অন্তরে আজ দেখবো, যখন আলোক নাহি রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৯/০৭/২০১৬ - ৪:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এক কানা কয় আর এক কানা রে
চল এবার ভব পারে
নিজে কানা, পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারং বার
এসব দেখি কানার হাট বাজার

পন্ডিত কানা অহংকারে
সাধু কানা অন্-বিচারে
পন্ডিত কানা অহংকারে
মোড়ল কানা চুগলখোরে
আন্দাজে এক খুটি গেড়ে
জানেনা সীমানা কার
এসব দেখি কানার হাট বাজার

লালন গীতি

_______________________________________________________________________________

পূর্বকথনঃ এই ব্যাপারে কেন আলোচনা দরকার সেটি পূর্বের পোস্টে আলোচিত।


-।। এক ।।-

প্রিয় মডারেটস,
আপনারা দু’দিন পরপর হুজুগ বুঝে মাদ্রাসা আর এনএসইউ পাঠ্যক্রমের ব্যাপারে বড্ড হল্লা করছেন। খুব ভাল, সতর্কতার তাগিদটা নিজেরই থাকা ভাল। তবে কি, নিজেদের এই হল্লার রাজ্যে নিজেরা শুন্ডীর রাজা হয়ে নিজেদের পাঠ্যক্রম আর জীবনাচরণটা টুক করে ঢেকে ফেলছেন ব্যাপারটা খুব ভাল দেখাচ্ছে না। পাঠ্যক্রম বলতে আমি প্রচলিত বাংলা মাধ্যমের পাঠ্যক্রমের কথা বলছি। বিশেষ দু-একটি উদাহরনও দেখাচ্ছি, একটু ধৈর্য ধরে কাছা টাইট দিয়ে বসুন। আপনার কাছার দায় আপনারই, আমার নয়। আমি বড়জোর সেটা ঢিলে হয়ে গেলে আপনাকে জানাতে পারি, সে চেষ্টাই করছি। মন দিলে ভাল, নইলে ভবিষ্যতে কেউ হয়তো সরাসরি কাছায় আঙ্গুল দিয়ে বসবে। তখন যেন বলবেন না- “আগে বুইললে না, মামুর বুটা!”


-।। দুই ।।-

প্রিয় মডারেটস,
আপনারা জেনে থাকবেন, এই উপমহাদেশে 'ইসলামের ইতিহাস' নামে একটি বিষয় আছে, ৯ম শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর মায় এমফিল পিএইচডিও হয় এতে। নামকরণ নিয়ে আমার কিঞ্চিত আপত্তি আছে নামের সাথে বিষয়বস্তুর মিল না থাকায়। আর বড়সড় আপত্তি আছে তার উপস্থাপনের ‘ত্রিভুজ মডেল’ নিয়ে। আসুন একটু পুথি-পত্র ঘেঁটে দেখি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য আইডিয়াল বুকস, ঢাকা কর্তৃক মে-২০১৪ তে প্রকাশিত, প্রফেসর মোঃ হাসান আলী চৌধুরী রচিত এবং বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত “ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি” শীর্ষক বইটি এ মুহূর্তে খোলা আছে। এতে জানা যাচ্ছে-

আবুজার আল গিফফারী একজন তাপস ব্যাক্তি এবং রসুলল্লাহ’র একজন প্রিয় সাহাবী ছিলেন। মুসলমানদের ঐশ্বর্য সঞ্চয় এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি এর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। তিনি প্রচার করতে থাকেন যে ধনসম্পদ সঞ্চয় করার জন্য নয়, এটা জনহিতকর কার্যে ব্যয় করার জন্য। যারা ধন জমা রাখবে তাদের স্থান নরকে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (১ম পত্র)/ হাসান আলী চৌধুরী। পৃষ্ঠা নং-১১৮

এর পরের অংশে এক-একাঞ্চলের গভর্নর কিভাবে তাকে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেন, সেখানে কিভাবে তিনি খলীফার মুখোমুখি হন, খলীফা তাকে বোঝাতে(!) ব্যার্থ হয়ে রাজপ্রাসাদে স্থান(!) দিতে চাইলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং সবশেষে খলীফা কিভাবে তাঁকে নির্বাসন দেন এই বর্ণনা আছে। অনুচ্ছেদের সমাপ্তি টানা হয়েছে এভাবেঃ

এখানে আমরা খলিফা ওসমানের (রা) দোষ খুজে পাই না। রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা খলিফার জন্য অবশ্যকর্তব্য। শান্তি রক্ষার জন্য এবং শরীয়তবিরোধী(!) প্রচারণা বন্ধ করার জন্যই গিফফারীকে নির্বাসন দিতে হয়েছিল।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (১ম পত্র)/ হাসান আলী চৌধুরী। পৃষ্ঠা নং-১১৮

একটি ‘ইতিহাস’ বলে কথিত বইয়ে এমন সরলরৈখিক এবং পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত ছাত্রদের শেখানো ভয়ংকর ব্যাপার। ডিয়ার মডারেটস, ব্রেইন ওয়াশের জন্য আপনারা ইজরায়েলের পিন্ডি চটকান। ওপরে উদ্ধৃত এই বইটা কি ইজরায়েল প্রকাশনী থেকে ছাপা?


-।। তিন ।।-

প্রিয় মডারেটস,
আমার ধর্মনিষ্ঠ বৃদ্ধ পিতার মুখে বহুবার হাহাকার শুনেছি, গজনীর সুলতান মাহমুদ মুসলিমের জন্য কলঙ্ক বিশেষ, যদিও মুসলমানরা নাকি তার লুন্ঠনকর্মকে মহমান্বিত করে। লুণ্ঠন কিভাবে মহিমান্বিত করা সম্ভব এ ব্যাপারটি শৈশব-কৈশোরে আমি কখনোই বুঝিনি। পাঠ্যবইয়ে ঝাপসা ভাষায় সুলতান মাহমুদের নামটুকুই কেবল জেনেছিলাম। এ প্রসঙ্গে পাঠ্যক্রমের বিস্তারিত মনোভাব জানার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য পুথিনিলয়, ঢাকা কর্তৃক এপ্রিল-২০১৫ তে প্রকাশিত, প্রফেসর মোঃ জহুরুল হক ও ড. মোঃ ওসমান গনী কর্তৃক যৌথভাবে রচিত এবং বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত “ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি” শীর্ষক বইটি এ মুহূর্তে খোলা আছে। এতে জানা যাচ্ছে-

অনেক নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক মত পোষণ করেন যে, যে ভারতের ঐশ্বর্য, সম্পদ এবং বৈভব লাভের আশায় সুলতান মাহমুদ ভারতবর্ষ অভিযান করেন। স্মিথের মতে- “His ruling passion seems to have been avarice” অর্থাৎ “অতিরিক্ত ধনলিপ্সাই ছিল তার প্রগাঢ় অভিলাষ।” সুলতান মাহমুদ সামরিক কারণে মন্দির বিধ্বস্ত করেন নি বা কোনও মন্দির তাঁর হস্তে অপবিত্র হয়নি। ধন-রত্নের সন্ধান পেলেই তিনি মন্দিরগুলোতে আক্রমণ চালাতেন। যুদ্ধের অস্বাভাবিক উন্মাদনায় মথুরা, বৃন্দাবন ও সোমনাথ মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু তাই বলে সুলতান মাহমুদকে কোনভাবেই মূর্তি ধ্বংসকারী অথবা লুণ্ঠনকারী হিসেবে পরিগনিত করা যায় না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (২য় পত্র)/ জহুরুল-ওসমান। পৃষ্ঠা নং-১৮

ডিয়ার মডারেটস, এভাবে স্কুল-কলেজে প্রকাশ্যে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ধর্মের নামে সাতখুন মাপ করা শেখালে ব্রেনওয়াশের জন্য কোনও কেমিক্যাল প্রয়োজন আছে কি?


-।। চার ।।-

প্রিয় মডারেটস,
এ কথাটা মিনমিন করে বহুবার বলা হয়েছে, ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত যে ধর্মশিক্ষা দেয়া হয়, তাতে পৃথিবীতে যে ভিন্ন ধর্মের অস্তিত্ব খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার এটি কখনোই শেখানো হয় না। কেউ কেউ পারিবারিক ভাবে বহুত্বের ধারনা পেয়ে যায় বলে এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে(!) আসে না। পারিবার থেকে দূর্বলভাবে বহুত্বের ধারণা পাওয়ারা অনেকাংশেই দ্বিধাদ্বন্দে থাকে। আর যারা পরিবার থেকে এ ব্যাপারে কোনও শিক্ষা পেয়ে আসে না, তারা এ ব্যাপারে জীবনের প্রথম পাঠ পায় স্কুল-কলেজ থেকে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। অন্বেষা প্রকাশন থেকে ২০১৫ সালে পুনমুদ্রিত, শওকত হোসেন অনূদিত এবং চার্লস কিম্বল রচিত- ‘হোয়েন রিলিজিয়ন বিকামস ইভল’ বইটা একটু খুলে দেখি। এতে লেখক জানাচ্ছেন-

কারও নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতি উদ্ধত আস্থার সাথে অন্যের ঐতিহ্যের পাইকারী প্রত্যাখ্যান পরিহাসমূলকভাবেই ধর্মই যে সমস্যা সেই যুক্তিকেই জোরাল করে তোলে। কারও নিজস্ব ধর্মের আদর্শ ভাষ্যের সাথে অন্যান্য ধর্মের স্পষ্টত ত্রুটিপূর্ণ যাপিত বাস্তবতার তুলনা একেবারেই মানবিক ব্যাপার-সকল ঐতিহ্যেই এই প্রবণতা দেখা যায়।

পৃষ্ঠা নং-৩৫

অন্যত্র লেখক আরো জানান-

ধর্ম সমস্যা কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বহু ধার্মিক ব্যাক্তি ধর্ম নয় বরং মানুষই সমস্যা বলে মধ্যমপথ বেছে নেন। এটা কৌতূহলোদ্দীপকভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিরোধীদের প্রায়শ উচ্চারিত বক্তব্যের সাথে মিলে যায়ঃ “অস্ত্র মানুষ হত্যা করে না, বরং মানুষই মানুষ হত্যা করে।”

পৃষ্ঠা নং-৩৯

উল্লেখ্য যে, এই বইয়ে লেখক ধর্মের ‘দূষিত’ হয়ে পড়ার পাঁচটি প্যারামিটার দেখিয়েছেন যা হলঃ

১। পরম সত্য দাবী
২। অন্ধ আনুগত্য
৩। ‘আদর্শ’ সময় নির্ধারণ
৪। লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো উপায়ের যৌক্তিকতা
৫। পবিত্রযুদ্ধ ঘোষণা।

ডিয়ার মডারেটস, এই পাঁচটার কোনটা কি আপনার চোখে পড়ে? সাদা চোখে তো এই পাঁচটা প্যারামিটার গণহারে স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়। এরপরেও ‘আপনারা ব্রেনওয়াশের কোন অবদানকে অস্বীকার করবেন?’


-।। পাঁচ ।।-

প্রিয় মডারেটস,
অবশেষে ভারতের মিডিয়া ব্যাবসায়ি ডাঃ (অবঃ) জাকির নায়েক আইনের মুখোমুখি হবার মতন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খুবই ভাল সংবাদ, বেটার লেইট দ্যান নেভার। প্রিয় মডারেটস, ইনি যে আপনাদের ড্রয়িংরুমের শোভাবর্ধক ছিলেন দিনের পর দিন তখন আপনারা ঠিক কি করেছিলেন? আপনার কৈশোরে অবতীর্ন সন্তানের হাতে ভারতীয় মুভিতারকা ‘সানি লিওন’ অভিনীত সিডি-ডিভিডি পেলে আপনি আঁতকে ওঠেন। সেই একই সন্তানের হাতে ভারতীয় টিভিতারকা ‘জাকির নায়েক’ অভিনীত সিডি-ডিভিডি পেলে কি আপনি আদৌ আঁতকে ওঠেন? অথচ, এখানে তো আঁতকে ওঠার কথা ছিল। আপনি বা আপনারা সজ্ঞানে ঘরের সদর দরজা হাট করে খোলা রেখে যদি এখন ভাঙ্গা ভেন্টিলেটর বা আধভাঙ্গা খিড়কি দুয়ারের দোষ দিলে সেটা বড় অশালীন শোনায়। প্রিয় মডারেটস, আপনার সন্তানটিকে জাকির নায়েকের লেকচার আর পাঠ্যক্রমের একগুঁয়ে স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠত্বের বানী গিলিয়ে আপনি নিজহাতে তাঁর ব্রেনওয়াশ করেছেন। আপনি তিল তিল করে আপনার সন্তানকে বারুদমাখা প্রলেপে ঢেকে দিয়েছেন, আজকে সে বিস্ফোরণের দায় কি কেবল প্রলেপে অগ্নিসংযোগ করা জঙ্গীদের? নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখুন, প্লিজ। সন্তানকে ছোট থেকে অনেক মুসলিম বানিয়েছেন, এবার তাঁকে একটু মানুষ হতে শেখান। ভাল-খারাপের পার্থক্য করতে শেখান। ইসলাম যদি ‘ভাল’ হয়ে থাকে বয়সকালে সে নিশ্চয় ভাল জিনিসটা বিবেক দিয়ে বেছে নেবে। সে সুযোগটা তাঁকে দিতে এত ভয় কেন আপনাদের, নিন্দুকেরা মুখ ফসকে অন্য কিছু সন্দেহ করলে দায়টা কিন্তু আপনারই হবে।


-।। ছয় ।।-

প্রিয় মডারেটস,
আপনাদের বহুল চর্চিত ধর্মটিতে ‘ভাল’ এবং ‘খারাপ’ দুটি পারামিটারই আছে। এটি অন্যান্য সকল ধর্ম সহ যেকোনো মতবাদেই থেকে থাকে, এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই। দিনশেষে মতবাদের অনুসারীদের ‘ব্যাবহার’ দ্বারাই তার ‘ভালোত্ব’ বা ‘খারাপত্ব’ নিরূপনযোগ্য। মতবাদের অনুসারীদের কাছে ভালোটুকু বেছে নেবার, বহুল চর্চা করার, সগৌরবে প্রচার করার এবং সেটিকেই নেতৃত্বের স্থানে নিয়ে যাবার সুযোগ থাকে। প্রকৃতি কিন্তু শূন্যস্থান পছন্দ করে না, আপনারা সেটি না করলে অন্য কেউ করে দেবে। অন্যদের বেছে নেয়া অংশটি ‘ভাল’ নাও হতে পারে, তখন আহারে সোনাটা, আহারে আমার দুষ্টুটা, আহারে আমার বিপথগামীটা বলে কান্ননাকাটি করাটা বড় হাস্যকর লাগে। প্রিয় মডারেটস, আমরা এককালে ‘রসুলের পথে ইহুদি বুড়ীর কাঁটা বেছানো’ বিষয়ক একটি কাহিনী শুনেছি। এমন মানবিক কাহিনী আরো আছে, সেগুলোকে যদি ‘আপনারা’ সম্মিলিতভাবে সবার ওপরে তুলে না ধরেন, তখন ইহা সহীহ নয় বলে কান্নাকাটি একেবারেই অরণ্যে রোদন। প্রিয় মডারেটস, অনেক আগে স্কুলের বাংলা বইয়ে একটি কবিতা ছিল। কবিতার প্রথম চরণ ছিলঃ ‘হাশরের দিনে বলিবেন খোদা, হে আদম সন্তান। আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন, তুমি করো নাই দান।’ এই কবিতা এখন আছে কিনা আমি জানি না। ইদানীং এই কবিতাকে আপনাদের বড় ‘দুনিয়াবি’ মনে হয়। আপনাদের ভাল লাগে ‘বখতিয়ারের’ ঘোড়ার পদশব্দের আড়ালে বহিরাগতের আক্রমণ। বখতিয়ারের ঘোড়া আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে, এখন ঘোড়াকে আহারে বুনোটা, আহারে দুষ্টুটা, আহারে মগজধোলাইটা বলে লাভ আছে? লুসিফারকে ডেকে আনা খুব ভয়ংকর, যাবার আগে আর কাউকে না পেলে সে কিন্তু আহ্বানকারীকে নিয়ে যায়। কদিন পর আপনারাও হয়তো মার্লোর ডঃ ফস্টাসের মত বুক চেপে ধরে আর্তনাদ করবেন- “আআহ, স্ট্যান্ড স্টিল! কাম নট লুসিফার থুক্কু কাম নট বখতিয়ার!” ফস্টাসের মেয়াদোত্তীর্ন আর্তনাদে লুসফারের মন গলেনি, আপনাদের আর্তনাদেও বখতিয়ারের মন গলবে না। হয়তো এখনও সময় আছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হবার আগেই নিজের ভাল নিজে বুঝুন, প্লিজ। সন্তানের ভালোর জন্য প্রশ্ন কিনে দেয়া থেকে অনেক কিছুই তো করলেন, এবার অনুভূতিটাকে একটু ভাল কাজে লাগান।


-।। সাত ।।-

প্রিয় মডারেটস,
আপনারা বিভিন্ন সময়ে সংখ্যাধিক্যের হেতু নানান নাগরিক অধিকারেও আপনাদের একক আধিপত্যের কথিত ‘ন্যায্য’ দাবী জানান। উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি। আপনারা সংখ্যাধিক্যের ‘দায়িত্ব’ বুঝে নেবার প্রশ্ন আসলে কোরাসে “আয় তব সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি, পালাব গুঁড়ি গুঁড়ি, বাঁধিব তান” গাইতে গাইতে পালিয়ে যান কেন? প্রিয় মডারেটস, চোখ বন্ধ করে থাকলে প্রলয় বন্ধ হয় না। এভাবে ‘দায়িত্ব’ এড়ানোর প্র্যাকটিসটা আপনারা বহুদিন ধরেই করে আসছেন, সেটা করছেন আপনার সন্তানের সামনেই। আপনার এই শিক্ষা অক্ষরে অক্ষরে ধারন করে আপনার সন্তানেরা তো কোনও ভুল করছে না। তবে ‘ব্রেনওয়াশ’ বা ‘বিপথগামীতা’ ইত্যাদির উৎস নিয়ে কেন এ মিছে ছলনা?

প্রিয় মডারেটস, অন্যকে লাইনে আনতে গিয়ে মিটারগেজ লাইনে ব্রডগেজ কিংবা ট্রামলাইনে পাঁচটনী ট্রাক অনেক জুড়েছেন। এবার নিজে একটু লাইনে আসুন, প্লিজ।


সতর্কীকরণঃ


[ লেখাটিকে আমি অনুভূতি প্রবণ বলে ঘোষণা করলাম। মডারেটবৃন্দের কেউ যদি ক্যাঁক্যাঁ করে লাদি ছড়াতে আসেন তবে জানবেন- আমার কিন্তু অনুভূতি আহত হচ্ছে, সাবধান! বাকিদের যৌক্তিক আলোচনার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ]

০৮.০৭.২০১৬
বাংলাদেশ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সন্তানটিকে জাকির নায়েকের লেকচার আর পাঠ্যক্রমের একগুঁয়ে স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠত্বের বানী গিলিয়ে আপনি নিজহাতে তাঁর ব্রেনওয়াশ করেছেন। আপনি তিল তিল করে আপনার সন্তানকে বারুদমাখা প্রলেপে ঢেকে দিয়েছেন, আজকে সে বিস্ফোরণের দায় কি কেবল প্রলেপে অগ্নিসংযোগ করা জঙ্গীদের? নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখুন, প্লিজ। সন্তানকে ছোট থেকে অনেক মুসলিম বানিয়েছেন, এবার তাঁকে একটু মানুষ হতে শেখান। ভাল-খারাপের পার্থক্য করতে শেখান।

চলুক

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আঙ্গুলুঁচায়া লাভনাই, চেনাজানা মডারেটগুলারে এট্টূ লাইনে আনার এন্তেজাম করেন। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

জাল হাদিসের একটা লিস্ট দেখেছিলাম এক সময়। লেখক (মোমিন মুসলমান অবশ্যই) বলতে চেয়েছেন এই হাদিস গুলো সবই জাল অর্থাৎ এগুলো কোনভাবেই সহিহ নয়। সেই হাদিস গুলোর মধ্যে দেখলাম আছে
কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র
জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চিন দেশে যাও
আসল কোরবানী হচ্ছে নিজের ভেতরের পশু সত্ত্বাটিকে কোরবানী দেওয়া ইত্যাদি।
আধুনিক মূল্যবোধের সাথে যা যায় এরকম উপাদানতো ধর্ম থেকেই ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। ধর্ম দিয়ে, ধর্মের ভালো দিয়ে সত্যি করে আর কতখানি ভালো সম্ভব। আগের আমলের শবে বরাতের হালুয়া রুটি একটা উৎসবের আমেজ আনতো এখন শুনি এটাও বেদাত। সামাজিক উৎসব গুলোও যে মানুষকে পরস্পরের কাছে আনতো তা বেদাত বলেই বাদ পড়ে যাচ্ছে। মানুষ আরো বেশি মুসলমান হতে চাইছে আর হয়ে উঠছে জঙ্গী। আপনার সাবধান বাণী শোনার কান মডারেটসদের ক’জনের আছে সন্দেহ। লেখাটা অসাধারন লাগলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, জাল হাদীসের চারখন্ডের একটা বিশাল সংকলন পেয়ে লাফাতে লাফাতে কিনছিলাম। ভাবছিলাম, এতদিনের খুঁতখুঁত লাগা হাদিসগুলো নিশ্চয় জ্ঞানীগুণীরা ঘ্যাচাং করে রেখেছেন। খুলে আপনার মতই আশাভঙ্গ হয়েছিল। পরিচিত যত 'মানবিক' এবং 'কল্যানধর্মী' হাদিস ছিল, প্রায় সব ঘ্যাচাং। ভয়াবহ রকমের 'অমানবিক' বিধান গুলো বহাল তবিয়তে সহীহ। বিশাল একটা ধাক্কা খাইছিলাম ঐদিন। ইয়ে, মানে...

ভাল লেগে লাভ নাই। দিনশেষে আপনি আমার লেখা পড়েন, আমি আপনার লেখা পড়ি। দুজনেই নিজেদের জানা জিনিসগুলোই আরেকবার রিভিশন দেই। আর মডারেটগণ দলে দলে জাকির নায়েকের সাথে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ভাংতে হাত লাগায়। মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

ঠিকই বলেছেন দিনশেষে বিষয়টা সেরকমই দাঁড়ায়। মন খারাপ

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

দাদা, আমাদের প্রিয় মডারেটস কিছুতেই জেনে বুঝে পড়তে রাজী নন। কুরান এবং হাদিসের নামে বুদ্ধ বা মহাবীর এর বক্তব্যও যদি চালিয়ে দেয়া যায়, এরা সোনামুখ করে মেনে নেবে। আর যেই না আসল রূপ তুলে ধরা হবে, তখন বলবে, এত বোঝার দরকার কি, ঈমান থাকাটাই আসল। ইসলামকে বাই ডিফল্ট গান্ধীবাদ এবং কমিউনিজম এর সংমিশ্রণ ভেবে আনন্দ পাওয়াটাই তো মডারেটিজম। তাফসির তো দূরে থাক, যারা একটিবারও বাংলা অর্থ না দেখে শতশতবার কুরান খতমের সওয়াব নেয়, এমন সাধু বার্তায় তাদের টনক কি নড়বে?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চরম উদাস, একদিন কইছিলেন- "জানি লেখালেখি করে প্রায় কিচ্ছু হবে না। তবু, ভবিষ্যতে আরো খারাপ সময় আইলে সন্তানের সামনে মিনমিন কইরা কইতে পারুম যে- চুপ আছিলাম না। এর বেশি কিছু আপাতত সাধ্যে নাই" (হুবহু উদ্ধৃতি নয়, স্মৃতি থেকে নেয়া মূলভাব)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধুসর জলছবি এর ছবি

প্রিয় মডারেটস, আপনার সন্তানটিকে জাকির নায়েকের লেকচার আর পাঠ্যক্রমের একগুঁয়ে স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠত্বের বানী গিলিয়ে আপনি নিজহাতে তাঁর ব্রেনওয়াশ করেছেন। আপনি তিল তিল করে আপনার সন্তানকে বারুদমাখা প্রলেপে ঢেকে দিয়েছেন, আজকে সে বিস্ফোরণের দায় কি কেবল প্রলেপে অগ্নিসংযোগ করা জঙ্গীদের? নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখুন, প্লিজ। সন্তানকে ছোট থেকে অনেক মুসলিম বানিয়েছেন, এবার তাঁকে একটু মানুষ হতে শেখান। ভাল-খারাপের পার্থক্য করতে শেখান। ইসলাম যদি ‘ভাল’ হয়ে থাকে বয়সকালে সে নিশ্চয় ভাল জিনিসটা বিবেক দিয়ে বেছে নেবে। সে সুযোগটা তাঁকে দিতে এত ভয় কেন আপনাদের

কিভাবে আমাদের সন্তানেরা এমন হয়ে গেল বলে অবাক হওয়া পাবলিকদের উপর প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছিলাম কদিন ধরে। আমার সব কিছু ভাল, আর বাকিরা যা করে সব ভুল, আমি মানুষ খুন করলেও স্বর্গে যাব, আর বাকি ধর্মের সবাই সাধু হলেও নরকে, এই জিনিস শিখে যারা বড় হয় তাদের জন্য জঙ্গী হওয়া এমন কি কঠিন ব্যাপার? নিজেদের ধর্ম শ্রেষ্ঠ, মুসলমানরাই শেষ পর্যন্ত রাজত্ব করবে, সারা দুনিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিস শেখানো বন্ধ না হলে জঙ্গীর উৎপাদন বন্ধ হবে না কোনদিন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মাফ করবেন, আমি কিন্তু জাকির নায়েকের গুণমুগ্ধ ভক্ত। মনখ্রাপ হইলেই দেখি। চাল্লু

শোনা কথা না, উনার একটা ভিডিওর কথা পষ্ট মনে আছে। উনারে কথিত 'লাইভ' অনুষ্ঠানে এক পাপিষ্ঠ বান্দা জিগাইছিলঃ "তালেবান অথরিটি যে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি গুঁড়াগুঁড়া কইরা দিল, এই সম্পর্কে আপনার মতামত কি?" আমরা নইড়া-চইড়া জামাকাপড় ঠিকঠাক কইরা বসলাম, নিশ্চয় ভাল কোনও কাউন্টার দিবে। উনি জবাব দিলেনঃ "রাষ্ট্রীয় অথরিটি রাষ্ট্রের জন্য খারাপ মনে করলে ড্রাগস ধ্বংস করে দেয় না? এটাও একই ঘটনা।" আজকে যে মমিন বান্দারা জাকির নায়েকের কথিত 'বাকস্বাধীনতা' নিয়ে কেঁদে জারজার হচ্ছেন, তাদের জন্য কোনও দুনিয়াবি ব্যাখ্যার দরকার নেই। জাকির নায়েকের এই ফতোয়াটিই মুখের ওপর ছুঁড়ে ফেলা উচিৎ। অবশ্য, জাকির নায়েক যদি অভ্যাসবশত এই লেকচারটিকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে ডাহা অস্বীকার করে বসেন, মমিন বান্দারা অবলীলায় সেটিই মেনে নেবেন। ইয়ে, মানে...

শ্রেষ্ঠত্বের দাবীটাই একটা অশালীন কথা, সেখানে এটা পবিত্রজ্ঞান করা এত মানুষ দেখে আমি আশাবাদী নই। মন খারাপ

পুনশ্চঃ আপনি তো আর 'পাবলিক প্রোপার্টি' নন, লেখেন না কেন? খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধুসর জলছবি এর ছবি

হো হো হো দেঁতো হাসি
লিখে কি হবে জাতীয় হতাশায় ভুগছি অনেকদিন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কস্কি মমিন!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শিক্ষানবিস এর ছবি

হ্যাঁ আসলেই অনেক মুসলমান গজনির সুলতান মাহমুদের মতো মানুষকে মহিমান্বিত করে (যদিও হয়ত জানে না ইবনে সিনা'র জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের কারণ ছিল এই মাহমুদ)। তবে ইসলামের "শান্তজ্জোল" দৃষ্টান্ত অনুসরণকারী যেসব মুসলমান আছে তাদের উপরই ভরসা রাখি। আশাকরি অন্তত বাংলাদেশে "শান্তজ্জোল" মুসলমানদের হাতে "সম্মোহিত" মুসলমানদের পরাজয় ঘটবে। কাজটা পুরোপুরি বিশ্বাসী মুসলমানদেরকেই করতে হবে। আমি নিজে নিজেকে কেবল "সাংস্কৃতিক মুসলমান" মনে করি, যেহেতু ইসলামের মেটাফিজিক্যাল জিনিসগুলো আমি মুসলমানদের মতো করে "বিশ্বাস" করি না। এই সাংস্কৃতিক মুসলমান হিসেবে আমি যেটুকু করতে পারি সেটা হচ্ছে ইসলামকে সাংস্কৃতিকভাবে দেখা, এবং এই সাংস্কৃতিক ইসলাম নিয়ে গবেষণার পরিবেশ তৈরি করা। মধ্যযুগে ইসলামি বিশ্বে ইহুদি, খ্রিস্টান, ও মুসলমানরা যে-রকম একসাথে কাজ করতে পারত, বর্তমানেও আচারনিষ্ঠ মুসলমান ও সাংস্কৃতিক মুসলমানরা একসাথে কাজ করতে সক্ষম হোক এটাই চাওয়া।

গতকাল একটা বইয়ে পড়ছিলাম: মুসলমানরা ইতিহাসে তিন তিন বার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা সংস্কৃতিকে একেবারে নিজের করে নিতে সক্ষম হয়েছে:
(১) আরবের মূর্তিপূজকরা তাদের শত্রু বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের একেশ্বরবাদ সম্পূর্ণ নিজের করে নিয়েছিল,
(২) ইরানিরা আরবদের ধর্মকে শিয়া'র মোড়কে নিজের করে নিয়েছিল,
(৩) আরব-ইরানিরা একত্রে মিলে প্রাচীন গ্রিক দর্শন ও বিজ্ঞানকে নিজেদের দর্শন ও বিজ্ঞান করে নিয়েছিল।
এই তিনবার যদি মুসলমানরা সফল হয়ে থাকতে পারে, তাহলে এবারও হয়ত পারবে। বর্তমান যুগে মুসলমানরা আধুনিকতাকে নিজের করে নেয়ার পরীক্ষা শুরু করেছে। দেখা যাক কী হয়। কাজী আবদুল ওদুদের একটা কথা শেয়ার করে শেষ করি:

"একটা বড় সম্প্রদায় হিসেবে এই-ই মুসলমানের চরম দুর্ভাগ্য যে, তার যে সমস্ত পরমাত্মীয় পূর্ণাঙ্গ মনুষ্য-প্রকৃতি নিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও গভীর আত্মবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদের পানে চেয়েছেন তাঁদের শান্তজ্জোল দৃষ্টান্তের চাইতে, যাঁরা ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদের দীপ্তিতে অন্ধ হয়ে সম্মোহিত হয়ে আস্ফালন করেছেন তাঁদের প্রচণ্ডতা, তাকে আকৃষ্ট করেছে বেশী, আর আজ পর্যন্ত সেই আকর্ষণই তার পক্ষে প্রবলতম।" ["সম্মোহিত মুসলমান", শাশ্বত বঙ্গ]

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইবনে সিনাকে ইসলামী সিলেবাসে কেবল একটা ব্রান্ডনেম হিসেবেই পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়, বিস্তারিত বললে 'প্রশ্ন' ওঠার সম্ভাবনা থাকে। ইবনে রুশদের ক্ষেত্রেও তাই। মুতাজিলা দর্শন যখন (ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামের ইতিহাস) সিলেবাসে পড়ানো হয়, তখন এক পৃষ্ঠা আলোচনার বিপরীতে অন্তত চার পৃষ্ঠা সমালোচনা থাকে। যতগুলো পাঠ্যপুস্তক দেখেছি, একই অবস্থা।

দেখা যাক, সেই সক্ষমতা আমরা দেখে যেতে পারব- সে সম্ভাবনা কম। আমরা বড়জোর সম্ভাব্য ক্ষেত্রটা যেন আরো বৈরী হয়ে না ওঠে সে চেষ্টাটুকু করে চলেছি।

"স্বাশত বঙ্গ" স্নাতক পর্যায়ে (বাংলা বিভাগে) পাঠ্য আছে। এটি আদৌ পড়ানো হয় কিনা সন্দেহ আছে। আমি একটি সরকারী কলেজের দর্শনের শিক্ষককে ভরা মজলিসে দম্ভভরে আলোচনা করতে দেখেছি এই বলে- "আমি সেক্যুলার মতবাদ কিংবা দর্শন ইত্যাদি পড়াবার আগে ভালভাবে বলে দেই এগুলো কেবল সিলেবাসে আছে তাই পড়াচ্ছি। আমি নিজেও এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না, তোমরাও ঘামিও না।" (তুলনীয়ঃ জীববিজ্ঞান ক্লাসে বিবর্তন পড়াবার সময়ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ঠিক একই কাজ করেন।) এসব শিক্ষকদের জ্যামিতিক হারে অন্ধকার ছড়াতে দেখে কেবলি হতাশ হয়ে পড়ি। কাজী আবদুল ওদুদ কিংবা মোতাহের হোসেন চৌধুরীকে বাঙালি মুসলমানেরাই আদৌ স্বীকার করেনা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ঘুমকুমার এর ছবি

এই লেখাগুলো মডারেটগণ কখনওই পড়ে দেখেন না। সামনা সামনি বলতে বা যুক্তি দিতে গেলেও যেমন গলার রগ ফুলিয়ে তেড়ে ফুড়ে মারতে আসেন যে আর কিছু বলার সাহস হয় না।

ছোট ভাইয়ের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের বিবর্তন বিষয়ক চ্যাপ্টারে দেখলাম শেষ প্যারায় সুন্দর করে লেখা আছে "যদিও এই বিষয়ে বিতর্ক আছে এবং সব বিজ্ঞানী বিবর্তন মানেন না" (স্মৃতি থেকে লিখলাম এই ধরণেরই কিছু একটা আছে)। ধর্ম বইয়ে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে মূর্তি পূজক, ঈশ্বরের সন্তানে বিশ্বাসীরা কিভাবে সরাসরি জাহান্নামে যাবে!

চারিদিকে হিজাবের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। পরিচিত অনেকেই আজকাল ফোন করে হ্যালো বলার বদলে স্লামালিকুম বলেন! বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিয়ে খুবই উৎসাহী একজন আত্মীয় যখন বলেন যে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই কারণ কুরআনে সেরকম কিছু বলা নাই তখন খুবই হতাশ লাগে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। হ, আজকাল একেবারেই চুপ মাইরা গেছি। বইলা কোনও লাভ নাই। উনারা শখ করে ইয়েমারা খেতে চান তাতেও আমার আপত্তি নাই, উনারা সবাইরে নিয়ে খেতে চান এইটা বড় অশ্লীল লাগে! মন খারাপ

২। রাখেন আপনার বিবর্তন, ফিজিক্সের মাস্টাররেই কলা অনুষদের পিস্টিভি দেখা মাস্টররা জিগায়ঃ "শমসের আলী কৈছে মিরাজ দিয়া দিয়ে নাকি রিলেটিভিটি প্রমাণ করা যায়? আমারে একটু রিলেটিভিটি শিখায় দ্যান।" এই গল্প শুইনা পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমিই থতমত খাইয়া গেছি। ইয়ে, মানে...

৩। সবুর করেন। মঙ্গল গ্রহ ব্যাপারটা আপাতত "আউট অফ কনটেক্সট"। যদি পানি 'পাওয়া' বা 'না পাওয়া' কোনো একটা নিশ্চিৎ হয়, পরের দিন ইনশাল্লাহ এই সংক্রান্ত আয়াত খুঁজে পাওয়া যাবে। টেনশন নিয়েন না। দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

গুরু গুরু
এইসব লেখা পড়ে মন আশান্বিত হয়ে ওঠে - এখনও সমস্তটাই নষ্ট হয়ে যায়নি বলে। কিন্তু, কয়টা আশা আর বাস্তবের মুখ দেখে! তবু, আঁধারে যে কটা প্রদীপ যতক্ষণ জ্বলতে দেখি, ততক্ষণই ভালো।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই ভারসাম্য বোধহয় প্রকৃতিতে বরাবরই ছিল, কেবল ভিন্ন ভিন্ন রূপে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

কিঞ্চিত সংযোজন।

ইসলামের ইতিহাস আর মুসলমানদের ইতিহাস এক বস্তু নয়। ইসলামের ইতিহাস মানে ধর্ম, দর্শন ও জীবনাচরণ হিসেবে ইসলামের বিবর্তন ও প্রাকটিসের ইতিহাস। আর মুসলমানদের ইতিহাস মানে ইসলাম মানা (বা এট লিস্ট নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করা) শাসকদের শাসনামলের ইতিহাস। বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাসের নামে মুসলমানদের ইতিহাস পড়ানো হয়, তাও আবার একটু দূরের (ভৌগলিক ও কাল উভয়ার্থে)

আইডিয়াল বুকস হচ্ছে জামায়াতের অনেকগুলো পাবলিশিং হাউজের একটা। আর হাসান আলী হচ্ছে জামায়াতের পেইড লেখকদের একজন। বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় যখন টেক্সট বা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে কোন বই সাজেস্ট করে তখন এইসব অদরকারী তথ্যগুলো যাচাই করার দরকার বোধ করে না। তারা সম্ভবত বিবেচনা করে কার কাছ থেকে কী পরিমাণ কমিশন পাওয়া যাবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নাম (বা নিদেনপক্ষে একটা ছদ্মনাম) ব্যাবহার করলে আলোচনায় স্বস্তি লাগে, ভাই। হাসি

হুমম, এবং সেই পার্থিব শাসকদের ঘটনাক্রমকেও ঐশী মোড়কে গেলানো হয়ে থাকে। ফলে ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সেও গড়বড় হয়ে যায়। আর, ইসলামের বিবর্তন ও প্রাকটিসের ইতিহাস পড়িয়ে ফেললে তো বহুযুগ ধরে সম্মোহিত করে রাখা মুসলমানকে আর জাকির নায়েকের লেকচার গেলানো যাবে না। চাল্লু

আমার হাতের কাছে পাওয়া রেফারেন্স দিয়েছি। অন্যান্য বইয়ের ভাষ্যও কমবেশি একই। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অস্বস্তির কিছু নেই। কে লিখল সেটা গুরুত্বপুর্ণ না, কী লেখা হলো সেটা গুরুত্বপুর্ণ।

বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে অজকুল অনেক এগিয়ে আছে। ফলে হাতের কাছে যা বই পাবেন তাদের বেশির ভাগের কনটেন্টে মিল পাবেন।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।