মধুমতী - অহমীয়া গল্পের রূপান্তর-০৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৭/২০০৯ - ৫:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এবার তাহলে মধুমতীর গল্প বলা যাক। মধুমতীকে নিয়ে গল্প বলতে আমরা এত দ্বিধান্বিত কেন? এমনটা নয় যে তাকে নিয়ে আমরা গল্প করতে চাই না। স্মিতা, মণিদীপা বা শ্রাবন্তীকে নিয়ে গল্প বলতে যখন আমাদের বাধে না, তখন মধুমতীকে নিয়ে গল্প বলতে দ্বিধা থাকবে কেন? এই দ্বিধার ব্যাপারে আমরা যখন নিজেদের প্রশ্ন করি এবং যা উত্তর পাই তার কোনটাই আমাদের সন্তুষ্ট করে না। বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে এই গল্প বলার জন্য অতনু যখন আমাদের কারো কারো উপর আস্থা আনে তখনো ভাবি, আমাকে কেন? অতনু কি ভাবে যে এ’নিয়ে তার বর্ণনা-ব্যাখ্যাকে আমাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করবে? নাকি অন্য কোন কারণ? এই সব আস্থা-দ্বিধার দোলাচলের মধ্যেই বরং মধুমতীর কথা বলা যাক। যদিও মধুমতী তার আসল নাম নয়, তবু অতনুর দেয়া এই নামটিকেই ঠিক বলে ধরে নেয়া যাক।

মধুমতীকে অতনু যখন প্রথম দেখতে পায় তখন মাঘ মাস। শিমুলের রক্তরাগে সদাশিব টী এস্টেটের বনে তখন আগুন লেগেছে। হাঁটু-জোকা তাঁতের শাড়ি আর রঙচঙা ব্লাউজ পড়া সাঁওতাল মেয়ে মধুমতী তখন একটা কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। প্রথম দেখায় তার কোন বিশেষত্ব অতনুর চোখে পড়ে না। কিন্তু সে যখন চা পাতা তুলতে থাকে তখন তার শরীর-ভঙ্গীর মাদকতায় অতনু বিহবল হয়ে পড়ে। তার রঙিন কাঁচের চুড়ির রিনিঝিন, রূপোর খাড়ুর ঝমঝম, ভারী কণ্ঠহার, কাজলমাখা চোখ অতনুর মত যুবক উপেক্ষা করতে পারে না। খোঁপায় গোঁজা নাম-না-জানা বুনো ফুল পোষ-না-মানা এই হরিণীকে এমন এক বুনো সৌন্দর্য দেয় যে অতনু মনে মনে তার পূজারী হয়ে পড়ে।

তারপর মধুমতীকে দেখতে পাওয়া যায় প্রতিদিন - সকালে বা বিকালে। কখনো চা পাতা তুলতে, কখনো বা “বাবু লাইন”-এর শেষ মাথায় অতনুর কোয়ার্টারের কাছের চাপকল থেকে পানি নিতে। বাবু লোকদের জন্য চা-বাগানের জীবনে কোন বৈচিত্র্য নেই। সদাশিব টী এস্টেটের মেডিক্যাল অফিসার অতনুর জন্যও নেই - মধুমতীকে দেখার এই পর্বটুকু ছাড়া। সকালে হাসপাতালে যাওয়া, সারা দিন সেখানকার একঘেঁয়ে কাজ শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা। দিনের পর দিন একই রূটিন। ব্যতিক্রম চা-বাগানের প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন। সব সময়ই কোন না কোন ঘটনা-দুর্ঘটনাকে ঘিরে আছে। এদের জীবনে উত্তেজনাহীন দিন নেই, আবার সব উত্তেজনাই নিমেষে শান্ত-স্বাভাবিক হয়ে যায়।

একদিন বিকালে ঘরে ফেরার পথে কারখানার কাছে উদ্বিগ্ন শ্রমিকদের জটলা দেখা যায়। অতনু সেখানে দাঁড়ানোর কোন উৎসাহ পায় না, ওদের কোন বিষয়ে জড়াতেও চায় না। তাই কোন আগ্রহ না দেখিয়ে অতনু যখন তাদের পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নেয়, তখন লাইন সর্দার মালিয়া উদ্বিগ্ন গলায় ডেকে ওঠে, “ডাগদর বাবু, একটু এদিকে আসুন”। অতনু ফিরে তাকায়, এগিয়ে গেলে দেখা যায় পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চা কোলে চা বাগানের শ্রমিক এতুবা তান্তীর বউ মাটিতে বসে আছে। কঙ্কালসার বাচ্চাটার ডান পায়ে ছেঁড়া ব্যান্ডেজ বাঁধা, চোখ বন্ধ, মুখ ব্যথায় নীল। বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে অতনু বোঝে বাচ্চাটার তখন শেষ অবস্থা। তবু একবার চেষ্টা করার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে নিজেও আবার হাসপাতালের দিকে ছোটে।

হাসপাতালে বাচ্চাটার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পরিষ্কার করার সময়ই অতনু টের পায় বাচ্চাটার শরীর তার হাতে ধরা সূঁচের চেয়েও ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। অপারেশন থিয়েটার থেকে বাইরে বেরিয়ে অতনু অপেক্ষমান জনতাকে দুঃসংবাদটা দেয়। নিজের কাজের এই অংশটাকে অতনু সবচে’ অপছন্দ। মৃত্যুর এই অবশ্যম্ভাবী ধাক্কা, বেদনা আর হতাশা তাকে গ্রাস করে, তাড়া করে ফেরে। তখন বার বার তার নিজের অসামর্থ্যের কথা মনে হয়।

তারপর একটি নারীকন্ঠের আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা নিষ্প্রান শিশুটিকে অতনুর কাছে মাটিতে পড়ে থাকা জীর্ণ, বিবর্ণ একটা ফুলের মত মনে হয়। হঠাৎ একজন নারী দুম করে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে, মুখ তার ঘামে ভেজা, বুক হাপরের মত উঠা-নামা করছে, চোখে জ্বলন্ত আগুন। অতনু তাকে চিনতে পারে - সে মধুমতী। একটি কথাও না বলে মধুমতী বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নেয়, তার ঠাণ্ডা মুখটি নিজের গালে চেপে ধরে, ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, তারপর এক ছুটে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়। এতুবার বউ তখন হাসপাতালের বাইরের বারান্দায় পড়ে আছে। কেউ একজন তাকে তুলে নিয়ে বের হয়ে যায়। একদল মানুষ মেরুদণ্ডহীন শুঁয়োপোকার মত হাসপাতালের গেট দিয়ে বের হয়ে যায়, তাদের একেবারে শেষে মধুমতী, এতুবার মৃত শিশুটি তখনো তার কোলে।

অতনু বিষন্ন হয়ে পড়ে। যদিও এটা জানা কথা যে বাচ্চাটিকে যে অবস্থায় সে পেয়েছিল তাতে তার পক্ষে তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিলনা। তবু একটা অপরাধবোধে তার মন ছেয়ে থাকে। চৌকিদার সুখদেও হারিকেন জ্বালিয়ে নিয়ে আসে - তারও মন ভারী। তার কাছ থেকে জানা গেল বাচ্চাটা এতুবার একমাত্র সন্তান। বিয়ের পর এতুবা দম্পতি দীর্ঘদিন নিঃসন্তান ছিল। তারপর এক হোলির দিনে তাদের দেশ-গাঁও থেকে এক “বাবা” আসে। বাবাজীর দেয়া তাবিজ পড়ে তাদের মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন সন্তান মারা যাওয়ায় এতুবা মুষড়ে পড়েছে, আর তার বউয়ের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।

রোগীর মৃত্যুতে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেবার বিলাসিতা ডাক্তারদের মানায় না। এই হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা রকমের জ্বর, ক্ষত, ঘা, পেট ব্যথা, মৌসুমী রোগ-বালাই, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের জন্য সৃষ্ট নানা জটিলতার বিরূদ্ধে অতনুকে হরহামেশাই লড়তে হয়। তবু এই শিশুটির মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভোগায়।

এর কয়েকদিন পর দেখা গেল মধুমতী হাসপাতালে তার চেম্বারের বাইরের বাগানে বসে আছে। এতুবার বাচ্চাটা মারা যাবার পর থেকে তাকে আর পানি নিতে বাবু লাইনে আসতে দেখা যায়নি। অতনুর মনে হয়েছে মধুমতী মিছেই তার উপর রাগ করে বাবু লাইনে আসেনি। শেষ রোগীটার জন্য প্রেসক্রিপশন লেখার সময় চৌকিদার সুখদেও বুধন নামের এক সাঁওতাল যুবককে নিয়ে চেম্বারে ঢুকল। বুধনের গলায় রুমাল বাঁধা, হাতে আদিবাসী স্টাইলে তীর-ধনুক। অতনু তার সালামের উত্তর দিয়ে সমস্যা কী জিজ্ঞেস করল। বুধনের উত্তর, সমস্যা তার নয় - তার স্ত্রীর। বিরক্তি লুকিয়ে অতনু বলল, “তাহলে তোমার বউকে নিয়ে এস”। বুধন বাইরে থেকে তার বউকে নিয়ে এলে দেখা গেল সে মধুমতী। আশ্চর্যের ব্যাপার মধুমতীর চোখে রাগ নেই, ভঙ্গীতে উদ্ধত ভাব নেই। মধুমতী বুধনকে অতনুর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না দিয়ে বাইরে যেতে বলল। বুধন বাইরে যেতে সে অতনুকে তার সমস্যার কথা খুলে বলল। অতনু তাকে পরীক্ষা করে কিছু ঔষধ লিখে দিল আর কোনরকম শারিরীক বা মানসিক চাপ নিতে নিষেধ করল। মধুমতী যখন বের হয়ে গেল, অতনু দেখল ট্রলি ট্র্যাকের কাছে দাঁড়িয়ে বুধন উড়ে যাওয়া এক জোড়া ঘুঘুকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ছে - মধুমতীর শারিরীক সমস্যার ব্যাপারে কোন উদ্বিগ্নতাই তাকে স্পর্শ করেনি।

এরপর থেকে মধুমতী তার বাসায় বা হাসপাতালে অদ্ভূত সব সময়ে হাজির হতে থাকে। কখনো সে বারান্দা ঝাঁট দেয়, কখনো বাগান থেকে ফল বা সব্জী তুলে আনে, কখনো এমন কি তার গলা থেকে স্টেথোস্কোপ টেনে নিয়ে নিজের গলায় পড়ে। যেন নিষিদ্ধ ফলের দিকে অতনুকে আকৃষ্ট করতে সে তার সব ছলাকলা খাটিয়ে যাচ্ছে। তার কাঁচের মত ভেঙ্গে পড়া হাসি, মোহময় চাহনী যেন না বলা কথা বলতে চায়। অতনু অসহায় বোধ করে। বুঝতে পারেনা অবস্থান আর সম্মান বাঁচিয়ে কতদিন সে এই প্রলোভন থেকে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে।

সদাশিব টী এস্টেটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও ভিতরে ভিতরে অতনু আর শান্তিতে থাকতে পারে না। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঢেউয়ের মত চা বাগান, দৈত্যাকার চিমনীগুলো থেকে আকাশে মিশে যাওয়া কালো ধোঁয়া, শ্রমিক লাইনের ছোট ছোট ঘরের সারি, রাতে মাদল আর ঝুমুরের শব্দ, সারা সপ্তাহের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য রবিবারে হাড়িয়া গেলা মেয়ে-মরদের চিৎকার-উল্লাস - এর সবকিছু অতনুকে এক জাদুর জগতে নিয়ে যায়। তার ইচ্ছে করে অন্তহীন সবুজে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে, মধুমতীর কাজল-কালো চোখের সরোবরে নির্ভার হয়ে ডুবে যেতে। এই চোখদুটো তাকে সর্বত্র-সবসময় তাড়া করে ফেরে। আর চোখদুটোর মালকিন তার মন ভরে থাকে তার কাজের সময়গুলোতে। তার ভাবনায় অতনু যেন উন্মাদ হয়ে ওঠে। যখন তার নিজের অতীত আর বর্তমানের ভদ্র ইমেজের কথা মনে হয় তখন নিজের মনকে আঙ্গুল তুলে শাসায় কিন্তু মধুমতীর চিন্তা তাকে আবার বিপর্যস্ত করে দেয়।

প্রায় মাসখানেক পর বুধন এসে বলল তার বউ অসুস্থ্য, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এই ছোট্ট হাসপাতালে শ্রমিকদের কাউকে ভর্তি করে রাখার মত ব্যবস্থা নেই। তবু নিজের ক্ষমতা খাটিয়ে অতনু নতুন বানানো ফিমেল ওয়ার্ডে মধুমতীর জন্য একটা বেড যোগাড় করে দেয়। বুধনের সাথে মধুমতী যখন আসল তখন তার চেহারায় আগের সেই মোহময় রূপ নেই। মনে হচ্ছিল যেন শারিরীক-মানসিক চাপ আর ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত এক নারী। করুণ গলায় বুধন বলল, “ডাগদর বাবু, ওর মুখের হাসি ফিরিয়ে দেন”।

কয়েকদিন পর অতনু আবার তার হাসি শুনতে পেল। তবে এই হাসিতে আগের সেই ছেনালী নেই, নির্মল আনন্দের হাসি। গভীর মমতায় নিজের নবজাতককে বুকে জড়িয়ে ধরে গর্বের হাসি। যাবার দিনে বুধন আসল মা-ছেলেকে নিতে। চিলের কাছ থেকে নিজের ছানাকে বাঁচানোর চেষ্টায় রত মুরগীর মত নিজের বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে যাবার কালে মধুমতী অতনুকে বিদায় জানাল। অতনু নতুন একটা প্রেসক্রিপশন লিখে বুধনের হাতে দিয়ে কিছুদিন পর বাচ্চাসহ মধুমতীকে হাসপাতালে আসতে বলল। বুধন অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সন্তানসহ মধুমতীকে বাড়ি নিয়ে গেল। মধুমতীদের যাবার সময় অতনুর আবার এতুবার বাচ্চা কোলে মধুমতীর হাসপাতাল থেকে ছুটে বের হবার দৃশ্য মনে হল।

বাচ্চা হবার পর আগের সেই মোহিনী যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল। আগের মত সারা দিনে বার বার নানা উছিলায় বাসায় বা হাসপাতালে দেখা দেবার ঘটনা আর ঘটল না। প্রথম প্রথম তার অনুপস্থিতি অতনুকে ভাবাত। অতনুর কেবল মনে হত কী যেন নেই। তারপর এক সময় তার চেতন-মন থেকে মধুমতী মুছে গেল।

এক সন্ধ্যায় অতনু দূরের শ্রমিক লাইনে রোগী দেখে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। তখন আকাশ মেঘলা, যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল। অতনু যখন চার নাম্বার লাইনের গেটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন দেখল ভিতরে মধুমতী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। অতনু কাছে গিয়ে তার আর বাচ্চার কুশল জিজ্ঞেস করল। মধুমতী তার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন সে ভুত দেখছে। বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করার জন্য কাছে যেতেই মধুমতী বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরে চিল-চিৎকার দিয়ে এক দৌড় দেয়। মধুমতীকে দৌড় দিতে দেখে কয়েকজন তার পিছু পিছু দৌড় দেয়। হতভম্ব অতনু কিছুক্ষণ স্থানুর মত দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে নিজের বাসার দিকে হাঁটা দেয়।

হঠাৎ করেই যেন চারদিক সন্ধ্যার অন্ধকারে ঢেকে যায়। চারদিক দিয়ে ঘিরে থাকা পাটকাই পাহাড়ের ছায়া যেন সন্ধ্যাটিকে আরো বিষন্ন করে তোলে। অতনুর মনও গভীর বিষাদে ছেয়ে যায়। এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসতেই বাইরে কোলাহল শোনা যায়। আঙ্গিনায় নামতেই দেখা গেল জনা পঞ্চাশেক নারী-পুরুষের এক মিছিল। সবাই উত্তেজিত, অতনুর নাম ধরে নোংরা ভাষায় গালাগালি করছে। যে শ্রমিকেরা অতনুকে এতদিন ধরে শ্রদ্ধার সাথে সম্বোধন করা ছাড়া কথা বলতনা তাদের মুখে এমন ভাষা শুনে বিহ্বল অতনু জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে”?

“তুই আমাদের মেয়ের ইজ্জত লুটতে চেয়েছিস! একজন শিক্ষিত বাবু হয়ে আরেক জনের বউয়ের দিকে হাত বাড়াতে তোর লজ্জা হল না”?

“চুপ কর সবাই”!

জনতার মিছিল আরো ক্ষেপে উঠে। কেউ একজন তার দিকে একটা বর্শাও ছুঁড়ে মারে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সুখদেও অতনুকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যে আশ-পাশের আরো কয়েক জন “বাবু লোক” চলে আসায় সুখদেও তাদের নিয়ে উত্তেজিত জনতাকে কোন ঝামেলা না করে বিদায় করে।

পরদিন সকালে চা বাগানের ম্যানেজার তাকে অফিসে ডেকে পাঠান। বাগানের শ্রমিকেরা নাকি তাকে অভিযোগ করেছে, অতনু বুধনের স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে। মহিলাটি নিজেই তার সাক্ষ্য দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন এতটাই নাজুক হয়ে গেছে যে অতনুর চাকুরী আর বাঁচানো সম্ভব নয়। অতনু নিজের নির্দোষিত্ব প্রমাণের কোন চেষ্টাই করল না। সে নিঃশব্দে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে পরদিন সদাশিব টী এস্টেট ছেড়ে চলে যায়।

শীতের এক কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে আঁধার কাটতে না কাটতে মেডিক্যাল অফিসার অতনু সদাশীব টী এস্টেট ছেড়ে চলে যায় - উদ্ভ্রান্ত, ছন্নছাড়া, শোকাকুল এক মানুষের মত । অথচ সবাই জানে অতনু একজন সুবেশী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ। তারপর বহুদিন তাকে কেউ দেখেছে বলে মনে করতে পারে না। সবাই শুধু জানত অতনু সদাশীব টী এস্টেটের কাজ ছেড়ে গেছে। এই দুর্দিনে অমন ভাল একটা চাকুরী ছাড়ার কথা কেউ ভাবতে না পারলেও অতনু সত্যিই তাই করেছে এ’কথাটি মানতে কষ্ট হলেও না মেনে পারত না।

অতনুর সাথে আমাদের যখন আবার দেখা হয় তখন আমাদের কাউকে সে এ’কথা বলেছে যে, মধুমতীর প্রতি সে তীব্র কামনা অনুভব করেছিল। কিন্তু কখনোই সে তার কোন বহিঃপ্রকাশ ঘটায়নি। অতনু মধুমতীকে কখনো কোন ধরণের প্রস্তাব দেবারও নাকি চেষ্টা করেনি। বরং একজন বিবাহিতা এবং গর্ভবতী নারীই নাকি উলটো অতনুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল। অতনুর ভাষ্য যদি সত্য হয় তাহলে বাচ্চা জন্মাবার পর এমন কী হল যে রাতারাতি সে মধুমতীর শত্রুতে পরিণত হল? মধুমতী কি অতনুর ছায়া থেকে তার বাচ্চাটিকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল? আর সেজন্য অতনুকে যে কোন মূল্যে গোটা দৃশ্যপট থেকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিল?

আমরা শুনতে পাই মধুমতীর আগের দুটি গর্ভ নষ্ট হয়েছিল। এ’দফা গর্ভধারণের পর তাই সে ঝুঁকি না নিয়ে অতনুর শরণাপন্ন হয়। অনাগত সন্তানকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অতনুকে হাত করার জন্যই হয়তো সে ছলা-কলার আশ্রয় নেয় - যদিও এর কোন দরকার ছিলনা। একই সাথে মধুমতী হয়তো বিশ্বাস করত অতনুর দোষে এতুবার বাচ্চাটি মারা গিয়েছিল। তাই অতনুর কালো ছায়া যেন তার বাচ্চার উপর না পড়ে সে জন্য সে অতনুর দৃষ্টি থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু খোদ অতনু যখন তার দোরগোড়ায় হাজির হল তখন তাই হয়তো সে পুরোনো সব কৃতজ্ঞতা ভুলে অতনুকে তার নিজের সীমানা থেকেই দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল।

মধুমতীকে আমরা কী বলতে পারি - অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর, নাকি হিসেবী, নাকি হৃদয়হীনা, নাকি অসহনীয় যাতনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক মা? মধুমতীর সাথে আমাদের দেখা বা কথা হয়নি তাই আমরা জানি না মধুমতীর মনে কী ছিল। আমরা জানি না অতনু আমাদের যা বলেছিল তার সত্যতাই বা কতটুকু। তাহলে কোন রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই কি আমরা মধুমতীর গল্পটি এখানে শেষ করে দেব?

আমরা অনেক কিছুই জানি না। যেমন জানি না পরবর্তীতে অতনুর কী হয়েছিল বা সে কী করেছিল। অথবা তার সেই মোহময়ী নারীরই বা কী হয়েছিল। স্মিতা, মণিদীপাদের নিয়ে গল্প করা সহজ। কারণ, সেগুলো বহিরঙ্গসর্বস্ব, সেখানে ঘটনার গভীরে কেউ যায় না। কেউ তাদের নিয়ে, তাদের চিন্তা করে না বা তাদের আবেগ নিয়ে ভেবে দেখে না। এটা ঠিক যে বেশিরভাগ সময় মানুষ শুধু যা দেখতে পায় - শুধু তা নিয়েই ভাবে, ঘটনার গভীরে কী আছে বা কার্যকারণ নিয়ে মাথা ঘামায় না। প্রত্যেকটি মানুষের আবেগ আর চিন্তার জাল এতটাই অন্তঃসম্পর্কিত আর জটিল যে কেউ সেই জটিলতাকে স্পর্শ করতে চায় না। কিন্তু মধুমতীর ব্যাপারটি আমাদের দেখা, আমাদের জানা ঘটনাগুলোর সাথে ঠিক মেলেনা।

এ’কারণেই যত সহজে আমরা স্মিতা, মণিদীপা বা শ্রাবন্তীদের গল্প করতে পারি তত সহজে আমরা মধুমতীর গল্প করতে পারি না।

দোহাইঃ

“মধুমতী” গল্পটি অহমীয়া ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, সাংবাদিক নীরদ চৌধুরীর একই নামের গল্পের ইংরেজী অনুবাদ থেকে করা বাংলা রূপান্তর। তাঁর প্রকাশিত ছোট গল্প সঙ্কলন ৩৮টি, উপন্যাস ৮টি। তাঁর লেখা গল্প নিয়ে বানানো চলচ্চিত্র “চামেলী মেমসাব” (প্রথমে অহমীয়ায় পরে হিন্দীতে পুনর্নির্মিত) দুটি জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত। “চামেলী মেমসাব” ছাড়াও তাঁর আরো তিনটি ছোট গল্প নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের এই আজীবন ভক্ত তাঁকে নিয়েও বই লিখেছেন। দীর্ঘদিন সাপ্তাহিক “অহম বানী”র সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর আগে প্রকাশিত আত্মজীবনী “ডুম ডুমা, ডুম ডুম”।


অহমীয়া গল্পের রূপান্তর-০১

অহমীয়া গল্পের রূপান্তর-০২


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পাণ্ডব'দা, অসাধারণ অনুবাদ করেছেন। দুর্দান্ত লাগল পড়তে। যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল সব ক'টা দৃশ্য, একের পর এক।

এটা ঠিক যে বেশিরভাগ সময় মানুষ শুধু যা দেখতে পায় - শুধু তা নিয়েই ভাবে, ঘটনার গভীরে কী আছে বা কার্যকারণ নিয়ে মাথা ঘামায় না। প্রত্যেকটি মানুষের আবেগ আর চিন্তার জাল এতটাই অন্তঃসম্পর্কিত আর জটিল যে কেউ সেই জটিলতাকে স্পর্শ করতে চায় না।
ভীষণভাবে একমত। একদম মনের কথাটাই উঠে এসেছে লাইন ক'টায়।

আপনার অনুবাদে বাকি অহমীয়া গল্পগুলোও পড়তে চাই।

মনে হলো, খুব অল্প কিছু বানান ভুল আছে। আপনার লেখায় সচরাচর ভুল চোখে পড়ে না। তাই বললাম।

ভালো থাকবেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ বিডিআর (আজকাল এই নামে কেউ ডাকে না মনে হয়)। নীরদ চৌধুরী অহমীয়া ভাষার অন্যতম প্রধাণ ছোটগল্পকার। আফসোস হয় ভাষাটা শিখতে পারিনি। নয়তো শুধুমাত্র তাঁর গল্প দিয়েই আটত্রিশটা ছোটগল্প সঙ্কলন বের করা যেত।

আগেই বলেছি মোট বিশটা গল্প অনুবাদের ইচ্ছে আছে। কতটুকু পারব জানি না।

বানান ভুল চোখে পড়ল আর বললেন না, এটা কি ঠিক হল?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আসলেই, বিডিআর নামে আজকাল লোকজন কম ডাকে। বিশেষ করে বিডিআর বিদ্রোহের পর থেকে। খাইছে

পাঠক'দা তো নিচে কিছু উল্লেখ করেছেনই, আমিও অল্প কিছু যোগ করি:

ঠাণ্ডা - ঠান্ডা (এর আগে পাঠক'দার একটা কবিতায়, এটাই নাকি ঠিক, জেনেছিলাম)
শারিরীক - শারীরিক
মত - মতো
হল - হলো
রূটিন - রুটিন
বিষন্ন - বিষণ্ন

যুধিষ্ঠির এর ছবি

গল্পকারের মুখ থেকে অনেকটা অদৃশ্য থার্ড পার্সনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলার এই স্টাইলটা ভালো লাগলো। যেখানে গল্পকার শুধুই কাহিনীর বর্ণনাকারী, অন্য কিছু নন। তিনি সরাসরি অতনুকে চেনেন বলে মনে হয় না, আবার উনি অতনু সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। অন্যদিকে অতনু গল্পকারকে চেনে বলে ঠিক মনে হয় না। গল্পকার গভীর আবেগ বা দু:খের বা সুখের কথা বলেন, কিন্তু সেটা তার নিজেকে অতটা স্পর্শ করে বলেও মনে হয় না - ব্যাপারটার মধ্যে কেমন যেন একটা নির্লিপ্ততা আছে।

অনুবাদ চমৎকার লাগলো। চলুক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প বলার এই স্টাইলটা আমার, নীরদ চৌধুরীর নয়। রূপান্তরের সময় এই এক্সপেরিমেন্টটা করেছি। গল্পটার ইংরেজী অনুবাদ এত জোলো ছিল যে ফর্ম ভাঙ্গা ছাড়া উপায় ছিলনা। দোষটা ইংরেজী অনুবাদকের, নীরদ চৌধুরীর নয়। আমি অবশ্য আরো নৈর্ব্যক্তিক হবার চেষ্টা করেছিলাম, পেরে উঠিনি।

চতুর্থ গল্প আসতে একটু সময় লাগতে পারে। আরো কিছু কাজ হাতে জমে আছে, শেষ করা হয়নি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এই স্টাইল আপনার হলে তো আরেকবার প্রশংসাবাক্য শোনাতে হয় আপনাকে! ফর্ম ভেঙ্গে আবার গড়েছেন, লেখায় সেই পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। দারুণ!

জাহিদ হোসেন এর ছবি

প্রহরী ভাইয়ের সাথে একদম একমত। গল্পের শেষে এসে জানলাম যে এটি অনুবাদ। না বললে বুঝতেই পারতাম না। খুবই ভালো লেগেছে লেখাটি আমার। লিখুন ভাই, লিখুন!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হায় হায় দাদা, পোস্টের হেডিং আপনার চোখে পড়েনি! উপরেই তো লেখা ছিল "অহমীয়া গল্পের রূপান্তর"।

আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

আরিফ ভাই চমৎকার লাগল।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ রিপন। টিপাইমুখ নিয়ে তোমার পোস্টগুলো থেকে বই করার পরামর্শটা মাথায় রেখো। এটা খুবই দরকারী।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

জানেন কী আশ্চর্য - আমাদের এদিকে আজকে সূর্য ওঠেই নি! সেজন্যই বোধ হয় চউক্ষে ভুলভাল দেখি - ঝাপসা ঝাপসা দেখে মনে হয় আপনি একটা লেখা দিয়েছেন ......?

ভালো লেগেছে অনুবাদ। আরেকটু আলস্যত্যাগী হবার চেষ্টা করুন মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একধরণের রণকৌশল আছে যেখানে বলা হয়, "Offense is the best defense"। আপনি সেই নীতি ধরেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে আমি গণ্ডারের চামড়াওয়ালা মানুষ। এত সহজে কাজ হবে না।

আলস্য ত্যাগের ব্যাপারে মুরুব্বীরা যদি "আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও" নীতি অনুসরণ করতেন তাহলে ছোটরা কত কিছুই না শিখতে পারত।

অনুবাদ আপনার ভালো লাগায় আমি আনন্দিত। ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভুলেও মনে করবেন্না আপনার খোঁটাটা lost in translation!!! রেগে টং

সময় এবং সুযোগমত ফেরৎ দাওয়া হইবে - আপাতত ফেভার ব্যালান্সশীটের ডেবিট কলামে নথিভুক্ত করা হইলো ...

মূলত পাঠক এর ছবি

প্রহরীর হয়ে আমিই তালিকা দিয়ে দিলাম:
প্যারা ১
দ্বিধান্বিত (মূর্ধন্য ণ হবে)
বাঁধে না: নো চন্দ্রবিন্দু

প্যারা ২:
কন্ঠহার: (মূর্ধন্য ণ হবে)
পুজারী: দীর্ঘ ঊ-কার

প্যারা ৩:
নিমিষে : নিমেষে ?

প্যারা ১১:
মালিকিন : মালকিন ?

শেষ প্যারা:
পূনর্নির্মিত: পুনর্নির্মিত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই তো চাই! অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ভুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছি।

প্রহরীর কাজ করে দিয়েছেন ভালো কথা, কিন্তু আপনার মতামত কই?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার অনুবাদ খুবই ভালো লাগলো, আগেও বলেছি অন্য পোস্টে। তবে এই গল্পটা ঠিক জুতের হলো না। এই কথা লেখার মানে বিশেষ হয় না, গল্পকার আমার মন্তব্য পড়বেন এমন তো নয়, তাই প্রথমে মতামত জানাই নি।

আপনি আরও অনুবাদ করুন।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দ্বিধান্বিত... মূর্ধন্য ণ? তাই নাকি? না তো!
দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লাম একেবারে!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মূলত পাঠক এর ছবি

অণ্বয় নাকি অন্বয়? অণু থেকে এসে থাকলে মূর্ধন্য ণ হবার কথা। যদিও অনু দন্ত্য ন দিয়েও হয়, তবে সেটা তো ঐ বিশ খানা অনুসর্গের ক্ষেত্রে, সেই প্র পরা অপ সম নি অব অনু ইত্যাদিতে।
আমিও ঘোর দ্বিধাণ্বিত / দ্বিধান্বিত হয়ে গেলাম যে! মুজিব ভাই গেলেন কই? ইশতি-টাকেও যদি কাজের সময় পাওয়া যায়!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এখানে যে "ন" হবে তাতে আমার কোনো দ্বিধা নাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলা একাডেমী বলছে "অন্বয়" - দন্ত ন দিয়ে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প জুতের না লাগার দোষ সম্ভবতঃ নীরদ চৌধুরীর নয়। ইংরেজী অনুবাদ আর তা থেকে বাংলায় রূপান্তরের সময় অমনটা ঘটে থাকতে পারে। আমার এই লেখাগুলো তো আসলে আভান্তির গল্পের "স্যুপের স্যুপ"-এর মত। তাই অমনটা হতেই পারে।

অনুবাদ তো করতেই হবে, মৌলিক গল্প লেখা আমার জন্য তো প্রায় স্বপ্নের ব্যাপার।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি আরো জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম গল্প বলার এই স্টাইলটা লেখকের নিজের কী না? আপনার স্টাইলটা ভালো লাগলো। কিন্তু গল্পকারের নিজের স্টাইলটা জানার আগ্রহ রয়ে গেলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সেটা জানতে হলে আপনাকে অহমীয়া ভাষা শিখতে হবে। চলেন দুই ভাই মাঠে নাইমা পড়ি - যদিও বাংলাদেশে থেকে অহমীয়া ভাষা শেখার কোন উপায় আছে বলে জানা নেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক। চমতকার।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। তবে বস ভবিষ্যতে এই সব প্রসংশা বাক্য দিয়ে মন্তব্য না সেরে বিস্তারিত সমালোচনা করুন। যাঁরা সাহিত্য রচনা করতে পারেন তাঁদের বিস্তারিত সমালোচনা পেলে লেখার সাহিত্যমান কেমন হল তা বুঝতে সুবিধা হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শামীম রুনা এর ছবি

আরো অহমীয়া গল্পের অনুবাদের প্রত্যাশায় রইলাম।
অনুবাদ ভালো লেগেছে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। চেষ্টা চালিয়ে যাব।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

শিমুলের রক্তরাগে সদাশিব টী এস্টেটের বনে তখন আগুন লেগেছে।

ঈর্ষণীয় অনুবাদ!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা। আপনার পোস্ট কই? কোথায় ডুব দিয়েছেন?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।