প্রবাসে মাতৃভাষা

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বুধ, ১২/০১/২০১১ - ১২:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি ভাষা শুধু তার সংস্কৃতির পরিচায়কই নয় বলতে গেলে ভাষাকে ঘিরেই গড়ে উঠে সংস্কৃতির অবকাঠামো।মানুষের আচার অনুষ্ঠান, উৎসব, সামাজিকতা, চাল চলন, বিনোদন সেই অবকাঠামোটির একটা অবয়ব দেয় মাত্র।তাই ভাষার সমৃদ্ধতা যেমন সংস্কৃতিকে পরিপুষ্ট করে তেমনি ভাষার দৈন্যতা সাংস্কৃতিক দৈন্যতারই বহিপ্রকাশ।তবে বাংলাদেশে থেকে পহেলা বৈশাখে ছোটবেলায় বাবার সাথে সাতসকালে হালখাতা খেয়ে কিংবা যৌবনে রমনার বটমুলে এসো হে বৈশাখ গানের সাথে নববর্ষের সুর্যোদয় দেখে, বা পহেলা ফাল্গুনে বাসন্তি রঙের বসন পরে চারুকলার আশেপাশে ঘুরে বেড়িয়ে যে বাংলা সংস্কৃতিকে অনুভব করতে পারিনি তা পেরেছি এই সংস্কৃতির বেদি থেকে থেকে হাজার মাইল দূরে এসে। এটা কিছুটা সেই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বুঝার মত।টাঙ্গাইলের চমচম যে এত মজা তা যেমন বুঝেছিলাম ঢাকায় এসে তেমনি নিজের ভাষা, নিজের দেশ, সর্বোপরি নিজের সংস্কৃতি যে এত আরাধনার তা বুঝেছি পরবাসে এসে। অর্থাৎ সহজ করে বলতে গেলে মানুষ তার ভাষাকে, সংস্কৃতিকে গভীরভাবে অনুভব করতে পারে সেই সংস্কৃতির বৃত্ত থেকে যখন ছিটকে পড়ে।

(১)
বুয়েটে থাকার সময় নব্বই এর দশকের শেষের দিকের কথা। ক্যাম্পাসে তখন সুজয় নামে এক নেপালি বড়ভাই ছিল অসম্ভব সুন্দর গান গাইতেন। নেপালি হয়েও বাংলাভাষার ব্যান্ডসংগীতের গানগুলি এমন ভাবে গাইতেন যে না জানা থাকলে বিশ্বাষ করার উপায় ছিলনা যে সে বাংগালী নয়।সুজয় দার কনসার্টে সবাই চলে আসত অডিটিরিয়ামে সেই সাথে নেপালি ছাত্রছাত্রীরাও। কনসার্টের মাঝখানে সুজয় দা সবসময় একটি বা দু’টি নেপালি গান গাইতেন। সেইসময় দেখার মত এক দৃশ্যের অবতারনা হত, পুরো অডিটরিয়ামের একটি স্থানে জড়ো হয়ে উন্মাদের মত নাচতে দেখা যেত নেপালি ছেলেদের, বিদেশের মাটিতে নিজের ভাষাকে ওরা যেন নিজেদেরকে উজাড় করে দিত তার আরাধনায়।

(২)

কানাডাতে আসার পর থেকেই দেখছি বাংলাদেশের আর ভারতের বাংগালীরা এক সাথে মিলে বাংলা উৎসবের আয়োজন করে। দুই বাংলার শিল্পীদের সম্মেলন কেন্দ্রে পরিনত হয় তখন উৎসবস্থল। ২০০৯ সালে মাঝামাঝি কোন এক সময়ে সেরকমই একটি অনুষ্ঠানে নাটক করার জন্য দলবল নিয়ে গিয়েছি ক্যালগেরীতে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে একজনের বাসায়, আমাদের সমবয়সী, বন্ধুসম।আমরা কয়েকজন মিলে এপার্টমেন্টের নিচে নেমেছি সিগেরেট খাবার জন্য এবং সভাবতই বেশ জোড়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ কানে আসল,

-‘দাদারা কি বাংলাদেশি না কলকাতার ?’

আমরা শব্দের উৎস খুঁজে উপরে তাকালাম দেখি দোতালার বারান্দায় সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে আর লুঙ্গি পরিহিত এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘দাদা আমরা বাংলাদেশী’, আমাদের কেউ জবাব দিল।

-‘না মানে হঠাৎ শুনলাম বাংলায় কথা হচ্ছে তাই বাইরে আসলাম, ভাবলাম আমাদের মতই কেউ হবে।’

ছোট্ট একটি ঘটনা, কিন্তু ভাষার প্রতি মমত্ত্ববোধ প্রকাশে যথেষ্ট। আজ ঘটনাটি ঢাকায় বা কলকাতায় হলে সেটা আমার মনে থাকতনা কিন্তু এটা থেকেছে কারন পরবাসে আমরা ভাষার নাড়ি বর্জিত মানুষ। চারপাশে নানাদেশের মানুষ আরা তাদের বিচিত্র রকমের ভাষা তার ভীরে নিজের মাতৃভাষার স্বাদটাই অন্যরকম।

(৩)

সম্প্রতি ভাষা নিয়ে এক সমস্যায় পড়েছি। আমার সাড়ে তিন বছর বয়সী ছেলের জন্ম বাংলাদেশে। কানাডায় যখন সে আসে তখন তার বয়স দুই। সুতরাং বাংলাদেশে থেকে ভাষার খুব বেশি শক্ত গাঁধুনি নিয়ে আসেনি। দুই থেকে তিন এই এক বছরের মধ্যেই তার ভাষা শিক্ষা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই সময়টাতে সে পুরোপুরি বাসায় থাকায় তার বাংলার দখল বেশ প্রবল, সেই সাথে টিভি দেখে বা পার্কে বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতে ইংরেজী শেখা। আস্তে আস্তে তার ইংরেজী বলার প্রবণতা বেড়েও গেলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল শব্দে, যেমন ‘বাবা কাউ কি খায়?’ বা ‘বাবা আমি টয় কিনব’ এইরকম। গত মাস দুয়েক ধরে সে ডে কেয়ারে যাচ্ছে এবং তার পর থেকেই অনেক ক্ষেত্রে তার মনের ভাব প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজীর ব্যবহার এখন শব্দকে ছাড়িয়ে বাক্যে রূপ নিচ্ছে। আগে ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ’ কিংবা ‘তাতীর বাড়ি ব্যঙের বাসা’ ছড়াগুলি শোনাত, আজকাল ছড়া বলতে বলাতেই শোনায় ‘টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল’ কিংবা ‘ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড…’। একথা সত্য যে এদেশে যেহেতু বড় হচ্ছে তার প্রধান ভাষাই হচ্ছে ইংরেজী, কিন্তু সেটা মেনে নিতে ভাল লাগেনা। মন চায় ছেলেটা আমাদের মত বাইরে কাজের ক্ষেত্রে বা স্কুলে ইংরেজী বলুক আর বাসায় বাংলা। যেহেতু কানাডা বহুজাতিক মানুষের দেশ তাই এখানে স্কুল বা ডে কেয়ারগুলিতেও সেই কথা বার বার বলা হয় যে তুমি তোমার সন্তানকে বাসায় তোমার নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষা দাও।

ছেলের ভাষার পরিবর্তন পীড়া দেয়, আমি তাই ছেলের সাথে আলাপচারিতায় আসি,

‘বাবা, বাবা বাসায় কি ভাষায় কথা বলে?’

-‘বাংলায়’

‘মা কি ভাষায় কথা বলে?’

-‘বাংলায়’

‘তাহলে তুমি কি ভাষায় কথা বলবে?’

-‘বাংলায়’

‘গুড, তুমি বাসায় বাংলায় আর বাইরে ইংরেজীতে কথা বলবে, ঠিক আছে?

-‘হ্যা, বাবা তুমিও কি বন্ধুদের সাথে ইংরেজীতে কথা বল?’

‘হ্যা বাবা আমি বাইরে বন্ধুদের সাথে ইংরেজীতে কথা বলি’

-‘আমিও স্কুলে বন্ধুদের সাথে ইংরেজীতে কথা বলি’

‘খুব ভাল বাবা, তুমি বাসায় বাংলায় কথা বললে সামনের সপ্তাহে তোমাকে একটি খেলনা কিনে দিব’

ছেলের সাথে আলাপচারিতায় মুগ্ধ হই, তাকে বাসায় বাংলা বলানোর জন্য খেলনা কিনে দেবার লোভ দেখাই। সেই লোভে ছেলে বাংলায় কথা বলে আবার কিছুক্ষণ পড়ে ভুলে যায়।

-‘বাবা, ক্যান ইউ প্লে উইথ মি?’

‘বাবা আমি বলেছি বাসায় বাংলা’

-‘সরি বাবা’,

সে কিছুটা মন খারাপ করে।আমি বলি তুমি বাংলায় আবার বল।

-‘বাবা তুমি কি আমার সাথে খেলবে?’

‘হ্যা খেলব’

………

এভাবেই চলছে। ছেলে ইংরেজীতে একেকটি বাক্য বলার পড়ে মনে করিয়ে দেই বাংলায় বল, সে মন খারাপ করে আবার সেটা বাংলায় বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কতদিন এই প্রচেষ্টা থাকবে জানিনা। ভাবছি একটু বড় হলে যে যতবার একটি বাক্য ইংরেজীতে বলবে ততবার তাকে দেখিয়ে একটি টালি বানাবো। একটি ইংরেজী বাক্য মানে একটি টালি, এভাবে প্রতি সপ্তাহে সে কতটি বাক্য ইংরেজীতে বলে তার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহান্তে ‘গিফট’ কিনে দেয়া নির্ভর করবে!


মন্তব্য

দিফিও-1 এর ছবি

এই চিন্তাটা এখানকার সব বাঙালী বাপমায়ের মধ্যেই দেখি। আপনাদের ওখানে বাঙালী স্কুল আছে কী, পার্ট টাইম বা উইকেন্ডের? এখানকার অনেকেই ছোট বাচ্চাদের ঐ স্কুলে নিয়ে যান, ডান্স বা পিয়ানো ক্লাসের মত এটাও বাচ্চাদের একটা এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটি।

সচল জাহিদ এর ছবি

এখানে একটি ভলানটারি বাংলা স্কুল আছে, বাংলাদেশি কমিউনিটিদের দ্বারা পরিচালিত। আরেকটু বড় হলে ( ৫ ) ওখানে দিতে হবে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্পর্শ এর ছবি

আপনার ছেলেটা, বড্ডো বিপদে পড়েছে। মন খারাপ

ও কে বাংলা পড়া শিখিয়ে দিন। তারপর ধরিয়ে দেবেন চমৎকার সব গল্প-ছড়ার বই। দেশে ঘুরতে পাঠাবেন বেশি বেশি। আর বাঙ্গালী ডে কেয়ার টাইপের কিছু কি নেই? এমন বিজনেস ভেনচার কারো করা উচিত। ব্যবসা সফল হবে। বাঙালি - আরব- তামিল এমন বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠির মানুষের জন্য আলাদা ডে কেয়ার থাকতে পারে। অবশ্য ব্যাপারটা ও দেশের সংস্কৃতিক বিভেদ বাড়িয়ে দেবে কি না, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে।

রিটন ভাইয়ের (অন্যকেউও হতে পারে, শিওর নই) মনে হয় এ নিয়ে একটা চমৎকার লেখা পড়েছিলাম। এখন খুঁজে পেলাম না। কারো চোখে পড়লে এখানে লিঙ্কটা শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

আর ওকে ওর মত করেই বাড়তে দিন। এটা ঠিক, বাংলা হয়তো সে শিখবে। কিন্তু মানুষ আসলে তার নিজের শৈশবের 'সময়-স্থান-ভাষা...' এসবের প্রেমে পড়ে থাকে সারা জীবন। তাই বাংলা ভাষাটা আপনার কাছে যেমন, ওর কাছে কখনোই তেমন হবে না। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।
বরং বাসা আর বাইরের সংস্কৃতিক দ্বন্দে পড়ে ওর শৈশবের দিনগুলো যেন একটুক কম রঙিন না হয় সে খেয়াল রাখবেন।

শুভেচ্ছা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

অল্প কষ্টে স্বল্প সময়ে অকল্পনীয় চিরস্থায়ী সমাধান। "সচলায়তন" ধরিয়ে দিন পড়া আর বলার জন্যে। কাজ হয়ে যাবে। দেঁতো হাসি

আমার মাতৃভাষই আমার সমস্ত অস্তিত্ব আর উপলব্ধির আশ্রয়স্থল।

-অতীত

সচল জাহিদ এর ছবি

আমি সেজন্যই ওকে ঘুম পাড়ানী গল্পে সবসময় বাংলা বা গ্রীক পৌরানিক গল্প শোনাই। ইউলিসিস কে সে বলে 'ইলিশ' ভুতকে বলে 'গগা' ইত্যাদি। এখানে বাংগালী ডে কেয়ার নেই। আর আগামী বছর স্কুলেই যাচ্ছে তাই বাংলা ভাষা শিক্ষা বাসায় থেকে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করি বাইরের জগৎ আর বাসার জগৎটা আলাদা। বাবা মার জন্য শুধু বাংলা। সে বুঝার চেষ্টা করে, খানিকটা বুঝেও আবার ভুলে যায়। আশা করি সে শিখবে।

যেমন আমাকে যেন সে কখনই ড্যাডি বলতে না পারে সেজন্য আমি ওকে ছোটবেলা থেকে সবসময় 'বাবা' বলে ডাকি ফলে সে বাবা ডাকটা একদম শিখে নিয়েছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সচল জাহিদ এর ছবি

মন্তব্যে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল লেগেছে। কাকতাল, এই লেখাটা পড়ার ঠিক আগেই আমার আব্বু আর ছোট বোনের সাথে কথা হচ্ছিল যে প্রবাসে থাকলে দেশের প্রতি টান বেশি অনুভব করা যায়। কথাটা শুরু হয়েছিল "আমি বাংলায় গান গাই" গানের আলোচনা থেকে।

আপনার বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তাটার সাথে পুরোপুরি সমব্যথী। সচলায়তনে আমার প্রথম লেখা, হাইফেনেটেড প্রজন্ম, এই একই জিনিষ নিয়ে ছিল। আপনাদের জন্য শুভকামনা থাকল।
-রু

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বয়েসে আসলে সে এতই ছোট যে, ভাষা অভ্যেসের বিষয়টা তার মাথায় এখনো আসেই নি বোধহয়। সামান্য বড় হলে আপনি যেভাবে চেষ্টা করছেন- সেই চেষ্টাতেই ফল দেবে। তখন তাকে বাংলা বইগুলোও হাতে তুলে দিতে পারেন।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ সুহান। দেখি বাংলা বর্ণমালা শিখানো শুরু করতে হবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো স্যার।
বিদেশ তো বিদেশ, একবার আমি ওয়েস্ট বেঙ্গলে ৭ দিন থেকেই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, কখন দেশে ফিরবো। মন খারাপ
আর আপনার টালি পদ্ধতি তো রীতিমতন অভিনব! হাসি

সাত্যকি

buet eee 06

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যকি। আমাকে ভাইয়া ডাকলেই খুশি হব। স্যার শুনে লইজ্যা লাগে !!!


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেকনিক গুলো শিখে রাখি। ক'দিন পর আমারো কাজে লাগবে।

রু (অতিথি)  এর ছবি

আগের মন্তব্যে আরেকটা কথা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার ছেলে হয়ত সত্যিকারের ফেরেস্তা, কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলে বাচ্চাদের ঘুষ দিলে খুব জলদি জিনিশটা ব্যাকফায়ার করে। আমার তিন বছরের ভাগ্লি আমাদেরকে এখন বুঝায় ওকে ঘুষ দিলে ও কী কী কাজে ছাড় দিবে।

সচল জাহিদ এর ছবি

চিন্তিত এইডা ভাবিনাই!!


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সচল জাহিদ এর ছবি

টেকনিক গুলানের পেটেন্ট কর্তে হইব না হইলে জব্বর কাগু যদি আবার নিজের নামে চালাইয়া দেয় !!


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ফাহিম হাসান এর ছবি

প্রবাসে মাতৃভাষা চর্চা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মাসকয়েক পরে আপডেট দিয়েন।

টালি পদ্ধতিটা দুর্দান্ত! হাসি

স্বপ্নহারা এর ছবি

জাহিদ ভাই, আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নাই, তবু আমি আশেপাশের কয়েকজন থেকে বেশ কিছু জিনিস শিখেছি...হয়ত তাদের আপনি চিনবেনও। কাজে লেগে যেতে পারে...

প্রথম জন, নিক্কণ ভাই...তার এক ছেলে- এক মেয়ে...ছেলে ৮ মেয়ে ৫ হল। তারা বাসায় বাংলা ছাড়া আর কিছু বলে না! আশেপাশে অন্যদের সাথে খেলছে, স্কুলে যাচ্ছে...কিন্তু তাদের বাসায় বাংলা ছাড়া অন্য কিছু বলা পুরোপুরি নিষেধ। ভাইয়া-ভাবী বাসায় বাংলা বলাকে যেমন পুরস্কার সহ উৎসাহ দিতেন, তেমনি না বললে তিরস্কার এবং কথা বন্ধ! বাসায় যারা আসেন তারাও যেন বাংলা ছাড়া বাচ্চাদের সাথে অন্যকিছু না বলেন সেদিকেও খেয়াল রাখতেন। সাথে তাদের দেখার জন্য ঠাকুরমার ঝুলি- গোপাল ভাঁড়...আর গাড়িতে উঠলে বাংলা গান। কিছুদিন আগে আয়হাম বাংলা একটা বই নিয়ে এসেছিল ওকে পড়ে শুনানোর জন্য!

দ্বিতীয় জন, রতন দা। দাদা-বৌদি কী যে কষ্ট করেছেন তাদের ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখানোর জন্য! সে যাই হোক, উনার বাসায়ও একই নিয়ম..কেউ বাংলা ছাড়া অন্যকিছু বলা নিষেধ....এবং সায়ন (বড় ছেলে) এখন আমাদের সকল অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ গায়ক! কারণ রতনদা'র বাসায় সবসময় গানের লোকজনের আসা-যাওয়া, এবং ছোটবেলা থেকে তাকে বাংলা গানের মাঝে সবসময় রাখা হত। নতুন কোন গান শিখলে অনেক প্রশংসা করা হত...ফলাফলঃ ৩ বছর বয়সে 'এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়' পুরোটা সঠিক সুরে হলভর্তি মানুষের সামনে গেয়ে শুনিয়েছে!

আমি এখানে কিছু কিছু ইমিগ্র্যান্ট চিড়িয়া দেখি যারা বাঙালি বাবা-মায়ের পিচ্চিদের সামনে পেলে তাদের ইংরেজি জ্ঞানের বহর ঝাড়তে থাকেন...এদের বলে দিবেন বাংলা ছাড়া কিছু না বলতে। সেদিন ফেসবুকে একজনকে দেখলাম এক বছরেরও ছোট বাচ্চার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে...কেন যেন ভীষণ রাগ হল...এই বাচ্চা মনে হয় না বাংলা আদৌ বলবে...অথচ মুখে উনি বাংলা ভাষাকে উর্ধে তোলার জন্য কথায় কথায় জীবন বাজি রাখেন!

আর বাংলাদেশ এক স্বপনের দেশ এমন একটা ধারণা দেবেন, সেখানে বাংলা না বললে যাওয়া যায় না (এতে নাকি কাজ হয়!) আপনার ছেলে বাংলা বলবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস...হয়ত এখন একটু ছোট...প্রসেসে রাখেন...হাসি

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

হাসিব এর ছবি

এই সমস্যায় আসলে সব প্রবাসিকেই কোন না কোন সময়ে পড়তে হয়। তবে, আসলেই কী বিদেশে জন্ম নেয়া আমাদের সন্তানদের আরেকটা পুরোপুরি আলাদা বিদেশী (তাদের কাছে) সংস্কৃতি শেখা প্রয়োজন? সমস্যাটা আরো জটিল হতে পারে স্পাউয বিদেশী হলে। তখন কি সে তিনটা ভাষা সংস্কৃতি শিখবে? এগুলোর পরিণতি কী আসলে? বহু সংস্কৃতির চাপে পড়ে বাচ্চার কিন্তু সে যেখানে বাস করে সেখানকার সংস্কৃতিতে আউটকাস্ট হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এই দিকটা বিষয়ে কী ভাবেন?

তাসনীম এর ছবি

যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা স্পর্শ বলে দিয়েছে...

আর ওকে ওর মত করেই বাড়তে দিন। এটা ঠিক, বাংলা হয়তো সে শিখবে। কিন্তু মানুষ আসলে তার নিজের শৈশবের 'সময়-স্থান-ভাষা...' এসবের প্রেমে পড়ে থাকে সারা জীবন। তাই বাংলা ভাষাটা আপনার কাছে যেমন, ওর কাছে কখনোই তেমন হবে না। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।

আমার আব্বা ৮৬ বছর বয়েসেও চাঁদপুরের বাসার জন্য হা-হুতাশ করেন, আমার ভালোবাসা ঢাকা শহরের জন্য। প্রত্যেকেই তার নিজের শৈশবের দিকে মুখ ফেরানো।

তোমার এই সমস্যায় আমিও পড়েছি। বাসায় বাংলা টিভি থাকলে বাংলা শেখানো একটু সহজ হয়। মেয়েরা গড়গড় করে বাংলা বলত আগে। এখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। বাংলা বলতেই চায় না। বাংলা স্কুলে গেলে কিছু উপকার অবশ্যই হবে। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনুষ্ঠানগুলোতেও ওদের নিয়ে যেও এবং অংশগ্রহন করতে দিও। ভাষা, সংস্কৃতি এগুলোর জন্য ভালোবাসা শেখানো যায় না ভাই, এর মধ্যে বড় হতে হয়।

এভাবেই চলছে। ছেলে ইংরেজীতে একেকটি বাক্য বলার পড়ে মনে করিয়ে দেই বাংলায় বল, সে মন খারাপ করে আবার সেটা বাংলায় বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কতদিন এই প্রচেষ্টা থাকবে জানিনা। ভাবছি একটু বড় হলে যে যতবার একটি বাক্য ইংরেজীতে বলবে ততবার তাকে দেখিয়ে একটি টালি বানাবো। একটি ইংরেজী বাক্য মানে একটি টালি, এভাবে প্রতি সপ্তাহে সে কতটি বাক্য ইংরেজীতে বলে তার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহান্তে ‘গিফট’ কিনে দেয়া নির্ভর করবে!

ভালো পদ্ধতি নিঃসন্দেহে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।