তাহাদের কথা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১১/০৭/২০১২ - ৩:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশ কিছুদিন হলো সচলে কোন লেখা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অনেকে অনুযোগও করেছেন। মনটাও চাইছে কিছু একটা লিখতে। যখনই ল্যাপটপ নিয়ে বসছি শরীরটা বাগড়া দিচ্ছে, সাথে মস্তিষ্কও। শরীরের আর দোষ কি, বয়সতো কম হলোনা।

বলছিলাম, লেখার বিষয়ে শরীর-মন-মস্তিষ্ক, একসাথে সায় দিচ্ছেনা। লিখতে বসলেই মাথাটা কেমন ফাঁকা মনে হচ্ছে। ভাবলেশ হীন চেয়ে আছি টিভির পর্দায়। বুঝতে পারছি, মাথা খাটিয়ে আপাতত কিছু লেখা সম্ভব হবেনা। তাই চোখের সামনে যা ঘটতে দেখেছি, সোজা-সাপটা বয়ান করছি।

সেদিন রাতে আমাদের বাসার দুই মহিলা গৃহকর্মী নিলু ও জেসি [img]DSCN0701[/img]

আমার স্ত্রীর সাথে শোবার ঘরে টিভি দেখছে। হ্যাঁ, অবশ্যই ভারতীয় চ্যানেল। কি যেন একটা সিরিয়াল চলছিল। মধ্যরাত পর্যন্ত ওরা পর্যায়ক্রমে সিরিয়ালগুলো দ্যাখে।

সম্ভবত একটা সিরিয়াল শেষ হবার পর কেন জানি একজন বলে উঠলো, আজতো শুক্রবার, ঐ সিরিয়ালটা ........। অপরজন বললো, না আজ শনিবার। দুজনে মৃদু তর্ক চলাকালিন আমার স্ত্রী, ভুল শুধরে দিয়ে বললো, আজ রবিবার। 'আজ রবিবার ?' আপনি যে অফিসে যাননি, ওদের একজন জানতে চাইলো। উত্তরে আমার স্ত্রী জানালো, 'আজ ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি'। অপর জনের মন্তব্য, 'শুক্র হোক, শনি হোক আর ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটিই হোক আমাদের কি, রান্নাঘরেরতো আর অফিসের মতো ছুটি নেই। তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা ঠিক মতই করতে হবে। তাছাড়া কাপড়কাঁচা, মাসনমাজা, ঘরঝাড়ু দেওয়া এগুলোও বন্ধ থাকেনা।'

ওদের কথা শুনে আমার সামনে নতুন একটা দিক উন্মোচিত হলো। তাইতো, এমন করেতো কখনও ভেবে দেখিনি।

মাঝরাতে শুয়ে খুব সকালেই আবার ওদের উঠতে হয়। বাসি ঘর ঝাড়ু দিয়ে তারপর ওরা প্রাতকৃত্য সারে।

শুরু হয় সকালের নাশতা বানাবার পালা। ছুটির দিনে যদিওবা আমরা একটু দেরি করেই বিছানা ছাড়ি, ওদের কিন্তু সকাল সকালই উঠতে হয়। ছুটির দিনে নাশতাও স্পেশাল কিছু। খিচুড়ি, ডিমভুনা, আলুভাজি, বেগুনভাজি সাথে চাটনী অথবা পরোটা, আলুর দম, ডিমভাজি, ভুনামাংস, সবজি সাথে সুজির হালুয়া, এই ধরনেরই কিছু আরকি।

বিছানায় শুয়ে থেকেই খবর নিই, 'নাশতার কতদূর?' ওরা জানায়, 'এই হলো বলে।'

ধীরে সুস্থে উঠে বাথরুম সারি। তারপর আয়েশ করে নাশতা খাওয়া।

কোন কোন ছুটির দিনে গিন্নী নাশতার পরে বেরিয়ে পড়ে নিজের অথবা সংসারের টুকিটাকি জিনিস কেনার জন্য। আর আমি হয়তো ডিভিডিতে পছন্দের কোন সিনেমা দেখার ব্যবস্থায় ব্যস্ত, অথবা টেলিফোনে কোন বন্ধুর সাথে, কেমন আছ, ভাল আছি, বাজারঘাটের যা অবস্থা অথবা পদ্মাসেতু নিয়ে হাবিজাবি কিছু । নয়তো সচলায়তন।

ওরা তখন ব্যস্ত, থালাবাসন মাজা, কাপড়কাঁচা এসব নিয়েই। এসব সেরে আবার দুপুরের খাবারের আয়োজন করতে হবে।

আমার অশীতিপর বৃদ্ধা মা ও আমাদের সাথেই থাকেন। তাঁকে বাথরুম করানো, গোসল করানো, খাওয়ানো, এগুলোও ওরাই করে।

কোন কোন সন্ধ্যায় আমরা আত্মীয়সজনের বাড়িতে বেড়াতে যাই। কখনও সখনও বাইরে থেকে খেয়েও আসি। ওদের কিন্তু প্রতিদিনই রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা করতে হয়।

এই ই কি ওদের জীবন! ভাবছি, ওরা কি বেঁচে থাকার জন্য কোন স্বপ্ন দ্যাখে ? আদৌ ওদের কোন ভবিষ্যৎ আছে কি ?

তবে প্রতিদিন সিরিয়ালগুলো দেখার ব্যাপারে ওরা খুব সিরিয়াস। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঠিকই সিরিয়ালের সময় বের করে নেবে।

মনে হয়, শুধুমাত্র এই সিরিয়াল দেখার বিনোদনের বিনিময়েই তারা এক-একটা দিন পার করে। আমরাও ওদের সিরিয়াল দেখায় কখনও বাদ সাধি না।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

চলুক এমন দর্পণের মত আরও বড় পরিসরে লিখে যান-

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। দেশে আসছেন কবে নাগাদ ?

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম... ভালো বলেছেন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুমাদ্রী এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন কবির ভাই। ভাল একটা লেখা। ঘরের এই লোকগুলো কিন্তু আমাদের পরিবারেরও অংশ। তবে আমাদের দেশে ঘরের কাজে সাহায্যকারী হিসেবে চাকরীরত এই মানুষগুলোর সাথে আমরা বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করিনা। অনেকেই অমানবিক আচরণ করে। সন্দেহ করা তো একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বলছিনা অভাবী এই লোকগুলোর মধ্যে চৌর্য্যবৃত্তি নেই। অনেক অনেক আছে লোকদের মাঝে যেখানে দস্যুবৃত্তি আছে সেখানে এদের মাঝে হাত-টানের অভ্যাস থাকাটা অস্বাভাবিক না। তবে মনিব গোষ্ঠী মনে হয় এদের মানুষের সম্মানটা দেয়ার কথাটা প্রায় সময়ই মাথায় আনেন না।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। ঘরের এই লোকগুলো আমাদের পরিবারেরই অংশ। তারাও এটাই মনে করে।

শিশিরকণা এর ছবি

এটাই সম্ভবত বেশির ভাগ বাসার চিত্র। গৃহকর্মীদের পরিশ্রমের ঘাড়ে বসে আয়েশ করা।
কিন্তু স্মৃতি ঘেটে নিজের বাসার ছবির সাথে পুরো মিলল না। আমার মাকে প্রায় সকালেই কাজের লোক ওঠার আগেই রান্নাঘরে ঢুকতে দেখেছি, কাজের মেয়েটা হয়ত হাত মুখ ধুয়ে এসে পরে আম্মুর সঙ্গে হাত লাগাচ্ছে। সব বেলার খাবারও ওদের জন্য আলাদা করে তুলে রাখতো আম্মা যাতে কম না পড়ে। দিনে না হলেও রাতে আমরা কাজের লোকদের সাথে এক সময়েই খেতে বসতাম। কাজের লোক থাকলেও বিছানা তোলা, নিজেদের ঘর গুছিয়ে, ধুলো ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করা এইসব কাজ গুলা আম্মা আমাদের দিয়েই করিয়েছে, অনেক সময় কাজের মেয়েটার সাথে মিলে মিশেই করেছি। কিছু করতে হলে তাদেরকে অনুরোধ করেছি কাজটা করে দিতে, হুকুম কিভাবে করতে হয় শেখা হয়নি। অন্যবাড়ির চিত্রের সাথে তুলনা করে এখন বুঝতে পারছি, যে আম্মা ভালো কিছু শিক্ষা দিয়েছে আমাদের।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

বন্দনা এর ছবি

আমাদের বাসায় ও একি কাহিনী। উল্টো কাজের মেয়ে আমার মাকে বলে দেয় আম্মা কি কি করবে। কাজের মেয়েকে আমরা অনেক আদর করি, এইজন্য তারা বসে বসে টিভি দেখে আর আমার মা সারাক্ষনই টুকটাক কাজ করতেই থাকে। সকালে ও আম্মা উঠে কাজ শুরু করে দেয়, কাজের মেয়ে পরে এসে হয়তো জয়েন করে।একবার একটা কাজের মানুষ মেয়েসহ আসলো আমাদের বাসায়, আমি আর আপু মিলে ওকে পড়াতে চাইলাম, পড়তে হবে এই ডরে সেই মেয়ে ভেগে গেল।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী, আসলে নিজের কিছু কাজ নিজে করাই শ্রেয়। অন্তত অভ্যাসটা তৈরি হয়। এই যেমন আপনি জানালেন, নিজের ঘরটা নিজের মতো করে নিজেই গুছিয়ে রাখা, নিজের পরিধেয় কাপড়-চোপড় গুলো নিজেই কঁচে নেওয়া ইত্যাদি। বিদেশে থাকলেতো এগুলো সব নিজেকেই করতে হয়।

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

গত দুই বছর নিজে রান্না বান্না করে খাই। বুঝি মা কত কষ্ট করেছে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মায়েরা সন্তানের জন্য অনেক কষ্টই করেন। সম্ভবত তাঁরা এটাকে কষ্ট মনে করেন না।
আপনার মায়ের জন্য রইল শুভকামনা।

ওডিন এর ছবি

ভালো লাগল আপনার লেখাটা।

হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন।

নিরবতা এর ছবি

চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমাদের বাসায় রাতে থাকার মতো কাজের মানুষ রাখা হয় না কখনো। আমার বোনের ধারণা, তাতে আমরা আরো অলস হয়ে যাবো। হাসি

"মনে হয়, শুধুমাত্র এই সিরিয়াল দেখার বিনোদনের বিনিময়েই তারা এক-একটা দিন পার করে।" - সত্যিই তাই। এটা ছাড়া তাদের বিনোদনের তো আর কিছু দেখি না।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
না, তাদেরও নিজস্ব জগত আছে। আমাদের বাসার 'জেসি', কদিন আগে তার ভাগ্নির জন্মদিনে কেক নিয়ে গিয়েছিল। আমার স্ত্রী, ভাল একটা দোকান থেকে অর্ডার দিয়ে 'শুভ জন্মদিন' লেখা কেক কিনে দিয়েছিল। ওরা অনেক মজা করেছিল। আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল। অনুষ্ঠানের ভিডিও করেছে। একগাদা ছবিও তুলেছে। থাক, আরেকদিন নাহয় লিখবো ওদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দারুণ তো!
শুনে ভালো লাগলো। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ইয়াসির এর ছবি

এইরকম আগে শুনি নি। মন ভালো হয়ে গেল। আরও লিখুন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী, ধন্যবাদ।

সুলতান এর ছবি

মানবিকবোধ থাকলে অনেক কিছুই অন্যরকম হতে পারে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী, ওদেরকে পরিবারভুক্ত ভাবলে এবং ওদেরকেও সেটা বুঝতে দিলে অন্য রকই হওয়ার কথা।
ওরা আসলে আমদের পরিবারভুক্তই। ওরাও এটাকে নিজেদের পরিবারই মনে করে।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ওদের ব্যাপারে আপনার মতো বেশিরভাগ মানুষ যদি ভাবতো!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ওদেরকে একটু স্নেহ, ভালবাসা দিলে ওদেরকেও পরিবারের অংশ ভাবতে পারলে আখেরে কিন্তু আমাদেরই লাভ। গৃহকর্মীর এই মন্দাকালে আমি কিন্তু বেশ নিশ্চিন্তেই আছি। জানি ওরা আমাদের ছেড়ে যাবেনা। আর যাবেইবা কেন, এটাতো ওদেরই পরিবার। আমার বাসার ঠিকা বুয়াটি ২৪ বছর ধরে আমাদের বাসায় কাজ করছে। আর গৃহকর্মীদের একজনের হলো ১৫ বছর আরেকজনের ৮ বছর চলছে। আমার স্ত্রী বলেছে, বৃদ্ধ বয়সে ওদেরকে পেনশন দেওয়া হবে। ওদের পরিবারের অনেক দায়িত্বও আমরা পালন করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের আম্মা 'তাহাদের জন্য' অনেক দয়ালু, অনেক আদর করতেন।আমাদের বাঁধা কাজের লোক ছিল না, মাজা-ঘসা, কাঁচা ধোয়া, ঝাড়া-মোছার জন্য ঠিকে ঝি ছিল, তারা পরিবারের অংশ হিসেবে আমাদের সুখে দঃখে ছিল। ফলে আমরা খুব বেশি নুতন 'তাহাদের' পাইনি। প্রতিদিনের খাবার আম্মা আগে তাদেরটা বেড়ে রাখতেন। আম্মা নিজেও কখোনও কাউকে হুকুম করেন নি, আমাদেরও সজত্নে শিখিয়েছেন তাহাদের হুকুমের বদলে অনুরোধ করতে।

আপনার লেখাটা খুব ভালো লেগেছে।

আসমা খান,অটোয়া

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

অনেকেই জানেনা তারা কেন বেঁচে থাকে।
আমিও বোধহয় জানিনা।
তবে না বেঁচে থাকার পেছনেও বিন্দুমাত্র কারণ নেই।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- সত্যিই, না বেঁচে থাকার পেছনেও বিন্দুমাত্র কারণ নেই।
আমি দেখেছি, তাদের জীবনেও আনন্দ আছে।

যুমার এর ছবি

চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তাপস শর্মা এর ছবি

এভাবেই বেঁচে আছেন অনেকে।

ভালো লাগল কবীর দাদা লেখাটা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভ কামনা! নিরন্তর!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- শুভকামনা আপনার প্রতিও।

ক্রেসিডা এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার লেখা। গৃহকর্মী নিয়ে কিছু বলার থাকলেও আসলে আপাতত চুপই থাকি। বলতে ইচ্ছে করে না। আমাদের বাসায় কোন গৃহকর্মী রাখা হয় না। যাকগে.. অনেকদিন পর লিখলেন।

ভালো থাকবেন।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাল থাকুন আপনিও।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ভালো লেগেছে, একদম চারপাশের বাস্তবতা। আম্মা চাকরী করতো বলে বাসায় ফুল টাইম গৃহকর্মী ছিলো। এখন আম্মা অবসরে গেলেও তাকে বেশী ব্যাস্ত থাকতে হয় রাফিন-ঋদ্ধকে নিয়ে আর নিজের লেখালিখিতে। বাসায় বেশ বয়ষ্ক যে ফুলটাইম গৃহকর্মী আছে সে অনেক দায়িত্ব নিয়েই থাকে। মাঝে মাঝে তো আমার ছোট দুই ভাইয়ের বউকেও চোখ রাঙাতে ছাড়েনা। এ প্রিভিলেজ অবশ্য তাকে দেওয়া হয়েছে। তার নাতি-নাতনীদুটোও প্রত্যেকদিন এসে ঘুরে যায়। ওদুটোর নাম আকাশ এবং মৌরী কিন্তু আমি ডাকি যথাক্রমে জঙ্গল এবং ভণ্ড বলে। পরিবারের জন্যে এদের অবদান কম নয়। আমাদের পরিবারে গৃহকর্মীদের অবশ্য সবসময়েই আমরা ভালো রাখার চেষ্টা করি। একই খাবার খাই, উৎসব-পার্বণ ছাড়াও কাপড়-চোপড় দেই, চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়, ইত্যাদি। এদের ভালো রাখাটা আমাদের সবারই দায়িত্ব।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী, ছোটবেলায় দেখেছি, আমাদের বাসায় একই ব্যক্তি দীর্ঘকাল যাবত ছিলেন। আব্বার ছিল বদলির চাকরি। আমরা এক শহর থেকে আরেক শহরে গেলে তিনিও আমাদের সাথে যেতেন। আমরা ভাইবোনেরা তাঁকে চাচা বলে ডাকতাম। তখনও মহিলা গৃহকর্মীদের বুয়া উপাধি চালু হয়নি। আমরা তাঁদের খালা বলে ডাকতাম।
ধন্যবাদ, অভিজ্ঞতা শেয়ার করবার জন্য।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আপনার মতো অগ্রজেরা এভাবে লিখলে মনে হয় একটা নতুন চোখে জীবনটাকে দেখা যায়। দৈনন্দিন জীবনই তো, কিন্তু দেখার ভঙ্গীটাই আলাদা, এ বোধ করি অভিজ্ঞতার দান হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ছোটবেলায় দেখেছি, বাসার কাজের মানুষগুলোও পরিবারেরই সদস্য ছিলেন। পুরুষ গৃহকর্মীদেরকে চাচা এবং মহিলা গৃহকর্মীদেরকে খালা বলে ডাকতাম। বুয়া ডাকের প্রচলন ছিলনা। খনো সখনো তাঁরা আমাদেরকে শাসনও করতেন। আমাদেরও তাঁদের কাছে অনেক আবদার ছিল। সত্যিই তাঁদের সাথে আমাদের এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন ছিল।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

সচল জাহিদ এর ছবি

আমাদের বর্তমান জীবনে এই 'তাহাদের' শতভাগ অনুপস্থিতি। তবে ভালই আছি। সকালে উঠে নিজে শুদ্ধ হয়ে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলি, ওদিকে বউ আমাদের তিনজনের দুপুরের লাঞ্চ রেডি করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আগের সপ্তাহান্তে রান্না করা। আমি ছেলেকে রেডি করে নাস্তার টেবিলে বসালে বউ তৈরী হতে যায়। তারপর একসাথেই তিনজন বের হয়ে যাই। দিনের শেষ ছেলেকে, বউকে, তুলে একসাথে বাসায় ফিরি। ফিরেই রাতের খাবারটা খেয়ে নেই দুইজনে। ছেলেকে আমিই খাওয়াই, এরপরে ওর প্রাকৃতিক কাজ আর গোসল, সেটা কখনো আমি, কখনও ওর মা। এর পরে হয়ত সোফায় গা এলিয়ে কখনো গবেষনার কাজ, কখনো ব্লগিং, কখনো মুভি, আবার কখনো ছেলের সাথে সময় কাটানো।

সপ্তাহান্তের এক দিন পুরো সপ্তাহের রান্না-বান্না আর বাসা গোছাতে আর পরিচ্ছন্নতায়ই চলে যায় দুইজনের, আরেক দিন নিজেদের মত কিছু সময় কাটাই কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া। অথচ দেশে থাকতে আমরা দুইজনেই ঠ্যাঙ্গের উপর ঠ্যাং তুলে খেতাম দেঁতো হাসি । প্রবাস জীবনে না আসলে হয়ত জীবনের এই চ্যালেঞ্জগুলোর দেখা কখনই পেতামনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এখানেই উন্নত বিশ্ব আর উন্নয়নশীল বিশ্বের ফারাক।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। প্রবাস জীবনে ভাল থাকুন। হাসি

তিথীডোর এর ছবি

নিজের গৃহচিত্রের সঙ্গে মেলে না যদিও।
লেখা চলুক। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ভাল থাকুন।

তাসনীম এর ছবি

২০০২ সালে দেশে গিয়েছি। আন্মা আর আব্বা বাইরে গেছেন, বাসায় আমি একা। টিভি দেখতে বসেছি। তেমন আগ্রহোদ্দীপক কিছু পেলাম না। রিমোটের নিয়ন্ত্রণ গৃহকর্মী মেয়েটার হাতে দিয়ে বললাম তুমি যেটা ইচ্ছা দেখ।

সে একটা চ্যানেলে বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করল। বিজ্ঞাপন বিরতি শুরু হওয়ার পরে আরেকটা চ্যানেলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে শুরু করল। ওখানে বিজ্ঞাপন শুরু হলে আগের সিনেমাতে ফিরে আসে সে। সে জানালো যে বিজ্ঞাপন বিরতিকে কাজে লাগিয়ে দুটো বাংলা সিনেমা একই সঙ্গে দেখা সম্ভব। আমি লক্ষ্য করলাম ব্যাপারটা সঠিক। কয়েকদিন থাকার পরে বুঝলাম, টিভি হচ্ছে গৃহকর্মীদের জীবনে বিনোদনের ছোট একটা জানালা। ঠিক আমার জন্য যেমন সচলায়তন।

উপরে জাহিদ যেমন বলেছে - একটা বাসাতে যে কতো রকম কাজ থাকে সেটা বিদেশে না আসলে বোঝা যায় না। আমরা বিদেশে এসে মনে হয় গৃহকর্মীদের মূল্যটা বুঝতে পারি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাল লাগলো আপনার অভিজ্ঞতার কাহিনী।
প্রবাসে ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।

জুন এর ছবি

চলুক আমাদের একটা যন্তর মন্তর ঘর দরকার।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হুমম আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
অনেকদিন পর লিখলেন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী, আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

সমাধান কী হতে পারে?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। ভাবছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।