আধুনিক ঠাকুরমার ঝুলি (গোলামকুমার- শেষপর্ব)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৪/০৭/২০১৩ - ১১:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
দমবন্ধ করে তাকিয়ে আছেন গোলাম। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ৫ লাখ মানুষ, শাহবাগে খোলা আকাশের নিচে পূর্নিমার চাঁদের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে উঠল- “কঃ”। ভয় পেয়ে ঘুমন্ত একঝাক দাঁড়কাক ডানা ঝাপটে ঊড়ে গেল নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। মাঝপথে বাধা পেয়ে মিয়াঁও করে ছিটকে পড়ল প্রেমরত বেড়াল জুটি। যথারীতি পেছনের পা তুলে নির্বিকার ভঙ্গিতে জলবিয়োগ করে দিল একটা নেড়ি কুকুর, যেন কিছুই হয় নি। চারুকলায় ঝিমুতে থাকা জোড়ভাঙা বুড়ো লক্ষ্মীপেঁচাটা বিরক্ত হয়ে উড়ে গেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আঁধারে। আর গোলামের কি হল? নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলেন তিনি- “উহ, ব্যাথা লাগে তো!” পরক্ষনেই মনে পড়ল ব্যাথা তিনি আগেও পেতেন। “এখন কি মরে দেখব নাকি” বিড়বিড়িয়ে ভাবলেন তিনি।

ওদিকে পরের ধাপের প্রস্তুতি শুরু। সারি সারি মানুষ প্যান্টের জিপার খুলে, উদ্যত পাইপগান হাতে প্রস্তুত। সাড়ে তিন যুগ আগের স্মৃতি মনে পড়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েন গোলাম। আহা কি দিন গুলোই না গেছে সে বছর। গন্ডগোলের সময় তো আর আফিফা কাছে ছিল না। তবু, ইচ্ছা হলেই বেছে নাও, তারপর- প্যান্টের জিপার খুলে, উদ্ধত মেশিন বের করে এগিয়ে যাও। কি যৌবন টাই না ছিল তখন! পেটে গোলামকুমারের খোঁচা খেয়ে বর্তমানে ফিরে এলেন তিনি। সারবাঁধা পাইপগান দেখে কেন জানি ফায়ারিং স্কোয়াডের কথা মনে হল তাঁর। “কোন শালা যে বিনোদন আর নিষ্কাশনের লাইন এক করে দিয়েছিল!” অস্ফুটে বিড়বিড় করলেন গোলাম। শাহবাগের এরা বড্ড গোছালো ভেবে প্রমাদ গুনলেন গোলাম। এরা মেয়েদের জন্যও আড়ালে বিশেষ ব্যাবস্থা রেখেছে। আবালবৃদ্ধবনিতাশিশুযুবানারীপুরুষ সবাই এসে গেছে তাঁর নামে ছ্যাড় ছ্যাড় করে মুতে দিতে। মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন তিনি- “এত মানুষ ঘৃণা করে আমাকে? আশ্চর্য!”

২।
টান টান উত্তেজনা শাহবাগে। সবাই কান পেতে আছে হুইসেলের জন্য। ওই শোনা যায়- পিপ... পিইপ... পিইইইইপ! তারপর, শ্রাবনের ভরা বর্ষার কলধ্বনি, মুহূর্তের মাঝেই সব শেষ। গোলামের তলপেট মোচড় দিয়ে ওঠে। পাজামাটা ভিজে গেছে ইতমধ্যে। “কিন্তু, মরিনি তো”- ভাবেন গোলাম। গোলামকুমারের দিকে চেয়ে দেখেন ব্যাটা মিটিমিটি হাসছে। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন গোলাম। গোলামকুমার হেসে বলেন “চিন্তা নেই। গন্ধমাদন থেকে গোলামসঞ্জীবনী, পাকিস্তান থেকে মার্খোরের মল, আর খাঁটি সৌদি বংশোদ্ভূত উটের মুত্র দিয়ে একটা মিক্সচার বানিয়ে দিয়েছিল নাছাড়া রাজ্যের শাহী কোবরেজ টবি ম্যাডম্যান। আর দেশী হাতুড়ে ডাঃ মলমুতুর রহমানের নাস্তিকোমাইসিন সিরাপ আর হ্যাপা এক্সট্রা ট্যাবলেট তো ছিলই। সবগুলোই তোমার অলিভওয়েলে মিশিয়ে দিয়েছিলাম। সারপ্রাইজ দেব বলে বলিনি। কোথা থেকে যেন একটা আর্তচিৎকার ভেসে আসে। পাগলটা বোধ হয়। পাগলের প্রলাপ, না শোনার ভান করেন দুজনেই। হাঁটতে হাঁটতে বঙ্গভবনের সামনের গোলচত্বরে এসে প্রাণভরে জোছনা দেখেন গোলাম- এ জিনিসটা জীবনেও উপভোগ করে দেখার কথা ভাবেননি তিনি- তবে আজকের কথা ভিন্ন।

গোলামকুমারের দিকে চেয়ে ভরা জোছনায় স্নেহভরা চোখে একটু হাসি দেন গোলাম, তিনি যা পারেননি- এরা তা পারবে।

(সমাপ্ত)

____________________________________________________________________________

পাদটীকা

  • ১. পাদটীকাঃ

    ১।
    সচল আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা জায়গা হওয়াতে এখানেই আরেক প্রিয় পদার্থবিজ্ঞানের সাথে সংসার পাতবো ভেবেছিলাম। প্রতিবেশীর তো অভাব হতনা। কিন্তু আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিল গোলাম আজম। আরো অনেকেরই বোধ করি একই অবস্থা। আমার সম্ভবতঃ গল্প-কবিতা লেখবার কথা ছিল না। কিন্তু, পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে যা সাজিয়েছিলাম তাঁর কিচ্ছু কীবোর্ডে বেরুচ্ছে না। ৯০ বছর বেরুবেও না মনে হয়। আমি বোধ হয় ভুল সময়ে হাচল হয়েছিলাম।

    ২।
    লেখাটি কিঞ্চিৎ অশ্লীলতা দোষে দূষ্ট হয়ে থাকলে আমি পাঠকদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাই। তবে আমার মনে হয়- এই মুহূর্তে গোলামের চেয়ে অশ্লীল আর কিছুর অস্তিত্ব এই দুনিয়ার বুকে নাই। তাই, অশ্লীলতম বস্তুটির জন্য অসীম ঘৃণা। সময়টা ঘৃণা করবার। ঘৃণা কাজে লাগাবার। সময় গেলে কিন্তু সাধন হবে না। (কাদের ভাইরে নিয়ে আমি নতুন করে আশাবাদি)

    ৩।
    আগের প্রজন্মের লোকেরা উপদেশ দেবার সময় প্রায়ই বলতেন- “বাবারা, তোদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের খুব অল্প বয়সে অস্ত্র হাতে নিতে হয়েছিল। কিন্তু দোয়া করি তোদের যেন আর কখনো সেটা করতে না হয়।” আমরাও যেন পরের প্রজন্মকে ঊপদেশ দেবার সময় বলতে পারি- “বাবারা, তোদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের তীব্র ঘৃণা বুকে নিয়ে একটা সময় পার করতে হয়েছিল। কিন্তু দোয়া করি তোদের যেন আর কখনো সেটা করতে না হয়।” আমাদের সম্মিলিত ঘৃণার সাগরে গোলাম-গোলামকুমার-গোলামেরচৌদ্দগুষ্ঠি নিপাত যাক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সময়টুকু হোক কেবলি ভালবাসার।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশী হাতুড়ে ডাঃ মলমুতুর রহমানের নাস্তিকোমাইসিন সিরাপ আর হ্যাপা এক্সট্রা ট্যাবলেট তো ছিলই

জটিল।

খুব আগ্রহ নিয়ে শেষ করলাম তিনটা। কথা দিয়েছিলাম তিনটা পড়ে একেবারে মন্তব্য করার। কিন্তু সে সুযোগ দিলেন কই? পাদটীকাতে যা লিখেছেন তার পর শুধু একটা কথাই বলার থাকে - পূর্ণিমা পার হয়েছে কয়েক দিন আগে। তার পরও "ছ্যাড় ছ্যাড় করে মুতে দিলাম" হতভাগাটার নামে।

-প্রোফেসর হিজিবিজবিজ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- প্রফেসর সাব
পাদটীকাটাই খালি আমার লেখা... বাকিটা কেম্নে লেখা হল বুঝতেছি না ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

shimul এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

চলুক

আগের প্রজন্মের লোকেরা উপদেশ দেবার সময় প্রায়ই বলতেন- “বাবারা, তোদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের খুব অল্প বয়সে অস্ত্র হাতে নিতে হয়েছিল। কিন্তু দোয়া করি তোদের যেন আর কখনো সেটা করতে না হয়।” আমরাও যেন পরের প্রজন্মকে ঊপদেশ দেবার সময় বলতে পারি- “বাবারা, তোদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের তীব্র ঘৃণা বুকে নিয়ে একটা সময় পার করতে হয়েছিল। কিন্তু দোয়া করি তোদের যেন আর কখনো সেটা করতে না হয়।” আমাদের সম্মিলিত ঘৃণার সাগরে গোলাম-গোলামকুমার-গোলামেরচৌদ্দগুষ্ঠি নিপাত যাক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সময়টুকু হোক কেবলি ভালবাসার।

গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মালাকাইটের ঝাপি এর ছবি

গুল্লি গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্রমাগত ভোল বদলান ভয়ানক অন্ধকারের শক্তিকে ঠিক ঠিক ভাবে ধরা হয়েছে এই দু:স্বপ্নের রূপকথায়। ঠিকমত সংরক্ষণ হলে সময়কালে এই লেখা ক্লাসিক বলে বিবেচিত হওয়ার দাবী রাখে। কিন্তু এ লেখা ত সেজন্য লেখা হয়নি। লেখা হয়েছে ভালবাসার জিগরী-দোস্ত পবিত্র ঘৃণা-কে ভুলতে না দেওয়ার জন্য। তাই যেন হয়। যেন এই ঘৃণার "ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।"
- একলহমা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

[খালি কমেন্টান দেখি, লেখেন না কেন?]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু , গোলাম আর গোলামকুমারদেরই দিন
ইসরাত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

রেগে টং আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রাত-প্রহরী এর ছবি

কোন শালা যে বিনোদন আর নিষ্কাশনের লাইন এক করে দিয়েছিলো!

----------জটিল
হাততালি

------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

[টু-ইন-ওয়ান মেশিন, জটিল তো বটেই চোখ টিপি ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সবকটা পর্বই দারুণ হয়েছে। চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দারুচিনি  এর ছবি

গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

পাদটীকাটা পড়ার পর মন্তব্য করার ইচ্ছাই করলনা। সব মন্তব্য আপনি নিজেই করে দিয়েছেন।
শুধু "গোলাম কুমার" নামটাতে কেমন জানি একটা উঁচু উঁচু গন্ধ লাগে,"গোলামচদ" জাতীয় হলেও
মন্দ হত না।
শাকিল অরিত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ছি ছি, কি বলছেন এসব? চিন্তিত
He was one of the FINEST officers from our forces. খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

পাজামাটা ভিজে গেছে ইতমধ্যে। “কিন্তু, মরিনি তো”

পাদটীকায় মনটা আবার বিষণ্ন হয়ে উঠলো।
অনেক ধন্যবাদ, লেখাটা পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
সাদিয়াপা, পাদটীকাটাই মূল লেখা, বাকিটা ফাউ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।