ওয়্যানটাইটামবো, ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০২/২০১২ - ৭:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

383083_10151146756885497_608590496_22701914_1329701366_n

পেরু নামের সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ের মায়া ঘেরা জাদুরাজ্যের কথা আসলেই সবার আগে যে শব্দটি মাথায় আসে তা হল মাচু-পিচু। পেরু আর মাচু-পিচু যেন হরিহর আত্মা, একটি ছাড়া আরেকটি কল্পনা করা যায় না, ইনকাদের তৈরি এই রহস্যময় পাহাড়ি শহর এতটাই বিখ্যাত। কিন্তু মূল সত্য হচ্ছে, পেরুতে এমন বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য আছে যার গুরুত্ব কোন অংশেই মাচু-পিচুর চেয়ে কম নয়, কিন্তু এরা বিচিত্র কোন কারণে বিশ্বমিডিয়ায় বিপুল পরিসরে নিজেদের স্থান করে নিতে পারে নি, যদিও পর্যটকদের কাছে এদের আবেদন সবসময়ই অটুট। গতমাসে কোমর বেঁধে বিশাল দেশ পেরুতে অল্প কয়েকদিনের অবস্থানের সময় এমন কিছু স্থাপনা দেখে আমাদের মাথা কেবল নুইয়েই গেছে প্রাচীন সেই সভ্যতার কারিগরদের প্রতি, নিখাঁদ শ্রদ্ধায় ও বিস্ময়ে। তেমন এক জাদুনগরীর নাম ওয়্যানটাইটামবো। চলুন না ঘুরে আসি খানিকের জন্য আন্দেজের উত্তাল বাতাসে ইতিহাস ঘেরা ইনকা শহরে।

407717_10151147530445497_608590496_22705729_825484437_n

প্রাচীন ইনকা রাজধানী কুজকো থেকে আমাদের বাসে যাত্রা শুরু, সারা দিন বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থান ঘোরার পরে দিনের শেষ গন্তব্য ওয়্যানটাইটামবো, সেখান থেকেই বিখ্যাত ইনকা রেলে চেপে আমরা যাব মাচু-পিচুর উদ্দেশ্যে। সেই হিসেবে ওয়্যানটাইটামবোর রেল ষ্টেশনটিও ভুবনবিদিত।

অতীত ও বর্তমানের মিলনস্থান পেরুর এই শহরগুলি, ফসলের যে ক্ষেতগুলি ভুট্টা, আলু নানা ধরনের শস্যে ঝলমল করছে এগুলো প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো! সেই সময়ের ইনকারা পাথররের প্রাচীর দিয়ে স্তরে স্তরে ধরে রেখেছিল মাটির উর্বরতা, আর তাদের বংশধরেরা সেই ধারাতেই, একই জমিতে করে যাচ্ছে চাষাবাস। কিছু বাসস্থানও দেখলাম শতাব্দী প্রাচীন, নানা বর্ণের মাটির তৈরি। এখনো মানুষ বাস করে সেই জীর্ণ কক্ষগুলোর অভ্যন্তরে।
আধুনিক ওয়্যানটাইটামবোর সীমানা নির্ধারণ করেছে এক খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, এরপরে বেশ কিছু দোকান নিয়ে রঙ ঝলমলে এক ইনকা বাজার, তার পরপরই সেই প্রাচীন নগরী।

430695_10151277710030497_608590496_23137345_715810739_n

গাইডের কাছে জানা গেল, ইনকা সম্রাট পাচাকুটি এই জনপদটি বিশেষ কারণে দখল ও বিস্তার করেছিলেন, এটি এক অর্থে বলা চলে দুর্গ নগরী, কারণ অনেক সৈন্য থাকত এখানে, আবার শহরটি মূলত ব্যবহৃত হত সমগ্র অঞ্চলে উৎপাদিত খাদ্যশস্য সংরক্ষণের হিমাগার হিসেবে।

422833_10151310805295497_608590496_23226060_747240921_n

430270_10151288199000497_608590496_23163528_816296523_n

ইনকা সম্রাট তার প্রজাদের কাছ থেকে কর হিসেবে আদায় করতেন কোঁকা পাতা! এত উচ্চতায় পাৎলা বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে এই পাতার কোন বিকল্প তখন ছিল না (ওয়্যানটাইটামবো প্রায় দশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত) , তাই ইনকা রাজ্যে এই সবুজ পাতার মূল্য ছিল সোনা, হীরা, পান্নার চেয়ে অনেক অনেক বেশী। কর হিসেবে আদায়কৃত কোঁকা পাতাও এইখানে সংরক্ষণ করা হত।

407327_10151310805140497_608590496_23226059_397979203_n

মূল নগরীর তোরণে পৌঁছে খানিক ক্ষণের জন্য থমকে দাড়াতে হল এক অকুতোভয় অসম সাহসী জীবন নামের যুদ্ধে জয়ী লড়াকু যোদ্ধাকে দেখে, অন্ধ একজন ইনকা গায়ক অদ্ভুত সুরেলা গলায় মেঠো গান গেয়ে যাচ্ছেন প্রাণ খুলে, সাথে বাজিয়ে যাচ্ছেন এক বিশাল হার্প জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। এমন মানুষ দেখলে ভীষণ শ্রদ্ধা হয় আমার, যারা অন্ধত্বের কাছে হার না মেনে নিজের সহায় সম্বল নিয়েই জীবনে এগিয়ে চলে। তাদের মত আত্নবিশ্বাসী আর সাহসী কোনদিনই হতে পারব না, তাই সেই ঘাটতিটুকু পূরণ করি এমন মানুষদের সাথে দুদণ্ড অতিবাহিত করে।

426474_10151279123575497_608590496_23140049_23577984_n

মূল ফটক পেরিয়ে সামনে দৃষ্টি যেতেই শত শত বছর আগের ইনকা শহর যেন অবিকল আগের রূপ নিয়েই আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে উঠল আন্দেজের বুকে। কি অসাধারণ সেই স্থাপত্য, যেন কল্পলোকের সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বাস্তবের মর্ত্যে। পাথর বাঁধানো সারি সারি ফসলের ফালি ফালি ক্ষেত ক্রমশ উঠে গেছে উপরের দিকে, দুই পাশেই চওড়া বাঁধানো সিঁড়ি। উপরে আবার শুরু হয়েছে বিশালকায় সব পাথরের প্রাচীর ও নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা।
জানা গেল, এই শহরে একবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বিশাল খাদ্যভাণ্ডারের প্রায় সবটুকুই পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়, তখন খোদ সম্রাটের হুকুমে শহরের অদূরেই কিন্তু সীমানার বাহিরে উঁচু পাহাড়ে আলাদা আলাদা কয়েকটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হয়, সেখানে প্রহরীদেরও থাকার সুব্যবস্থা ছিল বলেই প্রমাণ পাওয়া যায়।

দক্ষ কৃষক ছিল ইনকারা, জমি তৈরিতেও ছিল তাদের অপরিসীম দক্ষতা। প্রথমেই বড় বড় পাথর খণ্ড, তার উপর বিশেষ ধরনের ছোট পাথর খণ্ড, তার উপর কয়েক ধরনের কাঁকর, এমন বেশ কিছু স্তরের পরে সবার উপরে উর্বর মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হত নগরীর মাঝেই কৃষিক্ষেত্র। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কৃষিকাজ তারা উদ্ধাবন করেছিল হাজার বছর আগেই, সেই সাথে দিয়েছিল সারা পৃথিবীকে এক নতুন খাদ্যের সন্ধান- আলু।

377546_10151147000405497_608590496_22702772_1851641827_n

ইনকারাই প্রথম আন্দেজের উর্বর উপত্যকায় আলুর চাষ শুরু করে, কত ধরনের যে আলু হয় পেরুতে! স্প্যানিশরা এই আশ্চর্য খাবার নিয়ে যায় ইউরোপে, সেখান থেকে এখনতো সারা গ্রহেই আলুর জয়জয়কার। তিব্বতেও দেখেছিলাম সবখানেই আলুর ক্ষেত। সেই সাথে কত ধরনের যে ভুট্টা হয় !

430419_10151310809145497_608590496_23226089_1393983998_n

সিঁড়ি বেয়ে প্রাচীন ক্ষেতগুলো পর্যবেক্ষণের পর উপরের সুরক্ষা প্রাচীরে পৌঁছালাম সবাই, সবারই চক্ষুচড়কগাছ সামনের বিশাল পাথরের তৈরি নিপুণ নিখুঁত স্থাপনা দেখে। নানা আকারের পাথর এমন ভাবে জোড়া লাগানো হয়েছে একটি আরেকটির সাথে যে দুই পাথরের ফাঁকে পাতলা ব্লেডও ঢোকানো সম্ভব নয়!

404548_10151310807960497_608590496_23226081_1413582526_n

425512_10151310806215497_608590496_23226066_161530109_n

396360_10151310805910497_608590496_23226064_430713801_n

যে ইনকারা কোন রকম ধাতব পদার্থের ব্যবস্থা জানত না তারা কি করে এবড়ো থেবড়ো পাথরখণ্ড এত চমৎকার ভাবে মসৃণ করে মাপমত বসিয়ে এমন আশ্চর্যজনক নিদর্শন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল তা এখনো রহস্যে ঘেরা।
বিশেষ করে সূর্য দেবতার উপাসনার নিমিত্তে সেই সময়ের নির্মাণাধীন মন্দিরটি যা স্প্যানিশ লুটেরাদের আক্রমণের কারণে আজো অসামাপ্ত, সেখানে এত শত বছর ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাড়িয়ে আছে ছয়টি দৈত্যাকৃতি মনোলিথ পাথর, ওজনে প্রত্যেকেই ২০ টনের উপরে হবে!

397158_10151310808415497_608590496_23226084_1707344800_n

407345_10151310808585497_608590496_23226086_472910959_n

কি উপায়ে সম্ভব হল এমন! উত্তরে গাইড দেখাল সেই পাথরগুলোর উপরে এবং নিচে বহুল পরিচিত বেরিয়ে থাকা অংশ, যা ব্যবহার করে পাথরগুলো ঠেলেঠুলে জায়গামত নিয়ে আসা হত, তারপর পাথরের উপর পাথর দিয়েই ক্রমাগত আঘাত করে মসৃণ থেকে মসৃণতর করা হয়েছে,

419162_10151310807305497_608590496_23226076_1304502443_n

424567_10151310807075497_608590496_23226074_386366859_n

419360_10151310806835497_608590496_23226072_677646952_n

এবং এক পর্যায়ে সেই বাহির হয়ে থাকা অংশ সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে গেছে, রেখে গেছে চকচকে অসম্ভব মসৃণ প্রস্তরপৃষ্ঠ। এই বিশাল পাথরগুলো আনা হয়েছিল প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের পর্বত থেকে।

425519_10151310808250497_608590496_23226083_420015270_n

418485_10151310807615497_608590496_23226079_1224065568_n

এই প্রসঙ্গে জানা গেল এক নতুন তথ্য, হ্যারিসন ফসেট ( গাইড প্রথমে ভুলে হ্যারিসন ফোর্ড বলেছিল) নামের এক প্রত্নতত্ত্ববিদ এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে ছিলেন অনেক দিন, তার স্ত্রীকে পত্র লিখে জানিয়েছিলেন- আমাজনের কিছু আদিবাসী গোত্র বিশেষ বিশেষ গাছের রস প্রক্রিয়াজাত করে তার সাহায্যে বিশালকায় পাথরখণ্ডকেও নরম করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ পাথর পরিবহণ বা সেখান আঁকিবুকি করা অনেক সহজতর হয়ে ওঠে ( প্রফেসর শঙ্কুও এমন একটা ধারণা পোষণ করতেন বটে, যে আদি কিছু সভ্যতার প্রকৌশলীরা অল্প সময়ের জন্য কোন পাথরকে বিশেষ উপায়ে অতি হালকা করতে পারত) ! হ্যারিসনের পরের চিঠিতে জানা যায় তারা আমাজনের গভীরে প্রবেশ করবেন, যদিও স্থানীয়রা যেতে প্রবল ভাবে নিষেধ করছেন, কারণে সেখানে নরখাদকরা থাকে! সেটিই ছিল হ্যারিসনের শেষ চিঠি !!

393975_10151310808950497_608590496_23226088_1933112087_n

এক বিশাল পড়ে থাকা পাথর দেখিয়ে গাইড ফেঁদে বসল আরেক গল্প, জানাল এই পাথরসহ বিশেষ কিছু পাথর নিয়ে অনেক ব্যতিক্রমী মতবাদ আছে, তারমধ্যে জনপ্রিয়তমটি হচ্ছে এই নির্মাণকলা এলিয়েনদের কাছ থেকে পাওয়া। পাথরটি দেখা যায় অর্ধেক অতি নিখুঁত ভাবে কাটা , এমন নিখুঁত ভাবে কাটার যন্ত্র কি ছিল সেই আমলে! তাহলে কি- অনেকেই ধরে নিলেন ভিনগ্রহবাসীদের লেজারগানই হতে পারে এর উত্তর!

396317_10151310807775497_608590496_23226080_581801092_n

ভ্রমণসঙ্গী মাইক্রোসফটের প্রকৌশলী ইসাইয়াস সেরণা মৃদু হেসে কেবল বলল- লেজার গান জিনিসটা কিন্তু এখনো কেবল কল্পকাহিনীতেই সীমাবদ্ধ, এর অস্তিত্বের প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। আমাদের চেষ্টা করা উচিত গল্পগাঁথায় ভুলে না থেকে আসল শ্রমলব্ধ সত্যটি অন্বেষণের চেষ্টা করা।

396276_10151310807450497_608590496_23226078_357654543_n

স্থানীয় অধিবাসীদের চোখে পড়ল থেকে থেকে, কি যে রঙ্গিন তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, বিশেষ করে মহিলা আর শিশুদের, মনে হয় মধ্য আমেরিকার মায়ানদের চেয়ে অনেক বেশী রঙ ঝলমলে ছিল ইনকা শহরের প্রাচীন বিকেলের বিলুপ্ত বাজারগুলি।

380498_10151148439200497_608590496_22709898_752968761_n

কিন্তু তাদের মুখে আজ হাসি নেই, ঔপনিবেশিক প্রভুরা ছলে বলে কৌশলে দখল করে নিয়েছে তাদের উর্বর জমি, প্রাচীন সংস্কৃতি, বিকশিত মনন। নিজে ভূমে পরবাসী বানিয়ে ছেড়েছে ইনকা বংশধরদের, সমস্ত গ্রাম-শহর লুট করে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছে পাথুরে কাঁকরময় বন্ধুর জমিতে, সেই জমিতে আক্ষরিক অর্থেই রক্ত বিসর্জন দিয়ে যখন সুজলা সুফলা করেছে দক্ষ কৃষিবিদ ইনকারা, সেই জমি জবর দখল করে আবার তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্গমতর স্থানে। এই শঠতা, গুণ্ডামি, নোংরামি চলছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, আজো এই অস্তিত্ব দুঃখজনক ভাবে অতি উজ্জল আন্দেজের বুকে।

401486_10151148031695497_608590496_22708281_118094209_n

এক জায়গায় দেখা গেল বিশেষ ধরনের দানব পাথরের স্তম্ভের সাথে, যদিও তা ভূমিতে শোয়ানো ছিল, এর নাম নর, যেহেতু এর কিছু অংশ বাহির হয়ে আছে, আর একটি পাথর আছে যার নাম নারী, যা এই নরের উপর স্থাপন করলে নর-নারী নিখুঁত ভাবে পরস্পরের সাথে মিলে গিয়ে একটি বিশালকায় খিলান হিসেবে কাজ করে, তাদের বন্ধ থাকে চির অটুট।

417198_10151310808800497_608590496_23226087_1174630884_n

আরো উপরে উঠে গোটা শহরের চমৎকার আদিগন্তবিস্তৃত রূপ দেখা গেল, আন্দেজের উপত্যকার মাঝে ঘুমিয়ে আছে যেন ৫০০ বছর আগের এক জনপদ।

387325_10151148122245497_608590496_22708707_234124208_n

সেখান থেকে সামনের পাহাড়ে মনে হল প্রকৃতির নানা খেলায় তৈরি হয়েছে মানুষের মুখের মত এক আদল, সে এক ইনকাদের কাছে ছিল এক মহা শক্তিশালী দেবতা! এমনও হতে পারে এই পাথর দেবতার সন্ধান পেয়েই ইনকারা এই অঞ্চলে আদি বসত গড়েছিল, দেবতার ছত্রছায়ায় থাকার জন্য। ভিরাকোচান না টুনুপা নামে পরিচিত এই দেবতা ছিল আদি ঈশ্বর ভিরাকোচার বার্তাবাহক। উল্লেখ্য, ভিরাকোচা কেবল ইনকাদের নন, বরং ল্যাতিন আমেরিকার প্রাক কলম্বিয়ান অনেক সভ্যতার পুরাণেই সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর হিসেবে পরিচিত।

418540_10151310806615497_608590496_23226069_1729509154_n

সেই পাথুরে আদলের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হাসি চলে আসল, যে সর্বশক্তিমান সংগ্রামী মানুষ এমন বন্ধুর পরিবেশে সাফল্যের বান আনতে পারে সেই কিনা ঐ অথর্ব পাথর পূজা করত ! কিসের আশায়! তাদেরই না কি দোষ, তাও দেবতা চোখে সামনে ছিল, আমাদের আধুনিক বিশ্বে তো অদৃশ্য কল্পিত দেবতা নিয়ে সারাদিনই মারামারি, বোমাবাজি চলছে তো চলছেই। কতটাই বা সভ্য হয়েছি আমরা!

শহর শীর্ষ থেকে গ্রামবাসীদের গবাদিপশু রাখার বেশ নয়নমনোহর ব্যবস্থা দেখে ছোটখাট কলোসিয়াম বলেই ভ্রম হল।

378439_10151147247500497_608590496_22703972_1663894166_n

অনেক সহযাত্রীই তখন অন্য পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা ইনকাদের সেই শস্য ভাণ্ডারের উদ্দেশ্যে পাহাড় ডিঙ্গোচ্ছে, কিন্তু আমাদের বেরসিক গাইড জানাল আমাদের সময় শেষ! মিনিট পনের পরেই বিখ্যাত ইনকা ট্রেন এসে থামবে, গন্তব্য সুদুর আল কালিয়ান্তেস, যেখান থেকে পরের দিন আমাদের মাচু পিচু যাবার কথা! টিকিটসহ অন্যান্য সবকিছুই বরাবরের মতই শেষ মুহূর্তে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এখন কোন ভাবেই ট্রেন মিস করা চলবে না!

422993_10151295627655497_608590496_23187582_1865119801_n

কাজেই ওয়্যানটাইটামবোতে অল্প কিছুক্ষণ থেকে জাদুময় মায়ানগরীকে বিদায় দিয়ে আবার যাত্রা পথে আমরা। মনে পড়ছে এই নগরীর পতনের কথা, দখলদার বর্বর স্প্যানিয়ার্ডদের কাছে রাজধানী কুজকোর পতন ঘটলে বিদ্রোহী ইনকা নেতা মানকো কাপাক এইখানেই অস্থায়ী রাজধানী নির্মাণ করেন, যদিও পরবর্তীতে প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাহাড়ি রাজধানী ভিলকাবাম্বায় ঘাটি করতে বাধ্য হন। ১৫৪০ সালে পতন ঘটে এই বিস্ময়কর শহরের। ওয়্যানটাইটামবোর সেই রক্তময় ইতিহাসের কথা আরেকদিনের জন্য তোলা থাকল।।

427310_10151310806380497_608590496_23226068_538085138_n


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হ। খাড়ান ভাত খাইয়া লই। পরে আপনের পোস্টে মন্তব্য করতাছি।

তারেক অণু এর ছবি

আসুম নাকি! লিখতে যেয়ে দুপুরে খাওয়া হয় নাইক্যা ভাল মত, এখন কফিই ভরসা!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আয়া পড়েন, সেইরকম খানাপিনা আছে। আর আইজকা তো কার্নিভালের একটা অফিসিয়াল দিন বালিকাদেরকে নিয়ে। পুরাই টেরম টেরম কাহিনি অবস্থা!

তারেক অণু এর ছবি

ঠিকানা ! আর না হয়লে ওয়েব ক্যাম! হো হো হো

চরম উদাস এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...

ধুসর গোধূলি এর ছবি
চরম উদাস এর ছবি

আরে নাহ, কমেন্ট করার জন্য ইটা রাখি নাই। মাথায় মারার জন্য রাখছি। এই পোলার পোস্টে কি কমেন্ট করার আছে আর? এখন থাইকা তাই পোস্ট দেখলেই একটা করে ইটা মেরে যাবো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমি তো দড়ির অর্ডার দিছি। দ্যাশ থাইকা। এক নম্বর নাইলনের দড়ি। খাষ্টাঙ্গের পায়ার লগে তারে বাইন্ধা হেরপর থাইকা তাড়েকানু নামে ব্লগায়া ফাডায়ালামু।

তারেক অণু এর ছবি

ইটা না মাইরা পাথর মারেন না! তাহলেই এমন একটা শহর গড়ার চিন্তা ভাবনা করতে পারতাম! জীবিত অবস্থায়ই আপনাদের দুইজনের নামেই সড়ক থাকবে, চাইলেও আশ্রয়ও দেঁতো হাসি

রুমা এর ছবি

অদ্ভুত সুন্দর । প্রথম ছবিটা দেখেই তো দম বন্ধ হয়ে এসেছিলো । সেই অন্ধ গায়কের প্রতি শ্রদ্ধা ।

তারেক অণু এর ছবি

অপরূপ জায়গা একটা।

তাপস শর্মা এর ছবি

সুপার লাইক চলুক চলুক চলুক হাসি

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা তাপস দা।

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার। টিনটিনের সূর্যদেবের বন্দীর কথা মনে পড়ছিল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

আমারও ! আসলে লিমাতে লম্বা ট্রানজিটের ফাঁকে ল্যাতিন আমেরিকায় টিনটিনের সবগুলো অ্যাডভেঞ্চার ঝালাই করেছিলাম !

ধূসর জলছবি এর ছবি

দেঁতো হাসি ইনকারা আলু আবিষ্কার করেছে ! আমি কৃতজ্ঞ, আলু আমার প্রিয় কিনা অনেক খাইছে । হ্যরিসন ফসেটের জন্য খারাপ লাগছে, বেচারা!! দেইখেন , আপনিও ঘুরতে ঘুরতে নরখাদকদের সামনে না পড়ে যান। শয়তানী হাসি

তারেক অণু এর ছবি

হ্যাঁ, আলু এর আগে বিশ্ব চিনত না কিন্তু। সেখানে অনেক অনেক প্রজাতির আলু হয়। অনেক বর্ণের, নানা আকৃতির।
ব্রিটিশরাও অনেক চেষ্টা করেছে এই ধরনের খাবার আবিস্কারের, কিন্তু তাদের দৌড় ছিল রুটিফল পর্যন্ত!
আমার চারপাশে তো সবসময় খাদকদেরই দেখি !

অরফিয়াস এর ছবি

পাত্থর, খালি পাত্থর, ছবিতেও আর পোস্টেও, সেইরকম পাত্থর দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

কোমর পর্যন্ত গেড়ে নাকি এমনিই! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

কুমার এর ছবি

অণু ভাই, এরপর কই যাবেন? পৃথিবীতে আর কিছু তো বাকি রাখলেন না! শনি, রবি, সোম, মঙ্গলই কেবল বাকি থাকল।
লেখা-ছবি বরাবরের মতই (গুড়)

তারেক অণু এর ছবি

ইসরায়েল যাবার খায়েশ আছে, দেখি।
শুভেচ্ছা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল আছেনতো ! পায়ে ব্যাথা হয় নাইতো ! হাঁটাহাঁটি, ওঠা-নামাতো এ ক'দিনে কম করলেন না !
ভাল থাকবেন।

তারেক অণু এর ছবি

মন ভাল নেই ! এত দৌড় ঝাপের পর শীতের মধ্যে মহা বিরক্ত লাগছে।
বসন্তের জন্য অপেক্ষারত--

sagar এর ছবি

খুব ভালো লেগেসে । ওনু বাংলাডেসে কোবে াসবে।

তারেক অণু এর ছবি

এখনই বলতে পারছি না, জানাব।

হিল্লোল এর ছবি

এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম আর চোখ বন্ধ করে আপনার অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনায় চলে গেলাম ৪৫০-৫৫০ বছর আগের ইনকাদের সেই মায়াময় নগরে। আপনার অন্য লেখাগুলোর মতো এটাও দুর্দান্ত হয়েছে!!! উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরও লিখছি ইনকাদের অন্যান্য জনপদ নিয়ে।

তমিস্রা এর ছবি

অণুদার পোস্ট না পড়েই বলা যায় -অসাম!

তারেক অণু এর ছবি

এহ ! বললেই হপে ! অ্যাঁ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।