পূর্ব ইউরোপ -৯ (বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কসোভো, ম্যাকেদোনিয়া)

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৯/২০১৪ - ১:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_6011

ভোরে ঘুম ভাঙ্গার পর দানিয়ুব নদী চোখে সামনে দেখলে কেমন লাগে? তাই হয়েছিল সকালে ! হোটেলের সামনেই দানিয়ুব নদী! চলে গেছে দূরের কৃষ্ণ সাগরের দিকে। পরিকল্পনা ছিল রাজধানী সোফিয়া হয়ে, জমজমাট মনেস্ট্রি দেখে সোজা ম্যাকেডোনিয়া চলে যাব, কিন্তু আজ ছিল সরকারি ছুটির দিন, সব কিছুই বন্ধ! তাই পরিকল্পনা বদলে ফেলা হল- কসোভো হয়ে ম্যাকেডোনিয়া। কিন্তু পথে আবার পড়ছে সার্বিয়া, মানে কিনা বর্ডার অতিক্রমের ঝামেলা একটা বেশি। তারপরও যাত্রা শুরু হল-

IMG_7831

বুলগেরিয়া খুব অল্প সময় থাকলেও সেখানে বিশাল সূর্যমুখী ক্ষেত, ঘোড়ার গাড়ীর ব্যবহার, ছাড়া ছাড়া গ্রাম, পাহাড়ি রাস্তা বেশ ভালো লাগল। প্লভদিভ শহরে থাকে পুরনো বন্ধু ইভো, তার ওখানে যাবার কথা ছিল, ইমেইলে জানিয়ে দিলাম – এযাত্রা আর না। অন্য কোন সময়। পুরনো প্রেমিকা মারিয়া নেলদেলচেভা এই দেশেরই মেয়ে, পরিচয়ের পর আমেরিকা নিয়ে যেতে চেয়েছিল, সেখানেই নাকি সুখের স্বর্গ। আমি পৃথিবীর মানুষ , স্বর্গ খুব একটা পছন্দ করি না বিঁধায় একই আলো পৃথিবীর পারে, একই নক্ষত্রের নিচে থাকলেও যোগাযোগ হয় না বহু বছর। তবুও এই দেশে এসে মারিয়ার স্মৃতির গন্ধ ফিরে আসল মাঝে মাঝে।

IMG_5974

সার্বিয়া সীমান্তে রমজান ভাইয়ের পুরো নাম মোহাম্মদ আলী রমজান হওয়ায় বর্ডার গার্ড মোহাম্মদ আলী বলে বেশ হাসাহাসি করল! অদ্ভুত দেশ সার্বিয়া, সাবেক যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যাবার পর একাধিক বলকান জাতির উপরে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে ব্যপক গণহত্যা চালিয়েছিল। অথচ এ দেশের সাধারণ মানুষ এমন নয়, বেশ বন্ধু বৎসলই। খুব পাহাড়ি দেশ, হয় অফুরান ওয়াইন। আমাদের যাত্রার শেষের দিকে সার্বিয়া এসে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড যাবার কথা, আজকের যাত্রাটা সেই হিসেবে স্রেফ ট্রানজিট হিসেবে দেশটিকে ব্যবহার করা।
পথে অবশ্য রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইনের জন্ম শহর নিসের কুখ্যাত খুলি স্তম্ভ দেখতে যাওয়া হয়েছিল যেখানে এখনো শত্রুপক্ষের খুলি সাজানো আছে, কিন্তু সোমবার বিধায় বন্ধ ছিল! ফলে রোমান প্রাসাদ মেদিনাও দেখা হ্লনা এবার।

IMG_5984

কসোভো ইউরোপের নবতম দেশ, যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থা কেবল কাটিয়ে উঠছে, তাদের এখন নিজস্ব মুদ্রা নেই, ইউরো দিয়েই চলছে সবকিছু। সীমান্তে ভিসা লাগল না বটে, কিন্তু ৩০ ইউরো দিয়ে গাড়ীর একটা কাগজ করিয়ে নিয়ে হল। বেশ ঘোরাঘুরি করা হল সেখানে গ্রান্ড বাজারের, আছরের আজান ভেসে আসছে চারপাশের মসজিদ থেকে, বাজারের উজ্জল রঙের সব সবজি।

IMG_6066

বিশেষ করে এত ক্যাপসিকাম আমাদের জীবনেও দেখা হয় না, বুঝলাম এই দেশের লোকেরা সেটি বেশ খায়। মাত্র ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটার অর্ধেকের বেশির উপর দিয়ে গাড়ী চালিয়ে টাটা বলে সন্ধ্যায় প্রবেশ করলাম পাহাড়ি অঞ্চলে, যেটি ওয়াইনের জন্য প্রসিদ্ধ ( কসোভো মুসলিম দেশ হলেও ওয়াইন হয় ভালই এখানে), তার আগে দেখ হল অজস্র সব নতুন চকচকে ভবন। বোঝা গেল প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে সদ্য স্বাধীন দেশটাতে।

IMG_6071

রাত আটটায় দেখ মিলল মাদার তেরেসার জন্মভূমি স্কোপিয়ে শহরের, যদিও ম্যাকেডোনিয়ার ( ল্যাটিনে ম্যাসিডোনিয়া) সবচেয়ে বিখ্যাত দুই সন্তান হচ্ছে অ্যারিস্টটল ও তাঁর ছাত্র আলেকজান্ডার তথাকথিত দ্য গ্রেট। শহরের মূল স্কয়ারে আলেকজান্ডার ও তাঁর ঘোড়া বুফোফেলাসের বিশাল ভাস্কর্য শহরে কেন্দ্রে, সেখানে নানা রঙে ক্ষণে ক্ষণে রাঙানো চমৎকার ঝর্ণা।

IMG_8318

IMG_8313

তার নিচেই পরিকল্পনা মত দেখ হল পুরনো ম্যাকেডোনিয়ান বন্ধু আনা এবং ইরিনার সাথে।

IMG_8332

তাঁরাই ব্যবস্থা করে রেখেছিল হোস্টেলের, যেখান সব ব্যাগেজ রেখে ঘোরা হল, খাওয়া-দাওয়া হল ইতিহাসময় শহরটিতে।

IMG_8335

এখন বেশ রাত, কাল সকালে স্কোপিয়ে শহর ঘুরে যাওয়া হবে এই দেশেরই সীমানায় যেখানে আছে ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদ, ৩০ লক্ষ বছরের পুরনো লেক অহরিদে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন, সাথে থাকুন-

গতকালের গল্প


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সচলায়তনের নীড়পাতা আজ আইয়ুবের ভাই দানিয়ুবে ভরপুর। পর পর দু'টো ভ্রমণকাহিনী দানিয়ুবকে ঘিরে। যাহোক, ম্যাকাদোনিয়া আর মেসিদোনিয়ার কাহিনীটা কি?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

উচ্চারণ আলাদা দুই ভাষায়, আর কিছু না, ওয়াইন সমান মিষ্টি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন, সাথে থাকুন-

আছিতো সাথেই, কিন্তু পাশেতো দেখি... হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।