সাংগ্রিলা(৭)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ০৬/০২/২০১০ - ১১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার কৈফিয়ৎ: অনেকদিন আগে এই ধারাবাহিক লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। পাঠসংখ্যা আর কমেন্টে পাঠকের সাড়া খুব কম পাওয়ায় লেখাটি বন্ধ করে দিই। সম্প্রতি এক পাঠক অনুরোধ করেছেন আবার লেখাটি দিতে, তাই আবার দিতে শুরু করলাম। সঙ্গে আগের পর্বগুলোর লিংক দিলাম। যারা পড়বেন বা পড়বেন না, মন্তব্য করবেন বা করবেন না, তাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ---

এখানে ১ ও ২
এখানে ৩ ও ৪
এখানে ৫
এখানে ৬

তারপরে দিন যায়, রাত যায়৷ আমরা কাজকর্ম করি, খাই দাই, ঘুমাই আর স্বপ্নে দেখি সেই অনন্ত ঘর আর তার অনবরত বদলে যেতে থাকা দেওয়াল ছাদ দরজা জানালা ...সকালে উঠে প্রাত্যহিক রিচুয়ালের মতন সেই কথা বলাবলি করি আমি আর আরেনুশ, আর কেউ এসব জানেনা৷

এই অর্ধ-ধ্যানমগ্ন সাংগ্রিলার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আমাদের সঙ্গী ছাত্র ও সহকর্মী, তাদেরও আমরা এসব বলতে পারিনা কখনো, আমাদের যারা নির্দেশক ও শিক্ষক তাদের তো আরোই না৷ ভয় বা সংকোচ নয়, অন্য কারণে বলতে পারিনা, মনে হয় বললেই যেন অবাক হয়ে তাকাবে, মুখের মায়ালু ভাব দূর হয়ে যাবে, স্বপ্নাচ্ছন্ন অর্ধনিমীলিত চোখগুলো বিষ্ফারিত হয়ে খুলে যাবে, শান্তির ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে যেন ওরা যন্ত্রণায় চিত্কার করে উঠবে৷

কেন দু'জনেরই এরকম মনে হয়, কেজানে! কিন্তু মনে হয়, তাই আমরা কিচ্ছু বলিনা কাউকে৷ নিজেরা নিজেরা শুধু আলোচনা করি, কিন্তু কোথাওই পৌঁছতে পারিনা সেই আলোচনা থেকে৷ অচেনা অরণ্যে বালুতটে অবোধ মানবমানবীর মতন ঘুরে বেড়াচ্ছি যেন, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না কি আছে ঐ তরঙ্গায়িত অসীম নীলের ঐপারে?

একদিন আমাদের চিঠি এলো দেশ থেকে, ডাকজাহাজ মাসে একবার আসে, হিসেব করে ছুটির দিনের দুপুর নাগাদ এসে ঘাটে ভেড়ে, উত্সুক লোকেরা ভীড় করে থাকে জাহাজঘাটায় সেদিন, আমরাও যাই৷ সেদিনও গেছিলাম যেমন গত ছ'মাসে ছয়বার গেছি৷ প্রথম মাসে আমাদের দু'জনেরই চিঠি ছিলো, আরেনুশের এক বন্ধুর আর আমার আপনজনেদের হাতের লেখা চিঠি৷ আমরা খামের উপরে অনেক করে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে না খুলে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম, ঘরে এনে সারা দিন ঐ চিঠিতেই বুঁদ ছিলাম দু'জনেই, খাওয়ানাওয়া সব ভুলে৷ রাত্রেই উত্তর লিখে পরদিন ফিরতি ডাকজাহাজে দিয়েছিলাম৷ তারপরে গত পাঁচমাস আর চিঠিপত্র ছিলো না৷ প্রত্যেকবার এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতাম, আজকে দুজনেই অবাক চিঠির মোটা মোটা দু'খানা খাম পেয়ে৷

খামে প্রেরকের নামসাকিন কিচ্ছু নেই, আমরা ঐ তাড়া তাড়া কাগজের লেখায় খুঁজি, আরো আরো অবাক হয়ে যাই৷ অচেনা লিপিতে ক্ষুদে ক্ষুদে করে বহু বহু কিছু লেখা, কোথাও রেখাচিত্র ও আছে, কিন্তু বিন্দুবিসর্গ কিছুই আমাদের বোধগম্য হয় না৷ সম্পূর্ন অচেনা ভাষা, এমনকি রেখাচিত্রগুলোও অদ্ভুত৷ আমি তো আমি, বহুকাল ধরে বিমূর্ত শিল্প নিয়ে নাড়াচাড়া করা আরেনুশও কিছুই বুঝতে পারে না৷ তাইলে কি অন্যের চিঠি ভুল করে আমাদের হাতে এলো?

না, তাও তো না, এই তো খামের উপরে জ্বলজ্বলানো বড়ো বড়ো করে লেখা আমাদের দুজনের নাম ঠিকানা! দুই ভাষায়, একটা সাংগ্রিলার ভাষায়, একটা আমাদের মাতৃভাষায়৷ তাইলে এইরকম অদ্ভুত সব লেখা কেন? এই দু'খানা ধাতব বস্তুই বা কেন? কেউ কি প্র্যাকটিকাল জোক করলো আমাদের সঙ্গে? একেবারে অসম্ভব যে তাও না, কিন্তু খুবই কম সম্ভব৷ কার কি লাভ এই এই এত দূরে এত খরচ করে রসিকতা করার? সেরকম কোনো বন্ধু বা আত্মীয়, উহুঁ, মনে তো পড়ে না!

ঘরে এনে ভালো করে দেখার জন্য কাগজের তাড়া সব খাম থেকে বার করে ঝাড়া দিই। ঠং করে আমার খামের ভিতরের একতাড়া কাগজের ভাঁজের ভিতর থেকে গড়িয়ে পড়ে একখানা সোনালী রংএর ধাতব রিঙ আর আরেনুশের কাগজের তাড়া থেকে একখানি ত্রিভূজাকার রুপালী ধাতবপাত৷ অত্যন্ত অবাক হয়ে যাই আমরা দু'জন, এরকম জিনিস আগে কোথাও দেখেছি কি? কে আমাদের এগুলো পাঠালো? কী এগুলো? কেনই বা আমাদের পাঠালো?

ডানহাতের তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠে সাবধানে তুলে নিই রিঙখানা, মসৃণ সুন্দর সোনালী রঙের বালা-শিশুদের হাতের গোল সোনার বালার মতন৷ শুধু অসাধারণ মসৃণ, আলোর কাছে তুলে ঘোরালাম, রঙের ছটা ছিটকে উঠলো ওর ধাতব গা থেকে৷ কোথাও কোনো নকশা নেই, একদম নিটোল৷ এবারে বাঁহাতের করতল প্রসারিত করে তাতে রাখলাম রিঙটা, চেয়ে রইলাম ওটার দিকে৷ কে এ জিনিস পাঠালো?

কষ্ঠিপাথরে ঘষা দিয়ে দেখবো সোনা কিনা? কিন্তু সোনার হলেই বা কি, না হলেই বা কি? নতুন সংস্কৃতিতে সোনা এখন আর জরুরী বা দামী জিনিস কিছু নয়, আর পাঁচটা ধাতুর মতন সাধারণ৷ আরেনুশও রুপোলী ত্রিভুজটা নিয়ে আমার মতনই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ দেখে তারপরে হাতে রেখেছে৷ ওর ত্রিভুজটা ভরাট, আমার রিংটা যেমন শুধু একটা বৃত্ত, ওরটা তা নয়, সলিড একটি ত্রিভুজাকার পাত৷ কোনো নকশা নেই ত্রিভূজটায়, তিনখানা শীর্ষবিন্দু খুব সূক্ষ্ম৷

অনেকক্ষণ জিনিসদুটো দুজনে মিলে দেখতে থাকি, কোনো রহস্যভেদ হয় না৷ বেলা বেড়ে উঠতে থাকে, আমরা দুজনে যুক্তি সাজাতে চেষ্টা করি এর পিছনে কি আছে সেই নিয়ে, আমাদের কল্পনা বারে বারে সেই পরিবর্তনশীল রহস্যময় ঘরখানির সঙ্গে এটাকে মেলাতে চায়, হয়তো ওরাই এদুটো পাঠিয়েছে আমাদের কাছে৷

জল্পনা কল্পনা অনেক করে শেষে তাড়া তাড়া দুর্বোধ্য কাগজপত্র আর ধাতব ত্রিভূজ আর বালা রেখে যেই আমরা উঠতে যাবো, অমনি ত্রিভুজটা শব্দ করে ওঠে, বালাটাও৷ ত্রিভুজের এক শীর্ষবিন্দু একটু লেগেছিলো রিঙটার উপরে, মৃদু ধাতব শীষধ্বনির মতন শব্দ করতে করতে ত্রিভূজ গড়িয়ে ঢুকে পড়তে থাকে বালার মধ্যে, একসময় ফিট করে যায়৷ এখন একটি ত্রিভূজ আর তার তিন শীর্ষবিন্দু ছুঁয়ে টাইট হয়ে আটকানো রিঙ৷ ঘরের আলো হঠাৎ অন্যরকম হয়ে গেছে, আমরা পরস্পরের হাত চেপে ধরে উত্তেজনায় নি:শ্বাস ফেলতে ভুলে গেছি৷ এসব কি হচ্ছে এখানে?

অকস্মাৎ রিঙবদ্ধ ত্রিভূজ লাফিয়ে ওঠে শূন্যে, ঝকমকে জোরালো আলো বেরিয়ে আসে ওদের গা থেকে, ওরা ঘুরপাক খেতে থাকে ঘরের বাতাসে, মৃদু পিঁ পিঁ পিঁ শব্দ হতে থাকে৷ তাড়া তাড়া চিঠির কাগজের মধ্যে ঝড়ের ঘূর্ণী লাগে যেন, রিংবদ্ধ ত্রিভূজ ওগুলোর উপরে এসে আলো ফেলে, ঝড়ের মতন হাওয়া কাগজগুলো ওলোটপালোট করে, কিন্তু অন্য কোথাও হাওয়া নেই৷

আমি আরেনুশের হাত ধরে আছি,আমাদের দু'জনের হাতই কাঁপছে, বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখ মেলে চেয়ে আছি কাগজ আর ত্রিভূজ-রিঙ এর কান্ডকারখানার দিকে৷একবার ঢোঁক গিললাম, গলার মধ্যেটা বালি বালি লাগছে, ভীষণ তৃষ্ণা, অথচ জল খেতে যাওয়া অসম্ভব৷ কি মনে করে একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, এখন ভরা দিনের আলো থাকার কথা, তপতপে দুপুর এখন৷ অথচ বাইরেটা অদ্ভুত বেগুনী আর কমলা রঙে ভরে আছে, গাছের মাথাটাথা কিছুই দেখতে পেলাম না, আমরা কোথায়? এখনো নিজেদের ঘরেই আছি, কিন্তু তীব্র কোনো তরঙ্গ আমাদের ঘরখানি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে বাইরের জগৎ থেকে৷ জানালার বাইরে উজল বেগুনীনীলকমলা আলো ঝলকে ওঠে, আমি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিই৷

একখানি চিঠির কাগজ তাড়া থেকে আলাদা হয়ে এসে স্থির হয়ে দাঁড়ায় বাতাসে, ত্রিভুজ-রিঙের অদ্ভুত আলো ওর ছায়া ফেলে দেয়ালে, অমনি ঐ অদ্ভুত চিত্রলিপির মাঝ থেকে ত্রিমাত্রিক চলছবি বেরিয়ে দেয়ালে অভিনীত হতে থাকে৷ সেই গল্পের মধ্য থেকে আমাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ আসে, বুঝতে অসুবিধা হয় না, কারণ কোনো ভাষা বা কথা ছিলো না,অন্য কোনো উপায়ে মন থেকে মনে সরাসরি সংযোগ সাধন করছিলো নির্দেশগুলো৷

অভিভূত হয়ে আমরা আমাদের শ্রবণাতীত শ্রবণযন্ত্রে শুনতে থাকি এক অদ্ভুত ইতিহাস-আমাদের পৃথিবীর ইতিহাস, যার সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে গ্রহান্তরের পরাক্রান্ত দুই প্রতিদ্বন্দী সভ্যতা৷ আমাদের যে ইতিহাস ও ঘটনাবলী সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ জানা নেই, কেউ কেউ কোথাও কোথাও তাঁদের সূক্ষ্ম সংবেদনশীল মনের মধ্যে কিছুমাত্র টের পেলেও অন্যেরা কিছুতেই তা গ্রহণ করেনি, অথবা প্রমাণহীন বিশ্বাসমাত্রের ঠান্ডা ঘরে ঠেলে দিয়েছে৷

আজকে এই কমলা বেগুনী অজানা তরঙ্গের জালে আমাদের ঘরখানিকে পার্শ্বজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ঐ গভীর মহাকাশের অচেনা গ্রহের সভ্যতার স্বর আমাদের বলে যেতে থাকে ঘটনাবলী৷ আস্তে আস্তে আমাদের দমবন্ধ অস্বস্তি আর তৃষ্ণায় বালিবালি হয়ে আসা গলা শান্ত হয়ে আসে, কোমল শান্তি এসে আমাদের ভিজিয়ে দেয় গ্রীষ্মপারের প্রথম বৃষ্টির মতন৷ শান্ত হয়ে আমরা শুনতে থাকি৷

(প্রথম খন্ড সমাপ্ত)


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এতোদিন পরে পুরাতন গল্পের নতুন পর্ব দিলে পাঠকের খেই ফিরে পেতে অসুবিধা হয় না?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তুলিরেখা এর ছবি

খেই ফিরে অসুবিধা? তা তো কিছুটা হয়ই। তাই তো আগের আগের পর্বের লিংকগুলো দিয়ে দিয়েছি।
তবে মনে হয় ব্লগে লোকজন উপন্যাস বা বড় গল্প বা এইধরনের লেখা বিশেষ পছন্দ করেন না। কমেন্ট ও করেন না।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

শেষ হলে পড়বো। এইটা ভালো কথা না, কিন্তু কী আর করি, আমার মগজের ধারণশক্তি বড়োই কম। মন খারাপ

তুলিরেখা এর ছবি

শেষ কবে হবে কে বা বলতে পারে! আপনি বরং পড়তে শুরু করে দিন। হাসি
ধরুন কিছু গঠনমূলক কমেন্ট দিলেন, কোথাও খটকা কি গন্ডগোল লাগছে কিনা বললেন, কিছু অনুমান দিলেন কী হবে সেই নিয়ে---সেই হিসাবে আমিও সংশোধনের উপায় পেলাম, এ উপকারের তো কোনো তুলনা নেই!
ভালো আছেন আশা করি। মেইল দেখেন না বুঝি?
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্নিগ্ধা এর ছবি

প্রিয় তুলিরেখা,

ওপরে মূলত পাঠকের উদ্দেশে লেখা আপনার মন্তব্য দেখে 'উব্‌গার' করার একটা শখ হলো দেঁতো হাসি সত্যি বলতে কি, আপনার অনেক লেখায় লিখবো, লিখবো করেও মন্তব্য করা হয় না দেখে ভাবলাম এই সুযোগে কয়েকটা কথা বলেই ফেলি। আমার আবার মনের কথা বেশিদিন চেপে রাখলে ওজন দেখেছি জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে, নাহলে সপ্তাহে পাউন্ড পাঁচেক বাড়ার একটা গাণিতিক হারে আটকে টাটকে রাখতে পারি মন খারাপ তবে, এই কথাগুলো ইন জেনারেল আপনার লেখা নিয়ে আমার কিছু মতামত - খুব বেশি পাত্তা দেবেন না যেন!

আমাদের প্রত্যেকেরই লেখার একটা আলাদা ধরন আছে, বা বলা ভালো লেখার একটা 'টোন' আছে। কারুর কারুর ক্ষেত্রে সেটা কিছুটা প্রচ্ছন্ন - অনেকটা আবহ সঙ্গীতের মতো, আছে সেটা জানি কিন্তু ঠিক সচেতন ভাবে না শুনলে শোনা হয় না। কারুর কারুর ক্ষেত্রে সেটা একটা ডিসটিঙ্কট টিউনের মতো কানে আসে, এবং মনে রয়ে যায়। আপনার লেখার ধরনও তাই। তাই বলে কিন্তু মোটেই ভাববেন না আপনার লেখাকে উচ্চকিত বলছি, সেটা কিন্তু একেবারেই নয় (ওটা আমার সমস্যা, জানি!)। বরং আপনার লেখার ধরন - যেটা ইতোমধ্যেই অনেকে বলেছেন - 'মায়াময়', 'স্বপ্ন স্বপ্ন', পুরোটা জুড়ে খুব নরম একটা ভাব থাকে। কিন্ত, থাকে। সুরটা লাউড নয়, কিন্তু এই থাকাটা খুব শক্তিশালী। অর্থাৎ তুলিরেখার লেখার সুন্দর একটা স্টাইল আছে, এবং সেটা জানান দেয়।

যে কোন লিখিয়ের জন্য এটা একটা ঈর্ষণীয় অর্জন। কিন্তু, জানেনই তো ভালো কখনও নিখাদ হয় না? আপনি যেহেতু বিভিন্ন রকমের এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখেন, পাঠক হিসেবে তখন আমার কখনও কখনও লেখার স্টাইলটাও বিষয়ের সাথে সাথে একটু অন্যরকম হোক, এরকম একটা আবদার করতে ইচ্ছে হয়। যেমন ধরুন, আপনার কবিতায় বা কাব্যগদ্যে যে রোমান্টিকতা বা ঐ স্বপ্ন স্বপ্ন ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লাগে, আপনার বৈজ্ঞানিক কল্পগল্পে আরেকটু অ-আবেগী (তাই বলে নিরাবেগ নয়) এপ্রোচ থাকলে 'জমতো ভালো' - এরকম মনে হয়। হয়তো সেটা অসম্ভব একটা কাজ, আমি জানি না। নিজে লেখক হলে হয়তো বুঝতাম, এখন শুধুই পাঠকের অবস্থান থেকে অন্যায় আশা করছি। লেখাগুলো যেহেতু শেষ পর্যন্ত তুলিরেখাই লিখছেন, অতএব হয়তো সেগুলোর 'তুলিরেখার লেখা' হিসেবে পরিচিত না হওয়া সম্ভব নয়। কবিতায় তুলিরেখা, আবার গল্পে গিয়ে কলমরেখা - এটা বোধহয় করাও যায় না, না?

আরেকটা কথা - ধারাবাহিক এমনিতেই একটু রিস্কি। পত্রিকায় তাও সময়ের ব্যবধানটা নির্দিষ্ট থাকে। ব্লগে যেহেতু লেখক তার সময় কিংবা ইচ্ছে অনুযায়ী পর্বগুলো দিতে থাকেন, অনেক সময়ই দেখা যায় মধ্যেকার গ্যাপগুলো খুব অনিয়মিত হয়ে যায়। পাঠক তদ্দিনে হয়তো ধৈর্য্য হারিয়ে টারিয়ে ওটা আর পড়লোই না। খুব বড় গল্প না হলে একবারে দিলে কেমন হয়? কীরকম দৈর্ঘ্যের গল্প লোকে অধৈর্য্য না হয়ে পড়ে, সেটা এখানকার গল্পগুলো একটু ঘেঁটেটেটে দেখলেই মনে হয় কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে।

আমি যে কথা বেশি বলি, এবং নিজের লেখা লবডঙ্কা হলেও অন্যের লেখায় মাতব্বরির ক্ষেত্রে আমি অদম্য - এগুলো তো জানেনই মন খারাপ তারপরও এত্তোসব আজাইরা প্যাচাল পড়ে টড়ে মেজাজ খারাপ হলে, ইয়ে - ইট্টুস মাফ টাফ করে দিয়েন আর কি! ভালো থাকবেন, আর অনেক লিখবেন হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ স্নিগ্ধাজী। মেজাজ খারাপের তো প্রশ্নই আসে না, এইধরনের কমেন্ট যেকোনো লেখকের কাছে খুবই কাম্য।
আসলে নেটের এখানে ওখানে লেখালিখি করতে করতেই পথের প্রান্তে এই সচল তীর্থে আসা আমার। এই জায়গাটুকুকে এত ভালোবেসে ফেলেছি যে এখানকার মানুষদের সঙ্গে একটা আত্মীয়তাভাব হয় কখনো না দেখা হওয়া সত্ত্বেও।
হাবিজাবি লেখালিখিই আগে করতাম, নানাধরনের লেখাগুলো যাতে নানাধরনের থাকে তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে পর্যন্ত আগে অন্যজায়গাগুলোতে লিখতাম। কিন্তু দেখলাম, একসময়ে কেমন যেন একটা "ধরন" তৈরী হয়ে গেছে, সব লেখাতেই যেটা চেনা যাচ্ছে। লেখার এই "ত্রুটী" বিষয়ে আমিও এখন বুঝতে পারি, বুঝতে পারি পাঠকের কাছে একঘেয়ে হয়ে যায়। কিন্তু চেষ্টা করলেও কেন জানি বদলায় না। হয়তো অচেনা অতিথি হিসাবে এসে হুলিয়ে কারু সঙ্গে তর্ক করলে তখন লেখাগুলো অন্যরকম হবে, যেভাবে কথা বলি বা ঝগড়া করি সেরকম হবে, কিন্তু "গোছানো" একটা কাহিনিতে সেটা হয় না। একটা উপায় আছে লেখার ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেওয়া, অনেক দিন পর পর দেখলে হয়তো পাঠকের একঘেয়ে লাগবে না।
তবে সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয় সচলে বড় গল্প বা উপন্যাস এ কমেন্ট কম আসে। এটা অন্য কিছু কিছু লেখকদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। হতে পারে আমার পর্যবেক্ষণ ভুল, বা হয়তো একটু মজাদার একটু দ্রুতগতি একটু চুটকি ধরনের লেখাই আসলে ব্লগীয় মেজাজের সঙ্গে খাপ খায়। এগুলো সবই ব্যক্তিগত দেখা, ভুল থাকতেই পারে।

ভালো থাকবেন। আবারও ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

বইখাতা,
আপনারই তো দেখা পাই না!!!!!
চিন্তিত
আপনিই তো বললেন সাংগ্রিলার পরের পর্ব দিতে, কিন্তু ....
চিন্তিত
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

বইখাতা এর ছবি

যাক্ আরো একটা পর্ব তো পড়া গেল ! আর কি লিখবেন না ! কী বলবো ! আমারও কিঞ্চিৎ মন খারাপ। মন খারাপ

তুলিরেখা এর ছবি

আসলে এখানেই থেমে যাওয়া যায়।
ভালো থাকবেন। গল্পটা সব মিলিয়ে কেমন লাগলো বিশ্লেষণ করে তো বললেন না!

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

বইখাতা এর ছবি

সব মিলিয়ে গল্পটা ভালো লেগেছে - অনেক ভালো লেগেছে। নাহলে কী আর আবারো লেখার জন্য অনুরোধ করতাম ! হাসি এই গল্পের গতি স্লথ, কল্পবিজ্ঞানের গল্পে যেমন গতি থাকে সাধারণত, তেমন গতি ছিলনা। তবে গল্পের চরিত্রগুলির আর আবহের সাথে এই স্লথ গতি মানানসই ছিল - এমনটাই মনে হয়েছে। এই লেখাকে অনেকটা উপন্যাস ধাঁচের মনে হয়েছে আমার। লেখাটা একবারে একটা বই আকারে পড়তে পারলে পাঠকের মনোযোগ আর আগ্রহ বেশি ধরে রাখতে পারতো বলে মনে হয়। পড়ে আনন্দও পাওয়া যেতো বেশি।
তবে আমার নিজের কিন্তু এই লেখাটা আপনার অন্য অনেক লেখার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।

তুলিরেখা এর ছবি

আপনার ভালোলাগার কথা শুনে মনে হলো যাক, লেখাটা একেবারে বিফলে যায় নি। অন্তত একজনের কাছে হলেও পৌঁছেছে। ধন্যবাদ।
আসলে এটা ঠিক কনভেনশনাল কল্পবিজ্ঞান না, এটা বরং অনেকটা ফ্যানটাসির মতন, কল্পজগৎ।
ভেবে দেখলাম খানিকটা উপন্যাসের মতনই। আর আপনিই ঠিক, পাঠকের আগ্রহ থাকতো একবারে পড়তে পারলে। সেই হিসাবে বইয়ের তুলনা নেই। কিন্তু প্রিন্টেড বই বার করা আমার মতো লোকের কম্ম না। এক যদি কোনো প্রভাবশালী পাবলিশার রাজী হতেন নাহয় যদি প্রকাশায়তন রাজী হতো। তাহলেও, এ বই ক'জনই বা নিতে রাজী হতো(সচলদের বা সচল যারা চেনেন তাদের বাইরে যারা তাদের কথা বলছি)?
আপনার মতামতের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।