বইটির নাম গণচীনের বদলে নয়া চীন নামে কেন হলো সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। বিপ্লবোত্তর চীনকে কোন এক কালে কেউ কেউ নয়া চীন বলতেন বটে কিন্তু ১৯৮৭ সালে এসে তাকে নয়া চীন বলার কোন যৌক্তিকতা নেই। বস্তুত গণচীন প্রতি দশকেই পালটে ঠিক বিপ্লবোত্তর নয়া চীন থেকে বহু দূরের পথ চলে এসেছে। আমরা যদি দশ বছর সময় পর পর দেখি তাহলে চীনকে এমনটা দেখতে পাইঃ
১৯৪৯: সদ্য গঠিত গণপ্রজাতন্ত্র, কুওমিনতাং-এর শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত।
১৯৫৯: জাতীয় উন্নয়ণ ও পুনর্গঠনের কাল।
১৯৬৯: সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল।
১৯৭৯: মাও জেতুং পরবর্তী তেঙ শিয়াওপিঙ-এর হাওয়া বদলানোর কাল।
১৯৮৯: তিয়ানআনমেন স্কয়ারে বিদ্রোহ ও ছাত্র আন্দোলনের কাল।
১৯৯৯: শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় পুঁজি, বিনিয়োগ ও ব্যক্তি উদ্যোগের উত্থান কাল।
২০০৯: শক্তিশালী পুঁজিপতিদের উত্থান কাল।
এই হিসেবে ১৯৮৭ সাল অবধি নয়া চীন কমপক্ষে চার বার নতুন রূপ পেয়েছে। সুতরাং সংকলনটির নাম গণচীনের গল্প সংকলন হলে বরং মানানসই হতো।
সংকলনের প্রথম খণ্ডের শুরুতে বিপ্লবোত্তর গণচীনের সাহিত্যের গতিধারা নিয়ে সেন নালানের ২৬ পৃষ্ঠাব্যাপী এক দীর্ঘ, শ্রমসাধ্য, সুলিখিত ভূমিকা আছে। সংকলনের দুই খণ্ড পড়ে আমার কাছে ঐ ভূমিকাটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ১৯৪২ সালের মে মাসে ইয়ানআনে অনুষ্ঠিত শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সম্মেলন ‘ইয়ানআন ফোরাম অন লিটারেচার এন্ড আর্ট’-এ দুটো বিষয়ের ওপর মূল নজর দেয়া হয়েছিল — (১) সকল শিল্প ও সাহিত্যকে শ্রমজীবি মানুষের জীবনকে উপজীব্য করে এবং তাদেরকেই ভোক্তা (audience) বিবেচনা করে রচিত হতে হবে। (২) শিল্প ও সাহিত্যকে রাজনীতি, বিশেষত সমাজতন্ত্রের অগ্রযাত্রার উদ্দেশ্য সাধনে (serve) রচিত হতে হবে। এই দুই পয়েন্ট জানার পর একজন সংবেদনশীল মানুষের এটা বোঝা আর বাকি থাকে না যে, ঐ সম্মেলন থেকে চীনা শিল্প ও সাহিত্যে সৃজনশীলতা, মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার ওপর পার্টির খবরদারী আর পার্টিজান রচনার কাল শুরু হয়েছিল। চেয়ারম্যান মাও জেতোং তাঁর ২রা মে ও ২৩শে মে’র দীর্ঘ বক্তৃতায় শিল্প ও সাহিত্যের বিষয়বস্তু, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ভোক্তা সম্পর্কে তাঁর এবং পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। সুতরাং চীন গণপ্রজাতন্ত্র হবার আরও ৭ বছর আগেই ভবিষ্যত রাষ্ট্রে শিল্প ও সাহিত্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। আগ্রহী পাঠকেরা চেয়ারম্যান মাও জেতোং-এর ঐ বক্তৃতা পড়ে দেখতে পারেন (ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই পাবেন)।
আলোচ্য গল্প সংকলনে সেন নালান খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “এই সব গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে চীনের বিপ্লবী সংগ্রামের চিত্র, আর পুরনো ধ্যান-ধারণা ও সামন্তবাদের অবশিষ্ট ও অবক্ষয়ী ভাবধারাকে বিদায় দিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করার আদর্শের যাত্রাপথে শ্রেণীসংগ্রামের এক জাজ্বল্য চিত্র”। সরকারী প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরকারের অনুসৃত নীতি অনুযায়ী গল্প বাছাই করা হবে এটা স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। তাই এই সংকলন সিরিজে বাছাই করা গল্পগুলো ১৯৮৫ সাল পরবর্তী চীন সরকারের মতামতকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধারার বাইরে অন্য ধারার অনেক রচনা ঐ ৩৭ বছরে অবশ্যই রচিত হয়েছে যাদের প্রতিনিধিরা এখানে ঠাঁই পায়নি। তাই এই সিরিজকে ১৯৪৯ থেকে১৯৮৫ সাল পর্যন্ত চীনা সাহিত্যের সার্থক প্রতিনিধিত্বশীল বলা যায় না।
এই সংকলনের পরবর্তী তিন দশকে চীন সরকারের নীতি ও অবস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ঠিক এই মুহূর্তের চীন সরকারের অবস্থান নিঃসন্দেহে ১৯৮৫ সালের অবস্থানের সাথেও তুলনীয় নয়। বিশেষত ১৯৮৯ সালের ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী কালে চীনা সরকার তার সার্বিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। গত কুড়ি বছরে ব্যক্তি উদ্যোগের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটায় সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্ন-পরিকল্পনা-ব্যক্তি দর্শনে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ছাপ রাষ্ট্রীয় নীতিতেও বেশ স্পষ্ট। এজন্য সাবেকী কালের গল্প নিয়ে গড়া এই সংকলনের বাংলা ভাষ্য আর বাজারে লভ্য নয় বা তার কোন নতুন সংস্করণের কথা আমরা জানতে পারিনি।
রাজনৈতিক বিবেচনায় বাছাই করা গল্পের এই সংকলনটির কাল বিভাগ আমার কাছে যথাযথ মনে হয়নি। এখানে দশকওয়ারী কাল বিভাগ না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় কাল ভাগ করা উচিত ছিল। তাতে বিভাগটা এমন হতে পারতোঃ
প্রথম খণ্ডঃ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সদ্য গঠিত গণচীনে কুওমিনতাং-এর শ্বেত সন্ত্রাসবিরোধী গৃহযুদ্ধ, কোরীয় উপদ্বীপে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যুদ্ধ ও জাতীয় নীতি নির্ধারণের কাল।
দ্বিতীয় খণ্ডঃ ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড (Great leap forward)-এর কাল ও তার পরবর্তী সময়।
তৃতীয় খণ্ডঃ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। সাংস্কৃতিক বিপ্লব, লিন পিয়াও ও চার কুচক্রীর কাল, মাও জেতুং-এর প্রয়াণ।
চতুর্থ খণ্ডঃ ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত। মাও পরবর্তী তেঙ শিয়াওপিঙ-এর উত্থান কাল।
ভাগটা এমন হলে চারটি কালের মধ্যকার নীতিগত ও গুণগত পার্থক্যটি স্পষ্ট হতে পারতো। তাতে সাহিত্যের গতিধারায় পরিবর্তনের সাথে সাথে জনমানসের পরিবর্তনটিও বোঝা যেতো। এটি না হওয়ায় এবং গল্প বাছাইয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় খণ্ডগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট কালকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারেনি। ফলে সাহিত্যের গতিধারা ও জনমানসের বিবর্তনটিও যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। যাই হোক, গল্পের আলোচনায় যাওয়া যাক।
প্রথম খণ্ডের গল্পঃ (রচনাকাল ১৯৪৯-১৯৫৯)
এই খণ্ডে মোট ৭টি গল্প আছে।
১. ওই পথ নয় – লি চুনঃ
এটি একটি বিশুদ্ধ পার্টিজান রচনা। বিপ্লবোত্তর চীনে সাবেক ভূমিদাস সোং লাওতিং-এর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তার সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাভাবনার পরিবর্তন না হওয়া এবং এই সংক্রান্ত জটিলতা সোং লাওতিং-এর পুত্র পার্টিকর্মী তোংশানের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা, পরিশেষে সোং লাওতিং-এর মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছে এই গল্প। মানুষের মনের ভেতরকার দ্বান্দ্বিকতা, স্বাধীন চিন্তার বিকাশ, ব্যবহারের পরিবর্তন, পালটে যাওয়া ব্যবস্থায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া — এর সব কিছু স্বাভাবিক উপায়ে এই গল্পে আনা যেতো। তাতে এটা সাহিত্য মান পেতে পারতো। কিন্তু পার্টির ভূমিকা ও শিক্ষাকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে এটি পার্টিজান রচনায় পর্যবসিত হয়েছে। এটি পার্টির প্রচারপুস্তিকায় প্রকাশ হবার মতো গল্প।
২. পার্টি সভ্যপদের চাঁদা – ওয়াং ইউয়ানচিয়ানঃ
কুওমিনতাং-এর শ্বেত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলা গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়কালের ঘটনা নিয়ে এই গল্প। গল্পের কাহিনী বিশেষত হুয়াং সিনের আত্মত্যাগের কাহিনী মোটেও অবাস্তব নয়। বিশেষত ঐ সময়কার জনমানুষের দুরবস্থার যে চিত্র এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেটি গল্পটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করেছে। মূল গল্পের টোন কেমন ছিল জানি না, তবে অনুবাদে এসে এখানে পার্টিজান রচনার টোন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে জনযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যে অসাধারণ আচরণ করে বিপ্লবকে সফল করে তোলে তার বাস্তবানুগ সুরটি মার খেয়ে গেছে।
৩. পাহাড়তলীর স্মৃতি – সুন লিঃ
সাম্রাজ্যবাদী জাপানের আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এক প্রতিরোধ যোদ্ধা আর এক গ্রামের মেয়ের গল্প এটা। কাহিনী, বর্ণনা, পরিপার্শ্ব, চরিত্র সবই বিশ্বাসযোগ্য। বিশেষত পরিপার্শ্বের বর্ণনা চমৎকার। তবে কোথাও কোথাও জোর করে পার্টিজান রচনার টোন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এটা একটা ব্যতিক্রমী প্রেমের আখ্যান হতে গিয়েও হতে পারেনি। এই গল্পের একটা কথোপকথন তুলে দিলামঃ
আমি মোজার গোড়ালিতে হাত দিয়ে পরখ করে বললাম, “না, আমাদের ওখানে তুলোর সুতো দিয়েই তৈরী হয়। জুতোর গোড়ালিও এত পুরু হয় না”।
“এভাবে করলে আরো মজবুত হয়। তিন বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। জাপানীদের তাড়াবার জন্য তা কি যথেষ্ট সময় নয়”?
“হওয়া তো উচিত”। আমি উত্তর দিলাম।
৪. নদীর পাড়ে ঊষার উদয় – চ্যুন ছিং:
১৯৪৭ সালের কুওমিনতাং বিরোধী গৃহযুদ্ধের সময়কার গল্প। এই গল্পটির কাহিনী চলচ্চিত্র হবার জন্য সর্বতোভাবে উপযুক্ত। এমনকি প্রেক্ষিত সামান্য পালটে দিয়ে অন্য দেশের বা অন্য ইতিহাসের পটভূমিতেও এই গল্প দাঁড়িয়ে যায়। অ্যাকশান মুভির মতো টান টান উত্তেজনার গল্প এটি। সিয়াও ছেন আর তার পরিবারের সদস্যদের আত্মত্যাগের যে গল্প এখানে বলা হয়েছে তা অতি নাটকীয়। এই অতি নাটকীয়তা আরোপ করা না হলে গল্পটি আরও বিশ্বাসযোগ্যতা পেত।
৫. প্রেম – লি ওয়েইলুনঃ
এই সংকলনের দুর্বল গল্পগুলোর একটা হচ্ছে এই গল্প। বিশুদ্ধ পার্টিজান রচনা। যে কাহিনী একটা মানবিক প্রেমের গল্প হতে পারতো তাতে পার্টির মহিমা আরোপ করতে গিয়ে মোটামুটি অলৌকিকত্ব পর্যন্ত আমদানী করতে হয়েছে, যেমন চৌ তিংশানের অন্ধ চোখ ভালো হয়ে যাওয়া, ইয়ে পিচেন কর্তৃক সুমেইকে বাঁচিয়ে তোলা। মানবিক আবেগের বিকাশ ও বহিঃপ্রকাশ মানুষের নৈতিক অবস্থানকে যে সব সময় দুর্বল করে দেয় এমনটা নয়। এই সত্যটি অনুধাবনে লেখকের ব্যর্থতা একটি স্বাভাবিক গল্পকে কৃত্রিম ও আড়ষ্ট বানিয়ে ফেলেছে। নীতি মানুষের কল্যানের জন্য রচিত, নীতির জন্য মানুষ নয় — এই সহজ কথাটি বুঝতে না পারলে গৃহীত নীতি অবিলম্বে তার উপযোগিতা হারিয়ে পরিত্যক্ত হয়।
৬. বিয়েবাড়ি – চৌ লিপোঃ
আঙ্গিকে একটা আধুনিক গল্পের অ্যাপ্রোচ বিদ্যমান থাকলেও শুধুমাত্র পার্টিজান মনোভাব বজায় রাখতে গিয়ে এই রচনাটা কোন গল্পই হয়ে উঠতে পারেনি। তবে ঐ আমলে মানুষের ব্যক্তি জীবনের কোন্ প্রান্তসীমা পর্যন্ত পার্টি নাক গলিয়েছিল এবং লোকাচারের কোন্ জায়গায় পর্যন্ত পার্টি পৌঁছাতে চেয়েছিল সেটা এখানে খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ঐ সময়ের সরকারী নীতি বোঝার জন্য এটি একটি আদর্শ রচনা।
৭. তাচি আর তার বাবা – কাও ইং:
এটিও বিশুদ্ধ পার্টিজান রচনা। সারা চীনব্যাপী কয়েক শতাব্দী ধরে চলা হানদের সাথে চীনের অন্য জাতিসত্ত্বাগুলোর পারস্পারিক দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস, সন্দেহের কথা এখানে বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যায়। সেটা নিয়ে বড় গল্প বা উপন্যাস হতে পারতো। কাহিনীর ক্যানভাসও অমন বড়ই ছিল। কিন্তু জীবনের সর্বব্যাপী পার্টির কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে গল্প আর বিকশিত হতে পারেনি। চরিত্রগুলোও যথাযথ বিকাশের অভাবে ঠিক বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। এখানে পার্টির চাপে সাহিত্য মারা গেছে।
দ্বিতীয় খণ্ডের গল্পঃ (রচনাকাল ১৯৬০-১৯৬৯)
এই খণ্ডে মোট ৭টি গল্প আছে।
১. অসমাপ্ত ঘাঘরা – ইয়াং সুঃ
এটি একটি দুর্বল পার্টিজান রচনা। কিন্তু তাতেও হান-ভিন্ন অন্য জাতিসত্ত্বার মানুষদের ভিন্ন চোখে দেখার বিষয়টি বার বার ‘চিংপো জাতি’ ‘চিংপো জাতি’ বলে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পার্টির নির্দেশনার প্রতি নামেং-এর অচলা আস্থা; তার মা মাপি, তার বিশ্বাস ও লোকাচারের প্রতি সূক্ষ্ম অবজ্ঞা; চেয়ারম্যান মাওয়ের প্রতি ঐশ্বরিক ভক্তি দেখাতে গিয়ে রচনাটি হাঁসফাঁস করেছে। একজন সদ্য যুবতীর মন-মানসিকতা,ভালো লাগা-মন্দ লাগা,আগ্রহ-স্বপ্নের ব্যাপারে লেখকের অজ্ঞতার দরুণ নামেং চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি।
২. গ্রামের মাটি – সিয়ে ফুঃ
এটি শহুরে মেয়ে অতসী,তার গ্রামবাসী মাসতুতো বোন আর মাসতুতো দাদা কাম প্রেমিকের গল্প। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গ্রামে আসা অতসীর মাসতুতো দাদার প্রেমে পড়া, পার্টির কাজে জড়িয়ে পড়া, কৃষিকাজ শিখতে গিয়ে বিপত্তি, শেষে আবার গ্রামে ফিরে আসা এই হচ্ছে গল্প। অতসীর এই জীবনচক্রটির মূল চালিকাশক্তি কি মাসতুতো দাদার প্রতি প্রেম নাকি পার্টির কর্মকাণ্ডের প্রতি ভক্তি সেটা খুব স্পষ্ট নয়। সম্ভবত গল্পকার প্রেমের টানে একজন নারীর শহর ও নিজের ক্যারিয়ার পরিবর্তনের ব্যাপারটি দেখাতে ঠিক স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না। এই জন্য গল্পের ফাঁকে ফাঁকে পার্টির মহিমা গুঁজে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। গল্পের নাম ‘গ্রামের মাটি’ হলেও গ্রাম বা গ্রামের জীবন সম্পর্কে অতসীর খুব যে আগ্রহ বা ভালোবাসা আছে সেটা প্রতিভাত হয়নি। গল্পের স্বচ্ছন্দ্য প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ঠেলেঠুলে নদীর তীরে নিয়ে গেলে এমনটাই ঘটবে।
৩. তৃণভূমির ফুল – মালছিনহুঃ
ক্রীতদাস বালক ডুকার জমিদারের অত্যাচার সহ্য করতে করতে কীভাবে একজন দূরপাল্লার দৌড়বিদ এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়নে পরিণত হন সেটা এই গল্পের পটভূমি। মূল গল্প জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ডুকার তার মাতৃভূমিতে ফিরে এসে স্থানীয় নাদাম উৎসবে শৌখিন দৌড়বিদদের সাথে এক প্রতিযোগিতায় কীভাবে যুক্ত হলেন এবং অংশগ্রহন করলেন তার বিস্তারিত, খুঁটিনাটি ও বিশ্বস্ত বর্ণনা। ডুকারের জীবনের গতিধারা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিপ্লবের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং তা স্বাভাবিক গতিতে এসেছে। অন্তর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমির জীবনের চিত্রও এখানে স্পষ্ট। এটা একটা সার্থক ছোট গল্প।
৪. বুনো ষাঁড়ের গাঁ – আই উঃ
বিপ্লবপূর্ব চীনের কেউ কেউ যে জীবিকার অন্বেষণে বার্মার কাছিন অঞ্চলে গিয়েছিলেন সেকথা আমাদের জানা ছিল না। খোদ লেখকের সেই অভিজ্ঞতা থাকায় গল্পের প্রটাগনিস্ট,আম্মা স্যু এবং স্যু কন্যা আসিউ’র জীবনের কাছিন পর্ব চমৎকারভাবে বর্ণনা করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই পর্বের মানবিক সম্পর্কগুলোও ঠিকভাবে বিকশিত হতে পেরেছে। আবার বিপ্লবোত্তর চীনে গল্পের প্রটাগনিস্ট,আম্মা স্যু’র দ্বিতীয় কন্যা আসিয়াং ওরফে কাকী চাও আর আসিউ’র কন্যা চাও শুইং ওরফে আমিং-এর কাহিনীও যথাযথ ক্লাইমেক্সসহ বর্ণিত হয়েছে। জনজীবনে বিপ্লবের প্রভাবসমূহের কথা অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ ধরে বর্ণিত হলেও সেটা আরোপিত লাগেনি। লেখক গল্পের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে ব্যাহত না করায় এটা সম্ভব হয়েছে। গল্পের একেবারে শেষ পর্যন্ত রহস্য ধরে রাখতে পারায় গল্পটি পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই কাহিনী একটা সার্থক উপন্যাস বা সার্থক চলচ্চিত্র হবার যোগ্যতা রাখে। বিশাল ক্যানভাসের একটি কাহিনীকে চেপেচুপে ছোট গল্প বানিয়ে লেখক কাহিনীটির প্রতি সুবিচার করেননি।
৫. অশ্রান্ত ঝরণা – লিউ চেনঃ
পার্টি নেত্রী কাম শিক্ষিকা লি ইয়ুনফং দিদি আর তার অবাধ্য ছাত্রীর গল্প এটি। বিশুদ্ধ পার্টিজান রচনা। এখানে কাহিনী নিজ গতিতে চলেনি,পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে যে কথাগুলো বলা দরকার তার প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করার জন্য কাহিনীকে চালানো হয়েছে। ছাত্রী চরিত্রটির গঠন ও বিস্তার আরোপিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়। লি ইয়ুনফং দিদির চরিত্রটিতেও আরোপিত বিষয়ের পরিমাণ অনেক।
৬. রোড টেস্ট – চাং থিয়েনমিনঃ
ভারী গাড়ির চালক সিয়াও লিয়াং জুনিয়র আর তার বাবা প্রশিক্ষক সিয়াও লিয়াং সিনিয়রের গল্প এটি। আদর্শবাদীতা ও কর্মনিষ্ঠার যে গল্প এখানে বলা হয়েছে সেটা বাস্তবে বিরল নয়। তাছাড়া সার্থক ছোট গল্পের অন্যান্য উপাদানও এখানে যথাযথ পরিমাণে আছে। বর্ণনায় পার্টিজান সুর থাকলেও সেটা খুব চোখে লাগেনি।
৭. চির প্রজ্জ্বলিত শিখা – লু চুকুওঃ
এটি অশিক্ষিত, প্রবীণ যোদ্ধা লাও ওয়াং-এর গল্প। লং মার্চের সময়কার কাহিনী। লং মার্চ ব্যাপারটি যে বিশদ, কষ্টকর, নীতিনিষ্ঠ, আদর্শবাদী ব্যাপার ছিল সেটি এই গল্পে কিছুটা ফুটে উঠেছে। দুর্গম, দুস্তর, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে লালফৌজকে যে সীমাহীন কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে সেটাও এখানে স্পষ্ট হয়েছে। খুঁটিনাটি বর্ণনাগুলো বিশ্বস্ত। কাহিনীর মূল উপজীব্য যেহেতু লং মার্চ তাই রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো বেশ স্পষ্টভাবেই এসেছে। কিন্তু সেগুলোকে আরোপিত বলে মনে হয়নি। লাও ওয়াং চরিত্রটির বিকাশ মাক্সিম গোর্কি বর্ণিত বেসারাবিয়ান উপকথার চরিত্র প্রজ্জ্বলিত হৃদপিণ্ডের দাঙ্কো’র মতো। তাই এই ধরনের গল্প পড়লে পাঠকের লাও ওয়াং-এর কথা মনে পড়বে।
চীনের বিপ্লবের কাহিনী এবং তার পরবর্তী জীবন নিয়ে বাকি দুনিয়ার পাঠকদের অনেকেরই আগ্রহ আছে। এই আগ্রহটা শুধু চীন সরকারের ভাষ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তার জন্য দরকার চীনা শিল্প-সাহিত্য অধ্যয়ণ। কিন্তু বাইরের দুনিয়ার একজন পাঠকের কাছে বস্তুনিষ্ঠ চীনা শিল্প-সাহিত্য কতোটা সুলভ? আমরা জানি সময়ে সময়ে চীনের সরকারী নীতি শিল্পী ও সাহিত্যিকদের ‘মগজে কারফিউ’ চালিয়েছে। খোদ সেন নালান জানাচ্ছেন, “১৯৬৬ সাল থেকে সংশোধনবাদী সাহিত্যর বিরোধিতার নামে সাহিত্যের মানদণ্ড হিসেবে রাজনীতিই হলো মুখ্য আর মাও জেতুং উত্থাপিত অন্যান্য মানদণ্ড হলো পরিত্যক্ত”। সেন নালান এখানে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত চলা সরকারী নীতির তীব্র সমালোচনা করছেন। আমরা জানতে পারছি এই সময়ে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিকের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়া হয়।
শুধু সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে নয়, শিল্প সাহিত্য চর্চ্চার এই অবাধ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারটি আরও আগেই শুরু হয়েছে। আমরা জানি, ১৯৫৬ সালেই ওয়াং মেং-কে তাঁর রচনার জন্য যথেষ্ট সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। এজন্য ১৯৬৩ সালে তাঁকে শিনজিয়াঙ-এর শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়েছে। লু ওয়েনফু-কেও তাঁর রচনার জন্য প্রথমে তিন বছর পরে আরও দশ বছর শ্রম শিবিরে কাটাতে হয়েছে। এই দুই জনই যে একমাত্র দণ্ডপ্রাপ্ত নন্ সে কথা সেন নালান আমাদেরকে জানান। সাহিত্য নিষিদ্ধকরণের ধারা ১৯৫৮ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত চলেছে সেটার কথা সেন নালান স্বীকার করেছেন। আমরা জানি, এই সময়কালের বাইরের সময়েও নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে। মা জিয়ান, বেই লিং, ইয়াং লিয়ানের মতো নির্বাসিত লেখকদের কাছ থেকে তার কিছু শুনতে পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালে চাও শুলিকে অজ্ঞাত উপায়ে, ১৯৬৬ সালে লাউ শ’কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই রকম খুন, জেল-জুলুম, হুমকি-ভীতির ইতিহাস আরও ঘটেছে। বিশেষত ১৯৮৯ সালের ছাত্র আন্দোলনের পর ভিন্নমতাবলম্বী অনেক শিল্পী-সাহিত্যিককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
খোদ মাও বলেছিলেন, “মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে? সেগুলো কি আকাশ থেকে পড়ে? না। সেগুলো কি নিজের মনের মধ্যে সহজাত? না। মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে। সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণী সংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা — এই তিনটা অনুশীলন থেকেই আসে”। নূন্যতম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ জানেন এই তিনটি অনুশীলনের কোনটাই উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া জিনিস নয়। পার্টি ও নেতৃত্ব সেখানে পথ দেখাতে পারে বা পথের দিশা খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। প্রত্যেকটি ভূমি, তার পরিবেশ, তার প্রতিবেশ ও তার সন্তানদের প্রকৃতি ও আচারের ওপর লাগসই ও টেকসই নীতি এবং কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। ফলে গণচীনের মতো অর্ধশতাধিক জাতিগোষ্ঠীর দেশ যেখানে পৃথিবীর সবচে’ বেশি লোক বাস করে সেখানে সর্বত্র এক ও অভিন্ন নীতি ও কৌশল অবলম্বনের সুযোগ নেই। দ্বান্দ্বিকতার মাধ্যমে বিকাশের অন্যতম শর্ত নানা মতের চর্চ্চার পথ এতে রুদ্ধ হয়। উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নীতির আলোকে রচিত শিল্প ও সাহিত্য হচ্ছে খুঁটার সাথে বাঁধা গরুর মতো, যার দড়ির দৈর্ঘ্য কেবল ছোট বা বড় হতে পারে, কিন্তু খুঁটার সাথে বাঁধা পড়ে থাকাটা অপরিবর্তিত থেকে যায়। ঈদ বা পূজো সংখ্যার চাপে পড়ে বাংলা সাহিত্য যেভাবে মারা যায় পার্টির মাস্টারির চাপে তেমন যে কোন ভাষার সাহিত্যও মারা যায়।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বক্তৃতায় মাও জেতুং বলেছিলেন, “শত ফুল বিকশিত হতে দেয়া এবং শত মতধারা বিরাজ করতে দেয়া হচ্ছে আমাদের দেশে শিল্প ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের নীতি”। মাওয়ের এই নীতি গণচীনের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অগ্রগতির যে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল মাত্র ছয় সপ্তাহ পরে সেই নীতি পরিত্যক্ত হওয়ায় সৃজনশীলতার বিকাশের পথটি কর্তৃত্ববাদীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে স্বতঃস্ফূর্ততার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের গণচীন তার ১৯৭৬ থেকে আজ পর্যন্ত সময়কালটার শিল্প ও সাহিত্যকে কীভাবে মূল্যায়ণ করবে সেটা বলা মুশকিল। তবে আগামী দিনে মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার চর্চ্চা যথাযথ বিকাশের সুযোগ পেলে সেন নালান যেমন ১৯৬৬-১৯৭৬ পর্বকে কঠোর সমালোচনা করেছেন তেমন নতুন কোন সেন নালান পরবর্তীতে এই সময়টাকেও একই প্রকার সমালোচনার চোখে দেখতে সমর্থ হবেন।
গণচীনের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে যে, ২০১৫ সালে দাঁড়িয়ে ১৯৪৯-১৯৬৯ সালের গল্পের আলোচনায় কী লাভ? এই প্রশ্নের উত্তরটি ইতিহাসের যে কোন পর্যালোচনার গুরুত্বের মধ্যে নিহিত আছে। এখনো এই পৃথিবীতে এমন বহু দেশ আছে যেখানে বিদ্যমান সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা যাই হোক না কেন প্রগতিবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা থেকে প্রণীত নানা প্রকার আইন ও বিধি সেখানে মুক্ত চিন্তার চর্চ্চার বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, সৃজনশীলতার পথ সেখানে রুদ্ধ, সেখানে স্বাধীন মত প্রকাশের উপায় নেই, মানবতাবাদীরা সেখানে নির্যাতিত। সাহিত্যের ইতিহাসের এই প্রকার আলোচনা আমাদেরকে উপরোক্ত দেশসমূহের বিদ্যমান অবস্থার ত্রুটিসমূহ বুঝতে ও সেসবের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবতে সহায়তা করে।
মন্তব্য
গুডরিডসে দেখেই লাফিয়ে পড়তে চলে এলাম।
বইটি পড়া নেই। পড়ে ফেলব অচিরেই।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
"ঈদ বা পূজো সংখ্যার চাপে পড়ে বাংলা সাহিত্য যেভাবে মারা যায় পার্টির মাস্টারির চাপে তেমন যে কোন ভাষার সাহিত্যও মারা যায়।" - আর এইটিই বারে বারে ঘটে চলে। কিন্তু যখন দুটিই একসঙ্গে ঘটার ঋতু এসে হাজির হয়, তখন একেবারে সোনায় সোহাগা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
রাখলে লোকে মাইন্ড খায়, তাই পুঁইতা গেলাম। ভাদ্রমাস গেলে পড়ুম।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কি ব্যাপার, আপনার পপ কর্ণের স্টক কি শেষ?
ভাদ্রমাসে আপনার কী কাজ?
____________________________
গল্প সংকলন, নাকি "গল্পে গল্পে পার্টি ম্যানিফেস্টো, এটাই তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। যাই হোক, আরেকটা অসাধারন পোষ্ট। আপনার পূর্বতন চৈনিক বিষয়বস্তু সম্বলিত পোষ্টগুলোর সাথে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন