বলতে দ্বিধা হয়না।

এত কিছু করেও না আমরা কাজ পাই, না আমরা ব্যবসা পাই। আমরা টাকাও বানাতে পারিনা, অবস্থার উন্নতিও করতে পারি না। পাবার প্রতিযোগিতায় আমরা কেবল পিছিয়েই পড়ি।

বিদেশীদের মত কথা বলে, খাবার খেয়ে, খ্যামটা নেচে আমরা নিজেদের খুব স্মার্ট ভাবি। আমাদের মধ্যে যারা অমনটা ভালো ভাবে পারেননা তাকে উপহাস করি। তাকে আরো মনোযোগী হবার পরামর্শ দেই।

দেশের মাটি খুঁড়ে, জঙ্গল কেটে, সমুদ্র খুঁড়ে, পাহাড় কেটে প্রাকৃতিক সম্পদ আর পুরাতত্ত্ব নিয়ে যায় বিদেশী লুটেরারা। দেশে ঢেলে দিয়ে যায় বিষাক্ত আবর্জনা, বাতিল মাল, পঁচা-বিষাক্ত খাবার, অপরিক্ষীত ঔষধ আর প্রযুক্তি, পরিবেশ দূষনকারী শিল্প, ঘাতক ব্যাধি। মগজে ঢেলে দিয়ে যায় সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস আর বিদ্বেষ। তবু আমরা ওদের বশংবদ হতে চাই। ওদের সাথে যুগ-যুগব্যাপী ওদের শর্তমত চুক্তিতে আবদ্ধ হই। ওদের অনুকরণে সঙ সাজি।

নতজানু মনন আর অপচিত মেরুদণ্ড নিয়ে কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় আমরা বরাবর “জেল্লাদার বিদেশী দেখলে উরুদ্বয় ফাঁক করে দেই”।

ষষ্ঠ পান্ডব


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

পুরোটা অনেকটা একমত; কেবল মিস্টার বা স্যার ইত্যাদি সম্বোধনের বিষয়টা ছাড়া। খুব বেশি ফর্মাল না হলে কেউ মিস্টার বা স্যার বলে না। আর মিস্টার বললে নামের শেষ অংশটা বলতে হয়, এটাও অনেকে জ্ঞাত নন। বিদেশিদের নাম ধরে ডাকলে তারা ভিমরি খাবে এটাও বিশ্বাস করি না।

তীরন্দাজ এর ছবি

আমি এক দেশে বিদেশী হয়ে আছি ও নিজেকেই মানিয়ে নিয়েছি। যে দেশে থাকি, সে দেশের সাথেই যে মানাতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে উল্টোটি হয় নাকি! হয়তো বিদেশী প্রভু ছিল, তাই।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

কথাগুলো সত্য। এর কারণ শিরোনামেই প্রকাশিত। আমাদের মেরুদণ্ডে জোর কম। বিনয় প্রকাশ করতে দোষ নেই। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিনয়ের চেয়ে ব্যবসায়িক (এক্ষেত্রে ফরমাল) আচরণ করাই যুক্তিসঙ্গত। নাম ধরে ডাকতে আসলে কোন দোষ নেই। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। আত্মবিশ্বাস বা কনফিডেন্সের অভাবটা আমরা স্যার স্যার করে কাটাতে চেষ্টা করি। কাজ না পাওয়ার এটা একটা মূখ্য কারণ। বিদেশিরা যখনই দেখে স্যার স্যার করে নূয়ে পড়ছে তখনই তারা খুশি না হয়ে বরং ভাবে যাদের কনফিডেন্স এত কম তারা ভালো সার্ভিস বা প্রডাক্ট দিতে পারবে না। সহজ সমীকরণ। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার সেইসব বায়ার আর ফিরে আসে না। ব্যবসা হারানোর এটা একটা কারণ। কিন্তু কথা হল 'ব্যবসায় প্রশাসন' নামক যে ডিগ্রি নিয়ে এসব এগ্জিকিউটিবরা কাজ করে সেখানে আসলে কী শেখে তারা?
ধন্যবাদ বিষয়টা তুলে আনার জন্য।

জিজ্ঞাসু

রাতুল এর ছবি

শোনেন ভাই, আমার বস আমারে একটা জিনিস শিখাইছে "If You do not take the lead Somebody will take your lead" আমি একশত ভাগ মানি এবং এটা এর পুরাপুরি ব্যবহার নিশ্চিত করি। দেশি বিদেশী ইস্যু না।

আপনে কাউরে হুজুর হুজুর করলে চান্স তো সবাই নিবেই। তার আগেই আপনাকে লীডে যেতে হবে।

লীডে যাওয়া মানেই হম্বিতম্বি না। এটার মানে হল কেঊ যেন অন্তত আপনার সাথে হম্বিতম্বি করতে না পারে।

আশা করি সুফল পাবেন।

পুনশ্চঃ তবে এর সাইড ইফেক্ট আছে। যোগ্যতা ছাড়া লীড নিতে গেলে কূপোকাত হবেন।

দুর্দান্ত এর ছবি

সুন্দর পোস্ট। আশা করছি আলোচনা জমে উঠবে।
বাংলাদেশ আর বাংলাদেশীদের দমিয়ে রাখার কোন সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে বলে আমার মনে হয় না।
আচার-কৃষ্টি আর আদব-কায়দার ভিন্নতার কারনেই একদেশের গালি আরেকদেশের বুলি।

গের্ট হফস্টেডা র সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার কাজটি এখানে প্রাসঙ্গিক। আশা করি আপনার ভাল লাগবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এত কিছু করেও না আমরা কাজ পাই, না আমরা ব্যবসা পাই। আমরা টাকাও বানাতে পারিনা, অবস্থার উন্নতিও করতে পারি না। পাবার প্রতিযোগিতায় আমরা কেবল পিছিয়েই পড়ি।

এত তামাশা না করলে ঠিকই কাজ/ব্যবসা পাওয়া যেত । ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলাফেরা করা হয়না বলে বিদেশি ভাল করে বুঝে যায় এই লোক(দের)কে দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না । নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা নাই, খালি চাকরের কাজ পারে । কাজেই চাকরের মতই খাটায় আর গালমন্দ করে ।

তবে সব প্রতিষ্ঠানে চেহারা এরকম না । পরে কোন একদিন আমার কিছু অভিজ্ঞতা লিখব । দেশ স্বাধীন হয়েগেছে সেই কবে, কিন্তু আমাদের 'কলিজা' এখনো স্বাধীন হল না । কলিজাটা স্বাধীন করা দরকার, সবারই ।

- এনকিদু

ফ্রুলিক্স এর ছবি

আমার বসের ভাষায় কাচুমাচু আর স্যার স্যার করা এশিয় সংস্কৃতি। এতে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নেক্সট টাইম কোন বায়ারের শার্টের কলার চাইপা কইতে হইবো, খানকির পোলা কাম দিবি না তো আইজ তোরে খাইছি...

হালা বায়ার কাম না দিয়া যাইবো কই, আর তাফালিংও করতে পারবো না! হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

২০০ বছরের গোলামি বলে কথা। আমরা আবার বেশি প্রভুভক্ত কিনা!

লেখককে ধন্যবাদ দারুণভাবে বিষয়গুলো লেখায় তুলে নিয়ে আসার জন্য।

- ফেরারী ফেরদৌস

দ্রোহী এর ছবি

বেশ ভাল লেখা। কথাগুলো সমষ্টিগতভাবে অনেকাংশে হয়তোবা সত্য। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কতটুকু সত্য সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত । আমি মনে করি এই মনোভাবটাও আস্তে আস্তে কমছে । আমার কর্মক্ষেত্রের কিছু গল্প শুনিয়ে দিতে খুব লোভ হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো একটা আস্ত আলোচনার জন্য তুলে রেখেছি । মন্তব্যে দিয়ে পোষাবে না ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত । আমি মনে করি এই মনোভাবটাও আস্তে আস্তে কমছে । আমার কর্মক্ষেত্রের কিছু গল্প শুনিয়ে দিতে খুব লোভ হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো একটা আস্ত আলোচনার জন্য তুলে রেখেছি । মন্তব্যে দিয়ে পোষাবে না ।

- এনকিদু

ষষ্ঠ পান্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে যারা কষ্ট করে লেখাটা পড়েছেন এবং যারা আরো কষ্ট করে মন্তব্য করেছেন।

বিদেশীদের নাম ধরে ডাকলে বা স্যার না বললে রাগও করবেনা, ভিমরিও খাবেনা। সমস্যাটা আমাদের। আমরা মনে করি এসব না করলে উপযুক্ত সম্মান দেখানো হলনা।

রোমে থাকলে যদি রোমানদের মত আচরণ করেন তাহলে দোষের কিছু নেই। দোষ হয় তখনই যখন আপনি বাংলাদেশে থেকে একজন রোমান অতিথির সামনে তার মত হবার ক্যারিকেচার করেন। অথবা এমন ভাব দেখান যে সারা জীবনভর আপনি বাংলাদেশে থেকেও রোমানদের মত জীবন-আচরণ করেছেন।

জিজ্ঞাসুর বক্তব্যর সাথে পুরোপুরি একমত। তবে কম আত্মবিশ্বাসটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকলে সমস্যা ছিলনা, সমস্যাটা হয় যখন তা জাতিগত আচরণে পরিণত হয়। বাংলাদেশের বিজনেস স্কুলগুলোতে কি শেখানো হয় তা নিয়ে আরেক দিন বলব। নয়তো আলোচনা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।

হম্বিতম্বির ব্যাপারে রাতুলের বক্তব্য সঠিক। তবে বাংলাদেশের কনটেক্সে এটা “কাজীর গরু, কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই”। ব্যাপারটা কি রকম? এখানে যোগ্যতাসহ আপনি ডিলিংসে লীড নেবার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনাকে আপনার সুপিরিয়র এক পর্যায়ে থামিয়ে দিচ্ছেন। কারন হয় তিনি আগেই ঘুষ খেয়ে বসে আছেন অথবা তার ধারনা এতে ভবিষ্যতে আর কাজ পাওয়া যাবে না। আপনি ভুল করলে দেশী-বিদেশী যে কেউ আপনার সাথে হম্বিতম্বি করতে পারেন। তবে অযৌক্তিক কারনে অথবা আপনি লীড নিচ্ছেন দেখে বিদেশীরা যখন অযথাই হম্বিতম্বি করে এবং আপনার সহকর্মীরা তা মেনে নিতে বলেন আপত্তিটা তখনই ওঠে। সমস্যাটা জাতিগত, ব্যক্তিগত নয়। একশ’ জনের ক্লাসে নব্বই জন ফেল করলে দোষ শিক্ষকের, ছাত্রদের না। দুইশ’ বৎসরের আরো বেশী সময় ধরে অনেক দেশকে গোলামী করতে হয়েছে, তবে তারা আমাদের মত আচরণ করে না।

গের্ট হফস্টেডের কালচারাল ডাইমেনশনের লিঙ্কটা দেবার জন্য দুর্দান্তকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। তবে লিস্টে বাংলাদেশের নাম নাই। থাকলে আমাদের ধারনাগুলো মিলিয়ে দেখা যেত।

ধুসর গোধূলির সাজেশন মেনে যদি বায়ারের কলার চেপে ধরতে পারতাম, তাহলে মনে শান্তি পেতাম। তবে বাস্তবে ঐ শান্তি কয়েক মিনিট টিকবে। তারপর আমার চাকুরীটাই চলে যাবে।

এনকিদুর বিস্তারিত গল্প শোনার প্রতিক্ষায় থাকলাম।

দুর্দান্ত এর ছবি

হফস্টেডার কাজটি আসলে IBM- GBS এর জন্য করা তার একটা প্রকল্পের লেজুড়। প্রথমে ৪০টি, তারপর আরো ১০টি দেশ/এলাকায় IBM এর আভ্যন্তরীন লোকপ্রশাসনের জন্য ঐ কাজটি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে IBM- GBS আছে কি না আছে কিনা জানিনা, থাকলেতো হফস্টেডার ফর্দে বাংলাদেশের নাম থাকতো।

আমি দেখেছি যে, দুটি সংস্কৃতিতে ক্ষমতা, ঝুঁকি, সম্পর্কের স্থায়িত্ব, লিঙ্গবৈষম্য - ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টিকোণের তফাতের কারনে প্রত্যাশার অসমতা (expectation-gap) দেখা দেয়। এই অসম প্রত্যাশা থেকেই জন্ম নেয় যত তিক্ততা আর আসল কারবার (deal) এর বহির্ভুত গৌণ বিষয়গুলি, যেমন : সম্মান, সম্বোধন, খাবার, ভাষা ইত্যাদি জরুরি হয়ে ওঠে।

লক্ষ করুন, বাংলাদেশের সাথে কারবার করতে আশা বেশীরভাগ দেশের সংস্কৃতিতে ক্ষমতা, ঝুঁকি, সম্পর্কের স্থায়িত্ব, লিঙ্গবৈষম্য, ইত্যাদি বিষয়ে একজন বাংলাদেশীর পক্ষে প্রস্তুতি নেয়া যত সহজ, উল্টোটা কিন্তু ততটাই কঠিন। এই কৌশলগত সুবিধাটা আমরা ব্যাবহার করি না কেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নিক এর মতই মন্তব্য দিয়েছেন । আমাদের এখানে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে যারা পড়ালেখা ও কাজ করেন তারা ব্যাপারটা ভেবে দেখলে অনেক লাভ হবে বলেই আমার মনে হয় ।

- এনকিদু

খেকশিয়াল এর ছবি

ভালই লিখেছেন ষষ্ঠ পান্ডব ভাইডি, নমস্কার ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।