মৌন মুখরতা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৪/২০১৪ - ৪:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার বিস্তর আলস্য আমাকে বছরে দুইবারের বেশি ভোগায় না। কারন বছরে দুইবার আমাকে চুল কাটতেই হয়, তা না হলে বেড়ে ওঠা চুলের এদিক সেদিক যাত্রা নির্লিপ্ত আলস্যে বিস্তর ব্যাঘাত ঘটায়, তাই আলস্যের স্বার্থেই আলস্য পরিহার করে চুল কাটার প্রস্তুতি নিতে হয়।

দেশে থাকতে চুল কাটাটা বড় একটা সমস্যা ছিল না কখনই, ঘর থেকে বেড়িয়ে দশ কদম হাঁটলেই একটা সেলুন পড়ত। লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ছে সম্ভবত সেলুনের নামটা কখনও সেরকম মনযোগ দিয়ে খেয়াল করে দেখিনি, কোনমতেই সেই সেলুনের কোন নাম মনে করতে পারছি না, হয়ত নামই ছিলনা কোন, কে জানে! কোনমতে দশ কদম হেঁটে গা এলিয়ে দিতাম লাল গদি আঁটা কোন একটা চেয়ারে, আর চেয়ার খালি না থাকলে পাশে রাখা বেঞ্চিতে, একটা পত্রিকা তুলে নিতাম। বেশ আগে কোন এক সময় ইত্তেফাক পত্রিকা রাখত ওরা। বাংলা সিনেমার খোঁজখবর খুব একটা রাখা হত না কখনই, কিন্তু চুল কাটতে গেলে পাতা উলটে ইত্তেফাকের সিনেমার বিজ্ঞাপনের পাতায় গেলে বেশ লাগত। পরে ইত্তেফাক রাখা বাদ দিয়ে দেয় ওরা, অন্য কোন একটা পত্রিকা রাখত, নাম মনে পড়ছে না ঠিক। একটা পুরোনো দিনের ধূসর রঙের ক্যাসেট প্লেয়ারে বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ রেডিও ধরা থাকত। এফএম এর যুগ আসার পরেও কোন এফএম চ্যানেল ধরতে দেখিনি, সম্ভবত এফএম টেকনোলোজি ছিল না ঐ ক্যাসেট প্লেয়ারে। বাংলাদেশ রেডিওর বিচিত্র প্রোগ্রাম, এসএমসির বিজ্ঞাপন আর আশে পাশের দোকান, রাস্তা আর গাড়ির পথচলা দেখতে দেখতে অপেক্ষার পালা শেষ হত।

এখন সেলুনে যেতে হলে দশ কদমের হিসেবে আর চলেনা, বাড়ির আশেপাশে কিছু সেলুন আছে সে কথা সত্যি, কিন্তু সেইসব সেলুন আমার পোষায় না, বিশ পঁচিশ ডলার দিয়ে চুল কাটার বিলাসিতা করার ইচ্ছা বা সামর্থ কোনটাই নেই, দেশে শেষবার যখন চুল কেটেছি সম্ভবত তিরিশ টাকা দিয়ে, ঈদের সময় বিশ টাকা বখশিস সহ পঞ্চাশ টাকায় ছয়মাসের রফা হত, সেই হিসাব এখন টেনেটুনে খুঁজেপেতে দশ ডলারে এসে ঠেকেছে, কিন্তু সেখানে যেতে হলে দশ কদমের বেশি শক্তি খরচ করতে হবে। আরও কিছুদূর কোথায় একটা জায়গায় নামি পাঁচটাকায় চুলকাটে, কিন্তু কদম আর ডলারের হিসাব করে মোটামুটি একটা জায়গা স্থির করা, ছয়মাস পরপর সেখানে একবার ঘুরে আসার পরিকল্পনা করতে হয়।

এই সেলুনটায় চুল কাটে কয়েকজন চায়নীজ মেয়ে, তাও আবার ভারতীয় চায়নীজ। দোকানে ঢুকলে একটা পুরানো দিনের পেটমোটা সিআরটি টিভি স্ক্রিনে গোবিন্দ আর রাভিনা টেন্ডনের ‘আখিওসে গোল্লি মারে’ চলতে থাকে। ভ্যাঙ্কুভারের কোথাও গিয়েই মেইড ইন চায়নীজ থেকে মুক্তি নেই, আমার প্রিয় মেইড ইন বাংলাদেশ মাথাটাকেও তাই মেইড ইন চায়নীজ হেয়ারকাট মেনে নিতে হয়। দাম একটু কম হবার কারণে বেশ ভীর থাকে সেলুনটায়, ছয়মাসে একবার যাই বলে মুখ চেনা হয়নি। দেশে একেবারে বাড়ির পাশে সেলুন হওয়ায় ছয়মাসে একবার গেলেও যেতে আসতে দেখা হত, জহির, নাসের আর কী কী যেন নাম ছিল ওদের, চেহারা এখনও মনে পড়ে স্পষ্ট। এখানে মুখ চেনা না হলেও হাসিমুখে নাম জিজ্ঞেস করে বলে বসতে হবে আধাঘন্টা। আমি একটা বানানো নাম বলে দেই ‘স্যাম’, এখানে বাংলা নাম বললে অনেক কসরত করে বোঝাতে হবে, তার চেয়ে স্যামই ভাল। ছোটবেলার সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের কথা মনে পড়ে গিয়ে হাসি পায়, বাদশাহ অমুকের পুত্র তমুক, জালালুদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ধরণের নাম ধারণ করে সিংহাসনে আরোহন করতেন, আর আমি শান্ত স্যাম নাম ধারণ করে এক চায়নীজ সেলুনের ওয়েটিং চেয়ারে বসে গোবিন্দ আর কারিশমা কাপুর দেখতে থাকি।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি, এমন বৃষ্টি ভ্যাঙ্কুভারে খুব বেশি হয় না। এই রাস্তাটায় ভারতীয়, পাকিস্তানি আর বাংলাদেশি দোকানে ভরপুর, ভারতীয় দোকানই বেশি। কিছু বাংলাদেশি দোকান আছে, বেশিরভাগ জিনিসই খুব একটা সুবিধার না, ডেট এক্সপায়ারড জিনিসপত্রে বোঝাই, কিন্তু হালাল মাংস আর দেশি মাছের কারনে খুব সম্ভবত বেশ চলে যায়, এই রাস্তায় আসলে দু-একজন বাঙ্গালীর সাথে দেখা হবেই। এই রাস্তাটায় বসলে বেশ একটা দেশি দেশি আমেজ পাওয়া যায়। অবশ্য সেলুনে সেই আমেজ নেই তেমন, কেচির কচকচ শব্দ নেই, মেশিনে কাটা হচ্ছে চুল। কচকচ শব্দের বদলে বরং মৃদু যান্ত্রিক বিজবিজ শব্দ পুরো সেলুন জুড়ে। সেলুনের ভেতরের দিকে আরেকটা ঘর, সম্ভবত যারা চুল কাটা ছাড়াও আরও বেশি কিছুতে আগ্রহী তাদের জন্য ঐ ঘর। কাচের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক মোটাসোটা বুড়োকে দলাই মলাই করে মাথায় শ্যাম্পু মাখানো হচ্ছে। এদিকে তিনজন মেয়ে তিনজনের চুল কাটছে মৃদু বিজবিজ শব্দে, আর নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করছে। মজা করছে কম ইংরেজি জানা সম্ভবত এক আরব দেশীয় কাস্টমারের সাথে। ভদ্রলোক সম্ভবত ‘হিউম্যান’ মানে জানেন না, বেচারা হিউম্যানকে উইম্যান মনে করছে, নাপতানিরা যতবার সেই ভদ্রলোককে ‘হিউম্যান’ বলে সম্ভোধন করছে ততবার সে সুধরে দিচ্ছে আর বলছে, ‘আই অ্যাম নট ইউম্যান, আই অ্যাম আ ম্যান’ আর বিব্রত হচ্ছে, ঠিক কী কারণে তিনজন কমবয়েসী মেয়ে তাকে ইউম্যান বলছে সেটা ধরতে পারছে না। এদিকে বারবার ইউম্যান বলছে আর তিনজন হেসে মারা যাচ্ছে। আমি উপভোগ করতে থাকি, কথায় ঢুকি না ওদের, সামনে ফেলে রাখা পত্রিকাগুলো থেকে একটা পত্রিকা তুলে নেই, সবই ফ্যাশন ম্যাগাজিন। নিকি মিনাজ নামে এক গায়িকার অদ্ভুত এক কাভার ফটো ম্যাগাজিনে। কখনও শোনা হয়নি এর গান, লেডি গাগা টাইপ কিছু একটা হবে হয়ত, ছবি দেখে সেরকমই ধারণা হল। তারপরেও বাসায় গিয়েই একটা গান দেখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এখানে সেলুনগুলোতে এই এক সমস্যা ফ্যাশন ম্যাগাজিন ছাড়া তেমন কিছু দেখিনি কখনও। নাপতানিদের হাসাহাসি শুনতে শুনতে নিকি মিনাজের ছবিসমেত ম্যাগাজিন উলটাতে থাকি।

বৃষ্টিতে ভিজে চপচপে হয়ে এক সুন্দরী সাদাচুলের বালিকা ঢুকে পড়ে। ঢুকেই চপচপে ভেজা জ্যাকেট খুলে চুলের পানি ঝাড়তে থাকে। আমি নিকি মিনাজের দিক থেকে দৃষ্টি ফেরাই। মেয়েটা সম্ভবত সেলুনের কর্মীদের সাথে বেশ ভালোভাবে পরিচত, পরিপাটি চর্চিত চুল আর চেহারা, এখানে নিয়মিত আসার যথেষ্ট কারণ আছে, তবে এত সস্তা জায়গায়ও এরকম সাদাচুলের সাদাবালিকারাও আসে বলে আলস্য পরিহার করে এই পথে আরও নিয়মিত হব বলে মনে মনে পণ করি। আমার ক্যাবলার মত তাকিয়ে থাকা দেখেই না জানি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়, জ্যাকেটটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে এক্সকিউজ মি বলে আমার পাশের সিটে বসে পড়ে। আমি সেলফোনটা বের করে একটু ফেসবুকের আপডেট নেই। ভাইবারে একটা মেসেজ এসেছে, লং উইকেন্ডের ঘোরাঘুরির জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে। মেসেজের রিপ্লাই দিতে দিতে আমার সিরিয়াল এসে যায়। আমি পাশে বসা বালিকার দিকে তাকিয়ে হেসে বিদায় নেই। কে জানে আর দেখা হবে কী না!

এখানেও লাল চামরায় মোড়া চেয়ার, এই মিলটা ভাল লাগে। চেয়ারে বসলে একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। কী রকম চুল কাটব জিজ্ঞেস করে মেয়েটা। আমি বলি জাস্ট ছোট করে দাও। পরে ইঞ্চি বলি দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি। বারবার বুঝিয়ে বলি মেশিনের সাইজের কথা বলছি না, একবার দুই ইঞ্ছি বলায় না বুঝে দুই নম্বরি মেশিন দিয়ে চুল কেটে একেবারে মাথাখালি করে দিয়েছিল। এরপর থেকে বারবার বুঝিয়ে বলি। মেয়েটা মেশিন হাতে নেয়, মেশিনের সাইজ দেখে বুঝতে পারি, বোঝাতে পেরেছি, আর টেনশান নেই না, চোখ বন্ধ করে মেশিনের বিজবিজ শব্দ শুনতে থাকি। মেশিনের কথায় আমাদের মেশিনম্যানের কথা মনে হয়ে যায়। মেশিনম্যানের ফাঁসির রায় হবার কথা যে কোন দিন, ভাবি যাবার সময় কাচ্চির জন্য খাসীর মাংস কিনে নিয়ে যাব।

আরব দেশীয় লোকটা চলে গেছে, এখন আর মেয়েগুলো গল্প করছে না, চোখ খুলে দেয়ালের আয়নায় মাঝে মাঝে ভেজাচুলের বালিকাটিকে দেখছি। আয়নায় পুরো ঘরটাই বেশ দেখা যাচ্ছে। বাইরে এখনও বেশ বৃষ্টি। আমি অবশ্য কোন শব্দ তেমন শুনতে পাচ্ছি না, কানে হেডফোন পরানো। কানের কাছে মেশিনের বিজবিজ শব্দ ভাল লাগছে, আয়নায় বসে থাকা মেয়েটিকে ভাল লাগছে, বাইরের বৃষ্টি ভাল লাগছে। কখনও কখনও এইসব মৌন মুখরতা ভাল লাগে, কানে বাজছে চন্দ্রবিন্দুর মৌন মুখরতা, সাউন্ড অব সাইলেন্স।


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আপনার বর্ণনা শুনে ইচ্ছে করছে, দৌড়ে গিয়ে ঐ সেলুনে চুল কাটিয়ে আসি।

'চুল কাটতে বসা' জগতের অন্যতম একঘেঁয়ে কাজ। একবার সেলুনে গিয়ে আলাপ করছিলাম, ধরো এমন একটা ট্যাবলেট বের হল যেটা খেলে মাথার খুলি থেকে নির্দিষ্ট সাইজের চুল থাকবে, আর বাকি অংশটা খসে পড়বে। আধা ইঞ্চি থেকে শুরু করে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত 'পাওয়ারের' ট্যাবলট থাকবে। পছন্দমত ট্যাবলেট খেয়ে রকস্টারদের মত মাথা ঝাঁকুনি দেব, ‌ব্যাস ছ'মাসের জন্য নিশ্চিন্ত।

শুভেচ্ছা হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চুল কা‌টাতে যাবার উদ্যোগ নেয়া আমার কাছে একটা বিশাল যন্ত্রণার ব্যাপার। কতবার এইজন্যে সিদ্ধান্ত নিলাম চুল বড় করে ফেলব। কিন্তু সেটারও ধৈর্য হল না, একটু বড় হতেই বেয়াড়া চুল এদিক ওদিক গিয়ে সবসময় একটা মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করে। কী আর করা বছরে দুইবার তাই যেতেই হয় সেলুনে। ওরকম একটা ট্যাব্লেট পাওয়া গেলে ভালোই হত বোধহয়। তবে সেলুনে উদ্যোগ নিয়ে যাবার পর আমার কিন্তু বেশ লাগে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তিথীডোর এর ছবি

তাঁকিয়ে
বাঁজছে --
চন্দ্রবিন্দুর গান শুনতে আর শোনাতে গিয়ে বাড়তি চন্দ্রবিন্দু লাগালে চলবে? চোখ টিপি

গানটা খুবই ফেভারিট। আমি এদের সব গানেরই ভক্ত। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

তাঁকিয়ে না হয় ঠিক করে দিলাম কিন্তু এত চমৎকার গানটা 'বাজে' বলতে হবে? চন্দ্রবিন্দুর প্রায় সবকটা গান আমারও খুব প্রিয়।

মূল গানটাও খুব সুন্দর, শুনেছেন নিশ্চয়ই।

অবশ্য গানটা প্রথম শুনেছিলাম দ্যা গ্রাজুয়েট সিনেমা দেখতে গিয়ে, অসাধারণ একটা ব্যবহার ছিল গানটার

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

লেখা পড়ে পুরোনো কথা মনে পড়লো। যখন দশ টাকা দিয়ে চুল কাটাতাম তখন সেলুন থেকে বেরুবার পর শরীরটা রিফ্রেশমেন্টের আমেজে থাকতো। কারন চুল কাটার সাথে মাথা মেসেজ আর চুল টানা ফ্রি ছিল। এখন আশি থেকে দুইশো টাকায় চুল কাটাই কিন্তু সেই রিফ্রেশমেন্ট আর নাই। চুল কাটা মানে শুধু চুল কাটা, সাথে মেসেজ বা চুল টেনে দেয়া নাই। ওটা পেতে আলগা পয়সা খসাতে হবে। সেলুন দুনিয়ার পুরোনো যুগটাই দেখি ভালো ছিল। খাইছে

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দশ টেকার আমলে পিচ্চি ছিলাম, ছোট চাচা সাইকেলে চড়ায়ে একটা সেলুনে নিয়ে যাইত। তখন পিচ্চি ছিলাম দেখে চেয়ারের হ্যান্ডেলের ওপর একটা কাঠের তক্তা পেতে ওইটার ওপর বসাইত না হইলে আয়নায় মাথা দেখা যাইত না, মাথা ঠিকঠাক হাইটে পেতেও সম্ভবত সমস্যা হত। তখন পিচ্চি বলে কাঠের ওপর বসাত দেখে খুব অপমান লাগত, ভাবতাম আমি কবে বড় হব কবে চেয়ারে বসে চুল কাটাবে। সাইজে খাট হওয়ায় সেই কাঠের ওপর বসে বেশ অনেকদিন চুল কাটতে হয়েছে। সেই থেকেই আমার চুল কাটার প্রতি অনাগ্রহ কিনা কে জানে।

হেহে মাথা বানানো সেইরকম জিনিস। বিনা পয়সায় এই লেভেলের সেবা পাওয়া এ দেশে সম্ভব না, কিন্তু দেশে মনে পড়ে তিন বছর আগেও চুল কাটালে ফ্রি কিছুক্ষণ চুল টানাটানি করে মাথা বানায়ে দিত, সাথে দশটাকা বখশিস দিলেই হাসিমুখে বিদায় জানাত। তবে সেলুনে একটা জিনিস একটু বিরক্ত লাগত লোকজন এসে ঘ্যাস ঘ্যাস করে বগল কামাত। ওইটার সাথে ঠিক অভ্যস্ত হতে পারি নাই কোনদিন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

দেশে এখনো সেলুন আছে ২৫ টাকায় চুল কাটে!! আমি ঢাকায় চুল কাটাই না, আমার ছেলে আর আমি মিলে বাড়ী গিয়ে চুল কাটিয়ে আসি!! দুজনের চুল কাটার বিল ৫০ টাকা, ওকে বখশিশ দিই আরো ৫০ টাকা - শুধুমাত্র বখশিশ পেয়ে খুশী হয়ে যে হাসি দেয় ছেলেটা সেটা দেখার জন্য!!

কয়েকটা টাইপো ছিল -
নামি -> নাকি, ভীর-> ভীড়, চামরায় -> চামড়ায়।

____________________________

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম প্রফেসর সাহেব, ঠিক করে দিচ্ছি বানানগুলো। বাহ চুল কাটানোর জন্য বাড়ি যান? নাকি বাড়ি গেলে চুল কাটেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

দুটোই--- চোখ টিপি

আসলে বাড়ী যাবার একটা ছুতো খোঁজা আর কি!!

____________________________

মর্ম এর ছবি

নিজেরই এই পুরান লেখার কথা মনে পড়ল খাইছে

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হেহে ঢু মেরে আসলাম হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

নাপতানি?
শব্দটা কি ডাক্তারনি, মাস্টারনি, গোয়ালিনী, চাকরানি ইত্যাদি শব্দের রীতি অনুযায়ী নাপিতনি হবে না? আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এখন মাঝামাঝেই ওখানে চুল কাটাতে যাবেন, তখন শব্দচয়নে এই অবহেলার বিষয়টা তারা জানতে পারলে কি ভাববে বলুন তো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

নাপিতের সঠিক স্ত্রীলিঙ্গ কি নাপিতনি? আমার জানা নেই আসলে। শব্দচয়নে অবহেলার প্রশ্ন কেন আসছে? স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ কি অবহেলাবাচক শব্দ? অবশ্য নাপতানির সেরকম ব্যবহার থাকলে শব্দ বদলে দেব।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন। আপনার লেখা পরে মনে হল আমিও যে সেলুনে চুল কাটাই তার নাম জানি না। এরপরে চুল কাটাতে গেলে নামটা মনে রাখার চেষ্টা করব বলে ভাবছি।

গোঁসাইবাবু

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সেটাই আমাদের আশপাশের এত পরচিত জিনিস জায়গা কত অবহেলা আমরা না দেখেই হেঁটে যাই দেখেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

সচল দেখি অলসের আড্ডা খানা, সবাই নিজেকে ( অণু দা ছাড়া) অলসের চ্যাম্পিয়ান দাবি করে। যাইহোক অলসতার একখান প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেতে পারে হো হো হো । আমিও আছি সেই তালিকাতে। অলসদের হাত ধরে যদি সচল এমন লেখার জন্ম দিতে পারে তাহলে অলসতার ই জয় হোক। হাসি

মাসুদ সজীব

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আর ভাই অলসতার কথা কী কমু। আমার চেয়ে বড় অলস সম্ভবত কেউ নাই। আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চুল কাটার আলস্যটা বোধহয় কারো একার না। একই আলস্য আমারও, এবং খুব পুরনো বলা চলে। ছোটবেলায় চুল কাটতে যেতে চাইতাম না, এক ঘন্টা ধরে বসে থাকতে হবে বলে। ঘাড়ে জমে থাকা চুলের কারণে চুলকাত খুব, অস্বস্তি নিয়ে পড়ে থাকতাম। চুল পড়বে এই ভয়ে মুখ বন্ধ করে থাকতাম বলে থুথু জমত। এত কিছুর পরেও সেলুনের মত নোংরা একটা জায়গা সব সময়ই আমার কাছে খুব নস্টালজিক মনে হয়। - নিশাচর জীব

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

নোংরা জায়গা নিয়ে আমার কখনই খুব একটা সমস্যা হয় না, বরং জায়গা নোংরা হলে বেশ আপন আপন লাগে, পরিষ্কার জায়গাতেই বরং অস্বস্তি বোধ করি, পারলে একটু নোংরা করে জায়গাটাকে নিজের মত করে নেই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ধুগোদা। আপনেরে কি আর আমরা পামু না বলগে?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধুগোদারে মাস কয়েক আগে এই কথা জিগাইছিলাম। উনি কইলেন, বয়স হইছে, হাড্ডি কটকট করে, শরীর মটমট করে, তাই নাকি উনি রিটায়ার্ড হার্ট অবস্থায় আছেন। আসলে উনার দরকার কোমল হাতের সেবা, তাইলেই সপ ঠিকঠাক হয়া যাবেব

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

চুল কাটানো আসলেই বিরাট ঝক্কির একটা ব্যাপার, আমার মাথার শেপ বিশ্রি রকমের অসমান হওয়ায় কুনু সেলুনেই ঠিক জুইত হয় না। বছর পাঁচেক কুষ্টিয়াতে ছিলাম, ওইখানে এক নাপিত আমার চুলরে বেশ বশে আনতে পারতো, আর কি সোন্দর কইরাই না মাথা বানাইতো। কিন্তু সেই প্রথম, সেই শেষ। তাপ্পরে আর হইলো না। এই কারণে আমি মোটামুটি মাস তিনেক পরপর সেলুনের পথে পা বাড়াই, কাটাই না, ছাঁটাই।

আইচ্ছা, ভারতীয় চাইনিজ কি বস্তু?

----ইমরান ওয়াহিদ।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ভারতীয় চাইনিজ কি বস্তু?

আমারও একই প্রশ্ন ছিল। পাছে লোকে বোকা বলে তাই জিজ্ঞেস করিনি আগে। এরা আসলে কারা?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভ্যাঙ্কুভারে বেশ কিছু বিভিন্ন রকম ভারতীয় চাইনীজ আছে, এরা চাইনীজ হলেও এদের একটা প্রজন্ম ভারতে ছিল। যেমন কিছু লোক আছে যারা শান্তিনিকতনে ছিলেন। তারা বেশ ভাল বাংলা বলেন। কিছু লোক কলকাতার বিভিন্ন অংশে ছিলেন তারা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের মত এদেশে এসে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কিছু করে খাচ্ছেন। একটা চায়নিজ রেস্তোরা আছে যার নাম দেশি স্টাইল চাইনীজ, ওখানকার সবাই চাইনিজ কিন্তু কলকাতায় বড় হওয়া, খুব ভাল বাংলা বলে, শান্তিমত বসে বাংলায় গালিগালাজ করার উপায় নেই। যে সেলুনে গিয়েছিলাম সেখানে সম্ভবত ওরা হিন্দীভাষী চাইনিজ হয়ত ভারতের অন্যে অংশে ছিল, সেটা আর জানা হয়নি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝছি এবং মনে পড়ছে। এরা হলো সেই লন্ড্রী আর বিউটি পার্লার চাইনিজদের বংশধর। এরা বহু বহু বছর ধরে ওদেশে আছে। বয়স হয়ে যাচ্ছে, অনেক কিছুই মনে থাকেনা।

----ইমরান ওয়াহিদ

আয়নামতি এর ছবি

গানটা দারুণ! বাপ্রে চুল কাটানোর জন্য এত্তো হ্যাপা না করে বর্ডার পার হয়ে শিকাগো চলে আসুন।
৫ টাকায় চুল কেটে পান চিবুতে চিবুতে বাড়ি ফিরতে পারবেন। কী সহজ পথ বাতলে দিলুম দেঁতো হাসি

ঈয়াসীন এর ছবি

পান কি চুল কাটানোর সঙ্গে ফ্রি? মানে ভাতের হোটেলে ডাল যেমন ফ্রি।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

পান ফ্রি হলে চলে আসতে পারি, মানে পানীয় আর কি!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

টিকেট পাঠালে চুল কাটার পাঁচ টাকার খরচ আমি নিজে দিতে রাজি আছি দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাহসিন রেজা এর ছবি

আমার ভার্সিটির হলে এখনও পঁচিশ টাকায় চুল কাটা যায় দেঁতো হাসি সঙ্গে চুল টানা আর ম্যাসাজ ফ্রি। দেঁতো হাসি আর বহুদিনের পুরোনো আনন্দমেলা, সাপ্তাহিক দুহাজার তো আছেই। হাসি

খুব সুন্দর লেখা ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।