এক ডজন বিল জোনস

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৩/২০১৫ - ৩:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিল জোনস বাংলাদেশের পাখি গবেষকদের কাছে এক অতি চেনা নাম। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আমন্ত্রণে ২০১০ সাল থেকে ৪ বার বাংলাদেশে এসেছেন এই ৬০ পেরোনো এই ইংরেজ পক্ষীবিদ, আমাদের পাখি রিং করা শেখাতে, এবং আসেন নিজের টাকায়। উল্লেখ্য, সারা পৃথিবী জ়ুড়ে সারা জীবনই এই কাজ করেছেন তিনি, পাখির মন বুঝে জাল পাততে তার জুড়ি নেই, আর জুড়ি নেই পরিশ্রমে, সব সময়ই হয় নেট রাইডের জন্য গাছ সাফ করছেন, জাল টানাচ্ছেন, বাঁশ নিয়ে যাচ্ছেন,সবাই যখন বিশ্রামরত তখন বিল চষে বেড়াচ্ছেন ভূ-ভারত কোথায় নতুন জাল পাতা যায় সেই সন্ধানে, আর একেবারে কিছুই না করলে অক্লান্তভাবে গল্প করে যাচ্ছেন তার বিচিত্র রঙ্গিন জীবনের। জাদুকর যেভাবে মুখ থেকে একের পর এক লাল-নীল-হলুদ নানা রং-এর কাগজের শিকল বাহির করতে থাকে একের পর এক, তেমনি বিলের গল্প আমাদের নিয়ে যায় হাকালুকি হাওর থেকে মাদাগাস্কার হয়ে আলাস্কা ছুয়ে অস্ট্রেলিয়া ! কোন গল্পই দুইবার বলেন না বিল জোনস, এবং তার সত্য গল্প শেষও হয় না! অবশেষে তার মুখ থেকে শোনা অসাধারণ সব অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে মাত্র এক ডজন এখানে দেয়া হল পাঠকদের জন্যা-

১) মিশন ল্যাপল্যান্ড-

২৪ বছরের বিল গাড়ি করে চলে গেছে নরওয়ের বিখ্যাত ভুরুঙ্গা ফিয়র্ড -এ পাখি দেখতে, ব্যয়বহুল দেশ বিধায় প্রথম রাতে গাড়িতে থাকারই সিদ্ধান্ত ছিল, আইসবার্গের পাশের জলায় থেকে সেটা করতে যেয়ে ঠান্ডায় কোকাতে কোকাতে মরার দশা হয়েছিল বলা যায়, পরদিন কফিশপে এক আগন্তকের সাথে পরিচিত হবার পর ইংরেজি বলায় আগ্রহী সেই মানুষটি বিলকে আমন্ত্রণ জানায় তার বাসায় অবস্থানের জন্য। বিনিময়ে সে তাদের ভদকা এবং সিগারেট উপহার দেয়। সেই ভদ্রলোকের পানজনিত কারণে তখন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না, তার হয়ে বিল কিছু জিনিস গাড়িতে পরিবহন করে দিয়ে উল্টো বেশ কিছ টাকাও পেয়ে যায়! পুরাই সোনায় সোহাগা!

একদিন সবাই তাদের আংকেলের বাড়ি বেড়াতে যায়, যা ছিল ফিনল্যান্ডের সীমান্তে। বিশাল ফার্ম, মাইলের পর মাইল বন, পাহাড় সবই তাদের অধীনে। বিত্তশালী পরিবারটির জাকজমকময় বসার ঘরে প্রমাণ সাইজের পেল্লায় সব প্রতিকৃতি দেখে বিল জানতে চাই সেগুলো ফ্রান্সের রাজাদের পেইন্টিং কিনা, সেই আংকেল জানান- হ্যাঁ! তারাই রাজা ষোড়শ লুইয়ের বংশধর। ফ্রান্সের বিপ্লবের পর তারা পাততাড়ি গুটিয়ে নরওয়ে চলে আসেন, কিন্তু তাদের টাকা পয়সা সব থেকে যায় ইংল্যান্ডের এক ব্যাঙ্কে, যা এত দিনে ফুলে ফেপে বিলিয়ন পার হয়ে গেছে, কিন্তু কিছু রাজকীয় নীতি মাফিক সেই আংকেলের নাতী, মানে রাজার নির্দিষ্টতম বংশধর ভূমিষ্ঠ হলেই কেবলমাত্র তারা টাকাটি পাবেন।

ফরাসি রাজবংশের সেই আঙ্কেল এরপর বললেন, জানো তো আমাদের এই অঞ্চলে মানুষ খুবই কম, আমার ২০ বছর বয়সী মেয়েটাকে তাই অসলো শহরের দিকে পাঠিয়েছি যেন মনের মত মানুষ খুঁজে বিয়ে করতে পারে, যদি জানতাম তুমি আসবে এইখানে, তাহলে তো তুমিই আমাদের জামাই হতে পারতে!

বিল জোনস তখন অপলকে তাকিয়ে আছে এক অতীব রূপসী তরুণীর ছবির দিকে যে দক্ষিণে গেছে স্বামীর খোঁজে!!

২) ভারতে একটি দিন

গঙ্গাতীরের একটি অঞ্চলে পাখি দেখার জন্য ভারতে ঘুরছিল বিল এবং তার সঙ্গী, রেলষ্টেশনে যাবার পরপরই রিকশাওয়ালা বলল দাড়াও তোমাদের টিকেট আমিই করে দিচ্ছি। টিকেট হাতে দিয়েই সে প্রায় হাওয়া হয়ে গেল, কারণ ট্রেনে উঠে বিল আবিস্কার করল একে থার্ড ক্লাশের টিকেট তাই আবার টয়লেটের পাশে। এর মাঝে টিকেট চেকার এসে শ্বেতাঙ্গ বিদেশীর ইংরেজি শুনে দারুণ আঁতকে হাইমাই করে পালিয়ে গেল!

হার্টপুর নামের এক ছোট ষ্টেশনে যেয়ে নামতেই আরেক চেকার এসে ইংরেজি শুনে মহাআঁতকে পিছিয়ে যেয়ে এক পুলিশ ধরে আনল যে বিলকে জানাল তারা সেই চেকারকে অপমান করেছে কিছু আচরণের মাধ্যমে! স্মার্ট বিল সাথে সাথেই হাত জোড় করে সেই লোককে বলে দিল আমি দুঃখ দিয়ে থাকলে দুখিত, সাথে সাথে উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে স্বাগতম জানালো বিদেশির ক্ষমা চাওয়াকে।

তাদের সাথে টাকা নেই বিধায় প্রথমেই রিকশা করে যাওয়া হল স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াতে, যেখানে অনেকক্ষণ বসিয়ে সরাসরি তাকে নিয়ে যাওয়া হল ম্যানেজারের কক্ষে! কাঁচুমাচু করে বিল জানালো ম্যানেজারের সাথে তার কোন বড় কারবার নেই, তার দরকার কেবল অল্প টাকা এক্সচেঞ্জ করা! ম্যানেজার জানালেন সেটা ঐ শহরে সম্ভব না, বরং বাস ধরে তারা পাশের শহরে যেতে পারে যেখানে অনেক হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি আছে।

সেই শহরের জন্য নতুন বাসে চেপে যাওয়া শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরুতে শুরু হওয়াই আবার নতুন যানে করে যাত্রা শুরু করে রাত ১১টার সময়ে সেই শহরে পৌঁছে, একেবারের ভারতীয় চিৎকাত এক হোটেলের ফাঙ্গাস পড়া বিছানায় যখন তারা আশ্রয় পেল তখনই কেবল জানল যে তারা ভুল দিকের বাসে চেপেছিল, যে শহরে যাবার কথা তা উল্টো দিকে ৯০ মাইল দূরে!

৩) ওনাসিসের কলা –

বিলের বাচ্চাবেলা কেটেছে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপদেশ সাইপ্রাসে, এখন যেমন অনর্গল কথা বলে, তখন আকাশ ফাটিয়ে কাঁদত। একবার বাজারে কলা কেনার জন্য মায়ের কাছে আব্দার করল বাচ্চা বিল, আব্দার পূর্ণ না হওয়ায় আবারও কাঁদতে কাঁদতে এলাকায় ত্রাস তৈরি করল, তখন স্যুট পরিহিত হ্যাটওয়ালা এক লোক পুরো এক কাঁদি কলা এনে তার মাকে দিয়ে বলল, থামাও এই ক্ষুদে চিল্লানোসরাসকে, দরকার হলে বাজারের সব কলা এনে দিচ্ছি।

সেই লোকটি ছিলেন ওনাসিস, বিলিওনিয়ার গ্রীক টাইকুন জাহাজ ব্যবসায়ী। যিনি আরও বিখ্যাত হয়েছিলেন জ্যাকুলিন কেনেডিকে বিয়ে করে।

৪) অতি বিরল পেরুলা ফুটকি--

দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের ডার্বি দ্বীপের কেপ ক্লিয়ার বার্ড অবজারভেটরির এক বিশেষ ঘেষো জমিতে চিফচ্যাফ পাখি খুঁজতে যেয়ে গভীর ক্যানিয়নে ঘাসের সমুদ্রে বিরল রোজ-ব্রেস্টেড গ্রোস-বিক দেখে আনন্দের চমক কাটিয়ে ওঠার আগেই দেখেন সেই পাখিটির পাশে উড়ে এসে জুড়ে বসল পেরুলা ফুটকি!

সেই খবর জানাজানি হবার সাথে সাথে দ্বীপের পাখি পর্যবেক্ষণ সংস্থার সভাপতি তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করল বিলের কি নুন্যতম ধারনা আছে যে সে কী আবিস্কার করেছে! উত্তর আসল- এটি সমগ্র যুক্তরাজ্যের মাত্র ৫ম রেকর্ড! সাথে সাথে সভাপতি বললেন, না , এটা আমাদের দ্বীপের প্রথম পেরুলা ফুটকি!

পরের বছর সেখানে শত শত পাখিপ্রেমী ভিড় জমিয়েছিল অতিবিরল পাখিটি দেখার জন্য, এবং বিল তাদের মাঝে পেয়েছিল রকস্টারের খ্যাতির মর্যাদা!

৫) মালাওয়ীর পেন্সিল-

দক্ষিণ আফ্রিকার অজানা দেশ মালাওয়িতে পাখি দেখার এক পর্যায়ে আক্ষরিক অর্থে গাছতলার একটি স্কুলের মুখোমুখি হয় বিল এবং তার স্থানীয় গাইড। সেখানে গাছতলায় দাড়িয়ে একজন শিক্ষক, সাথে নড়বড়ে কাঠামোর এক ব্ল্যাকবোর্ড। কোন টুল, চেয়ার, বেঞ্চি, মাদুর নেই। ঘাসের উপরে বসে ছাত্ররা। বিল সাথে করে বয়ে আনা পেন্সিলের বাক্স থেকে সকলকে একটি করে পেন্সিল দিল ( এই কাজটি সে সবখানেই করে, বাংলাদেশেও)। সব ছাত্র দাড়িয়ে তাদের অনেক ধন্যবাদ দিল, একটি আস্ত পেন্সিল যে কোন হীরা-জহরতের মতই দামি তাদের কাছে।

ফেরার পথে গাইড বলল, বিল আমরা মালাওয়ীতে প্রতিদিনের ঘটনা নিয়ে একটা গল্প বানাই ভবিষ্যতের, এটাই আমাদের অন্যতম বিনোদন। আজ তোমার গল্পটা হবে এমন- এই বাচ্চাদের মাঝে অনেকেই লেখা শিখবে কারণ তুমি তাদের পেন্সিল দিয়েছ, তাদের মাঝে কেউ কেউ একদিন স্কুল পাশ করে বিশ্ব-বিদ্যালয়ে যাবে কারণ তুমি আজ তাকে পেন্সিল দিয়েছ, এমনও হতে পারে তাদের কেউ মিনিস্ট্রিতে যোগ দিবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আজকের দেওয়া পেন্সিলের বদৌলতে, হতেও পারে এই সে একদিন মালাওয়ীর প্রেসিডেন্টও হয়ে গেল, কারণ একদিন বিল জোন্স নামের এক পাখিপাগল গাছতলার স্কুলে এসে তাকে একটি পুরো পেন্সিল দিয়েছিল ! কেমন লাগল তোমার গল্প?

৬) কুমিরের মুখোমুখি

কেনিয়ার ভুরাঙ্গু হ্রদে এক ঝিল্লি পাখির পিছনে তাড়া করতে যেয়ে এক ঝোপের মধ্যে লাফ দিয়েই বিল দেখে তার দিকে বোকাবোকা হয়ে তাকিয়ে আছে একটি ভয়াল কুমির! পরমুহূর্তেই চমক কাটা মাত্র বিল এবং কুমির দুইজনই দুই দিকে ভো দৌড়!

৭) জলহস্তীর পাদ-

কেনিয়াতেই এক হ্রদের ধারে সন্ধ্যা বেলা তাবু গেড়েছে বিল ও তার বন্ধু। সবাই হ্রদ থেকে বেশ দূরে একটা পাথুরে জায়গায় ক্যাম্প সেট করলেও, তারা নিরিবিলি পরিবেশের আশায় জলের কিনারেই তাবু ফেলল। মাঝরাতে তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল অদ্ভুত দুই শব্দে, যাদের সবসময়ই পুনরাবৃত্তি ঘটছিল- ফোঁস ফোঁস ফোঁস ফোঁস, ফাররররর ফারররর ফারররর !

কী ব্যাপার? বিলের বন্ধু বলল বাতি জ্বালিও না, কোন প্রাণী তাতে চমকে আক্রমণ করতে পারে, এমনি তাবুর জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে দেখ কী অবস্থা! তাতে দেখা গেল এক জলহস্তীর পাল ঘাস খাচ্ছে তাবুর চারপাশে ফোঁস ফোঁস ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আর খানিক পরপরই বদবায়ূ ছাড়ছে ফাররররর ফারররর ফারররর, ফাররররর ফারররর ফারররর করে!

এতক্ষণে বোঝা গেল কেন কেউ এখানে তাবু পাতে নি, কারণ তা হ্রদের জলহস্তিদের বিচরণক্ষেত্রে, আর কোন রকম আলো না থাকায় জলহস্তীরা তাদের তাবুকে কোন বড় পাথর ভেবেছিল আঁধারে, তাই সেটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় নি! (উল্লেখ্য আফ্রিকায় সারা বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় সে প্রাণীর আক্রমণে সেটা জলহস্তী!)

৮) সাপ ভর্তি জাল-

মাঞ্চুরিয়ান নল-ফুটকির সন্ধানে থাইল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত জলাভূমিতে জাল পেতেছে বিল, খানিক পরেই জাল এবং জালের খাম্বা ভর্তি হয়ে গেলে হরেক কিসিমের সাপে!

৯) কাকাতুয়ার ঠোকর-

অস্ট্রেলিয়ায় হাত বাড়ালেই যে কয় প্রজাতির বুনো পাখি এসে বসে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজেলা, কাকাতুয়া। প্রথমবারের মুগ্ধতায় বিলও দুই হাতে আধা ডজন রোসেলা বসিয়ে বেশ বাদাম খাওয়ালো কিছুক্ষণ, তার পরপরই এক লোভী কাকাতুয়া রসালো খাবার মনে করে দিল ঝুলতে থাকা কানের লতিতে এক ঠোকর!

১০) ক্রে ফিশের চিমটি-

অস্ট্রেলিয়ার ল্যামিংটনে এক ন্যাশনাল পার্কের সরু খালে হাত ধুতে যেয়ে কদিন আগেই কেনা জীবনের সবচেয়ে দামি ব্রান্ডের ঘড়িটা গেল জলে পড়ে!যাচ্চলে বলে ঘড়ি তুলতে যেয়েই হাতে একগাদা ঠোকর খেয়ে চমকে তীরে বসে বিল আবিস্কার করল সেই খাল ভর্তি ক্রে ফিশ (চিংড়ি জাতীয় প্রাণী, ধারালো বিশাল দাঁড়ার অধিকারী)। তারা খাবারের সম্ভাবনা দেখলেই আমি, আমি, আমি করতে করতে দাড়া দিয়ে ধরার চেষ্টা করে, এবং কায়দামত চিমটি পরলেই মানুষের আঙ্গুল আলাদা হয়ে যাওয়া মুহূর্তের ব্যাপার!

দামি ঘড়ির আশা ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পে ফিরল বিল, পরের এক সপ্তাহে যেই ঐ খালের পাশ দিয়ে এসেছে বিল কষ্ট করে কাষ্ঠ হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করত, দাঁড়ায় ঘড়ি পরে রোদ তাপাচ্ছে এমন কোন সময়জ্ঞান সম্পন্ন বজ্জাত ক্রে ফিষকে সে দেখেছে কিনা।

১১) রাতের ক্যানু-

নাইজেরিয়ার এক বিস্তীর্ণ জলায় ভারটিকুলেটেড মেছো প্যাঁচার খোঁজে চলছে সরু ক্যানু, একটি মাত্র গাছ কুঁদে তৈরি, যেখানে ফুটো দিয়ে ক্রমাগত জল উঠতেই আছে, সেই জল সেচতে সেচতে খিস্তি করতেই আছে বিল ন্ট নড়নচড়ন অবস্থায়, কারণ পান থেকে চুন খসলেই কুমির ভরা জলায় পড়বে সাথে সাথেই!এমন অবস্থা হবে তা আগে ব্লা ছিল না, মেছো প্যাঁচা দেখাবার লোভ দেখিয়ে ডেকে এনেছে তাকে গাইড, আর বসতে দিয়েছে একটুকে খাড়া কাঠের টুকরোর উপরে যা ছিল ভীষণ অস্বস্তিকর!

যখন প্যাঁচা দেখে ভালই ভালই ফিরেছে তারা, বিলের প্যান্ত ভিজে জবজবে, আর তার বসার সবেধণ নীলমণি আসন গেছে কোথায় যেন হারিয়ে।

১২) গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে-

থাইল্যান্ডে পাখি দেখতে দেখতে কখন যেন থাইল্যান্ড, মায়ানমার, লাওসের সীমান্তে অবস্থিত মাদক উৎপাদনের জন্য কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে পৌঁছে গেছিল বিল ও তার সঙ্গী! সেখানে হেক্টরের পর হেক্টর পপি ফুল দেখে সম্বিত ফেরে তাদের, সেই সময়ই মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ক্ষুদে বিমান। আসলে মাদকের কারবারিদের ভয় দেখাতে এই ধরনের বিমান থেকেই বোমাবর্ষণ করে নষ্ট করে দেওয়া হয় পপির ক্ষেত আর মাদকের কারখানা!

ব্যস, বিমান দেখেই পিছনে হাটা শুরু করলেন তারা, আরেকবার ফিরলেন প্রাণ মুঠোয় নিয়ে বিপদের গ্রাস থেকে।

এইই ছিল আপাতত বিল জোন্সের কয়েকটি অভিজ্ঞতা, এমন আরও অনেক টুকে রেখেছি ডায়েরিতে, সেখান থেকে লেখা যাবে, আর বিল সামনের শীতে আবার আসবেন বাংলাদেশে, এর মাঝেই ঘুরবেন ৪ মহাদেশ, শুনব আরও অনেক নতুন নতুন কাহিনি। তবে এখানে বিলের সত্যিকারের বিপদজনক অভিজ্ঞতার কথা উহ্য ছিল, পোল্যান্ডে পাখি দেখার রোমাঞ্চে অভিভূত হয়ে থাকার সময় রেল লাইনের উপরে ছিল তারা, ধেয়ে আসা ট্রেনের দিকে খেয়ালই ছিল না। ট্রেন চলে যায় তাদের উপর দিয়ে, বিলের বন্ধু সেখানেই মারা যান, হাসপাতালে অনেক কাটাছেড়ার পর প্রাণ টিকে যায় বিলের কিন্তু সারাজীবনের জন্য হারান শ্রবণশক্তি আর একটি পায়ের বেশ কিছু অংশ, ফলে ধাতব পা নিয়েই এখন চষে বেড়ান সারা পৃথিবী।! আর এই মর্মান্তিক ঘটনা খবরের কাগজে এসেছিল এইভাবে , - ইংরেজ পাখিবিদ চেষ্টা করেছে রাশিয়ান ট্রেন স্যাবোটাজের!!!


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

দারুন! চলুক
---------------------

অঃটঃ বইমেলা থেকে আপনার বইদুটা কিনলাম। একটা জিনিষ করলে ভাল হত মনে হয় - ফ্লিকারে বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় অনুযায়ী এ্যালবাম সাজিয়ে ঐ অধ্যায়-সংশ্লিষ্ট সকল ছবি পূর্ণ আকার ও রেজোলিউশনে আপলোড করে দিয়ে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলির নীচে বা নির্ঘন্টে এলবামগুলির লিঙ্ক দিয়ে দিতে পারতেন। আপনার লেখাগুলির সাথে আপনার ছবিগুলির (পূর্ণ রেজোলিউশনে) সম্পর্ক একেবারে অবিচ্ছেদ্য। সচলে ছবিগুলি যেভাবে দেখেছি সেভাবে বইয়ে না থাকায় হতাশ হয়েছি, যদিও এটা যে সম্ভব না তাও জানতাম। তাই আমার মনে হয় বইয়ের পাঠক যারা নেটে ছবিগুলি ভালভাবে দেখতে আগ্রহী হবেন - এবং অনেকেই হবেন মনে হয়, তাদের জন্য বইয়ের মধ্যেই নেটসূত্র / লিঙ্ক দিয়ে দিলে খুব ভাল হত। পরবর্তী সংস্করণে ভেবে দেখবেন আশা করি।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

দেখা যাক, ই- বুক নিয়ে কথা চলছে
অনেক ধন্যবাদ

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ভালো লাগলো। শেষটায় বিল জোন্সের শরীরের কথা শুনে খারাপ লাগলো। মানুষ তার সুন্দরের নেশার প্রতি কতটা ডেডিকেটেড হতে পারে তিনিই তার প্রমাণ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

তারেক অণু এর ছবি

এমন মানুষ আমাদের বার্ড ক্লাবের কেউ কখনই দেখে নি !

সত্যপীর এর ছবি

মালাওয়ীর পেন্সিলের গল্পটা বড় ভালো লাগল।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

মালাওয়ীর সীমান্ত থেকে ঘুরে আসছিলাম, যাওয়া হইল না এখনও

সত্যপীর এর ছবি

মালাওয়ীর সীমান্ত নিয়াই পুস্টান।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দারুণ! চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি চলুক

দেবদ্যুতি

তারেক অণু এর ছবি
Somnath Bachhar এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। ভালো লাগছিলো বিলের গল্প।কিন্তু বিলের নিজের জীবনের এতবড় একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

তারেক অণু এর ছবি

তার কোন আফসোস নেই যদিও

এক লহমা এর ছবি

চলুক
দুর্ঘটনাটা ভয়ানক। "সারাজীবনের জন্য হারান শ্রবণশক্তি" - কি দুঃসহ ক্ষতি!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আহারে! বিলের বন্ধু বেচারা।
আর বিলেরও নিশ্চয়ই মন খারাপ হয় পাখির ডাক শুনতে না পাওয়ায়।

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

অতিথি লেখক এর ছবি

সবগুলোই ভালো লেগেছে। বিশেষত ৫ আর ৬ নম্বরটা বেশি ভালো লাগলো। বিল জোন্সের প্রতি মুগ্ধতা। শেষটাতে একটু থমকে গেলাম। আশা করি ডাইরিটা একলার থাকবে না, আমরাও জেনে যাব বাকি গল্পগুলো খুব তাড়াতাড়ি।

স্বয়ম

তারেক অণু এর ছবি

চেষ্টা করব-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।