মিলিত মৃত্যুর থেকে বেঁচে থাকা ভাল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৭/২০১৬ - ৯:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

_________________________________________________________________________

পূর্বকথনঃ এই ব্যাপারে কেন আলোচনা দরকার তার চমৎকার সারমর্ম এখানে-

অনেকেই বলেন ইসলামী সন্ত্রাসবাদ লালনপালনে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার বিশাল অবদান আছে একথা নিসন্দেহে সত্য। ... ... ... প্যালেস্টিনিয়দের বঞ্চিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে দীর্ঘদীন ধরে ইসরায়েলকে নগ্নভাবে সমর্থন করেছে তাও মুসলিম সমাজকে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়েছে। এই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া আর প্রতিহিংসার ব্যাপারগুলো ভুলে গেলে কোনও আলোচনাই কখনও সম্পূর্ণ হতে পারে না। কিন্তু তারপরেও কেবল আমেরিকার দিকে অঙ্গুলি তুলে ধর্মগ্রন্থগুলোকে কখনোই ধোয়া তুলসীপাতা বানানো যায় না। ধর্মগ্রন্থের যে অংশে জিহাদের কথা আছে, উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীদের কথা আছে, মুক্তা সদৃশ্য গেলমানের কথা আছে, সে সমস্ত পবিত্র বাণীগুলোকে ছোটবেলা থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে... ... ... বিভিন্ন দেশে তরুণ সমাজের কিছু অংশের মধ্যে একধরণের বিশ্বাসের ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। ফলে এই ভাইরাস আক্রান্ত জিহাদিরা স্বর্গের ৭২টা হুর-পরীর আশায় নিজের বুকে বোমা বেঁধে আত্মাহুতি দিতেও দ্বিধা করে না।

[ বিশ্বাসের ভাইরাস/অভিজিৎ রায়, জাগৃতি প্রকাশনী। ২য় সংস্করণ-জুন ২০১৪। অধ্যায়-১, পৃষ্ঠা নং-৩১ ]

অভিজিৎ রায় মুদ্রার দুটো পিঠই দেখেছিলেন, লিখেছিলেন। আজ মডারেটনামধারী একদল অদ্ভুত জন্তু মোবিঁয়া স্ট্রিপের মতন একতলীয় মুদ্রা দেখে, দেখায়। যারা উগ্র মডারেট, তাঁরা চিকিৎসার বাইরে। যাঁরা দোদুল্যমান মডারেট তাঁদের জন্যই (শেষ অনুচ্ছেদ বাদে) আমার এ খোলা চিঠি। প্রথম পিঠটি নিয়ে প্রচুর আলাপালোচনাটকশো ইত্যাদি মকশো করা হয়। চায়ের সঙ্গে কুড়মুড়ে বেলা বিস্কুটের মতন আর্থসামাজিহেজেমনি টাইপের ভারিক্কি কথাও মুহুর্মুহ আলোচিত হয় সাউন্ড গ্রেনেডের মতন সশব্দে। ভালবাসার অভাবের মতন কিউউট ব্যাপারগুলোও চর্চিত হয়ে চলে উপর্যুপরি চোবাতে চোবাতে ফ্যাকাশে হয়ে আসা মোস্তাসারী আরিফপুর ট্রিপল চেম্বার টি-ব্যাগের মতন। মুদ্রা উল্টানোর উপক্রম হলে কে বা কাহারা জাঁ ভাল-জাঁ’র মতন দামড়া হাতিমার্কা পা তুলে দিয়ে টুক করে মুদ্রার আরেকপিঠ ঢেকে দেয়। উপন্যাসের ভাল-জাঁ দের অনুশোচনা হয়। বাস্তবতা যেহেতু উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসে না, তাই বাস্তবের খারাপ-জাঁ টাইপের মানুষেরা অনুশোচনাও করে না। ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুচ্ছেদ আবৃত্তি করতে পারলেই সিদ্ধি, এই আনন্দে তাঁরা বাক-বাকুম। আসুন মোবিয়াঁ স্ট্রিপের মতন মুদ্রাটিকে সোজা করে আমরা দুটো পিঠই দেখার চেষ্টা করি, দেরীতে হলেও।


১।

প্রিয় মডারেটস, ইদানীং আপনারা অল্পতেই বড্ড অবাক হচ্ছেন, আহা-উহু করছেন, ভালবাসা দিচ্ছেন এবং নিচ্ছেন, কিউট বাচ্চাদের জন্য আহাজারি করছেন (মমিনা আপ্পেরা শহীদ আফ্রিদিকে ভুলে গিয়ে নিত্য-নতুন ক্রাশ খাচ্ছেন), ইয়াহুদী আর নাসারাদের পিণ্ডি চটকাচ্ছেন, সুরা পারলে কিংবা হিজাব পরলেই দুটো খেতে পাবেন ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, সর্বোপরি খুনিদের কোনও ধর্ম নাই আওড়ে বেশ শান্তি পাচ্ছেন। তা বেশ। অনেকে আবার কিসের যেন উৎস খুঁজতে বেথেলহাম থেকে নিউইয়র্ক, ভ্যাটিকান থেকে লুম্বিনী তোলপাড় করে ফেলেছেন। সমাজ-সংস্কৃতির আন্ডু খুলে দেখছেন, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের লুঙ্গি উঁচিয়ে দেখছেন। শিক্ষা ব্যাবস্থার ওড়না টেনে দেখছেন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির স্কার্ট খুলে দেখছেন। কেবল দেখতে পাচ্ছেন না নিজের পুটু, আফসোস।


২।

প্রিয় মডারেটস, আপনাদের শান্তীকামী ধর্মের নাম করে বা নাম ভাঙিয়ে বা বিকৃত করে বা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বা পিকে আর রামোসের মধ্যে কয়েকশ বার বল চালাচালি করে আপনারা কেবলি ইয়াহুদী-নাছারাদের দোষ খুঁজে পান, মালাউনদের দোষ খুঁজে পান ব্যাপারটা বেশ মজার। যাক গে বিশ্বাসের ব্যাপার স্যাপার যেহেতু, আপনাদের কথাই সই। অবশ্যই সমস্ত কুশংসা ইয়াহুদী-নাছারা সম্প্রদায়ের জন্য, মেনে নিলাম আপাতত। কিন্তু দুনিয়াতে এত এত মমিন বান্দা থাকতে আপনারাই কেন বারংবার ইয়াহুদী-নাসারাদের খপ্পরে পড়েন একটু জানাবেন? আপনাদের পবিত্র গ্রন্থ চাইলেই বিকৃত করা যায় কিভাবে জানাবেন? আপনাদের নিস্পাপ প্রচারকরা ইয়াহুদী-নাসারাদের বিষাক্ত খপ্পরে পরে বারংবার আপনাদেরই ঐশীবানীর ভুল ব্যাখ্যা দিতে উদ্বাহু হয়ে ওঠে কেন জানাবেন? এই ভুল ব্যখ্যাগুলো সাধারণত সহিংস হয়ে ওঠে কেন জানাবেন? আর সবশেষে, এই সহিংস হয়ে ওঠা কথিত 'বিকৃত-ভুল-খণ্ডিত' ব্যাখ্যায় আপনাদের স্বগোত্রীয়রা কাতারে কাতারে ‘সন্তুষ্ট’ হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমল করতে উঠে পড়ে লাগে কেন এটাও কি জানাবেন?


৩।

প্রিয় মডারেটস, আপনারা বারংবার পবিত্র ধর্মের ‘ভুল ব্যাখ্যা-বিকৃত ব্যাখ্যা’ বলে ক্যাঁক্যাঁ করে চ্যাঁচ্যাঁতে থাকেন। একই সঙ্গে আপনারা এটাও দাবী করেন পবিত্র ধর্মকে বিকৃত করা যেতেই পারে না। আপনারা ব্রেনওয়াশ-মগজধোলাই ইত্যাদি ভারী-ভারী সাঁজোয়া শব্দের হাডুডু খেলেন অপরিসীম দম নিয়ে। অথচ, তৃতীয়া বিভক্তি যোগে ঠিক কি দিয়ে সেই ধোলাই-ওয়াশ করা হয় জানতে চাইলে আপনারা অর্শরোগীর মতন সিরিয়াস মুখ করে হাইকমোড বিহীন টয়লেটে ঢুকে দরজা আটকে দেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র আপনারা।


৪।

প্রিয় মডারেটস, রাম-শ্যাম-যদু-মধু (বিধর্মী নামের জন্য দুঃখিত) নয়, কিছু সহীহ রেফারেন্স দেখাই হ্যাঁ? পালাবেন না, পিলিজ লাগে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় চার্চ। তা থেকে মার্চ ২০১১ তে প্রথম প্রকাশিত এবং জুন ২০১৫ তে পুনঃমুদ্রিত এবং সামীম মোহাম্মদ আফজাল অনূদিত ‘কাদিয়ানীবাদের শবযাত্রা’ একটি চমৎকার হালাল বই, মোটেই উগ্র নয়। ভূমিকা অনুসারে এই বইটি মূলতঃ

“কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের একটি ঐতিহাসিক রায়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রণীত রায়টি বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।”

এতে ঢাকা নারিন্দা মশুরিখোলার জনৈক শাহ্‌ সাহেব হুজুরের বাণীও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যার অংশবিশেষ জানাচ্ছেঃ

“পবিত্র কুরআন, হাদীস, ইসলামী নীতিমালা ও দুনিয়ায় প্রচলিত আইন কানুনের ভিত্তিতে পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের সম্মানিত বিচারকগণ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকজন মুসলমান নহে, তাহারা অমুসলমান ও কাফের বলিয়া রায় ও সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।”

খুবই ইন্টারেস্টিং কথা, কোনও সন্দেহ নাই। শিক্ষা হল যে হাইকোর্ট চাইলে যে কারও “মুসলমানত্ব” এমনকি দুনিয়ায় প্রচলিত আইনের সাহায্য নিয়েও বাতিল করে দিতে পারে। নিরীহ আহমাদিয়া সম্প্রদায় চাপাতি নিয়ে কারো গলা কাটে বলে কখনও শুনি নি। তবু তাদের ‘মুসলমানত্ব’ এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাদের নুন্যতম মানবাধিকার অস্বীকার করতেও আপনাদের জোরাল মডারেট হাওয়ার অবদান অনস্বীকার্য। চাপাতি হাতে ধরা খুনীদের ব্যাপারে আপনারা কেন যেন বড় অশালীন রকমের নীরব। কম বুদ্ধি মানুষেরা যদি আপনাদের এই শক্ত নীরবতা দেখে “পবিত্র কুরআন, হাদীস, ইসলামী নীতিমালা ও দুনিয়ায় প্রচলিত আইন কানুনের ভিত্তিতে” এই চাপাতিওয়ালাদেরকে আপনাদের দাবিকৃত শান্তিময় ধর্মটির সম্পূর্ন রঙ্গিন ব্র্যান্ড এম্বাসাডর ভেবে বসে, তাতে কি খুব ভুল হবে? আর যদি অভ্যাসবশত বলতে চান যে উক্ত প্রকাশক সংস্থাটি “ইহূদী-নাসারা” কবলিত, সেক্ষেত্রে আমার বিনীত প্রশ্ন থাকবে- আপনারা সেটি ঠেকানো বাদ দিয়ে সোনামুখ করে ঠিক কি ছিঁড়ে আঁটি বাঁধছিলেন?


৫।

প্রিয় মডারেটস, নাস্তিক-কাফির-মুরতাদ ইত্যাদি কতল সহীহ ধর্মটি সমর্থন করেনা বলে আপনারা চোখের, নাকের এবং আরও অনেক কিছুর পানি একাকার করে একেবারে কাদাকাদা করে ফেলেছেন। আন-নূর প্রকাশনী থেকে ১০ মে ২০১৩ তারিখে হাফেজ মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান আজাদ কর্তৃক গ্রন্থণাকৃত “নাস্তিক মুরতাদের শাস্তি” বইটি এই মুহূর্তে আমার হাতে রয়েছে। বইটির ভূমিকায় হাটহাজারী থেকে আহমাদ শফী জানাচ্ছেনঃ

“এর পান্ডুলিপিটি আমি দেখেছি। কিতাবটি বেশ তথ্যসমৃদ্ধ ও সময়োপযোগী। এতে কুরআনের বহু আয়াত ও সহীহ বুখারীর বহু হাদিস দ্বারা নাস্তিক-মুরতাদের শাস্তি ‘মৃত্যুদন্ড’ সাবিত করেছে। সাথে সাথে চার মযহাবের ইমামগনের উক্তি ও গ্রহণযোগ্য ফেকহী কিতাবাদী থেকেও পর্যাপ্ত দলীল পেশ করে নাস্তিক-মুরতাদের শাস্তি (মৃত্যুদন্ড)কে আরও জোরালো করে তুলেছে।”

ডিয়ার মডারেটস, আহমাদ শফী এত্তগুলা কিউউউট, তাই না? আপনারা নিশ্চয় উনাত্তে বেশি বুঝার দুঃসাহস করেন না। ঠিকাছে, সেক্ষেত্রে এতদিনের আপনাদের ওগরানো বিষাক্ত থুথু-কফ-হাগু-মুতু সোনামুখ করে চেটে খেতে রাজি আছেন তো? দ্বিমত করলেও সমস্যা, সেক্ষেত্রে আহমাদ শফী সাহেবকেও ইয়াহুদী-নাসারা কবলিত ভাবতে হয়। সেটি হয়ে থাকলে উনাকে ইহুদি-নাসারা প্রভাবমুক্ত করতে ঠিক কি প্যারা-কমান্ডো অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেটি জানাবেন কি?


৬।

প্রিয় মডারেটস, আপনাদের অপ্রিয় লেখক সালমান রুশদী একটি সাক্ষাৎকারে ত্যানা না পেঁচিয়ে সোজাসাপ্টা কথাটা পাটিসাপ্টার মতন সুস্বাদু করে বোধগম্য প্রাঞ্জল ভাষায় বলেছেন, পুরো কথার জন্য এখানে টিপি দেন। আর আদ্ধেক কথা আমি বাংলায় বলে দিচ্ছি। রুশদী বলছেনঃ

“যদি সন্ত্রাসীরাই দাবি করে যে তারা ইসলামের নামে সেটি করছে, সেক্ষেত্রে তার প্রতিবাদ করার আমরা কে? আমি বোঝাতে চাচ্ছি, অবশ্যই তাদের দাবীকৃত ইসলামটি হয়তো অন্য অনেক মুসলিমের দাবিকৃত ইসলাম নয়। কিন্তু দিনশেষে সেটি ইসলামেরই একটি রূপ যেটি গত ২৫-৩০ বছরে অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।”

তিনি আরও বলেনঃ

“এটি ইসলাম নয় বলে দাবি করাটা সমস্যাটিকে ভুল নামে ডাকার নামান্তর। সমস্যা হল ইসলামে একটি মিউটেশন ঘটেছে, যেটি অসম্ভব ছোঁয়াচে ও শক্তিশালী। সমাধানকল্পে আমাদের অবশ্যই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আর সে প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হল সমস্যাটিকে সঠিক নামে ডাকা।”

প্রিয় মডারেটস, এই সাবলীল বোধটা তো আপনাদের মাঝেই আগে আসার কথা ছিল, আসে নি কেন? আপনাদেরই পবিত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছেঃ ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা সত্যের সহিত মিথ্যাকে মিশ্রিত করিও না এবং জানিয়া শুনিয়া সত্যকে গোপন করিও না।’ এই প্রত্যক্ষ আদেশ কি আজকাল আপনারা মেনে চলেন না, নাকি আপনারা যথেষ্ট ইমানদার নন? উত্তরটা দেবেন, প্লিজ!


পুনশ্চঃ একটি বিচ্ছিন্ন দাবী (৭)

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
দু’দিন আগে আপনি “বুম-ক্যামেরা-ফুটেজ-অনুভূতিকি” ব্যাবসায়ী একটি প্রভাবশালী মহলকে দুষ্টুমির জন্য হালকা বকে দিয়েছেন। আমরা কেবল বকাতে সন্তুষ্ট নই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আপনি এই পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসায়ীদের একটু কড়া করে বকে দিন, প্লিজ। হালকা পিটুনি দিলেও মনে হয় কেউ আপত্তি করবে না। অনেকদিন আগে প্রিয় রম্যাঞ্চলেখক মাহবুব আজাদ তাঁর সৃষ্ট কনস্টেবল কিংকু চৌধারির মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন- “না স্যার, ঘরে একজনও মানুষ নেই। সব সাংবাদিক।” ভবিষ্যৎদ্রষ্টা কিংকুর সেই অমর উক্তি আজ সকলের মুখে মুখে। ভবিষ্যৎদ্রষ্টাদের কথাকে কক্ষনো অসম্মান করতে নেই, খবরদার। গোয়ালের দুষ্ট গরুগুলো পুরুষ্টু বাইসন কিংবা দামড়া গন্ডার হয়ে উঠবার আগেই মোলায়েম ক্যাস্ট্রেশনের আওতায় এনে ছাগলের খামার গড়ে তুলুন, কিংবা গোয়াল খালি করুন, প্লিজ। অতীতে ইনকিলাব দেশে দাঙ্গা বাধিয়েছে, বিচার হয়নি। প্রথম আলো বারংবার তথ্যবিকৃতি ঘটিয়ে দাঙ্গা বাধানোর উস্কানি দিয়েছে বিচার হয়নি। বহু মানুষের রক্তমাখা আমার দেশএর বিচার এখনও শেষ হয়নি। চ্যানেল আইয়ে জনৈক জিল্লুর রহমান গোপনে বঙ্গবন্ধুর খুনী এবং দন্ডিত ফাঁসির আসামী কর্নেল (অবঃ) রশিদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে টিয়ারপি বাড়িয়েছে। জিল্লুর রহমানকে রিমান্ডে দূরে থাক, আইনের আওতায়ই নেয়া হয়নি। গত শুক্রবার রাতের ফারজানা রূপাদের কথা নাহয় বাদই দিলাম, এতজনের কথা লিখে কুলানো যাবে না। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আব্বাস ফয়েজ কিংবা সায়িদা ওয়ার্সীদের কান মলে দিতে পেরেছেন সময় মত। আপনি নিশ্চয় বুমধারী এই শিঙ্গালো লাইভ-ব্যাবসায়ীদেরও কান মলে লাল করে দিতে পারবেন। অনেক দিন আগে, “জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা” সম্পর্কে দু’পয়সা যোগ করেছিলাম। এই নীতিমালাটি প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন শুরুর এটিই উচ্চতম সময়। সময় গেলে কিন্তু সাধন হবে না, হয় নি কোনকালে।

সতর্কীকরণঃ

[ লেখাটিকে আমি অনুভূতি প্রবণ বলে ঘোষণা করলাম। মডারেটবৃন্দের কেউ যদি ক্যাঁক্যাঁ করে লাদি ছড়াতে আসেন তবে জানবেন- আমার কিন্তু অনুভূতি আহত হচ্ছে, সাবধান! বাকিদের যৌক্তিক আলোচনার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ]

০৫.০৭.২০১৬
বাংলাদেশ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হায় মডারেটস। ম্যাঁও

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হায় হায় করেন ক্যান? আপনার কি ভালোবাসা দরকার? হুমম? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোবাসায় দিল ভইরা গেসে। আর না হইলেও চলব। ওঁয়া ওঁয়া

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

আমি আমার কমনসেন্স থেকে বুঝি না, কোথাকার কোন বাংলাদেশের সদ্য ইসলামপ্রেমী প্রধাণমন্ত্রী কাকে ভ্রান্ত বা অপব্যাখ্যা বলছে, কোন মাসউদ হারাম ফাতোয়া দিচ্ছে, তাতে এদের ছেঁড়া যায়। জেনারেশন এর পরে জেনারেশন ধরে কুরান হাদিস ইজমা কিয়াসের এনালাইসিস এর রেজাল্ট এই জিহাদী ইসলাম। হাজার হাজার বইতে লক্ষ লক্ষ লাইন লিখে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জিহাদ এবং ক্বিতাল। এবং অবশ্যই, কেন এটা ওয়াজিব (কেউ ফরজও বলে)। কি জানেন মডারেটরা ইসলাম সম্পর্কে? কয়জন এমনকি বাংলা অনুবাদটুকু কষ্ট করে পড়েছে? ৯০% মডারেটের ইসলাম জ্ঞানের দৌড় ইসলাম শিক্ষা বই, মাসিক মদিনা আর নিয়ামুল কুরান, এই জ্ঞান দিয়ে বিচার করতে আসে বছরের পরে বছর ইসলাম বিশ্লেষন করে আসা জিহাদীদের? এত্তগুলো কিউট

যেই না মডারেটদের ইসলামি মূলধোন নিয়ে টান পড়ে, এরা ডিনায়াল মোড এ চলে যায়।7eff4A

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইসলামে কড়া কয়েকটা লাল-নীল-বেগুনী মডুর খুব দরকার। মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদের ফতোয়াটাকে এখন পর্যন্ত আমি শুভবুদ্ধির উদয় হিসেবেই দেখছি। যদিও, অনেক মমিন বান্দা এই ফতোয়ার বেজলাইন হিসেবে ব্যাবহৃত আয়াতটিকে অবশ্যমান্য হিসেবে ভাবছেন না, এবং ন্যায্য ভাবে। মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

সমস্যা ঐ যে, ইউনিভার্সাল একটা বুলি, "ইসলাম রিফর্ম করা যাবে না"। ১৫০০ বছর ধরে, ইসলাম আনঅফিশিয়ালি অন্তত ১৫০০ বার রিফর্ম হয়েছে ; ইজমা এবং কিয়াসের নামে রিফর্মেশনই তো চালু রাখা হয়েছে; এডাপ্টেশন এবং এডজাস্টমেন্ট আমরা এই ভারতীয় উপমহাদেশেই গত ৮০০ বছরে দেখেছি; এই নদীয়াতে মুসলিম শাসকের ছত্রছায়াতে শ্রীচৈতন্যের উত্থান হয়েছে; কিন্তু, এগুলো সব পুবে হয়েছে। ইসলাম মিডলইস্টে স্থবির মধ্যযুগে থেকে গ্যাছে এবং তারাই ইসলামের পৃষ্ঠপোষক, রিফর্ম করলেই যাদের মূলে টান পড়বে, তাই অফিশিয়াল রিফর্মেশন হবে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন ইসলামী খিলাফত ফাইনালি ভাংলো, ততদিনে ইসলাম বাসা বেঁধেছে ইউরোপে, সেখানে কোথায় তারা এডাপ্টেড হবে, তারা আরো বেশি অর্থোডক্স হয়ে গেলো, এবং ইউরোপ ভেবেছিলো হয়তো, ক্রুসেড কতকাল আগে শেষ হয়ে গ্যাছে, মুসলিমদেরও আর তেমন কিছু নেই, মানবতা দেখাই, যা চাইছে দিয়ে দিই, তাছাড়া তাদের সামনে তখন জরুরী শত্রু, ওয়ার ক্রিমিনালস। গোঁড়া ইসলাম লালিত হতে লাগলো ইউরোপেই।

ফাইনালি সময় হয়েছে, গত ২০ বছরে ধরে চলছে, উপমহাদেশে এত বছর ধরে লালন পালন করা হয়েছে মাদ্রাসার নামে অর্থোডক্স ইসলাম, আফগানিস্তানে তালিবান সবাই দেখেছে। কিন্তু, তাবলিগ এর অন্তরালে কি হচ্ছিলো কেউ খেয়াল করে নি সেভাবে। তাবলীগ একটা মাধ্যম, যেখানে সর্বস্তরের জনতা যায়, ফকির থেকে কোটিপতি, ১০ বছর থেকে ৯০ বছর, তাবলীগে বরাবর ইউরোপিয়ান কনভার্টেড বা ইউরোপিয়ান উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভুতরা আসতো ছোট থেকে দেখছি, বাংলাদেশে এমন বড় নেটওয়ার্ক আনপ্রোটেক্টেড।

তাবলীগ শেখাতো ওদের মত অর্থোডক্সি; বুরখা শুধু পরলেই হবে না, হাতে গ্লাভস, পায়ে মোজা এবং নিকাবও থাকতে হবে; সুন্নত পালন করতেই হবে; ওদের নির্দিষ্ট ধারা বা মতের নির্দিষ্ট কিছু কিতাব ছিলো, ওরা ঊর্দু পছন্দ করতো ইত্যাদি। কিন্তু এই ফরেনার তাবলীগিরা নিয়ে এলো,অন্য সমস্ত কিতাবের খোঁজ, আরো বেশি অর্থোডক্সি, এতটাই অর্থোডক্সি, অলমোস্ট জিহাদি, প্রচুর ইংরেজী মোটা মোটা বইতে ইসলাম এনালাইসিস। এই যে তাবলীগের ফেরে পড়া ইন্টেলিজেন্ট ইনোভেটিভ ২০ বছরের একটা ছেলে, যে ইসলামকে ধ্যান জ্ঞান মনে করছে, তার অন্যকে চমকে দেয়ার একটা ইচ্ছা তৈরী হচ্ছে, পাগলের মত পড়ছে; আমরাও তো পড়ি তাই না?

২৩ বছরের ডাইলখোর মেটাল গিটার শেখা এক তরুণ তাবলীগী ইসলামে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো, প্রেম করতো পাড়ার মেয়ের সাথে বিয়ে করে ফেললো, কারণ প্রেম করা হারাম। সে বছর ৪/৫ বছর পরে সে একটা আইটি ফার্ম দিলো; তাবলীগ, ইসলাম এনালাইসিস, আইটি একসাথে চলছে। ততদিনে বউ এর নাম পর্দায় ঢেকে ফেলেছে, ফর্মে লিখতে গিয়ে লেখে উম্মে হামজা, হামজার মা (হামজা ওদের ছেলের নাম); নিজের নামও হয়তো এখন ক্লোজ সার্কেলে আবু হামজা, হামজার বাবা। এক কথায়, তরুণ সমাজে প্রবল অর্থোডক্স ইসলাম চাষ হচ্ছে। এই অর্থোডক্সি থেকেই অর্থোডক্স জিহাদের চাষও হচ্ছে। এই তরুণ বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত আইটি ব্যাবসায়ী এবং একই সাথে জিহাদী ভাবগুরু, সে বছর কয়েক আগে অন্তত ১ বছরের জন্যে জেলে ছিলো, এখনো ডিবি'র নজরবন্দী।

২০-৪০ এর মধ্যে বয়সের এমন অনেক মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানকেই আস্তে আস্তে জিহাদী ঘরানার অর্থোডক্সির পথে যেতে দেখেছি তো, অনেকেই দেখেছেন গত ১০/১২ বছরে। আমাদের জেনারেল মডারেট ইসলামের সেই বুলি, "ইসলাম রিফর্ম হবে না, করা যায় না", সেটা এরা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিসের ব্রেইন ওয়াশ? এরা নিজেরা বুঝে এসব করে। আমাদের এদিকের মডারেট মুসলিমদের মধ্যে ডিনায়াল, আর উপমহাদেশীয় বা ইউরোপীয় অমুসলিমদের পলিটিকাল কারেক্টনেস, এদেরকে বাড়তে দিয়েছে।

রিফর্মেশন তো হতেই হবে। তবে আর সবকিছুর মতই, চুড়ান্ত পর্যায়ে না গিয়ে সম্ভাবনা নেই। আমি আপনি মুষ্টিমেয় প্রিভিলেজডরা এসব চিল্লিয়ে হবে না। সাধারণ, আরামপ্রিয়, সুবিধাবাদী, কমফোর্ট জোন এ বসে হারাম হালাল গরু বা উটের কাবাব দিয়ে হারাম মদ খেতে থাকা মুসলিমরা যখন পাইকারী শিকার হতে থাকবে তখন আপসে আপ রিফর্মেশন হতে থাকবে। কিন্তু প্রচুউউউর রক্ত-লাশ-অশ্রু সামনে। ইউরোপকে শুধরাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দরকার পড়েছিলো। মুসলিমদের শুধরাতেও এমন Exodus দরকার পড়বে। তার আগে কিছুতেই শুধরাবে না, কিছুতেই না, এমন চলতেই থাকবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমার পর্যবেক্ষনও মোটা দাগে এমনই। শেষ অনুচ্ছেদটা এখনও কি বদলানোর সুযোগ নেই?

আলাদা পোস্ট দ্যান, আলাপ-আলোচনা হোক।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

আমি তো অতিথী, এডিট করার আর সুযোগ কই?

আমার দৌড় এই এক ঝটকায় কমেন্ট করা পর্যন্তই, সচলায়তন এ লেখা দিতে এত বছর পরেও অস্বস্তি হয়, কোয়ালিটি নিয়ে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই জন্য জ্ঞানী-গুনীরা 'আউট অফ কন্টেকস্ট' সম্পর্কে সাবধান করে। খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

ওহ আপনি পরিস্থিতির কথা বলছেন? না এই সুযোগ আসলে আর নেই। বাংলাদেশ এখন রাইপ গ্রাউন্ড, বহু বছর ধরেই এই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি উপরে যেই লোকটির কথা উল্লেখ করলাম, তার অফিসে আমি ৪ বছর চাকরি করেছি, চোখের সামনে পালটে যেতে দেখেছি, মানসিকতা বা চিন্তা ধারা বুঝতে শিখেছি ওদের।

আরেকটা গোষ্ঠি দেখেছিলাম, তারা টার্গেট করে ম্যাট্রিক বা ইন্টার স্টুডেন্ট এজ গ্রুপকে। ১৮/১৯ বছরের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা বিয়ে করে বসে আছে, কারণ একে তো প্রেম হারাম, দ্বিতীয়ত বিয়ে করে থিতু হয়ে ইসলামের কাজে লেগে যাওয়া যাবে। মডারেট সাধারণ সমাজ এই সমস্ত গোষ্ঠীগুলোকে নিয়েই আহা উহু করেছে, ছেলের আমার ধর্মে মতি হয়েছে, কি সুখের কথা।

তাহলে কিভাবে আর এরা পাল্টাবে? এদের নিজেদের যত্নে আজকের ফ্র‍্যাঙ্কেনস্টাইন একটিভ হয়েছে, আজও তারা কন্সপিরেসি থিওরিতেই বেশি বিশ্বাস করছে, অধিকাংশেরই ধারণা, এসব সাজানো নাটক, ইসলাম বিপদে। এদের উপরে এসে পড়তে হবেই এবং পড়বেও।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ্যাঁ, পরিস্থিতির কথাই বলেছি ভাই। আক্ষরিক অর্থ না। হাসি

অর্থোডক্সী ক্রিশ্চানিটিতেও কম ছিল না, বহুত মানুষ মারা গেছে। আজকের মমিন বান্দারা যেই ব্লাসফেমী আইনের জন্য চার হাত-পা আছড়ে কান্নাকাটি করে, সেই আইনটা মূলত ক্রিশ্চানদেরই অবদান। ক্রিশ্চানিটিতে 'চার্চ' বলে একটা সর্বময় অধীশ্বর ছিল। ইসলামের একটা চমৎকার দিক ছিল এই 'লোকাল অথরিটি' না থাকা। কিন্তু এই বিকেন্দ্রীকরণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ক্রিশ্চানিটির 'অর্থোডক্স ভাইরাস' কেবল চার্চে কেদ্রীভূত ছিল, ইসলামে সেটা জনে জনে বিকেন্দ্রীভূত। ইসলামের 'মানবিক' সংস্করণ একেবারেই নেই এমনটিও না। অদ্ভুতভাবে সেই সংস্করণগুলো টেকে নি, টেকে না। প্রাথমিক ইতিহাসে সেই সংস্করণগুলো বিভিন্ন খলিফার হাতে ম্যাক্রো-লেভেলে 'বিলুপ্ত' হয়েছে, এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মডারেটের কাছে মাইক্রো-লেভেলে হচ্ছে। মন খারাপ

তাহলে কিভাবে আর এরা পাল্টাবে? এদের নিজেদের যত্নে আজকের ফ্র‍্যাঙ্কেনস্টাইন একটিভ হয়েছে, আজও তারা কন্সপিরেসি থিওরিতেই বেশি বিশ্বাস করছে, অধিকাংশেরই ধারণা, এসব সাজানো নাটক, ইসলাম বিপদে। এদের উপরে এসে পড়তে হবেই এবং পড়বেও।

এর চাইতে সোজা কথা আর হতে পারেনা, যারা বোঝার তারা বুঝলে হয়। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ইসলাম মিডলইস্টে স্থবির মধ্যযুগে থেকে গ্যাছে এবং তারাই ইসলামের পৃষ্ঠপোষক, রিফর্ম করলেই যাদের মূলে টান পড়বে, তাই অফিশিয়াল রিফর্মেশন হবে না।

এখানে কিছুটা দ্বিমত করব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশগুলির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল সেকুলার জাতীয়তাবাদী শক্তি; আলজেরিয়ার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট, মিশরের গামাল আব্দেল নাসের, সিরিয়া-ইরাকের বাথ পার্টি, প্যালেস্টাইনের পিএলও (এমনকি ইন্দোনেশিয়ার সুকারনো) - এরা সবাই ছিলেন বাম-ঘেঁষা সেকুলার জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ/দল। এদের দাপটে ইসলামপন্থী দলগুলি (উদাঃ মুসলিম ব্রাদারহুড) কোণঠাসা হয়ে থাকতো। রাজনীতিতে ইসলাম এবং ইসলামপন্থী দলগুলিকে প্রশ্রয় দেয়ার অর্থই হল মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন - সেটা এই রাজনীতিবিদরা সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের পরাজয়ের পর ওআইসি-র আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসলামের প্রবেশ ঘটে। ওআইসি ছিল (এবং এখনও আছে) একটা সৌদি প্রজেক্ট; ওআইসি প্রতিষ্ঠার আগে সৌদি আরব (এবং এর গালফ প্রতিবেশী, যেমন, কুয়েত, কাতার, ইত্যাদি) ছিল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নন -ডেসক্রিপট প্লেয়ার; এদেরকে কেউ গুপ্তকেশ দিয়েও পুঁছত না। ওআইসি-র ছায়ায় সদস্য দেশগুলিতে সৌদি ব্র্যান্ডের ইসলাম রপ্তানী হয়েছে; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে introspection এবং আধুনিকতার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব (এখানে ইহুদী এবং খৃষ্টান ধর্মের সঙ্গে ইসলামের একটা প্রধান পার্থক্য), প্লাস অ্যান্টি-অ্যান্টি-ইসলাম জিহাদের মত ইসলামের ইনহেরেনট টেনডেন্সি--যার ফল আমরা এখন ভোগ করছি।

আরেকটা মজার ব্যাপার হল, ১ম মহাযুদ্ধের পর যখন মুস্তাফা কামালের নেতৃত্বে তুরস্কের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকরা রাজতন্ত্র এবং খেলাফতের বিলুপ্তি ঘোষণা করলেন; তখন কিন্তু তুরস্ক বা মধ্যপ্রাচ্য না, খেলাফত রক্ষার জন্য আন্দোলন হয়েছে ভারতবর্ষে (যে দেশ কোনদিন অটোমান সাম্রাজ্য বা ইস্তাম্বুলের খলিফার শাসনাধীন ছিল না)! মুসলমানদের মধ্যে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে গান্ধী যদি খেলাফত আন্দোলনকে ভারতের স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে না দিতেন, তাহলে খেলাফত আন্দোলনও হালে পানি পেত না! আফটার অল, তুরস্কের জনগণ যে খেলাফত এবং সুলতানকে বাতিল করে দিয়েছে, সেই খেলাফত/সুলতানকে রক্ষার জন্য ভারতের মুসলমানরা লাফালাফি করেছে - যা আবারও প্রমাণ করে যে মুসলমানদের মধ্যে সমস্যা আছে!

Emran

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনার তথ্যসমৃদ্ধ মন্তব্য আগেও দেখেছি, সচলে আগে লিখেছেন কি? মধ্যপ্রাচ্যের সেক্যুলার নেতাদের নিয়ে লিখুন না। এই আরব জাতীয়তাবাদী নেতারা কিভাবে রিফর্মেশনের কথা ভেবেছিলেন এবং কিভাবে ব্যার্থ হলেন বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।

হ্যাঁ, মাধ্যমিক ইতিহাসে একলাইনে লেখা ছিল 'তুরস্কে খেলাফতের সমাপ্তি ঘটায় উপমহাদেশেও খেলাফত আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে'। এই ব্যাপারটা কিভাবে ঘটে, তখন মাথা খুঁড়েও বুঝিনি।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

মোক্ষম। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আরও বাকি আছে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ঘটনা তো বুঝলাম না। সম্প্রতি চরম উদাসের একটা লেখায় দেখি মুখফোঁড়ের প্রভাব। আর আপনার লেখায় দেখি চরম উদাসের প্রভাব?

(বলেন তো এই মন্তব্য কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে?)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, উদাসদা আমার চৌদ্দগুষ্টির নাম ভাঙ্গায়া গল্প লিখে। সেই গল্পে আবার আমার চৌদ্দগুষ্টি'র অবমাননাও করে। সেই দুঃখে মনে হয় আমার ভাষায় মস্তকাগুর ভূত ঢুইকা গ্যাছে। তয়, আমারে আবার আইজিপিদার ডর দেখায়েন না। আর উদাস ভদ্রলোকের হইছে কি? খালি পুরানো কুমিরের ছানা বাইর কইরা দেখায়। দেখা হইলে একটু ঠ্যালা দিয়েন তো।

(বন্ধনীভুক্ত প্রশ্ন তদন্তাধীন থাকায় উত্তর দেয়া যাচ্ছে না!)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখায় কোলাকুলি । তবে সতর্কীকরণটা দিয়ে ভালা করেন নাই । কৌতুহলী লোকের আনাগোনা কমে গেছে চোখ টিপি

- আতোকেন

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

খাল কাইটা কুফা আনেন ক্যান। পূর্বকথন দেখেই তো কৌতূহলী'র পালানোর কথা। চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যত দোষ
মডারেটোস?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই মডারেটস বহুদিন সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভাঙ্গিয়ে অধিকার-অধিকার বলে চেঁচিয়েছে। এবার তাদের কর্তব্যের কথাটা মনে করিয়ে দেবার পালা। উইদ গ্রেট পাওয়ার, কামস গ্রেট রেস্পনন্সিবিলিটি। চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।