পূর্ব ইউরোপ- ৮ (ড্রাকুলা দুর্গ , জিলাপির প্যাঁচ Transfăgărășan )

দানিয়ুব নদীর তীরে সীমান্তবর্তী বুলগেরিয়ান শহর ভিডিনে বসে লিখছি। আজ রোমানিয়ার পার্বত্য অঞ্চলেই কোন নিরিবিল কটেজে রাত কাটাবার কথা ছিল কিন্তু কাউন্ট তার জাদু খাটিয়ে সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিধায় তাকে বুড়ো দেখিয়ে আঁধারের মাঝে সীমানা পেরিয়ে ( পড়ুন নদী পেরিয়ে, নদীর অর্ধেক রোমানিয়া, অর্ধেক বুলগেরিয়া) এখান আগমন। মোড়ের এক পত্রিকার দোকানে ১৯৭২র নাদিয়া কোমিনিচির মত মিষ্টি এক কিশোরী তার গোটা পরিবার নিয়ে এসে আমাদের হোটেল খুঁজে দেবার চেষ্টা করল। তাতে সুবিধার না হওয়ায় এই শহরেরই দুই জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেধে সেধে অর্ধেক শহর ঘুরে আমাদের বেশ চমৎকার এক স্পা হোটেলে পৌঁছে দিলেন, বিনিময়ে একটা সিগারেটও দাবী করলেন না ! নাহ, ভালো লেগে গেল বুলগেরিয়ানদের।

সকালে যাওয়া হয়েছিল ব্রান দুর্গে, যার ওপর নাম ড্রাকুলা দুর্গ। যদিও জানা যায় ড্রাকুলা খ্যাত ভ্লাদ টেপাস এই দুর্গে বন্দী হবার পর খুব অল্প কয়েকটি রাত অতিবাহিত করেছিল! তাই এই অপর নাম নকল ড্রাকুলা দুর্গ! তবে বেশ চমৎকার এক মধ্যযুগীয় স্থাপত্য, হতেই হবে, এখানে স্বয়ং থাকত রোমানিয়া রাণী মেরি!

এঘর , সেঘর খুঁজে কফিন পেলাম না বটে রসুন ছড়াবার, কিলক গাথার জন্য, তবে সুদৃশ্য সব কামরা, আর জানালা দিয়ে মণ জুড়ানো নিসর্গ দেখা গেল। সবচেয়ে ভাল লাগলো নিচের চত্বরে শ্যাওলা ঢাকা একটা কুঁড়ে।

এই নিয়ে তো লেখা পরে আসবেই, তাই চলুন এখন যাই ড্রাকুলা খ্যাত ভ্লাদ টেপাসের আসল দুর্গে!

(মুকুট)

(টর্চার চেম্বার)

কিন্তু তার জন্য পাড়ি দিতে হবে ট্রানসেলভানিয়ার আদিম অরণ্য যা থেকে থেকে সুইডিশ কবি ট্রান্সটোমারের অরণ্য বিষয়ক কবিতার আমেজ মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জানেন কি সারা ইউরোপের মোট বাদামী ভালুকের ৬০%ই অর্থাৎ ৬০০০ই থাকে রোমানিয়ায় ! এর মূল কারণ অবশ্য স্বৈরশাসক তথাকথিত কম্যুনিস্ট নেতা চসেস্কু, যার আমলে সে ছাড়া আর কেউই ভালুক শিকার করতে পারত না। আশা ছিল একটি হলেও ভালুক দেখব হয়ত অরণ্যের আবছায়ায়।

Transfăgărășan একটি অতিঅসাধারণ রাস্তা, মনে হয় লর্ড অফ দ্য রিঙসের ল্যান্ড অফ মরডর-এ প্রবেশ করেছেন ২০১৪ ছেড়ে। দারুণ সব বাক, এবং উঁচুনিচু, অনেক খান থেকেই প্রায় ৭-৮টা রাস্তার টার্ন দেখা যায় !

কিছুদিন আগেও এটিই রোমানিয়ার সবচেয়ে উঁচু পীচ ঢালা রাস্তা ছিল এখন ২য় উচ্চতম। অসাধারণ রাস্তাতি নিয়ে ১০,০০০ শব্দ লেখা যায় অনায়াসেই,

তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন আপাতত, কিন্তু ভুলেন না রাস্তা শেষে দেখা হবে অপূর্ব হিমবাহ হ্রদ বুলিয়ের সাথে!

পথে প্রথবারের মত দেখা হয়েছিল জিপসি পরিবার, তাদের খচ্চর টানা গাড়ীর সাথে।

( কার্ল রাতের লেখা রেডি ছিল, কিন্তু নেট না থাকার পোষ্ট করতে পারি নাই। আজ আবার বুলগেরিয়ার সরকারি ছুটির দিন। তাই গন্তব্য এখনো জানা নেই।
সবাইকে বুলেগেরিয়ার মিষ্টি ওয়াইন আর কড়া রোদের শুভেচ্ছা )

গতকালের লেখা