যাযাবর দিনের গল্প (পাঁচ) – গুনেশলীতে তিন মাস

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বুধ, ০১/০৪/২০০৯ - ৩:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা আশা নিরাশার সমুদ্রে উতাল পাতাল হাবুডুবু খেতে লাগলাম। হয়তো ওরা পরের ট্রেনে যেতে দেবে আমাদের। হয়তো আমাদের পাসপোর্ট ভালো করে পরীক্ষা করার পর ভুল ভাঙ্গবে। যদি কোন কারণে নিজেদের দুতাবাসে যদি খোঁজ করতে চায়, তাহলেও সময় দরকার ওদের! কিন্তু একটু পরই রাত নামবে, তখন থাকবো কোথায়? এসব নানা ধরণের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। ঘন্টা দু’য়েক পর উল্টোদিক থেকে ইস্তাম্বুলগামী একটি ট্রেন এসে থামলো। টিকিট আর পাসপোর্ট ফেরৎ দিয়ে আমাদেরকে সে ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হলো। কোন প্রতিবাদ করে যে লাভ নেই সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। আমাদের সাধ্যের চেয়েও প্রকান্ড এক হতাশার বোঝা মাথায় করে আমরা আবার ফিরে এলাম ইস্তাম্বুলে।

ইস্তাম্বুলে তখন রাত। ট্রেন ষ্টেশনে, পথে, বসফরাসের তীরে তখনো হাজারো মানুষের মেলা। আমরা চার হতভাগা যুবক বুকের মাঝে মৃত্যুর শীতলতা নিয়ে পথ করে নিলাম। কারো মুখে কোন কথা নেই, কেউ কারো মুখের দিকে তাকাতে পরিনা আর। আমাদের পায়ের পাতায় যেনো কেউ পাথর বেঁধে দিয়েছে। আগের হোটেলে, একই কামরায় আস্তানা মিললো রাতের। পথের রসদ হিসেবে রুটি ছিল সাথে। সেটি কোনভাবে গলাধরণ: করে বিছানায় শুয়েও সারারাত জেগে রইলাম। কেউ কেউ ক্লান্তিতে ক্ষণিকের জন্যে ঘুমিয়ে পড়লেও কোন এক দু:স্বপ্নের ঘোরে জেগে উঠলো বারবার। অন্যজন তা টের পেলেও প্রকাশ না করে পাথরের মতো বিছানা আকড়ে পড়ে রইল।

সারারাত অনিদ্রার পরও সকালে কোন এক অলৌকিক কারণে নিজেদেরকে নিয়ে ভাবার ক্ষমতা ফিরে পেলাম আবার। আমাদের হাতে যা টাকা রয়েছে, তাতে বড়জোর এক সপ্তাহ হোটেল ভাড়া দিতে পারবো। তারপর? এখনই কাজ খুঁজতে হবে আমাদের। যে কোন কাজ! তার আগে হোটেল থেকে বেরিয়ে গিয়ে শহরের কেন্দ্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে নেয়ার চেষ্টা করা দরকার। বেরুতে মন চাইছিল না কারো, কিন্তু তারপরও বেরিয়ে পড়লাম সবাই মিলে। শহরের কেন্দ্রে গিয়ে একটি কফি শপের সামনে কিছু বাংলাদেশীর দেখা পেয়ে গেলাম। আগে না জানলেও তেহরানেই শুনেছিলাম ইস্তাম্বুলের কিছু বাংলাদেশীর কথা। ওদের কাছে গিয়ে পরিচয় দিলাম নিজেদের। কিছু কথার পর নিজেদের সমস্যার কথাও বললাম। সামনেই একটি চায়ের দোকানে আমাদেরকে নিয়ে বসলো ওরা। এই প্রথম এখানে এসে চায়ের স্বাদ পেলাম।

সেসময় ইস্তাম্বুলে একটি বাংলাদেশীর দল ছিল। তাদের ব্যাবসা ছিল জার্মানী থেকে পুরোনো মার্সিডিজ কিনে এনে ইরানে বিক্রি করা। বেশ জমজমাট ব্যাবসা। জার্মানরা গাড়ী পুরোনো হলেই জলের দামে বিক্রি করে দিত। ইরানের মেকানিকরা সেটাকে ঠিকঠাক করে বিক্রি করতো চড়াদামে। তার মাঝে অর্থার্জন হতো এই ব্যবসায়ী দলের। আরেকটা সুবিধাও ছিল, বাংলাদেশীদের তখন কোন ভিসা লাগতো না জার্মানী যেতে। পকেটে মোটামোটি বড় একটি টাকার অংক থাকতে হতো। তাই গাড়ী কিনতেও সমস্যা হতো না। এসবের মাঝে সমস্যা একটিই। পুরো ব্যবসাটাই অবৈধ, ইরান সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে। ইরানে গাড়ী নিয়ে ঢোকার সময় পাসপোর্টে এন্ট্রি সিলের গাড়ীর জন্যেও একটি সিল পড়তো। গাড়ী বিক্রি করে ইরান থেকে বেরনোর আগে সে সিল কোনভাবে মুছে বেরুতে হতো। সেটা মুছতে গিয়ে পাসপোর্টের যে দাগ পড়তো, গাড়ী নিয়ে বারবার আসাযাওয়ার পর সেটি মোছার আর কোন সুযোগ থাকতো না। তখন নতুন পাসপোর্টধারী কারো দরকার হয়ে পড়তো। তার নামেই ঢুকবে গাড়িটি ইরানে। আমাদেরকেও সে প্রস্তাব দেয়া হলো। আমাদেরকে জার্মানী নিয়ে যাবে ওরা, তারপর একেকজনের নামে গাড়ী কিনে ওদের সাথে ইরান। ইরান থেকেই এই ব্যাবসার কথা জানা ছিল আমাদের। ইরানের বাঙ্গালীরা আমাদেরকে সাবধানও করেছেন। তাছাড়া আমাদের উদ্দেশ্য কোথাও পড়াশোনা করা। পাসপোর্টে এধরণের সীল পড়ার পর কোন দেশ আমাদের সেখানে পড়তে দেয়া তো দুরের কথা, ঢুকতেও দেবেনা বলে দারুন একটা ভয় ছিল ভেতরে। তাই ওদের কথায় রাজী হলাম না। ওরা আমাদের উপর বেশ ক্ষুন্নই হলো। তারপরও ওদেরকে আমাদের হোটেলের ঠিকানা দিয়ে কাজ খোঁজায় সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়ে বিদায় নিলাম।

সেদিন কাজের কোন সুরাহা করতে পারলাম না। পরদিন ওদের একজন এলেন একই প্রস্তাব নিয়ে। সেটি আবার প্রত্যাখ্যান করার পর একজনের জন্যে কাজের সন্ধান দিলেন ওনি। কোন এক কোকাকোলা ফ্যক্টরীতে তিন তলায় চিনির বস্তা টেনে তুলতে হবে। আমাদের চারজনই হালকাপাতলা শরীরের। এরই মাঝে শাজাহানই সামান্য একটু হলেও শক্তিশালী। সে ই গেলো কাজে। দু’ঘন্টা পরই ফিরে এলো আবার। তিনটি বস্তা তোলার পর আর শরীরে কুলোয় নি।

সেদিন বিকেলে বাংলাদেশীদের এই দলের সাথে দেখা হলো আবার। আরো কিছু নতুন মুখও দেখলাম। আমাদের চার অদ্ভুত বাংলাদেশীর খবর অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে এতোক্ষণে। “আমরা একেবারেই অন্যরকম, প্রচুর টাকার লোভ দেখানোর পরও আমরা তাতে কান দিইনি, আমাদের একটি মাত্রই উদ্দেশ্য, জাহাজে কিছু টাকা আয় করে পরে পড়াশোনা করা”। আমাদের প্রতি এদের যে ক্ষোভ, তা যত দ্রুততায় এক ধরণের মমতা ও সমীহতে পরিণত হলো, তাতে অবাক হলাম। তারা আমাদেরকে কাজ পাইয়ে দেবার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিলেন বারবার।

পরদিন দু’জন এলেন আমাদের হোটেলে। ইন্তাম্বুল থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দুরে গুনেশলী নামে এক গ্রামে একটি ফারকোটের ফ্যাক্টরীতে দু’জনের কাজের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। কালই যোগ দিতে হবে। ওনি নিজে এসে দু’জনকে নিয়ে যাবেন, জানিয়েই বিদায় নিলেন তিনি। এবার আমাদের সিদ্ধান্তের পালা। নানা ভাবে, নানা সম্ভাবনা খুঁটিয়ে খাটিয়ে ভাবলাম সবাই মিলে। ঠিক করলাম, পান্নাকে আমাদের সমস্ত টাকার বেশীরভাগ দিয়ে পাঠাবো বাসের পথে আবার গ্রিসে। শুনেছি, সে পথে গেলে নাকি ফিরিয়ে দেয়া হয়না। শাজাহান যাবে বাকী টাকা নিয়ে এক গাড়ী ব্যাবসায়ীর সাথে সহযাত্রী হিসেবে আবার ইরানে কাজের সন্ধানে, সাদরুল ভাই আর আমি যাবো গুনেশলীর সেই ফারকোট ফ্যাক্টরীটে কামলার কাজে। পর্যাপ্ত টাকাপয়সা হাতে আসার পর আমাদের সবারই পরবর্তী গন্তব্য হবে গ্রীস। আর্থিক অবস্থা যার ভালো হবে আগে, সাহায্য করবে অন্যদেরকে। যা ঘটার, ঘটে গেল চোখের পলকে পরদিনই। শাজাহান আর পান্নাকে মনখারাপ করে ভিন্ন ভিন্ন পথে বিদায় দিয়ে আমরা সেই বাংলাদেশী শুভানুধ্যায়ীর সাথে গুনেশলীর বাসে চেপে বসলাম।

গুনেশলীর এক চীনেমুখো তুর্কী ভদ্রলোক সেই ফ্যক্টরীর মালিক। সামান্য উর্দু বলতে পারেন। আমাদের সাথে আলাপের মাধ্যম তাই উর্দুই হয়ে রইলো। ফ্যাক্টরীর লাগোয়া একটি বাড়ীতে পরিবার পরিজন সহ বাস করেন। ফ্যাক্টরীর উপরের বেশ বড় একটি ঘরে আমাদের থাকার জায়গা হলো। শুধুমাত্র শোবার দু’টো ম্যট্রেস ছাড়া কোন ফার্নিচার নেই ঘরে। আমাদের কাছে এমনি এক ঘরে বাস করা বিশাল প্রাপ্তি। প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করলাম। ব্রাশে ঘষে ঘষে ভেড়ার পশম পরিস্কার করা, যাতে চামড়া আর পশম নরম আর মোলায়েম হয়। মাঝে মাঝে খালি হাতে ঘসতেও হয়। প্রথম দিনই আঙ্গুল ফেটে রক্তাক্ত হলো। সাদরুল ভাই এর কাজ এগোতেই চাইল না। আঙ্গুলে চামড়া জড়িয়ে কাজ চালিয়ে গেলাম। মালিককে দেখলাম, গুনে গুনে দেখছেন, সাদরুল ভাই ক’টা চামড়া সেলাইএর জন্যে প্রস্তুত করতে পারলেন। দেখে ভয়ে নিজের কাজ আরো দ্রুততায় চালিয়ে সে চামড়া তার কোটায় পাচার করে দিলাম। রাত আটটায় কাজ শেষ করে শরীর যখন একেবারেই অবসন্ন, ঘরে এসে সামান্য রুটি মুখে দিয়েই এলিয়ে পড়লাম বিছানায়। কিন্তু বুকের ভেতরে নিজস্ব ক্ষমতায় আয় করে যে তৃপ্তি, তা গত কয়েকদিনের হতাশা ভুলিয়ে দিল অনেকটাই।

মাস তিনেক কাটানোর কথা গুনেশলীতে। ততদিনে এথেন্সের ভাড়া জোগাড় করাই মূল উদ্দেশ্য। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও মাঝে মাঝে কাজ করতে হতো। ছুটি পেলে বেশীরভাগ সময়েই ইস্তান্বুল শহরে যেতাম এই দিনে। বাংলাদেশীদের সাথে দেখা হতো শহরকেন্দ্রের একটি ক্যাফেতে। একটা বিষয় লক্ষ করে অবিভুত হলাম। ওরা কখনোই আমাদের সাথে আর গাড়ী ব্যবসার কথা তোলেন নি। আমার মনে হয়, আমরা নিজেরা যদি এমন কোন প্রস্তাব দিতাম, তাহলে তারা বাঁধাই দিতেন।

ফ্যক্টরীর মালিক প্রায় প্রতি শুক্রবারই তার বাড়ীর সামনে একটি করে ভেড়া জবাই করাতেন। আমরা আমাদের ঘর থেকে তাকিয়ে দেখতাম। কিন্তু এই দুই বিদেশীর ঘরে খাবার বা মাংস পাঠানোর কথা কখনো হয়তো ভাবেন নি। এটা হয়তো ওদের আচার আচরণের মাঝেই পড়া না। এর মাঝে ইদের দিনটি এলো। সকালে কাছের মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ শেষে ওদের একটি নিয়ম বেশ ভালো লাগলো। প্রত্যেকেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে একজনের সাথে হাত মিলিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। পরের জন হাত মিলায় দাঁড়িয়ে থাকা দু’জনের সাথে। পরের জন তিনজনের সাথে। এভাবে লাইন করে প্রত্যেকের প্রত্যেকের সাথে হাত মিলানো হয়ে যায়। নামাজ শেষে মালিক তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। ভাবলাম, এবার বেশ ভালো করেই খাওয়াদাওয়া হবে। কিন্তু হতাশ হলাম। দেখি শুধু চকলেট আর লজেন্স সাজানো আছে দস্তরখানে। অন্য অতিথি ও আমাদেরকে কয়েক মিনিট বসিয়ে সামান্য আলাপের পরে সে চকলেট হাতে দিয়েই বিদায় করা হলো। আমরা মন খারাপ করে ঘরে এসে ভাত বসালাম চুলোয়।

তারপরও এমন কিছু ঘটনা থাকে, যা অতি কষ্টের দৈনন্দিন জীবনকে রঙ্গিন করে। বাজার করা ছিল আমার দ্বায়িত্বের আওতায়। গ্রামের রাস্তায় হেঁটে অনেকটা দূরে একটি দোকানে যেতাম সে দ্বায়িত্ব পালন করতে। একটি মেয়ে কাজ করতো সে দোকানে। প্রথম দিন থেকেই ওর সাথে আলাপে মেতে গেলাম। তবে সে আলাপের ধরন ছিল অদ্ভুত। মেয়েটি এক অক্ষর ইংরেজী জানতো না, আমিও এক অক্ষরও তুর্কী ভাষা জানতাম না। কিন্তু তারপরও আমরা অনর্গল কথা বলে যেতাম। গ্রামের পাশে একটি ঝর্ণা থেকে খাবার পানি আনতাম। মেয়েটি সময় পেলে বা গ্রামে থাকলে আমাকে দেখলেই সেখানে এসে তার ভেড়া পাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। সাদরুল ভাইও টের পেলেন একদিন। বললেন, ”এই মিয়া, তোমার ছাগলওয়ালী এমে দাঁড়িয়ে আছে”! এটুকুই! তাতেই আনন্দ পেতাম বেশ।

মালিকের প্রতিদিন ভেড়া জবাই দেখে দেখে একদিন মেয়েটির দোকান থেকে দু’টো চামড়া ছাড়ানো ভেড়ার মাথা কিনে নিয়ে এলাম। দেখে, “এইটা কি কিনে এনেছো” বলেই ধমকে উঠলেন সাদরুল ভাই। আমি বললাম. “কেনো? ভেড়ার মাথা। মাংস না খাই, মাথাতো খেতে পারবো! দামেও সস্তা”। কিন্তু সে মাথাকে এখন ভাঙ্গি কি করে? কাটতে গিয়ে একমাত্র ছুরিটি দু’ভাগ হয়ে যাওয়াতে আরো রেগে গেলেন সাদরুল ভাই। আমি বলাম, “দাড়ান! রাইগ্গেন না, একটু অপেক্ষা করেন”। পুরোনো একটি ধোয়া সার্ট ছিল ঘরে। ভেড়ার মাথা দু’টোকে সে সার্ট দিয়ে পেঁচিয়ে ঘরের কোনে পড়ে থাকা মুগুরের মতো মোটা একটি কাঠ নিলাম হাতে। সে মুগুরে পিটিয়ে গুড়ো করে ফেল্লাম ওগুলো। তারপর বের করে ধুয়ে পরিস্কার করে স্যুপের মতো একটি সুরুয়া বানিয়ে ফেললাম। সাদরুল ভাই খেয়ে বলেন, “খুব মজা! আরেকদিন আইন্নো”!

এভাবেই চললো আমাদের দিনগুলো। আড়াই মাস পর একদিন শহরে গিয়ে বাঙ্গালীদের কাছে জানতে পেলাম, পান্নার সাথে গ্রীসে পরিচিত বাহার নামে এক বাংলাদেশী আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে পেরিয়াসে। কোন এক জাহাজে নাকি চাকুরীও ঠিক করে রেখেছে। হিসেব করে দেখলাম, আমাদের হাতে যে বেতন জমেছে, তাতে বাসের ভাড়া হয়ে যাবে। এমনকি বিপদে আপদেরর জন্যে কিছুটা বাড়তিও থাকতে পারে। সুতরাং ঠিক করলাম পরের সপ্তাহেই যাবো ওখানে। গুনেশলী ফিরে মালিকের কাছে পরদিনই বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিতে অনুরোধ করলাম। বললাম, আমাদেরকে পাসপোর্টের কারণে আঙ্কারায় আমাদের দূতাবাসে যেতে হবে। মালিক বেতন দুসপ্তাহের বেশী বকেয়া রাখতেন সবসময়। হয়তো আমরা যাতে চলে না যাই, সেই ভেবে। এতো কম পয়সায় এই গাধাখাটুনি কে খাটবে? মালিক তারপরও প্রায় দশদিনের বেতন রেখে দিলেন হাতে। আমাদেরকে সেটাই মনে নিতে হলো।

আঙ্কারা যাবার নাম করে গ্রীসের বাসে চেপে বসলাম আমরা দু’জন। ভয় হলো, না জানি মালিকের পরিচিত কেউ বাসের ভেতরে দেখে ফেলে আমাদের। বেশ দেরী করেই ছাড়লো বাস। বাস ছাড়ার পরও আমাদের বুকে দুরু দুরু ভয়। যদি গ্রীক সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেয় আবার! সীমান্তে বাস থামতেই ইমিগ্রেশনের লোক এসে সব যাত্রীদের পাসপোর্ট দেখে ফেরৎ দিয়ে আমাদেরগুলো নিয়ে নেমে গেলো নীচে। আমাদের বুকের ভেতরে হাতুড়ীর ঘা তীব্র থেকে তীব্রতরো হলো। মুখ শুকিয়ে প্রায় ঠোঁটের সাথে আটকে গেলো ঠোঁট। কিছুক্ষন পর ফিরে এলো সেই অফিসার। গম্ভীর মুখে আমাদের হাতে পাসপোর্ট দুটো ফেরৎ দিয়ে নেমে গেলো আবার। বাসও ছেড়ে দেয়া হলো সাথে সাথেই। আমি পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আবার না যেনো বাস থামার ইশারা করে কোন অফিনার। সীমান্ত এলাকা পেরিয়ে যেতেই আমি সাদরুল ভাইয়ের হাত ধরে আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম। সাদরুল ভাই হাসিমুখে হলেও তাঁর স্বাভাবিক নৈরাশ্য নিয়ে বললেন, “বেশী খুশী হয়ো না মিয়া, সামনে কি হইব, কে জানে”?

(আমার যাযাবর দিনের গল্পের প্রথম অণুচ্ছেদের সমাপ্তি এখানেই। ব্লগেই “জাহাজী জীবনের গল্পের” অনেকগুলো পর্ব প্রকাশ করেছি। গ্রীসে পেরিয়াস থেকে শুরু হয়ে সে কাহিনীর শেষ হয়েছে পেরিয়াসেই জাহাজী জীবনের ইতি টানার মাধ্যমে। যাযাবর দিনের দ্বিতীয় অণুচ্ছেদ শুরু করবো জাহাজ ছাড়ার পরপরই। এ অবধি যারা পড়েছেন ও আমার সাথে উদ্বেলিত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।)

আগের পর্ব:
যাযাবর দিনের গল্প - ঢাকা, দিল্লী, কাবুল
যাযাবর জীবনের গল্প - কাবুলের বারী ভাই
যাযাবর দিনের গল্প (তিন)– তেহরান এক ঝলসানো রুটি
যাযাবর দিনের গল্প (চার) – ইস্তাম্বুল আর গ্রীক সুন্দরী এথিনা


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক লেখকের লেখা লেখনীর গুণে টানে, কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতাই এতো সমৃদ্ধ যে আর কোনো মশলার দরকার হয় না । লিখতে থাকুন ।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ! লিখছি, লিখছি আর লিখেই যাচ্ছি....!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

দেবোত্তম এর ছবি

অনেক লেখকের লেখা লেখনীর গুণে টানে, কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতাই এতো সমৃদ্ধ যে আর কোনো মশলার দরকার হয় না । লিখতে থাকুন ।

আমি সহমত, অসাধারন রে ভাই আপনার অভিজ্ঞতাই আর লেখা

রানা মেহের এর ছবি

কোন একটা ঈদে আমার এখানে আপনার নিমন্ত্রন রইলো।
(রান্নাবান্না আল্লাহ ভরসা) মন খারাপ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার নিমন্ত্রনের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বহু বছর ধরেই ঈদে ভালো খাওয়া হয়নি। জার্মানীতে ঈদ কখন আসে, কখন যায়, টেরই পাইনা। গত তিরিশ বছরের পরবাসী জীবনে হয়তো বার পাঁচেক ঈদ করেছি দেশে। তবে আমার ভাইবোন, ভাগ্নে, ভাগনী, ভাস্তে, ভাস্তীরা বলে, "তুমি যখন দেশে আসো, তখনই ঈদ"! আব্বা আম্মাও বলতেন একই কথা। কিন্তু তাঁরা তো বেঁচে নেই আর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

অসাধারন মুগ্ধতাজাগানিয়া এক সিরিজ!!! গুরু গুরু
***************
শাহেনশাহ সিমন

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আপনার যাযাবর দিনের অভিজ্ঞতার গল্পে বুঁদ হয়ে ছিলাম সিরিজ চলাকালীন। বেশ লেগেছে।

তীরন্দাজ এর ছবি

আরো সামান্য কিছু পর্ব আসবে। তার পরই শেষ! তবে এখনও ঘুরছি, ঘুরেই যাচ্ছি, সেগুলোও লিখবো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

কীর্তিনাশা এর ছবি

যাযাবর দিনের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের অপেক্ষায় থাকলাম ? হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ! একটু সময় নেবে। শনিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্যে ইটালীর একটি দ্বীপে (এলবা) বেড়াতে যাচ্ছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

বাউলিআনা [অতিথি] এর ছবি

সচিত্র প্রতিবেদন আশা করছি..
হাসি

কীর্তিনাশা এর ছবি

শনিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্যে ইটালীর একটি দ্বীপে (এলবা) বেড়াতে যাচ্ছি।

তীরু'দা আপনাকে সত্যিই ভিষণ ইর্ষা হয় আমার।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পরবাসী  এর ছবি

তীরু দা
আপনার এই সিরিজের সবগুলো লেখাই পড়লাম
একটা কথাই বলবো আপনার এই লেখা ইংরেজী তে অনুবাদ করে দিলে বেস্ট সেলার অবধারিত।
আপনাদের গ্রুপের একজন কি এখন অস্ট্রেলিয়া থাকে?

তীরন্দাজ এর ছবি

বেস্ট সেলার হবে! আপনার আন্তরিকতা ভালো লাগলো খুব। ধন্যবাদ!

না ভাই। আমাদের গ্রুপের কেই অস্ট্রেলিয়া থেকে না। দুজন বাংলাদেশে, একজন আমেরিকায় আর আমি জার্মানীতে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমিও অপেক্ষায়

...........................
Every Picture Tells a Story

তীরন্দাজ এর ছবি

শুভকামনা মুস্তাফিজ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নজমুল আলবাব এর ছবি

তীরুদা, সদরুল ভাইর লগে দেখা করতে চাই।

”এই মিয়া, তোমার ছাগলওয়ালী এমে দাঁড়িয়ে আছে”!

সাদরুল ভাই খেয়ে বলেন, “খুব মজা! আরেকদিন আইন্নো”!

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তীরন্দাজ এর ছবি

সাদরুল ভাই এখন নিউইয়র্কের একটি কলেজে আন্তর্জাতিক রাজনীতি পড়ান। দেশে আসছেন জুলাই মাসে। সত্যি সত্যি চাইলে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

বাউলিআনা [অতিথি] এর ছবি

লেখা পড়ে যতই "উদ্বেলিত" হই না কেন- আমি জানি আপনার সেই সময়কার উদ্বেগ-উতকন্ঠা আর রোমান্সের অতি সামান্যটুকুই অনুভব করা সম্ভব।
তারপরও ভাল লাগে এই ভেবে যে, আপনি এখন ভাল আছেন, সচলে লিখছেন।
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম তীরুদা।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ বাউলিআনা। আপনার সন্দেশের একটি টুকরো চট করে খেয়ে ফেলেছি। দেখুন তো, ঠিক বলছি কিনা!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শামীম রুনা এর ছবি

অসাধারণ লেখা।।।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এই সিরিজটা মারাত্মক হইতেছে !



অজ্ঞাতবাস

তীরন্দাজ এর ছবি

Vielen vielen Dank!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

s-s এর ছবি

তীরুদা, ভেড়ার মাথা গুঁড়ো করার বর্ণনা পড়ে রীতিমত শিউরে উঠলাম! ইস্টারে নিউজিল্যান্ড যাচ্ছি, একটা দ্বীপেই, যেখানে লর্ড অফ দ্য রিংসের শুটিং হয়েছিলো। আমন্ত্রণ রইলো হাসি

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

তীরন্দাজ এর ছবি

শি্উরে ওঠার মতোই কাহিনী! দাওয়াতের জন্যে অনেক ধন্যবাদ! তবে এবার তো ইস্টার বুকড্ হয়ে আছে। সামনের বার সময়মতো----!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আবু রেজা এর ছবি

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
##################################৩
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

তীরন্দাজ এর ছবি

ভালো থাকবেন! ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নিবিড় এর ছবি

বলার জন্য নতুন কিছু নাই তাই আগের পর্বগুলোতে যা বলেছি তাই বলছি.........


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সবুজ বাঘ এর ছবি

দ্যাশে আইবেন কবে?

তীরন্দাজ এর ছবি

২০১০ এর ফেব্রুয়ারীতে বইমেলায়!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কী জীবন রে ভাই...
এইসব পড়লে নিজের জীবনডারে টিসু পেপারের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না। মন খারাপ
আশায় আছি আগামী বইমেলার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তীরন্দাজ এর ছবি

ধুর মিয়া, আপনে দেশের ভিতর কতো কিছু করলেন! ... আর আমি তো পরবাসী, পলাতক!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

বলার কিছু নাই, বিস্মিত! কষ্ট-আনন্দ আর সংগ্রাম মুখর
জীবন, জীবনবোধে লেখাটা পূর্ণ বলেই মনে হয়...........
ভাল-লাগল তীরন্দাজ ...।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ শাহীন!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তীরুদা, আমি আপনার এই সিরিজগুলো পড়া বন্ধ করে দিলাম। বই আকারে বের হলে পড়বো। ছোটবেলায় বইগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেত অন্য এক পরাবাস্তবতায়, যেখানে আমি হতাম বইয়েরই কোন চরিত্র। আপনার লেখাগুলো আমাকে সেভাবেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জীবনকে ক্ষুদ্র মনে হয়, স্বপ্নকে বড় মনে হয়। বই আকারে বের করুন, সাথে যথাযথ ছবি/ইলাস্ট্রেশন সহ। তখন কোন এক রাতে বইটা হাতে বসে পড়বো... হারিয়ে যাবো হাসি-কান্না আর জীবনসংগ্রামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। ফেব্রয়ারীতে বই পাবেন! ছবির ব্যপারে হতাশ হতে হবে। সেসময়ের ছবি কেথায় পাবো? যা দিয়েছি, সব ইন্টারনেট ঘেটে। জীবনযুদ্ধের পথিক, আমাদের কি ক্যামেরা ছিল তখন! তারপরও যতোটা পারি, ভালো করার চেষ্টা করবো।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

জীবনযুদ্ধের পথিক, আমাদের কি ক্যামেরা ছিল তখন!

কথাটার অর্থ আমি মর্মে মর্মে বুঝি। হাসি

এখন আশে-পাশে কত ক্যামেরা, কত ছবি। এই যে সেদিন লিখছিলাম কামলা খাটার কথা। সেই দিনগুলোয় না ছিল ক্যামেরা, না ছিল ফোন। সেই দোকান উঠে গেছে কবে! চাইলেও কাউকে দেখাতে পারবো না সেই ঘিন-ধরানো পরিবেশ কিংবা মালকিনের রুক্ষ চেহারা।

আমি ল্যান্ডস্কেপ নয়, ইলাস্ট্রেশনের কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিশোর বয়সে পড়া বইগুলোর মত; যখন পড়তে শুরুর আগে চোখ বুলিয়ে নিতাম ছবিগুলোর দিকে। অনেক তো আঁকিয়ে আছেন, বলুন তো আপনার হয়ে আমি ডাণ্ডাগিরি করি তাঁদের পেছনে। হাসি

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

পড়ি আর অবাক হই: স্থান-কাল-পাত্রের এতো খুঁটিনাটি বর্ণনা! সব স্মৃতি থেকে নেয়া? লেখা পড়ে তো মনে হয় না, ডায়রি লেখার সময় ও মানসিক অবস্থা আপনার ছিলো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তীরন্দাজ এর ছবি

মেশাদ থেকে তেহরান আসার সময় অন্ধকারে ছিলাম। সেখানে কিছু লিখতে পারিনি। লেখার মাঝেই তা বলেছি। মাঝে মাঝে ডায়েরী লিখেছি। বাকীটি স্মৃতি থেকে নেয়া। এ স্মৃতি, জীবনের স্মৃতি, জীবনের পলে পলে অনুভব করার স্মৃতি। এ কি করে ভুলি? এ কাহিনী মাকে বলেছি, বাবাকে বলেছি, ভাইবোন, বন্ধুদের বলেছি, নিজের ছেলেকে, স্ত্রীকে বলেছি,এখনও বলি। যখন লিখি, ফিরে যাই সেখানে।

আমার মনে হয়, বাইরের কেউ এসব কাহিনীর খোলসটি অনুভব করে মাত্র। এর বেশী নয়। কিন্তু আমি যে খোলসের ভেতরেই ছিলাম।

সময়, ক্ষণের কথা মনে নেই বলে উল্লেখও করিনি। বর্ণনায় খুটিনাটি থাকলে আরো বড় হতো লেখা। তাছাড়া নিছক ভ্রমণকাহিনী নয়, নিজের জীবনকে অনুভব করার কাহিনী।

বয়েস যথেষ্ট হলেও কোন ধরণের দূর্বলতার কোন প্রকোপ এখনও বাসা বাঁধেনি শরীরে। সেটাও একটি কারণ হতে পারে হয়তো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।