আফ্রিকান উপকথা-নাটিকী

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ১১/১২/২০০৯ - ৭:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আকাশিয়া আর মস্ত মস্ত ফণীমনসার পিছনে কালাহারি মরুতে সূর্যাস্ত হচ্ছিলো। শিকারীরা বন থেকে ফিরে আসছিলো কাঁধে মৃত হরিণ ঝুলিয়ে, তাদের মুখে ক্লান্ত কিন্তু পরিতৃপ্ত হাসি। বড় বড় কাঠের থামে ঘেরা গ্রামে তখন উনুনে আঁচ পড়ছিলো, কুটিরে কুটিরে ছিলো হাসিগল্পের আওয়াজ।

নাটিকীর দুই দিদি খুব করে মুখেচোখেহাতেপায়ে তেল লাগাচ্ছিলো, চুলে আঠা লাগাচ্ছিল, পায়ে ঝুমুর বাঁধছিলো। পূর্ণিমা রাত নামবে খানিক পরেই, চাঁদের আলোয় নাচ হবে কিনা, তখন তাদের তেলচকচকে চাঁদমুখে চাঁদনি লেগে যা লাগবে না, আহা! তরুণ শিকারীদের মাথা ঘুরে যাবে।

নাটিকীর খুব ইচ্ছে সেও নাচে যায়, মাকে একবার বলেছিলো সে। কিন্তু মা তো সৎ মা কিনা, সে নাটিকীর উপরে সবসময়েই খাপ্পা। সোজা বলে দিলো, "যা, ছাগলগুলোকে বাইরে থেকে আন, ছাগলের ঘরে ঢোকা, রাত নামলে নেকড়ে কি শিয়ালে নেবে যে! কাঠ কুড়িয়ে আন, আগুনটা উসকে দে। কাজকর্ম কিছু কর, বয়স তো কম হোলো না। তা না ড্যাং ড্যাং করে নাচতে যাবেন তিনি!"

নাটিকী আগে বুঝতো না, এখন বুঝতে পারে সৎমা আর সৎবোনেরা তাকে দু'চোখে দেখতে পারে না। তাদের খুব হিংসে, তাদের চেয়ে নাটিকী যে অনেক বেশী সুন্দরী। নাচের আসরে সে গেলে সবাই যে হাঁ করে নাটিকীর দিকেই চেয়ে থাকবে, তাই তাকে কিছুতেই সঙ্গে নেয় না ওরা।

নাটিকী মনখারাপ করে মাঠে গেল ছাগলদের আনতে। তাদের নিয়ে ফিরে এসে সে দেখে মা আর দুই দিদি চলে গেছে নাচের জায়গায়। সে তখন রাঁধবার জায়গায় গিয়ে উনুনে নতুন করে আগুন দিয়ে বসলো সাজতে। আগুনে আঠা গরম হতে দিয়ে ভালো করে হাতেপায়েমুখে তেল লাগিয়ে চকচকে করলো। চুল আঁচড়ালো, ভালো কারে আঠা লাগালো। শক্ত ভুট্টাবেণী করলো মাথা জুড়ে, বেণীর ডগায় ডগায় লাগালো পুঁতির ঝালর। গলায় পরলো চকচকে বড় পুঁতির মালা। ঝুম ঝুম আওয়াজ করা একরকম শুকনো ফল লতায় গেঁথে গেঁথে সে পায়ের নূপুর বানালো, তারপরে পরলো। সব সেরে সে বন থেকে কুড়িয়ে আনা সজারুর কাঁটা নিলো চামড়ার থলিতে। তারপরে রওনা হলো।

পূর্ণিমার চাঁদ তখন আকাশের অনেক উপরে উঠেছে, বেশ রাত হয়েছে। নাটিকী তো জানে না ঠিক কোনখানে নাচের আসর বসেছে। সে পথ চলে আর একটা করে সজারুর কাঁটা মাটিতে গেঁথে দেয় পথের পাশে। যদি শেষ অবধি খুঁজে সে নাও পায় সেই জায়গা, ফিরে তো আসতে পারবে!

সামনে একটা উঁচু টিলা, নাটিকী উঠলো তার চূড়ায়। উঠেই দেখতে পেলো দূরে মাঠের মাঝখানে বড় আগুন, তাকে ঘিরে অনেক মানুষ। ঐখানেই তাহলে নাচের আসর? নাটিকী কী করবে? যাবে ওখানে নাকি ফিরে যাবে? সৎমা আর সৎদিদিরা আছে সেখানে, ওরা যদি রাগ করে?

ভাবতে ভাবতে এগোয় নাটিকী, আগুনে মাংস ঝলসানো হচ্ছে, তার খিদে পাওয়ানো গন্ধ এসে লাগে নাটিকীর নাকে। তার মনে পড়ে সে সেই দুপুরের পর থেকে আর কিছু খায় নি, খুব খিদে পেয়েছে। ওখানে গেলে কিছু তো খেতে পাওয়া যাবে।

সে থেমে থেমে এগোয়, তার পায়ের নূপুর ঝুম্‌ ঝুম্‌ করে, যেন তাকে সাহস দিয়ে বলে, "ভয় কী মেয়ে? এগিয়ে যা।"

আগুনের কাছে এসে নাটিকী একপাশে দাঁড়ায়, ভীড়ের সুযোগ নিয়ে নিজেকে আড়াল করে সৎমা আর সৎবোনেদের কাছ থেকে। কিন্তু একসময় আগুনের আলোয় তাকে তারা দেখে। চিনতে কিন্তু পারে না। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে- কে এই মেয়ে? কাদের মেয়ে? এত পরে এসেছে? এমন একা একা?

এক পাশে হাতে তাল দিয়ে দিয়ে গান গাইছিলো মহিলারা, নাটিকী গিয়ে যোগ দিলো। সেও তাল দিয়ে গাইতে থাকলো, প্রথমে বাধো বাধো ঠেকছিলো তার, কোনোদিন এভাবে জনসমক্ষে সে তো গায় নি! কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ডুবে গেল সুরে-তালে-ছন্দে। আর তার মনে রইলো না সে মা-হারা অভাগী মেয়ে, সৎ মা আর সৎবোনেরা তাকে দাসীর মতন দেখে, যত্ন আত্তি তো দূরের কথা, উঠতে বসতে তাকে মা-খাকী বলে গাল দেয়। তার মনে হলো এই খোলা আকাশের নিচে চাঁদের আলোয় ধোয়া মাঠে উজ্জ্বল আগুনের পাশে আনন্দিত মানুষের ভীড়ে সে একজন খুব হাসিখুশী সুন্দরী মেয়ে, এখুনি তার স্বপ্নে দেখা রাজপুত্তুর এসে তাকে বলবে, "তুমি কে গো? তুমি কি বনপরী?"

শিকারীরা দল বেঁধে গোল হয়ে নাচছিলো, নাচের দলের এক তরুণ শিকারী নাটিকীর দিকে চেয়ে হাসলো। নাটিকী লাজে রাঙা হয়ে মুখ নামিয়ে নিলো। যখন মুখ তুললো তখন দেখে সেই শিকারী তার দিকেই চেয়ে আছে।

রাত আরো বাড়ে, এবারে লোকেরা বাড়ী যাবার যোগাড় শুরু করে। নাটিকীর দুই সৎ দিদি বড় বড় হাই তুলছিলো। দেখে সৎ মা বললো, " অনেক রাত হলো মেয়েরা। এবারে বাড়ীর দিকে রওনা হতে হয়। নে, তোরা আর একবার করে মাংস নে। খাওয়া হলেই ঘরের দিকে রওনা দেবো আমরা।" খাওয়া শেষ হলে তারা সত্যি বাড়ীর দিকে রওনা হয়।

নাটিকীর এসব দেখার মতন মন ছিলো না। সে আরো অনেকক্ষণ গান গায় গানের দলের মহিলাদের সাথে, চাঁদ পশ্চিমে ঢলে যখন রাত শেষদিকে, তখন আসর ভাঙে। সেই তরুণ শিকারী বলে, "চলো, আমি তোমায় এগিয়ে দিই।"

নাটিকীর ফেলে যাওয়া সজারুকাঁটা দেখে দেখে তারা ফিরতে থাকে। সেই শিকারী খুব নরম গলায় নাটিকীর কাছে তার কথা জানতে চায়, কে সে, কাদের মেয়ে, কারা তার মাবাপভাইবোন? এতদিন পরে একজন সহৃদয় মানুষ পেয়ে নাটিকী সব কথা খুলে বলে-তার দুঃসহ জীবন, সৎমা আর সৎবোনেদের অত্যাচারের কথা, নাটিকী দেখতে সুন্দর বলে তাদের ঈর্ষার অন্ত নেই, তারা তাকে কোথাও যেতে দেয় না, তাকে দিয়ে সব কাজ করায়, তার সঙ্গে নিত্য খারাপ ব্যবহার করে। কথা বলতে বলতে ভয়ে কেঁপে ওঠে নাটিকী, আজকে ঘরে ফিরলে তাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে তার সৎমা। একে তো সে না জানিয়ে গেছিলো নাচের আসরে, আবার ফিরছে এক পুরুষমানুষের সঙ্গে!

তরুণ শিকারী বলে, "তোমার কোনো ভয় নেই নাটিকী। আমি তোমাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবো। তোমার সৎ মায়ের সঙ্গে আজই বরং কথা বলে বিয়ে পাকা করে ফেলি।"

ওরা অপেক্ষাতেই ছিলো, দূর থেকে তাদের দেখেই বড় দিদি হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো,"মা, তোমার গুণনিধি সৎমেয়ের কান্ড দ্যাখো। ঢলানি এক নাগর জুটিয়ে ফিরছেন। ঝাঁটাপেটা করো মা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেড়ে দাও ঐ অবাধ্য মেয়ের, চুলগুলো মুড়িয়ে কেটে ওকে ন্যাড়া করে দাও। পিঠে দাগ দিয়ে দাও লোহা গরম করে ছ্যাঁকা দিয়ে।"

নাটিকী ভয়ে কাঁপছিলো, সৎমা আগুনখাকীর মতন ছুটে এলো, " হারামজাদী, আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন। আজ মুড়োঝ্যাঁটা দিয়ে ঝেঁটিয়ে তোর সব বিষ আমি জম্মের মতন ঝাড়বো, লোহা পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে দাগী করে দেবো জম্মের মতন। সব ঢলানিপনা ঘুচিয়ে দেবো আজ। " নাটিকীর গলাটা খিমচে ধরার জন্য হাত বাড়ালো সৎমা।

নাটিকী পর্যন্ত পৌঁছালো না সে হাত, সেই শিকারী হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, "শুনুন, আমি নাটিকীকে নিয়ে যাচ্ছি। গাঁওবুড়ার কাছে গিয়ে বিয়ের অনুমতি চাইবো, পঞ্চজনের সাক্ষী রেখে রীতি মেনে বিয়ে হবে। নাটিকীর কোনো অভাব যাতে কোনোদিন না হয়, সে আমি দেখবো।"

সৎ মা তো হাঁ! বিস্ময়ে মুখ থেকে কথাই বেরোলো না খানিকক্ষণ। তারপরে সামলে নিয়ে বললো, "এ হতভাগীকে বিয়ে করে কী লাভ তোমার ভালোমানুষের ছেলে? এ অপদার্থ মেয়ে, না পারে ঘরের কাজ, না পারে বাইরের কাজ। এক কাজ করতে গেলে দশ অকাজ করে। তোমার জীবন ছারখার হয়ে যাবে, ছেলে। তারচেয়ে আমার এই অন্য দুটি মেয়ের একটিকে তুমি নাও না বেছে! আহা, এদের যেমন গুণ তেমন রূপ! দশ হাতে কাজ করে তোমার সংসার উজিয়ে তুলবে।"

শিকারী হেসে বলে, "তা যা বলেছেন। গলা শুনেই টের পেয়েছি। চেঁচানির চোটেই আমার একখানা সংসার একেবারে দশখানা হয়ে যাবে। এসো নাটিকী, আমরা যাই।" নাটিকীর হাত ধরে সে দ্রুত হাঁটা দেয়।

শিকারী নাটিকীকে নিয়ে যায় অনেক দূরে তার আপন মানুষজনের মাঝে। সেখানে তারা এমন পরমাসুন্দরী আর অশেষ গুণবতী নাটিকীকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা। অল্প সময়েই নাটিকী সবার আপন হয়ে গেল।

নাটিকীর সৎমা আর সৎবোনেরা এখন খাটতে খাটতে নাজেহাল হয়ে নাটিকীকে গাল দেয়, " নাটিকী, বদমাইশ মেয়ে, একদিন তোকে পাবো হাতের মুঠায়। ঐ ছোকরা ক'দিন রাখবে তোকে? দু'দিন ফুর্তি করে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যাবে। তখন দেখিস কী হয়। কোন্‌ কালামুখ নিয়ে তুই ফিরবি তখন ঘরে? কিছুতেই ঘরে নেবো না আমরা তখন। " এসব বলে আর ভাবে নাটিকী ফিরলে তারা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে! ও ছুঁড়ী যে এত কাজ করতো তা তো বোঝা যেতো না! এখন তারা তিনজনে মিলে সেই একজনের কাজ সামলাতে পারছে না!

নিজের সংসারে নাটিকীর এখন চাঁদের হাট, উঠানে খেলা করে বেড়ায় তার শিশুরা, কলকল করে কথা বলে। শিকার করে তাদের বাবা ফিরলে দৌড়ে গিয়ে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নাটিকী দৌড়ে গিয়ে নিজের কোলে নেয় তাদের, বলে, " আরে কী দুষ্টু হয়েছে বাচ্চারা! আরে তোদের বাবাকে জিরোতে দে একটু, হাত মুখ ধুয়ে কিছু মুখে দিক, তারপরে তো গল্প বলবে! আসামাত্র কেউ এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে? "

হাতমুখ ধুয়ে জিরোলে পর স্বামীকে আর বাচ্চাদের খেতে দিয়ে নিজের খাওয়া দাওয়াও সেরে নেয় সে। তারপরে তার শিকারী স্বামী তার বাচ্চাদের গল্প শোনায়, সেও শোনে। বাচ্চারা সবচেয়ে ভালোবাসে সেই নাচের রাতের গল্প, যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে দেখে চমকে উঠে ভেবেছিলো এ কে? এ কি বনপরী?

নাটিকী আনন্দাশ্রু গোপণ করে, তার সত্যিই আর কোনো অভাব নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকার Namaqualand অঞ্চলে প্রচলিত ছিলো এই উপকথা। এই উপকথার প্রতিধ্বনি আছে ইউরোপের সিন্ডারেলার গল্পে।আরো নানা দেশের উপকথাতেও এইধরনের কাহিনি রয়েছে। এই গল্প ক্লদিয়েন কোয়েৎজে বলেছেন ইংরেজীতে, ছোটোবেলায় গল্পটা তিনি শুনেছিলেন ট্রিয়েনৎজিয়ে কোয়েকাস এর মুখে, কোয়েকাস বিখ্যাত Nama গল্পকথক, তাদের গল্পের থলিওলা ঠানদিদি।


মন্তব্য

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

অনেক অনেকদিন পরে ঠানদিদির মুখে গল্প শোনলাম।

তুলিরেখা এর ছবি

আহা নাতি বেঁচে থাকো সুখে থাকো, হীরাজহরতেকন্যায়পুত্রে সংসার উজিয়ে উঠুক। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

নানুর কাছে প্রথম শুনেছিলাম সিন্ডারেলার গল্প এখানে আপনার কাছে তারই আরেক রুপ ও ইতিহাস জানলাম। ধন্যবাদ।

দিশা___

তুলিরেখা এর ছবি

নানা দূর দূর দেশের খুবই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে উপকথার মূল আখ্যানভাগের মিল দেখে চমকে উঠতে হয়।
ভাবুন কোথায় সফি-সফি সিন্ডারেলার সমাজ, লোকলশকর গাড়ীঘোড়া ফিটফাট রাজপুত্র ঝলমলে পোশাক আলোপিছলানো নাচের জুতা আর কোথায় কালাহারির কাছের গ্রামের খোলা আকাশের নিচে আগুন ঘিরে নাচ! অথচ ভিতরে ভিতরে সেই একই সুখ দুঃখ একই চাওয়া পাওয়া একই টানাপড়েন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

দ্রোহী এর ছবি

দারুণ....

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
আপনি এখন কোথায়? দেশে না বিদেশে?
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই বোধহয় প্রথম কোন রূপকথা পড়লাম যেটাতে নাটকীয়তা একেবারেই কম

অনেক বেশি সহজ হয়ে গেলো না নাটিকীর যুদ্ধ?

এটা কি এরকমই ছিল না আপনার অনুবাদের কারিশমা?

তুলিরেখা এর ছবি

আরে আমি যেখানে পড়েছি সেখানে একেবারে ছোট্টো ছিলো গল্পটা, মাত্র ৭০০ শব্দের। একেবারে কাঠামোটুকু। তবু তো আমি সংলাপ বর্ণনা ইত্যাদি জুড়ে জুড়ে তবু কিছুটা যাকে বলে গত্তি লাগিয়েছি। হাসি

মূল গল্প একেবারে শীর্ণ, স্লিম। হয় আফ্রিকার গল্প বলার কায়দাই এই সরলসোজা মাঝের সুতোটি ধরে বলে যাওয়া, ফেনানো টেনানো নেই। নাহয় ইংরেজীতে আনার সময় অনেককিছু স্থানীয় টোন ধরতে না পেরে মূল কথাটি শুধু বলে গেছে।

অবশ্য নাটকীয়তা অনেক আনা যায়, এ জিনিস ঠিকঠাক করে বাড়ালে শ'খানেক পাতার গল্প হতে পারে। নাটিকীর বাবার চরিত্রটাকে আনা যায়, নাটিকীর মায়ের মৃত্যুসময়ের কথা বলা যায়, সেখানে মেয়েকে সেই মা কী বলে গেল সেটা নিয়ে একটা জাদুটাদু কিছু ঢোকানো যায়। নাটিকীর মৃতদার বাবা আবার বিয়ে করলে সৎমা তার মেয়েদের নিয়ে আসার পরে সংসারের কি অবস্থা হলো সেটা বলা যায়। নাচের রাতের গল্প অনেক বাড়ানো যায়। দক্ষ হাতে পড়লে এ জিনিস এমনকি রূপ বদলে আধুনিক যুগের গল্প ও হয়ে উঠতে পারে।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খাড়ান খাড়ান খাড়ান
আমি তো জানতাম কিছু ইঞ্জিনিয়ার আছে যারা একটুকরা ইট থেকে পুরোনো বিল্ডিং ঘটিবাটি আবার ঠিক আগের মতো তৈরি করে ফেলতে পারে
কী যেন এদেরকে বলে। সচলে এরকম ইঞ্জিনিয়ার একজন আছেন

কিন্তু রূপকথার এক টুকরা ধরে যে পুরোটাকে আবার আগের মতো তৈরি করে ফেলার ইঞ্জিনিয়ারও থাকতে পারে আপনার কমেন্ট পড়ে তাই মনে হলো

০২

দেন স্যার

প্রাচীন মানবজাতিকে কিছু রূপকথা মেরামত করে দেন
(এইটাও করে ফেলেন)

সাফি এর ছবি

আমিতো শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম, কোন একটা ভেজাল বাঁধার। যাউকগা, সব ভালো যার শেষ ভালো। ঠানদির গল্প ভালু পাই হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

আহা ভালো থাকো নাতি। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

বইখাতা এর ছবি

আপনার ঝুলি থেকে একের পর এক উপকথা বের হতে থাকুক, আমরা পড়তে থাকি। হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ বইখাতা।
আমার আবার ঝুলি কই, এসব তো পরের ঝুলি থেকে বের করে করে দিচ্ছি। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালু পাইলাম...

---নীল ভূত।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ নীল ভুত।
আপনি এরকম নিক নিয়েছেন, ভুতের গল্প শোনান একদিন। হাসি -----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

ছোট্ট বেলায় গরমের ছুটিতে যখন নানা বাড়ী যেতাম, তখন সেই দির্ঘ্য গরমের দুপুর গুলোতে নানীর সেই বিশাল খাটটাতে শুয়ে, ছন্দাখালা পড়তেন আর আমরা সবকটা খালাতো মামাতো ভাই বোন মিলে শুনতাম ঠাকুরমার ঝুলির গল্প। সেই তুলারাশি রাজকন্যা, বাঙ্গামা বাঙ্গামী আর রাজপুত্র ও কোটালপুত্রের গল্প।
তারপর নিজে পড়তে শেখার পর ডাইনী বাবা-ইয়াগা, যাদুকরী ভাসিলিসার অথবা বোকা ইভান!
আপনার গল্প, এই বুড়োবেলাতেও, আমাকে ছেলেবেলার সেইসব দিন গুলোতে নিয়ে যায। রুপকথা পড়বার জন্য কী নিদৃষ্ট্য কোন বয়স থাকে?
আজ কাল আর কেউ রুপকথা লেখে না। কেন? তুলিরেখা, আপনি লিখতে থাকুন।

--------------------------------------------------------------------------------

তুলিরেখা এর ছবি

পড়েছেন বলে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমাদের ছোটোবেলা ভরে রূপকথা ছিলো-ভুতপেত্নী রাজারাণী র গল্প। সেই, অরুণ বরুণকে মাটির কলসীতে করে জলে ভাসিয়ে দিয়ে দুষ্টু রাণীরা " মহারাজ দেখুন আপনার ছোটো রাণীর ঘরে বেড়ালছানা কুকুরছানা হয়েছে " দেখাতো আর আমরা এত্ত বড় বড় চোখ করে শুনতাম। লালকমল নীলকমলের সাথে আমরাও তো সেই লড়াইয়ে থাকতাম! ছাইগাদায় চাঁপাগাছে সাতটি ফুল সাতটি হারানো রাজপুত্র আর পারুল বোন তাদের কখন উদ্ধার করবে সেই অবধি না শুনে আমরা ছাড়তাম না। বড়রাও ও গল্প যে ভালোবাসতো তার প্রমাণও ছিলো। "সাতভাই চম্পা জাগোরে জাগো" গানটা এত জনপ্রিয় হয়েছিলো কি আর এমনি?

একটু বড় হলে এলো আধুনিক রূপকথা-বেতাল/অরণ্যদেব। ডায়নাকে আমাদের চেনা হয়ে গেল। বেতালের আংটিতে করোটিচিহ্ন, বদমাশদের চোয়ালে ঘুষি লাগিয়ে দিলে চিহ্নটা থেকে যায়, ওঠে না। আমাদের ভাইবেরাদরেরা কালি দিয়ে করোটী এঁকে রবারে লাগিয়ে সেই দিয়ে নিজেদের গায়েই চিহ্ন লাগাতো। হাসি

তারপরে ম্যানড্রেক, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান কত এলো। লক্ষ লক্ষ গ্রহের সম্রাট ম্যাগনন ম্যানড্রেকের বান্ধবী নার্দাকে পুরস্কার দিতে চাইলো একটা ছোটোখাটো সৌরজগৎ, নার্দা বলে আমি ওটা রাখবো কোথায়? হাসি

এখন ও নতুন রূপকথা অবশ্য আছে, হ্যারী পটার। মানুষের যে রূপকথার আকর্ষণ আর তার জন্য আকুলতা কত, সেটা হ্যারী পটার কেনার লাইন দেখেই বোঝা যায়।

এইসব গল্প ভালো তবে কিনা উপকথার গল্পে গভীর একটা মায়া থাকে, সব অন্ধকার পেরিয়ে একটা ভালোবাসার ওম। সেইটার জন্য দেশবিদেশের ওরিজিনাল গল্পগুলো খুঁজে বেড়াই।

পড়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমে মনে করেছিলাম আমার পড়া একটা রূপকথার মত। আফ্রিকানই ছিল হয়ত। মেয়েটার নাম ছিল আকিম। নাটিকীর প্রথমাংশের সাথে প্রায় পুরোটাই মেলে। নাচের অংশটাও, তবে শেষ দিকে মরতে মরতে বেঁচে যায়, আর বাংলা সিনেমা টাইপ কাহিনী। তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যানা, চমৎকার ছিল রূপকথা (নাকি উপকথা?) টি।

এটাও কিন্তু চমৎকার। কিন্তু শেষে সম্ভবত আরো একটু কাঠিন্য আশা করেছিলাম। তবে যেমনটি বলেছেন, আফ্রিকান গল্পের শীর্ণকায় অবস্থা, তার তুলনায় বিচার করলে অবশ্যই অনেক অনেক ভাল!

-মেঘবালিকা।

তুলিরেখা এর ছবি

পড়েছেন বলে ধন্যবাদ।
আসলে কি জানেন কোনো উপকথা বা রূপকথা আসলে নদীর মতন একটা চলিষ্ণু অবস্থা, কখনোই আটকে থাকে না। চলতে থাকে, চলতে থাকে। মাঠঘাট পাহাড়পর্বত পেরিয়ে মানুষের মুখে মুখে চলতে চলতে মূল গল্পটা অনেক বদলে যায়, অনেক বড় হয়ে ওঠে, ঘটনা নিজের মতন মোড় নেয়, মানুষের মনের যে অন্তহীন গল্পতৃষ্ণা, সেটাই গল্পটাকে বাড়াতে থাকে, দেশ ভাষা-পোশাক-আশাক-খাবারদাবার-রীতিনীতি এই সব অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে গল্পটা ডালেপালায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

সিন্ডারেলায় যেমন এক ইচ্ছাপূরণ পরী এসে তাকে ঝলমলে পোশাকে আর রত্নময় জুতায় সাজিয়ে দিয়ে যায়। আবার রুশদেশের দুখিনী ওয়াসিলিসার গল্পে ওর মায়ের দেওয়া একটা যাদুপুতুল তাকে সাহায্য করে। স্নো-হোয়াইটের গল্পে সাত বামন যথাসাধ্য যত্নে রক্ষা করে তাকে, বিষ-আপেল অবশ্য রুখতে পারে না, ষড়যন্ত্র কেমন করে আটকাবে? শেষপর্যন্ত এক রাজপুত্রই আসে তাকে মরণঘুম থেকে ডেকে তুলতে । আবার দেখুন আন্ডারসনের খুদে দেশলাইওয়ালির গল্পে কেউ নেই যে ছোট্টো মেয়েটাকে বাঁচায়, পাঠক দুরুদুরু বুকে চোখে জল নিয়ে দেখে মৃত্যু নিজে এসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে চলে যায় সুন্দরতর ও আলোময় ভালোবাসাময় জগতে। এমনি সব ছড়িয়ে পড়া পালটে যেতে থাকা সুখদুঃখের স্রোত, এ কি কখনো আটকে থাকতে পারে?

আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে-

---------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি

্-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক দেরী হয়ে গেলো পড়তে। ভালো লাগলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নজরুল।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নাশতারান এর ছবি

খুব ভাল্লাগলো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তুলিরেখা এর ছবি

শুনে আমারও খুব ভাল্লাগলো বুনোহাঁস।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।