ইল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০২/২০১১ - ১১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইল

সূর্যবংশে ইল নামে এক রাজা ছিল। শিকার করতে গিয়ে বন খুব ভালো লেগে যায় বলে সে রাজত্ব ছেড়ে বনে থেকে যায়। ঘুরতে ঘুরতে এক যক্ষরাজের অনুপস্থিতিতে তার সাজানো শূন্য গহ্বর দখল করে নেয়। যক্ষরাজ অন্যান্য যক্ষ নিয়ে এসে যুদ্ধ করেও ইল রাজার সাথে পেরে ওঠে না। যক্ষরাজ যক্ষিণীকে বলে- তুমি মায়াবী হরিণী সেজে ইলকে উমাবনে নিয়ে এসো। তাহলেই আমরা গহ্বর আবার নিজেদের কব্জায় আনতে পারবো। মহাদেবের অভিশাপে উমাবনে কোনো পুরুষ গেলে সে নারী হয়ে যায়। যক্ষিণী মায়ার খেলা খেলে ইলকে উমাবনে নিয়ে আসলে ইল হয়ে পড়ে সুন্দরী ইলা। ইলা ঘুরতে ঘুরতে চন্দ্রপুত্র বুধের নজরে পড়ে। বুধ ইলাকে রাণী করে। তাদের এক পুত্র হয়। পুরূরব। জন্মের পর থেকে পুরূরব খেয়াল করে তার মা সবসময় মুখ গোমড়া করে রাখে। পরে একদিন বুধের কাছে বৃত্তান্ত জানতে পারে ইলার ছেলে। মাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে গৌতমীগঙ্গায় স্নান করে বুধ, ইলা আর পুরূরব কঠোর তপস্যা শুরু করে। মহাদেব ও পার্বতী এসে ইলকে অভিশাপমুক্ত করে। গৌতমীগঙ্গায় আবার ডুব দিলে সুন্দরী ইলা পরিণত হয় সশস্ত্র যোদ্ধা রাজা ইলে। - গল্পটা পড়ে ‘এক্স’ চিৎকার করে বলে- পুরুষবাদ নিপাত যাক।

ইলা

পৌন্ড্রীবংশে ইলা নামে এক রাণী ছিল। শিকার করতে গিয়ে বন খুব ভালো লেগে যায় বলে সে রাণীত্ব ছেড়ে বনে থেকে যায়। ঘুরতে ঘুরতে এক যক্ষরাণীর অনুপস্থিতিতে তার সাজানো শূন্য গহ্বর দখল করে নেয়। যক্ষরাণী অন্যান্য যক্ষিণী নিয়ে এসে যুদ্ধ করেও ইলা রাণীর সাথে পেরে ওঠে না। যক্ষরাণী যক্ষকে বলে- তুমি মায়াবী হরিণ সেজে ইলাকে উমবনে নিয়ে এসো। তাহলেই আমরা গহ্বর আবার নিজেদের কব্জায় আনতে পারবো। পার্বতীর অভিশাপে উমবনে কোনো নারী গেলে সে পুরুষ হয়ে যায়। যক্ষ মায়ার খেলা খেলে ইলাকে উমবনে নিয়ে আসলে ইলা হয়ে পড়ে সুঠাম ইল। ইল ঘুরতে ঘুরতে চন্দ্রকন্যা বুধিনীর নজরে পড়ে। বুধিনী ইলকে রাজা করে। তাদের এক কন্যা হয়। পুরূরবা। জন্মের পর থেকে পুরূরবা খেয়াল করে তার বাবা সবসময় মুখ গোমড়া করে রাখে। পরে একদিন বুধিনীর কাছে বৃত্তান্ত জানতে পারে ইলের মেয়ে। বাবাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে গৌতমীগঙ্গায় স্নান করে বুধিনী, ইল আর পুরূরবা কঠোর তপস্যা শুরু করে। পার্বতী ও মহাদেব এসে ইলাকে অভিশাপমুক্ত করে। গৌতমীগঙ্গায় আবার ডুব দিলে সশস্ত্র সুঠাম ইল পরিণত হয় সুন্দরী ইলায়। - গল্পটা পড়ে ‘ওয়াই’ চিৎকার করে বলে- নারীবাদ নিপাত যাক।

ঈল

ঈল একটি মাছ। দুই ইঞ্চি থেকে তের ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এই মাছ। আর ওজনে ত্রিশ গ্রাম থেকে পঁচিশ কিলো। পুং ঈলের পাখনা থাকে নয় থেকে বারোর মতো। স্ত্রী ঈলে থাকে দশের চেয়ে কম। পুং ঈলের বর্ণ অলিভ সবুজ। স্ত্রীদের বর্ণ হালকা হলদে-বাদামী। এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পুং ও নারী ঈল জেন্ডার সচেতন হতে আগ্রহী হয় না। লোকসমক্ষে তারা নিজেদের ঈল বলে পরিচয় দেয়।


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

দারুণ!

আচ্ছা, পুরূরব না উর্বশীর প্রেমে পড়েছিলো? (অথবা উর্বশী না পুরূরবের প্রেমে পড়েছিলো?)

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মনে হয় পুরূরবা। ঠিক মনে নাই।

তুলিরেখা এর ছবি

রাজা পুরুরবা উর্বশীকে দেখে কুপোকাত, উর্বশী করুণা করে রাজার বৌ হলো কিন্তু উর্বশীরা বেশীদিন মানুষের সাথে থাকতে পারে না, চলে যায়। ওদের পুত্র জন্মাতেই ছেলেকে রেখে উর্বশী উড়ে গেল। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পুং ও নারী ঈল জেন্ডার সচেতন হতে আগ্রহী হয় না। লোকসমক্ষে তারা নিজেদের ঈল বলে পরিচয় দেয়।

ক্যামনে জানলেন ভাই? চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

এই ইল-ঈল তুলনার আইডিয়াটা বেশ, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আপনার অন্যান্য টুকুনগল্পসমষ্টির মত জমেনি।

ইলের উপাখ্যানের জন্য বই দেখলাম, কিছু পরষ্পরবিরোধী কথা আছে, হয়ত বিভিন্ন মূল বইতে কিছু আলাদা গল্প লেখা, আবার সেগুলোর থেকে আপনারটাও কিছুটা আলাদা; এর কতটা আপনার নিজস্বতা আর কতটা উৎসের পার্থক্যের কারণে সেটা বলতে পারি না। তবে "শিকার করতে গিয়ে বন খুব ভালো লেগে যায় বলে সে রাজত্ব ছেড়ে বনে থেকে যায়।" - টা একটু কষ্টকল্পনা মনে হল।

ইলার গল্পটা ইলের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ফোর্সড হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।

@বুনোদি, দুজনেই দুজনার প্রেমে পড়েছিল, তবে পুরূরবাকে দেখে উর্বশীর 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট' হওয়ায় নাচের তাল কেটে যায়, ফলে তাকে অভিশাপ দিয়ে মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেখানেই পুরূরবাকে বিয়েথা করে।

নাশতারান এর ছবি

পুরূরবের নাম শুনেই এই ছবিটা মনে পড়ল।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

ইসে, লোকটার নাম পুরূরবা...

নাশতারান এর ছবি

ও আচ্ছা। আমি আবার আম্রেজিতে Pururavas পড়েছিলুম কি না! উচ্চারণটা বুঝতে পারছিলুম না Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

উইকিতে আবার লেখা Devanagari:पुरूरव, মানে পুরূরব বানানটাই। কিন্তু আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি পুরূরবা, বইতেও তাইই লেখা দেখলাম। হয়ত উইকিতেই বানানটা ভুল আছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ব্রহ্মপুরাণ অনুসারে নামটা পুরূরবা। এটাই ঠিক।

কৌস্তুভ এর ছবি

উর্বশীর চলে যাবার দৃশ্য - রবিবর্মা মনে হয়? দুষ্টু দেবতারা উর্বশীর নাচ ছাড়া আর থাকতে না পেরে রাত্তিরবেলা ভেড়া চুরি করে বিদ্যুৎ চমকিয়ে রাজাকে নেংটু অবস্থায় দেখিয়ে দিলেন... কত কেচ্ছা!

নাশতারান এর ছবি

হুম। রাজা রবিবর্মার বেশ কিছু পেইন্টিং ছিলো ছোটদের বিশ্বকোষে। খুব পছন্দ ছিলো আমার।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কৌস্তুভ,

টুইস্টটাই আসল ছিল। হেলে আছে জেনেও তাই আপিয়েছি। মন খারাপ

কিছুটা নিজস্বতা আছে।

তবে "শিকার করতে গিয়ে বন খুব ভালো লেগে যায় বলে সে রাজত্ব ছেড়ে বনে থেকে যায়।" - টা একটু কষ্টকল্পনা মনে হল।

কুলদারঞ্জন রায় প্রণীত পুরাণের গল্পে এরকম পেলাম-

আর ইলা অনেকটাই ফোর্সড্‌। হাসি

মন্তব্যের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কৈ কমেন্ট কর্লাম। আর কৈ আয়া পড়লো। ইয়া মাবুদ। দেঁতো হাসি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

১ । চিন্তিত

২ । চাল্লু

৩ । দেঁতো হাসি

চোখ টিপি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চ্রম! অতি চ্রম! অতিতীব্রবিভীষণ!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বনপছন্দ হওনের আসল কাহিনীটাই কইতেন... সেটা কিন্তু কম মজাদার ছিলো না...
তবে ইল বাবা মতিঝিলের আইডিয়া ভালু পাইছি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেঁতো হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমারে ছাঞ্চ দেওয়ার আগেই কইয়া ফালাইলেন নজরুল ভাই।

ইল বাবা মতিঝিল,
৫০০ টাকার বান্ডিল।।

শুভাশীষদা, গল্প ভাল লেগেছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক
-------------------------------

Sad Love Story|[url=http://www.loverofsadness.net ]Sad and Sadness[/url]

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ঈল একটি মাছ। আমাদের সকল জেন্ডার বিচারের আওতার বাইরে। হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ।

নীলকান্ত এর ছবি

ইলা........পুরনো কথা মনে হল। হাসি


অলস সময়

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ক্যাডা?

কুলদা রায় এর ছবি

ইল শব্দ প্রতিশব্দ হল ইরা, ইড়া।
ইলা=ভুমি, মনুর কন্যা, বুধের পত্নী ও পুরূরবার জননী।
তার আগে আরও কিছু কাহিনী শোনা যাক--
১. ইলা বৈবস্বত মনুর কন্যা, বুধের পত্নী ও পুরূরবার মাতা। মনু মিত্রাবরুণের উপাসনা করে একটি সন্তান প্রার্থনা করেন; কিন্তু আরাধনার ত্রুটিবশত পুত্রের পরিবর্তে কন্যা হয়। এই কন্যার নাম ইলা। ইনি পরে বিষ্ণুর বরে পুরুষত্ব লাভ করে 'সুদ্যুম্ন' নামে খ্যাত হন।
পরে মহাদেবের অভিশপ্ত কুমার বনে প্রবেশ আবার স্ত্রীভাবাপন্ন হন। এঁর পুরোহিত বশিষ্ঠে শিবের উপাসনা করলে ইনি একমাস স্ত্রী ও একমাস পুরুষ হয়ে থাকবার বর পান।
২. বাহ্লীক দেশের কর্দ্দম প্রজাপতির পুত্র ইল। ইনি একদা মৃগয়ায় বহু পশু বধ করতে করতে কার্ত্তিকেয়র জন্মস্থান ঘোর অরণ্যে প্রবেশ করেন এবং সেই স্থানে মহাদেব ও উমাকে ক্রীড়ারত দেখতে পান। দেবীর মনোরঞ্জনের জন্য মহাদেব তখন স্ত্রীরূপে খেলা করছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছাক্রমে অরণ্যের সমস্ত পুরুষ জন্তু বা পুংবাচক বৃক্ষ স্ত্রীত্ব প্রাপ্ত হয়। সুতরাং রাজা ইলও এখানে এসে স্ত্রীত্ব প্রাপ্ত হন। ..মহাদেব ও পার্ব্বতীর বরে রাজা ইল একমাস পুরুষ ও একমাস স্ত্রীরূপে থাকেন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হ... এই হইলো গঠনা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কুলদা দা,

ধন্যবাদ।

পুরাণের গল্প এখানে পড়তে পারেন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার হাতে টুকুন গল্প খেলে ভালো - ভাষার মোচড়ে দুনিয়াদারী সব উল্টায় ফেলেন। চীন এর সিরিজগুলা আমার সবচেয়ে প্রিয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দ্রোহী এর ছবি

ইল মাছের নেংটু যেদিন থেকে দেখা যাবে সেদিন দেখবেন ইল সমাজে এরে-ওরে বাদ দেবার জন্য কামড়াকামড়ি লেগে গেছে। দেঁতো হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঈল জেন্ডার সচেতন না হইলে তো যার তার কাছে গিয়া বাচ্চাকাংক্ষা করব!!! চোখ টিপি

গল্প পড়ে মজা পাইছি... হাসি

হিমাগ্নি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।