অনুবাদ কারখানা ||| ১ |||

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ০৫/১২/২০০৯ - ৭:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পায়রা - আইজ্যাক বাসেভিস সিঙ্গার

বউ মারা যাবার পর প্রফেসর ভ্লাদিস্লাভ ইবেজচুটসের কাছে থাকলো দুটো জিনিস। বই আর পাখি। ওরজেল পোলস্কির ভাই-ভাই সংঘের ছাত্রদের মাস্তানি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে ভারসাভা ভার্সিটি থেকে ইতিহাসের অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা নিলেন। ছেলেগুলো ভ্রাতৃসংঘের সোনালী এম্ব্রয়ডারির টুপি পরে ক্লাসে আসতো। হাতে ছড়ি ঘোরাত। আর থাকতো বাহাস করার জন্য মুখিয়ে। প্রফেসর বেশির ভাগ সময় তাদের আলাদা করে চিনতে পারতেন না। লালচে মুখ। ফুস্কুরিওয়ালা ঘাড়। চ্যাপ্টা নাক। চৌকোনা থুতনি। এদের প্রায় সবার। ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার ঐক্য দেখে মনে হতো, এরা সবাই একই পরিবারের।ইহুদি ছাত্রদের জন্যে কিছু গেটৌ বেঞ্চি ছিল। তাদের সেখানে বসতে বাধ্য করার সময় এরা সবাই একসাথে চিল্লাতো। সবার গলায় যেন একই সুর বসানো।

ভ্লাদিস্লাভ অবসর নেয়ার পর পেনশন পেলেন সামান্য। অবশ্য বাড়ি ভাড়া আর খাওয়ার জন্যে এরচে বেশি কী লাগে। এই বুড়ো বয়সে অন্য কোন খরচ তাঁর নেই। সাথে থাকে এক কাজের মহিলা। নাম টেলকা। প্রায় অন্ধ। জাতে পোলিশ। আগে কৃষিকাজ করতো। বেশ কমাস ধরে তার বেতন দিতে পারছেন না প্রফেসর। টেলকা দুজনের জন্য কিছু স্যুপ আর স্টু রান্না করে। বুড়ো বুড়ির ফোকলা দাঁতে খেতে কোন সমস্যা হয় না। তাঁদের নতুন কোন জামা-কাপড় কি জুতা কিছুই কেনা লাগে না। স্যুট, কোট, ফারের জামা আর মিসেস ইবেজচুটসের অনেক কাপড় পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। সব খুব সযত্নে ন্যাপথেলিন দিয়ে প্যাক করে রেখে দেয়া হয়েছে।

বছরের পর বছর প্রফেসরের লাইব্রেরি আকারে বেড়েছে। চারদিকের দেয়াল মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত বইয়ের সেলফে ঠেসে গেছে। কাপড়ের আলমারিতে, ট্রাঙ্কে, সেলারে, চিলেকোঠায় কেবল বই আর পুঁথি। মিসেস ইবেজচুটস বেঁচে থাকতে কিছুটা গুছিয়ে রাখতেন। বইয়ের উপর ধুলোর চরা ঝেড়ে রাখতেন। যেসব পুরানো নথি কাজ লাগতো না জ্বালানি হিসেবে স্টোভে দেয়া হতো। তাঁর মৃত্যুর পর সব এলোমেলো হয়ে গেল। এর মধ্যে প্রফেসর কোত্থেকে এক ডজন পাখির খাঁচা কিনে এনেছেন। তোতা, টিয়া, ক্যানারি। তিনি সবসময় পাখিদের খুব ভালবাসতেন। খাঁচাগুলোর দরজা সবসময় খোলা থাকে, পাখিরা যাতে তাদের মতো করে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে। টেলকা অভিযোগ করলো পাখির এসব ইয়ে তিনি পরিষ্কার করতে পারবেন না। প্রফেসর বলেন, ‘দূর বোকা, খোদার হাতের সৃষ্টির কিছুই নোংরা নয়।’

প্রফেসর এসব করেই থেমে থাকেননি। রাস্তায় কিছু পায়রাকে নিয়মিত তিনি খাওয়াতে যান। প্রতিবেশীরা প্রতিদিন সকাল এবং দুপুরে তাঁকে দেখে পাখিদের খাবারের একটা ব্যাগ নিয়ে যেতে। প্রফেসর ছোটখাট গড়নের। বাঁকানো পিঠ। মুখে হালকা দাঁড়ি, সাদাটে থেকে সেগুলো হলদেটে মেরে গেছে। এবড়ো থেবড়ো নাক। একজোড়া পুরু চশমার পেছনে জঙ্গুলে ভুরুর নিচে তাঁর বাদামী চোখ বেশ বড় দেখায়। সবুজ ওভারকোট আর সামনে গোলাকার দেখতে ইলাস্টিকের জুতা তিনি বছরের পর বছর পরে আসছেন। হাল ফ্যাশানের ধার দিয়ে এসব যায় না। মাথায় দেয়া ছোট টুপি থেকে তাঁর অগোছালো সাদাচুল এদিক সেদিক উঁকি মারে। সামনের দরজা দিয়ে প্রফেসরের ঢুকার মুহূর্তে এমনকি প্রফেসরের ‘দুস-দুস-দুস’ করে ডাকার আগেই পায়রার ঝাঁক চারদিক থেকে নেমে আসে। চর্মরোগ হাসপাতালের আশেপাশের গাছে আর পুরানো টালির ছাদে এরা অপেক্ষা করে থাকে। প্রফেসর যে বাড়িতে থাকেন সেটার রাস্তা শুরু হয়েছে নোয়ু সোয়েট বুলেভার্ড থেকে। রাস্তাটা কিছুটা হেলে সরে গেছে ভিস্তুলার দিকে। এখানে গরমকালে খোয়ার মধ্যে ঘাস গজায়। রাস্তায় খুব একটা ভিড় দেখা যায় না। মাঝে মাঝে সিফিলিসে মারা যাওয়া কোন লাশকে নিয়ে শবযান আসলে কিংবা নানা যৌনরোগে আক্রান্ত দেহপসারিনীদের নিয়ে যাবার জন্য কোন পুলিশের গাড়ি এসে ঢুকলে রাস্তায় খানিক জ্যাম লাগে।বেশির ভাগ বাসিন্দাই বুড়াবুড়ি। এরা খুব একটা বাইরে বেরোয় না। এখানে আসলে পায়রারা নগরীর কোলাহল থেকে কিছুটা বাঁচে।

আমার কাছে পায়রাদের খাওয়ানো অনেকটা চার্চে কিংবা সিনাগগে যাওয়ার মতো।টেলকাকে বলেন প্রফেসর। ঈশ্বর তো প্রশংসা শোনার জন্যে এতো উম্মুখ নন। কিন্তু পায়রাগুলো সেই ভোর থেকে খাবার পাবার আশায় বসে থাকে। ঈশ্বরকে সেবা করতে চাইলে তাঁর সৃষ্টিকে সেবা করার চেয়ে ভালো কোন উপায় কোথাও নেই।

কেবল যে ক্ষুধার্ত পায়রাগুলোকে খাইয়ে আনন্দ পান প্রফেসর তা নয়। তাদের কাছ থেকে শেখারও অনেক কিছু আছে। তালম্যুডের এক জায়গায় তিনি পড়েছিলেন ইহুদীরা অনেকাংশে পায়রাদের মতো। এই তুলনার মর্ম অনেক পরে এসে তিনি বুঝেছেন। টিকে থাকার জন্য পায়রাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই। মানুষের ছুঁড়ে দেয়া খাবারের উপর তারা নির্ভর করে থাকে। শব্দ ভয় পায়। ছোট্ট কোন কুকুরছানা তাড়া করলে উড়ে পালায়। চড়ুই যখন তাদের ভাগের খাওয়া খেয়ে যায় তাদের পর্যন্ত তাড়ায় না। পায়রার মতো ইহুদিরাও শান্তি, সহাবস্থান কি অন্যের ভালো মানুষির উপর ভর করে বেঁচে থাকে। তবে সব সমীকরণের ব্যতিক্রম আছে। পায়রাদের মধ্যে। ইহুদিদের মধ্যে। এদের নিজেদের গোত্রের বাইরে যুদ্ধংদেহী রূপের কেউ কেউ আছে। অন্যদের জোর করে তাড়িয়ে তাদের ভাগের খাওয়া কেড়ে খেয়ে ফেলে। প্রফেসর ইবেজচুটসের ভার্সিটি ছাড়ার পেছনে এন্টি-সেমিটিক ছাত্ররা একমাত্র কারণ সেটা বলা যাবে না। কিছু ইহুদী কম্যুনিস্ট ছাত্র ইহুদীদের প্রতি ঘৃণাকে কাজে লাগাতো তাদের কিছু প্রপাগান্ডা হাসিলের জন্য।

দীর্ঘদিন ধরে প্রফেসর ইবেজচুটস পড়েছেন, পড়িয়েছেন, আর্কাইভ ঢুঁড়েছেন এমনকী সাইন্স জার্নালে লিখেছেন। খুঁজতে চেয়েছেন ইতিহাসের কোন দর্শন, কোন না কোন অর্থ কিংবা সূত্র যাতে মানুষ কোন দিকে দৌঁড়াচ্ছে বা কেনই বা একের পর এক যুদ্ধের দিকে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে তার মানে বুঝে নেয়া যায়। একটা সময় ঘটনার বস্তুতান্ত্রিক দিকে তাঁর দৃষ্টি আটকে ছিল। লুক্রিশাস, দিদেরো, ভোগ, ফ্রয়েরবাখকে পছন্দ করতেন। এমনকী কার্ল মার্কসের কথাও একটা সময় বিশ্বাস করতেন। যৌবনের সে দিনগুলো তাড়াতাড়ি কেটে গেছে। এখন তাঁর বিশ্বাস গিয়ে ঠেকেছে একদম এঁদের প্রবল বিরুদ্ধ শিবিরে। প্রকৃতির খেয়াল বোঝার জন্য কোন কিছুতে বিশ্বাসী হবার দরকার খুব একটা নেই। তথাকথিত উদ্দেশ্যবাদের নামে সত্য খোঁজা কিংবা বিজ্ঞানের নামে ট্যাবু- কোনটাই দরকারি না। হ্যাঁ প্রকৃতির কিছু একটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যা দেখি সেটা পুরাই বিশৃংখলা। ইহুদিদের প্রয়োজন সবারইঃ যীশুর, খ্রিস্টানদের, মুসলমানদের, একজন আলেকজেন্ডার দা গ্রেটের, একজন চার্লিমানিয়ার, একজন নেপোলিয়ানের এমনকি হিটলারের। কিন্তু কেন? কার কী লাভ- ইঁদুরকে বিড়াল দিয়ে খাইয়ে, খরগোশকে বাজপাখির হাতে খুন করিয়ে কিংবা পোলিশ ভ্রাতৃসংঘের ছেলেদের হাতে ইহুদিদের মার খাইয়ে।

শেষের দিকে প্রফেসর ইতিহাস পড়া একদম ছেড়ে দিয়েছিলেন। জীবনের শেষভাগে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর আগ্রহ জীববিজ্ঞানে-প্রাণিবিজ্ঞানে। প্রাণী আর পাখি নিয়ে কিছু বই তিনি যোগাড় করেন। তাঁর চোখে গ্লুকোমা , ডান চোখে প্রায় কিছুই দেখেন না, তারপরেও পুরানো একটা মাইক্রোস্কোপ তিনি কিনে এনেছেন। এই পড়াশোনা কোন পাশার টানে না। ধর্মপ্রাণ ছেলেরা যেমন তালম্যুড পড়ে, মাথা নেড়ে, সুর করে করে - প্রফেসর অনেকটা সেভাবেই পড়ে নিজের নৈতিক উন্নতি করেছেন। মাঝে মাঝে নিজের দাড়ি থেকে একটা টেনে ছিঁড়ে দেখেন মাইক্রোস্কোপে কেমন লাগে দেখতে। প্রত্যেকটা চুলের স্বতন্ত্র জটিল মেকানিজম রয়েছে। একটা পাতা, পেঁয়াজের কোন খোসা, টেলকার ফুলের টব থেকে নেয়া একটু মাটির মধ্যে এমন সৌন্দর্য আর সুর লুকিয়ে থাকে। প্রফেসর দেখে মুগ্ধ হন। তিনি বসে থাকেন তাঁর মাইক্রোস্কোপ নিয়ে। এদিকে ক্যানারিগুলো গান গায়। টিয়াগুলো কিচিরমিচির করে, কথা বলে, চুমু খায়। তোতাগুলো বকবক করে। টেলকার গ্রাম্য ভাষায় একটা আরেকটাকে বকে। বান্দর, ধাঁড়ি, পেটুক। ঈশ্বরের কল্যাণচিন্তায় তো পুরা আস্থা রাখা যায় না। কিন্তু ঘাস ,মাছি ,কীট এসবের মধ্যে ঈশ্বরের জ্ঞানের দেখা মিলে।

টেলকা রুমে ঢুকলেন। ছোট গড়নের মহিলা। ধূসর খড়কুটোর মতো পাতলা চুল মাথায়। ছেঁড়া একজোড়া চপ্পল পায়ে। রং উঠে গেছে এমন একটা জামা পড়ে থাকে সারাক্ষণ। গাল বেশ লম্বাটে। চোখজোড়া বিড়ালের মতোন সবুজ রংয়ের। এক পা টেনেটেনে সে হাঁটে। তার শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যথা। বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তারের মলম লাগিয়ে এসব ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে। সময় পেলে চার্চে যায়। সন্তদের জন্যে মো্মবাতি জ্বালাতে।

‘আপনার জন্য দুধ জ্বাল দিয়েছি।’
‘আমার কিছু লাগবে না।’
‘তাহলে কিছু কফি গুলিয়ে দেই।’
‘টেলকা লাগবে না কিছু। বললাম তো।’
‘এভাবে থাকলে গলা শুকিয়ে যাবে।’
‘কোথায় লেখা আছে বলতো, গলা ভিজিয়ে রাখতে হবে।’

টেলকা আর উত্তর করে না। কিন্তু সে যায় না। মিসেস ইবেজচুটসের মৃত্যুশয্যায় সে কথা দিয়েছিল প্রফেসরের কোন অযত্ন হতে দিবে না। কিছুক্ষণ বাদে প্রফেসর চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। একটা বিশেষ বালিশ নিয়ে বসলেন যাতে তাঁর শূলের ব্যাথা বেড়ে না যায়।

‘টেলকা, এখনো দাঁড়িয়ে আছো? তুমি দেখি আমার স্বর্গত স্ত্রীর মতো নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ছো। মে সী রেস্ট ইন পীস।’
‘আপনার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।’
‘ধুর আবার ওষুধ। বোকা মেয়ে, কোন হার্ট সারাজীবন পাম্প করতে পারে না।’

প্রফেসর তাঁর ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা ‘পোল্যান্ডের পাখি’ বইটার উপর রাখলেন। তারপর নিজের পাখিদের দেখতে গেলেন।রাস্তার পায়রাদের খাওয়ানোতে অনেক আনন্দ। কিন্তু খাঁচা খোলা রেখে বাসার মধ্যে এভাবে পাখি রেখে দেয়া অনেক দায়িত্বের কাজ। টেলকার জন্য এতোসব পরিষ্কার করা প্রায় দুঃসাধ্য। তার উপর প্রতিদিন কোন না কোন খারাপ কিছু ঘটছে। পুরুষ পাখিগুলো ঝগড়া করে। মেয়েগুলো সদ্য পাড়া ডিম ভেঙ্গে ফেলে। প্রফেসর এক কাজ করেছিলেন- এক এক রুমে এক এক জাতের পাখি রেখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু টেলকা তো ভুলোমনা, হয়তো দেখা গেল একটা দরজা সামান্য খোলা রেখে চলে গেছে। এখন বসন্তকাল। জানালাগুলো খোলা যায় না। ঘরের ভেতরের বাতাস একই সাথে মিষ্টি পঁচা দ্বৈত গন্ধ ছড়ায়। পাখি সাধারণতঃ রাতে ঘুমায়। হয়তো কোন তোতা রাতে কোন পৈখিক দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে অন্ধকারে অন্ধের মতো উড়ে বেড়ালো। রাতে তাই বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয় যাতে কেউ চোট না পায়। সামান্য কিছু দানাপানির বদলে কী ভীষণ শান্তি এরা প্রফেসরকে দেয়। একটা টিয়া কিছু শব্দ শিখেছে, এমনকি এক দুটো পুরো বাক্য। মাঝে মাঝে সে প্রফেসরের মাথার টাকে গিয়ে বসে, তাঁর কানের লতি কামড়ে ধরে, চশমার ডাঁটিতে লাফালাফি করে। কখনো কখনো প্রফেসর লেখালেখি করার সময় তাঁর তর্জনীর উপর এক্রোব্যাটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পাখিদের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন এরা কতো জটিল চরিত্রের আর স্বতন্ত্র। অনেক বছর পাখিদের পর্যবেক্ষণ করা শেষেও এখনো এদের দুষ্টামি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।

প্রফেসর আরো খুশি যে এদের উপর ইতিহাসের কোন প্রভাব নেই। যেটা চলে গেছে সেটা নিয়ে এরা ভাবে না। নতুন নতুন সব এডভেঞ্চার ভুলে যায় সহজেই। প্রতিটা দিন তাদের কাছে নতুন। তবে ব্যতিক্রম ও আছে। এক টিয়া তার সঙ্গীর মৃত্যুর পর একদম মনমরা হয়ে গেছিল। পাখির মধ্যেও রয়েছে অন্ধপ্রেম, হিংসা, সংযম, খুনের বাসনা কি আত্মহত্যার চিন্তা। এদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা দেখা যায়। পাখিদের মধ্যে ঈশ্বর প্রদত্ত এসব অনুভূতির নিশ্চয় কোন কারণ আছে। তাদের পাখার গড়ন, ডিম পাড়ার পদ্ধতি আর নানান বৈচিত্র্যময় বর্ণোচ্ছলতার পিছনে কিছু না কিছু আছে। কিভাবে এসব আসে? উত্তরাধিকার? ক্রোমোসোম? জিন?

তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রফেসরের এক অভ্যাস হয়ে গেছে স্বগোতক্তি করার কিংবা অনেক আগে মারা গেছেন এমন লোকজনের সাথে কথা বলার। সেদিন ডারউইনের সাথে কথা বলছিলেন, ‘না, চার্লস। আপনার থিয়োরি এই সমস্যার সুরাহা দিচ্ছে না। মঁসিয়ে লামার্ক, আপনারটাও কাজে আসছে না।’

(বাকিটুকু পরের কিস্তিতে )

আইজ্যাক বাসেভিস সিঙ্গার

জন্ম নভেম্বর ২১, ১৯০২; ভারসাভা, পোল্যাণ্ডে।জাতে ইহুদি। তিনি ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার। তবে ছোটগল্পকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি বেশি। লেখালেখি করেছেন ইদিশ ভাষায়। তার লেখা বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ইহুদি বিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে নিরীক্ষা করতেন সিঙ্গার। সাহিত্যে নোবেল পান ১৯৭৮ সালে। সিঙ্গার পাখিপ্রেমিক। আর নিরামিষাশী। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ আমার মনে হয় প্রাণীদের সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে মেরে খাওয়ার জন্য নয়। আমার দুটো পাখি আছে, দেখতে কতো সুন্দর- অথচ কেউ তাদের মেরে খেয়ে এই চিন্তা মাথায় আসলে আমি অসহ্য লাগে। খাবার হবার বদলে তারা আমাদের শিক্ষক ও হতে পারে।’ পায়রা গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। এর বছর চারেক আগে সিঙ্গার পুরা নিরামিষাশী হয়ে যান। মৃত্যু জুলাই ২১, ১৯৯১; আমেরিকার ফ্লোরিডায়।


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"চার্লিমানিয়ার" কে? চিনতে পারলাম না। ইংরেজী বানানটা দেবেন? আমার কাছে মনে হয়েছে অনুবাদ বেশ আড়ষ্ট। আপনার নিজের লেখা গল্পের সাথে তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন। পরের কিস্তি কবে পাবো?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চার্লিমানিয়া এয়ুরোপের একজন নৃপতি। জার্মান রক্ত ছিল শরীরে। ৭৬৭ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাজত্ব করে গেছেন।

আড়ষ্টতা কিছুটা ইচ্ছিক। কিছু কিছু জায়গা আরেকটু মেরামত করা যেত। পরে ভাবলাম, থাক। বুড়ো প্রফেসরের জীবন তো একাকীত্বে বেশ আড়ষ্ট। ভাষা না হয় কম ঝরঝরে হোক।

গল্পটা অনু-অনুবাদ। ইদিশ থেকে ইংরাজি করা। আর আমি করেছি সেখান থেকে বাংলায়ন। অনুবাদ যতো ভালোই হোক না কেন সেটা এক ধরণের দ্বিতীয় প্রকাশ। মূল লেখার পালস্‌ সেখানে হারাবেই।

আপনার মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস। পরের অংশ অনুবাদ করছি। আড়ষ্টতা আছে। চোখ টিপি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

Charlemagne নামের উচ্চারণটা /ˈʃɑrlɨmeɪn/

বাংলায় লিখলে "শার্লেমেইন" এর কাছাকাছি হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তালিকার বাকি নামগুলো দেখে আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল ইনি শার্লেমেইন/শার্লোমেইন হবেন। ইংরেজী বানানটা না থাকায় সন্দেহ দূর হচ্ছিলনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শার্লমিন আমি প্রথমে লিখেছিলাম। পরে নামের উচ্চারণগুলো কিভাবে হয় নেটে একটু খুঁজে দেখলাম। উনি এয়ুরোপের লোক তাই এয়ুরোপের একটা ভাষায় তাঁর নামের উচ্চারণ কিভাবে করা হয় সে অনুসারে লিখেছিলাম। লেখার সময় কানে লেগেছিল চার্লিমানিয়া, ভালো করে শুনে মনে হচ্ছে শার্লেমানিয়া। আমার কানে শোনার সমস্যাও হতে পারে। আপনাদের ধন্যবাদ।

নামের সঠিক উচ্চারণ নিয়ে ব্যাপক গিয়াঞ্জাম আছে। পড়ুন নামনামা।চোখ টিপি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সাত সকালে আপনার কাছ থেকে এই গল্পটা পেয়ে যাবো, ভাবতে পারিনি। অনেক ধন্যবাদ। পরের পর্ব কবে পাবো?

আমার কাছেও অনুবাদটা একটু কাঠ কাঠ লেগেছে। আপনার লেখার মতো স্বতস্ফূর্ত হয়নি। একটু সময় নিয়ে করতে পারেন...

আবারো ধন্যবাদ...

কারখানা চলুক... লালবাত্তি নিষিদ্ধ... সামনে আরো অনেক দাবী দাওয়া আসবে আপনার কাছে... তৈরি থাকুন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

একটু তাড়াতাড়ি অনুবাদ করেছি সেটা ঠিক। আড়ষ্টতা আস্তে করলেও থাকতো। আর বাকিটা করা শুরু করেছি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ঐশী এর ছবি

আমার পড়ে খুব ভালো লাগলো। কেমন মন সোঁদা করা ভাষা। আর লিঙ্কটা খুব ভালো। সিঙ্গার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। আপনি কারো পরিচয়ে উইকি লিংক না দিয়ে অন্য লিংক দেন কেন? জাস্ট জানার আগ্রহ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কারণ নাই। এমনি।

সবজান্তা এর ছবি

আমি বুদ্ধিমান পাঠক। অনুবাদ জাতীয় গল্পের ক্ষেত্রে "চলবে"- এর ফাঁদে আর পা দেই না। অনেক নামী দামী লেখকই চলবে কথা দিয়ে, চা খেতে যেয়ে আর চালাতে পারেন নি দেঁতো হাসি

তবে আপনার গল্পটা পুরো শেষ করলে অবশ্যই পড়বো, এর কারণ মূল লেখক। সিঙ্গারের একটি অসাধারণ অনুবাদ পড়েছিলাম ব্লগার সুমন রহমানের ব্লগে, "আয়না" নামের একটি গল্প। আমি নিজেও সিঙ্গারের একটি গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম, "গিম্পেল দ্য ফুল"। এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, গল্পটির অনুবাদও করতে বসেছিলাম। অর্ধেকের পর আর করা হয় নি। আপনার লেখাটা দেখে আমার সেই মৃত লেখাটার কথা মনে পড়লো !


অলমিতি বিস্তারেণ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আয়নাটা আমারো ভালো লাগছিলো। আপনের আধেক অনুবাদটা শেষ করে ফেলেন... পড়ে ফেলি আমরা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

@শুভাশীষ দাশ

অনুবাদ যেমনই হোক। করে ফেলেন। নিজের ভাষার গল্প আর পরের ভাষার গল্প - পার্থক্য তো থাকবেই কিছুটা।

@ সবজান্তা
অনুপ্রাণিত হলে দেরি কেন? কাজটা শেষ করেন। আমরাও আরেকটা অনুবাদ পাই। এমনিতেই অনুবাদ হচ্ছে কম।

দুজনকেই ধন্যবাদ।
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কথা ঠিক। অনুবাদ কম হচ্ছে। যাও হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দু চারটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশে অনুবাদের বাজার যাঁরা দখল করে আছেন তাঁদের অনুবাদের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আমরা এতো ক্রিয়েটিভ ছাইপাশ লেখায় মগ্ন হয়ে গেছি-অনুবাদে কারো আগ্রহ নেই। অনুবাদের যথার্থতা বুঝতে গেলে ভাষার দিকে তাকাতে হবে সেটা ঠিক আছে। তবে মূল লেখাটা পড়ে তার সুরটাও ধরতে হবে। আর অনুবাদ মানেই দ্বিতীয়, অদ্বিতীয় নয়।

বিখ্যাত লেখক সল বেলো ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন সিঙ্গারের 'গিম্পেল দা ফুল' । মজার ব্যাপার সিঙ্গারের দুই বছর আগে বেলো সাহিত্যে নোবেল পান। অনেক বড় লেখক অনুবাদ করতে করতে পরে নিজের লেখালেখি শুরু করেছেন। ভালো অনুবাদ করায় আরো অনেক সচল এগিয়ে আসবেন এই আশা করছি।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পরের পর্ব পড়বো। ভালো কিন্তু অসমাপ্ত গল্প পড়তে মঞ্চায় না।

_________________________________________

সেরিওজা

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

গল্পটি পড়ে শেষ করতে ইচ্ছে করছে।
পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই আসুক।

----------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বাকিটা দিয়ে দিব ............

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বাকিটা দিয়ে দিব ............

স্নিগ্ধা এর ছবি

প্রিয় শুভাশীষ - এমনিতেই "দিদিভাই" সম্বোধিত হবার পর থেকে কারণ ছাড়াই আমার অদৃশ্য শুভাশীষ আপনার দিকে ধাবিত হতে থাকে, তার ওপর এমন ভালো অনুবাদ/অনু-অনুবাদ পড়তে পেলে তো আর কথাই নেই!

ধরনটা ভালো লেগেছে! পরের পর্ব পড়বার অপেক্ষায় আছি। গল্পের শেষটা নিয়ে কিছুটা কৌতূহল আছে।

ছোট্ট একটা সংশোধনী দেই? আপনার কলম থেকে "ঢুকার সময়" ('ঢোকার সময়' না হয়ে) বেরোলে বেশি চোখে লাগে, কারণ জানি যে এটা অনবধানকৃত ভুল হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দিদিভাই,

মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস। প্লাস সংশোধনীর জন্য।

এনকিদু এর ছবি

বড়শিতে আটকে গেলাম । পরের খণ্ড গিলতেই হবে, নাইলে শান্তি পাবনা শান্তি পাবনা শান্তি পাবনা ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

একটু সবুর। এই দিতাছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগছে... আমার বই পড়ার অভ্যাস নাই বললেই চলে, আর আংরেজী ভাষার বই পরতে গেলেতো দাঁত খুইল্যা যাইতে চায়, আর মজাও পাইনা। তাই আপনার যদি মাঝে মাঝে অনুবাদ করেন, তো এই অভাগারা কিছু নতুন বই সম্বন্ধে জানতে পারি।

নীল ভূত।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেঁতো হাসি

পুতুল এর ছবি

অনুবাদ আর একটু তরল হতে পারতো। কিন্তু গল্পের মেজাজের সাথে আপনার ভঙ্গিটা যাচ্ছে। সচল তীরন্দাজ অনেকটা আপনার মত অনুবাদের পক্ষপাতী।
বিদেশী ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রভাবটা হাল্কাভাবে রেখেদেন। তসলিমা নাসরীনের লজ্জার জার্মান অনুবাদ পড়ে, আমার মনে হল, অনুবাদ পড়ে পাঠক যেন বুঝতে না পারে যে, এটা অনুবাদ। কিন্তু তার কোন মানদন্ড ঠিক করা কঠিন।
খারাপ লাগে কবির চৌধুরী বা আরো দু'এক জন অনুবাদক অনুবাদের নামে যা করেন সেটা দেখে।
তবে আমাদের অনুবাদ সাহিত্য খুব দুর্বল। নাটক এবং বামপন্থী লেখার খুব ভাল অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু গল্প উপন্যাসের বেলায় ততটা আগায়নি।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অনুবাদ সাহিত্য সচলের পাতায় ভালো মতো আসুক। এবং ভালো অনুবাদ।

পায়রা পুরা অনুবাদ করে খানিক আগে আপ করলাম। মডুদাদারা আপ করে দিবে। পুরাটা আবার একটু হালকার ওপর ঢেলে অনুবাদ করলাম। তাও মনে হলো সেকেণ্ড ড্রাফট্‌।

মন্তব্য করার জন্য থ্যাংকু।

দুর্দান্ত এর ছবি

ভাল লেগেছে।
চার্লিমানিয়া = শার্লেমাইন, ইউরোপকে খৃষ্টের পতাকাতলে একীভূত করতে পেরেছিলেন যে রাজা?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সহজে তাঁর সর্ম্পকে কিছু জানতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।