মেঘমানুষের গল্প

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৬/২০০৯ - ১০:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনে পড়ে স্বপ্নের সেই মেঘমানুষকে, যে ভেদ মানতো না, বলতো পৃথিবী তার মা আর আকাশ তার পিতা, বলতো সে ভালোবাসে আলো, ভালোবাসে নদী যার মধ্যে কিনা পূর্বজ-পূর্বজাদের আশীর্বাদধারা বয়ে গেছে। বলতো, সে ভালোবাসে সবুজ গাছ, পশুপাখি। বলতো, সে ভালোবাসে অন্য মানুষদের। সে বলতো সে ঘৃণা করে নিষ্ঠুরতা আর ঘৃণাকে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- কে তাকে রক্ষা করে? সে বলেছিল, কেউ না, জলের মধ্যে জল হয়ে ঝরে যায় সে। তার কাছে আরো কত কথা ছিলো জানার, কিন্তু ঘুম ভেঙে গেল যে!

জেগে উঠে মনে পড়ে আরেক মানুষকে, একদিন তাকে যুবক দেখেছিলাম, আজকে সে বুড়া হয়ে গেছে। তখনই তার চুল খুব পাতলা হয়ে গেছিল, এখন মাথাজোড়া মস্ত টাক। আমি খুঁজে বার করেছিলাম তার ম্যাট্রিকের সময় তোলা সাদাকালো ছবি, এক উজল চোখের কিশোর, যার মাথা ভর্তি চুল। সেই অমলকান্তি কিশোর অত বদলে গেছে? সময়ের মধ্যে পিছন ফিরে গিয়ে পিছনবাগে সাঁতার দিতে দিতে আর ফিরে পাওয়া যায় না সেই কিশোরকে?

অথবা সেই যুবককে যে ছোট্টো মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে রবিবারের সকালের বাজারে? এক অদ্ভুত ফলের বাজার বসেছে রেললাইনের উপরে, বাচ্চা মেয়েটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ট্রেন এলে কী হবে? ফলওয়ালা হা হা করে হেসে বলে," ট্রেন আইলে চাপা পইড়া সবাই মইরা যামু, আবার ট্রেন চইলা গেলেই বাঁইচ্যা উঠমু! এইরম কইরাই তো রোজ রোজ আমরা মইরা যাই আর বাঁইচ্যা উঠি।"

আশেপাশের সবাই গলা ছেড়ে হেসে উঠেছে আর ভীষণ রকম কনফিউজড হয়ে গিয়ে মেয়েটা পাশে বাবার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে, " তাই, বাবা?" হাঁটতে হাঁটতে ফলের বাজার পার হয়ে যায় তারা, মেয়েটাকে বাবা আশ্বস্ত করে, "এই লাইনে খুব ভোরে শুধু একবার মালগাড়ী যায়, সারাদিন আর কোনো গাড়ী যায় না।"

মেঘমানুষ বলে, "এ কী আশ্চর্য ব্যাপার! আকাশ, মাটি এসবও কি কেনাবেচা করা যায়? আমরা বুঝিনা! এই যে বিশুদ্ধ বাতাস বইছে- প্রাণের দীপগুলি জ্বালিয়ে রাখছে-এই যে স্নিগ্ধ জল কুলকুল করে বয়ে যায় রোদপোহানো পাথরের পাশ দিয়ে, আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখে এই জল-এসব তো আমাদের সম্পত্তি না। এগুলো কী করে কিনবে বা বেচবে কেউ? পৃথিবীর প্রত্যেকটা জায়গাই পবিত্র, পাইনের ঝিরিঝিরি পাতাগুলো, সব বালুকাতীর, বনের কুয়াশা, সব তৃণভূমি, সব কীটপতঙ্গ! এরা সকলেই আমাদের স্মৃতি আর অভিজ্ঞতায় পবিত্র।"

মাঠজঙ্গলের গল্প

এখানে তৃণভূমি-
এখানে নিশ্চিন্ত রাখাল
তার পশুপাল নিয়ে চরিয়ে বেড়ায়।
ঐ দূরে পাহাড়ের ত্রিকোণ ঢেউ
তারপরে শুরু হয়েছে জঙ্গল,
তারপরে হয়তো কোথাও আছে সমুদ্র।

দূরের হাওয়ায় মাঝে মাঝে
উড়ে আসে সমুদ্রের গন্ধ।
এখানে তৃণভূমি,
এখানে রাখালের হাতে মুলিবাঁশের বাশি।

তারপরে বদলেছে কাল
তৃণভূমি রক্তে লাল,
পশুরা ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করছে।
তাদের রাখাল আরো অনেক রাখালের সঙ্গে
পড়ে আছে ঘাসের 'পরে।

তারপরে বৃষ্টি আসে,
ধুয়ে যায় সব রঙ,
মুক্ত পশুরা চলে যায়
তাদের নতুন চারণক্ষেত্রে,
তাদের সঙ্গে আর রাখাল নেই কোনো।

এখানে আজও তৃণভূমি,
দূরে পাহাড়ের ত্রিকোণ ঢেউ,
আরো দূরে কোথাও সমুদ্র-
এখন এখানে কেবল বন্য পশুরা
রাখাল নেই তাদের কোনো।

*******


মন্তব্য

নীল [অতিথি] এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, নীল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মামুন হক এর ছবি

আমার প্রথম পাঁচতারাটা আপনাকেই দিলাম হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ট্রেন আইলে চাপা পইড়া সবাই মইরা যামু, আবার ট্রেন চইলা গেলেই বাঁইচ্যা উঠমু!
বড়ই দার্শনিক কথা বার্তা।

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ফারহানা এর ছবি

ফারহানা সিমলা
ইস !!!! কি সুন্দর উপমা। মেঘ মানুষ !!!! আপনার লেখাগুলো যখন পড়ি তখন কেমন যেনো একটা সস্তি বোধ করি। প্রতিদিনের ব্যস্ত শহরের করুণ অবস্থার মাঝে আপানার লেখায় অন্তত একটা সপ্নীল পৃথিবীর শীতল ছায়া অনুভব করি। আমি আপানার লেখাগুলোর দারুণ ভক্ত !!!!! আরও এমন লেখা চাই ।

ফারহানা সিমলা

ফারহানা সিমলা

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ ফারহানা সিমলা।
স্বপ্নিল পৃথিবীর শীতল ছায়া সত্যি সত্যি দিতে পারলে তো ধন্য হতাম। তবুও যে কিছু পান তা আপনার হৃদয়ের গুণ।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

সুন্দর, প্রাণবন্ত লেখা
----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ আশরাফ মাহমুদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শাহীন হাসান এর ছবি

কবিতাটি ভাল লাগলো বেশ!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ শাহীন হাসান।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এইটা একটা দাঁত বসানোর মতো লেখা। শৈশবের যেকোনো লেখাই আমাকে ভয়ানকভাবে টানে। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ ধূ গো। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ব্যাপক!
মারাত্নক!!
ভয়াবহ!!!
চলুক
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

তুলিরেখা এর ছবি

মারাত্নক মানে? মারাত্মক ? হাসি
সে যাই হোক, অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

হরিপদ কেরাণী [অতিথি] এর ছবি

"ট্রেন আইলে চাপা পইড়া সবাই মইরা যামু, আবার ট্রেন চইলা গেলেই বাঁইচ্যা উঠমু! এইরম কইরাই তো রোজ রোজ আমরা মইরা যাই আর বাঁইচ্যা উঠি।"

প্রচন্ড সত্য একটা কথা! আমার মতো কেরানীরা এভাবেই প্রতিদিন মরে আর বাঁচে!

তুলিরেখা এর ছবি

তবেই বুঝেন! পাঁচ বছরের বাচ্চা এই উচ্চ দর্শনশাস্ত্র শুনলে তো ঘাবড়াবেই। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।