অদৃশ্য জগৎ (২)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ১৮/০২/২০১১ - ৯:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেই যে নিউট্রিনোদের কথা বলছিলাম ওরা "দেবে না ধরা অধরা ছায়া" টাইপের কণা। এরা শুধু মৃদুক্রিয়ার আওতায় আসে (আর অবশ্যই মহাকর্ষের আওতায়, কে তারে এড়াবে? ), আর অন্য কোনো ক্রিয়ায় সাড়া দেয় না। তাই এদের ল্যাবে সনাক্ত করা  খুব কঠিন ব্যাপার। অনেক কষ্টে খুব ভালো ডিটেকটর আর রিয়্যাকটর থেকে বেশ মোটা ধারায় বেরোনো নিউট্রিনো-বীম ( ভরবেগ আর শক্তির নিত্যতার আঁক কষে জানা গেছিলো ওরা আছে, সনাক্ত হয় নি তখনো ) ব্যবহার করে খুব চালাক বিজ্ঞানীরা এদের ধরতে পেরেছিলেন (ব্যস, ওদের তাতেই কম্ম সারা হয়ে গেল, নোবেল ঠেকায় কে? ও বেলতলায় গেলে ন্যাড়া হতেই হবে। :-)।

প্রতিদিনের জীবনে এই নিউট্রিনোরা সম্পূর্ণ অদৃশ্য ও অননুভবনীয়। প্রতি সেকেন্ডে কয়েক কোটি নিউট্রিনো আমাদের দেহ ভেদ করে চলে যায় কোনোরকম চিহ্ন না রেখে। এরা তড়িচ্চুম্বকীয় বা তীব্র ক্রিয়ার কিছুই জানে না, এইসব ক্রিয়ারা এদের সাথে কোনো লেনদেন ঘটাতে পারে না। জলের ভিতরে গিয়েও হাঁসের গায়ে যেমন জল লাগে না, এই এরাও তেমনি।

এইসব ধরণের কণা যারা শুধু মৃদুক্রিয়ার সাড়া দেয় তাদের বলে WIMP, উইকলি ইনটারঅ্যাকটিং ম্যাসিভ পার্টিকল। নিউট্রিনোদের খুব অল্প ভর আছে। কিন্তু নিউট্রিনো ছাড়াও আরো অনেক WIMP আছে বলে ধারনা করা হয়, হয়তো এদের ভর দস্তুরমতন বেশী! তাহলে???? এরা কি সব মিলেজুলে মহাবিশ্বের অদৃশ্য বস্তু হতে পারে না? 

পারে বটে এরা ডার্ক ম্যাটার হতে। তবে আগে দেখতে হবে এরা মোট কত? মহাবিস্ফোরণে অন্য সব কণাদের মতই নিশ্চয় WIMP ও তৈরী হয়েছিলো বিস্তর। আর সেই ছোটোবেলাকার মহাবিশ্বের উচ্চশক্তি পরিবেশে আর পাঁচটা কণার মতন এরাও নিশ্চয় ধাক্কাধাক্কি করছিলো ক্রমাগত। কারণ তখন বস্তু আর বিকিরণের ঘনত্ব খুব বেশী, কাউকে এড়ানোর উপায় নেই কারুর। তখন তাপমাত্রা খুব বেশী। বিকিরণ থেকে বস্তুকণাদের কণা-প্রতিকণা জোড়া তৈরী হচ্ছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে বিকিরণে। গতিশীল সাম্য বজায় থাকছে।

ক্রমে মহাবিশ্ব যত প্রসারিত হতে থাকলো তত ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। তাপমাত্রা যখন একটা নির্দিষ্ট মানের নিচে নামলো, যেটা কিনা থ্রেশোল্ড তাপমাত্রা এই WIMP দের, তখনই নতুন WIMP তৈরী হওয়া বন্ধ হলো, যা রয়ে গেল সেটাই এদের স্থিরমান হয়ে গেল। কণিকা ঘনত্ব অনেক কমে গেছে বলে আর এরা কোনো ধাক্কাধাক্কির মধ্যেও পড়লো না। তাই এদের আর কোনো অংশই হারালো না বিকিরণে, বা পরিবর্তিতও হলো না অন্য কণিকারূপে।

এই WIMP দের প্রত্যাশিত ভর আর মিথস্ক্রিয়ার তীব্রতা জানা থাকলে বিজ্ঞানীরা আঁক কষে বার করতে পারেন কতগুলো WIMP সারভাইভ করবে। আশ্চর্য কাকতালীয় ব্যাপার হলো এই WIMP সংখ্যা যা কিনা কণা-পদার্থবিদেরা বার করেছেন তা ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণের সাথে মিলে যায়। একে বলে WIMP সমাপতন।

WIMP রা প্রায়-নিষ্ক্রিয়। প্রতি মিনিটে বহু হাজার কোটি WIMP যায় আমাদের দেহ ভেদ করে, সামান্যতম প্রতিক্রিয়া নেই তার.এই প্রায়-নিষ্ক্রিয় কণাদের সনাক্ত করতে বিশাল পরিমাণ বিশুদ্ধ তরল বিশাল বিশাল ট্যাঙ্কে ভরে রাখা হয়, প্রচুর ডিটেকটর রাখা হয় চারপাশে গুছিয়ে। যাতে বিলিয়ন বিলিয়ন লাজুক কণার মধ্যে কোনো একটা WIMP যদি কোনো মিথষ্ক্রিয়া ঘটায়, তাহলে এই ধুরন্ধর ডিটেকটররা তা ধরতে পারবে। আরেকটা উপায় হলো জ্যোতির্বিদেরা দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আগত কোনো WIMP এর সংঘর্ষ যদি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

তিন নম্বর উপায় ও একটা আছে। পরের পর্বে সেটা নিয়ে কথা হবে।

ছবি: আন্তর্জাল সৌজন্যে
তথ্যসূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান নভেম্বর ২০১০

ছবি: 
22/09/2008 - 1:13am

মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পড়তে খুব ভালো লাগছে।
ছোটবেলায় রহস্য পত্রিকার ফিচার পড়ার মত মজা পেলাম অনেকদিন পর।
চলুক

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ সবুজ পাহাড়ের রাজা।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ে খুব ভাল লেগেছে... আমার cosmology তে পড়ার অনেক ইচ্ছা ছিল... মহাবিশ্বের গঠন ও কণাদের চরিত্র নিয়ে জানার আগ্রহ এখনও প্রচুর। কিন্তু বাংলাদেশে এই সাবজেক্টটা নাই... আর পড়তে হলেও পদার্থবিদ্যায় পড়ে তারপর বাইরে গিয়ে পড়তে হবে (আমি যতদূর জানি)। আর হয়ে উঠল না... এজন্য এ সম্পর্কিত যাই পাই তাই গোগ্রাসে গিলতে থাকি...

এমন লেখা আরও দেখব আশা করি... হাসি

হিমাগ্নি

তুলিরেখা এর ছবি

হিমাগ্নি,
ভালো লাগলো আপনার কসমোলজিতে আগ্রহ শুনে। এত তাড়াতাড়ি আশা ছেড়ে দেবেন না, আগ্রহ করে লেগে থাকুন। গণিত আর পদার্থবিদ্যা হলো মূল ব্যাপার, এই দু'খান যদি ভালো করে হাতে আনতে পারেন নীরস খোলস ছাড়িয়ে, ব্যস, কাফি। হাসি তবে কিনা ব্যাপার বেশ কঠিন। কিন্তু জীবনে কোন জিনিসটা কম কঠিন বলুন তো! আর ভবিষ্যতের কথা তো কেউ জানে না, তখন আপনার আগ্রহের বিষয়ে সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ রোমেল।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ফাহিম হাসান এর ছবি

চমৎকার। কিন্তু লেখা এত ছোট কেন?

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম।
টুকরো টুকরো করে তুলে দিচ্ছি লেখা, যাতে পাঠকেরা বোরড না হন। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ওডিন এর ছবি

ভালো লাগছে হাসি

বেশি না হলেও আরেকটু বড় করে দ্যান।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ ওডিন। দেখি আবার কবে লিখে উঠতে পারি পরের কিস্তি।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌস্তুভ এর ছবি

কিছুদিন যখন অ্যাবসেন্ট ছিলাম তখন এই ক্লাসটা মিস করেছি। এখন প্রক্সি দিয়ে গেলুম। কিন্তু পরের পর্ব কুথা?

কৌস্তুভ এর ছবি

আমার এমআইটি'বাসী এক দোস্ত তার প্রফেসরের ল্যাব ঘুরে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি নাকি ২০০১'এ বোস-আইনস্টাইন কন্ডেন্সেট তৈরী করার জন্য ইয়েসবেল পেয়েছিলেন। তারা এখন শুনলাম দুনিয়ার শীতলতম তাপমাত্রায় পৌঁছনোর রেকর্ড করেছে, পাঁচশো পিকো'কেলভিন না কত জানি। ল্যাবের গাব্দাগোব্দা জিনিসপত্রের ছবি দেখে তো ভয়ে আছি। আমি আবার বোসের দেশোয়ালী বলে সে উৎসাহিত, কিছু জিজ্ঞেসপত্রও করে ফেলতে পারে। এখন আপনার কাছে দাবী, বস্তুটি নিয়ে একটা টেকি পোস্ট দিন শিগগির, যাতে একটু শিখেপড়ে ওখানে যেতে পারি, আর কিছু ভাল ভাল প্রশ্নটশ্ন বলুন যেগুলো জিজ্ঞেস করে খানিক ভাব নিতে পারি।

অপছন্দনীয় এর ছবি

দিব্যি গাব্দাগোব্দা...আপনি তো শুকনো মানুষ, মানিয়ে যাবে।

তুলিরেখা এর ছবি

ওরে বাবা, এ যে আলিবাবার গুহা! কী ল্যাব! হাসি
প্রফেসরটিকে দিব্যি দেখতে, কেমন হাসিখুশী! আপনার দোস্তোও বেশ হাসিখুশী। এই দোস্তো (এ কি জাপানি না চীনা? ) আর এই হাসিখুশী হালকাপাতলা কীটার্লে কে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ফোটো তুলবেন শুরুতেই। হাসি
খুব সাবধান, গম্ভীর হবেন না, ভারতীয় যেসব বিজ্ঞানী আর গণিতজ্ঞকে দেখি, সবাই তেঁতুল খাওয়া মুখ করে থাকে, কোনো হাসি নেই। এরকম হবেন না, তাহলে ওনারা বুঝবেন যে এরাও হাসিখুশী।
আপনাকে ওরা টেকনিকাল কিছু জিগাবে না, আপনাকে জিগাবে স্ট্যাটিসটিক্স, তাতে তো আপনার স্কিল সর্বজনবিদিত।
আমি আবার বোশ-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স বলতাম বলে আমেরিকান বন্ধুরা হাসতে হাসতে বলতো- তাহলে তো হওয়া উচিত, বোশ-আইনশটাইন শ্ট্যাটিশটিকশ। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌস্তুভ এর ছবি

এইরকম বলে এড়িয়ে গেলে চলবেনা, পোস্ট দিতেই হবে, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

কেন, সেদিনই তো আমায় জিজ্ঞেস করছিল, বোসের কাজ নিয়ে ভারতের লোকজন কী করছে, বিইসি আবিষ্কার হবার পর ভারতীয় বিজ্ঞানীরা কেমন খুশি হয়েছিলেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর হ্যাঁ, পোলা চৈনিক। অতএব আমার শুধু চৈনিক বালিকা নয় বালকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব আছে। হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

আহা চৈনিক বালক! হাসি
ভিজিট করলেন প্রফেসরের ল্যাব? কী কী দেখলেন শুনলেন জানলেন সেই নিয়ে একটা পোস্ট দ্যান না!

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।