উন্নয়নের বলি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০৪/২০১০ - ১২:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা সুন্দর নগর বা পথ বা সেতু বা ভবন দেখে আমরা মুগ্ধ হই। আমরা এর নির্মাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করি - অভিনন্দন জানাই, এর ব্যবহারকারীদের প্রতি হয়তো ঈর্ষাও পোষন করি। কিন্তু যা আমরা সচরাচর ভাবিনা তা হচ্ছে এই সুন্দর নগর বা পথ বা সেতু বা ভবন নির্মাণে হয়তো ধ্বংস হয়ে গেছে একটি বন আর তার বাসিন্দারা অথবা বিলীন হয়ে গেছে একটি গ্রামাঞ্চল অথবা উদ্বাস্তু হয়ে গেছে কিছু মানুষ, আর কেউ কেউ একেবারেই হারিয়ে গেছে। আমরা জানি নাগরিক সভ্যতার এই অগ্রযাত্রায় এই ঘটনাগুলো ঘটবেই।

পদ্মার উপর দিয়ে সেতু বানাতে গেলে সেতুর দুই প্রান্তে গ্রাম অধিগ্রহন করে সংযোগ সড়ক তৈরি করতে হবে। সেতুর দুইপাশে নদী-শাসন করার জন্য হয়তো কয়েক কিলোমিটার জুড়ে গ্রামবাসীরা উচ্ছেদ হয়ে যাবেন। হারিয়ে যাবে ফসলের ক্ষেত, গাছ-পালা, কিছু পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গ। এই নির্মাণের জন্য এই ক্ষতিগুলো আমাদের স্বীকার করে নিতেই হয়। আমরা জানি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা সরকারের কাছ থেকে এ’বাবদ ক্ষতিপূরণ পাবেন বা পুনর্বাসিত হবেন - যা হয়তো যথেষ্ট হবে অথবা হবেনা। গাছ-পালা-পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গ প্রভৃতি মানবেতরদের ক্ষতিপূরণ দেবার বিধান নেই, উপায়ও নেই। তাই তাদের ক্ষতি স্থায়ী, অপূরণীয়।

মানবেতর প্রাণী, উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক বিন্যাস-ব্যবস্থার এই ক্ষতিই হচ্ছে পরিবেশের বিপর্যয়। আর পরিবেশের বিপর্যয় দেশের সীমানা মেনে হয়না। গঙ্গার উৎসমূখের কাছে ভারত যদি তেলের পরিশোধনাগার, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ডিষ্টিলারী ইত্যাদি বসায় তাহলে তার ক্ষতি ভোগ করতে হবে বাংলাদেশকেও। চেরনোবিল দুর্ঘটনার ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে রাশিয়া থেকে শুরু করে গোটা পূর্ব ইউরোপকে। কয়েক শতক জুড়ে উন্নয়নের ঠেলায় সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের ধাক্কা সামলাতে হবে গোটা দুনিয়াকেই। এখানেও মূল ক্ষতির ঢেউটা যাবে গরিব বিশ্বের উপর দিয়ে।

গাছ-পালা-পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গদের মত কিছু কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আর সেই জনগোষ্ঠীটি যদি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার হয় তাহলে তো কথাই নেই, নির্বিচারে নিধণযজ্ঞ চালানো যায়। এই গল্প আমরা সবাই জানি। উন্নত দেশগুলোর ইতিহাস ঘাঁটলে তাদের নিজভূমিতে বা উপনিবেশে এই ধরণের অপকর্ম চালানোর বর্ণনা পাওয়া যাবে। আমাদের নিজের দেশেও অমন ঢেড় উদাহরণ আছে।

যেকোন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নের একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে এক বা একাধিক জনগোষ্ঠীর sacrifice। এই sacrifice-টি অবশ্য স্বেচ্ছাকৃত নয়। কখনো উচ্চতর শ্রেণীটি, কখনো বৃহত্তর নৃগোষ্ঠীটি অথবা কখনো রাষ্ট্র স্বয়ং উন্নয়নের স্বার্থের দোহাই দিয়ে বা বৃহত্তর কল্যানের দোহাই দিয়ে নিম্নতর শ্রেণীটিকে বা ক্ষুদ্রতর নৃগোষ্ঠীটিকে বা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে এই sacrifice-এ বাধ্য করে। এই বলির পাঁঠা পরিণামে নিজের প্রাণ বা অস্তিত্ব বা অবস্থান হারায়। উন্নয়ন কর্মের সুফল ভোগ করার সুযোগ তাদের মধ্যে কমজনেরই হয়।

আমাদের মহল্লায় টিনের চালার ছোট মার্কেট ভেঙে বহুতল বানিজ্যিক ভবন তৈরি করা হল। প্রথমে বলা হয়েছিল যে আগের সবাই একটা করে দোকান পাবেন। পরে দেখা গেল নতুন বানানো ভবনে দোকানের এত দাম রাখা হয়েছে যে পুরনো কেউই আর দোকান কিনতে পারলেন না। পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা জমি-বাড়ি হারাবেন তাদের অনেকের পক্ষেই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে আর নতুন জমি কেনা সম্ভব হবেনা। কারণ, সেতুর কাজ শুরু হওয়া মাত্র আশেপাশের জমির দাম হু-হু করে বেড়ে যাবে।

যেসব জায়গায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হয়েছে সেসব জায়গায় কিছু মানুষ উচ্ছেদ হয় আর বাকিদের পর্যটনের বস্তুগত ও সামাজিক আবর্জনা বহন করতে হয়। লক্ষ করে দেখবেন পর্যটন কেন্দ্রের উচ্ছেদকৃত আদি আধিবাসীদের চোখে যুগপত অসহায়ত্ব, ক্ষোভ ও ঘৃণা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদ্রোহও দেখা যায়। এই দৃশ্য দেশ নির্বিশেষে একপ্রকার।

উন্নয়নের নিধণযজ্ঞ নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য দরকার হয় এ’সংক্রান্ত ব্যাপারে নিবর্তনমূলক আইনের, দরকার হয় এই বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ সীমিতকরণের। রাষ্ট্র বা সুবিধাভোগী গোষ্ঠীটি তখন নানা প্রকার ষড়যন্ত্রের খোঁজ পায়। সেসব ষড়যন্ত্রের মূল খুঁজতে গেলে দেখা যায় তার সবগুলোরই পালের গোদা ঐ “বলি গোষ্ঠী”র। আর ষড়যন্ত্রগুলোও ব্যাখ্যাত হয় দেশ-জাতির বৃহত্তর কল্যান বিরোধী হিসাবে বা অসভ্য-বর্বর বলে। ফলে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক জনমত মূলতঃ “বলি গোষ্ঠী”র বিপক্ষে চলে যায়।

মিডিয়ার উন্নয়নে এই সব নিবর্তনমূলক আইন, কণ্ঠরোধকরণ, ষড়যন্ত্র থিয়োরী প্রতিষ্ঠিতকরণ বন্ধ হয়নি। বরং খোদ মিডিয়ায়ই অসত্যাচার, নিবর্তন ও কণ্ঠরোধের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ঘটে যাওয়া একই ঘটনা বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, সিসিটিভি, দূরদর্শণ আর বিটিভি একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করে। এদের অনেকের ব্যাখ্যাই একজন আরেকজনের সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে সাধারণ দর্শক-শ্রোতা সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়, তখন সে subjective judgment করা শুরু করে। তাছাড়া মিডিয়া দ্রুত নতু নতুন বিষয়ে আলোকপাত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলো-আপ করেনা বলে মিডিয়ার এই ডামাডোলে লোকজন আগের অপকর্মগুলো ভুলতে বসে অথবা সেগুলোর ব্যাপারে নমনীয় হয়ে যায়। সুবিধাভোগী গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রিত বা আজ্ঞাবহ প্রচারযন্ত্র তখন আস্তে আস্তে তাদের অপকর্মের সপক্ষে জনমত জোগাড় করতে থাকে।

এইভাবে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়তো করা যায়,তবে মানবিক উন্নয়ন করা যায়না, মানসিক উন্নয়নও হয়না। এই প্রকার নিয়ন্ত্রন মানবিক বা মানসিক উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে অথবা তার উত্থান রহিত করে। এতে মানুষের মধ্যে আইনানুগ থাকার বা নিয়মানুবর্তী হবার প্রবণতা হয়তো তৈরি হয়, তবে আইনের শাসন নিশ্চিত হয়না। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলে আসলে যে সব প্রজন্ম এই আমলে জন্মেছে ও বেড়ে উঠেছে তাদের কাছে এই লৌহ যবনিকাটিকেই ঠিক ও স্বাভাবিক বলে মনে হয়। তখন তাদের মাথায়, হওয়া উচিত এমন অনেক সহজ বিষয়ও ঢোকেনা।

২০০৭ সালে আমার চীনা সহকর্মী (চীনে বাস করেন) জিজ্ঞেস করলেন আমাদের দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সাম্প্রতিক গোলযোগটা কী নিয়ে। আমি দীর্ঘ সময় বলেও তাকে কিছু বোঝাতে পারিনি। তার কথা, কংগ্রেস (জাতীয় সংসদ), প্রিমিয়ার (প্রধাণমন্ত্রী), প্রেসিডেন্ট নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ভাবনার কী আছে? বাংলাদেশে এতগুলো রাজনৈতিক দল কেন? আর তারা নিজেদের মধ্যে কলহ করে কেন? সহকর্মীটি হয়তো অন্যদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে স্কুল-কলেজে কিছু পড়া-শোনা করেছেন, কিন্তু সেগুলো তার বোধে আসেনি। এটি একধরণের অজ্ঞতা। অজ্ঞতাপ্রসূত আচরণকে আনুগত্য বলা যায়না। আফিমের নেশায় নির্জীব চীনারা ঔপনিবেশিক শক্তির অনুগত ছিল - তা ঠিক নয়। যারা আফিমের নেশাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলতে পেরেছিলেন, তারাই বাকীদের জাগিয়ে তুলেছেন এবং সবাই মিলে নয়াচীন গড়ে তুলেছিলেন।

একবার এক লম্বা বিমান যাত্রায় উৎকলবাসী এক ভারতীয় সহযাত্রীর সাথে কথা হয়েছিল চীন ও ভারতের উন্নয়নের তুলনা নিয়ে। তার ভাষ্য ছিল, এটা ঠিক যে ভারত বস্তুগত বা অবকাঠামোগত দিক দিয়ে চীনের চেয়ে ঢেড় পিছিয়ে আছে। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নের দিক দিয়ে ভারত চীনের চেয়ে অনেক অনেক বছর আগিয়ে আছে। চীন যে পথ দশ বছরে নির্মাণ করেছে আরো উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত হয়তো পাঁচ বছরেই তা নির্মাণ করতে পারবে। কিন্তু কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা গণতান্ত্রিক ইনস্‌টিটিউশন দাঁড় করানোর সময়, অথবা বৃহত্তর ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আচরণ চর্চার সংস্কৃতি নির্মাণের সময় কমিয়ে আনা যায় না। উৎকলনন্দনের কথার সত্যতা আমি অস্বীকার করতে পারিনা যদিও তার কথার ফাঁকগুলো ভারতের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এই ফাঁকগুলো পূরণ করা যায়, সেটা মুক্তচিন্তার বহুল চর্চার মাধ্যমে, শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নের মাধ্যমে, দেশপ্রেম আর সহনশীলতা চর্চার মাধ্যমে।

এরপরও উন্নয়ন কীভাবে হবে সেই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল - যেখানে পরিবেশের বিপর্যয় হবেনা বা প্রান্তিক শ্রেণী ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা। এই প্রশ্নটার উত্তর রাজনীতির কাছে আছে। রাষ্ট্র যখন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক হবার চেষ্টা করে তখন উন্নয়ন ব্যাপারটা আর চাপিয়ে দেবার বিষয় থাকেনা। যে sacrifice-টুকু আবশ্যিক হয় সেটা সবার সাথে ভাগ করে করা হয়। প্রান্তিক গোষ্ঠীকে তখন কেবল গোনাগুনতিতেই আলাদা করা যাবে - জীবনযাত্রার মান বা মর্যাদার প্রশ্নে না। তখন বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের দিকেও সমানভাবে নজর দেয়া হবে। ফলে উভয়দিকে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রাজনীতির এই পরিবর্তনটা শুধু ঘরে করলেই চলবেনা। নয়তো বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের মত নতুন নতুন ভুত আমাদের তাড়া করে ফিরবে।

এই সমাধানটি সোনার পাথর-বাটির মত শোনায়। আমরা জানি, রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে বা মানুষের মজ্জার মধ্যে কিভাবে যেন স্বৈরাচারী মনোবৃত্তিটা ঘাপটি মেরে থাকে। সুযোগ পেলে কখনো না কখনো সে ফণা তোলে। আশাবাদী মানুষেরা তার মধ্যেও মন্দের ভালটুকু খুঁজে পাবেন। আমরা অন্ততঃ একটু চেষ্টা করে দেখতে পারে, আরেকটু আশা করতে পারি। তাতে আর কিছু না হোক বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে ভালো কিছু তো পাওয়া যাবে। তার আগে এ’কথাটাও বিশ্বাস করতে হবে একের পর এক জনগোষ্ঠীকে বিলুপ্ত বা বিপন্ন করে, হাজার হাজার মানুষকে ফায়ারিং স্কোয়াডে বা নির্বাসনে পাঠিয়ে, বিশাল বিশাল অঞ্চলের পরিবেশ ধ্বংস করে, মানুষের চোখে-কানে ঠুলি পরিয়ে - গলাটা চেপে ধরে, মানুষকে যন্ত্রের মত খাটিয়ে যে উন্নয়ন করা হয় তা আদতে কোন উন্নয়ন নয়। তার চাকচিক্যে, তার মোহে পড়ে আমরা যেন অমন ভুল না করি। এ’সব উন্নয়ন লাগসই নয়, টেকসই নয়, মানবিকতো নয়ই। বৈষয়িক উন্নতি করলাম কিন্তু মানুষ হতে পারলামনা - তাতে কী লাভ?

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
১। নৈষাদদা’ - প্রশ্নটি সামনে আনার জন্য
২। শুভাশীষ দাশ - ব্যাখ্যা দাবী করার জন্য।


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

আমাদের নীতিনির্ধারন থেকে শুরু করে কার্যসম্পাদন পর্যন্ত কেন্দ্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আইনপ্রনয়নের জন্য যাদের নির্বাচিত করা হয়, তারা করে নির্বাহীর কাজকাম। বিভাগ-জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহন এমনকি তাদের মতামত গ্রহনের কোন আইনী উপায় নেই অথবা থাকলেও সেটা বিহত হয় অনেকটাই সেই নির্বাচিত-নির্বাহীর কারনেই। যোগাযোগ ব্যাবস্থার আধুনিকায়নের ফলে তথ্য অনেকটাই সহযলভ্য হয়েছে সত্য, তবে তথ্য প্রবাহ এখনো একমুখী, কেন্দ্র থেকেই শুধু মতামত আসছে। কিন্তু কেন্দ্রের কেউ প্রান্তের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।

তাই বলছি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন করেও এই উন্নয়নের বলি কিছুটা ঠেকানো সম্ভব। তবে নির্বাচনের আগে নগদ কলাটা মুলোটা (বিদ্যুত, দ্রব্যমূল্য)র চাইতেও যে দুরপাল্লার কাঠামোগত পরিবর্তন (স্থানীয় সরকার, জবাবদিহিতা) জরুরী, এ বিষয়টা বুঝতেও মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়ন ছাড়া গতি নেই।

যেটা আমার কাছে এখনো অস্পষ্ট, সেটা হল এই মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে। যে সঠিক গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ার কথা আপনি বলছেন, সেটা কি এই মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের ফলাফল নাকি সেটাই এই উন্নয়নপ্রকৃয়ার সুত্রপাত ঘটাবে? আমাদের বর্তমান গড় মানবিক ও বৌদ্ধিক অবস্থানে থেকে একটি চলনসই গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ার কি ফল ধরতে পারে, সেটাতো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। যে কাঠামোটি আছে, সেটি নিজের টিকে থাকার তাগিদেই দেশের সামাজিক বা শিক্ষাগত উন্নয়নের প্রতি উদাসীন থাকবে। এই উদাসীনতায় ভরা বেঠিক গণতন্ত্রে বসবাস করে এমন মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের আশা করাটা কি ঠিক যা কিনা আমাদের একদিন সঠিক গণতন্ত্রে পৌছে দেবে? নাকি আমাদের সেই সঠিক গণতন্ত্রের রাস্তায় কিছুদিন অ-গণতন্ত্রে যাত্রাবিরতির প্রয়োজন আছে?

হাসিব এর ছবি

আমাদের সেই সঠিক গণতন্ত্রের রাস্তায় কিছুদিন অ-গণতন্ত্রে যাত্রাবিরতির প্রয়োজন আছে?

এইটা কিন্তু বিপদজনক চিন্তা । খারাপ গণতন্ত্র থাকলে সেইটারে ভালোর দিকে নিয়ে যাবার পথ খুঁজতে হবে । এবং সেইটা একমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্ভব ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুর্দান্তের আলোচনার উত্তরেঃ

১. নীতিনির্ধারণ বলুন, কার্যসম্পাদন বলুন আর পরিকল্পনাই বলুন সব ক্ষেত্রে শুধু top-down বা bottom-up পদ্ধতি যথেষ্ঠ নয়। দরকার উভয় পদ্ধতির সমন্বয়। স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা না থাকলে যে কোন পদ্ধতিই দুর্নীতি বা অদক্ষতায় নিমজ্জিত হবে। বড় আকারের দেশে বা বেশি মানুষের দেশে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। তাই এমন একটা ব্যবস্থা দরকার যেখানে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী কিন্তু কেন্দ্রের নজরদারীও কম নয়, উভয় দিকেই স্বচ্ছতা আছে পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েতো বটেই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও আছে। আমলাতন্ত্র সেখানে জনগণের স্পর্শের বাইরে নয়, তাদেরকেও যথাযথভাবে জাবাবদিহি করতে হয় এবং কোন পর্যায়ে জনগণের মুখোমুখি হতে হয়। স্থানীয় পর্যায় থেকে উন্নয়নের পরামর্শ আসতে হবে তবে সেখানে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দরকার আছে। নয়তো আশেপাশের অন্য অঞ্চল বা জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে তার সমন্বয় থাকবেনা।

২. পরিস্থিতি যা-ই হোকনা কেন, কিছু মানুষের মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নতিটা কিন্তু ঠিকই হয়। সেটা কোনভাবে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব না। সেই মানুষগুলো যখন রাজনীতিতে অংশ নেবেন, নেতৃত্ব দেবেন বা ক্ষমতার দিকে যেতে থাকবেন বৃহত্তর পর্যায়ে মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির যাত্রাটাও শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা ও সঠিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের মত জরুরী ব্যাপারগুলো ঘটবে। বিপুল সংখ্যায় জনগণের সচেতনতা ও সঠিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রকে কাঙ্খিত গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাবে।

৩. নেতৃত্বের এই জরুরী ভুমিকায় এক বা একাধিক জন উদার একনায়কের কি দরকার আছে? এই প্রশ্নের উত্তর পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে আছে। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তুরস্কের উদাহরণ টানছি।

এই তুরস্ক আধুনিক তুরস্ক - যার যাত্রা শুরু ২৯শে অক্টোবর ১৯২৩ সালে। তুরস্কের যাত্রার শুরুতে ঔপনিবেশিকতা ও খিলাফতের বিরূদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রিপাবলিকান পিপলস্‌ পার্টির (Cumhuriyet Halk Partisi) (সাবেক পিপলস্‌ পার্টি) নেতা জালালুদ্দীন আরীফ বে জনগণের অংশগ্রহনে গণতন্ত্রের পথে চলার উপযুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। তাঁর কথা শুনে তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক (মোস্তফা কামাল পাশা) সরাসরিই বলেছিলেন, “তোমার কথা বড্ড রিপাবলিকানদের মত শোনায়”। নিজের পার্টির নামে রিপাবলিকান শব্দটা থাকলেও কামাল আতাতুর্ক প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন। তার প্রমাণ আমরা পাই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ “সংসদ দ্বারা সরাসরি পরিচালিত সরকার ব্যবস্থা”কে এক বছরের মাথায় হঠিয়ে জরুরী অবস্থা জারী করা ও তারও একবছরের মধ্যে একদলীয় শাসন কায়েম করা (বস্তুতঃ একনায়ক কামাল আতাতুর্কের শাসন কায়েম করা)। এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহনকালে কামাল বলেছিলেন, “এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সাময়িক, এবং ভবিষ্যতে কোন প্রকার একনায়কোচিত বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আগমন রোধ করার জন্য”। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এরপর তুরস্ককে একনায়ক ও সামরিক স্বৈরাচারদের হাতে শাসিত হতে হয়েছে সাত দশকেরও বেশি সময়। আজো তুরস্কে সামরিক নেতাদের ইঙ্গিতে সরকার টলে ওঠে। আজো তুরস্ক ইউরোপের দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোর একটি। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য যথেষ্ঠ থাকলেও তুরস্কে কাঙ্খিত মাত্রার উন্নয়ন হয়নি। কুর্দী বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার প্রতি তো বটেই, মূল তুর্কী জনগোষ্ঠীর ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সরকারের আচরণ বিমাতাসূলভ - কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিংস্র, অমানবিক। মানবিক উন্নয়নে বা বৌদ্ধিক উন্নয়নে এক কালে দুনিয়ার অন্যতম বড় সাম্রাজ্য ও সভ্যতা তুরস্ক আজ অনেক পিছিয়ে।

আমাদের দেশে যখন সামরিক শাসন বা অস্বাভাবিক শাসন আসে তখনও আমরা এমন সাময়িক ব্যবস্থা, দুর্নীতির বিরূদ্ধে জিহাদ ইত্যাদি শুনতে পাই। নিঃসন্দেহে এ’ধরণের অগণতন্ত্রে যাত্রাবিরতি রাষ্ট্রকে কেবল পিছন দিকেই টানবে।




তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

আমি মনে করি গণতন্ত্রের যোগ্যতাই আমাদের নেই, গণতন্ত্র একটা বোঝা যেটা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর আর কোন বিকল্পও আর বাকি নেই, সুযোগ ছিল স্বাধীনতার পরপরেই কিন্তু আমরা তার সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্রের পাচন খেয়েই আমাদের মুখ চুন করে বাঁচতে হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে এখনো প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি বলেই কি এই উপসংহারে আসা যায় যে, "গণতন্ত্রের যোগ্যতাই আমাদের নেই"? অবশ্যই না। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ, ১৯৮২ সালের বাংলাদেশ আর ১৯৯০ সালের বাংলাদেশ কি এক? ২০১০ সালের বাংলাদেশও কি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে? অবশ্যই না। আমরাও আগাচ্ছি, তবে গতিটা প্রয়োজনের তুওলনায় অনেক কম।

২. গণতন্ত্র আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ করে ঔপনিবেশিক, অভিজাততান্ত্রিক, আধা-সামন্ততান্ত্রিক সামরিক জান্তাদেরকে উচ্ছেদ করে আমরা গণতন্ত্রের সূচনা করেছিলাম। ১৯৭১ সালে সিদ্ধান্ত আমাদের ছিল, কারো নীলনক্‌শার অংশ হিসাবে তা হয়নি।

৩. বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। অন্ততঃ এখন পর্যন্ত। বলতে পারেন,

০০ জনগণ অশিক্ষিত, বড্ড বেশি গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসে - তা দোষটা কার? আমার, আমাদেরইতো যারা নিজেদের শিক্ষিত, সচেতন বলে দাবি করি।

০০ নেতারা চোর-অযোগ্য, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। বলি, আপনাকে আমাকে রাজনীতি করতে কে নিষেধ করেছিল? নিজে রাজনীতিতে অংশ না নিলে অধমদের দিয়ে শাসিত হবার প্লেটোর সেই ভবিষ্যতবানী কি আমরা ভুলে গেছি?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চলুক

মামুন হক এর ছবি

পাণ্ডবদা, অনেক অপ্রিয় সত্য কথা আছে আমাদের নিজেদের নিয়ে, নিজেদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে। বলতে ইচ্ছে করছেনা। আসলে সুশীল ভাষায় ওগুলো বলার মতো যোগ্যতাও এখনও হয়ে ওঠেনি।

আর আমার সক্রিয় রাজনীতি বিষয়ক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে জানাব একদিন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় মামুন, সত্য তা যদি অপ্রিয়ও হয় তা যতদূর সম্ভব বলা উচিত। আপনার অভিজ্ঞতা অনেক তাই আপনার চেয়ে অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে বা আপনার চেয়ে যারা বয়সে ছোট তাদের এ’সব কথা জানানো আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেহেতু লেখালেখি করার চেষ্টা করেন তাই বলা যায়, এই দায়িত্ব কেউ আপনাকে গছিয়ে দেয়নি - আপনি নিজ আগ্রহেই তা নিয়েছেন। লেখকের সামাজিক দায়টাকে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? ভাষা নিয়ে ভাববেননা। আমরা জানি আপনার ভাষা শুধু বোধগম্যই না সুখপাঠ্যও বটে।

আপনার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের কথা আমাকে জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করায় কৃতজ্ঞতা। আমি অপেক্ষায় থাকলাম।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

শুভাশীষ, প্রশ্ন করেছিলেন; উত্তরটা পেয়েছেন আশা করি। উত্তর কে দিল সেটা বড় কথা নয়। এরকম গুছিয়ে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না।

চমৎকার আলোচনা পান্ডবদা।

কিছু গুরত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে এনেছেন। মিডিয়ার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। একসময় সেই ধরণের ‘উন্নয়ন’ সম্ভব হয়েছে মিডিয়া ছিল না বলে। এখন খোদ মিডিয়াকেই ব্যবহার করা যায় সেই ‘উন্নয়ন’ হাতিয়ার হিসাবে। এই প্রেক্ষিতে আমার মনে হয় ব্লগের ভূমিকা হয়ত ভবিষ্যতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মানুষজন ব্লগের উপর বিশ্বাস স্থাপণ করবে।

উন্নয়ন কীভাবে হওয়া উচিত সেই প্রশ্নটারও উত্তরও কিন্তু চমৎকার দিয়েছেন – অন্তত পক্ষে তাত্ত্বিকভাবে। (অমর্ত্য সেন সাহেব গনতন্ত্রে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে তাত্ত্বিক ভাবে যা বলেছিলেন, তা হয়ত মিডিয়ার উপর কর্পোরেটের আগ্রাসনে পুরোটা হচ্ছে না, তারপরও গনতন্ত্র মিডিয়ার ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নাই)।

এ বিষয়ে কিছুটা সংশ্লিষ্ট, কিন্তু বর্ণবাদী আরেকটা চিন্তা আমার আছে। এই ‘ট্রেড-অফ উন্নয়ন’ যেসব দেশে অনেক আগে হয়েছে, তারা কিন্তু ধীরে ধীরে মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে। তাই যখন পূর্ব দিক থেকে কোন এফডিআই (foreign direct investment) আসার কথা শুনি, আমি তেমন খুশি হই না, যতটা না খুশি হই যদি ইউরোপ থেকে আসে। শুধু টাকা আসে না তো, টাকার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষও আসে। বিতর্কিত মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশে যে ব্যবস্থাপক শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে, তার ‘মানবিক মান’ আমার পূর্বের দেশ গুলি থেকে অনেক ভাল (এমনকি জাপান থেকেও – কোরিয়া, তাইওয়ান, চীনকে গননাতেই ধরছি না)।(ছাত্রাবস্থায় চিটাগাং ইপিজেডে নিজে দেখেছি)

এই ‘ট্রেড-অফ উণ্নয়নের’ ‘অন্যদিক’ যারা দেখাতে চায় – অরুন্ধতী রায় কিংবা নাওমি ক্লেইন তাদের ব্যাপারে ‘রাষ্ট্র বা সুবিধাভোগী গোষ্ঠীটির’ মতামত কী? ইন্টারেস্টিং হল আমি নাওমি ক্লেইনের দ্য শক ডক্ট্রিন বইটা জোগাড় করতে ব্যার্থ হয়ে এক ‘হার্ড-কোর করপোরেট ম্যান’ কে দিয়ে আনিয়েছিলাম। পরে একদিন নাওমি ক্লেইনের ব্যাপারে জানতে চাওয়ায় কয়েকটা মন্তব্য ছিল – সি ইজ কোয়াইট অ্যা ক্যারেক্টার, গুড ফান, অথবা চোখ ছোট করে, সি ইজ কাইন্ডা কিউট। একই ব্যাপার দেখেছি আরও কয়েকজনের মধ্যে।

দুর্দান্ত প্রশ্ন করেছে... নাকি আমাদের সেই সঠিক গণতন্ত্রের রাস্তায় কিছুদিন অ-গণতন্ত্রে যাত্রাবিরতির প্রয়োজন আছে? । ৯১ এর আগে তো আমারা বিশাল লম্বা ‘যাত্রা বিরতিতে’ ছিলাম। কিংবা ২০০৭-০৮ তে। পাকিস্থান কিংবা বাংলাদেশ মডেলের ‘যাত্রা-বিরতি’ তো আমাদের কিছুই দেয় না। কিংবা কী চাই আমরাই হয়ত জানিনা (২০০৭-০৮ পর আমার উপলব্ধি)।

সময় এবং অলসতার কারণে একটা কাজ করতে পারছি না – এক দশকের কিংবা তারও বেশি সময়ের বাজেটগুলির তুলনা। আমার বিশ্বাস আমাদের বিদেশ-নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমে আসা এবং মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া বাজেটে কিছুটা হলেও রিফ্লেক্ট হয়েছে। শুধু দেশের সঠিক ব্র্যান্ডিংটা হচ্ছে না।

শেষমেষ করপোরেটের পক্ষে একটা কথা বলে যাই। যেহেতু এনার্জি সেক্টারে বেশ কিছুটা সময় ছিলাম। করপোরেট কিন্তু তথ্য উপাত্ত দিয়ে অদূর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ভয়াবহ পাওয়ার ক্রাইসিসের কথা অনেকদিন থেকে বলে এসেছে, চাইলে একটা প্ল্যানও দিতে পারত। কিন্তু সরকার ... বাজে একটা কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে। থাক, গিলে ফেললাম।

পান্ডবদাকে ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. ব্লগের শক্তির উপর আমার আস্থা আছে। তবে ব্লগকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ব্লগের প্রকৃত শক্তি দেখার সৌভাগ্য আমাদের প্রজন্মের হবে কিনা জানিনা।

২. ট্রেড-অফ উন্নয়নের দেশে মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের যে উদাহরণ টানলেন সেটার উত্তর দুর্দান্তকে দেয়া ২ নম্বর পয়েন্টে আছে। সেটার পুনরাবৃত্তি করছিনা।

৩. মেধা পাটেকর বা অরুন্ধতী রায়দের বিরূদ্ধে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বা নিবর্তনমূলক রাষ্ট্র আপাত উন্নাসিকতার ভাব দেখায়। ভিতরে ভিতরে তাদের ঠিকই ভয় পায় এবং তাদেরকে সমূলে বিনাশের সুযোগ খোঁজে।

৪. বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট সংক্রান্ত আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। এখন বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা আগের মত নেই। কিন্তু আপনার জানানো (আগে) জাপানের মত অভ্যন্তরীন ঋণ নির্ভরতা আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। তবু বিদেশের ব্যাপারে আমাদের অব্যাহত নতজানুতা আমাদের অপচিত মেরুদণ্ডের জন্য।

৫. কর্পোরেটদের উপস্থিতি একটা অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। এই পর্যায়ে, তাদের সাথে দড়ি টানাটানি করে যদি কিছু সুবিধা আদায় করা যায় সেটা লাভ। তবে এই ব্যাপারে ইরানের ডঃ মোসাদ্দেক সরকারের নীতি (১৯৫১-১৯৫৩) আমার কাছে অনেক কার্যকর বলে মনে হয়। ডঃ মোসাদ্দেকের পরিণতিটাও এই সময় খেয়াল রাখতে হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি
দুর্দান্ত এর ছবি

আমার বিশ্বাস আমাদের বিদেশ-নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমে আসা এবং মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া বাজেটে কিছুটা হলেও রিফ্লেক্ট হয়েছে। শুধু দেশের সঠিক ব্র্যান্ডিংটা হচ্ছে না।

শতভাগ একমত। স্বাধীনতার পরে যেখানে আমাদের দেশ প্রায় ৫০-৫০% অনুদান-ঋন অনুপাতে ছিল, সেখানে বর্তমানে তা গিয়ে ২০-৮০% অনুদান-ঋন অনুপাতে চলে গেছে। যদি খেয়াল করে দেখেন, তাহলে জাতীয় উতপাদনের প্রেক্ষিতে সুদব্যায় কয়েকগুন বেড়ে গেছে। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ বা আসিয়ান দেশগুলো যখন আমাদের চাইতে খারাপ অনুদান-ঋন অনুপাতে ছিল, ইউরোপ-আমেরিকা-জাপান সেইসব দেশকে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক বিনীয়োগ দিয়ে লাল করে ফেলেছে, কোথাও কোথাও তো রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাত থেকে টাকা তুলে আলাদা ফান্ড গঠন করেও বিনীয়োগ হয়েছে। অথচ আমাদের এই পরিবর্তন তাদের চোখে পড়েনি।

দেবপ্রীয় ভট্টাচার্যের একটা প্রেজেন্টেশান মনে পড়ছে, খুজে পেলে জুড়ে দেব।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব - 'উন্নয়ন' সম্পর্কে আমার প্রিয় একটি উক্তি শুনুন - “(D)evelopment is much more than just a socio-economic endeavour; it is a perception which models reality, a myth which comforts societies, and a fantasy which unleashes passions.” (Sachs, 1992; p 1) হাসি

বাস্তবতাকে ইচ্ছেমতো রূপ দিতে হলে মিডিয়ার মতো দারুণ হাতিয়ার ছাড়া কি চলে নাকি! সেতু, হাইরাইজ মল অথবা আধুনিক যন্ত্র অধ্যুষিত হাসপাতালের ছবি দেখে আমরা যে উন্নয়নের মাপকাঠিতে অন্ততঃ একধাপ এগুলাম, এই মানসিক আরাম তো পেতে পারি? পেতে চাইও তো। আর এগুলোই যে উন্নয়নের বড় নির্দেশক, তা আর কে না জানে!

কিন্তু, মুশকিলটা হচ্ছে তাহলে বিকল্প পথ/মত/কনসেপ্ট কী হবে? এখন পর্যন্ত উন্নয়নের পরিবর্তে অনুসরণীয়, বা নিদেনপক্ষে পছন্দনীয় কিছু পাওয়া যায় নি (তাই তো?)। পোস্টডেভেলাপমেন্ট বা উত্তর-উন্নয়ন নামের যে ধারা উন্নয়নের প্রচলিত ধারণাটাকেই চ্যালেঞ্জ করে, সেটাও কোন পথনির্দেশিকা দিতে পারেনি উন্নয়নের মধ্যে অন্তর্নিহিত অসংখ্য সমস্যাকে চিহ্নিত করলেও - যেমনটা ওপরে আপনি উল্লেখ করেছেন। কাজে কাজেই, ঘুরে ফিরে নীতি নির্ধারকদের আবারও উন্নয়ন নামক মডেলটির কাছেই ফেরত আসা হয়। ঠিক যেমন, গণতন্ত্র নামক আমব্রেলা টার্মটার দিকেই আশা টাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়, এ পর্যন্ত সেটার ইতিহাস ক্ষেত্র বিশেষে/দেশ ভেদে যে ধরনই ধারণ করে থাকুক না কেন।

দুর্দান্ত আর নৈষাদের মন্তব্য এবং আপনার প্রতিমন্তব্য পড়ে একটা প্রশ্ন করার ইচ্ছে হচ্ছে - উন্নয়ন বলুন, পূঁজিবাদ বলুন, সাম্যবাদ বলুন বা যাই বলুন, যে কোন একটা সিস্টেম (একটু জেনেরিক অর্থে ব্যবহার করলাম কথাটা) চলতে থাকলে তার যে একটা স্ট্যাটাস কো তৈরী হয়, সেটা ভেঙ্গে/বদলে অন্যরকম করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার মত কী? কষ্টসাধ্য হওয়া ছাড়াও, কতটা সময় সেই বদলের চেষ্টাতে দেয়াটা সম্ভব বা যৌক্তিক? মানে, আমি বলতে চাচ্ছি - আমি, আপনি এখন যদি মানসিক এবং বৌদ্ধিক উন্নয়নকে মূল লক্ষ্য ধরে, সেই উদ্দেশেই রাজনীতিতে যোগ দেই - বর্তমান দূর্নীতি বা দলীয় পৃষ্ঠপোষণ ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে কতদূর কী করতে পারবো? আমি আপনার লেখার মূল আহ্বানের সাথে একমত, যে সবসময় শুধু হতাশ হয়ে বসে থাকলে কখনই কিছু হবে না - পরিবর্তন আমাদের মধ্য থেকেই আসবে, যুগে যুগে সমাজ থেকেই তা এসেছে - কিন্তু, তারপরও আমার খুব জানার ইচ্ছে হচ্ছে, আপনার আরও একটু কংক্রীট কোন আইডিয়া আছে নাকি।

আপনি কবে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন জানাবেন। আপনার কথা ছিলো আমি দেশে গেলে আমাকে পুরোনো ঢাকার 'চক্ষু চড়কগাছ' জাতীয় খাওয়া খাওয়াবেন। আপনি যদি সত্যি সত্যিই 'পলিটিক্স'এ নামেন, তাইলে আর ...... মানে ...... আমাকে যে গণতন্ত্রের জন্য এতো বড় sacrifice কর্ত্তে হবে ...... মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ওলফগ্যাঙ স্যাকসের যে সংজ্ঞা দিয়ে আপনি শুরু করেছেন তাতে উন্নয়ন বলতে কী বুঝলাম? বুঝলাম যে, “উন্নয়ন একটি নিকিশাপূর্ণ ভ্রান্ত ধারমা”। এই ভ্রান্ত ধারমা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন - চোখে লাগে এমন ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কিছু মানুষের জন্য বিলাসী জীবন, কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নামে কিছু স্বেচ্ছাচারিতা, যা নয় মানুষকে অমন ভাবতে দেবার অবকাশ। এই জিনিষগুলো উন্নয়নের নির্দেশক কিনা নিশ্চিত নই। তবে সার্বিক উন্নয়নের (মানবিক ও বৌদ্ধিকসহ) বিচারে এগুলোর কিছু স্থান আছে বৈকি - তবে ঠিক এ’ভাবে নয়। উন্নয়ন ব্যাপারটা আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতার মত যেখানে একজন আরেকজনের কাছ থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকে মাত্র। তাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যদি শেষ কথা না থাকে তাহলে উত্তর-উন্নয়ন ব্যাপারটি নিছক তাত্ত্বিক একটি ব্যাপারে পরিণত হয়।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে একটি জাতি বা রাষ্ট্র বিশ্বের অন্য সকল জাতি বা রাষ্ট্রর চেয়ে এগিয়ে থাকলে, তাদের জীবনযাত্রার মান, মাথাপিছু আয়, শিক্ষার হার, গড় আয়ু ইত্যাদি পরিমাপযোগ্য সূচকে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকলে তাদের উন্নয়ন হয়েছে বলে ধরে নিতে পারি। তবে এই উন্নয়ন মূলতঃ বস্তুগত উন্নয়ন। এই উন্নয়ন ঘটানোর জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষেত্রে যে বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে তা কিন্তু ভোগ করতে হচ্ছে তাদের সাথে অন্য অনেক জাতি-রাষ্ট্রকে। এই বিপর্যয় রোধের দায়ভার তাদের। কিন্তু তারা যদি তা না করে শুধু নিজের ঘরটাকে (নিজেদের টেরিটোরি অর্থে) সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বৌদ্ধিক উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করা যায়না। একইভাবে বিশ্বের অন্য সকল জাতি বা রাষ্ট্রের দুরবস্থার ব্যাপারে তারা নির্বিকার-নিষ্ক্রিয় থাকলে তাদের মানবিক উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করা যায়না।

এভাবে উন্নয়ন কনসেপ্টটি একটি বিশেষ টেরিটোরিতে আবদ্ধ করে রাখার মত বিষয় আর থাকেনা। তাছাড়া, জীবনযাত্রার মান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কারো উন্নয়নকে illusionary হিসাবে চিহ্নিত করা অন্যদেরকে অন্ততঃ ঐ পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার মত ব্যাপার। ধর্মগুরুরা এভাবে বঞ্চিত জনগণকে ইহকালের দারিদ্রের ব্যাপারে নির্বিকার থেকে পরকালের উন্নতি করার পরামর্শ দেন। আমরা জানি, ধর্মগুরুদের দিন ফুরিয়েছে। তাই অন্য কোন মোড়কে একই ধরণের তত্ত্ব, প্রতিক্রিয়াশীল বলেই গন্য হবে।

আমরা জানি, পৃথিবীতে কোন ব্যবস্থাই পরম নয়। জীবন গতিশীল, মানবসভ্যতা ক্রমবিবর্তনশীল বলে বিদ্যমান ব্যবস্থাটিকেও গতিশীল হতে হয়। কোন কারণে ব্যবস্থাটি কাঙ্খিত গতিটি ধরে রাখতে না পারলে, অথবা ইতিহাসের চাকাটিকে পিছনের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলে ঐ ব্যবস্থাটির মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। ব্যিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটি নির্দেশ করে তা সংশোধনের উপায় বের না করলে উন্নয়নের চাকাটিও থেমে যাবে। তাই এর জন্য evolutionary হোক, revolutionary হোক পরিবর্তন অনিবার্য। এতে আমরা চাই বা না চাই আগের স্ট্যাটাস-কো’টি আর বজায় থাকার উপায় থাকেনা। আমাদের জীবন যেহেতু সময়ে সীমিত, তাই দীর্ঘ সময় ধরে চলা evolutionary পরিবর্তনের আশায় বসে থাকার মানে হয়না। তবে এটা এও নিশ্চিত করেনা যে আমার জীবদ্দশায় বা আমি কর্মক্ষম-সচল থাকা অবস্থায় তার ফলভোগ করতে পারবো। মানবিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়ন আমাদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে,ফল লাভের আশা না করে পরিবর্তনের চেষ্টা করার প্রচেষ্টাটা অব্যাহত রাখা জরুরী।

বিদ্যমান যেকোন দলে যোগ দিলে কোন না কোন সময় আপনি দুর্নীতি, পৃষ্ঠপোষণ বা আরো খারাপ কিছুর অস্তিত্ব টের পাবেন। এর থেকে বাঁচার দুটো উপায় আছে। এক, বিদ্যমান দলের ব্যবস্থায় পরিবর্তণের চেষ্টা করা। দুই, সমচিন্তার মানুষদের নিয়ে নতুন দল গঠন করা। এক নাম্বার পদ্ধতিটি চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এর মানে এই না যে আমি পারিনি বলে অন্য কেউ তা পারবেননা। আমার সীমাবদ্ধতাগুলো অন্যরা কাটিয়ে উঠতেই পারেন। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি এখনো চেষ্টা করিনি। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় টেরিটোরিটাকে সীমাবদ্ধ না করে বরং আরো বিস্তৃত করে অধিক সংখ্যক নানা ব্যাকগ্রাউন্ড আর পরিচয়ের মানুষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় পদ্ধতিটি সফলতার মুখ দেখতে পারে। অনেকটা পোর্টফোলিওর ডাইভার্সিটি বাড়িয়ে সিস্টেমেটিক রিস্ক কমানোর মত। এ’সব নিয়ে চিন্তাভাবনা কংক্রিট কিছু দাঁড়ায়নি। আসলে এ’সব নিয়ে কথা বলার মানুষের অভাব বড্ড প্রকট। তাই এখনো কিছু দাঁড়াচ্ছেনা।

অফটপিকঃ পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তার নোংরা রেস্তোরাঁর খাবারগুলো কোনভাবেই “চক্ষু চড়কগাছ” জাতীয় নয়। এ’গুলোর কোন কোনটাকে এথনিক ফুড বলা যেতে পারে কেবল। সেই খাবার, সেই রেস্তোরাঁ, সেই রাস্তা আর সেই পরিবেশে পৌঁছানো আর তা মেনে নেয়ার জন্য মনকে প্রস্তুত থাকতে হয়। আপনার মন যদি প্রস্তুত থাকে, আর আমি যদি সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে-বর্তে থাকি তাহলে হয়তো কোনদিন অমন একটা ট্যুরে যাওয়ার সুযোগ হবে। এর জন্য অন্য কোন sacrifice করার দরকার নেই।




তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

স্যাকস, এবং স্যাকসের মতো আরও যারা আছেন (আর্তূরো এস্কোবার বিশেষ করে) তারা উন্নয়নকে 'ভ্রান্ত ধারমা' মনে করেন না, বরং একটা 'তৈরী করা' ধারণা মনে করেন, যে ধারণা আসলে আপনি যে টেরিটোরিতে আটকে না থাকার কথা বলছেন - উন্নয়নের সংজ্ঞা, রূপ, লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে করণীয়, এ সব কিছুকেই একটা কনসেপচুয়াল টেরিটোরি বা পূর্ব-নির্ধারিত রূপরেখার মধ্যে আটকে ফেলে।

উন্নয়নকে illusionary হিসেবে চিহ্নিত করাটাকে আপনি ধর্মব্যবসায়ীদের মতনই আরেকটি প্রতিক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া বলে গণ্য করছেন। কিন্তু, পোস্টটা কি শুরুই হয় নি ঐ তথাকথিত উন্নয়নের অভীষ্ট মাত্রায় পৌঁছনোর পথে বলি কারা হচ্ছে এবং কীভাবে হচ্ছে সে ব্যাপারটাকে তুলে ধরে? উন্নয়নকে illusionary বলা হচ্ছে না, আমরা উন্নয়ন বলতে যে ব্যাপারগুলো ভাবতে শিখি, যেগুলো অর্জন করতে হলে অনেকসময় অন্যদিকে ক্ষতির মাত্রা অলক্ষ্যে অগ্রহণযোগ্য হারে বাড়তে থাকে - সেগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

যে সব কারণে আপনি বস্তুগত উন্নয়ন হলেও, অনেক দেশের বৌদ্ধিক বা মানবিক উন্নয়ন হয় নি বলে মনে করবেন বলছেন, সে কারণগুলো বা উন্নয়নকে বিচার করবার এই দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু সর্বজনীন নয়। এবং ঠিক এখানেই উত্তর-উন্নয়নের অবদান অনেক বলে আমি মনে করি। Alternate perspective সবসময় হয়তো খুব একটা এপ্লিকেবল হয় না, কিন্তু এস্টাব্লিশড কোন বিশ্বাস বা চিন্তার টেরিটোরিয়ালিজম থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।

আমি বোধহয় বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, পুরনো ঢাকার খাওয়া দাওয়ার কথাটা একেবারেই ফাজলামো করে বলা। 'চক্ষু চড়কগাছ' কথাটি খাবারের সুস্বাদ বোঝাতে ব্যবহ্নত - এবং সেক্ষেত্রে রেঁস্তোরা, রাস্তা বা পরিবেশ কোনটাই আমার জন্য বিন্দুমাত্র বাধার সৃষ্টি করবে না। ততটুকু 'আক্কেলের' উন্নয়ন আমার হয়েছে বলেই মনে করি হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

গণতন্ত্রে যে-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আস্তে আস্তে ক্ষমতার সুখ তাকে পেয়ে বসে। তখনই শুরু হয় তার নানারকম অন্যায়। একসময় মানুষ সেটা উপলব্ধি করে, বাড়তে থাকে প্রতিবাদ, একসময় তাকে সরিয়ে সততার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরেকজন ক্ষমতায় উঠে আসে। তারপর একই চক্রের পুনরাবৃত্তি।

অফটপিকঃ একজনের প্রশ্ন দেখলাম - যদি পশ্চিমি দুনিয়ায় tantra মানে sex হয়, তাহলে গণতন্ত্র মানে কি?

কৌস্তুভ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে পদ্ধতিতে নেতা ক্ষমতার দায়িত্ব-কর্তব্যর বদলে ক্ষমতার সুখ পেতে থাকেন, সে পদ্ধতি আর যাই হোক গণতন্ত্র নয়। সুতরাং আপনার বলা vicious cycle-এর জন্য গণতন্ত্রকে দায়ী করা যায়না।

অফটপিকঃ এমন প্রশ্ন কোথায় দেখলেন? প্রশ্নটা যেখানে দেখেছেন সেখানেই আলোচনা করলে ভালো হয়না?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

কথাটা মূলত সত্যিই বলেছেন। আমার মন্তব্যটা আপনার "আমরা জানি, রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে বা মানুষের মজ্জার মধ্যে কিভাবে যেন স্বৈরাচারী মনোবৃত্তিটা ঘাপটি মেরে থাকে।"-এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা। গণতন্ত্রের মধ্যে যেন এই vicious cycle-টাই ঢুকে পড়তে দেখি বারবার।

অফটপিকঃ মেনে নিলাম। কথাটার মধ্যে ছদ্ম-গণতন্ত্রের প্রতি একটা ব্যঙ্গ ছিল বলে আমার মনে হয়েছিল, তাই এখানে উল্লেখ করেছিলাম।

কৌস্তুভ

তানভীর এর ছবি

এখন তো উন্নয়নের জায়গায় ‘টেকসই উন্নয়ন’ (sustainable development) এসে গেছে যার মাপকাঠিতে তথাকথিত উন্নয়নের অনেক কিছুই পড়ে না।

যে কোন তন্ত্রই ঠিকভাবে চলতে গেলে একটা চেক এন্ড ব্যালান্স লাগে। ওই যে একটা কথা আছে না- Absolute power corrupts absolutely. বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে ম্যাণ্ডেট দিয়ে আমরা তো সরকারকে সেই এবসল্যুট পাওয়ারই তুলে দেই পাঁচ বছর পরপর। মাঝে পাবলিকের সাথে কোন দেখা নাই। আবার পাঁচ বছর পর সেই একই মুখ। বুশকে যদি গণতন্ত্রের নামে আট বছর পরও দেখা লাগত তাহলে ব্যাপারটা কীরকম হতো চিন্তা করেন। বাঁচিয়েছে সংবিধান। অথচ আমরা সেই যুগ যুগ ধরে রাজনীতির লাগাম ঘুরে ফিরে একই লোকজনের হাতে দেখে আসছি। আমাদের গণতন্ত্রে চেক এন্ড ব্যালান্স তো নেইই, সংবিধানও দুর্বল। যাদের এগুলো ঠিক করার কথা ক্ষমতার লোভে পড়ে তারাও এগুলো করেন না। আমজনতার ভোট মানেই শুধু গণতন্ত্র না, সেটা চলার মতো কার্যকর সিস্টেমও থাকা লাগবে। আর sacrifice-এর প্রয়োজনটাও আসলে এইখানে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উন্নয়ন শুধু টেকসই (sustainable)-ই নয়, লাগসই (appropriate)-ও হতে হয়। এতে চোখে পড়ার মত ঘটনা কম হয় কিনা নিশ্চিত নই, তবে সঠিক উন্নতিটা হয় বোধহয়।

আপনি যাকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স বলছেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তার নাম হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। যার ব্যাপারে আগেই বলেছি। এটি না থাকলে গণতন্ত্রকে কার্যকর বলা যায়না। সংবিধান যত কঠিন-কঠোর-শক্তিশালী হোকনা কেন তা বিপদ ঠেকাতে সমর্থ হবেনা যদিনা দেশে গণতান্ত্রিক আচরণের সংস্কৃতি তৈরি হয়। এ’গুলো একটা আরেকটার আগে বা পরে নয়। এ’গুলো একে অপরের পরিপূরক। একসাথে সবগুলো শুরু করতে হয়, সিস্টেমটাও এভাবেই তৈরি হয়। এই পর্যায়ে আসলেই sacrifice-টা প্রয়োজন হয়। তবে সেটা চাপানো নয়, স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে।

আপনার মন্তব্য পড়ে এ’টুকু আস্থা পেলাম যে আমার কথাগুলো কিছু মানুষকে হলেও বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ। বিশ্লেষণ খুব ভাল লেগেছে।

একটা প্রশ্ন আছে,

যুদ্ধের প্রথম বলি সত্য, উন্নয়নের প্রথম বলি কি ?

---------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উন্নয়নের প্রথম বলি কে বা কী তা নিশ্চিত নই। তবে উন্নয়নের একটা অবশ্যম্ভাবী বলি হচ্ছেন উদ্যোক্তা স্বয়ং।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।