ভোক্তা অধিকার এবং অটবি

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: শুক্র, ৩০/০১/২০০৯ - ১১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিন পনের-বিশ আগে আমার মা বেশ উত্তেজিতভাবে আমাকে জানালো, বাণিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে অটবিতে ৩৫% ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে।

উত্তেজিত হওয়ার অবশ্য কারণ আছে, গল্পের বই আর আমার বোনের জামাকাপড়ে বাসা সয়লাব হয়ে আছে - এগুলিকে অবিলম্বে বাক্সবন্দী না করলে বাসায় বসার জায়গা পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই তাই একটা বুকশেলফ আর একটা আলমারি কেনার পরিকল্পনা চলছে আমাদের বাসায়। এদিকে কাঠের জিনিশের যা দাম, আর কিনে জিতার সম্ভাবনা এত ক্ষুদ্র যে শুরুতেই কাঠের আসবাবের আশা বাদ। মোটামুটি দামে (মোটামুটি মানে যে কম তা না, তবে কাঠের থেকে কম আর কী ) অটবির পার্টিকেল বোর্ডের জিনিশই তাই ইদানিং কালের ভরসা।

আমার বাসার খুব কাছেই অটবির একটা শোরুম আছে। পরদিন সন্ধ্যাতেই আমাকে বাসা পাহাড়ায় রেখে আমার মা এবং বোন সরেজমিন তদন্তে সেখানে গেল। আমি বাসায় বসে বসে ভাবছি, না জানি কত কী নিয়ে ফেরত আসবে। সেগুলি কোনটা কোথায় রাখবো তা নিয়েও চিন্তা শুরু করে দিয়েছি। আধা ঘন্টা পর দেখি দু'জন ফেরত এসেছে মুখ কালো করে।

অটবির ডিসকাউন্ট শুধু মাত্র ওদের কাঠের আইটেমের ক্ষেত্রে, তাও সব আইটেমে ৩৫% ডিসকাউন্ট না। আইটেম ভেদে ডিসকাউন্টও ভিন্ন - সর্বোচ্চ ৩৫% পর্যন্ত। আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই আমার মা ঠিকমতো বিজ্ঞাপনটা পড়েনি। মা'কে উল্টা একটু বকলাম, ঠিকমত বিজ্ঞাপন না দেখে যাওয়ার জন্য।

এর দিন দু'য়েক পরের কাহিনী। হেঁটে আসছি পান্থপথের মোড়ের দিকে, রতন'স ডেন্টাল ক্লিনিকের উলটো দিকে। চোখ আটকে গেল উচুঁতে - অটবির মূল্যছাড়ের বিজ্ঞাপন। এই বাণিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে অটবির ৩৫%পর্যন্ত ছাড়। এই বিজ্ঞাপনের বিশেষত্ব হল, "পর্যন্ত" শব্দটা ৩৫%, অটবি কিংবা "ছাড় " শব্দগুলির তুলনায় বেশ ছোট সাইজের অক্ষরে লেখা - এতোটাই ছোট যে বেশ কিছুটা দূরের থেকে দেখলে আদৌ নজরেই পরে না। এবার আরো একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম, কোথাও কি লেখা আছে যে মূল্যছাড় শুধু কাঠের আসবাবের উপর ? নাহ, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না।

অনেকেই হয়তো বলবেন যে এ'টাই স্মার্ট এডভার্টাইজিং - নিজেদের অফারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অনেক বড় দেখানো, তবে যারা এরকম ভাববেন জানিয়ে দেই, এইরকম কাজতো অনৈতিক তো বটেই, এবং পৃথিবীর কোন কোন দেশে রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সে'দিন টিভিতে ভারতীয় এক চ্যানেল দেখছিলাম। ভারতের টিভি মিডিয়াতে জনসচেতনামূলক প্রচুর ক্লিপ দেখানো হয়। এ ক্লিপটা ছিলো ভোক্তা অধিকার অর্থাৎ কনজিউমার্স রাইট সংক্রান্ত যার বক্তব্য ছিলো যদি কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে এধরণের অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রতারিত করে তাহলে আজই আমাদের অভিযোগ জানান, কারণ এ'টা ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থী।

টিভি এডটা দেখে বেশ দুঃখ লাগলো। আমাদের দেশেও কনজিউমার্স রাইট সংক্রান্ত একটা এসোসিয়েশন আছে, নাম ক্যাব (Consumers Association of Bangladesh )। মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখা যায় তাদের নাম, তাদের সমাবেশের খবর। কিন্তু আদৌ কি তারা কোন ভূমিকা রাখতে পারছে ? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কোন আইন আছে কী না, তাও আমি জানি না।

দেশের উন্নতি, প্রগতির কথা বলতে বলতে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি। এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে ক্রমাগত দেই ভারতের উদাহরণ। এগিয়ে কিন্তু মানুষ একবারেই যায় না, একদিনেই যায় না। এ ধরণের ছোট ছোট কাজ, ছোট ছোট পদক্ষেপেই দেশের, জাতির উন্নতি হয়। এ সত্য বুঝতে আমাদের যতদিন দেরি হবে, যতদিন আমরা নিজেদের পশ্চাৎদেশ উন্মুক্ত রেখে দিবো, ততোদিন আর যাই হই, উন্নত হব না।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

বাটার বিজ্ঞাপনেরও একই অবস্থা। ৫০% ছাড়। যেয়ে দেখেন পিচ্চিদের কিংবা এক্কেরে মান্দাতা ডিজাইনের জুতোর ক্ষেত্রে খালি প্রযোজ্য। ফাউল!!

=============================

সবজান্তা এর ছবি

শুধু কি বাটা ?

কে করে না এই কাজ ? মোবাইল কোম্পানীগুলি বিজ্ঞাপন দেয় অনেকরকমের ফাঁকফোকর রেখে, জিজ্ঞেস করলেই আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় ছোট করে লেখা, *Conditions Applied এর দিকে।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

আগামী এক মাসব্যাপী সচলায়তনে রেজিস্ট্রেশনের সাথে সাথেই অ্যাক্টিভেশন দেয়া হবে না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

এনকিদু এর ছবি

বিজ্ঞাপণে আপনার ভবিষ্যত ভাল । মিস্ত্রীগিরির বিকল্প হাতে থাকল ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনি চ্রম লোক্ষ্রাপ!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

পৃথিবীর কোন কোন দেশে রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ

বিজ্ঞাপনে শব্দের আকার ছোট-বড়ো করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার ট্রিকটি, মনে হয়, সব সভ্য দেশেও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এ নিয়ে কোর্ট-কাছারি কখনও হয়েছে বা হয় কি? তদুপরি, আমার ধারণা, বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ভাষায় সুচতুরতার সাথে ফাঁক রাখা হয় বলে মামলা ফলদায়ী হবার সম্ভাবনা নগণ্য।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি

নাহ।

ফন্ট ছোট বড় নিয়ে হয়তো কিছু বলার নেই। তবে কাঠের আসবাবের কথা বিজ্ঞাপনের কোথাও উল্লেখ না করাটা অন্তত ভারতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে হয়েছে আমার কাছে, ওদের বিজ্ঞাপন দেখে। সুচতুরভাবে সত্য গোপন করে, আংশিক সত্য বলা মিথ্যা বলার চেয়েও বিরক্তিকর।


অলমিতি বিস্তারেণ

tamal এর ছবি

as i am not comfortable in bengali writing, i just comment in english. i am an employee of OTOBI and as per my knowledge this discount offer is not only for wooden furniture. i think some missunderstanding occured because it ia applicable for all furniture but the percentage varies from item to item from 10 to 35%. so would u pls inform OTOBI management so that they can take steps to solve this kind of missunderstanding with the branch manager of respective showrooms

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আপনার মন্তব্য দেখে ভাল লাগলো। আশা করি সবজান্তা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবেন এবং ফলোআপ করবেন।

মন্তব্যের কারণটা বলি। একজন প্রান্তিক ভোক্তা নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ব্লগে লিখলেন, সেই ব্লগ দেখে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকেও গ্রাহকসেবা দেওয়া হচ্ছে -- বাংলাদেশে এটা অনেক ভাল/বড় ব্যাপার বলে মনে করি আমি। এই রকম মিথষ্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই প্রযুক্তি মানুষকে আরো ক্ষমতাবান করুক।

অভিনন্দন আপনাদের দু'জনকেই। আগে দেখেছিলাম আরিফ জেবতিক ভাইয়ের লেখনির কারণে অনেক বড় পরিবর্তণ হতে, এবার দেখলাম তুলনামূলক ভাবে ক্ষুদ্র ব্যাপারেও প্রযুক্তি ও দায়িত্বশীলতার উদাহরণ।

সবজান্তা এর ছবি

দুঃখিত, নানা রকমের ব্যস্ততায় এই মন্তব্য দেখা হয় নি।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য এবং চমৎকার চিন্তার জন্য।

আমার মা গিয়েছিলো বসুন্ধরা সিটির পাশেই অটবির যেই ব্রাঞ্চ সেখানে। নানা রকম ব্যস্ততায় শুধু মাত্র অভিযোগ করার জন্য যাওয়াটাও একটু কষ্ট, আর তাছাড়া ঠিক কে আমাদের এই কথা বলেছিলো, তাঁর চেহারাও এই মূহুর্তে মনে করতে পারবো না, তাই সেখানে অভিযোগ দিয়েও আদৌ লাভ হবে কি না নিশ্চিত নই। তবে আপনি চাইলে অবশ্যই জানাতে পারেন।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

কালো কাক এর ছবি

মন্তব্যটা ভালো লাগলো।
আমাদের দেশের ভোক্তা অধিকার আইন আছে কীনা জানিনা, তবে থাক্লেও বাস্তবায়নে বড় বাধা ভোক্তারাই। আমি যেখানে কাজ করি সেখানে ক্রেতা মতামত যাচাই বা অভিযোগ শোনার জন্য অনেকরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফোন, এসেমেস, চিঠি, অভিযোগপত্র, ফ্যাক্স, সরাসরি কাস্টমার সার্ভিস অফিসার বা যেকোন কর্মী ইত্যাদি মাধ্যমে একজন ক্রেতা তার যেকোন অভিযোগ/ মতামত জানাতে পারেন। কিন্তু শতকরা ৯৮ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্রেতা মুখে মুখে এখানে সেখানে অনেক অভিযোগ করছেন কিন্তু প্রোপার চ্যানেলে না। সুতরাং ভোক্তা কোথায় বঞ্চিত হচ্ছেন বা নিজেকে বঞ্চিত মনে করছেন আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না।
এই ব্যাপারগুলোতে কাস্টমার ইন্টিগ্রেশন জরুরী।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই অব্স্থা তো সবখানেই-- এখানে ওখানে, ইউরোপে, অস্ট্রেলিয়া কোথায় নয়? আপনি সবজান্তা নন, সেটাই বুঝলাম চোখ টিপি

আপনার জন্য হরলিক্স সাজেস্ট করছি-- টলার শার্পার এবং চোখ টিপি

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

বিজ্ঞাপনের ছল-চাতুরীতে সবজান্তা অবাক হইলেন দেইখা মনে শান্তি হইল, বাংলাদেশের মানুষ এখনও "সভ্য"তায় পুরাপুরি বিলীন হয় নাই। এখনও পুরাপুরি "স্মার্ট" হয়া সারে নাই।

ঐসব "সভ্য" দেশে প্রথম আইসা যখন ঐসব জোচ্চুরির বাহার দেখি, তখন সবজান্তার মতন আমিও আবুল, দুই চারবার খপ্পড়ে পড়তে পড়তে বাইচা যাই। এখন এই আমি ধীরে ধীরে "সভ্য"তায় বিলীন হইসি। এখন আমার চোখও ঐসব জোচ্চুরিকে মানাইয়া চলতে অভ্যস্ত, ওইসব আর "অপরাধ" মনে হয় না।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হাচা কথা বললেন ভাইয়া।
চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

পশ্চিমের এডের একটা বড় চালবাজি হইল গিয়া কন্ডিশন এপ্লাই আর মাইক্রোস্কপ দিয়া লিখা থাকে exluding S&H. টিভিতে এড দেইখা ১০ টাকার জিনিষ ওর্ডার দিলে বিল দেওনের সময় দেখি ২০/৩০ টাকা দেখায়। পরে S&H এর মাজেজা বের হইছে S&H= Shipping & Handling মন খারাপ

আমারত মনে হয় যত দুই নাম্বারি আর জোচ্চুরি আমরা শিখছি পশ্চিমাগ কাছ থিকাই।

-সামুরাই

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ভিডিওটা রেলেভেন্ট মনে হইল তাই শেয়ার করলাম
http://www.divinecaroline.com/article/22117/39039

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

বাংলাদেশের ক্রেতাসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণ করার আইন আমার তেমন জানা নাই।
তবে আমি এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয় আইন পড়ার সময় যতটুকু জেনেছি "Mere Gimmick"-কে অনেক সময়েই প্রতারণা হিসেবে প্রমাণ করা যায়না। তাই বিষয়টা আইনগতভাবে কতটুকু প্রতারণা তা নিয়ে তোমার সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না ভাই।
-------------------------------

--------------------------------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।