গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন, মৃত্যু।।

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/১১/২০১২ - ১২:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুক্তরাষ্ট্রের লুসিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকুলে (গালফ অভ মেক্সিকো) ডিপওয়াটার হরাইজন নামের অফশোর ওয়েল-রিগে বিস্ফোরণ হয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। বিস্ফোরণে মারা যায় ১১ জন, তেল নিঃসরণে দেখা দেয় মারত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। অপারেটর হিসাবে সেখানে তখন কাজ করছিল যুক্তরাজ্যের তেল কোম্পানি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি)। কিছুদিন আগে ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বিপিকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে - ফৌজদারি অপরাধে (criminal offense) - যার সাথে ১১ জনের ‘হত্যার’ সম্পর্ক আছে। খেয়াল করুন, ফৌজদারি অপরাধে - পরিবেশ সম্পর্কিত অন্যান্য দেওয়ানি মামলা (civil proceedings) এখনও চলছে।

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে (কী পরিহাস!) তাজরিন ফ্যাশনস লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেছে শতাধিক কর্মী। গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু বাংলাদেশে নতুন নয়, তেমনি নতুন নয় সংখ্যার খেলা। এবারের ‘সংখ্যা্টা’ হয়ত অসহনীয়। প্রচুর বিশ্লেষণ এবং টক-শো দেখলাম গত দুইদিন। অনেক জ্ঞান লাভ হল।

বিজিএমইএ বলেছে তাজরিন ফ্যাশন্স লিমিটেড ‘কমপ্লায়্যান্ট’ফ্যক্টরি। টার্মটা আমার কাছে কোন অর্থ বহন করেনা। আমার নিজের ‘ফায়ার সেইফটির’ উপর প্রশিক্ষণ এবং প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা আছে। ব্যাপারটা কোন ‘রকেট সাইন্স’ নয়। জ্ঞান লাভের কথা বলছি এজন্য যে - সবার জন্য মাস্কের ব্যবস্থা, অনেকগুলি সিড়ির ব্যবস্থা ইত্যাদি অনেক অবাস্তব কথা শুনলাম। একজন ‘সেফটি স্পেশালিষ্ট’ বলেছেন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি চার তলার বেশি হওয়া উচিত নয়। আমার আগের প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠার পর এগারো তালা থেকে নীচে নেমে ‘এসেম্বলি পয়েন্টে’ সবার যেতে গড় সময় লাগত ৪ মিনিটের মত। একটা মাত্র সিড়ি বিশিষ্ট ২০ তালার সেই দালানের প্রায়োগিক ‘ফায়ার সেইফটির’ ব্যাপারটা ঢাকার যেকোন বিল্ডিঙের কাছে ঈর্ষণীয় হবে।

ফায়ার সেইফটি নিয়ে সব কথাই বলা হচ্ছে, শুধু বলা হচ্ছে না যে বাইরে বের হওয়ার গেট/দরজা বন্ধ করে দিলে ‘কমপ্লায়্যান্ট’ কিংবা পৃথিবীর বিখ্যাত ফায়ার সেইফটি সিস্টেম এখানে কোন অর্থ বহন করেনা।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট যথারীতি দৃঢ়স্বরে ষঢ়যন্ত্রের কথা বলেছেন। দলমত নির্বিশেষে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষঢ়যন্ত্রেকে প্রতিহত করতে বলেছেন। (ইন্ডেপেন্ডেন্স ডে টাইপের হলিউডি চলচিত্রে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আবেগময় ভাষণের কথা মনে হল।) এর মধ্যে ডেবোনিয়্যার গার্মেন্টস নামের একটা ফ্যাক্টরিতে এক কর্মীর আগুন লাগানোর চেষ্টার ভিডিও ক্লিপের ঠেলায় ষঢ়যন্ত্রের থিওরির ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে মৃত্যুর দায়দ্বায়িত্ব। নিশ্চিত যে মাথা পিছু একলক্ষ টাকা, ষঢ়যন্ত্র এবং সবচেয়ে বড় ফরেন-কারন্সি উপার্জন করে এমন একটা সেক্টারকে ‘ঘাটানোর’ রিস্কের আড়ালে মৃত্যুর ব্যাপারটা চাপা পরে যাবে। কিছুদিন পর আবার আরেকটা ঘটনা – টকশো, বিশ্লেষণ... ষঢ়যন্ত্র।

যথারীতি বিরোধিদল সরকারের সব দোষ দেখতে পাচ্ছে। সরকার ডিফেন্সিভ হয়ে জাস্টিফাই করা শুরু করে দিয়েছে।

যে কথাটা বলা হচ্ছে না, আগুন শর্টসার্কিটে লাগুক, কিংবা ষঢ়যন্ত্র করেই লাগানো হোক, ফায়ার সেইফটির নিয়ম কানুনের কোন ব্যতয় হওয়ার কথা না।
বিবিসি কালকে এই শতাধিক মৃত্যুকে লিড নিউজ করেছে। যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যদি ষড়যন্ত্র থেকে থাকে, এই মৃত্যু বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশে গার্মেন্ট সেক্টারের জন্য করুণ পরিনতি অপেক্ষা করছে।

কেউ কেউ ‘কস্ট-বেনিফিট’ এনালাইসিস করে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি গুলোকে কমপ্লায়্যান্ট (বাস্তবে, কাগজে কলমে না) হবার কথা বলছে। কয়টা তথাকথিত কাপড় ‘চুরি’ বনাম ‘মৃত্যুর’ পরিনাম। কিন্তু কস্ট-বেনিফিট সমীকরণে ‘কস্ট’ কোথায়? কেউ কেউ ‘মানবতা’ জাতীয় ‘রেটোরিকের’ কথাও বলছেন।
এই মৃত্যু বন্ধ করতে হলে, গার্মেন্ট সেক্টারের সম্ভাব্য করুণ পরিনতি বন্ধ করতে হলে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কস্ট-বেনিফিটের ‘কস্ট’ নিশ্চিত করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বাকিটা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক করে নিবে যার যার নিজেদের স্বার্থে। প্রক্রিয়াটা এখান থেকেই শুরু করা উচিত।

[ডিউটি অভ কেয়ার, এবং নেগলিজেন্সের জন্য টর্টের অধিনে আইনের আশ্রয় নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু মনে হল সেটা এই ক্ষেত্রে খুবই হালকা দেওয়ানি আইনের ব্যাপার, এটা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ, সেজন্য উল্লেখ করলাম না।]


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

হিমু এর ছবি

এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিলো। সেগুলো অমান্য করার অপরাধে সরকারী কর্তা ও গারমেন্টস মালিকদের বিচার না হলে এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাটা খোঁজে পাচ্ছি না।

আইলসা এর ছবি

কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরীর কিছু কাহিনী আমি জানি, ধরেন যখন বায়াররা ভিসিটে আসে, তখন এই ফ্যাক্টরি গুলা "চাইল্ড কেয়ার সেন্টার", "মেডিকেল রুম", শ্রমিকদের জন্য ওয়াশরুম সবই দেখায়। কিন্তুক বায়ার এয়ারপোর্টে যাইতে না যাইতে "চাইল্ড কেয়ার সেন্টার" প্রোডাকশন রুম হয়ে যায়। আর দেশের কমপ্লায়েন্ট অফিসাররা তো মাশল্লাহ ভালোই কামায় সুতরা কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরী কাগজে আছে, আসলে ভো ভো। খালি দুইটা গার্মেন্টস মালিকরে সাহস কইরা সরকার ঝুলাইয়া দেখ। মালিকরা যতই ভয় দেখাক, বিজনেস করবো না; বিজনেস ছাড়া উপায় নাই, এতো মার্জিন আর কই আছে??

নৈষাদ এর ছবি

এ ব্যাপারটা শুনেছি অবশ্য। তবে এগুলি মনিটর করার জন্য তো সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর আছে। 'ঝুলানোর' কথা বলছি না অবশ্য, কিন্তু আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলতে চাচ্ছি।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমার দিন দিন যেটা উত্তরোত্তর মনে হচ্ছে, যেই অঞ্চলে সাংস্কৃতিকভাবে আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি হয় নি, সেই অঞ্চলে "সরকার চাইলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারতো, কিন্তু করছে না" - তেমনটা ভাবা একটা ভ্রান্ত ধারমা। যারা সরকারের ব্যর্থতার ঔষধস্বরূপ আরো আরো সরকার চান, তাদের জন্যে এটা ফুড ফর থট। আমি ভাণ করছি না যে কী করতে হবে আমার জানা আছে। তবে আমার সমূহ সন্দেহ হলো আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ মূলত বটম আপ জিনিস, টপ ডাউন না। তার মানে বলছি না যে সরকারের কিছুই করার নাই, বা সে গোবেচারা নাদান শিশু। কিন্তু আমি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি এখানে সরকারের নড়েচড়ে ওঠার ইনসেনটিভ শূন্যের কোঠায়। সরকারের হর্তাকর্তাদের মূল ইনসেনটিভ হলো সেটা - যেই সোর্স থেকে তাদের পেটের ভাত আসে। ব্যবসা বাণিজ্য। ফলে সে মূলত তার পাছা বাঁচানোর জন্যেই ফাংশন করে। পাঁচ বছর অন্তর সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে সরকারকে ফিডব্যাক দেয়, এটা একটা কমপ্লিট ভ্রান্ত ধারমা। সরকার পাঁচ বছর পায় এইটা সেইটা বলে তার মলমূত্র ধামাচাপা দেওয়ার। সেই তুলনায় একদিনের ভোট একটা অতি তুচ্ছ ফিডব্যাক। ফলে সরকার ব্যবসায়ীদের প্রতি হঠাৎ একদিন নৈয়ায়িকভাবে খড়গহস্ত হবে এমন কল্পনা করা আর খালেদা জিয়া একদিন তারেক কোকোর বিচার করবে এমন কল্পনা করা প্রায় সমান দোষণীয় লাগছে এখন আমার কাছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার মন্তব্যগুলো চিন্তার উদ্রেক করে।

ভালো বুঝলাম কিনা -- "সরকার" বলতে আপনি বর্তমান সরকার (মহাজোট) বোঝাচ্ছেন না, তাই তো? ইন জেনারেল "সরকার" বোঝাচ্ছেন- সেটা নিজামী-খালেদার সরকার বা এরশাদ, তাই তো?

প্রশ্ন করলাম কারণ আমার কিছু হাইপোথিসিস আছে। তার মধ্যে একটি হলো-- অধিকাংশ আমজনতা/ব্লগার/রাজনৈতিক লেখক এরা সবাই একেকটা পক্ষে অব্স্থান নিয়ে তাদের ভাবনা পেশ করে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে এখন যদি বিরোধী দল সরকারে থাকতো তাহলে ব্লগ মন্ডলে এবং ফেসবুকে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখতাম। কিংবা আপনার এই মন্তব্যটিই তখন কিভাবে আসতো।

দু:খজনক ব্যাপার হলো এই প্রশ্নের (বা প্রকল্পের) কোয়ান্টিটেটিভ উত্তর দেয়া কঠিন। উত্তর দিতে গেলেও একটা পক্ষের অবস্থান থেকেই দিতে হবে।

আমার কৌতূহলের কথাগুলো জানালাম। সমাজবিজ্ঞান/রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে যারা পড়ছেন তারা হয়তো ভালো উত্তর দিতে পারবেন (?)

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভালো বুঝলাম কিনা -- "সরকার" বলতে আপনি বর্তমান সরকার (মহাজোট) বোঝাচ্ছেন না, তাই তো? ইন জেনারেল "সরকার" বোঝাচ্ছেন- সেটা নিজামী-খালেদার সরকার বা এরশাদ, তাই তো?

ইয়েস। একটা কোরে এরা অবিচ্ছেদ্য। এ কারণে আওয়ামী লীগ যখন মেইক সেন্স করার মতো একটা দুটো কথা কাজ কালে ভদ্রে বলে করে, তখন আমরা তাকে আকড়ে ধরি আর সন্ত্রস্ত হই ভেবে যে অন্যদলগুলো কতোটা ভয়ঙ্কর যে তাদের ইভেন ওই টুকু কমন সেন্সও নেই। এবং এতে আমাদের একটা আশার প্রদীপ জ্বলে। আল্লার উপর দরিদ্র কৃষক যেমন আশায় বুক ভাসায় বসে থাকে। আমরাও আশা করি, আওয়ামী লীগ যেহেতু একটা দুইটা কমনসেন্স দেখাতে পারে, তার আসলে ক্যাপাসিটি আছে আরো আরো কমনসেন্স দেখানোর।

উই ক্যান ফুল আওয়ার সেল্ফ অ্যাজ মাচ অ্যাজ উই ওয়ান্ট। কিন্তু এভিডেন্স বলে যে আমাদের কমনসেন্সে খেতাব পাওয়া দলটার কমনসেন্সও একটা দুটো কথা ও কাজেই কেবল সীমিত। এরা কোরে অবিচ্ছেদ্য।

ব্যাপারটা এমন না যে এরা স্বয়ং শয়তানের প্রেরিত অবতার, নক্সা করে করে এসব অকাজ করে। এটা সরকারব্যবস্থার চরিত্র। যেমনটা সব প্রতিষ্ঠানেরই একটা চরিত্র থাকে। কর্পোরেটদের যেমন অামানুষিক মুনাখালোভী একটা চরিত্র আছে। তেমনি সরকার ব্যবস্থা অবধারিতভাবে এইরকম অকার্যকারিতায় পর্যবসিত হয়।

আপনি যদি অপ্টিমাইজেশনের লাইনে একটু আধটু পরিচিত থাকেন, আপনি তো জানেন যে সামান্য কয়টা চলকসম্বলিত একটা সিস্টেমকে একেবারে হাতে ধরে ডিজাইন করে অপ্টিমাইজ করাটাই কতো টাফ। আর সরকার সেখানে কোটি মানুষের নানা নাড়ি নক্ষত্রের নক্সা করার ভাণ করে বসে থাকে। এটা ফ্যাকচুয়ালি ইম্পসিবল যে ওনারা ইফেক্টিভ কিছু একটা করে উঠতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ঘটনাতে ফৌজদারি দায় সাব্যস্ত করার কৃতিত্ব যতোটা তাদের সরকারের, তার চেয়ে বেশি তাদের শতবছরের আইনের শাসনপন্থী সভ্যতা সংস্কৃতির। ননএক্সিসটেন্ট একটা সংস্কৃতিতে সরকার তেমন কিছু করে উঠতে পারে না/চায় না/করে না। মানুষের জীবন যাপন স্পনটেনিয়াসলি এগিয়ে যায়। মানুষ তার জীবনের তাগিদে উঠে দাঁড়ায়। উৎপাদন করে, লেনদেন করে, বেঁচেবর্তে থাকে। সরকারের হাত পড়লেও থাকে। না পড়লেও থাকে।

ক্ষোভ থেকে হয়তো বাড়িয়েই বলছি। বাট এভিডেন্সও অন্যথা বলে না। যে সরকার ব্যবস্থাটা প্রায় কোনো দেশেই একটা এয়ারলাইন্স ঠিকঠাক চালাতে পারে না, সে ঠিক কোন যাদুবলে কোটিমানুষের নাড়িনক্ষত্রের নক্সা করবে বলেন? সে ভাণ করে যে সে সব দেখবে। আমরাও ভাণ করি সে সব দেখবে। তারাও জানে, আমরাও জানি, আসল কাজ লাভক্ষতির হিসাবে এগুবে। প্রচলিত লাভজনক একটা পন্থা নিয়ম ও সংস্কৃতিতে পরিণত হবে (ধরুন, শ্রমিকের দেখভাল)। তারপর সেটা পরিণত হবে দেশের আইনে। উল্টোটার চেষ্টা করে কোথাও কি সুফল পাওয়া যায়? সরকার দেবতা না। সে ভালো কাজের শপথ নেয়। কিন্তু সারাদিন ধরে সে করে সেই কাজটাই যেটা তার নিজের ইনসেনটিভের সাথে কম্প্যাটিবল।

নিউজ খুলুন। দেখুন এইরকম একটা ঘটনা ঘটার পরেও সরকার তার ভ্যালুয়েবল কাজ কীভাবে ব্যয় করছে। সে শোক দিবসের ধর্মীয় আচারাদি পালন করছে। এটা প্রিসাইসলি জানান দেয় যে তুকতাক, আবেগ, অনুভূতির বাইরে ইফেক্টিভলি কিছু একটা করার মুরোদ আসলে তার নাই। সে তার চরিত্রের বাইরে এসে নিজের ইনসেনটিভের বিপক্ষে গিয়ে ব্যবসায়ীদের উপর খড়গহস্ত হবে না।

সংসদভবনের মূল্যবান সময় কী বলে ব্যয় হচ্ছে দেখেন। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। কারখানা পরিদর্শনে সরকারের লোকবল নেই। কিন্তু এইসব ষড়যন্ত্র একেবারে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে দেখবেন তার সকল বাহিনী হাজির। কারণ এই কাজেই সে পারঙ্গম। এটা তার ইনসেনটিভের সাথেও একশভাগ কম্প্যাটিবল। আর আপনি তো জানেন, এগুলো কাজেও দিবে। অর্ধেক লোক তার রাগ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের থেকে বহির্শক্তির দিকে সরিয়ে নিবে। ভূতের উপর রাগ ঝেরে তাদের সব রাগ ফুরোবে। অবশ্যই যেহেতু ভূতের কারবার সরকার ছাড়া আর কেউ ভালো ডিল করতে জানে না, লোকে তখন কী করতে হবে বুঝে উঠতে না পেরে বিশ্বাস করবে যে সরকারই সেই ভূত তাড়াবে। মানে সেই আবার সরকারের উপর মিথ্যামিথ্যি নির্ভর করার ভাণে গিয়ে কাহিনী শেষ হবে। এখানে সরকার বিচার করা তো দূরের কথা, ব্যাপারটাকে যে আরো ওর্স করছে, সেটা টের পাচ্ছেন?

দুষ্ট লোকে বলে যে পৃথিবীটা টিকে থাকে প্রিসাইসলি এ কারণে যে সরকার সবকিছুতে হাত দিতে পারে না। সে যেখানে হাত দেয়, সেখানেই একটা প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। এ নিয়ে একটা কৌতুক আছে। এক লোক আক্ষেপ করে বলছে, শালার সরকার তো ট্যাক্স নিয়ে ছুলে দিচ্ছে। তখন তার বন্ধু তাকে বললো, দোস্ত, এই ভেবে খুশি হও যে যতো টাকা দেই, ততো টাকার সরকার আমরা পাই না।

জোক্স অ্যাপার্ট, সরকারকে প্রতিনিয়ত চাপ না দিলেও যে কোনো কাজের কাজ হবে, তাও মনে হয় না। কিন্তু একইসাথে সরকারের ফাংশনিংটা আসলে কীরকম সেটা জানাটাও আমাদের একান্ত প্রয়োজন। আমরা নিজেদেরকে ধোঁকা দিয়ে সরকারের কাছে বিলাপ করলেই কেনো কিছু যে সহসা পরিবর্তন হয়ে ওঠে না, কেনো ওঠে না, সেটার স্বরূপটা আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। তাহলে সরকারও জানবে যে আমরা সেটা জানি।

একসময় পুরোহিতরা বুঝাতো যে রাজা স্বয়ং খোদার ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজ্য শাসন করে। রাজতন্ত্র টিকে থাকতো প্রিসাইসলি সেই মিথ্যায় মানুষের বিশ্বাসের কারণে। তারপর মানুষ যখন বুঝে উঠতে থাকে যে রাজার সাথে কোনো খোদাফোদার কোনো সম্পর্ক নেই, রাজার ম্যানডেট তখন ভেঙে চূরচূর হতে শুরু করে। সে জায়গায় স্থান নেয় "জনগণের শাসন"। তারা তখন বলে যে আমরাই নাকি আমাদের শাসন করি। কিন্তু ভেতরে আসলে কী ঘটে, সেটার মিথগুলো সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার হওয়া দরকার। এতে আগের মতোই লাভ বৈ ক্ষতি হবে না।

অবনীল এর ছবি

সংসদভবনের মূল্যবান সময় কী বলে ব্যয় হচ্ছে দেখেন। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। কারখানা পরিদর্শনে সরকারের লোকবল নেই। কিন্তু এইসব ষড়যন্ত্র একেবারে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে দেখবেন তার সকল বাহিনী হাজির। কারণ এই কাজেই সে পারঙ্গম। এটা তার ইনসেনটিভের সাথেও একশভাগ কম্প্যাটিবল। আর আপনি তো জানেন, এগুলো কাজেও দিবে। অর্ধেক লোক তার রাগ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের থেকে বহির্শক্তির দিকে সরিয়ে নিবে। ভূতের উপর রাগ ঝেরে তাদের সব রাগ ফুরোবে। অবশ্যই যেহেতু ভূতের কারবার সরকার ছাড়া আর কেউ ভালো ডিল করতে জানে না, লোকে তখন কী করতে হবে বুঝে উঠতে না পেরে বিশ্বাস করবে যে সরকারই সেই ভূত তাড়াবে। মানে সেই আবার সরকারের উপর মিথ্যামিথ্যি নির্ভর করার ভাণে গিয়ে কাহিনী শেষ হবে। এখানে সরকার বিচার করা তো দূরের কথা, ব্যাপারটাকে যে আরো ওর্স করছে, সেটা টের পাচ্ছেন?
গুল্লি উত্তম জাঝা!

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চমৎকার উত্তর। আমার প্রশ্নের চেয়েও উত্তরে আপনি বেশী বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। ধন্যবাদ সেজন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ঘটনাতে ফৌজদারি দায় সাব্যস্ত করার কৃতিত্ব যতোটা তাদের সরকারের, তার চেয়ে বেশি তাদের শতবছরের আইনের শাসনপন্থী সভ্যতা সংস্কৃতির। ননএক্সিসটেন্ট একটা সংস্কৃতিতে সরকার তেমন কিছু করে উঠতে পারে না/চায় না/করে না। মানুষের জীবন যাপন স্পনটেনিয়াসলি এগিয়ে যায়। মানুষ তার জীবনের তাগিদে উঠে দাঁড়ায়। উৎপাদন করে, লেনদেন করে, বেঁচেবর্তে থাকে। সরকারের হাত পড়লেও থাকে। না পড়লেও থাকে।

আমাদের দেশে কবে এরকম হবে! আমার মনে হয় পরিবর্তন আসবে--পোড় খাওয়ার মাধ্যমেই একদিন পরিবর্তন আসবে।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ ধ্রুব বর্ণন। ইন্টারেস্টিং। তবে আপনার মন্তব্য এবং নিচে (হয়ত উপরে) প্রকৃতিপ্রেমিকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার কিছু অভজারভেশন আছে। রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশ চালনার ওভারওল ফিলোসফিতে পরিবর্তন আসে, লেজিসলেটিভ অর্গ্যানে পরিবর্তন আসে। কিন্তু এক্সিকিউটিভ এবং জুডিশিয়্যারির, বিশেষ করে এক্সিকিউটিভের কোর সিস্টেমে তেমন পরিবর্তন আসেনা।

আপনি বলেছেন,

যেই অঞ্চলে সাংস্কৃতিকভাবে আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি হয় নি। ... আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ মূলত বটম আপ জিনিস,টপ ডাউন না।

তত্ত্ব নয়, শ্রেফ অভজারভেশনের ভিত্তিতে আমার উল্টোটা মনে হয়। ব্যাপারটা পুরোপুরি টপ-ডাউন। আরোপিত। প্রতিষ্ঠানে তো বটেই। উদাহরণ দেই, আমার আগের প্রতিষ্ঠানে সেইফটি ইস্যু মারাত্মক ভাবে মানা হত। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও পরে দেখেছি কর্মীদের যাপিত জীবনেও সেইফটি ইস্যুকে কিভাবে মেনে চলত, কিংবা পরবর্তী প্রতিষ্ঠানে।

দেশের ব্যাপারেও সেটা মনে হয়। এইযে পশ্চিমে ‘আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে’ সেইটাও পুরাপুরি আরোপিত মনে হয় (ভাল সেন্সেই বলছি)। আমার যে কাজিন বারো বছর আগে ঢাকা শহরে গাড়ি নিয়ে আইন ভাঙ্গার খেলায় মেতে উঠত, সে ইউকেতে গিয়ে ভীষণ কমপ্লায়্যান্ট। প্রাথমিক ভাবে আইনের ভয়ে। বারো বছর পর ‘তার মূল্যবোধ তৈরি হয়ে গেছে’। অথবা আমাদের প্রবাসীরা। দেশের তো আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ ছাড়াই বড় হয়ে উঠে। সেখানে গিয়ে কমপ্লায়্যান্ট না হয়ে কোন উপায় নেই। একযুগ পশ্চিমা দেশে থেকে ফিরে আসলে দেখুন এরা কিন্তু দেশে কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠে। আমার কাছে এটাকে পুরাপুরি আরোপিত মনে হয়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

একযুগ পশ্চিমা দেশে থেকে ফিরে আসলে দেখুন এরা কিন্তু দেশে কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠে।

অনেকে বলেন যে বিদেশ থেকে আসলেও তাদের চরিত্র পালাটায় না। অর্থাৎ বিদেশে শ্রদ্ধাশীল হলেও দেশে এসে দেশের নিয়মেই চালিত হন।

আমাদের নেতা নেত্রীরা থেকে শুরু করে স্পীকার মহাশয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী-- সবাই কিন্তু বিদেশে যান নানা কারণে। মাঝে মাঝে শিখতেও যান। কিন্তু তার প্রতিফলন তো দেখিনা মন খারাপ

নৈষাদ এর ছবি

হয়ত ছোটবেলা থেকে ফ্রেম-অভ-রেফারেন্স এভাবে তৈরী হয়েছে। অথবা, এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়া হওয়া তো একট্টা সেকশনের জন্য আশীর্বাদের মত, বদলানোর দরকার কী। মন খারাপ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

যদি ভাবেন আরোপিত, তাহলে কেনো পশ্চিম আরোপ করতে পেরেছে আর কেনো বাংলাদেশের সরকার পারছে না, সেই পয়েন্টটা কিন্তু মিস হয়ে যাচ্ছে। একদিন সকাল বেলা সরকার হঠাৎ আন্তরিক হয়ে টপ ডাউন আরোপ করার তত্ত্বটা ahistorical। এটা সম্পূর্ণই হঠাৎ একদিন সরকারের আন্তরিক হয়ে ওঠার উপর নির্ভর করছে।

সরকার একটা সমাজের ভিত্তির উপর গড়ে ওঠে, নাকি সরকারই সমাজকে গড়ে? বড়জোর বলা যায় এটা একটা symbiosis। কিন্তু সমাজ একটা নিয়মকে sustain করার ভিত্তি তৈরি করে দেয় দেখেই তো সরকার সেই নিয়মটাকে পালন করতে পারে। ব্যাপারটা অতি অবশ্যই বাইনারি না। এমন অবশ্যই সম্ভব যে আগে আইনের ভয়ে পালন করতে করতে তারপর মূল্যবোধ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর গোড়াটার ক্রেডিট আমি আরোপে দেখতে পাই না, মূলত অর্থনীতিতে জড়িতদের লাভক্ষতির সেন্সে দেখতে পাই। ওই নিয়ম মূলত ওই সমাজের অর্থনীতিতে লাভজনক। সেটা অর্থনীতিতে জড়িতরা, বিশেষ করে উৎপাদনের সরঞ্জামের ও সেবাপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা (কেবল কর্পোরেট নয়, ছোট ব্যবসায়ীরাও) উপলব্ধি করে। ফলে পশ্চিমে গেলে দেখবেন, মোটের উপর মানুষজন আইনের ভয়ে আইন মানে তা নয়। তাদের সাথে কথা বলে প্রায় সকল কেইসে আমার মনে হয়েছে, তারা একেবারে প্রিন্সিপালি জানে কেনো এই আইনটা মেইকসেন্স করে। ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকবে।

এই বটম আপ ভিউটা সরকারের চরিত্র ব্যাখ্যা করতে পারে, সে কেনো সদা আন্তরিক থাকে না, সে কেনো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু করে ওঠে না, সেটা ব্যাখ্যা করে। টপ ডাউন ভিউটা অনেকাংশেই একজন আন্তরিক নেতার উপর নির্ভর করায়। সেটার এক্সট্রিম ভিউতে সরকার ছাড়া সমাজ অচল। এই দুই এক্সট্রিম ভিউয়ের অনেক প্রপোনেন্ট আছে। তাদের তর্ক কোনোদিন শেষ হয় নি। আমার কাছে এগুলো হলো একেকটা দেখার উপায়। যে উপায়ে মিথ ভাঙে, একটা সিস্টেমের ফাংশনিং পরিষ্কার হয়, সেটা কাজের। বটম আপ ভিউ অনেকক্ষেত্রেই কাজের। আমার আশঙ্কা, আমাদের মাঝে টপ ডাউন ভিউটা অতিরিক্তরকম বেশি প্রচলিত।

নৈষাদ এর ছবি

আপনার যুক্তিগুলি ঠিক আছে। আমি নিশ্চিতভাবেই খুব রেডিক্যাল মতামত দিয়েছি। গনতন্ত্রে এটা হওয়া উচিত না, সরকার সমাজের প্রতিফলন হয়। অনেকদিন করপোরেটে থাকায় টপ-ডাউনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি মনে হয় মন খারাপ
অবশ্য গনতন্ত্রে উত্তরণে কিছু কিছু টপ-ডাউন থাকতেই হবে।

তবে, পশ্চিমা বিশ্ব কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অনেক ‘রেগুলেটেড’, যেটা সার্বিক ভালর জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের সরকার ইচ্ছা করলেও এমন করতে পারবে না...কোন এক সময় বিস্তারিত বলার ইচ্ছা আছে। সেটাও রেডিক্যাল চিন্তাভাবনা।

ধন্যবাদ আপনাকে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অনেকদিন করপোরেটে থাকায় টপ-ডাউনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি মনে হয়

ম্যাট রিডলি তার rational optimist বইতে যুক্তি দিয়েছেন যে কর্পোরেটরা তাদের এই টপ-ডাউন নেচারের জন্যে কম্পিটেটিভ মার্কেটগুলোতে ধীরে ধীরে ধরা খেয়ে ওঠে/উঠবে। কথাটা বেশ কাউন্টার ইন্টিউটিভ লেগেছিলো, কিন্তু যুক্তিগুলোও মোক্ষম মনে হয়েছে। এ নিয়েও পরে আলোচনা হতে পারে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। এখন আবার ম্যাট সাহেবে বইটা পড়ার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিচ্ছে।

পথিক পরাণ এর ছবি

ধ্রুব দা- আপনার প্রথম বাক্যটিতে অনেকগুলো মনকাড়া শব্দ-- সংস্কৃতি - আইনের শাসন - মূল্যবোধ - সরকার ইত্যাদি।

একটা জাতির সংস্কৃতি অতি দীর্ঘ সময়ে গড়ে উঠে। সময়টা কখনো কখনো অনেক বেশি- আমি বলব। ইংল্যান্ডের রাজা জন যেদিন ১২১৫ সালে ম্যাগনা কার্টা স্বাক্ষর করেছিলেন, ঐ দেশের শতকরা ১ ভাগ মানুষও এই স্বাক্ষরের সুদূরপ্রসারী কোন প্রতিক্রিয়ার অনুমান করতে পারেনি। শাসক আর শাসিতের সম্পর্ক ঠিক কেমন হবে- ম্যাগনা কার্টাকে তার কর্নার স্টোন ধরলে ইংল্যান্ডবাসী প্রায় ৮০০ বছর এটির চর্চা করছে। ওদের গনতন্ত্র অন্তত কয়েকশ বছর আগে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করেছে বলা যায়। সরকার ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা প্রচুর। অথচ গত বছর আগস্টে দাঙ্গায় আমরা কি ভয়াবহ রূপটি দেখলাম! রাষ্ট্র তার শাসনের হাতিয়ারটিকে ব্যবহার করতে (অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে) দ্বিধাগ্রস্ত হলে অথবা দুর্বলতা দেখালে যে কোন সমাজে- ধারনা করি- এই রকম বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।

উদাহরণটি টানলাম শুধু আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ - এই কথাটির দুর্বলতা অনুভব করার জন্য।

আমি আইনের শাসনের পক্ষের লোক। তবে আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধটি কি আপনাতেই তৈরি হবে (বটম আপ) - নাকি তৈরি করে দিতে হবে (টপ ডাউন)- এই নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। জনগণের ভেতর আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি হবে - মোদ্দা কথায় সাংস্কৃতিকভবে আমরা আইনের শাসনকে মূল্যবোধের অংশ হিসেবে চর্চা করব- তারপর দেশ এগিয়ে যাবে- এমনটি ঘটার সম্ভাবনা মনে হয় বিরল।

বরং উলটো দিকটা ভেবে দেখা যেতে পারে যে, একটি সরকার যদি জনগণকে বোঝাতে পারে যে, তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত- তবে একটা ভোজবাজির মতন কাজ হয়। অনেক উদাহরণ আছে- কেবল দুটি বলি।

এক। বিগত সরকারের সময় পরীক্ষা নকল মুক্ত করণ। সকলের বিরুদ্ধে এক্সিকিউটিভ বডি যখন নকল রোধের দাওয়াই সমানভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হল এবং অবশ্যই এক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন পাওয়া গেল - তখন জাতি একটা ভয়ংকর অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেল। এরপরও কিন্তু সরকারী প্রচেষ্টা ঢিলে দেবার সুযোগ দেখলেই পুরনো অভ্যাস যে কোন সময় ফিরে আসবে বলেই ধারনা করি।

দুই। এই সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বা অন্যান্য কিছু নির্বাচন। এক্সিকিউটিভ বডি যথাসম্ভব নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পেরেছে এসময়। ফলে তারা মানুষের সমর্থন পেয়েছে।

সরকার আন্তরিক হলে আমি মনে করি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত কোন বিষয় নয়। আরও একটা উদাহরণ দিই।

বিহার ২০০৫ সালে অর্জন করে সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ রাজ্যের খেতাব। শাসনব্যবস্থায় দুর্বৃত্তায়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। সহিংসতা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। টি এন সেশনের মতো ডাকসাইটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও এ রাজ্যে ভোট গ্রহণের সময়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। তিনি অনেক কেন্দ্রে ভোট বাতিল করেছেন তিন-চারবার করে। ভোট নিয়েছেন আবার।

সেই বিহার রাজ্যে ২০০৬ সালে নির্বাচনে জিতে শাসনভার গ্রহণ করেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। এর আগে তিনি দুই দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী ছিলেন। সেসব দায়িত্বও তিনি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন। তবে উল্লেখ্য, তিনি তেমন কোনো বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নন। অত্যন্ত সাদামাটা তাঁর অতীত। তবে ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে তাঁর প্রত্যয় ও পথযাত্রা বরাবরই আপসহীন। বিহারে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি সাধন করেন। নারীর ক্ষমতায়ন করতে তিনি বহু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিচার বিভাগ ও রাজস্বব্যবস্থায় সংস্কার এনেছেন। স্বাস্থ্যসেবা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখতে মধ্যাহ্নকালীন খাবার আর ছাত্রীদের বাইসাইকেল দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। নিয়োগ দেন এক লাখের অধিক স্কুলশিক্ষক। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তির বাধা দূর করেন।

ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই রাজ্যটির অর্থনীতিতেও বিপ্লব ঘটে যায়। বিনিয়োগকারীরা আসছে দেশ-বিদেশ থেকে। ২০০৫-০৬ সালে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার যখন ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, তখন বিহারে তা ছিল শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। আর ২০০৯-১০ সালে ভারতে সেই হার যখন ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, তখন বিহারে তা ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। যেন জাদুর কাঠির পরশ। বর্তমান ভারতে রাজ্যওয়ারি জিডিপি বৃদ্ধির হারে বিহারের অবস্থান গুজরাটের পরপরই। ২০০৫ সালে অর্জিত বিহারের খেতাবটি ২০১১ সালে বদলে গিয়ে হয় সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণ রাজ্যের খেতাব।

এই নীতিশ কুমার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। একটি দলের নেতা। পদে টিকে থাকার জন্য তাঁকে বিধানসভার সদস্য ও দলীয় নেতাদের আস্থায় রাখতে হয়। আবার, নির্বাচনের সময় সেই নেতাদের জন্য কাজ করেন যেসব কর্মী, তাঁদেরকেও আস্থায় রাখতে হয় নেতাদের। দ্বিতীয়বার অনেক বেশি আসনে নির্বাচিত হয়ে নীতিশ কুমার প্রমাণ করেছেন দুর্নীতি আর দুঃশাসনকে প্রশ্রয় না দিলেও দল ও সামগ্রিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় না; বরং বৃদ্ধি পায়। সেখানেও সরকারি কর্মচারী আছেন। একসময় দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিলেন তাঁরাও। আজ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনে তাঁরাও চুপসে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তা হলে প্রশ্ন, একজন নীতিশ কুমার পারলে আমরা পারব না কেন।
সূত্র

সরকার খুব খারাপ একটা অর্গান, সন্দেহ নেই। তারপরও মানুষ State of Nature এ ভীষণ অনিরাপদ। আর তাই মানুষ রাষ্ট্রের কাছে নিজের inelienable rights কে গচ্ছিত রেখে রাষ্ট্রের দাসত্ব স্বীকার করে। থমাস পেইন বলেছিলেন - Society in every state is a blessing, but government even in its best state is but a necessary evil; in its worst state an intolerable one

শিল্প কারখানায় পরিদর্শকের অভাব- শ্রম আদালতের অভাব- ইত্যাদি অনেক সমস্যা আমাদের। তারপরও। সরকার একবার আন্তরিক হয়ে সব দল মতের গার্মেন্ট মালিকদের শ্রম আইন, শিল্প আইন না মানার কারণে সমানভাবে শাস্তি দেয়া শুরু করুক - তবে এই সেক্টরের চেহারা পাল্টাতে এক বছর সময়ও লাগবে না।

পুঁজিবাদী এই যুগে গার্মেন্ট মালিকরা সবাই নিজেরাই নিজেদের শুদ্ধ করে তুলবে - আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দায়িত্বটি অতি অবশ্যই রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে আমার মনে হলো আপনি ভেবেছেন যে আমি বলেছি সরকারের কিছুই করার নেই। একারণে কিন্তু প্রথম মন্তব্যেই বলেছি যে তেমনটা আমি ভাবছি না। আমি কেবল সরকারের সকল কিছু করার কথা ও ক্ষমতা থাকলেও কেনো সে করে ওঠে না সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।

আমি এখানে জাজমেন্ট দিচ্ছি না যে নিজে নিজেই শুদ্ধ করতে হবে। আমি স্রেফ দেখাচ্ছি যে আমরা যে কোনো সমস্যাতেই সরকারের মুখপাণে চেয়ে থাকি, যে সরকার অকার্যকারিতার পর্বতপ্রমাণ রেকর্ডের অধিকারী। সকল ব্যর্থতা শেষে আমরা বলছি - "দায়িত্বটি অতি অবশ্যই রাষ্ট্রকেই নিতে হবে", অ্যাজ ইফ অন্য কারো দ্বারা এই কার্য সমাধা হবার নয়। এটা আমাদের মনোযোগ ও চিন্তাভাবনার রিসোর্সকে একটা অকাজের খাতে নিঃশেষ করছে। আমরা যদি সরকার ও ক্ষমতার স্বরূপটা বুঝি, তাহলে সব কিছুর শেষে আমরা কেবলই এই উপসংহারে আসবো না, এটা আমার ধারণা।

আরিফ জেবতিকের লেখাটা পড়ুন। আমি নিশ্চিত সরকারের সকল অ্যাপারাটাস আছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোকে টয়লেট স্থাপনে বাধ্য করার। ওনার লেখা অনুযায়ী সেই জিনিসও স্থাপন হয়েছে বায়ারদের চাপে। এই ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? অবাক হবেন না, যদি ফায়ার সেফটির ব্যাপারে আমাদের গার্মেন্টস মালিকদের টনকটা সরকারের আগে বায়ারদের চাপের কারণেই নড়ে। আমি বলছি না তারা সাধু। বায়াররা কোনো সাধু না। তারা অরেঞ্জ ইয়েলো লিস্ট করে দিনের পর দিন ঠিকই এদের সাথে ব্যবসা চালিয়ে গেছে। কিন্তু বায়াররা যদি শয়তান হয়, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যার নিশ্চিত করার দায় ছিলো সেই সরকার তাহলে কী বলেন তো?

অন এ নাইস মর্নিং সরকার অবশ্যই নীতিশ কুমারের মতো আন্তরিক হবে। বাট দেয়ার ইজ নো ফ্রি লাঞ্চ। যে কারণে "মানুষ State of Nature এ ভীষণ অনিরাপদ", সে কারণেই সরকারে বসা মানুষগুলোও State of Nature এ ভীষণ অনিরাপদ। ইভেন আরও বিপজ্জনক। কারণ কেবল সরকার (ও তার হর্তাকর্তারা) বলপ্রয়োগে ও ক্ষমতার মনোপলির মাধ্যমে জীবন ধারণ করে। অন্য সকলে মানুষের স্বেচ্ছা লেনদেনের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করে। থমাস পেইনের পয়েন্টটাও সেটাই। সরকার necessary, কিন্তু evil। আমার আশঙ্কা, আমরা অধিকাংশ জানি যে সরকার necessary, কিন্তু এর evil-ত্বটা আমাদের অজানা। আমাদের কাছে সরকার অন অ্যাভারেজ কল্যাণময়। আমার পয়েন্ট হলো, দ্যাট ইজ এ মিসটেইকেন হোপ। বিশেষ করে সরকারের জানা দরকার যে আমরা জানি যে সরকার আসলে কল্যাণময় নয়, চরিত্রগতভাবে মূলত evil।

মানুষ রাষ্ট্রের কাছে নিজের inelienable rights কে গচ্ছিত রেখে রাষ্ট্রের দাসত্ব স্বীকার করে

কিন্তু Inalienable rights তো গচ্ছিত রাখার জিনিস না। Inalienable মানে অনন্যসমর্পণীয়, কারো কাছে সমর্পণীয় নয়। রাষ্ট্রের কাছেও নয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অনেক পরে আপনার অত্যন্ত মূল্যবান পর্যবেক্ষণটি দেখছি এবং প্রতিমন্তব্য করছি বলে।

আমার বক্তব্যটি খুব স্পষ্ট করতে পারিনি মনে হচ্ছে। সরকারের কি কি করবার মতন আছে, এটিকে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করতে গিয়ে মনে হয় তিল তিল করে লাখো মানুষের কাছ থেকে রাষ্ট্র যেই ক্ষমতাটি কুক্ষিগত করে এবং অতঃপর যেই ক্ষমতাটি দিয়ে আইন নিয়ম ইত্যাদি প্রণয়ন ও সরকারের মাধ্যমে প্রয়োগ করে, তাকে ছোট করে ফেলেছি। রাষ্ট্র সবার। তবে সরকারের সাথে রাষ্ট্রের খুব অল্প কিছু মানুষ জড়িত। এই অল্প কিছু মানুষই একটা দেশের সকল মানুষের সামগ্রিক অবস্থার এবং মূল্যবোধের বদল ঘটিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে (এবং এরকমটিই ঘটেছে দেখা যায়)। আমি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে আসলে সরকারের ভেতর এই অল্প কিছু মানুষের মুল্যায়ন করতে চেয়েছি। বুঝতে পারছি, এটি হয়ত অতি মুল্যায়নের পর্যায়ে গেছে কিছুটা। কিন্তু উৎকৃষ্ট কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের শুরুতে যে এর বিকল্প এখনও পাওয়া যায়নি, এই কথাটিই ঘুরেফিরে আমার আলোচনায় চলে আসবে।

পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের সব মানুষ অংশ নিতে পারে হয়ত। কিন্তু এর শুরুটি হয় অল্প কিছু মানুষের মস্তিস্ক থেকে। রাষ্ট্রের সকল বাসিন্দা একমত হয়ে একটা একটা করে মঙ্গলকামী সিদ্ধান্ত নিবে এবং সেই সিদ্ধান্তর পথ ধরে একটা মঙ্গলকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে - এমনটি হয়ত একটা খুব খুব ছোট রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আবার সরকারের সব সিদ্ধান্ত অধিকাংশ মানুষ স্বাগত না জানাতেও পারে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে সুদুরপ্রসারি জনকল্যাণ নিহিত থাকতে পারে। লি কুয়ান ইউ যেদিন সিঙ্গাপুরের সকল জমির উপর থেকে ব্যক্তি মালিকানা তুলে দিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরবাসী কিন্তু তা সহজভাবে মেনে নেয়নি। অথচ আধুনিক সিঙ্গাপুর প্রতিষ্ঠায় সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছে এমন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে এটি একটি।

আপনার দ্বিতীয় প্যারার শেষ লাইনটির সাথে দ্বিমত পোষণের কারণ নেই - তবে এই কথাটি প্রায়োগিকভাবে বলবার সময় কতদিন পরে হতে পারে তার ধারনা পাবার জন্যই ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক দাঙ্গার উদাহরণটি টেনেছিলাম। সরকার এবং ক্ষমতার স্বরূপটি বোঝার জন্য ইংল্যান্ডবাসী ৮০০ বছর সময় পেয়েও খুব নোংরাভাবে আদিম সমাজবাসীদের মতন আচরণ করেছে। আমার গুরুত্বটি ছিল আইনের শাসনের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি হতে কত দিন বছর বা শতাব্দী লাগতে পারে তার উপর এবং এটি টপ ডাউন এপ্রোচ নাকি বটম আপ এপ্রোচে কার্যকর হবে এর উপর। রাষ্ট্রের evil nature এবং ফাঁকি বোঝার জন্যও আমাদের কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হয় বৈকি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই অবস্থায়ও এখনও পৌঁছুতে পারিনি। সেকারনেই আমি বলতে চাইছি একটা ভিত্তি গড়ার জন্য রাষ্ট্রের এবং ক্ষুদ্রার্থে সরকারের ভূমিকার বিকল্প আমাদের দেশে এখনও নেই।

সরকার যে evil আমি কিন্তু তা বলেছি। তবে তার এই evil nature কিন্তু এমনিতেই হয় নি। থমাস পেইন থেকেই আরও একটু উদ্ধৃত করি- কারণ তার থেকে সুন্দর করে কথাগুলো আমি বলতে পারব না-

Some writers have so confounded society with government, as to leave little or no distinction between them; whereas they are not only different, but have different origins. Society is produced by our wants, and government by our wickedness; the former promotes our positively by uniting our affections, the latter Negatively by restraining our vices. The one encourages intercourse, the other creates distinctions. The first a patron, the last a punisher.

তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষের vice নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই সরকারকে খুব নিবর্তনমূলক কাজ করতে হয়। আবার Hobbes এর State of Nature এ ফিরে যেতে হয়। State of Nature এ প্রত্যেক মানুষের অপার স্বাধীনতা। বেঁচে থাকার জন্য সে এমনকি অন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করতেও পারে। এটিকে Hobbes তাঁর ভাষায় war of all against all বলেছেন। কেননা এই পরিস্থিতিতে সবাই নিজেকে অন্যের হাত থেকে বাঁচাতে লড়াই করতে থাকবে। এরপর মানুষ বুঝল যে তাঁর সব অধিকার (যেমন অন্যকে হত্যা করবার) সব সময় কল্যাণকর নয়। কেননা সেক্ষেত্রে তাঁর নিজেরও অন্যের হাতে মরবার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ফলে মানুষ তাঁর নিজের কিছু অধিকার কাটছাঁট করে প্রথমে গোষ্ঠী এবং সমাজ তৈরি করল। এরপর দেখা গেলো সমাজে কিছু দুষ্ট লোকও ঢুকে পড়ছে। ফলে তাদের শাস্তির মাধ্যমে দমনের বিষয়টি চলে এল। এভাবে এই সমাজ ব্যবস্থার একটা শৃঙ্খলিত এবং আইনি রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড়ালো। আমরা তাকে বললাম রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের সদস্য হয়েই মানুষ বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর ব্যক্তিগত কিছু অধিকার ত্যাগ করল। বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁর নিরাপত্তার এবং অন্যান্য দায়ভার নিল।

আমি inalienable rights গচ্ছিত রাখার কথা বলেছি (হস্তান্তর বা ত্যাগ বলিনি কিন্তু)। মজাটা এইখানে। মানুষ হিসেবে আমি স্বাধীন। আমার জীবন এবং স্বাধীনতা আমার inalienable rights (আরও কিছু অধিকার আছে)। কিন্তু লক্ষ্য করুন- রাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে আমার স্বাধীনতা কি অসীম অথবা আমি যতটুকু চাই তততুকু কি? না। আমি জীবন রক্ষা করবার জন্য সবকিছু কি করতে পারি? একজন ভিক্ষুক ক্ষুধার তাড়নায় একজন সলিম উদ্দিনের দোকানে চুরি করলেও তার বিরুদ্ধে দন্ড বিধির ৩৭৯ ধারায় মামলা হবে। সেই মামলায় বাদী কে হবে? রাষ্ট্র। এখন মজার প্রশ্নটি হচ্ছে চুরি হল সলিমুদ্দিনের দোকানে। রাষ্ট্র কেন সেই মামলায় ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে বাদী হল? সে এই আইনটিই বা প্রণয়ন করল কেন?

উত্তরটি হল এইরকম- সলিমউদ্দিন রাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে মূলত রাষ্ট্রের সাথে অলিখিত চুক্তি করেছেন। সেই চুক্তিতে তিনি বলেছেন তার জীবন সম্পদ এবং স্বাধীনতার (inalienable rights ) একটা অংশ রাষ্ট্রের হেফাজতে রাখলেন। বিনিময়ে রাষ্ট্র তার জীবন ও স্বাধীনতা অন্যের অযাচিত আক্রমনে অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, state of nature এ যেই ক্ষমতাটি আমরা সবাই প্রয়োগ করতাম। এটি একটি social contract . আমি, আপনি, সলিম উদ্দিন এবং ঐ ভিক্ষুকসহ সকলের inalienable rights হেফাজত করার দায়িত্ব নিয়েই এবং আমাদের সকলের inalienable rights একত্রিত করে ক্ষমতাবান হয়েই রাষ্ট্র দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারা প্রণয়ন করে বলেছে অন্যের সম্পদ চুরি করা যাবে না। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বলেছে নরহত্যা করা হলে (অন্যের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে) তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। কাজেই কেউ যখন চুরি করে অথবা নরহত্যা করে- তখন সে কেবল একজন মানুষের সম্পদ বা জীবনের ক্ষতি করে না, বরং সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অপরাধ করে। তাই আমরা ফৌজদারী মামলায় রাষ্ট্রকে বাদী হিসেবে দেখি। চোরকে ‘চুরি করা যাবে না’ একথা বলে রাষ্ট্র মূলত ‘চোর নয়’ এমন সকল ব্যক্তির সম্পদের (এমনকি ঐ চোরের সম্পদেরও) হেফাজত করছে। আরও দেখুন- আমার আপনার কারুকে আঘাত করার ক্ষমতাটি নেই। রাষ্ট্র অনায়াসে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিচ্ছে। তাই বলা হয় একমাত্র রাষ্ট্র নরহত্যার মনোপলি ক্ষমতা ভোগ করে।

আমাদের inalienable rights এর বলেই কিন্তু রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করে না এবং অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। রাষ্ট্রের প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা আসলে আমার আপনার সবার থেকে ধার নেয়া অথবা আমাদের সকলের গচ্ছিত রাখা ক্ষমতা। এবং রাষ্ট্র যখন আমার অধিকার রক্ষায় (আসলে যে চুক্তির কথাটি আগে বলেছি সেই চুক্তি পালনে) ব্যর্থ হয়- তখন দেখুন হাইকোর্টে গিয়ে আমরা সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে এবং (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য ধারায়) রিট পিটিশন দায়ের করে বলছি- আমার এই অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে- অথবা রাষ্ট্র আমাকে এইভাবে বঞ্চিত করেছে। রাষ্ট্রকে (ক্ষুদ্রার্থে সরকারকে) প্রতিকার দিতে বলা হোক।

আমাদের রাষ্ট্র এখনও সলিমউদ্দিনের দোকানে চুরির বিচারটি ঠিকঠাক করতে পারছে না। এখন ঐ ভিক্ষুক বেচারারও কিন্তু চুক্তি বলে অভুক্ত না থাকবার দাবী আছে রাষ্ট্রের কাছে। চুরির দায়ে বিচার করার জন্য ঠিকই রাষ্ট্র মামলা সাজাচ্ছে। কিন্তু ভিক্ষুকের ক্ষুধার দায় রাষ্ট্র সহজে নিতে চাচ্ছে না। ফলে এইসকল অধিকার রক্ষার তাগিদেই আমরা জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের কথা বলছি।

আধুনিক কল্যানকামী রাষ্ট্রের ধারণায় (যেমন সুইজারল্যান্ড) রাষ্ট্রের তথা সরকারের ভূমিকা খুব কম। কিন্তু সুইজারল্যান্ডকে আজকের অবস্থায় আসার আগে কত শত বছর এইরকম evil governance এর সাথে বোঝাপড়া করতে হয়েছে সেটি ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। আমার ইঙ্গিত সেইদিকে বেশি।

টাইম মেশিনের ধারণা ছাড়া সময় পাড়ি দেবার এখনও পর্যন্ত একমাত্র উপায় হচ্ছে সফলাভবে প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে যাওয়া।

পোস্টের প্রসঙ্গান্তরে দীর্ঘ আলোচনার জন্য নৈষাদের নিকট ক্ষমা চেয়ে রাখলাম।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ফলে এইসকল অধিকার রক্ষার তাগিদেই আমরা জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের কথা বলছি।

আমিও বুঝতে পারছি, যে রাষ্ট্র কাঠামোর সকল evil-ত্ব বোঝার পর আপনি সেটাকে কল্যাণময় করে তুলতে চাচ্ছেন। এবং ভাবছেন কোথাও কোথাও রাষ্ট্র কল্যাণকামী হয়ে উঠেছে। তো সেটা কিন্তু "government even in its best state is but a necessary evil" স্টেটমেন্টের বিপরীতে যাচ্ছে। কল্যাণকামী একটা বড় শব্দ, যেটা রাষ্ট্রের গায়ে সাঁটানো হচ্ছে একটা বিশাল ধোঁকা। মজ্জাগত evil কি "কল্যাণকামী" হয়ে উঠতে পারে? আমার কাছে রাষ্ট্র কল্যাণকামী হবে সেই আশাটা হচ্ছে এ যাবৎ রাষ্ট্র বা রাজার শাসন ইত্যাদির evil-ত্ব ঢাকার জন্যে যতো রকম উছিলা আগে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো শাসনব্যবস্থাকে জাস্টিফাই করে, সেগুলোরই একটা নব্য ভার্শন। রাষ্ট্র আগের চেয়ে স্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু সেটা আমার মতে উত্তোরত্তর রাষ্ট্রের মিথগুলো ফাঁস করার মাধ্যমে। নাকি রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে তাকে কল্যাণময় করে তোলার আশা করার মাধ্যমে? আই ডাউট। এখানেই আপনার পয়েন্ট অব ভিউ আর আমার পয়েন্ট অব ভিউয়ের বিশাল তফাৎ। আমি necessary evil কে এ যাবৎ যে আমরা কেবলই necessary এবং অনেক ক্ষেত্রে glorified ভেবে এসেছি, তার বিপরীতে এর evil-ত্বকে ফলাও করছি। আপনি এর necessity-তে জোর দিচ্ছেন, এবং এর শাশ্বত evil-ত্বটা এখনি যতোটা ফাঁস করছেন, সেটা আবার তৎক্ষণাৎ ঢেকেও যাচ্ছে রাষ্ট্রের এক অদেখা অনাগত কল্যাণময় রূপের প্রতি আপনার হাতছানিতে।

আপনার inalienable rights এর কথাগুলোর সাথেও তেমন একমত হবার সুযোগ পাচ্ছি না। আপনি আবার বলছেন গচ্ছিত রাখার কথা। হয়তো সিমান্টিকের পার্থক্য। কিন্তু inalienable rights গচ্ছিত রাখা কথাটা আমার কাছে oxymoron।

অলিখিত চুক্তিও একটা আফটার দা ফ্যাক্ট বানানো ন্যারেটিভ। কেউ কোনোদিন চুক্তি করে নি। চুক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস সেটা না করার সুযোগ থাকা। সেই সুযোগ রাষ্ট্রের কোনো বান্দার নেই। এটা এমন কি স্বেচ্ছা দাসত্বও না। যদি দাসত্ব বলতে চান বলতে পারেন, স্বেচ্ছা বলাটা একটা মিথ্যাচার। তবে এই শব্দগুলোর ব্যবহার রাষ্ট্রের কাঠামোগতভাবে টিকে থাকার জন্যে নেসেসারি বটে। আজকাল যেমন evil কে ভাবি ওয়েলফেয়ার স্টেট বলে রাষ্ট্র নিজেকে জাস্টিফাই করে নেয়।

যা হোক, আমাদের পয়েন্ট অব ভিউ ও মতের পার্থক্য পরিষ্কার হলো।

পথিক পরাণ এর ছবি

রাষ্ট্র যে evil- আমি তা বারবার বলেছি। কিন্তু এই evil রাষ্ট্র আমাদের wickedness থেকেই কিন্তু জন্ম নিয়েছে, রাষ্ট্রের নিজের wickedness অথবা প্রয়োজন থেকে নয়। গোষ্ঠীগতভাবে আমরা- মানুষরা wicked না হলে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোন প্রয়োজন হত কি? আজকের প্রথম আলোতে এই লেখাটি দেখুন। শিরোনামে একদিন অপরাধমুক্ত নিউইয়র্ক শহর' না হয়ে বরং অনেকদিন পর নিউইয়র্ক শহরে একটি অপরাধ' শিরোনাম হলে আমি নিজেও জোর গলায় বলতাম কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিপাত যাক। কিন্তু ঘটনাটি তেমন ঘটছে না কোথাও। অনুগ্রহ করে state of nature এ মানুষের অবস্থাটি ভেবে দেখুন।

আপনার সকল বক্তব্যে ব্যক্তির wickedness কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্র অপেক্ষা শ্রেয়তর অন্য কোন মেকানিজম খুঁজছিলাম- সম্ভবত আমি তা মিস করেছি।

আমি রাষ্ট্রের necessity-তে জোর দিচ্ছি- কারণ এখনও পর্যন্ত ‘রাষ্ট্র’ ব্যবস্থার কোন বিকল্প উদ্ভাবিত হয়নি, যা আমার inalienable rights কে রক্ষা করার সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি দেয়। কাজেই রাষ্ট্র আমার অধিকার রক্ষায় সকল সম্ভব্য বিকল্পর ভেতর সেরা পছন্দ।

inalienable rights গচ্ছিত রাখা কথাটা আমার কাছে oxymoron

এরকম মনে হওয়া অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণায় ওরা বলছে - We hold these truths to be self-evident, that all men are created equal-
সব মানুষ কি আসলেই সমান, এমনকি জন্মের সময়েও? তর্কের খাতিরে এই কথাটিকেও কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ করা যেতে পারে।

এবার দেখা যাক রাষ্ট্র আর নাগরিকদের ভেতর কোন অলিখিত চুক্তি হচ্ছে কিনা। আমাদের সংবিধান থেকেই বিষয়টি দেখা যাক। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনাটি দয়া করে দেখুন-
প্রস্তাবনা

আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া ২[ জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের] মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি;

লক্ষ্য করুন- আমরা- বাংলাদেশের জনগণ- এবং পরে আবার বলা হচ্ছে - স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।

-------
আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে;

আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা যাহাতে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি লাভ করিতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারি, সেইজন্য বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য;

এই প্রস্তাবনায় আমি এবং আমরা শুরু থেকেই আছি। এখন এই প্রস্তাবনা, সংবিধান, রাষ্ট্র আমার পছন্দ না হলে আমি এই চুক্তিটি বাতিল করতেও পারি কিন্ত। আমি বাংলাদেশ ত্যাগ করে অন্য কোন শ্রেয়তর দেশে আশ্রয় নিতেই পারি (তখন কিন্তু বাই ডিফল্ট ঐ দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাবে। রাষ্ট্রবিহীন পৃথিবী না হওয়া পর্যন্ত অথবা পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহ উপগ্রহে আমার বাস করবার উপযুক্ত অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত- যেখানে রাষ্ট্র নেই, এর কোন বিকল্প নেই বোধহয়)।

অথবা আমরা এই চুক্তির ভাষা প্রকাশ ইত্যাদিও বদলে নিতে পারি প্রয়োজনমত। রাষ্ট্র কাঠামো কেমন হবে, সরকার ব্যবস্থা ওয়েস্টমিনিস্ট্রিয়াল নাকি একনায়কতান্ত্রিক হবে, তারা কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে সব আমরাই নির্ধারণ করছি। কিছুই পছন্দ না হলে আরব বসন্ত আসছে দেশে দেশে। সরকার উল্টে যাচ্ছে। কাজেই- আপনি যেমনটি বলছেন- আমরা চুক্তি করিনি- কথাটা কিন্তু জোরালো থাকছে না। অতঃপর চুক্তি বাতিল, পরিবর্তন, পরিবর্ধনের ক্ষমতাও থেকে যাওয়ায় একে কেবল বানানো ন্যেরেটিভ বলার উপায় থাকছে কি? এখন চুক্তিটির বিষয়ে জেনে নেবার এবং রাষ্ট্রকে চুক্তি মোতাবেক আচরণ করতে বাধ্য করবার দায়টি কিন্তু আমার।

তবে এই শব্দগুলোর ব্যবহার রাষ্ট্রের কাঠামোগতভাবে টিকে থাকার জন্যে নেসেসারি বটে।

বিনয়ের সাথে বলছি- রাষ্ট্রের নিজের টিকে থাকবার কোন আবশ্যকতা নেই বোধহয়। রাষ্ট্র বরং আমার এবং আমাদের জন্যই টিকে থাকে।

মতের পার্থক্যের পরেও একটি বিষয় আমার জানতে ইচ্ছে করছে। রাষ্ট্রকে বিলীন করে দিয়ে অথবা একে একেবারে laissez faire করে দিয়ে আমাদের টিকে থাকবার কোন অন্য উপায় আছে কি?

সত্যপীর এর ছবি

ইউএস জাস্টিস যে বিপিকে ফৌজদারি অপরাধে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করল, সেই মামলায় বাদী কে ছিল? যুক্তরাষ্ট্র সরকার? নিহতের পরিবার?

বাংলাদেশ সরকার একটা আবাল সরকার, তা সে নৌকা ধানের শিষ যেটাই হোক। এদের নিয়ে আমি শর্ট রানে কোন আশা দেখিনা। আমার প্রশ্ন হল, নিহতের রক্তের আত্মীয় নিশ্চয়ই ফৌজদারি মামলা করতে সক্ষম? থিওরেটিকালি? যদি তাই হয়, এই লাখ টাকার ফাইজলামি নয় মালিকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার শক্ত ফুলপ্রুফ মামলা কি করা যায়? ঝানু উকিল লাগানো হোক। আমরা ফান্ডরেইজিং করতে পারি। অর্থ দিয়ে বা বুদ্ধি দিয়ে বা শ্রম দিয়ে বা সময় দিয়ে, সব মিলিয়ে কোনভাবে কি কোর্টে যাওয়া যায়?

আইন আমি বুঝি কম। তবে এদের টুঁটি টিপে ধরতে হবে আইনি পদ্ধতিতেই।

..................................................................
#Banshibir.

সুমন এর ছবি

বাংলাদেশের আইনে সকল ফৌজদারি মামলার বাদী হল সরকার। সরকার চাইলে যেকোনো ফৌজদারি মামলা চালাতে পারে বা তুলে নিতে পারে।
দ্বিতীয় কথা হল যে বাংলাদেশ শ্রম আইনে বলা আছে কোনও শ্রমিক চাকুরীরত অবস্থায় মারা গেলে যদি তার জীবন বিমা করা না থাকে তবে তার কোম্পানি তার পরিবারকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। তাই টাকার ব্যাপারে আইনত কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে বলে মনে হয় না।
-সুমন

সত্যপীর এর ছবি

আচ্ছা।

১. নিকটাত্মীয় মামলা করলে সরকার তুলে নেওয়ার কারণ দেখিনা।

২. কর্তৃপক্ষের গাফিলতি যদি মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে মামলা করা যাবে না? শ্রম আইন তো দুর্ঘটনায় প্রযোজ্য হবার কথা, অপরাধের ক্ষেত্রে নয়।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর কথা বলছেন কি? কোন ধারায় বলা আছে এই এক লক্ষ টাকার কথা?

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, পঞ্চম তফশীল, ধারা ১৫১।
এখান থেকে ডাউনলোড করলে ১১৫ নং পাতায় পাবেন।

ফারাসাত

হিমু এর ছবি

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে, এই আইনের প্রণেতারা গ্যালো কোরবানিতে কত টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রশ্নটা আসলে হবে "কত টাকা দিয়ে কতগুলো গরু কিনেছেন"! এইসব মানুষের জন্য থুথু ছিটালেও থুথুরই অপচয় হবে, এর বেশী কিছু হবে না।

ফারাসাত

নৈষাদ এর ছবি

ফৌজদারি মামলা তো যেকেউই ইনিশিয়্যাট করতে পারে, হ্যা, পিপিই মামলা পরিচালনা করবে।

এখানে শ্রম আইনের দ্বাদশ অধ্যায়ের কথা বলা হচ্ছে না। বিপির কেইসটা দেখুন। ওয়েল-গ্যাস সেক্টরে দুর্ঘটনা হতেই পারে, সেক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন ক্যান? কারণ এখানে 'নেগলিজেন্সের' ঘটনা আছে। তেমনি তাজরিনের ঘটনায় ৬২ ধারার লঙ্ঘন আছে। 'নেগলিজেন্সের' জন্য শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা আছে। তাই ফৌজদারি আইনে আওতায় আনার কথা বলা হচ্ছে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যপীর। বিপির ফৌজদারি মামলার বাদী ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"(৩) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কোন কক্ষ হইতে বহির্গমনের পথ তালাবদ্ধ বা আটকাইয়া রাখা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তি কক্ষের ভিতরে কর্মরত থাকিলে উহা তৎক্ষণাৎ ভিতর হইতে সহজে খোলা যায়, এবং এই প্রকার সকল দরজা, যদি না এইগুলি স্লাইডিং টাইপের হয়, এমনভাবে তৈরী করিতে হইবে যেন উহা বাহিরের দিকে খোলা যায়, অথবা যদি কোন দরজা দুইটি কক্ষের মাঝখানে হয়, তাহা হইলে উহা ভবনের নিকটতম বহির্গমন পথের কাছাকাছি দিকে খোলা যায়, এবং এই প্রকার কোন দরজা কক্ষে কাজ চলাকালীন সময়ে তালাবদ্ধ বা বাধাগ্রস্থ অবস্থায় রাখা যাইবে না৷

(৪) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বহির্গমণের জন্য ব্যবহৃত পথ ব্যতীত অগ্নিকান্ড কালে বহির্গমনের জন্য ব্যবহার করা যাইবে- এরূপ প্রত্যেক জানালা, দরজা বা অন্য কোন বহির্গমন পথ স্পষ্টভাবে লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোন সহজবোধ্য প্রকারে চিহ্নিত করিতে হইবে৷

(৫) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে, উহাতে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে অগ্নিকান্ডের বা বিপদের সময় তৎসম্পর্কে হুশিয়ার করার জন্য, স্পষ্টভাবে শ্রবণযোগ্য হুশিয়ারী সংকেতের ব্যবস্থা থাকিতে হইবে৷

(৬) প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের অগ্নিকান্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমন পথে পৌঁছার সহায়ক একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখিতে হইবে৷

(৭) যে প্রতিষ্ঠানে উহার নীচ তলার উপরে কোন জায়গায় সাধারণভাবে দশজন বা ততোধিক শ্রমিক কর্মরত থাকেন, অথবা বিষ্ফোরক বা অতিদাহ্য পদার্থ ব্যবহৃত হয়, অথবা গুদামজাত করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডকালে বহির্গমনের উপায় সম্পর্কে সকল শ্রমিকেরা যাহাতে সুপরিচিত থাকেন এবং উক্ত সময়ে তাহাদের কি কি করণীয় হইবে, তৎসম্পর্কে তাহারা যাহাতে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ লাভ করিতে পারেন সেই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে৷

(৮) পঞ্চাশ বা ততধিক শ্রমিক/কর্মচারী সম্বলিত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে প্রতি বৎসর অন্ততঃ একবার অগ্নিনির্বাপন মহড়ার আয়োজন করিতে হইবে, এবং এই বিষয়ে মালিক কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় একটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ করিতে হইবে৷"

- অনুচ্ছেদ ৬২ অগ্নিকান্ড সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন, ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ নিরাপত্তা, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ ( ২০০৬ সনের ৪২ নং আইন ), ১১ অক্টোবর ২০০৬

কোন প্রতিষ্ঠান উপরোক্ত আইন লঙ্ঘন করে থাকলে তার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা যাবে। আলোচ্য ঘটনায় এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে কি কোন মামলা হয়েছে?

বহুল আলোচিত কমপ্লায়েন্সের বিধিতে বাধ্যতামূলক জীবন বীমা রাখার কোন বিধান কি নাই?

অটঃ এই আলোচনায় টর্ট প্রাসঙ্গিক নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

ধারা ৬২ তো লঙ্ঘনকরা হয়নি, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনা মন খারাপ মন খারাপ । লঙ্ঘনকরার ফলে মানুষের মৃত্যু হয়েছে এজন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা যাবে এটাই তো বুঝাতে পারছি না।

ধারা ৯৯। বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালুকরণ – যেসকল প্রতিষ্ঠানে অন্যূন্য ২০০ জন স্থায়ী শ্রমিক কর্মরত আছেন, সেখানে সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে গ্রুপ বীমা চালু করিতে পারিবে।

টর্ট অবশ্যই প্রাসঙ্গিক নয়। (তবে এক ভদ্রলোককে বুঝাতে ব্যবহার করেছি। ডিউটি অভ কেয়ারের কনসেপ্ট মতে যদি এমপ্লয়ার ‘নেগলিজেন্স’ থাকে এবং এজন্য কারও ‘হার্ম’ হয়, তবে সে দেওয়ানি আইনের আশ্রয় নিতে পারে।)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দরজা বন্ধ রাখায় ৬২ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। সুতরাং এই মর্মে ফৌজদারী মামলা করা যায়। এই বিধি লঙ্ঘনের ফলে অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মারা গেছে, এতে ইচ্ছাকৃত/অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর কারণে 'হত্যা'র অভিযোগে মামলা দায়ের করা যায়।

ধারা ৯৯ অনুসারে মালিক কর্তৃপক্ষ বীমা করতে বাধ্য হন না। গোটা আইনে জীবন বীমা শব্দটিই নেই। এই আইনে, আইন অমান্যের দায়ে শ্রমিকের বিরুদ্ধে কী কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে তার বিস্তারিত আছে, কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কী কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে তার জন্য কোন ধারাই নেই। এই ব্যাপারটি আইন প্রণয়ন ও পাশ করার কালে আমাদের জনপ্রতিনিধি চোখে পড়েনি বোধহয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আর কত ! কিছু একটা হতেই হবে এবার।

তারেক অণু এর ছবি

যে কথাটা বলা হচ্ছে না, আগুন শর্টসার্কিটে লাগুক, কিংবা ষঢ়যন্ত্র করেই লাগানো হোক, ফায়ার সেইফটির নিয়ম কানুনের কোন ব্যতয় হওয়ার কথা না।

পথিক পরাণ এর ছবি

বিপির হত্যার মত ফৌজদারি অপরাধে কেবল আর্থিক জরিমানা- একটু খটকা লাগলো।

নরহত্যা একটা Irreparable Loss. এটি যদি ফৌজদারি অপরাধে কোন আইনে বিচার হয়ে থাকে তবে এর জন্য শারীরিক শাস্তি হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। আপনার তথ্যটিতে বিপির বিরুদ্ধে প্রয়োগকৃত আইনটির রেফারেন্স কি অনুগ্রহ করে দেয়া যাবে?

নৈষাদ এর ছবি

প্রয়োগকৃত আইনটির খুব বিস্তারিত জানিনা, হয়ত কিছুটা সময় দিলে বের করা সম্ভব। দেখুন বিবিসি ওয়েবে। বিপির সাইটে বলছে,
As part of the resolution, BP has agreed to plead guilty to 11 felony counts of Misconduct or Neglect of Ships Officers relating to the loss of 11 lives; one misdemeanor count under the Clean Water Act; one misdemeanor count under the Migratory Bird Treaty Act; and one felony count of obstruction of Congress. This resolution is subject to U.S. federal court approval.

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখক এবং মন্তব্যকারী সবাইকে ধন্যবাদ এমন বিস্তারিত আলাপের জন্য। অনেক কিছু জানলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই আগুনের পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদের কে কঠোর শাস্তি দাবি করছি ।

----------------------------
এস দেওয়ান

ফাহিম হাসান এর ছবি

এই লেখাটার মন্তব্যগুলোতে এমন অনেক কথা উঠে এসেছে যা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। লেখকসহ যারা মন্তব্য করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ।

নৈষাদ এর ছবি

যারা মন্তব্য এবং ইন্টারেস্টিং আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার পোস্ট এবং আলোচনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।