মন্দাদিনের আঁকিবুকি - ১ম পর্ব

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: শুক্র, ০২/০৭/২০১০ - ১০:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফাউ প্যাচাল:- এই নিয়ে দুখানা মন্দা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, তাই নিয়েই কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ২০০৯ এর মে-জুন মাসে লিখে রেখেছিলাম৷, যখন ভারতে মন্দা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে৷ নানাকারণে কোথায়ও দেওয়া হয় নি৷ তারপর fহার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করায় লেখাটা হারিয়ে যায়৷ সেই হার্ডডিস্ক একটু একটু করে রিকভার হচ্ছে এখন, তাই তুলে দিলাম৷ লেখাটা একটু বাসীমত৷ বাসীগন্ধ লাগলে পাঠকরা জানান দেবেন, সরিয়ে নেব৷
****************************************************8


--
আমার একটা লালমাটির রাস্তা আছে ৷ স্বপ্নে৷ সেই রাস্তাটা সামনে বেশ সোজা৷ যত দূরে যেতে থাকে, ততই অ্যাঁকাব্যাঁকা হয়ে ঝাপসা হয়ে যায়৷ অনেক দূরে , যেখানে আকাশ নীলচে লাল আর মাটিটা সবজে লাল, সেখানে গিয়ে এই রাস্তাটা এঁকেবেঁকে হঠাত্ আকাশে উঠে যায়৷ ঘুম না এলে চোখ বুঁজে এই রাস্তাটাকে আমি দেখি ৷ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি৷ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, কিম্বা দেখি না, ঠিক মনে থাকে না৷

আমার স্বপ্নে আগে অনেক পুকুরও ছিল৷ ছোটবেলায় একসময় আমি শহর থেকে মফস্বলের আত্মীয়বাড়ীতে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পুকুর দেখে বেড়াতাম৷ টলটলে পুকুর, পানা পুকুর, সাঁতার কাটার , চান করার, কাপড় কাচার পুকুর কিম্বা গম্ভীরমত দেখতে, খাবার জলের পুকুর৷ সেগুলো আজকাল আর নেই৷ আমি যখন বেশ বড় হয়ে চাকরী শুরু করি, তখন চারদিকে হঠাত্ "সমৃদ্ধি'র পালে হাওয়া লাগে৷ চারিদিকে সবকিছু ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে৷ ছোট বাড়ীগুলো বড় হয়ে যায়, বড়গুলো ভেঙেচুরে 'হাউসিং কমপ্লেক্'স হয়ে যায়৷ রাস্তাগুলো চওড়া হয়৷ আর এরা সবাই মিলে পুকুরগুলো চুষে খেয়ে ফেলে৷ আমার স্বপ্ন থেকে তাই পুকুরগুলো উবে গেছে৷ তার বদলে আমি আজকাল মাঝেমাঝে খালিবাড়ীর স্বপ্ন দেখি৷ অর্ধেক তৈরী হওয়া কংক্রীটের খাঁচার স্বপ্ন৷

আমাদের এই শহরটাতেও একসময় অনেক বাড়ী তৈরী হতে শুরু করেছিল৷ তারপর তারা সবাই আর ঠিকঠাক তৈরী হয়ে উঠতে পারল না৷ কারণ হিসাবে শোনা গেল, পৃথিবীজোড়া নাকি সাংঘাতিক মন্দা এসেছে৷ তাই লোকে আর বাড়ী কিনছে না৷ শুধু কিনছে না তাই নয়, লোকে নাকি বাড়ীর জন্য নেওয়া ধার শোধও করতে পারছে না৷ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে৷

অথচ এই একবছর আগেও এসব কিচ্ছু ছিল না৷ চারিদিকে বেশ উথলে পড়া ভাব ছিল৷


--
গতবছর দোলের সময় হঠাত্ শোনা গেল শহরের একটা বড় কোম্পানি তাদের চেন্নাই শাখা থেকে ২৫০ জনকে ছাঁটাই করেছে৷ খবরের কাগজের সাংবাদিক যখন কোম্পানির প্রতিনিধিকে কারণ জিআসা করলেন, তিনি জানালেন এটি গুজব এবং গুজবের হ্যাঁ-না সম্পর্কে মন্তব্য করতে তিনি অপারগ৷ ফলে গুজব আরও ছড়াতে লাগল হু হু করে৷ জানা গেল আমেরিকায় জেনারেল মোটরসের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় এদিকে কাজ খুব কমে গেছে, তাই ছাঁটাই৷ এদিকে সেই কোম্পানির কর্মীদের কাছে গুজবে কান বা চোখ না দেবার আবেদন জানিয়ে মেল এলো৷ কর্মীদের দক্ষতা সম্পর্কে নানাবিধ বাণীও ছিল তাতে৷

সেই কর্মীদের তারপর কি হল, তা প্রায় কেউই জানে না দেখা গেল৷ একমাসের মধ্যে সবাই ভুলেও গেল ঘটনাটা৷
শুধু মেলবক্সে চাকরীর খবর আসা কমে যেতে লাগল৷
শুধু কাগজে খবর আসতে লাগল বাড়ীর দাম কমেছে৷
শুধু কাগজে আরও বেশী বেশী করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নামে ঋণগ্রহীতাদের বাড়ীতে গুণ্ডা পাঠানোর অভিযোগ আসতে লাগল৷


--
শালিনী নতুন চাকরীটা পেয়েছে গতবছর মে মাসে৷ একটা এজেন্সিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরী৷ ওদের এজেন্সি গোটাকয় শপিংমলে সিকিউরিটি গার্ডের যোগান দেয়৷ শালিনীর কাজ একটি নির্দিষ্ট শপিংমলের গেটে দাঁড়িয়ে আগত মহিলা ক্রেতাদের ব্যাগ তল্লাসী করা৷ হ্যাঁ শুরুতে শুধুই ব্যাগ তল্লাসী করতে হত৷ দুই সাইজ বড় একটা নীলচে ছাই রঙের শার্ট আর নেভী ব্লু ট্রাউজার পরে শালিনী যেদিন প্রথম কাজে যোগ দিতে আসে, সেদিন সে খুবই খুশী, উত্তেজিত ও কিঞ্চিত্ ভীত ছিল৷ ঐ চাকরীর প্রথমদিন অধিকাংশ লোকেরই যা হয় আর কি! ওকে তালিম দেওয়ার সময় এজেন্সি থেকে পইপই করে বলে দিয়েছিল শার্টের সাইজ যেন অবশ্যই ওর মাপের চেয়ে দুই সাইজ বড় হয়৷ কারণ ওকে গেটে দাঁড়াতে হবে৷ আর ও তো মেয়ে; কাজেই ওঁরা কোনোরকম ঝামেলা বা বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করার মত কিছু চান না৷

শালিনীর দিনে ১২ ঘন্টা কাটে গেটে দাঁড়িয়ে মহিলাদের ব্যাগ খুলে উঁকি দিয়ে৷ প্রথমে হাতের মেটাল ডিটেক্টার দিয়ে আলতো করে ব্যাগের ওপরে বুলিয়ে নিয়ে প্রার্থিত 'ট্যাঁ' শুনলেই ব্যাগের চেইন বা ক্লাচ খুলে ভেতরে উঁকি দেওয়া৷ একেকজনের ব্যাগ বেশ ছোট্ট এবং ছিমছাম৷ ভেতরে বেশী খাপখোপ নেই৷ আবার একেকজনের ব্যাগে এত চেইন আর এত বিভিন্ন সাইজের কুঠুরী; যে প্রত্যেকটায় উঁকি দিতে দিতে গেটের সামনে মহিলাদের লাইন পড়ে যেত; সকলেই ওর অকর্মণ্যতায় ও ধীরগতিতে বিরক্ত৷ অনেকেই সে নিয়ে যথেষ্ট সরবও৷ একে তো অনভ্যস্ত হাত, অপরিচিত লোকের ব্যাগে উঁকি দেওয়ার সংকোচ, তার সাথে ছুটে আসা মন্তব্যের ধারে ছিন্নভিন্ন হতে হতে শালিনী স্বপ্ন দেখত চীফ গার্ড হয়ে যাওয়ার৷ তখন আর ওকে গেটে দাঁড়াতে হবে না, বরং ও-ই অন্য গার্ডদের ওপরে খবরদারী করবে৷


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

কই, দিব্যি লাগল। ১ আর ৩ বেশি ভাল লাগল।

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

তাসনীম এর ছবি

ভালো লেগেছে, বাকি পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়ছি...

দময়ন্তী এর ছবি

হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুট করে শেষ হয়ে গেল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।