আরগস

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ২৩/০৪/২০১১ - ১১:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ও অফিসে রওনা হলে আমি নিজের মতো একা হয়ে পড়ি। চুলায় পানি ফোটাতে দেই। ডাইনিং টেবিলে পড়ে থাকা এঁটো থালা আর অর্ধেক চা-সহ চায়ের কাপ সিঙ্কে রেখে পানি ছাড়ি। চায়ের বাকিটা আস্তে আস্তে রঙ পালটে পানির রঙ নিতে থাকে। পানি ফুটে গেলে কাপে ঢেলে চায়ের একটা ব্যাগ ছাড়ি। পানি তার বর্ণ বদলায়। দেয়ালে একটা টিকটিকি টিক-টিক আওয়াজ করে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় আমাদের ছবির পেছনে অদৃশ্য হয়।

আমরা ভালোবাসাবাসির ও রাগ-অভিমানের দীর্ঘ প্রেমপর্ব কাটিয়ে বিয়ে করি। কিভাবে যেন আমি বুঝে ওঠার আগেই ও আমার ওপর জেঁকে বসে। আমার গান করা, ছবি আঁকা, কবিতা পড়া, কবিতা লেখা, একাকী নির্জনতম আমার সব সুদীর্ঘ স্বপ্ন ও চিন্তা একটা সময় পরে আপনা থেকেই গুটিয়ে যায়। তবে ওকে ভালোবাসা আমি কমিয়ে ফেলি না। প্রতিদিন সকালে একাকী চা খেতে গেলে একটা দিনের কথা মনে পড়ে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে সেদিন ওর বিশ্রীরকম মেজাজ দেখানো আশেপাশের লোকজনের ধার ধারেনি। আমিও খুব রেগেছিলাম। মুখ ফসকে বলেছিলাম- তোমার উচিত কোনো পতিতাকে বিয়ে করা। যার কোনো পরিবার পরিজন নেই। আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে ওর মুখ শুকিয়ে যায়। আমিও আর কথা ফিরে পাই না। আমার অত পড়ুয়া হবু বরের মধ্যের ট্যাবুকে কিছুটা যেন চিনেছিলাম সেদিন। পরে কোনো এক ভালোবাসাময় দিনে এই কথা বলার জন্য ওর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেই। পতিতাদের পরিবার থাকতে নেই কেন মনে হয়েছিল সেইদিন, সেইসময়!

এক একটা সম্পর্ক এক একভাবে এগোয়। প্রতিটা অসুখী পরিবারের গল্প নাকি ভিন্ন। সুখী পরিবারগুলো একই চৌকানা বাক্সে অদৃশ্য থেকে যায় বলে তাদের গল্প আমার জানা নেই। বাবা-মার সাথে আমার যে পরিবার সেটার সুখী ভাব নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত কোনো সন্দেহ ছিল না। বাবা প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস থেকে ফিরে ট্রেনে করে গ্রামের বাড়ী যেতেন। ফিরতেন শনিবার দুপুরে। একদিন জানতে পারি গ্রামে বাবার আরেক বউয়ের কথা। ততদিনে শরীর, স্তন, যোনী ও সঙ্গম চিনে গেছি। বাবাকে অল্প ঘৃণা করতে শুরু করি। কিন্তু মার সুখী সুখী চেহারা বাবার প্রতি ঘৃণা বাড়াতে অবাধ্য করে।

ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয় বিয়ের আগেই। দিনটার কোনো কথাই আমার মনে নেই। সেই সময় বান্ধবীরা তাদের ছেলেবন্ধুদের খুনসুটির কথা বলে বলে একে অন্যের ওপর গড়িয়ে পড়তো। আমার অনভ্যস্ত মুখে কোনো গল্প শুনতে পায় নি বলে আমাকেও খেপাতো। ঠিক কতোদিনের মাথায় ফ্রিজিড গালিটা শুনি পরিষ্কার মাথায় আসে না। অন্যান্য গালিগুলো শোনার আগেই আমি নিজের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে পড়ার অভ্যাস শুরু করি।

কিছুক্ষণ পরেই ওর ফোন আসে। মিস্টার আম্বানি। দুপুর দেড়টা। ভারতীয় ডেলিগেট। একটু চুপ থেকে ফিসফিস করে উচ্চারণ করে- ফ্যালাসিও।

খুব তৃষ্ণা পায়। অনেকগুলো আধ লিটারের পানির বোতল স্তুপ করে রাখা আছে স্টোররুমে। একটা বোতল নিয়ে ফ্রিজে ঢোকাই। পানি ঠাণ্ডা হবার জন্য নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকি।

ফিরে: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের যুগলবন্দি গল্পের এলসেশিয়ান আরগসের নাম থেকে গল্পের শিরোনাম।


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

চলুক । পড়ার সময় মাথার ভীতরে যে চিত্রটা ছিল, শেষ দুই প্যারায় পুরোই পালটে গেল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সবজান্তা এর ছবি

চমৎকার একটা গল্প। আপনার গল্পতে ডিটেইলসের ব্যাপারটা দারুণ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আরে স্যার, আপ্নে লেখেন না ক্যালায়?

নীলকান্ত এর ছবি

হাসি
ভালো লাগলো গল্পটা।


অলস সময়

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মন খারাপ


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ।

নিবিড় এর ছবি
শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ধইন্যা'র পাশেই দেখি তালগাছ। আপ্নেরে ভুলে তালগাছ দিয়ে ফেলছিলাম। অ্যাঁ

খেকশিয়াল এর ছবি

কী ভয়ংকর একটা গল্প!

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভয়ানক। মন খারাপ

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব ভাল লাগলো গল্পটা। আপনার অন্য অণুগল্পগুলো শেষ না হওয়ার একটা যন্ত্রণা থাকে, এটা খুব পরিপূর্ণ মনে হলো।
( ইন্টারেস্টিং হলো- আরগস দেখেই আমার আসগরের কথা মনে পড়ে গেছিলো। হাসি )

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনার তো মনে পড়ে যাবেই। হাসি

রানা মেহের এর ছবি

অনেক সুন্দর গল্প

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

খুবই সুন্দর।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

প্রথম প্যারাটা পড়েই মুগ্ধ ছিলাম
শেষ দুই প্যারায় একটু তব্দা খাইলাম
দারুণ একটা গল্প...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আগে আপনারে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দিছি আরো দুইবার। একবার নিচে নেমে গেছে। আরেকবার হাপিশ! মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কাছে মনে হয়েছে পঞ্চম অনুচ্ছেদটা এই গল্পের মেজাজ ও গতিপ্রবাহ বিবেচনায় মিসফিট। ষষ্ঠ অনুচ্ছেদটা পঞ্চম অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে কেবল। প্রথম চারটা অনুচ্ছেদ ভারী দামেস্ক তরবারীর মতো - পলকে, নিঃশব্দে কেটে ফেলে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ইয়ে, মানে...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উল্লম্ফনজনিত ডুপ্লি

সুমিত রহমান এর ছবি

"আমার গান করা, ছবি আঁকা, কবিতা পড়া, কবিতা লেখা, একাকী নির্জনতম আমার সব সুদীর্ঘ স্বপ্ন ও চিন্তা একটা সময় পরে আপনা থেকেই গুটিয়ে যায়।" ... "কিছুক্ষণ পরেই ওর ফোন আসে। মিস্টার আম্বানি। দুপুর দেড়টা। ভারতীয় ডেলিগেট। একটু চুপ থেকে ফিসফিস করে উচ্চারণ করে- ফ্যালাসিও।" অথবা বাবার আরেক বউ থাকার পড়েও মায়ের সুখী সুখী চেহারা..... ভালোবাসার কি দারুন পরিণতি!!! মাঝে মাঝে মনে হয় সহ্য করার ক্ষমতা কিছু কিছু মানুষের আরো অনেক কম থাকা উচিত ছিল, ভালোবাসার পরিচিত মানুষগুলোর ভেতর বোধশক্তির যে বড়ই অভাব আর সেটা সামান্য পরিমাণ বাড়াতেও যে তাদের ঘোর আপত্তি।

লেখাটা খুবই ভালো লাগলো, অতি উত্তম। চলুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

প্রথম প্যারাটা চমৎকার লাগলো। কিন্তু শেষটা বুঝলাম না। ভারতীয় ডেলিগেট মিঃ আম্বানি কে? মূল চরিত্রের স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক কী? চিন্তিত

জি.এম.তানিম এর ছবি

"মিস্টার আম্বানি। দুপুর দেড়টা। ভারতীয় ডেলিগেট।" এই অংশটা মূল চরিত্রের স্বামীর বক্তব্য। সম্পর্কটা ব্যবসায়িক। লক্ষ্য ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি, মূল্য "ফ্যালাসিও"।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আরে জিয়েমটি কি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছে। অনেক ধন্যবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

খুব ভালো লাগলো, পাঁচতারা দিলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মুস্তাফিজ এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে। একদমই অণুগল্প মনে হয়নি।

...........................
Every Picture Tells a Story

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

জি.এম.তানিম এর ছবি

আমার ইদানিং একটা খুবই খারাপ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে পড়তে গিয়ে গল্পের আসল স্বাদ পাই না। তাই বারবার পড়ে বুঝে নিতে হয়। শেষের টুইস্টটা প্রথমে ধরতে পারি নি।

ভালো লেগেছে।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দময়ন্তী এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শেষ দুই প্যারা। মন খারাপ

দময়ন্তী এর ছবি

না শেষ দুই প্যারা নিয়ে আমার খুব কিছু বক্তব্য নেই৷ থাকলে থাকুক না৷ তবে গল্পের 'আমি'র জন্য মন খারাপ

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অমিত আহমেদ এর ছবি

বেশ লাগলো গল্পটা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ।

আয়নামতি1 এর ছবি

আপনার গল্পের মোচড়গুলো দারুণ লাগে! ঝট্ করেই বুঝিনা অনেক সময়, পরে বুঝে গেলে অপার আনন্দ দেঁতো হাসি প্রথম প্যারার বাসি চায়ের কাপ সিঙ্কে নেবার পর চা ধুয়ে জলের রং নেয়া আর পরে চায়ের জলে টীব্যাগ দেবার পর জলের রং বদলে যাওয়াটা ছবির মত লাগলো যেন চাল্লু

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দ্রোহী এর ছবি

আপনার লেখার ধার দিন দিন বাড়তেছে মশাই।

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।