দক্ষিণের জানলায়: ফিরে যাবার আগে - ০১

তানিম এহসান এর ছবি
লিখেছেন তানিম এহসান [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৬/০৯/২০১২ - ১১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির কোন তাল-ঠিকানা নেই, শীত-গ্রীষ্ম বলে কিছু নেই, এখানে হরদম বৃষ্টি হয়। এই এখন যেমন ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হলো। আমার অফিসের রুমটা ছয় তালায় একটা কোনায়, দুইপাশে দুইটা বারান্দা, চারপাশের বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়, শুধু গাছ আর গাছ। উত্তরদিকে কনফারেন্স রুম এর যে বারান্দা তার সামনেই ছোট একটা সুপারি বাগান, কদম, লেবু, ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য নারিকেল গাছে নারিকেল, আর, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া -- আমাদের দেশে ফুল-ফল-গাছ-নদীগুলোর নাম এত সুন্দর কেন! অফিসের ছাদে উঠলে দূরে কীর্তনখোলা নদীর ওপাড়ে ইটভাটার চিমনী দেখা যায়, নদীর বাতাস এসে গায়ে লাগে।

আমি যেখানটায় থাকি তার পাশেই খাল, একটু দূরে গেলে আরো চওড়া একটা খাল, দুইপাশ বাঁধানো, সেখানে জোয়ারের সময় মাঝে মাঝে বড় বড় নৌকা ভিড় করে, এই খালটার পাশেই বিশাল সুপারির বাগান, কি যে সুন্দর! রাতে খাবারের পর মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই, বেশিদূর যেতে হয়না জোনাকি দেখা যায়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভেতর কত যে পুকুর, ডোবা, জলাশয়, ঝোপ-ঝাড়, লতা-গুল্ম আর জোনাকি!

চলে যাবার সময় হলে মনে হয় মানুষের সবকিছু একটু বেশি-ই ভালো লাগতে শুরু করে। চাকরী’টা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা মাথায় আসার পর থেকেই একটা আলাদা অনুভব, ছেড়ে দেবার পর থেকে কেমন যেন একটা মায়া পড়ে যাচ্ছে... মায়া জিনিসটাই খুব ঝামেলার তারপরও সেটা আমার ভেতর খুব বেশি কিন্তু পিছুটান নেই। আমি জানি আমি এখান থেকে চলে যাবার পর এখানকার সবকিছু আমার ভেতর স্থিত হয়ে থেকে যাবে।

গত তিনটা বছর দক্ষিণের উপকূল চষে বেড়িয়েছি দিন-রাত। প্রথম যখন আসি তখন কাজের চাপে অন্যকিছু তাকিয়ে দেখার সময় পেতাম-না, আস্তে আস্তে কাজগুলো একটা কাঠামোর ভেতর এসেছে, আমি সময় পেয়েছি, দেখেছি বাংলাদেশ কতটা সুন্দর হতে পারে! আর নদী! আহা! চর নেই, সারাক্ষণ স্রোত আর কি তাদের বাহার, ব্যাপকতা, সৌন্দর্য আর অবশ্যই কারো কারো বেলায় ভয়ংকরত্ব!

বিষখালী নদী দিয়ে পাথরঘাটা যাচ্ছি প্রথমবার, স্পিডবোটে, বাকি সঙ্গীরা সবাই বহুবার আসা যাওয়া করেছে। পুরো রাস্তা প্রচুর কথা বলে স্পিডবোট ছাড়ার পর সবাই চুপচাপ, ঘটনা কি? যতই প্রশ্ন করি কেউ উত্তর দেয়না, আমার জেদ চেপে গেলো। সফরসঙ্গী একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই-বন্ধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সফরসঙ্গী হয়ে এসেছেন, তিনি সব ভুলে গিয়ে বললেন, ‘ওই তুই চুপ থাক, এই নদীতে এত কথা বলেনা কেউ!’ তেমনি শরণখোলায় একবার একটানা তিনরাত থাকলাম, একদিন গেলাম বলেশ্বর নদী’র অমাবস্যা রাতের রূপ দেখতে, ছমছম ছমছম একটা ভাব। আগুনমুখা নদী’র কাছে দাঁড়ালে নামকরণ এর সার্থকতা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনা, রামনাবাদ চ্যানেলে এই নদী প্রস্থে ৫ মাইল (মেপে দেখিনি, তবে এর কম কেউ বলেনা, পথ শেষ হয়না)! ভাবা যায়!

আর শিবসা! শিবসা’র পাড়ে যারা বাস করে তাদের বলতে শুনেছি শিবসা যখন রুদ্ররূপ ধারণ করে তখন নদীতে থাকলে মায়ের পেটে থাকার স্মৃতি মনে পড়ে যায় মানুষের! এই ভয়ংকর নদী দিয়ে সুন্দরবনের সর্বশেষ মনুষ্য-বসতি পর্যন্ত গিয়েছি, পথের ধারে কোথাও একটা জামা ঝুলিয়ে রাখা, সুন্দরবনের নিয়ম, বাঘ যাকে মেরে ফেলে তার জামা ঝুলিয়ে রাখা হয় যাতে করে বাকিরা সাবধান হতে পারে। আরও কতকিছু, কত স্মৃতি। একবার গোলখালী থেকে শিবসা দিয়ে ফিরছি, পুরোটা পথ তিনটি শুশুক আমাদের স্পিডবোটের সাথে পাল্লা দিয়ে কতকিছু যে করে গেলো! সাথে থাকা জাপানী সুপারভাইজার হাত-পা ছুঁড়ে ‘ইয়েস ইয়েস’ করতে করতে একসময় আমার দিকে তাকিয়ে প্রথমবারের মত চোখ-মুখ শক্ত করে বললো, ‘উই ক্যান স্টে উইথ দেম ফর লঙ এহসান, ডোন্ট ইউ ট্রাই টু কনভিন্স মি আদারওয়াইজ। আই এম ইউর সুপারভাইজার, নো?’ বুড়ি গোয়ালিনী নদী’র নাম যত সুন্দর লাগুক শুনতে আদতে তার ঢেউ এর বাড়ী খেলে বোঝা যায় বুড়ো হাড়ে কতটা শক্তি ধরে!

পায়রা নদী’র পাড়ে কান পেতে শুনলে ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পাওয়া যায়, পায়রা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রবাহিত, কি যে সুন্দর একটা নদী! আন্ধারমানিক নদী’তে নাকি কিছুদিন আগেও রাতের বেলা আলো জ্বলত (ফসফরাস)। তেঁতুলিয়া নদী’র জল একদম কাঁচের মত, কালিজিরা নির্ঝর, সন্ধ্যা নদী’র আসলেই একটা সান্ধ্য রূপ আছে আর ধানসিঁড়ি, জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি বছরের বেশ বড় সময় কোথাও কোথাও জলহীন।

আর কীর্তনখোলা নদী’র একটা প্রান্তের মালিকানা ক্রমাগত বসবাস-সূত্রে এখন আমার! বরিশাল থাকলে প্রতি সপ্তাহেই যাওয়া চাই একটা ছইওলা দেশি নৌকায় করে। আমার বাছাবাছির অভ্যাস নেই, দরকষাকষি আরও করতে পারিনা, প্রথম দেখায় প্রেমে বিশ্বাসী। প্রথমবার যে নৌকায় উঠেছি সেই নৌকাতেই যাই, মাঝি ইউনুস ভাই তার মত করে ভালো, দুইটা মোবাইল ব্যবহার করেন, চারটা সিম-কার্ড, আমাদের গান আদান-প্রদান করা হয় ব্লু-টুথ দিয়ে! পাঁচ বছর আগেও বরিশালের কেডিসি ঘাটে ২০-২৫টা দেশি নৌকা ছিলো, এখন আছে মাত্র তিনটা। তাও নাকি ছেলে-মেয়েরা উঠেই প্রথমে পর্দা টাঙাতে বলে, এই নিয়ে ইউনুস ভাইয়ের মনে খুব দূ:খ দেখে সহচর চক্রবর্তী মশাই ঝামটে উঠেন, ‘হেরা কি করলো আর না করলো তাতে আম্নের কি! তাগো কত গোপন কথা থাকতে পারে, পারেনা? আপ্নে ভাবির সাথে সব কথা মাইনসের সামনে কন!’ তার সাথে ইউনুস ভাই পেরে উঠেন না, আমাকে বলেন, ‘আপ্নে দাদারে একটু বুঝাই কন, হেয় আমারে কেন জানি দেখতে পারেনা!’

আমার কেন জানি ছবি নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি নেই, নিজের ছবি উঠাতে ভালো লাগেনা তবে ছবি তুলতে ভালোই লাগে। এই তিন বছরে ছবি দিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলা সম্ভব ছিলো কিন্তু আমি প্রতিবার-ই ঢাকা থেকে ক্যামেরা আনতে ভুলে গেছি! আশ্চর্য ভুলো মন! তবে চলে যাবার পর যখন ফিরবো তখন ক্যামেরা থাকবে এটা আমি নিশ্চিত। সবারই কিছু না কিছু খামোখা বায়নাক্কা থাকে, আমারও থাক।

বরিশাল বিভাগ ছাড়া বাংলাদেশ প্রায় পুরোটাই দেখে ফেলেছিলাম, বরিশালে কেন যেন আসতে ইচ্ছে করতো না; একটা কাজ নিয়ে এলাম, থাকলাম তিন বছর, এই তিন বছরে বরিশালে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে, বড়বড় রাস্তা, নিয়ন বাতি, একটার পর একটা ব্রিজ-কালভার্ট হচ্ছে, নতুন নতুন খাবারের দোকান, এপার্টমেন্ট এর বিজ্ঞাপন চোখে পড়তে শুরু করেছে এরিমধ্যে -- দ্রুত বদলে যাচ্ছে বরিশাল। বাংলাদেশের সবুজ আর জল চুরি হয় সবচাইতে বেশি, ছিনতাই হয় রসনা, ডাকাতি হয় ঘরের প্রাকৃত অলংকার -- আমরা খুব সহজে বিদেশী রঙ-ঢং আয়ত্ত করে ফেলি, দেশজ সবকিছু বিসর্জন দিতে চাই আরও দ্রুত। কেন যেন মনে হয় বরিশাল এর প্রকৃত সৌন্দর্য আর বেশিদিন থাকবেনা, বাণিজ্যিক হয়ে যাবে সব...


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অথচ বরিশালেই আমার যাওয়া হলো না! মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্যাম এর ছবি

আমারও মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

তোমার সাথে বরিশাল নিয়ে আমার আর কোন কথা নাই। এখনও সময় আছে, ‘ভেবে দেখেছো কি...'

তুমি একটা জিনিস খেয়াল কর নাই ভাইজান! ‘ওই তুই চুপ থাক’ -- এই ডায়লগ দেয়া মানুষটা কে, কওতো দেখি, সূত্র দেই: তোমার নামের সাথে তোমার বন্ধু’র নাম রাঙানো রাঙানো চোখ টিপি

তানিম এহসান এর ছবি

অথচ আপনাকে কতবার কত করে বললাম মন খারাপ

স্যাম এর ছবি

এই তিন বছরে ছবি দিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলা সম্ভব ছিলো

নদীর ছবিগুলো না তুলে ফাসিযোগ্য অপরাধ হয়েছে!

কেন যেন মনে হয় বরিশাল এর প্রকৃত সৌন্দর্য আর বেশিদিন থাকবেনা, বাণিজ্যিক হয়ে যাবে সব...

- সে তো হবেই - তখন আরো বেশি করে বলব নদীর ছবি না তোলার অপরাধের কথা!

বাংলাদেশের সবুজ আর জল চুরি হয় সবচাইতে বেশি,

- এই লাইন্টা নিয়ে একটা কবিতা আসবে নাকি?

লেখা ভাল লেগেছে। হাততালি

তানিম এহসান এর ছবি

আমাদের চোখে আর মনে সব থেকে যাবে। ছবি আর কতটা ধরে? আমি চোখ বন্ধ করলে এখনো দেখতে পাই তুমি হারমোনিকা বাজাচ্ছো আর আমি চুপচাপ হাঁটছি তোমার সাথে। স্মৃতিশক্তি খুব যন্ত্রনা করে।

কবিতা? কবিতা লিখার নামে কতকিছু যে করলাম কিন্তু কবিতা লিখলাম কই! এখন থেকে নিজের জন্যে লিখবো শুধু।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন।
ভাল লাগল।

তানিম এহসান এর ছবি

হ্যাঁ, অনেকদিন পর।

ধন্যবাদ রাজাসাহেব, ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা হাসি

তারেক অণু এর ছবি

পায়রা নদী’র পাড়ে কান পেতে শুনলে ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পাওয়া যায়, পায়রা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রবাহিত, কি যে সুন্দর একটা নদী! আন্ধারমানিক নদী’তে নাকি কিছুদিন আগেও রাতের বেলা আলো জ্বলত (ফসফরাস)। তেঁতুলিয়া নদী’র জল একদম কাঁচের মত, কালিজিরা নির্ঝর, সন্ধ্যা নদী’র আসলেই একটা সান্ধ্য রূপ আছে আর
লেখা -গুড়- হয়েছে উত্তম জাঝা!

ধানসিঁড়ি, জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি বছরের বেশ বড় সময় কোথাও কোথাও জলহীন। মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

ব্রিজগুলো যারা বানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত বুঝলেন হে প্রিয় উড়ন্ত ঘুড়ি। মহিপুর এ যে নদী তাতে দুইটা ফেরি জোড়া দিলে ব্রিজ করতে লাগেনা, সেখানেও ইয়া বড় বড় দুইটা স্প্যান নদীর মাঝখানে।

উন্নয়ন, অগ্রগতি দরকার আছে কিন্তু তার নামে এই-যে নদী হত্যা, আমার ভাল্লাগেনা। কীর্তনখোলায় ব্রিজ হয়েছে বেশিদিন হয়নি, এরিমধ্যে নদীর গতিধারা পাল্টে যাচ্ছে। একটা কিছু করা দরকার।

অরফিয়াস এর ছবি

তানিম ভাই, প্রকৃতিকে অনুভব করতে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে হয়, আপনি যেভাবে নদী আর সবুজের সাথে মিশে অনুভব করেন সেরকম ভাবে জীবনে কিছুটা সময় কাটাতে পারলেও খুশি হতাম। একদিন হয়তো কীর্তনখোলা নদীর ঢেউ এর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ হবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তানিম এহসান এর ছবি

হবে, তবে কবে?

অরফিয়াস এর ছবি

খুব শীঘ্রই আশা রাখি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তানিম এহসান এর ছবি

গুড। একটু আগে থেকে জানালেই হবে।

অরফিয়াস এর ছবি

অবশ্যই। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

কী সুন্দর সুন্দর আমাদের নদীদের নাম- বিষখালি, শিবসা, কীর্তনখোলা, পায়রা, আগুনমুখা, বলেশ্বর, তেঁতুলিয়া, ডাকাতিয়া, আন্ধারমানিক... আহা!!!

আর ধানসিঁড়ি- মন খারাপ ...

তানিম এহসান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

ছবি না তুলে যদিও খুব খারাপ কাজ করেছেন, তবে এতো সুন্দর বর্ননায় ছবি আসলে অর্থহীন!

.........
রংতুলি

তানিম এহসান এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সত্যপীর এর ছবি

অসাধারণ চলুক

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান এর ছবি

পীর বাবায় ভর্তি বরিশাল! মাদ্রাসায় সয়লাব। বরগুনায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আর মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সমান, ভোলায় খুব সম্ভবত মাদ্রাসা বেশি।

পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসি

সত্যপীর এর ছবি

পীরফকির খারাপ লুক

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান এর ছবি

হ, তাদের লুক-ও খারাপ চোখ টিপি

বন্দনা এর ছবি

ইস আপনি চলে আসছেন ভাইয়া, আপনার ওখানে ঘুরতে যাওয়া হলনা তাহলে আর।

তানিম এহসান এর ছবি

কোন ব্যাপার না, আমি না থাকলেও চলবে। আমি সব প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে দিব, লোকজন থাকবে, সমস্যা হবেনা। তোমারতো মিয়া দেশে আসারই কোন ইচ্ছা দেখিনা খাইছে

ভালো থাক আপু।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অন্যদের অবশ্যই ভিন্নমত থাকবে, তবে আমার কাছে বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে একমাত্র বরিশালকে থাকার যোগ্য বলে মনে হয়েছে। বাকিগুলোতে মানুষ থাকতে বাধ্য হয়।

*************

এক পদ্মা পার হলেই বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে জল, বৃক্ষ, ঝোপ, ফসল, পাখি, দিগন্ত মিলিয়ে সৌন্দর্যের যে বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায় তাতে যতোই দক্ষিণে যাওয়া যায় - বাড়াবাড়ি ততোই বাড়তে থাকে। যেন যতোই গভীরে যাই, ততোই মধু'র মতো।

*************

দক্ষিণের নদীগুলো দিয়ে ছোট ভটভটি লঞ্চ বা ইঞ্জিনবিহীন নৌকা দিয়ে যার ঘোরার সুযোগ হয়নি নদীমাতৃক বাংলাদেশ বলতে কী বোঝায় আর নদীমাতৃক দেশের আসল সৌন্দর্যটা কোথায় সেটা সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারবে না।

*************

চক্ষুষ্মান সবাই চারপাশটায় কেবল তাকিয়ে থাকতে পারে। চারপাশটা ঠিক ঠিক দেখতে পায় কম লোকে। আর কেবল কবিরাই সেই ঠিক ঠিক দেখটাকে ঠিক ঠিক ভাষায় লিখে প্রকাশ করতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

যদি কিছু মনে না করেন, একটা ছোট্ট কারেকশন পান্ডবদা- রাজশাহীকেও থাকার যোগ্য লিস্টে রাখেন।
ধন্যবাদ।
-অয়ন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লিস্টে রাজশাহীকে রাখা তো খুব সহজ কাজ নয়। এর জন্য খরচাপাতি আছে। আগে আমাকে এই হেমন্তে রাজশাহীতে নেমতন্ন করুন, দুটো ভালো খাবার খাওয়ান, ভালো ভালো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যান। তারপর আপনার অনুরোধ বিবেচনা করা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানিম এহসান এর ছবি

রাজশাহী যাব ভাবছি ডিসেম্বরে। বহুদিন যাওয়া হয়না। আবার ঘুরাঘুরি শুরু করবো পুরোদমে।

অতিথি লেখক এর ছবি

করেন তানিম ভাই, প্রচুর ঘুরাঘুরি করেন আর ঘুরাঘুরি শেষে এইরকম মনকাড়া পোষ্ট দেন।

-অয়ন

অতিথি লেখক এর ছবি

হে হে পান্ডবদা, দাওয়াত দিতে হবে কেন, আত্মীয়রা তো সময় পেলেই চলে আসে, আর আপনারা তো এখন আত্মার আত্মীয়। সুযোগ পেলেই হাজির হয়ে গিয়ে বলবেন "আসলাম"।

আপনাকে সহ সচলের সবারই যে কোন সময় দাওয়াত থাকলো - প্লাস ভরা জ‌্যৈষ্ঠে গাছ-পাকা আম গাছ থেকে পেড়ে খাওয়াবো, যদি আসেন। তবে ভাই লিস্টে নাম তোলানোর জন্য কিন্তু দাওয়াত দিতে পারবো না - মাফ চাই।

-অয়ন

তানিম এহসান এর ছবি

পান্ডবদা’র সাথে কিন্তু আমি একমত। রাজশাহী আমারও খুব পছন্দের শহর কিন্তু বরিশাল এখনও পুরোপুরি শহর হয়নি, মাটির সোঁদা গন্ধটা টের পাওয়া যায়।

তানিম এহসান এর ছবি

ঘুরে যান। ঘুরতেও হবেনা, শুধুমাত্র ঢাকা থেকে বরিশাল জলপথে আসুন, নদীমাতৃকতার সারাংশ বোঝা হয়ে যাবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তানিম এহসান এর ছবি

জলেবিধৌত আমাদের হাওড় এলাকাও সুন্দর কিন্তু উপকূলের নান্দনিকতা’র বিষয়টা, এর নিরলঙ্কার, নিরাভরণ অনন্যতা আসলেই চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। জাদু-বাস্তবতার মত মনে হয় মাঝে মাঝে। শুধুমাত্র সুপারি’র বনে সারাদিন নানামুখী অলংকরণ দেখে সময় কাটিয়ে দেয়া যায়। এখানে সুপারির বন মানে ছকে-কাঁটা দীর্ঘ বিন্যস্ত গাছের সারি, তার মাঝে চিরল চিরল নালা -- সেখানে রোদ, ছায়া আর আলো-আঁধার মিলে একেক জায়গায় একেক দৃশ্য -- মনের খোরাকের কথা নাই-বা বললাম, দৃষ্টিশক্তির ব্যাপক উপকার।

কোন বোধে আর নির্বাপণে জীবনানন্দ ‘পৃথিবীর রূপ দেখিতে চাইনা আর’ বলেছিলেন শুধুমাত্র এখানে আসলেই টের পাওয়া সম্ভব!

পড়া এবং বহুবিধ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ পান্ডব’দা। হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

নদীমাতৃক মানে নদী মাতা যার - ছেলেবেলায় পড়া এই কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ‌্যে এই লেখাটা পড়ার পর থেকে।

ভালো লাগলো।
অয়ন

শশাঙ্ক বরণ রায় এর ছবি

কীর্তনখোলা’র সেই মেঘলা আকাশের আলো-আঁধারীর রাতের কথা মনে আছে তানিম ভাই। আরতো হল না। আপনি কবে ফিরছেন? দেখি আরেকবার---

তানিম এহসান এর ছবি

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পুরোপুরি ফিরে আসবো। চলে আস, পারলে সবুজ বাঘ বলে লোকটাকে সাথে নিয়ে আস। এখানে শরতের প্রকৃতি একদম আলাদা, ভাল্লাগবে। একটু আগে থেকে জানিও।

কাজি_মামুন   এর ছবি

দুইপাশে দুইটা বারান্দা, চারপাশের বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়, শুধু গাছ আর গাছ।/অফিসের ছাদে উঠলে দূরে কীর্তনখোলা নদীর ওপারে ইটভাটার চিমনি দেখা যায়, নদীর বাতাস এসে গায়ে লাগে।

এমন দুটি বারান্দা আর ছাদ যদি আমার থাকত! আর ব্যাপারটা তো এখানেই সমাপ্ত নয়, সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, বলেশ্বর, কালিজিরা, ধানসিঁড়িসহ অন্যান্য নদীভ্রমনের বর্ণনায় আফসোসের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছিল। আপনার ছেড়ে দেয়া চাকরিটি আমায় দিয়ে দেবেন, তানিম ভাই?

বাংলাদেশের সবুজ আর জল চুরি হয় সবচাইতে বেশি

আমাদের গ্রামগুলোতে যখনই যাই, তখনই এ সত্য প্রকটভাবে চোখে পড়ে। বিশ্রীভাবে ঘাড় উঁচু করে দাড়িয়ে থাকে দালান-দানবের দল। খুব দ্রুত অবলুপ্তি ঘটছে আমাদের বাগান, ক্ষেত, খাল, আর পুকুরগুলোর। দুঃখজনক হল, সেদিকে তাকায়ে দেখার মত লোক খুব কমই আছে আমাদের প্রশাসনযন্ত্রে।

তানিম এহসান এর ছবি

আশা করি ভাল আছেন। প্রশাসন যন্ত্র হয়ে গেলে দেখার লোক পাওয়া যাবে কোথায়? আর আমার ফেলে আসা চাকরী নিতে চাইলে নিতে পারেন, ওটা এখন উন্মুক্ত দেঁতো হাসি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

১৯৬৮ সালে বরিশালে ছিলাম। কীর্তনখোলা নদীতে তখন ইলিশ পাওয়া যেত। আমরা থকতাম 'বেলস পার্কে'। আব্বা সকালে হাঁটতে বেরিয়ে ১৲ চারটে মাঝারি মাপের ইলিশ কিনে আনতেন।
আপনার লেখা পড়ে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
লেখা ভাল লেগেছে। কিছু ছবি থাকলে আরও ভাল হতো।

তানিম এহসান এর ছবি

বেলস পার্ক এখন চারপাশে ঝলমলে। ছবি তোলা হবে, বেলস পার্কের বর্তমান ছবি আপনার জন্য থাকবে হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

প্রতি মন্তব্যগুলো জায়গার’টা জায়গায় নাই। কেমন যেন হিজিবিজি-হিজিবিজি হয়ে আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দক্ষিণের নদীগুলো কি পরিমাণ সুন্দর তা এই বছরে বিভিন্ন সময়ে সেখানে তিন বার না যাওয়া হলে জানা হত না। এই তো গত সপ্তাহেই বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা- কলাপাড়া- রামনাবাদ চ্যানেল- আগুনমুখা ঘুরে এলাম, যদিও অফিসের কাজে আর কি। স্পীডবোটে করে কলাপাড়া থেকে পরশবুনিয়া, চারিপাড়া গ্রামে গিয়েছিলাম, কি যে রোলিং ছিল নদীতে! সবার পরনে লাইফ জ্যাকেট, আমি পরিনি। সাহসী, তা বলে নয়। সাঁতার এম্নিতেই পারি না, নদীর যেই প্রকাণ্ড রুপ তাতে ও জিনিস পরলেও কাজে লাগবে কিনা সন্দিহান ছিলাম।

রোজার মধ্যে গলাচিপা যাওয়ার পথে রামনাবাদ নদীতে ফেরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে এক অভিজ্ঞতা ছিল বটে। আর নদীর নামগুলো কি ভীষন সুন্দর! মে মাসে যখন প্রথমবার যাই, সেতুর টোল নিচ্ছিল যে তাকে জিজ্ঞেস করি, "নদীর নাম কি?" সে বলে, "পটুয়াখালী সেতু।।" আমি আবার বলি, "ভাই, নদীর নাম, নদীর নাম।" সে আবারও বলে, " ঐ তো, পটুয়াখলী সেতু!!!" জীবন তার সেতুতেই আটকে গেছে।।। হা হা হা।।।

লেখাটার সঙ্গে অনেকখানি রিলেট করতে পেরেছি বলেই এক গাদা কথা বলে ফেললাম।

ভাল থাকবেন।

অস্পৃশ্যা।

তানিম এহসান এর ছবি

গত সপ্তাহে একশন এইড টিম এর সদস্য এক বন্ধুর কাছে শুনলাম রামনাবাদ চ্যানেলে তাদের রোলিং এর মুখোমুখি হওয়ার বর্ণনা, বিদেশী দলের সদস্যদের সেই রোলিং এ পড়ে চেহারার কথা। মজা লেগেছে। পটুয়াখালি’র নদীর নাম লোহালিয়া।

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনিও ভালো থাকবেন হাসি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

কী সুন্দর সুন্দর আমাদের নদীদের নাম- বিষখালি, শিবসা, কীর্তনখোলা, পায়রা, আগুনমুখা, বলেশ্বর, তেঁতুলিয়া, ডাকাতিয়া, আন্ধারমানিক... আহা!!!

স্নিগ্ধ হয়ে গেলাম কবি।

তবে চাকরিত্যাগ কেন তা জানতে দূরালাপনে যোগাযোগ করবো....................


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

এই পুলাটা খালি কবি কবি করে! হুরো মিয়া, শান্তিতে থাকতে দেও আমারে! রেগে টং

চারকী ত্যাগ আমার লাগি নতুন না দেঁতো হাসি আগেতো দুম-দাম ছেড়ে দিতাম, এইবার মানুষের সাথে বুদ্ধি-পরামর্শ করতে যেয়ে সমস্যা হয়ে গেলো, দিরং হয়ে গেলো। তবে যা হয় ভালোর জন্য হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই মন চাইতেসিলো ত্যাগ করি, কিছু কাজ গুছানো বাকি ছিলো, শেষ করলাম, তারপর ত্যাগাইয়া দিলাম পুরাপুরি গুল্লি

এখন শান্তি! এই নিয়া আর কি কথা হবে, অ্যাঁ! খাইছে

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

কবি ডাক এমনেতেই উঠে আসে লেখাগুলো পড়লে...........

শান্তি চিরস্থায়ী হোক.............. হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

তার মানে তুমি এখন বরিশাল নাই? কও কি? সেদিন ফোনে কথা হল টের তো পেলামনা কিছুই! যাই হোক ভাল থেকো।

তানিম এহসান এর ছবি

আছি। ঝিমঝাম থাকতে পারি কিন্তু লুকায়ে যাবো কেন? যাদের কাছ থেকে আপাতত বিদায় নেব তাদের ভেতর তুমিও আছ।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমাদের নদীগুলোর নাম এতো সুন্দর ক্যান!

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তানিম এহসান এর ছবি

সুন্দর মনের, শুভ-বোধ সম্পন্ন মানুষের দেয়া নাম, এই বেশি দিন আগেও আমরা এখন যেমন আছি তেমন ছিলাম না -- দেখবেন সব আবার বদলে যাবে। শুধু নদী কেন, ফুল-ফল-পাখী -- একটা নাম দেখান তো যে নামের মাহাত্ম্য নেই!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।