বস্তা ভর্তি চোখ

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ১৭/০৫/২০১৪ - ৬:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭১-র ডিসেম্বরে আল–বদর হেডকোয়ার্টারে পাওয়া গিয়েছিল এক বস্তা চোখ।

অমানুষিক, জান্তব, নির্মম, নৃশংস এই তথ্য আমায় তাড়া করে আজীবন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আল-বদরদের নির্যাতনের যতটুকু প্রমাণ আমরা পেয়েছি তাতে বোঝা যায় এই চোখগুলো তুলে নেওয়া হয়েছিল জ্যান্ত মানুষের মুখমণ্ডল থেকেই।

কী দেখেছিল সেই চোখেরা শেষ মুহূর্তে?

- ঘাতকের বেয়োনেট, ভোতা চাকু, নাকি নেকড়ের হাসি? তাদের চোখে কি শেষবারের মত বাংলার নীলাকাশ একটু স্নিগ্ধ পরশ দিতে পেরেছিল, নাকি যে ময়লা চিটচিটে রক্তাক্ত কাপড়ের ফালিতে চোখ বাঁধা হয়েছিল তার উপর দিয়েই অতর্কিতে ধাতব স্পর্শ দিয়েই খুবলে আনা হয়েছিল দৃষ্টিশক্তি? নাকি চরম ভাবে মানসিক অসুস্থ ঘাতকেরা বলে কয়েই চোখ তুলে নিয়েছিল, এবং তার আগে বাধ্য করেছিল তাদের চোখ খুলে তাকিয়ে থাকতে?

হৃৎপিণ্ডের ডাক্তার ফজলে রাব্বির হৃৎপিণ্ড ছিড়ে নিয়ে ছিল নরকের পশুরা, অপরাধ উনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্ত ছিলেন, বাংলাদেশের অধিবাসী হয়েও হয়েছিলেন প্রথিতযশা চিকিৎসক, সেটা তাদের সহ্য হয় নি। আচ্ছা, ঐ বস্তা ভর্তি চোখের মালিকেরা কি সবাই চোখের ডাক্তার ছিলেন? যারা মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতেন, তাই তাদের চোখের জ্যোতি ছিনিয়ে নেওয়া হল?

নাকি তাঁরা ছিলেন জাতির নয়নের মণি, আমাদের বিবেক, বুদ্ধিজীবীরা, যাদের হত্যা করা হয়েছিল ব্যপক হারে ডিসেম্বর মাসেই, তাদের পচা গলা অঙ্গহীন লাশ মিশে গেছে বাংলার মাটিতে, কিন্তু উৎপাটিত চোখেরা কি ঠাই পেয়েছিল অবহেলায় ফেলে রাখা বিশ্বের সবচেয়ে কলঙ্কিত বস্তাতে?

কী চেয়েছিলেন সেই চোখগুলোর মালিকেরা যার জন্য জীবন এবং জীবনের আগে চোখ দিয়ে দিতে হল? তাঁরা একটি স্বাধীন দেশে সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন আনমনে আমরা সোনার বাংলা গাইতে, জয় বাংলা স্লোগানে গলা ফাটাতে, হয়ত আর কিছুই নয় স্বকীয়তার লাল-সবুজ স্বপ্নে বিভোর থাকতে। তারই খেসারত ঐ বস্তা ভর্তি চোখ।

খুবলে তুলে নেওয়া চোখগুলোর বোবা দৃষ্টি তাড়া করে আমায় বিশ্বের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত।

আপনাকে ?


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

যারা ঐ পৈশাচিক অত্যাচার চালিয়েছিল, তারা বেশীরভাগ-ই কোন শাস্তি ত পায়ই নি, উল্টে অত্যাচারিতদেরই উত্তরাধিকারী সেজে বসে, বহাল তবিয়তে আজো তাদের স্বপ্নগুলো চুরমার করার লাগাতার নারকীয় প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারছে, যাচ্ছে!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

এখন সময় রায় কার্যকরের, এবং যাদের বিচার হয় নি তাদের বিচারের

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দীনহিন এর ছবি

একাত্তরের অনেক মর্মান্তিক কাহিনি আছে, তবে এইটি জানা ছিল না, অণু ভাই!

এখন ওদের চোখগুলি তুলে ফেলতে যান, দেখবেন মানবতাবাদীদের ঢল নামবে!

ধর্ম-ব্যবসায়ীরা 'চোখের বদলে চোখ', 'হাতের বদলে হাত' বলে মুখে থুবড়ি ছুটাবে, সৌদি কর্তৃক 'বাংলাদেশী' শিরোচ্ছেদকে ধর্ম দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চালাবে; অথচ ওদের উপর এই নীতির প্রয়োগ করতে যান, দেখবেন 'অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি', 'বার্ধক্য' ইত্যাদি কত ধুয়া তুলবে!

দেশের প্রচলিত আইনে একাত্তরের নরপশুগুলোর বিচার দ্রুততম সময়ে কার্যকর করা হউক।

যদি না করা হয়, যদি গড়িমসি করা হয়, যদি কোনমতে আবার ছাড়া পেয়ে যায়, সর্বনাশ হয়ে যাবে, একসময় বাংলাদেশের চোখটাই গিলে খাবে ওরা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চলুক

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
খুব ভালো বলেছেন দীনহীন।

-------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

এইসব পৈশাচিকতা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি।
শিউরে ওঠার মত বিষয়টা।

ভালো থাকবেন অণু।

-------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

বিচার তো দুরের কথা। আমরা তো সাঈদীদের ৭৫ থেকেই মাথায় তুলে রেখেছি। সর্বোচ্চ পাপের শাস্তি হতে হতে যখন অপরাধী আর ভিকটিমের বয়স চলে যায়, তখন আর সেটাকে বিচার বলা যায়? এখন দরকার ফাঁসি। শুধু ফাঁসি না, ফাঁসির ভিডিও করে সেটাকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখানো, যে "দেখো, বিশ্বাসঘাতকদের আমরা কি করি!" এদের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া - জাতীয়ভাবে বয়কট করা।
না, আমরা এদের থেকে ভিক্ষা নিয়ে ব্রিজ বানাতে যাই।
ঘৃনায় কথা জড়িয়ে যাচ্ছে লিখতে গিয়ে।

-অভিমন্যু সোহম

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

এতো কস্টের কথা গুলি পড়তে ভাল লাগে না আজকাল। খুব অসহায় লাগে। সত্যি বড় অসহায় লাগে। আসে পাশে শুধু পশুদের নিয়ে বসবাস করি।

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

-আনন্দময়ী মজুমদার

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

এই ঘটনার কথা জানা ছিলনা। কি পৈশাচিক! সব ঘাতকের বিচার শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি নাই।

গোঁসাইবাবু

তারেক অণু এর ছবি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

শিউরে শিউরে উঠি শুধু। আর অক্ষম ক্রোধে কাঁপি!!

____________________________

তারেক অণু এর ছবি

আর কত !

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ভাবেই ওরা আমাদের দেশের চোখ তুলে নিতে চেষ্ঠা করছে। আমাদের বীর সন্তানদের রক্ত লেগে আছে তাদের প্রতিটি টাকায়, আর সেই টাকাকে আমরা ব্যবহার করছি দেশের উন্নয়নে। ঘৃন্না ধরে যায় নিজের প্রতি।
-এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত। মিজান, পিষে ফ্যালো

তারেক অণু এর ছবি

পরিবর্তন শুরু করতে হবে, আমাদেরই

মন মাঝি এর ছবি

তাড়া করে বৈকি! আমাকে বিশেষ ভাবে তাড়া করে কিছু রক্তের দাগ। আপনার পোস্টটা পড়ে আমার তাড়া খাওয়াটাও মনে পড়ে গেল। এনিয়ে একটা পোস্ট দিয়ে দিলাম। মন খারাপ

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

প্রতিক্ষায় আছি। মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

হুম

সুবোধ অবোধ এর ছবি

মন খারাপ
মাঝে মাঝে অসহায় ক্ষোভে কাঁপি!!

তারেক অণু এর ছবি
নীড় সন্ধানী এর ছবি

শিউরে উঠলাম রীতিমত! মন খারাপ

[অট- ঐ মিয়া ফেবুতে মেসেজ দিছিলাম, জবাব দেন না কেন? চাল্লু ]

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

তাই নাকি?

স্পর্শ এর ছবি

বস্তাভর্তি চোখের কথাটা প্রথম জেনেছিলাম কলেজের ফার্স্টইয়ারে থাকতে। সেই থেকে দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে ফেরে...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তারেক অণু এর ছবি
তাসনীম এর ছবি

এইটা জেনেছিলাম অনেক আগে, সম্ভবত পত্রিকাতে পড়ে। এখনো তাড়া করে ফেরে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

কোন জাতিকে ধংস করতে হলে সেই জাতির শিক্ষিত শ্রেণীকে ধংস কর। আর সেই কাজ টিই খুবই সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। আমি তাদেরকে দোষ দেওয়ার আগে দোষ দেই আমার দেশের বেজন্মাদের। সেই সব নরপশুর ঘৃণ্য রাজাকার আলবদর আলসামসদের। তাদের সাহায্য ছাড়া কখনোই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারে না। অথচ আজ সেই সব ঘৃণ্য পশুরাই বাংলার পতাকা নিয়ে দম্ভ করে বেড়ায়। সেই সময় যে পাকিস্তানী বাহিনী সঠিক কাজ করেছিল তার প্রমাণ, পাকিস্তান সংসদে নিন্দা প্রস্তাব দেওয়ার পরও তথাকথিত রাজনৈতিক দলের কোন সাড়াশব্দ না পাওয়া। তখন যদি এই জাতির শিক্ষিত শ্রেণীর অকালে প্রাণ না যেতো, তবে আজ আমারা এতো ইতিহাস শূন্য হয়ে লন্ডন থেকে নতুন ইতিহাস শুনতে হতো না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই বিভৎসতার যন্ত্রনাটা থাকুক, আরো তীব্র হয়েই থাকুক। এই দেশটার জন্য কিছু করতে না পারার অক্ষম সময়ে এই যন্ত্রনা যেন মনে করিয়ে দেয় আমাদের এখনো অনেক কিছু করার ছিল, আছে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।